আমিই সেই তন্নি পর্ব-০৬

0
14

#আমিই_সেই_তন্নি
#Nadia_Afrin


চোখে চশমা পড়ে গাড়ি থেকে বের হলাম।
আকাশ পানে তাকালাম একবার।মেঘলাময় আকাশ।হয়ত বৃষ্টি আসবে।ঠান্ডা ওয়েদার ভালোই লাগছে।
হাতে আমার কখান ব‍্যাগ।
সেগুলো নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের ভেতরে প্রবেশ করলাম।এক মেয়ে এগিয়ে এলো আমার নিকট।
ওর হাতে ব‍্যাগগুলো দিয়ে বললাম,”সবাইকে ভাগ করে দিও।উনার জন্যও রেখো কিছুটা।
উনি কোথায়?”

মেয়েটা কথা বলতে পারেনা।হাতের ইশারায় বারান্দা দেখিয়ে দেয়।
সেদিকে এগিয়ে যাই আমি।
বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে আছেন এক বৃদ্ধা।দৃষ্টি তার আকাশ পানে।
পাশাপাশি দুটো চেয়ারের একটি ফাঁকা।তাতে গিয়ে বসলাম আমি।
বৃদ্ধা মহিলাটি দৃষ্টি সামনে রেখেই বলল,”আজ কী বৃহস্পতিবার?”

“নাহ।সোমবার আজ।
এপথ দিয়েই যাচ্ছিলাম।ভাবলাম দেখা করে যাই।”

মহিলা কিছুক্ষণ চুপ রইলো।এরপর বলল,”আলিফ অর্নি কেউ এলোনা?”

নত মুখে বললাম,”আলিফ দুদিন আগে হোস্টেল চলে গেছে।অর্নি তো পড়াশোনা নিয়েই ব‍্যস্ত।এতিমখানা থেকে আসতেই চায়না।”

মা একটু হাসলো।
আমার দিকে ঘুরে বলল,”শেষ পর্যন্ত ছেলে-মেয়েরাও তাহলে তোমায় একলা করে চলে গেল।এমনটাই হয়।প্রয়োজন ফুরোলে সবাই নিজ গন্তব্যে হারিয়ে যায়।”

“ওরা ইচ্ছেকৃত যায়নি।পড়াশোনার তাগিদ মানুষকে অনেক রকম ত‍্যাগই করতে হয়। পরিস্থিতি মানুষকে বহু কঠিন পর্যায়েও নিয়ে যায়।যেমনটা আপনি নিজেকেই দেখুন না।একদিন এই আপনি আমায় আপনার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।কতো অত‍্যাচার করেছিলেন আমায়।অথচ শেষ কালে সেই আমার কাছেই আশ্রয় নিতে হলো আপনার।
আর আমার সন্তানেরা যা করছে তা সবই ওদের ক‍্যারিয়ার ও পড়ালেখার জন্য।”

মা এবারেও হাসলেন।বললেন,”পড়াশোনাতো শুধুই অযুহাত।
থাকার ইচ্ছে থাকলে মানুষ সব কিছুর বিরুদ্ধে গিয়েই থাকতে পারে।
আলিফ-অর্নি ঠিক ওদের বাবার মতোই হয়েছে জানো?অর্নিতো বাবার প্রতিবিম্ব।
আকাশও ছোট বেলায় এমন ছিল।মা-বাবার কাছ থেকে একটা দূরত্ব বজায় রাখতে চাইতো।একটা প্রাইভেসি মেনে চলতো।ওর ভাষ‍্যমতে মা কিছু বোঝেনা।মাকে কিছু বলা যায়না।অথচ এই মা ই কতো কষ্ট করে ওকে জন্ম দিয়েছে।লালন-পালন করে মানুষ করেছে।বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলে আমার চলে গেছে এই একই অযুহাত দিয়ে।
আমার মন কেঁদেছে বহু।
তোমার হয়েছেও একই দষা।তোমার ঐ বিষণ্ন চোখজোড়া তার প্রমাণ।
আমার কাছে বহুবার এলে তুমি।ছেলে-মেয়ে নিয়েও এলে কবার।
লক্ষ‍্য করেছি,আলিফ-অর্নি কেউই তোমার প্রতি তেমন যত্নশীল নয়।তেমন ভালোওবাসেনা।কদর তো দূরে থাক।
এজন্যই বলি রক্ত কখনো দু-ভাগ করা যায়না।
সে তুমি যতোই ওদেরকে ওদের বাবার কাছ থেকে দূরে রাখো,বাবার গুণ ওরা পাবেই।
পেয়েছেও।বাবার মতোই নিজ স্বার্থে অটল তারা।”

আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,”কখনোই না।বাবার ছায়াতলে না ওরা ছিল,না কখনো থাকবে।
ওরা আমার আদর্শে বড়ো হয়েছে।
আমি পেরেছি আমার সন্তানকে মানুষ করতে।ওদের নিয়ে লোক-সমাজে আমি মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারি।কেউ আমার সন্তানদের বিষয়ে দুটো মন্দ কথা বলেনা।ওরা পড়াশোনায় ভালো।মানুষকে সম্মান করতে জানে।
সভ‍্য,ভদ্র, ন‍্যায়পরায়ণ মানুষ হিসেবে ওদের আমি গড়ে তুলেছি।মানুষের মতো মানুষ করেছি।”

“আমিতো বলিনি ওরা মানুষ হয়নি।মানুষ হয়েছে ঠিকই।তবে স্বার্থপরও হয়েছে খানিকটা।”

আর জবাব দিলাম না আমি।সন্তান নিয়ে কেউ কিছু বললে আমার খারাপ লাগে ভীষণ।
পার্স থেকে একটা হাজার টাকার নোট চেয়ারে রেখে হাঁটা ধরলাম সামনে।
মা পেছন থেকে বলে,”জানো তন্নি,আমাদের মায়েদের এই একটা দোষ।সন্তানের অন‍্যায় কখনো চোখে পড়েনা।সন্তান যদি খু*নের আসামিও হয় আমরা মায়েরা চাই তারা ভালো থাক।সুস্থ থাক।”

বললাম,”আমার সন্তানরা খু*নি নয় মা।খু*নি হবেও না।
আপনার ছেলের মতো প্রয়োজন শেষে মানুষকে ছুড়েও ফেলবেনা।”

“সময় কথা বলবে তন্নি।”

আমি হনহনিয়ে চলে আসি সেখান থেকে।
গাড়িতে বসি।মায়ের বলা কথাগুলো ভাবতে লাগি।জানিনা ভাগ‍্যে কী আছে আমার।যাই থাক,আমি কখনোই পথভ্রষ্ট হবোনা।বাচ্চাদের আমি বহু কষ্ট করে মানুষ করেছি।ওরা নিশ্চয় আমায় ফেলবেনা।

এসব ভাবতে ভাবতে এতিমখানায় পৌঁছলাম।কিছু কাজ ছিল আমার।কাজগুলো শেষ করে অর্নির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম ব্রেঞ্চে বসে।
অর্নি এলো মিনিট পাঁচেক পর।
মুখটা সেই থমথমে।
ওর বয়সি বাচ্চারা কতো প্রাণবন্ত,চলমলে থাকে।সেখানে আমার মেয়েটা এতো নির্জীব।
আমি চাই আমার মেয়ে হাসুক।মাকে দেখে দৌড়ে এসে ঝাপিয়ে পড়ুক মায়ের কোলে।সারাদিনের ছোট্ট-মিষ্টি গল্পতে মেতে উঠুক।

কিন্তু না!
ও তা করেনা।চুপচাপ মন খারাপ থাকে।যেন কিছু নিয়ে চিন্তা করে।
ওর চিন্তা করার মতো কোনো কারণ আমি পাইনা।অর্নি যা পেয়েছে বা পাচ্ছে আলিফও তা পায়নি।ওর প্রয়োজনীয় সব জিনিস বলার আগেই হাজির করি আমি।
তবুও কিসের এতো ওর মন খারাপ? জিজ্ঞেস করলেও বলেনা।এড়িয়ে যায়।
মাঝে-মধ‍্যে মনে হয় অর্নি শুধু আমার সামনেই এমন।
ভেবেছি এ বিষয়ে ওর শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করবো।ক্লাসে ওর মনোযোগ কেমন জানতে চাইবো।

আমার ভাবনার মাঝখানে অর্নি এসে পাশে বসে চুপচাপ।
আগ বারিয়ে আমি বললাম,”ক্লাস কেমন হলো?”

“ভালো।”

এক কথাতেই ওর উত্তর শেষ।আর কোনো কথা নেই।
আমি আবারো সুধালাম,”কী ক্লাস হলো?”

“ইংরেজি।”

এরই মাঝে এক মেয়ে এসে অর্নিকে ডাকে।অর্নি উঠে চলে যায়।
আমিও অফিসরুমে যাই।অর্নির একজন শিক্ষককে ডেকে আনি।তার সঙ্গে কথা বলি এ বিষয়ে।
সেও দেয় একই উত্তর।বলেন,”অর্নি পড়াশোনায় ভালো,তবে চুপচাপ ভীষণ।সারাক্ষণ যেন একটা ঘোরের মাঝে থাকে। জিজ্ঞেস করলেও চুপ থাকে।মেয়েটা ক্লাসের কারো সঙ্গে তেমন মেশেনা।নিজ খেয়াল-খুশি মতো চলে।
ওকে দেখে মাঝে-মধ‍্যে আমিও ভীষণ অবাক হই।এতোটুকু বাচ্চার কীসের এতো চিন্তা?
আমার মনে হয় আপনার ওকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া উচিৎ।সময় কাঁটানো উচিৎ।হয়ত এখানে একা থেকে থেকে ওর এই মানসিক অবস্থা তৈরী হয়েছে।ওর সঙ্গে ফ্রি হন।সমস‍্যা কী জানুন।ঘুরতে যান।নিজেদের মতো আনন্দ করুন।
আপনি মা,পারলে আপনিই পারবেন সন্তানের মাঝে পরিবর্তন আনতে।”

ম‍্যামের সঙ্গে কথা শেষ করে বাইরে আসি।
ভাবনায় পড়ে যাই।
ম‍্যামের বলা প্রতিটি কথাই ঠিক।
না জানি এই টুকু মেয়ের মাথায় কী চলে!
জানতে হবে আমার।কোনো সমস্যা থাকলে সমাধান আছে।প্রয়োজনে চিকিৎসা করাবো।তবুও আমি চাই আমার মেয়েটা আর পাঁচটা স্বাভাবিক বাচ্চার মতো থাক।এই এক মেয়ের জন্য আমি কম তো চেষ্টা করিনি।কাছে রাখার চেষ্টা করেছি।ও থাকেইনা।
আমার আলিফ কিন্তু এতোটা গম্ভীর নয়।ও মোটামুটি সব কথাই শেয়ার করে আমার সঙ্গে।
অর্নি কার মতো হয়েছে জানিনা।মেয়েটা ঠিক মতো ডাকেও না আমায়।
ওকে নিয়ে বাইরে যেতে হবে আমার। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে সমস্যা জানতে হবে।

একটা বুদ্ধি আসে আমার মাথায়।
তড়িঘড়ি অর্নির কাছে যাই।গিয়ে বলি,”আজ আমার একটা কাজ আছে।খুবই গুরুত্বপূর্ণ।না গেলেই নয়।এদিকে আমার শরীরটাও খারাপ করছে।তোমার ভাই ও নেই যে ওকে নিয়ে যাবো।
তুমি একটু আমার সঙ্গে চলো প্লিজ মা।তোমাকে ভীষণ প্রয়োজন আমার।”

“কিন্তু আমার তো ক্লাস আছে আম্মু।”

“একটা দিন ক্লাস মিস গেলে আহামরি কিছু হবে না।প্রয়োজনে আমি তোমার শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলবো।তিনি ক্লাসে যা পড়াবেন পরে তা তোমায় বুঝিয়ে দেবে।
তুমি দয়া করে আমার সঙ্গে চলো বাবা।তোমরা ছাড়া আমার আর কে আছে বলো!”

অর্নি চুপ করে রইলো।এদিকে আমি ওর উত্তরের আশায়।
কিছুপল পর সে বলল,”ঠিক আছে।আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি।তুমি এসো।”

মেয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।মনটা আমার বেজায় খুশি।যদিও মিথ্যা বলেছি আমি।মিথ‍্যা না বললে অর্নি কখনোই যেত না আমার সঙ্গে।
আজ মা-মেয়ে আমরা অনেক আনন্দ করবো।

এই ভেবে গাড়িতে গিয়ে বসলাম।মেয়েকে দেখি বুকে দু-হাত ভাঝ করে মাথা নত করে বসে আছে।
আমিও বসলাম ওর পাশে।গাড়ি চলতে শুরু করলো।মনের আনন্দে আমি একের পর এক কথা বলতে লাগলাম।আমার ছোট বেলার মজার দুটো কথা বললাম।মেয়েকে হাসানোই আমার মূল উদ্দেশ্য।
আমি একাই কথা বলে যাচ্ছি শুধু।মেয়ে চুপ।
কিছু সময় পর অর্নি বিরক্ত সহিত বলল,”তুমি না অসুস্থ।তাহলে এতো বলছো কীভাবে?”

মেয়ের কথায় চুপ করলাম আমি।
বসে রইলাম স্থির।

একটা পার্কে এসে পৌঁছাই।পার্ক দেখেই অর্নি ভ্রূ কুচকেছে।
আমি অর্নির হাত ধরে নিচে নেমে ভেতরে গেলাম।

কতো মানুষের সমারহ এখানে।অর্নির বয়সি বাচ্চারা পরিবারের সঙ্গে মজা করছে।খাচ্ছে,খেলছে,ঘুরছে।মেয়ের হাত ধরে এদিক-সেদিক যাই।এটা-ওটা দেখাই।খুশি আমার আকাশ ছোঁয়া।অর্নির মাঝে তার ছিটেফোটাও নেই।
মেয়ে চরম বিরক্ত নিয়ে বলল,”কোথায় তোমার কাজ আম্মু?”

আমি জবাব দিলাম না।প্রসঙ্গ পালটাতে একটা খাবার স্টলে গিয়ে বসলাম।কতো রকম খাবার অর্ডার করলাম।
মজা করে খেতেও লাগলাম।অর্নির মুখের সামনে একটা খাবার ধরলাম।
ও খায়না।বলল,”এসব আমার পছন্দ নয় আম্মু।”

উঠে গেল সে।দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
আমার মনক্ষুন্ন হলো।বড়োই আশা নিয়ে খাবার গুলো অর্ডার করেছিলাম আমি।
কী হতো এক টুকরো মায়ের হাতে খেলে?
ও ওর জেদ মতোই চলবে।আমার আবেগ,ভালোবাসার কোনো দামই নেই।
আর গলা দিয়ে খাবার নামেনা আমার।এতোসব খাবার কী করি এখন?
বাড়িতে নিলেও নষ্ট হবে।ভাবি বা ভাই বাইরের খাবার একদমই খায়না।
বাধ‍্য হয়ে ওখানকার কিছু বাচ্চা ডেকে খাবার গুলো দিয়ে দেই।ওরাতো খাবার পেয়ে ভীষণ খুশি।অথচ যার জন্য অর্ডার করলাম,সে ছুয়েও দেখলোনা।

বিল মিটিয়ে অর্নির কাছে গেলাম।হেরে গেলে চলবেনা আমার।সুযোগ যখন পেয়েছি,হাত ছাড়া করা যায়না।
অর্নিকে অতি আগ্রহ নিয়ে বললাম,”চলো অর্নি ওদিকে যাই।ওখানে একটু সুন্দর ফুলের বাগান আছে।”

মেয়ের হাত ধরে এগোতে যাবো,মেয়ে জোর করে ছাড়িয়ে নেয় হাত।চিৎকার করে বলে,”সমস‍্যা কী তোমার আম্মু?মিথ‍্যা বলে কেন নিয়ে এলে আমায়?তুমি জানতে আমার ক্লাস আছে।
তোমার থেকে এমনটা আশা করিনি।”

ওর চিৎকারে আশেপাশের মানুষ তাকিয়ে আমাদের দিকে।কেউ কেউ ফিসফিস করছে।কেউ বা হাসছে।লোক সম্মুখে মেয়ে আমায় হাসির খোড়াক বানিয়ে দিয়েছে।
তবুও নিজেকে যথাসাধ‍্য শান্ত রেখে ধীর স্বরে বললাম,”আসলে তুমি সবসময় মনমরা থাকো এজন্যই ঘুরতে নিয়ে এসেছি তোমায়।ভেবেছিলাম তোমার মন ভালো হবে।
মিথ‍্যা বলা ছাড়া উপায় ছিল না আমার।সত‍্য বললে তুমি আসতে না কখনোই।
তোমার সঙ্গে আমার একটু খোলামেলা কথা বলা প্রয়োজন ছিল।তোমার সমস্যা গুলো জানার দরকার।
বাড়িতেও তো তোমায় কাছে পাইনা।তুমি বাড়ি যেতেই চাওনা।এজন‍্য এখানে নিয়ে এসেছি।”

অর্নি রাগান্বিত স্বরে বলে,”বাড়িতে গিয়ে কী করবো আমি?
কে আছে আমার বাড়িতে?
সবার বাড়িতে ফ‍্যামেলি থাকে।আমার কে আছে ওখানে?কোনো ফ‍্যামেলি আছে?
সবাই বাড়িতে থাকে কারণ বাড়িতে তাদের সুন্দর একটা পরিবার আছে।মা-বাবা আছে।
আমার বাবা আছে?
নাচের ক্লাসে সকলে আমার বাবার পরিচয় জানতে চাইলে আমি বলি আমার বাবা নেই।তখন সবাই আমায় নিয়ে হাসে।বলে আমি নাকি আকাশ থেকে পড়েছি।
আর কতো সহ‍্য করবো বলোতো আম্মু?তবুও আমি ঠিক আছি।আর তুমি আমায় জোর করো।
ঐ বাড়ি গেলে আমার দমবন্ধ লাগে।তুমি কী তা বোঝোনা?
তুমি শুধু আমাদেরকে বাড়ির মাঝে আটকে রাখতে চাও।আমাদের বোঝোনা একটুও।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
অন‍্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।

অর্নি থামে।
আমি চুপ।মস্তিস্ক ফাঁকা লাগছে আমার।ওর বলা কথাগুলো কানে বাজছে বারবার।
চারপাশের লোকজন আমাদের নিয়ে গুঞ্জন করছে।পেছন থেকে এক মহিলা ধীর স্বরে বলে,”মা টা কী পাগল!জোর করে মেয়েটাকে বন্দি করে রাখতে চায়।”

নিজেকে সত‍্যিই পাগল মনে হচ্ছে আমার।

অর্নি আবারো বলে,”লোকে আমাদের দেখছে আম্মু।বাড়ি চলো দ্রুত।
আমার ভালো লাগছেনা।”

আমি স্থীর তবুও।পা যেন অসাঢ় হয়ে আছে।

“ঠিক আছে।তাহলে তুমি থাকো।আমি এতিমখানায় চলে যাই।”

অর্নি এগিয়ে যায়।ড্রাইভারকে গিয়ে বলে,”আমায় এতিমখানায় ড্রপ করে দিন আঙ্কেল।এসে আম্মুকে নিয়ে যাবেন।”

ড্রাইভার আমার দিকে তাকালে আমি শুধু হালকা মাথা ঝাকিয়ে অনুমতি দেই।
মেয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।সঙ্গে সঙ্গে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলো।
ড্রাইভারকে দেখলাম পেছন ঘুরে কী যেন বলতে গেল।হয়ত এই বৃষ্টির মাঝে আমায় একা ফেলে যাওয়ার কথা।
মেয়ে তাড়া দিয়ে বলে,” তাড়াতাড়ি চলুন।বৃষ্টি বাড়লে আমি আর যেতে পারবোনা।”

অগত‍্যা ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়।
অর্নি চলে যায়।
এই ঝড়-বাদলের মাঝে মাকে ফেলেই সে চলে গেল।
আমি ছলছল নয়নে গাড়ির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ততক্ষণে আশপাশ প্রায় খালি হয়ে গেছে।বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে যে যার মতো পালিয়েছে।
খোলা দোকানপাট গুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
খাবার স্টল ওয়ালারা ভ‍্যানে যে যার জিনিস উঠিয়ে বাইরে চলে গেল।
মূহুর্তে পরিবেশ পুরো ফাঁকা।ঠিক এটারই অপেক্ষা করছিলাম আমি।

আকাশ পানে তাকিয়ে চিৎকার করে কাঁদলাম।আমার কান্নার তালে বৃষ্টির গতি বাড়লো।নিজের কান্নার শব্দ আমি নিজেই শুনতে পাচ্ছিনা।
চিৎকার করে বললাম,”কোন পাপের শাস্তি আমি প্রতিনিয়ত পাই সৃষ্টিকর্তা?
দোষটা কী আমার?
এই পৃথিবীতে মানুষ হয়ে জন্ম নেওয়াই কী আমার দোষ?
আমিতো ইচ্ছা করে আসিনি এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে।আপনি পাঠিয়েছেন।
পাঠালেনই যখন,কপালে এতো দুঃখ লিখে পাঠালেন কেন?
শৈশব পার হলো দুঃখে দুঃখে।কিশোরও গেল কষ্টে।এরপর বিয়ে হলো।জা-শাশুরির অত‍্যাচারে জীবন প্রায় ধ্বংস হলো।শেষকালে স্বামীর পরকীয়া,ডিভোর্স,দ্বিতীয় বিয়ে।
ছেলে-মেয়ে নিয়ে রাস্তায় এলাম।কতো সংগ্রাম করে ওদের মানুষ করলাম।শেষ পর্যন্ত ওরাই আমার দোষ দেয়?
এখানে আমার কী দোষ?
আমি কী ওদের ইচ্ছে করে বাবা ছাড়া করেছি?ওদের বাবা ওদের ছাড়লে আমার কী দোষ?আমিতো কম চেষ্টা করিনি টিকে থাকতে।দিনের পর দিন অত‍্যাচারিত হয়েছি শুধুমাত্র টিকে থাকতে।তবুও ব‍্যর্থ হয়েছি।
সন্তানদের ওপর যেন এর প্রভাব না পড়ে এজন্য কখনো ওদের কোনো জিনিসে অভাব দেইনি।যা চেয়েছে দিয়েছি।প্রয়োজনে নিজে কম নিয়েছি।
তবুও আমি চেয়েছিলাম সব ঠিক করতে।ওদের কথা ভেবে নিজের সকল আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে আবারো আকাশের সঙ্গে মিলতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু সে তো আবারো নতুন প্রেমে মগ্ন।আমারই এতিমখানার রান্নার কাজের মহিলাকে বিয়ে করে সুখে সংসার করছে।
তাহলে আমার কী করার?পায়ে ধরে ওর সঙ্গে সংসার বাধবো আমি?এতোটাই স্বস্তা আমি!
আমার সন্তানদের জন্য আমি যা করেছি,যা ত‍্যাগ করেছি অন‍্য কোনো মা করবে কিনা সন্দেহ!
তবুও আমি দোষী।
মোদ্দাকথা আমি ওদের জীবনে কেউ না।
আমার সব কর্ম,ত‍্যাগই ওরা ভুলে গেছে।
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।

আজ আমার নিজের প্রতি বড্ড করুণা হচ্ছে।
কী লাভ হলো এতো কষ্ট করে?
আমি আর পারছিনা।দম বন্ধ লাগছে।আমার জীবনের কোনো মানেই নেই।কার জন্য বাঁচবো আমি?যেই ছেলে-মেয়েদের জন্য এতোকাল কষ্ট করেছি আজ সেই সন্তানই আমার খুত ধরে।হয়ত এটাই আমার পাপ‍্য ছিল।
আমায় উঠিয়ে নিন সৃষ্টিকর্তা।অন‍্যথায় আমার দুঃখ লাঘব করুন।
কাউকে দিন আমায় বুঝতে।আমার দুঃখগুলোকে আপন করে নেবে যে।
কেউ একজনকে খুব প্রয়োজন আমার।”

মাথা নিচু করে বিনাশব্দে চোখের জল বিসর্জন দিতে লাগলাম।
হঠাৎ মাথার ওপর ছাতা মনে হলো।
এক পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে এলো।

“এইযে তন্নি ম‍্যাম!
এখানে একা কী করছেন আপনি?মেয়ের সঙ্গে ঘুরতে এসেছিলেন বুঝি?
আপনার মেয়েকে দেখলাম গাড়ি করে চলে গেল।
আমি এসেছি আমার কলিগের সঙ্গে।মানে যার বাড়িতে থাকি আর কী!
ওরা আজ পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছে।আমি আসতে চাইলাম না।জোর করে নিয়ে এলো।বৃষ্টির জন্য বাড়ি ফিরেই যাচ্ছিলাম।হঠাৎ ভেতরে আপনাকে একা দেখলাম বৃষ্টির মাঝে।তাই উনাদের পাঠিয়ে দিয়ে এগিয়ে এলাম।
তা আপনি এই বৃষ্টিতে একা বসে আছেন কেন?”

স‍্যার গড়গড়িয়ে এতোগুলো কথা বলে গেল।
আমি কর্ণকূহরে পৌঁছেনি কিচ্ছু।আমি আছি অন‍্য দুনিয়ায়।
প্রবল বৃষ্টির মাঝে স‍্যার আমার চোখের জল দেখতে পাচ্ছেন না হয়ত।না পাওয়াটাই স্বাভাবিক।

তিনি আবারো প্রশ্ন করলেন,”কী হলো ম‍্যাম?কথা বলছেন না কেন?
ভিজছেন কেন এভাবে?
অসুস্থ হয়ে যাবেন তো আপনি।”

আমি এবারেও নির্বাক।শুধু নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছি।

এমন সময় বেশ শব্দ করে বিদ‍্যুৎ চমকায়।
স‍্যার একহাতে নিজের কান ঢেকে এক পা এগিয়ে আসে।

আমার দিকে হাত বাড়িয়ে তড়িঘড়ি বলে ওঠে,”তাড়াতাড়ি উঠে আসুন ম‍্যাম।বাজ পড়ছে।যে কোনো সময় বিপদ হতে পারে।”
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।

নিজের সামনে স‍্যারের হাত দেখে কী যেন মনে হলো আমার।খপ করে তার হাতটা আগলে ধরে উচ্চশব্দে কেঁদে উঠলাম আমি।
আমার কান্ডে স‍্যার হতবাগ।বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে রইলেন কিছুপল।
আমার কান্নার গতি বাড়ে।স‍্যার ধপ করে আমার পাশে বসেন।
আমি কাঁদি ইচ্ছে মতো।স‍্যার কিছু বলেনা।কাঁদতে দেয়।
মিনিট পাঁচেক পার হয় এভাবেই।বৃষ্টির ভাব কমে আসে।আমার দু-হাতে তখনও স‍্যারের হাত আলগানো।
নিজের এই শোকাপূর্ন অবস্থায় স‍্যারের হাত টি কেন যেন বিশ্বাস যোগ্য লেগেছে আমার।

আমার কান্না কমে কিছুটা।হেঁচকি তুলছি এবার।
স‍্যার নিরবতা ভেঙে বলেন,”আপনি ঠিক আছেন?”

আমি জবাব দেইনা।নিজেকে সামলাতে সময় নেই।
স‍্যার আমার মুখপানে তাকিয়ে রয় এক দৃষ্টিতে।
বৃষ্টি কমে এলেও এবার শুরু হলো ঠান্ডা বাতাস।দীর্ঘক্ষণ ভিজে আছি আমি।
ঠান্ডা বাতাসে শরীরের শিরা বেয়ে যেন শিতল স্রোত নামে।কেঁপে উঠি মৃদু।
স‍্যার বুঝতে পারেন বিষয়টি।

বলেন,”সবকথা পড়ে হবে।আগে আপনি চলুন আমার সঙ্গে।না’হয় অসুস্থ হয়ে পড়বেন।”

তিনি উঠে দাঁড়ায়।আমার দিকে হাত বাড়ায় আবারো।তার সাহায্যে উঠে দাঁড়াতে বলে।
আমি তার হাত ধরে কোনো মতে উঠে দাঁড়াই ঠিকই।কিন্তু চলতে পারিনা।
বুক ভার হয়ে আসে।বুকের দু-পাশ থেকে যেন চাপ দিয়ে ধরছে।
হাত-পা অবশ হয়ে আসে।চোখে অন্ধকার নামে।শরীর ছেড়ে দেই আমি।
কেউ আমায় আগলে নেয় খুব যত্নে।পুরোপুরি জ্ঞান তখনো হারাই নি।চোখটা আধমেলা করে দেখি স‍্যার চিন্তিত মুখে আমার নাম নিতে নিতে আমায় কোলে তুলে নিয়েছে।
হাতের ছাতাটা কাঁদা পানিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে সেই কখন থেকেই।প্রবল বাতাসে ছাতা এবার গাছে উঠেছে।

স‍্যার ভিজে একাকার।নাকের ডগাটা লাল হয়ে আছে যেন।চুল দিয়ে তার টপটপ পানি পড়ছে।
আমার গালে এসে পড়ে কয়েকফোটা।
আমি চেয়ে আছি আধখোলা দৃষ্টিতে।নিভু নিভু ভাব আমার।নিভছিনা তবুও।
শিতল বায়ু স্পর্শ করে আমার দেহ।নিজেকে গুটিয়ে নেই আমি।
ধীরে ধীরে হারিয়ে যাই অতলে,গভীরে।

চলবে।