#আমিই_সেই_তন্নি
#Nadia_Afrin
৮
একের পর এক কল আসছে ফোনে।রিসিভ করতে পারছিনা ঘুমের কারণে। জমের ঘুম ধরেছে আমার।
চারবারের বেলা কল রিসিভ করতে সক্ষম হলাম।ঘুমের দৃষ্টিতে কে কল দিয়েছে সেটাও দেখিনি।
রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলতেই অপর পাশের পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে এলো।
ঘুম উড়ে গেল মূহুর্তেই।বিছানায় উঠে বসলাম দ্রুত।
আলিফ বলছে,”আম্মু তোমার নাকি শরীর খারাপ?পারুল আন্টি বলল।”
বললাম,”আজ কল দেওয়ার কথা মনে হলো তোমার?
আমি অসুস্থ কাল থেকেই।”
“ওহ স্যরি আম্মু।পড়াশোনার চাপে ব্যস্ত ছিলাম।
যাইহোক,কেমন আছো এখন?ঔষধ খেয়েছো ঠিক মতো?”
এককথায় জবাব দিলাম,”হ্যা।”
এরপর আর কিছুই বললাম না।ছেলে আগ বাড়িয়ে বলে,”আম্মু কিছু টাকার প্রয়োজন ছিল।”
মুচকি একটু হাসলাম এবার।
বললাম,”তাহলে এই জন্যই কল দিয়েছো বুঝি?”
“এভাবে কেন বলছো আম্মু?মায়ের কাছে টাকা চাইবো না তো কার কাছে চাইবো?”
“থাক বাদ দাও।পাঠিয়ে দেব তোমার নাম্বারে।এখন রাখছি।”
কল কেঁটে উঠে দাঁড়ালাম।টাকার বেলায় মা।অসুস্থ যেনেও অসুস্থতার কারণ জানতে চাইলোনা একবারো।ভাবি ঠিকই বলে,প্রয়োজনে আমি ওদের মা।প্রিয়জনে মা নই।
বারান্দার রোলিং চেয়ারটাতে বসলাম।শরীরটা হালকা লাগছে একটু।
আপনমনে ভাবছিলাম নিজ জীবনের কথা।আমি একটা মানুষ,দু-দিন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকলেও আপন মানুষ খোঁজ নেবেনা।
স্যার,ভাবি এরা কিন্তু আমার রক্তের কেউ নয়।তবুও আমায় নিয়ে কতো ভাবেন এরা।অথচ যাদের জন্য জান প্রাণ দিয়ে খেটেছি,তাদের কাছে কোনো মূল্যই নেই।মাঝেমধ্যে মনে হয় আপনগুলো না থেকে এই রক্তের সম্পর্ক ছাড়া পর মানুষ গুলোকেই আপন করে নেই।অন্তত এরা আমার কদর করতে জানে।
পেট থেকে দু-দুটো সন্তানের জন্ম দিয়েছি।দিন শেষে তারাই হয়েছে পর।
ছেলেটা কল দিল নিজ প্রয়োজনে।মেয়ে এখনো দেয় নি।মায়ের কথা ওর মনেই থাকেনা।
আমিও আর আগ বাড়িয়ে কিছু করতে যাবোনা।শিক্ষা হয়ে গেছে আমার।আমিও মানুষ,আমারো ভালো লাগা মন্দ লাগা আছে।
আপন মনে এসবই ভাবছিলাম,হঠাৎ ফোনের মেসেজ টোন বেজে ওঠে।
ফোন হাতে নিয়ে দেখি ইয়াসির স্যারের ম্যাসেজ।
আমার সুস্থতা জানতে মেসেজ করেছেন তিনি।
ততক্ষণাৎ রিপ্লাই দিলাম,”মোটামুটি সুস্থই আছি।আপনি কেমন আছেন?আর কোথায় আছেন?”
তিনি জানালেন তিনি নাকি কলেজেই আছেন।
ক্লাস একটু পর।
আর কথা বাড়ালাম না আমি।
বাথরুমে গিয়ে গোসল সেরে বাহির হলাম।কিছু কাজ আছে বাইরে।
তৈরি হয়ে নিচে নামতেই ভাবি শুরু করলো হাই-হুতাশ।দূর্বল শরীর নিয়ে বাইরে যেতে নিষেধ করছেন।
তাকে বুঝিয়ে বললাম,”ঘরে থাকতে ভালো লাগছেনা ভাবি।
কাজের উসিলায় একটু ঘুরে আসাও হবে।চিন্তা করোনা আমায় নিয়ে।ঘন্টা খানিক পরই ফিরে আসবো।তুমি একটু ঝাল ঝাল করে আমার জন্য কিছু বানিও।খেতে ইচ্ছে করছে খুব।”
কথা বলে বেড়িয়ে এলাম।
গাড়িতে গিয়ে বসলাম।
ড্রাইভার স্টার্ট দেয় গাড়ি।একটা ক্যাফেতে পৌঁছে একজন লোকের সঙ্গে দেখা করলাম।
ইনি আমাদের ফান্ড দেবে।
সকল শর্ত সহ পেপার্স গুলো দেখে সাইন করে বেড়িয়ে এলাম।উনি যদিও কফি খেতে বলেছিল।আমি খাইনি।
দশ মিনিটেই কাজ শেষ করে আবারো গাড়িতে গিয়ে বসলাম।
ড্রাইভারকে বললাম,এতিমখানা হয়ে যেতে।কাগজগুলো জমা দিতে হবে।উল্টো পথে গাড়ি চলা শুরু করলো।
কিছুদূর যেতেই হঠাৎ একটি দৃশ্য নজরে এলো আমার।চোখের চশমা খুলে সরু চোখে তাকালাম সেদিকে।
এক লোককে রাস্তার কিছু মানুষ ধরে বেধড়ক পেটাচ্ছে।
লোকটাকে চেনা মনে হলো।গাড়ির কাচ নামাতেই দেখলাম,সেটা আর কেউ নয়।আমার জীবনের অভিশাপ আকাশ।
কিন্তু ওকে সবাই এভাবে পেটাচ্ছে কেন?
মে*রে একপ্রকার র*ক্ত বাহির করে ফেলেছে।আর একটু হলে ম*রেই যাবে।
অবস্থা বেগতিক দেখে গাড়ি থেকে নামলাম।ড্রাইভার এগিয়ে গিয়ে ভির থেকে আকাশকে টেনে বাহির করলো।
আমি সকলকে উদ্দেশ্য করে বললাম,”কী সমস্যা?উনাকে এভাবে সবাই মিলে মা*রছেন কেন?”
এক লোক উচ্চস্বরে বলল,”মা*রবোনা তো কী করবো?এমন চো*র লোককে মা*রাই উচিৎ।
আপনি জানেন উনি কী করেছে?
দুদিন আমার দোকানের খাবার চু*রি করেছে।প্রথমদিন কিছু বলিনি।বুঝিয়ে মাফ করে দিয়েছিলাম।আজও আবার ভিরের মাঝে এসে খাবার চু*রি করেছে।
এসব চো*রদের ছাড় দিতে নেই।ধরে ঠ্যাং গুড়ো করলে শিক্ষা হবে।
হাত-পা আস্ত থাকতে কাজ করে খায়না কেন?
অন্যের দোকানে চু*রি করে খেতে লজ্জা করেনা?
আপনি ওকে আমাদের হাতে ছেড়ে দিন।এক ঠ্যাং ভে*ঙে পুলিশে দেই।”
একবার আকাশের দিকে তাকালাম আমি।
ভয়ে মাথা নিচু করে আছে।
এদের হাতে ছাড়লে নির্ঘাত প্রা*ণ যাবে ওর।
বললাম,”উনাকে আমি চিনি।উনার মানসিক সমস্যা আছে।অনুগ্রহ করে আর কিছু বলবেন না।যে টাকা লস হয়েছে আমি দিয়ে দিচ্ছি।”
দোকানদার লোকটি উচ্চস্বরে বলল,”মানসিক সমস্যা যেহেতু,বাড়ি থেকে বের হতে দিয়েছেন কেন?দেখে রাখতে পারেন না?
অন্যের টা চু*রি করে খায়!
কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে হবেনা।সাদকা দিলাম।উনাকে নিয়ে যান দ্রুত।আর যেন কখনো এখানে না দেখি।ফের দেখলে হাড্ডি একটাও আস্ত থাকবেনা।
সমাজটা এসব চো*রে চো*রে উচ্ছন্নে যাচ্ছে।”
লোকজন সব নিজ কাজে চলে যায়।
আকাশকে নিয়ে গাড়ির কাছে আসি আমি।
মিথ্যা কথা মানসিক সমস্যা বলে বাঁচিয়ে তো নিলাম।এবার করি কী একে?
দেখে তো মনে হচ্ছে যাওয়ার জায়গা কোথাও নেই।
ড্রাইভারকে বললাম আকাশকে নিয়ে হাসপাতাল যেতে।চিকিৎসা করিয়ে কিছু টাকা হাতে দিয়ে যেন বিদায় করে দেয়।এর বিষয়ে কিছু জানার ইচ্ছে আমার নেই।
অন্যের বোঝা আমি টানতে যাবো কোন দুঃখে।
ড্রাইভার ওকে গাড়িতে বসতে বলে নিজে বসলো।
আমি রিক্সার খোঁজে সামনের দিকে হাঁটা ধরলাম।
পেছন থেকে আকাশ আমার নাম ধরে ডেকে ওঠে।
থেমে যাই আমি।বহু বছর পর ওর মুখে আমার নাম।আবেগ কাজ করছেনা মোটেও।বরং ঘৃণা লাগছে।
ভ্রু কুচকে বললাম,”কিছু বলবেন?”
আকাশ একপা এগিয়ে এসে বলল,”তোমার কথা ভীষণ মনে পড়ে তন্নি।”
হাসতে হাসতে বললাম,”কেন?তিন নম্বর বউ চলে গেছে বুঝি?
নাকি মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে?”
আকাশ মাথা নিচু করে বলে,”তাড়িয়ে দিয়েছে।”
“তাড়িয়েই দিয়েছে যখন।তাড়া খেয়েই তাহলে বাকিটা জীবন কাঁটিয়ে দিন।পারলে রোজগার করে খান।এসব চু*রি-ডাকাতি ছেড়ে খেটে খান।আজ বাঁচিয়েছি বলে প্রতিদিন বাঁচাবোনা।”
কথাগুলো বলে সামনে ঘুরলাম আমি।
আকাশ আবারো বলে,”আমার সন্তানেরা কেমন আছে তন্নি?”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
অন্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।
রাগান্বিত স্বরে বললাম,”কার সন্তান?কীসের সন্তান?রাস্তায় ফেলে দেওয়ার সময় মনে ছিল না?”
“আমি ভুল করেছি তন্নি।ক্ষমা করে দাও।চলো আবারো আমরা এক হয়ে যাই।”
“এই কথা একবারই শুনলাম। দ্বিতীয়বার শুনলে মে*রে মুখ ভে*ঙে দেব।
আমার ধারেকাছেও যেন তোকে না দেখি।
রাস্তার কুকুর,রাস্তাতেই থাক তুই।”
কথাগুলো বলে হনহন করে হেঁটে চলে গেলাম আমি।
রিক্সা নিলাম।রিক্সায় বসে ভাবতে লাগলাম, পৃথিবীটা সত্যিই গোল।প্রতিটি মানুষের সঙ্গেই কোনো না কোনোদিন দেখা হয়েই যায়।
যদিও এ দেখা প্রথম নয়।
রিক্সাতে করে আর বাড়ি ফিরলাম না।
আজ বৃহস্পতিবার।মার সঙ্গে দেখা করার দিন আজ।যদিও সেদিন গিয়েছিলাম।আজ না গেলেও চলতো।কিন্তু আজ আমি যাবোই।অন্তত তার মুখের ওপর জবাব দিতে হলেও যাবো।
এই একটা মানুষের জীবনে এতো কিছু হয়েছে,তবুও অহংকার কমেনি।সাময়িক সময়ের জন্য ভুল ঠিকই বুঝেছে।তবে দিন শেষে আবারো তার অহংকার ফিরে এসেছে।
বলতে পারেন,যেই লাউ সেই কধু।
কিছু মানুষের স্বভাব আসলেই কখনো বদলায়না।যেমনটা হলো মা।
এনার ভাষ্যমতে দোষটা তার ছেলের হলেও আমিও সমান অপরাধী।পুরুষ মানুষ নাকি ভুল করেই।মেয়েদেরই মানিয়ে নিতে হয়।
কিন্তু কেন?মেয়ে বলে কী আমরা মানুষ না?
নারীর গর্ভেই কিন্তু জন্ম হয় সমগ্র জাতের।আর সেই নারীকেই ছোট করে দেখে এই সমাজ।
নিজের সকল আত্মসম্মানে জুতো মে*রে আবারো আকাশকে বিয়ে করতে বলেছিল তার মা।এতে নাকি সন্তানের মঙ্গল।বাচ্চারা বাবার পরিচয় পাবে।মনে মনে বলি,যেই না বাবার ছিড়ি,এর আবার পরিচয়।লোকে চো*রের ছেলে-মেয়ে বলে ভৎসনা করতো আমার বাচ্চাদের।
আমি সেদিনই মাকে সোজা না করে দিয়েছি।সেই থেকে হয়েছে আমার দোষ।
হলে হোক।ওসবে পাত্তা আমি দেইনা।
মা মানুষটা আমার মন থেকে উঠে গেছে সেই কবে।ছেলের মতোই একজন স্বার্থপর মানুষ তিনি।নিজের স্বার্থে অটল থেকে অন্যকে অসম্মান করতে চায়।
একে পালছি নেহাত বাধ্য হয়েই।আলিফ চায় তার দাদিকে ভরণপোষণ দিতে।
ছেলে তো ইনকাম করেনা।বাধ্য হয়ে আমাকেই নিতে হয়েছে দায়িত্ব।
ছেলে-মেয়ের আবদারের কাছে আমি বরাবরই দূর্বল।
ভাবতে ভাবতেই বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছালাম।
ভেতরে ঢুকে মাকে খুঁজলাম।
মা ঘরেই ছিলেন।আমার ডাক শুনে বেড়িয়ে এলেন।
চোখ দুটো সরু করে বললেন,”সেদিন না ঘুরে গেলে।আজ আবারো এলে?”
আমি আয়েশি ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে বললাম,”হ্যা এলাম।আপনার গুণধর ছেলের গুণের কারিশমা শোনাতে এলাম।”
মা মুখটা কঠোর করে বলল,”কেন?সে কী করেছে আবার?”
“ কী করেটানি সেটা বলেন।চু*রি থেকে শুরু করে ডাকাতি,সবই করেছে।
আপনার গুণের পাহাড় ছেলে আকাশ চু*রি করে রাস্তায় বেধড়ক মা*র খাচ্ছিলো।শেষে আমি গিয়ে বাঁচালাম।”
মায়ের মুখে দেখলাম হতাশ ভাব।
মনে মনে বললাম,এখন হতাশ হয়ে লাভ কী!
সময় থাকতে ছেলে শাসন করেননি।এখন তো এসব শুনতেই হবে।
“জানেন মা,আপনার ছেলের মতো ছুচোমির স্বভাবের পুরুষ মানুষ আমি খুব কমই দেখেছি ।
একটু ভালো কিছু দেখলেই মুখ দেওয়া স্বভাবে পরিণত হয়েছে।
কেমন একটা ছোটলোকি আচরণ!
নিজের প্রতি বড্ড আফসোস হয় ইদানিং।এমন ছোটলোককে একসময় ভালোবেসেছিলাম আমি।সত্যিই আমার মাথা খারাপ হয়েছিল তখন।”
“এভাবে বলছো কেন তন্নি?ও তোমার একসময় স্বামী ছিল।তোমার সন্তানের বাবা সে।”
“একসময় ছিল মা।এখন তো নেই।আর সন্তানের বাবা তো নামে মাত্র।কাজে নয়।
যেমন জমির আগে খুব সস্তার একটা সাইনবোর্ড টানানো থাকেনা?আকাশ হলো আমাদের জীবনে তেমন।”
“দোষটাতো তোমার তন্নি।কতোবার বোঝালাম তোমায় ওকে বিয়ে করো।নিজের ভুল বুঝে ছেলেটা কতো ক্ষমা চাইলো।তুমি জেদি মেয়ে জেদ ধরে বসে রইলে।
জেদ ধরে থেকেও কাউকেই তো পেলেনা।”
“আপনার ছেলের মতো সস্তা আমি নই মা।যেখানে সেখানে মুখ দেওয়াও আমার স্বভাব নয়।
আমি তন্নি চাইলে আকাশের চেয়ে হাজার গুণ ভালো ছেলেকে বিয়ে করতে পারি।
করিনা কেন জানেন?
ঐযে আমি ওর মতো স্বার্থপর নই।নিজ স্বার্থে বাচ্চাদের ছুড়ে ফেলবোনা আমি।”
মাকে দেখলাম চুপ করে আছে এবার।
মাথা নত করে রইলেন।আর কথা এগোতে চাইলাম না আমি।
যা বলার বলেছি।
ফিরে আসতে হাঁটা ধরলাম।
মা পেছন থেকে বলে,”ছেলেটাকে আশ্রয় দাও তন্নি।তোমার তো অনেক আছে।
ওকে আশ্রয় দিলে ফুরোবেনা।”
ঘুরে দাঁড়িয়ে বললাম,”দিয়েছিলাম তো মা।আশ্রয় ও দিয়েছিলাম,একটা ভালো কাজের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলাম।পুরুষ মানুষের হাতে কাজ না থাকলে মূল্য থাকেনা।
প্রেমিকপুরুষ ছেলে কী করলো?
আমারই এতিমখানায় থেকে সেখানকারই রান্নার মহিলাটার সঙ্গে প্রেমে জড়ালো।প্রেম ভালোবাসা ছাড়া আবার আপনার ছেলে থাকতে পারেনা।অধীক প্রেমে প্রতিবার জুতোর মা*র খায়।
জীবনে কম তো ভালোবাসা এলোনা তার।প্রত্যেকেই শেষ অব্দি জুতো মে*রে তাড়িয়ে দেয়।এবারেও তাই হয়েছে।আকাশের তিন নম্বর স্ত্রী ওকে মে*রে তাড়িয়ে দিয়েছে মা।
অবশ্য এটা হওয়ারই ছিল।রান্নার সেই মহিলাটা ভালো ছিল না বলেছিলামই।আগেও তিনতিনটা বিয়ে হয়েছে তার।তিন স্বামীকেই মে*রে তাড়িয়েছে।এতো দজ্জাল তিনি!
আপনার ছেলে তার প্রেমেই পাগল হলো।বোঝালাম তাকে।শুনলোনা।বাধ্য হয়ে আপনার কাছেও এসেছিলাম।বলেছিলেন কী মনে আছে?
আমি নাকি আপনার ছেলের সুখ সহ্য করতে পারছিনা।নিজে ভালো নেই তাই আকাশেরও ভালো দেখতে পারিনা।ও সুখে সংসার করবে দেখে নাকি আমার জ্বলছে।
কম তো অপমান করলেন না সেদিন।
প্রতিবাদ করিনি কারণ মূর্খের সঙ্গে তর্ক আমি করতে চাইনা।সব বুঝেও যে না বোঝার ভান করে থাকে,আমার দৃষ্টিতে সে মূর্খই।
সেদিন আপনাদের সতর্ক করেছিলাম কারণ আমি মানুষটা লোকের ক্ষতি দেখলে চুপ থাকতে পারিনা।আকাশের জায়গায় অন্যকেউ থাকলে তাই ই করতাম।
আফসোস!
আপনারা বুঝলেন না।ছেলেকে সাপোর্ট করলেন।আকাশ সেই মহিলাকে ভাগিয়ে বিয়ে করলো।
আক্ষেপ ছিল না কোনো।মনে মনে দোয়াই করেছিলাম।
কিন্তু হলো কী শেষ অব্দি?মে*রে ঠিকই তাড়িয়ে দিল।দেশের আইন নারীকে বেশি প্রাধান্য দেয়।পুরুষ নির্যাতনের কোনো আইন নেই।অবশ্য সব পুরুষ নির্যাতন হয়ও না।আকাশের মতো কিছু মেরুদন্ডহীন পুরুষেরাই নির্যাতিত হয় নারীর হাতে।এটা এদের প্রাপ্য।বিয়ে করে ভেবেছিল বউয়ের ইনকাম খাবে পায়ের ওপর পা তুলে।বউ ঠিক ঝেটিয়ে দিয়েছে।
আপনার ছেলেকে বিয়ে করে মহিলা চার বিয়ের ফরজ কাজ আদায় করেছে।
কথাটা হাস্যকর হলেও সত্যি।”
মাকে দেখলাম মাথা নিচু করে বলল,”কোন কুক্ষণে যে এমন ছেলের জন্ম দিয়েছিলাম!”
“কেন মা?এই ছেলেকে নিয়েই তো আপনার গর্ভের শেষ ছিল না।কম শিক্ষিত বলে কতো ছোট করতেন আমায়।
বিখ্যাত বিজনেস ম্যান আপনার ছেলে।
বর্তমানে চুরি করে খায় যিনি।”
মায়ের মুখে আর কোনো কথা নেই।
বললাম,”তা এবার কী করবেন ছেলে নিয়ে?আজ তো মা*রের হাত থেকে বাঁচিয়ে হাসপাতাল পাঠালাম।পরের বার কিন্তু আর রক্ষা নেই।
কী করবো আপনার ছেলেকে?কোথায় দিয়ে আসবো?বাড়িঘরও তো নেই।”
“কী আর করবে।এখানেই নিয়ে এসো।তোমার কথা শুনে মনে তো হলোনা আর সাহায্য করবে ওকে।তাই এখানে আমার কাছে নিয়ে এসো।”
“এটা বৃদ্ধাশ্রম মা।কোনো সার্কাস সেন্টার নয় যে আপনার ছেলে এসে সার্কাস দেখাবে।
বৃদ্ধাশ্রমটা আমার বা আপনার বাপ-দাদার সম্পত্তিও নয়।যে যাকে তাকে নিয়ে আসবো।এছাড়াও আকাশকে এখানে এনে পরিবেশ নষ্ট করতে পারবোনা আমি।আপনার ছেলের নাহয় কোনো সম্মান নেই।কিন্তু এখানে যারা থাকে তাদের ঠিকই সম্মান আছে।”
মা কিছুক্ষণ ঝিম ধরে থেকে বলল,”তাহলে তন্নি তুমি এক কাজ করো।আকাশকে তোমার বাড়ি নিয়ে রাখো।ছেলেটা অসহায়।একা ছেড়োনা।ওর কিছু হলে তোমার বাচ্চারা এতিম হবে।এখন তাও পরিচয় টুকু পাচ্ছে।
তোমার বাড়িতে অনেক জায়গা।বড়ো বাড়ি।থাকোও একাই।আকাশকে নিয়ে যাও সেখানে।বাচ্চারা তাহলে অন্তত বাবার সান্নিধ্য পাবে কিছুটা।”
“বাবা মহান কোনো পেশার বা বিশেষ কোনো ব্যাক্তি নয়,যে তার সান্নিধ্য পেতে তপস্যা করতে হবে।সুতরাং আমার বাচ্চাদের কথা আপনার চিন্তা করতে হবেনা।আপনি নিজের ছেলের কথা ভাবুন।
রাস্তাঘাটে কদিন পর জুতোর মা*র খেয়ে পড়ে থাকবে আপনার ছেলে।যে পেশায় নেমেছে,তাতে লোকে জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
আর আমার বাড়ি যদি ঐ আকাশ সমানও হয়,তবুও সেখানে আপনার ছেলের জায়গা হবেনা।
বাড়িটা নিজের কষ্টের টাকায় করেছি।রক্ত ঘাম করা পয়সা আমার।
সেখানে ওর মতো অমানুষের কোনো স্থান নেই।ওর পায়ের ধুলো আমার বাড়িতে পড়লে বাড়ি কলঙ্কিত হবে।”
“তুমি মেয়ে বড্ড চোপা করো।একটা কিছু বললেই গায়ে ফোসকা পড়ে যায় যেন।”
“কী করবো বলুন মা!
আপনার বাড়ি থেকেই শিখেছিলাম এসব।আমি আবার নীতি খারাপ করিনা।তাই আপনার থেকে শিখে আপনাকেই ফেরত দেই।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।
“থাক বাবা!
হয়েছে হয়েছে।আর অপমান করোনা।অপমানে এখন আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
নেহাত যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।কপাল খারাপ বলে তোমার দয়ায় বেঁচে আছি।”
“কপাল তো খারাপ আমার।এতো করেও নাম নেই।আগেও কোনো দাম পাইনি,এখনো পাইনা।
অবশ্য এখন আর কিছু মনে হয়না।
ছাড় দিয়ে চলা শিখে গেছি।এখন শুধু আফসোস হয় মাঝেমধ্যে।
যেই অতীতকে আমি চরমভাবে ঘৃণা করি,সেই অতীতই বহন করে চলতে হয় প্রতিনিয়ত।
যাকগে সেসব।আমি উঠছি।ভালো থাকবেন।”
উঠে দাঁড়াতেই মা বললেন,”শুনলাম অর্নি নাকি বাবার খোঁজ করে ইদানিং।এ নিয়ে নাকি তোমার সঙ্গে ঝামেলাও হয়।
ছেলে-মেয়ের জন্য এতো করে লাভটা হলো কী?
সেই তো দিনশেষে বাবার কাছেই ফিরতে চায়।
তাই বলছি তন্নি,আকাশকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দাও।নাহলে দেখবে ছেলে-মেয়ে দুটোই তোমায় ছেড়ে চলে যাবে।”
মায়ের কন্ঠে স্পষ্ট ভৎসনা।আমায় নিয়ে মজা নিলেন তিনি।
আমি চুপ।তিনি জানতেন এই কথা বলে আমায় দমিয়ে রাখতে পারবেন।
কিন্তু এবার আর মাথা নিচু করে থাকবোনা আমি।
আমার সম্মান আমাকেই বজায় রাখতে হবে।
বললাম,”সে ওদের যদি একান্তই বাবার প্রয়োজন পড়ে,বাবার সঙ্গে রাস্তায় গিয়ে থাকুক।আমার কোনো সমস্যা নেই।
আমার বাড়িতে আমি আবর্জনা তুলবোনা কোনোমতেই।
এতে যদি ওরা আমায় ছেড়ে যায়,তো যাক।
এতো করেও যদি মন না পাই,তাহলে দরকার নেই ওমন সন্তান।আমার আদর্শকে যারা অপমান করবে,আমি তন্নি তাদের ক্ষমা করবোনা।হোক সে সন্তান বা খুব প্রিয়জন।
আর নিজেকে ছোট করবোনা আমি।
অনেক নিচে নামিয়েছি নিজেকে বাচ্চাদের কথা ভেবে।দিনশেষে সেই বাচ্চাই যদি মর্ম না বোঝে,তাহলে ওরা ওদের মতোই থাক।
জীবন কারো জন্যই থেমে থাকেনা।আপনার ছেলে আমায় ছেড়ে দিয়েছিল।রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছিল।আমি কিন্তু মরে যাইনি।থেমেও থাকিনি।সফলতা অর্জন করেছি।ছেলে-মেয়েকে মানুষ করেছি।
সুতরাং আমাকে ওতোটাও দূর্বল ভাববেন না।”
মা হয়ত আশা করেনি আমার মুখে এমন কথা।চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে বললেন,”এসব বলতে পারলে তুমি তন্নি?”
“হ্যা পারলাম।দেওয়ালে পিঠ ঠেকলে মানুষ অনেক কথাই বলতে পারে।”
বের হয়ে এলাম বৃদ্ধাশ্রম থেকে।
প্রতিবাদ করে মনটায় অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে।নিজের প্রতি একটা সম্মান কাজ করছে।
রিক্সার জন্য রাস্তায় দাঁড়ালাম।
গাড়ি ড্রাইভারের কাছে।আকাশকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি।
মিনিট পাঁচেক পর একটা রিক্সার দেখা পেলাম।রিক্সাওয়ালাকে ডাকতে যাবো এমন সময় পেছন থেকে কারো গলা শুনলাম।আমায় ডাকছে কেউ।
তাকিয়ে দেখি ইয়াসির স্যার গাড়ি থেকে মাথা বাহির করে আমায় ডাকছে।
এগিয়ে গেলাম আমি।
স্যার বললেন,”কোথায় যাচ্ছেন?এই শরীর নিয়ে বের হয়েছেন?”
“এখন অনেকটাই সুস্থ আমি স্যার।
এক দরকারে এসেছিলাম।এবার বাড়ি ফিরছি।”
স্যার আশেপাশে তাকিয়ে বলল,”গাড়ি আনেননি দেখছি।আমার গাড়িতে উঠে বসুন।আপনায় ড্রপ করে দেই।”
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
আমি গিয়ে উঠলাম তার গাড়িতে।
স্যার গাড়ি স্টার্ট দিলেন।বললেন,”যদি সুস্থ থাকেন,আজ বিকেলে একটু বের হতে পারবেন আমার সঙ্গে?”
“কেন?”
“ঐ আসলে বাড়িটা আমি নিচ্ছি।সব মিটিয়ে ফেলেছি।বাড়ির মালিক আজ সকল পেপার্স নিয়ে কোর্টে আসবে।আমাকেও যেতে বলেছে।
আমি আমার বন্ধু মানে আপনার ম্যামের হাজবেন্ড আর ম্যামকেও আসতে বলেছি।আপনি গেলেও ভালো হয়।জায়গা জমির ব্যাপারতো!
কজন সাক্ষী হলে ভালো হয়।
এছাড়াও আপনার বাড়িরই পাশের বাড়ি।সুতরাং সবকিছু আপনি ভালো বুঝবেন।এজন্যই আর কী!
তবে আপনার যদি কাজ থাকে তাহলে থাক।”
“না না।আমি ফ্রি ই থাকবো।
আপনি আমায় কতো উপকার করেছেন।আমি আপনার জন্য এটুকু করতে পারবোনা?
অবশ্যই যাবো আমি।”
দুজনে টুকিটাকি কথা বলছিলাম।হঠাৎ নজরে এলো আকাশ খুড়িয়ে হেঁটে হেঁটে কোথায় যেন যাচ্ছে।
গাড়ির জানালা দিয়ে এ দৃশ্য দেখতে লাগলাম আমি।
স্যার প্রশ্ন করলো,”কী দেখছেন এভাবে?মাথা ভেতরে আনুন।বিপদ হতে পারে।”
ভেতরে এসে বললাম,”নাহ কিছুনা।এমনিই ওয়েদার দেখছিলাম।আপনি চলুন।”
স্যার আর কিছু বলল না।
একবার ভেবেছিলাম স্যারকে দেখাই আকাশকে।কিন্তু পরক্ষণে মনে হলো ওর অবস্থার কথা।
ওর গায়ের আঘাতের কারণ যদি স্যার কোনোভাবে জানতে চায়,কী বলবো আমি?
চু*রি করে মা*র খেয়েছে এটা বলবো?
পারবোনা।
এর চেয়ে বরং থাক।
বাড়ি পৌঁছালাম।
আমি গাড়ি থেকে নামলাম।স্যারকে ভেতরে আসতে বললাম।উনি অন্য কোনোদিন আসবে বলে জানালো।
বিদায় জানিয়ে সামনে হাঁটবো এমন সময় পেছন থেকে শাড়ির আচলে টান অনুভব করলাম।
হাত দিয়ে দ্রুতই কাধের আচল সামলে নিলাম।
এ কী করছেন স্যার?আমার শাড়ির আচল ধরে টান কেন দিল উনি?
উনার থেকে এমনটা আশা করিনি।
কথাগুলো মনে মনে বলে একটু রাগান্বিত চোখে পেছনে তাকালাম।
ততক্ষণে স্যার গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির দরজার সঙ্গে বেধে যাওয়া শাড়ির আচল ছাড়িয়ে দিলেন।
তারমানে আমি ভুল ভেবেছিলাম এতোক্ষণ।তাই তো বলি,স্যারের মতো মানুষ একাজ কখনোই করবেনা।
নিজের ভাবনাচিন্তার জন্য মনে মনে লজ্জা পেলাম বেশ।
স্যার আমার মুখাকৃতি দেখে বলল,”ভুল ভেবেছিলেন আমায়?
মানুষকে বিশ্বাস করতে হয় ম্যাম। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ এক হয়না।যেমনটা হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয়না।
আপনি আমায় সরল মনে বিশ্বাস করতে পারেন।আমার শিক্ষা,মা-বাবার দেওয়া আদর্শে কখনো কোনো নারীকে অসম্মান করিনি।”
আমতা আমতা করে বললাম,”ধন্যবাদ।এবার আমি আসি।”
একপ্রকার দৌড় লাগালাম বাড়ির ভেতরে।
স্যার পেছনে দাঁড়িয়ে হাসলো মুচকি।
আমি ভেতরে ঢুকে দরজা লাগালাম।ঘেমে গেছি রীতিমতো।পালিয়ে এসেছি।
স্যারের গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার শব্দ এলো।
চুপিচুপি দরজা খুললাম একটু।উকি দিয়ে দেখলাম তাকে।জানিনা আমার এমন বাচ্চামোর কারণ কী!
শুধু জানি ভালো লাগছে এটা করতে।
আমার মুখে হাসি।
পারুল ভাবি পেছন থেকে বলে,”কী দেখছো লুকিয়ে?হাসছোই বা কেন?”
আমি ধপ করে দরজা লাগিয়ে বললাম,”কিছুনা।”
ভাবি ভ্রু কুচকে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল,”তুমি মেয়ে পাগল হয়ে গেলে দেখছি।
তা এই পাগলামির কেন্দ্রবিন্দু কে?”
চলবে।