#আমিই_সেই_তন্নি
#Nadia_Afrin
১১
সকাল দশটা,
চোখ মেলে চাইলাম আমি।ঘোলা দৃষ্টিতে সামনে একজন পুরুষ বসা দেখলাম।
দুবার পলক ফেলে আবারো তাকালাম স্বচ্ছ দৃষ্টিতে।
সোফার একপাশে ইয়াসির স্যার বসা।গালে হাত তার।মুখে হাসি।আমার দিকে তাকিয়ে তিনি।
ধীরে ধীরে উঠে বসি।স্যার মিষ্টি হেসে বলেন,”এবার সুস্থ লাগছে আপনার?”
মাথা ঝাকাই।পা ঝুলিয়ে বসি।
কাল রাতে কখন ঘুমিয়ে গেছিলাম খেয়াল নেই।
পাশে তাকাতেই দেখি ছোট বালতিতে পানি ও পাতলা সুতি কাপড়।
তার দিকে তাকাতেই তিনি বললেন,”রাতে আপনার জ্বর ছিল ভীষণ।এতো রাতে ঝড়ের সময় ডাক্তার পেতাম কোথায়।
এজন্য জলপট্টি করেছি।”
আমি আর কিছু বললাম না।উঠে দাঁড়াই সোফা ধরে।ওয়াশরুমে যাই।আয়নাতে নিজের মলিন চেহারাখান দেখি।
নিজের প্রতি নিজের বড্ড মায়া হয়।
ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এসে স্যারকে বললাম,”বেলা তো অনেক হয়েছে স্যার।আপনি আজ কলেজ যাবেন না?”
“বাড়িতে শিফ্ট হওয়ার জন্য দু-তিনদিনের ছুটি নিয়েছিলাম।”
“ওহ।আচ্ছা ঠিক আছে।আপনি বসুন।পারুল ভাবি বাড়িতে নেই।আমি আপনার জন্য নাস্তা তৈরী করে আনি।”
স্যার ততক্ষণাৎ সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”সেটা হবেনা।আপনি অসুস্থ।আজ আমি নাস্তা তৈরি করবো।আপনি বরং আমার পাশে বসে থেকে নির্দেশনা দেবেন।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
অন্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।
রাজি হলাম।তাকে নিয়ে কিচেনে এসে একটা চেয়ার টেনে বসলাম।
স্যার চুলো ধরিয়ে রান্না শুরু করে।অমলেট করে।চা বানায়।ব্রেড জ্যাম করে।দেখে মনে হচ্ছে পাকা রাধুনি।বেশ গোছালো কাম-কাজ।
আমি শুধু শুধুই বসে রয়েছি।তার কোনো উপকারেই আসছিনা।
শুধু শুনে নিচ্ছে কোথায় কোনটা রাখা আছে।এরপর বাকিটা সে নিজেই করছে।
আধ ঘন্টার মাঝেই খাবার তৈরি শেষ।
সব ট্রেতে করে হাতে নিয়ে পেছন ঘুরে বলল,”আজ আপাতত হালকা কিছু করলাম।ভারী রান্না করলে সময় লাগতো বেশি।আপনার খাবার খেয়ে ঔষধ খেতে হবে।
দুপুরে নাহয় ভারী কিছু করে খাওয়াবো।”
আমি জবাব দিলাম না কোনো।হেঁটে ডাইনিং এ এলাম।দুজনে খাবার খেলাম।খাওয়া শেষে স্যার বলল,”তাহলে আপাতত আমি আসছি।কোনো সমস্যা হলে ডাকবেন কিন্তু।”
উনি চলে যায়।আমি তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে।
দেখলাম আকাশ আসছে আমার বাড়ির দিকে।হাতের চায়ের কাপটা ধপ করে টেবিলে রাখলাম।স্যার আকাশের দিকে তাকায় একনজর ।এরপর চলে যায়।হয়ত ভিখারী ভেবেছে ওকে।অবশ্য ওর অবস্থাও তেমন।মাথার এলোমেলো চুল।বড়ো দাড়ি,নোংরা কাপড়।সব মিলিয়ে ভিখারীর কোনো অংশে কম নয়।
স্যার আমার বাড়ির সিমানা অতিক্রম করতেই উঠে দাঁড়ালাম দরজা লাগাতে।দূর্বল শরীর নিয়ে দরজার কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই আকাশ বাড়িতে ঢুকেছে।
ঢুকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”বাড়িতেই আছো দেখছি।”
কিছু বলার আগেই ডাইনিং এ গিয়ে বসে সে।
আমাদের বেচে যাওয়া উচ্ছিষ্ট খাবার গুলো খেতে লাগে ঘাপসে ঘুপসে।
ওর খাওয়া পযর্ন্ত অপেক্ষা করি আমি।
খেতে খেতে সে বলে,”তোমার কাজের মেয়েটা কোথায়?দেখছি না যে!”
“সে আমার কাজের মেয়ে নয়।ভাবি হয়।সম্মান দিয়ে কথা বলো।”
“কাজ করা মানুষদের আমি ওতো সম্মান দিতে পারবোনা।ও কাজের মেয়েই।”
“তাহলে তো তোমাকেও চোর বলতে হয়।ও কাজ করে খেলে তুমিও চুরি করে খাও।”
আকাশের মুখটা থমথমে দেখালো এবার।চুপচাপ খেলো সে।
খাওয়া শেষে ঢেকুর তুলে চেয়ারে হেলান দিয়ে সে বলে,”আজ অনেক দিন পর তোমার হাতের রান্না খেলাম তন্নি।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।
একটু হেসে মনে মনে বলি,আমার হাতের রান্না খেয়েছো কতো বছর।
অথচ আজ পার্থক্যই বুঝলেনা।অন্যের রান্নাকে আমার বলে চালিয়ে দিলে।
বললাম,”বেড়িয়ে যাও।তোমায় না বলেছি আমার বাড়িতে না আসতে।”
“রাগ করছো কেন তন্নি।আমি তোমাদের দেখতে এলাম।স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটু আধটু মান-অভিমান হয়ই।তাই বলে দূরে চলে যাবো নাকি!”
“কিসের স্বামী-স্ত্রী?এতো হ্যাংলা কেন তুমি?
লজ্জা নেই?এতো অপমানের পরও পিছু কেন ছাড়ো না?
বাড়ি-ঘরের সঙ্গে গায়ের মানুষের চামড়াও বিক্রি করে দিয়েছো নাকি?”
আকাশ রাগে মাথা নিচু করে।
কড়া গলায় বলে,”আমি আমার সন্তানদের দেখতে এসেছি।আলিফ কোথায়?”
“নেই।কেউ নেই।তোমার মতো ঘুরেফিরে চেয়ে চিনতে খায়না ওরা।ওদের পড়াশোনা ক্যারিয়ার আছে।”
আকাশ একটা অহংকারী ভাব নিয়ে বলল,”তা তো থাকবেই।আমার সন্তান কিনা!
আমার মতোই শিক্ষিত হবে।তোমার মতো ম্যাট্রিক পাশ করলে ওদের চলবেনা।”
“ম্যাট্রিক পাশে আমার যে গুণ আছে,তা তোমার ডিগ্রি পাশেও নেই।অহেতুক কথা এগিয়ো না।বেড়িয়ে যাও।তোমায় দেখলেও আমার গা ঘিনঘিন করে।”
আকাশ তেড়ে আসে আমার নিকট।ওকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে ফেলে দেই আমি।মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দেই।বাহির থেকে ও চিৎকার করে।দরজা খুলতে বলে।
আরেক দফা চেচিয়ে আমি বলি,”আর একটা সাউন্ড হলে পুলিশে কল দিয়ে থার্ড ডিগ্রির ব্যবস্থা করে দেব বলে দিলাম।”
সঙ্গে সঙ্গে আকাশের হুমকি ধামকি শেষ।চুপচাপ চলে গেছে।
আমি সোফায় গা এলিয়ে বসলাম।
আকাশের সাহস দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।অবশ্য এতে ওর দোষ নেই।ছেলে-মেয়েরাই ওকে লাই দিচ্ছে।মাঝে মাঝে মনে হয় এই ছেলে-মেয়েকে এতো কষ্ট করে মানুষ করে ভুলই হয়েছে।মায়ের খেয়ে স্বার্থপর বাপের গুণ গায়।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
ফোন হাতে নিলাম।ভাবিকে দু-বার কল দিয়েছি ধরেনি।না জানি কেমন আছে ছেলেটা।চিন্তা হচ্ছে।বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।কোনো খবর না এলে ভাবির বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবো।
নিজের এক কাজে বের হলাম।সারাদিন কাজ করে বেলা তিনটে নাগাদ বাড়ি ফিরে একটু ঘুম দিয়েছি।ইচ্ছে ছিল ঘন্টা দুয়েক বাদেই উঠে যাবো।কিন্তু পারলাম না।ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যায়।
ফোন হাতে নিতেই দেখি ভাবির মিসড কল।দ্রুত কল ব্যাক করলাম।কথা বললাম।ছেলেটা একটু সুস্থই আছে।কাল ভাবি ফিরবে।নিশ্চিন্ত হলাম।কিচেনে গিয়ে এককাপ চা বানিয়ে টিভি দেখতে দেখতে খাচ্ছি,এমন সময় কলিং বেলের আওয়াজ।এই ভর সন্ধ্যায় কে এলো ভেবে দরজা খুলেছি।স্যার দাঁড়িয়ে আছেন।
বললেন,”একটা সারপ্রাইজ আছে।আপনি কী একটু আমার বাড়ি আসতে পারবেন?আপনাকে একটা জিনিস দেখাতাম।”
মাথা ঝাকালাম।চা রেখে তার সঙ্গে গেলাম।সে আমায় নিয়ে ছাদে উঠতে লাগে।
ছাদে উঠে প্রচন্ড অবাক আমি।পুরো ছাদটা ফুলের টবে সাজানো।একসাইটে ছোট রঙিন বাতি দিয়ে সাজানো।
গাছে ফুল ধরে আছে।বাতাসে দুলছে তা।
আমি সামনে এগোলাম।ফুল গুলো ছুয়ে দেখলাম।ঘ্রাণ নিলাম।
একগাল হেসে পেছনে তাকিয়ে বললাম,”হঠাৎ এসব কেন স্যার?”
“কেমন হয়েছে?”
“খুব খুব খুবই সুন্দর।”
“সারাটাদিন এটা করতেই চলে গেছে।বহু পরিশ্রম করেছি।আপনাকে না দেখাতে পারলে শান্তি হচ্ছিলো না।চাইলেই আপনাকে সকালে দেখাতে পারতাম এসব।কিন্তু বাষী হয়ে যেত।”
আমি জবাব দিলাম না কোনো।
ফুলগুলো ছুয়ে ছুয়ে দেখতে লাগলাম।
“জানেন স্যার ফুল আমার বড্ড প্রিয়।”
“আর আপনি আমার প্রিয়।ফুলের মতোই আপনার হৃদয়।ফুলের মতোই কোমল আপনি।”
আমি ফট করে তাকালাম স্যারের দিকে।মুখ ফসকে কথা গুলো বলে ফেলেছেন তিনি।
কাশতে লাগে সে।
আমি কিঞ্চিত হেসে ছাদ থেকে নেমে আসি।বেচারা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে।
স্যারও আসে পিছে পিছে।
এবার একটু ভিতু গলায় বলে,”আরো একটা সারপ্রাইজ ছিল।”
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম।স্যার বাইরে এলেন।তাকে অনুসরণ করলাম।সাইটের সেই বড়ো ফুলগাছটার নিচে একটা দোলনা লাগিয়েছেন তিনি।যেটা আমার স্বপ্ন ছিল।খুশিতে আত্মহারা হলাম আমি।দোলনায় গিয়ে বসলাম।দোল খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছ থেকে টুপটাপ ফুল পড়তে লাগে।বাচ্চাদের মতো ওপর দিকে তাকিয়ে উপভোগ করি আমি।
স্যার গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে আমায় দেখে।
ধীর স্বরে বলে,”এভাবেই একে একে আপনার সব ইচ্ছে পূরণ করতে চাই তন্নি।”
সময় বয়ে যায়।রাত ভারি হয়ে আসে।স্যারের বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে খুশি মনে ফিরে আসি আমি।
ঘুমিয়ে যাই শান্ত হয়ে।
বেশ সকালে ঘুম ভাঙে ফোন কলে।
ফোন হাতে নিতেই দেখি এতিমখানা থেকে কল দিয়েছে।
রিসিভ করি।আমায় এক্ষুনি যেতে বলেন তারা।
তৈরি হয়ে খেয়ে বের হই বাড়ি থেকে।স্যারও তখন কলেজের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছেন।
আমায় দেখে প্রশ্ন করেন,”কোথায় যাচ্ছেন?”
“এতিমখানা থেকে কল দিয়েছিল।যেতে বলল।সেখানেই যাচ্ছি।”
“আপনার তো গাড়ি নেই।চলুন ড্রপ করে দেই।”
“আপনার দেরি হয়ে যাবে না?”
“নাহ।হাতে অনেকটা সময় নিয়েই বেড়িয়েছি আমি।চলুন আপনি।”
স্যার আমায় ড্রপ করে দেয় এতিমখানায়।
পৌঁছে এক ম্যামের সঙ্গে কথা বলি।মূলত এতিমখানার একটি ঘর মেরামতের কাজ করা হবে।তাই সেই ঘরে যেসব বাচ্চারা থাকতো প্রত্যেককে একজন শিক্ষক তার নিজের বাড়ি নিয়ে রাখবে কিছুদিন।ঐ ঘরে আবার অর্নিও থাকে।অর্নির যেহেতু নিজের বাড়ি আছে,তাই অর্নিকে আপাতত কিছুদিনের জন্য তার নিজের বাড়িতেই থাকার কথা বলা হয়েছে।তাই আমায় খবর দেওয়া হয়েছে মেয়ে নিয়ে যেতে।
অর্নিকে খুঁজতে লাগলাম।সেদিনের পর থেকে অর্নি আর আমার সঙ্গে কথা বলেনা।আমিও বলিনি।কষ্টের পরিমাণটা বেশিই ছিল।
দেখলাম একটা ব্রেঞ্চেতে মন খারাপ করে বসে আছে অর্নি।গিয়ে ওর পাশে বসলাম।
বললাম,”শুনেছোই নিশ্চয়।তোমাদের ঘরে কাজ চলবে।তোমাকে আমার সঙ্গে যেতে বলা হয়েছে।
কী করবে যাবে?”
ওর মুখে কোনো কথা নেই।
একটু বিরক্তসহিত বললাম,”কী জিজ্ঞেস করছি? তাড়াতাড়ি উত্তর দাও আমার কাজ আছে।
এখানে বসে থাকলে আমার চলবে না।”
অর্নি উঠে দাঁড়ায়।এতিমখানার বাইরে দাঁড় করানো আমার রিক্সাটায় গিয়ে বসে।
এই মেয়ের ভাব দেখলে মনে হয় কোন প্রেসিডেন্টের মেয়ে।
আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম।বাড়ি এলাম।
সোফায় ব্যাগ রেখে প্রশ্ন করলাম,”কী খাবে?কী বানিয়ে দেব?”
ও কোনো জবাব দিল না।সোজা হেঁটে ঘরে চলে গেল।আমি দীর্ঘশ্বাস নিলাম।
কিচেনে গিয়ে নিজের মতো করে কিছু বানাতে লাগলাম।
মিনিট পাঁচেক পর অর্নি নিচে নামে।
বাইরে যেতে লাগে।আমি প্রশ্ন করি।ও উত্তর দেয়না।
হাত ধুয়ে দৌড়ে আসি।ওর কাধ ধরে ঝাকিয়ে বলি,”কী হলো?কোথায় যাচ্ছো?”
অর্নি থমথমে গলায় জবাব দেয়,”নাচের ম্যামের কাছে যাচ্ছি।”
“কিন্তু কেন?এখন তো তোমার ক্লাসের সময় নয়।”
“ক্লাস করতে নয় আমি ম্যামের কাছে থাকতে যাচ্ছি।উনার সঙ্গে কথা বলেছি আমি।উনি বলেছে যে কটা দিন রুম ঠিক না হয়,উনার কাছে গিয়ে থাকতে।”
রাগে গা যেন আমার পুড়ে উঠলো।অর্নিকে টেনে সামনে দাঁড় করিয়ে বললাম,”কেন তোর কী বাড়িঘর নেই?রাস্তায় থাকিস নাকি?
নিজের বাড়ি থাকতে অন্যের কাছে আশ্রয় চেয়ে বেড়াস লজ্জা করেনা?এ কেমন ছোটলোকি স্বভাব?বাবার মতোই হচ্ছিস দেখছি!
ম্যামের কাছে যাবি যা।কিন্তু কোনো কথা যেন না হয়।তোর ম্যামের কথার ধাচ ভালো না এমনিতেই।লোককে অপমান করে বেড়ায়।তুই তার বাড়ি গিয়ে উঠলে আমায় যদি,মেয়ে পালতে পারে না হ্যানত্যান কোনো কথা বলে তো তোর একদিন কী আমার একদিন!
আর ম্যামের কাছেই যাবি যেহেতু,ম্যামকে বলিস তোর সব দায়িত্ব নিতে।
যেই সন্তান মায়ের সম্মান রক্ষা করতে পারেনা তাকে আমার প্রয়োজন নেই।
ধৈর্যের,সহ্যের সব সীমা অতিক্রম করে ফেলেছিস তোরা।”
কথাগুলো বলে কিচেনে গেলাম আমি।
অর্নি দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ।মুখে রাগের আভা।
সারাটাদিন ও চুপচাপই রইলো।ঠিক মতো খায়না।কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয়না।এই মেয়েকে নিজের কাছে রাখা মানে মিনিটে মিনিটে মাথা গরম হওয়া।
আমার পেটের সন্তান এমন হবে কল্পণাও করিনি।
আলিফ কল দেয় সন্ধ্যাতে।সারাদিনে অর্নির আচরণে এমনিতেই বিরক্ত আমি।
এরই মাঝে ও কল দিয়ে টাকা যাচ্ছে।কোন নাকি বন্ধুর জন্মদিন।গিফ্ট কেনার টাকা চায়।অথচ কাল ওকে ঝড়ের সময় মেসেজ দিয়ে বাড়ি আসতে বলেছিলাম।ঝড়ের সময়তেও কল দিয়েছিলাম ধরেনি।ওর উচিৎ ছিল সর্বপ্রথম মায়ের খোঁজ নেওয়া।ও তা না করে ফোন দিয়েই টাকা চাচ্ছে।
মেজাজ গেল বিগড়ে।
রাগান্বিত স্বরে বললাম,”মাসে কদিন তোর বন্ধুদের জন্মদিন হয়?
আমায় কী টাকার মেশিন পেয়েছিস?
অহেতুক খরচ বন্ধ কর।এই টাকা গুলো রোজগার করতে আমার ঘাম ছুটে যায়।
যেদিন নিজে ইনকাম করা শিখবি,সেদিন ইচ্ছে মতো খরচ করিস।মায়ের টাকায় বেহিসাবে হওয়া যাবেনা।”
আলিফ আশা করেনি আমার এমন ব্যবহার।
কল কেঁটে দিয়েছি আমি।আমিও নাপারক।আমিও মানুষ!
আর কতো সহ্য করা যায়।প্রতি পদে পদে অপমান হতে হতে ক্লান্ত আমি।
সন্ধ্যায় অর্নি সোফায় বসে টিভি দেখছিল আর চুল বাধছিল।আমি ওর পাশেই বসে কাজ করছিলাম।
এমন সময় স্যার এলেন।এসেই অর্নিকে দেখে বললেন,”এটা আপনার মেয়ে অর্নি না?
ভারী মিষ্টি মেয়ে।”
আমি শুকনো ঢোক গিললাম।না জানি কী করে বসে মেয়েটা।কাউকে অপমান করতেও তো বাধেনা মেয়েটার।
স্যারের সামনে ছোট না হতে হয় আমার।
স্যার অর্নির পাশে বসলেন।
মাথায় হাত দিয়ে বললেন,”কেমন আছো মামুনি?আমি তোমাদের প্রতিবেশি।পাশের বাড়িতেই উঠেছি সেদিন।”
মনে মনে সৃষ্টিকর্তার নাম জপছি।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলোনা।
অর্নি দু-দন্ড স্যারের দিকে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে থেকে ভাবলেশহীন ভাব নিয়ে চলে গেল হনহন করে।
ওর এমন ব্যবহারে স্যার অবাক হলেন ভীষণ।
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলাম।
চলবে।