আমিই সেই তন্নি পর্ব-০২

0
15

#আমিই_সেই_তন্নি
#Nadia_Afrin


আকাশে সূর্যের ক্বড়া প্রকোপ।
মাথার চান্দি যেন ফেঁটে পড়ছে।
ঘামে জর্জরিত হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর শাড়ির আচলে ঘাম মুছছি।চরম বিরক্তিকে কপাল খানিক ভাঁজ ও পড়েছে বটে।
এরই মাঝে এক মহিলা আমায় দেখে বলল,”দ‍্যাখ তন্নি যাচ্ছে।
মেয়েটা বড্ড ভালো।স্বামী ছেড়েছে কতো আগে।তবুও বিয়ে করেনি আর।ছেলে-মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের যৌবন,ইচ্ছা,শখ সবই বিসর্জন দিল।”

পাশ থেকে আরেক মহিলা বলছে,”বিসর্জন দিয়েছে না ছাই!
সামনাসামনি ভালো মানুষি সবাই দেখায়।
মন থেকে আসলে ওতোই ভালো নয়।পয়সা হয়েছে হাতে।গোপনের কাজ গোপনে সারে।
তোমায় আমায় বলবে নাকি!
নির্ঘাত কোনো প্রেমিক ট্রেমিক আছে।
না’হলে এতোকাল কোনো মেয়ে একা থাকতে পারে?তাও বয়স কম।
মুখোশ পড়ে ভালো মানুষ সেজে থাকে।মনে আছে অন‍্যকিছু।”

আমি থমকে দাড়ালাম মহিলার কথা শুনে।
আমায় দাড়াতে দেখে তারা সুরসুর করে বাড়িতে ঢুকে গেল।
এমন কথা প্রথম নয়।বহু শুনেছি।আগে প্রতিবাদ করতাম।তর্ক জড়াতাম।কিন্তু কাজের কাজ হতোনা কিচ্ছু।বরং বাড়তো।লাঠির আঘাত ঠেকানো যায়।মুখের কথা নয়।
তাই আর প্রতিবাদ করিনা।করেও লাভ নেই।একা একটা মেয়ে থাকলে এমন কথা হবেই।মেনে নিয়েছি।
মুখে সবাই যতোই বলুক,একা থাকো।একা থাকা ভালো।তুমি সৎ থাকলেই দুনিয়া স‍ৎ।
কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে,আমি সৎ থাকতে চাইলেও দুনিয়া সৎ থাকতে দেবেনা।এই সমাজ একা একটা মেয়েকে কখনোই ভালো চোখে দেখেনা।হোক না সে ভালো মানুষ!
চলার পথে অনেক কথাই হতে পারে।সব কী আর গায়ে মাখতে আছে!

নিজ কাজে হাঁটা ধরি আমি।বেড়িয়েছিলাম ছেলের কলেজের উদ্দেশ্যে।কী যেন দরকার আমায়।
ছেলে গাড়ি নিয়ে আগেই চলে গেছে।আমি হেঁটে চারমাথার মোড়ের দিকে যাচ্ছিলাম রিক্সা নিতে।পথেই এমন কথা শুনে মনটা একটু খারাপই হলো বটে।মানুষ কিনা আমি।ভালো-মন্দ লাগা থাকবে স্বাভাবিক।

ভাবনার মাঝখানেই রিক্সা নিলাম।আলিফের কলেজে পৌঁছে গেটের সামনে দাড়িয়েছি।
নতুন কলেজ।কিচ্ছু চিনিনা আমি।ছেলে বলেছিল এগারোটায় কলেজ গেইটে দাড়াতে।
আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে আমার।এগারোটা পেড়িয়ে বিশ মিনিট।
ঘামার্ত মুখ নিয়ে ছেলের অপেক্ষা করছি।ফোন এ‍্যালাউ নয় ভেতরে।আমি পড়লাম মহা ঝামেলায়।এই রোদের মাঝে কতোক্ষণ এভাবে দাড়ানো যায়!
মাথা ঘুরছে রীতিমতো।বমি পাচ্ছে।অসুস্থ শরীর আমার।
তবুও কষ্ট করে মিনিট পাঁচেক দাড়িয়ে রইলাম।এরপর হঠাৎ চোখে আধার নামে।পেছন দিকে হেলে পড়ি আমি।
দূর থেকে এক দারোয়ান পড়ে গেল,পড়ে গেল বলে দৌড়ে আসতে লাগে আমার নিকট।
আর কিচ্ছু দেখিনি আমি।শুধু বুঝেছি কেউ আমায় ধরে নিয়েছে।ধূসর বর্ণের চোখ তার।চিকন ফ্রেমের চশমা।
চোখ দুটো দেখেই আমি মূর্ছা গিয়েছি।

এরপর জ্ঞান যখন ফেরে বেলা দুটো তখন।ভর দুপুর।
পিটপিটিয়ে চোখ মেলতেই দেখি অচেনা জায়গা।আমায় তাকাতে দেখেই ছেলে এগিয়ে আসে। ধমকের স্বরে বলে,”আর ইউ ম‍্যাড আম্মু?
রোদের মাঝে গেইটে কে দাড়িয়ে থাকতে বলেছিল?
সোজা কলেজ ঢুকে আমার কথা জিজ্ঞেস করলেই ক্লাস দেখিয়ে দিত।
তুমি আসবে বলে দু-বার চক্কর দিয়েছি গেইটে।আসতে দেরি হচ্ছিলো তাই ক্লাসে ছিলাম আমি।”

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই পাশ থেকে কেউ তীব্র ধমকের স্বরে বলে,”শান্ত হও আলিফ।এ কেমন ব‍্যবহার মায়ের সঙ্গে?
মা অসুস্থ আর তুমি তাকে বকছো?”

পাশ ফিরি আমি।
এটাতো সেই লোক।যিনি সেদিন আমায় হাসপাতালে নিয়েছিল।পরসু দেখাও হলো লোকটার সঙ্গে।ইনি এখানে কী করছেন?

একজন লোকের সামনে শোয়া আমি।একটু বিব্রত বোধ হয়।উঠে বসার চেষ্টা করতেই হাতে টান পড়ে। ‘আহ’ সূচক শব্দ করি আমি।
লোকটা বলে,”রিল‍্যাক্স।ব‍্যতিব‍্যস্ত হবেন না।আপনি অসুস্থ।বিশ্রাম নিন।”

আমি আমতা আমতা করে বলি,”আ আপনি এখানে?কীভাবে মানে!”

লোকটা সামান্য হেসে বলে,”শান্ত হোন বলছি সবটা।
আমি আলিফের শিক্ষক।ঐ কলেজের প্রফেসর।
কলেজে প্রবেশের সময় হঠাৎ দেখলাম একজন মহিলা গেইটের কাছে দাড়িয়ে ঢুলছে।পড়ে যেতে নিচ্ছে।বাধ‍্য হয়ে এগিয়ে আসি আমি।
দেখলাম আপনি সেজন।
অসুস্থ হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন গুরুতর ভাবে।তখনই আলিফ ‘আম্মু’ বলে দৌড়ে আসে।পরিচয় দেয়।এরপর আমরা দুজন মিলে আপনাকে হসপিটাল এনেছি।
তা এবার আপনার কেমন লাগছে?
সুস্থ অনুভব করছেন?”

“জ্বী।আসলে রোদে মাথায় তাপ উঠে চক্কর দিয়েছিল।
এখন আমি ঠিক আছি।”

আলিফ আবারো বলে,”তুমি ভেতরে ঢুকলেই দারোয়ান আঙ্কেলকে পেতে।অতিরিক্ত রোদের কারণে সে ভেতরে গাছের ছায়ায় বসে ছিল।তাই তোমায় খেয়াল করেনি।”

বললাম,”আমারই ভুল হয়েছে।সময় মতো আসা উচিৎ ছিল আমার।”

“সবসময় মানুষ সময়ের সঙ্গে চলতে পারেনা।
আমরা মানুষ।কোনো যন্ত্র নই যে সবকিছু সঠিক সময় মতো হবে।”

আমি চুপ করে রইলাম।
আলিফ আবারো বলে,”তোমার টাইম সেন্স রাখা উচিৎ ছিল আম্মু।”

আমি মাথা নিচু করে রইলাম।

লোকটা আবারো বলল,”আলিফ তোমার কী মনে হচ্ছে না তুমি শুধু নিজের সুবিধাটা বুঝছো?
যদিও তোমাদের মা-ছেলের বিষয়ে কথা বলার রাইট আমার নেই।চোখের সামনে কথা হচ্ছে তাই বলছি।
মায়েদের অনেক কাজ থাকে।লেট হতেই পারে।এজন‍্য এমন করতে পারোনা তুমি।উনি তোমার মা।উনি অসুস্থ।তোমার উচিৎ তার পাশে থাকা।”

আলিফ এবার নত হলো।

আমি বললাম,”ও ছোট মানুষ।বোঝে কম।আসলে আমার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছে তাই রাগ করছে।
এছাড়া আমার ছেলে ভালো।
সৎ চরিত্রের,গুণি ছেলে আমার।”

স‍‍্যার আর কিছু বললেন না।
আলিফকে কে যেন ডাকলো বাইরে থেকে।হয়ত ওর কোনো বন্ধু হবে।
ছেলে ‘আসছি’ বলে বেড়িয়ে গেল।

স‍্যার পাশে বসে রয় চেয়ারেতে।
আমার বিব্রত লাগে।
দুজনেই চুপ আমরা।স‍্যার বসে বসে হাত চুলকোচ্ছে।তার মাঝেও অপ্রস্তুত ভাব।
আমি আড় চোখে স‍্যারের দিকে তাকালাম।
শ‍্যাম বর্ণের লোকটার মুখে হালকা দাড়ি।বয়স খুব কমও নয়,আবার বেশিও নয়।
চল্লিশের কাছাকাছি হবে হয়ত।তবে দেখতে ভীষণ হ‍্যান্ডসাম।পরিপাটি।
বয়স বোঝার উপায় নেই।
হাতে দামি ঘড়ি।ফর্মাল পোশাকে শিক্ষক শিক্ষক ভাব।এর আগেও যে দু-তিন বার এনাকে আমি দেখেছি,এমন পোশাকেই।

কী যেন ভেবে ধীর স্বরে বললাম,”আমার অসুস্থতার সঙ্গে আপনি জড়িয়ে পড়ছেন বারবার।যদিও আমায় সাহায্য করেছেন।আমার অসুস্থতায় ম‍্যাজিশিয়ানের মতো হুট করে এসে হেল্প করছেন।
এজন্য ধন্যবাদ আপনাকে।”

স‍্যার হাসে।সরু দাঁতের সুক্ষ হাসি।মুখের সঙ্গে মানানসই।দেখতে ভালো লাগছে।
আমি কোণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম।হাসি দেখলাম।এই প্রথম কোনো পুরুষের হাসি আমার নজর কেড়েছে।
জানেন,আকাশের হাসি ও আমার ভালো লাগতো।তবে শব্দ করে হাসির চেয়ে চাপাশব্দে হাসি আমার ভীষণ ভালো লাগে।
স‍্যারের হাসিও ঠিক এমন।

স‍্যার চোখ তুলে তাকায়।
আমি দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নেই।এ কেমন বেহায়া পনা আমার!

“আপনার বিষয়ে জানি আমি।তন্নি নাম আপনার।
বিশেষ একজন ব‍্যাক্তি।ভীষণ গুণ সম্পন্ন।কতো সমাজসেবা মূলক অনেক কাজে আপনার অবদান!
নিউজে আপনার বিষয়ে পড়েছিলাম।এবার সরাসরি দেখা হয়ে গেল।আমি আপনার ভীষণ বড়ো ফ‍্যান।”

“ততোটা বড়োও আমি নই।আপনি হয়ত একটু বেশিই বলছেন।”

স‍্যার আবারো হাসেন একটু।
একজন নার্স আসে এমন সময়।একটি ইনজেকশন দিতে হবে।
এদিকে ছোট থেকে ইনজেকশনে ভয় পাই আমি।হয়ত ন‍্যাকামো ভাবতে পারে সবাই।কিন্তু আসলে তা নয়।
প্রতিটি মানুষের কিছু না কিছুতে একটা ভয় থেকেই যায়।যা তার সারাজীবনই থাকে।
আমারও রয়ে গেছে ভয়টা।ছেলে-মেয়ে বড়ো হয়ে গেলেও এতো বছরেও ভয় দূর করতে অক্ষম আমি।
ছোট্ট এই ইনজেকশনের নাম শুনলে আমার বড়ো বড়ো রোগও পালিয়ে যায়।
তাই নার্সের মুখ থেকে ইনজেকশনের কথা শুনে রীতিমতো ঘামছি আমি।
হাত পা কাঁপা শুরু হয়েছে।

স‍্যার আমার দিকে তাকিয়ে বলে,”এ‍্যানি প্রবলেম ম‍্যাম?আপনি নার্ভাস হচ্ছেন যে!”

নার্স আমার অবস্থা দেখে বলে,”উনি হয়ত ইনজেকশনে ভয় পায়।এমন অনেকেরই হয়।
আপনি প্লিজ রিল‍্যাক্স হন।ভয় পেয়ে শরীর শক্ত করলে ইনজেকশন দিলে আপনারই কষ্ট হবে পরবর্তীতে।
সো প্লিজ নিজেকে সামলান।ইনজেকশন একটি সামান্য বিষয়।
উনার বাড়ির লোক একটু উনাকে সাহস দিন।ধরে থাকুন।
আমার কাজ আছে।একটু দ্রুত করুন।”

স‍্যার আশেপাশে তাকিয়ে আলিফকে খুঁজতে লাগে।
নার্স মেয়েটি আবারো তাড়া দিয়ে বলে,”এই যে আপনি উনাকে ধরুন।হাজবেন্ড-ওয়াইফে এতো কিসের ফর্মালিটি?”

স‍্যার আমতা আমতা করে বলতে চায় কিছু।এদিকে আমি লজ্জায় শেষ।
নার্স স‍্যারকে আমার স্বামী ভেবেছেন।
নার্স মেয়েটি আবারো তাড়া দেন।বাধ‍্য হয়ে স‍্যার একহাতে আমার বাহু ধরে কোনো মতে।আমি বাধা দেওয়ার আগেই নার্স কথা বলতে নিষেধ করে।
ইনজেকশন রেডি করে হাতে পুশ করতে নেয়।
ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসে।
ভয়ের চোটে কখন যে স‍্যারের হাত খামচে ধরেছি খেয়াল নেই।
ইনজেকশন দেওয়া শেষ করে নার্স চলে যায়।
আমি তখনও চোখ খিচে বন্ধ করে আছি।
একটু পর স‍্যার ডাকেন,”শুনছেন ম‍্যাম?আর ইউ ওকে?”

ধড়ফড়িয়ে উঠি আমি।চোখ খুলি দ্রুত।দীর্ঘশ্বাস নেই।পাশ ফিরতেই স‍্যারের সম্মুখ হই।উনার এক হাত আমি খামচে ধরে আছি।
দ্রুতই হাতটা সরিয়ে নেই।এ কী করেছি আমি!

আলিফ এলো তখন।
স‍্যার আলিফকে বলল,”আলিফ তুমি এতো ইরেসপন্সিবল কেন?তোমার মা অসুস্থ,আর তুমি ঘুরে বেড়াচ্ছো?”

“ওহ স‍্যরি স‍্যার।আসলে আমার বন্ধু ডেকেছিল আর্জেন্ট কাজে।”

“মায়ের অসুস্থতার চেয়ে আর্জেন্ট কোনো কাজ হয়?”

আলিফ এবার চুপ।
আমার কাছে আসে সে।উঠে দাড়াতে নেই আমি।আলিফ ধরতে নেয়।
আমি হাত উচিয়ে বলি,”থাক।ঠিক আছি আমি।বাড়ি যেতে হবে।এখন সুস্থ অনুভব করছি।আমার সঙ্গে বাড়ি গেলে গাড়িতে গিয়ে বসো।
আমি আসছি।”

“ওহ আম্মু আই এ‍্যাম রিয়েলি স‍্যরি।আসলে আমার কাজ আছে।আমি তোমার সঙ্গে যেতে পারছিনা।আমি যেই হোস্টেলে উঠবো সেখানে আজ ফর্মফিলাপের লাষ্ট ডেট।মিস করলে সিট বুকিং হয়ে যাবে।
তোহ আমায় যেতে হবে এক্ষুনি।
তুমি গাড়ি নিয়ে ড্রাইভার আঙ্কেলের সঙ্গে চলে যাও।”

“তা কী করে হয় আলিফ?
স‍্যরি টু সে,তোমাদের ফ‍্যামেলি ম‍্যাটারে কথা বলা উচিৎ হয়নি।তবুও বলছি।
উনি অসুস্থ মানুষ।একা একা কীভাবে বাড়ি ফিরবেন?যদি রাস্তাতে অসুস্থ হয়ে পড়ে?
প্রয়োজনে আমি উনাকে পৌঁছে দেব।
দু দু-বার উনি অসুস্থ হয়ে গেছেন।এমনতাবস্থায় একা ছাড়া উচিৎ হবেনা।আমি উনাকে হাসপাতাল এনেছি।একটা দায়িত্ব আছে আমারো।
শেষ মূহুর্তে এসে উনাকে অনিরাপত্তায় ছাড়তে পারিনা।”

বললাম,”তার কোনো প্রয়োজন হবেনা স‍্যার।ড্রাইভার আছে।চলে যেতে পারবো আমি।”

“ড্রাইভার শুধু গাড়িই চালাবে।গাড়ির দিকে নজর দেবে।আপনাকে দেখবে কে?আপনার যদি কোনো প্রয়োজন পড়ে,অসুস্থ লাগে?কে দেখবে আপনায়?
রিস্ক নেওয়া ঠিক হবেনা।চলুন আমি আপনাকে ড্রপ করে দেই।আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি আমি।সুতরাং আমার কথা শোনাও একটা কর্তব্য আপনার।”

আলিফ বলল,”তাহলে তো হয়েই গেল আম্মু।তুমি আজকের দিকটা স‍্যারের সঙ্গে চলে যাও।স‍্যার ভীষণ ভালো মানুষ।আমি আসি।লেট হয়ে যাচ্ছে।”

ছেলে চলে যায়।
আমি নিজেই হসপিটালের সব ফর্মালিটি পূরণ করে বাইরে আসতে নেই।
স‍্যার লিফ্টে উঠতে বলেন।
আমি উঠিনা।লিফ্টে কেন যেন মাথা ঘোরে আমার।এমনিতেই অসুস্থ শরীর।এর মাঝে লিফ্টে উঠলে বমি হয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে।
সিড়ি বেয়ে নামতে নিলাম আমি।স‍্যার এগিয়ে আসেন।
বললেন,”এতোগুলো সিড়ি একা একা নামতে পারবেন?”

“চেষ্টা করলেই পারবো স‍্যার।জীবনের অনেক কিছু একাই পার করেছি আমি।এই সামান্য সিড়ি আমায় বাধা দিতে পারবেনা।”

নামতে লাগি আমি।স‍্যার আসছে পিছে পিছে।বেচারা আমার জন্য নিজেও লিফ্ট ব‍্যবহার করতে পারছেনা।
যদিও আমি বলেছি লিফ্টে করে নিচে চলে যেতে।আমি একটু সময় নিয়ে হেঁটেই আসছি।তিনি শোনেননি।অসুস্থ একটা মানুষকে একা রেখে সে যাবেন না।
মানুষটা বড্ড দায়িত্বপরায়ণ।সৃষ্টিকর্তা উনার ভালো করুক।

ধীরে ধীরে চার-পাঁচ সিড়ি পার হয়েছি সবে।এর মধ‍্যেই হাঁটু কাঁপছে আমার।পায়ে জোর পাচ্ছিনা।শরীরটা যেন অসাঢ় হয়ে আসছে।
আচমকা পড়ে যেতে নেই আমি।স‍্যার পেছন থেকে খপ করে ধরে আমার বাহু।
এগিয়ে এসে দু-বাহু ধরে বলে,”আন্তরিকভাবে দুঃখীত।কিছু মনে করবেন না।
না ধরলে আপনি পড়ে যাবেন।অঘটন ঘটতে পারে।”

স‍্যার আমায় সম্পূর্ণ সিড়ি পার করে দেয়।
ছেলেটার প্রতি বড্ড অভিমান জমে মনে।জানি ওর কাজ আছে।
কাজটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ,মাও তো গুরুত্বপূর্ণ তাই না?
সঙ্গে না যাক,অন্তত গাড়ি অব্দি পৌঁছে দিতে পারতো।
এতো বড়ো ছেলে থাকতে অন‍্যের সাহায্য নিয়ে চলতে হচ্ছে।কতো কষ্ট করেছি এই ছেলে-মেয়ে দুটোকে মানুষ করতে।
অথচ আমার অসুস্থতায় কাউকেই পাইনা।এক অপরিচিত মানুষের সাহায্য নিতে হলো।
নিজেকে বড্ড ছোট মনে হচ্ছে আমার।
কী ভাবলেন ইনি?ছেলের কাছে আমার কোনো গুরুত্বই নেই।এটাই ভাবলেন হয়ত।
ভাবলেও কিছু করার নেই।

গাড়িতে গিয়ে বসি আমরা।স‍্যার আমার পাশের সিটে।আমি জড়সড় হয়ে বসেছি।ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করে।মাঝপথে ভাঙা রাস্তা।গাড়ি ওপর নিচ হয়।সামনে ঝুকে পড়ি আমি।সিটের সঙ্গে মাথায় লাগতে নিলে স‍্যার হাত দেয় সামনে।উনার হাতের সঙ্গে গুতো লাগে আমার।তেমন ব‍্যাথা পাইনি।হাত না দিলে লেগে যেত।
মনের ভুলে সিটবেল্ট বাধিনি।তাই এই অবস্থা!
স‍্যরি বলি তাকে।সিটবেল্ট বেধে চুপ করে বসে থাকি।
স‍্যার বলেন,”পানি খাবেন ম‍্যাম?ক্লান্ত লাগছে আপনাকে।”

আমি মাথা ঝাকাই।ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলেন তিনি।
একটা পানির বোতল এগিয়ে দেয়।
ঢকঢক করে তিনবার পানি পান করে সিটে হেলান দেই।ভালো অনুভব হয়।
গাড়ি চলতে শুরু করে।বাকিটা পথ আমি সিটে হেলান দিয়েই গেছি।
বাড়ি পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে স‍্যারকে ভেতরে আসতে বলি।তিনি আসেন না।পরেরবার আসবে বলে চলে যায়।
উনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস নিক্ষেপ করি।
বাড়িতে ঢুকে ধপ করে সোফায় বসে পড়ি।
পারুল ভাবি এগিয়ে আসে আমার নিকট।ইনি আমার সাহায্যকারী।বাড়ির কাজে সাহায্য করে।তার স্বামী আমার বাড়ির গেইটের দারোয়ান।স্বামী-স্ত্রী দুজনেই আমার কাছে কাজ করে।ভালো মানুষ এরা।
ভাই-ভাবি বলেই ডাকি।পরিবার মনে করি।

পারুল ভাবি আমার পাশে বসে বলে,”কী হয়েছে বোন তন্নি?চেহারাটা এমন শুকনো লাগছে কেন?
আবার হাতে স‍্যালাইনের চিহ্ন!ফিরলেও কতো দেরিতে।কল করলাম ধরলেনা।ব‍্যাপার কী?”

“ছেলের কলেজে গিয়ে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম ভাবি।ওরই এক স‍্যার আমায় হাসপাতালে নিয়েছে।
স‍্যালাইন দিয়েছিল।এখন একটু সুস্থ আছি।চিন্তা করোনা।আমায় একটু ঘরে নিয়ে চলো।হাত-পা উঠছেনা আমার।দূর্বল লাগছে।একটু ঘুমাবো।”

ভাবি আমায় ধীরে ধীরে ওঠালেন।সঙ্গে বকলেনও।তিনি যেতে চেয়েছিল সঙ্গে।
আমিই নিষেধ করেছিলাম।

আমায় ঘরে নিয়ে আসে।বিছানায় শুইয়ে দেয়।মাথায় একটু তেল মালিশ করে দিয়ে ঘুমোতে বলে।
ঘুমিয়ে পড়ি আমি।
স্বপ্ন কীসব দেখি।ছেলে-মেয়ে হারিয়ে যাচ্ছি অন্ধকারে।আমি পাগলের মতো চিৎকার করছি।ওরা ছাড়া আমার কেউ নেই।

হঠাৎ ঘুম ভাঙে।উঠে বসি।এমন স্বপ্ন দেখি প্রায় প্রায়ই।মনে বড্ড ভয় লাগে।বাচ্চাদুটো সত্যিই কী হারিয়ে যাবে?
আমার প্রয়োজন ফুরোলো কী তবে?

‘নাহ আর ভাবতে পারছিনা।
দম বন্ধ লাগছে।চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম শূন্য মস্তিষ্কে।
কিন্তু নাহ।তাও ভালো লাগছেনা।উঠে বসে ঘরের সঙ্গে লাগোয়া খোলা বারান্দাটায় গেলাম।
একান্ত নিজের জন্যই এই বারান্দাটি করেছি আমি।মুক্ত হাওয়ার আদান-প্রদান হয় ঘরে।
দেওয়াল ঘেঁষে দাড়িয়ে ছিলাম।নিচে মেয়েকে আসতে দেখলাম।মূহুর্তেই চোখ-মুখে হাসির ছটা ফোটে আমার।
একপ্রকার দৌড়েই নিচে নামি।বাচ্চাদের কাছে পেলে ভীষণ ভালো লাগে।মনে শান্তি পাই।ওরাই আমার সবকিছু।
মেয়ে অর্নি এসে সোজা সোফাতে ধপ করে বসে।
পারুল ভাবি বলেন,”ফোন করলাম এক ঘন্টা আগে।দশ মিনিটের রাস্তায় এক ঘন্টা পর এলে?”

মেয়ে বিরক্তির কন্ঠে বলে,”তোহ কী করতাম আমি?
নাচের ক্লাস ছিল আমার।ক্লাস শেষ করে আসলাম।”

“মায়ের থেকে নাচ গুরুত্বপূর্ণ বেশি?”

অর্নি মাথা নিচু করে চুপ গেল।
আমি ধীরে ধীরে সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলি,”ভালোই করেছে ও।ক্লাসটা শেষ করে এসেছে।ক্লাস মিস করা ভালো নয়।”

পাশে বসলাম মেয়ের।
মেয়ে টিভি অন করে তাকিয়ে রইলো।দীর্ঘ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রই আমি।কিন্তু মেয়ের দৃষ্টি টিভিতে।
বললাম,”কেমন আছো অর্নি?পড়াশোনা কেমন চলছে?”

“ভালো।সবই ভালোই চলছে।”

কথা শেষ মেয়ের।আমি ওর প্রশ্নের আশায় বসে ছিলাম।কিন্তু নাহ!
ও কোনো কথাই বলল না।আগের ন‍্যায় টিভিতে মনোযোগ তার।
মেয়ে আমার সত্যিই অবুঝ।মাকে দেখতে এসে মায়ের দিকে তার নজরই নেই।ভালো-মন্দ অব্দি জিজ্ঞেস করছেনা।

উদাস মুখে বসে রই আমি।
মেয়েটা টিভি দেখতে দেখতে সোফায় মাথা ঠেকায়।
চোখে ঘুম ঘুম ভাব।
বললাম,”তোমাকে ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।ঘুম পেয়েছে?”

অর্নি ‘হ‍্যা’ সূচক উত্তর দেয়।

ঠিক এই মূহুর্ত্তের অপেক্ষাতেই ছিলাম আমি।
অর্নি একটু আমার কাছে আসুক।কোলে মাথা রেখে ঘুমাক।
সেই ছোট্ট বেলার মতো মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেই।আধো আধো বুলিতে ও বলবে,”একটু চুল টেনে দাও না আম্মু।”

অর্নির কাছে এগিয়ে গেলাম আমি।কাধে হাত দিয়ে আমার কাছে আনতে চাইলাম।মাথায় বিলি কেঁটে দিতে চাইলাম।
অর্নি চরম বিরক্ত নিয়ে বলল,”আমি ছোট নাকি আম্মু!যে কোলে তুলে ঘুম পাড়াবে।
ঘরে গিয়ে ঘুমোচ্ছি আমি।তুমি রেস্ট নাও।”

অর্নি হনহন করে হেঁটে ঘরে চলে যায়।
চোখে পানি জমে আমার।
সোফাতে হাঁটু মুরে হুহু করে কেঁদে উঠি।বুকে যেন পাহাড় সমান দুঃখ এসে বিধে।
ছেলে-মেয়ে দুটোর মুখের দিকে তাকিয়েই আমার জীবন।মনটা আমার হাহাকার করে বাচ্চাদুটোকে একটু কাছে পেতে।বড্ড একা লাগে।
কিন্তু তারা তাদের জীবন নিয়ে ব‍্যস্ত।মায়ের কাছে দু-দন্ড বসার সময় অব্দি নেই।
তবুও চাই ওরা ভালো থাক।উন্নতি করুক।
আমি না’হয় শুধু দায়িত্ব পালনেই সীমাবন্ধ থাকি।
ওরা এখন বড়ো হয়েছে।পড়াশোনার চাপ।
আমাকে সময় দেওয়ার সময়ই পায়না ওরা।ওদেরই বা কী দোষ!
প্রতিটি মানুষ একসময় তার নিজ জীবন ছন্দ নিয়ে ব‍্যস্ত হয়ে পড়ে।

চোখের পানি মুছলাম।নিজেই নিজের মনকে বুঝ দিলাম।আমায় বোঝানোর কেউ নেই ও।
সোফায় মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করেছি।সবে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়েছে এমন সময় পারুল ভাবির ডাক।
হুড়মুড়িয়ে উঠি আমি।

ভাবি আমার কাধে হাত রেখে বলেন,”ঘাবড়ে যেও না।আমিই।
তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে।দুঃখীত বুঝতে পারিনি।তা ঘর ছেড়ে এখানে এভাবে ঘুমোচ্ছো যে?”

“একা ঘরে ভালো লাগছিল না।তাই ভাবলাম নিচে এসে তোমাদের সঙ্গে গল্প করি।”

“যার সঙ্গে গল্প করতে এসেছিলে সে পাত্তাই দিল না তাইনা?”

মনটা খারাপ হলো।মাথা নত করে রইলাম।

“যাকগে সেসব।রান্না করবো কী?”

“মেয়েকে জিজ্ঞেস করো ভাবি।
আমার আবার ইচ্ছে আছে নাকি!ওদের যা ইচ্ছে,আমার ও তাই।ওরা যা খাবে,আমারও তাই পছন্দ।”

“কেন?তোমার কোনো ইচ্ছা নেই?কোনো পছন্দ থাকতে নেই?তুমি মানুষ নও?
ছেলে-মেয়ের পছন্দই তোমার পছন্দ?
মেয়ে চলে যাবে একটু পরই।ছেলেও কদিন পর হোস্টেলে উঠবে।তখন কার পছন্দে খাবে,পড়বে শুনি?
এখন থেকেই নিজ পছন্দের অভ‍্যাস করে নাও।
নিজের ইচ্ছার মর্যাদা দিতে শেখো।
অন‍্যের ওপর ভরসা বন্ধ করো।”

ভাবি চলে গেলেন।
আমি ঝিম ধরে বসে রইলাম।

এরই মাঝে কল এলো ফোনে।অপরিচিত নাম্বার।
রিসিভ করলাম দ্রুত।
কেউ একজন সালাম দিয়ে বলল,”আমি স‍্যার বলছিলাম।ঐযে সকালে দেখা হলো যে!
আপনি আমার গাড়িতে ডাক্তারের রিপোর্ট ফেলে গেছেন ম‍্যাম।
ঔষধ খেতে এটা লাগবে।তাই দিতে এসেছি।
আপনার বাড়ির বাইরে দাড়িয়ে আছি।রিপোর্ট টা একটু নিয়ে যান।”

আমি সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাড়ালাম।
ভাবিকে চিৎকার করে ডেকে বললাম,”রান্না বসাও ভাবি।গেস্ট আসছে।আগে চা-কফি দুটোই করো।যেটা খায় উনি।”

বাইরে এলাম তড়িঘড়ি।
স‍্যার আমায় দৌড়ে আসতে দেখে দূর থেকেই থামতে বললেন।
আমার নিকট এগিয়ে এসে বললেন,”আস্তে হাঁটুন।আপনি অসুস্থ।এতো ব‍্যাতিব‍্যস্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।”

বললাম,”এবার আর আপনাকে ছাড়ছিনা স‍্যার।আমার বাড়িতে এসে একটু বসতেই হবে আপনায়।বলেছিলেন পরেরবার এলে বসবেন।
এবার কথা রাখতে হবে কিন্তু স‍্যার।”

“উমম!
সেটাই তো ভাবছি।শিক্ষক আমি।কথার মর্যাদা রাখতেই হবে।নিজে কথা ভঙ্গ করলে স্টুডেন্টদের কী টিচিং দেব!
যেতে পারি আপনার বাড়ি।তবে একটা শর্ত আছে।”

আমি ভ্রু কুচকাই।

স‍্যার বলেন,”এইযে দৌড়ে এলেন।এগুলো আর করা যাবেনা।আস্তে ধীরে চলাচল করবেন।নিজের যত্ন নেবেন।টাইম টু টাইম মেডিসিন খাবেন।
দুবার আপনাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিতে হয়েছে আমার।পরেরবার দেখা হলে যেন সুস্থ অবস্থায় পাই আপনায়।”

আমি কিঞ্চিৎ হেসে সায় দিলাম।
স‍্যারকে নিয়ে ভেতরে এলাম।বসতে দিলাম।
তিনি বললেন,”বহু কষ্টে আলিফকে পেয়ে আপনার নাম্বার যোগাড় করেছি।
আজ আমি ছুটি নিয়েছি তাই আসতে পারলাম।
ফ্রি টাইম দেখে দু-দন্ড বসার সময় পেলাম।অন‍্যদিন হলে এসময় আমার ক্লাস থাকে।”

বললাম,” কোন বিষয়ের শিক্ষক আপনি?”

“গণিত বিষয়ের প্রফেসর আমি।নাম ইয়াসির রহমান।
নতুন জয়েন করেছি কলেজে।এখনো সেটেল হইনি এখানে।আপাতত এক শিক্ষকের বাড়ি গেস্ট হয়ে আশ্রয় নিয়েছি।খুব শিগ্রই একটা বাড়ি নেব ভাড়ায়। খুঁজছি।তবে পাচ্ছিনা মন মতো।আসলে আমার পছন্দ নিরিবিলি একটা ঘর।
শহরের কোলাহল মুক্ত একটু গ্রাম‍্য টাইপ বাড়ি হলে বেশ ভালো হয়।”

এরই মাঝে ভাবি চা-কফি নিয়ে আসেন।
স‍্যারকে বলি,”নিন যেকোনোটা।আপনার পছন্দ জানিনা তাই দুটোই করতে বলেছি।আমি আবার ব‍্যক্তিগতভাবে চা প্রেমি।”

“আমায় দেখে কী আপনার বিদেশি ভাল্লুক মনে হয়?”

স‍্যারের কথায় হাসি আমি।
“এ কথা কেন বলছেন?”

“দেশের মানুষ চা’ই পছন্দ আমারও।
কফিটা অনেকে খেলেও চায়ের মতো আপন কিন্তু কফি নয়।
চা চলে আসছে যুগ যুগ সেই নানা-দাদার ও আগের আমল থেকে।আর কফি এলো বর্তমান যুগের সঙ্গে সঙ্গে।
চায়ের স্বাধের সঙ্গে তুলনা হয়না অন‍্য কোনো পানীয়র।
আমিও চা প্রেমি।সকালে উঠে এককাপ চা না খেলে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারিনা।সারাদিন মাথা গরম থাকে।এলোমেলো দিন যায়।”

“তাহলে তো ভালোই।দুজনে একদিন ‘চা’ আড্ডায় বসবো।”

স‍্যার স্মিত হেসে চায়ের কাপ হাতে নিলেন।
দুজনেই চা খেতে খেতে গল্প করলাম।
এই মানুষটাকে সহজ-সরল লেগেছে আমার।
সঙ্গে ভীষণ পরোপকারী ও ন‍্যায়পরায়ণ।
সাবলম্বি কথাবার্তায়,মনমুগ্ধকর হাসি।
উনার স্ত্রী ভীষণ ভাগ‍্যবতী হবেন এমন একজন ভালো মানুষকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়ে।
উনার স্ত্রী ও মনে হয় উনার মতোই হবে।ভালো সঙ্গ থাকলে অপর পক্ষের মানুষটির মন-মানসিকতাও ভালোর দিকে যায়।
একই পেশার হবে হয়তবা উনারা।বেশিরভাগ শিক্ষকের স্ত্রীরা শিক্ষক অথবা অন‍্য কর্মজীবী হয়।
জানার ভীষণ আগ্রহ হলো আমার।
কৌতূহল দমাতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম,”আপনার বাড়িতে কে কে আছেন?”

স‍্যার চায়ের কাপটি টেবিলে রেখে বললেন,”শুধু আছে এক অসুস্থ মা ও বাবা।
বাবা অবসরে।তিনিও আগে শিক্ষক ছিলেন।বাবার পেশাকেই গ্রহণ করেছি আমি।
মা ঘর কর্তা।ঘর সামলায়।”

একটু আমতা আমতা করে বললাম,”স্ত্রী-সন্তান?”

স‍্যার আবারো সহসা হাসলেন।
বললেন,”না নাহ।ওসবে জড়াইনি আমি।একবার জড়াতে গিয়ে চরমভাবে ঠকে গিয়েছিলাম।বলতে পারেন ব‍্যর্থ প্রেমিক।এরপর আর বিয়ে বা ঘর-সংসারে আগ্রহী হইনি।এই নিয়ে অবশ‍্য মা-বাবার চরম আক্ষেপ।
কিন্তু কী আর করার বলুন!
জীবনের কাছে একবার ঠকে গেলে সেই বিষয়টির প্রতি আগ্রহ উঠে যায়।”

বললাম,”বুঝি আমি।একই পথের যাত্রী আমিও কিনা!”

চলবে।