#আমিই_সেই_তন্নি
#Nadia_Afrin
১২
সোফাতে খবরের কাগজ নিয়ে বসেছি আমি।
ভাবি কিচেনে রাধতে ব্যস্ত।আজ সকালেই ভাবি চলে এসেছে।ছেলেটা এখন সুস্থই আছে।
এমনই সময় কলিং বেল বেজে ওঠে।আমি উঠতে নিলে ভাবি বেড়িয়ে আসে হাত মুছতে মুছতে।দরজা খুলে দেয় তিনি।
আমি খবরের কাগজে চোখ রেখেই বললাম,”কে এসেছে ভাবি?”
ভাবি একটু ভীত স্বরে জবাব দিল,”আকাশ এসেছে।”
সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াই আমি।
কড়া গলায় বলি,”দরজা আটকে দাও।ও কোন সাহসে আসছে আমার বাড়ি।
ঢুকতে দিওনা।”
ভাবি বলল,”আলিফ ও আছে সঙ্গে।”
আলিফ তার বাবাকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে করতে বলে,”এবারেও দরজা লাগাবে আম্মু?”
“তুমি এসময় কেন এখানে?তোমার না এখন ক্লাসটাইম।”
“ক্লাসেই যাচ্ছিলাম।মাঝপথে বাবার সঙ্গে দেখা হলো।শুনলাম তুমি নাকি বাবাকে কাল বাড়ি থেকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছো?”
“হ্যা তোহ?”
আলিফ রাগান্বিত স্বরে বলে,”এটা অন্যায় আম্মু।উনি আমাদের বাবা।তুমি আমার বাবার সঙ্গে এমন ব্যবহার করতে পারোনা।”
“খুব তো বাবা বাবা করছিস।বাবা যখন আরেক মহিলাকে বিয়ে করে তোদের রাস্তায় ফেলে গেছিলো,তখন কেমন লেগেছে।
আমার ভুল ধরছিস,অথচ আমিই তোদের খেটেখুটে মানুষ করেছি।
ঐ লোকটা তোদের বাবা ঠিক আছে।কিন্তু আমার জীবনের অভিশাপ সে।আমার কষ্টের টাকায় গড়া বাড়িতে ওর মতো পাপিষ্ঠের স্থান আমি দেবনা।”
“বাড়িতে কী আমাদের অধিকার নেই আম্মু?
তুমিই তো বলো এই বাড়িঘর,টাকাপয়সা সবই তুমি আমাদের জন্য করেছো।
তাহলে আমাদের ভাগে আমার বাবাকে থাকতে দাও।”
ছেলের কথায় এবার আমার রাগ কম কষ্ট হলো বেশি।যেই বাচ্চাদের মানুষ করতে এতো কষ্ট করলাম,আজ তারাই আমার দোষ ধরে।আমার চরম শত্রুকে আমারই বাড়িতে ঠায় দিতে চায়।
আকাশের দিকে তাকালাম একনজর।ও মাথা নিচু করে মিটিমিটি হাসছে।আমার সুখের সংসারে ইচ্ছে করেই আগুন লাগাচ্ছে ও।
এরই মাঝে অর্নি এলো ওপর থেকে।এসেই বাবা বলে আকাশকে জড়িয়ে ধরলো।আকাশও দেখছি বাবা-সোনা বলে মেয়েকে আগলে নিচ্ছে।
আজ অর্নির মুখে হাসি।ওর এই হাসি আজ আমার রাগের কারণ হচ্ছে।এই হাসিটুকু দেখার জন্য দিনরাত এক করে খেটেছি আমি।কিন্তু কদর পাইনি।অথচ আকাশ কিছু না করেও সব পাচ্ছে।
ভাবি এসে আমার পিঠে হাত রাখে।শক্ত থাকতে বলে।
আমি মাথা নিচু করে বলি,”তোমাদের একান্তই যদি তোমার বাবাকে প্রয়োজন হয় তাহলে তোমরা থাকো তোমার বাবাকে নিয়ে।আমি চলে যাবো।”
আকাশ একগাল হেসে বলল,”বেশ তো!বাড়ি তাহলে ছেলে-মেয়ের নামে লিখে দিয়ে যাও।”
সঙ্গে সঙ্গে ভাবি তেড়ে উঠলো।
চিৎকার করে বলল,”তোর সাহস তো কম না।চোরের মুখে বড়ো বড়ো কথা দেখছি!
তন্নির বাড়ি,ও যাকে ইচ্ছা তাকে দেবে।যখন ইচ্ছা দেবে।তোর কথায় বাড়ি লিখে দেবে নাকি?
খুব বেশি বেড়েছিস দেখছি তুই!”
অর্নিও চিৎকার করে বলে,”আন্টি আপনি কিন্তু আমার বাবাকে অপমান করছেন।”
“কিসের বাবারে?ঐ কাপুরুষকে নিজের বাবা বলতে তোর লজ্জা করেনা?
আরে মেয়ে,ও তোকে অস্বীকার করেছিল।তোকে অবৈধ সন্তান বলেছিল।
যেই মাকে কষ্ট দিচ্ছিস সেই মা খেয়ে না খেয়ে তোকে মানুষ করেছে।পেটে-পিঠে বস্তা বেধে তোদের জন্য খেটেছে।”
আকাশ হাত জোর করে বলে,”দেখুন আমি স্বীকার করছি আমি ভুল করেছি।মানুষ মাত্রই ভুল করে।সেসময় আমি অবুঝ ছিলাম।অন্যের প্ররোচনায় পড়ে ভুল করেছি।এজন্য শাস্তিও পেয়েছি।সব হারিয়েছি আমি।আর কতো শাস্তি দেবেন আমায়?”
আলিফ বলে,”বাবা তো ঠিকই বলেছে আম্মু।মানুষ মাত্রই ভুল করে।বাবাও করেছে।শাস্তিও পেয়েছে।এবার আমাদের উচিৎ তাকে ক্ষমা করে দেওয়া।
কারো কাঁটা স্থানে মলম না লাগিয়ে যদি প্রতিনিয়ত নুন-মরিচ লাগাও,তাহলে কী সেই ক্ষত সারবে বলো!”
বললাম,”তোমার বাবার সঙ্গে আজ অব্দি যা হয়েছে সবই তার কর্মফল।এখানে আমি দায়ী নই কোনোভাবে।
আর তোমার বাবার করা অন্যায় নিছক অন্যায় হিসেবে তুমি নিতেই পারো।কিন্তু ভুক্তভোগী আমি।আমি জানি আমি কী কী সহ্য করেছি।প্রেগনেন্সির মতো সেনসিটিভ বিষয়েও তোমার বাবা ও তার পরিবার আমার প্রতি এতোটাই নির্দয় হয়েছে যে আমি মরার কথা অব্দি ভেবেছি।
আমার চরিত্রে দাগ লাগিয়েছে মিথ্যা রটিয়ে।
আমার সম্মান,ভালোবাসাতে গলা টি*পে মেরেছে ও।ওর বাড়ির লোক আমায় খু*ন অব্দি করতে চেয়েছে।লেবার পেইন নিয়ে বাড়িতে আটকে রেখে গান বাজিয়েছে।
এতো সবকিছু ভুলি কী করে আমি?
এই মানুষটাকে আমি যতোবারই দেখি,ঘৃণা হয় আমার।মনে হয় আবর্জনা ঘুরে বেড়াচ্ছে আশপাশ দিয়ে।
তোদের আমি একা হাতে মানুষ করেছি।আমার পাশে কেউ ছিলনা।সেই তোরাই আমায় আজ পর করছিস।”
আলিফ বলে,”মানুষ যেমন করেছো,ফলও কিন্তু পেয়েছো আম্মু।
এইযে আমার বয়সী বেশিরভাগ ছেলেরা নেশা পান,জুয়া ও বাজে কাজে জড়িত।
আমি গিয়েছি এসবের মধ্যে?কেন যাইনি?শুধু মাত্র তোমার আদর্শ রক্ষার্থে।”
অর্নি বলে,”ভাইয়া ঠিকই বলেছে আম্মু।এইযে আমি নিজের কাজ নিয়ে করি।নিজের মতো করে থাকি।তাই তো তুমি তোমার কাজগুলো ঠিক মতো করতে পারো।আমায় নিয়ে তোমার ভাবতে হয়না।এটা কী উপকার নয়?”
মনে মনে বললাম,খারাপ পথে গেলে ভবিষ্যৎ তোরই নষ্ট হতো।কোথাও মূল্য পেতি না।মা হিসেবে আমার হয়ত কষ্ট হয়ত।নিন্দা হতো।তার বেশিতো কিছুনা।ভবিষ্যত টা তোরই।ক্ষতি হলে তোরই হতো।
আর মেয়ে কাছে থাকে না এটা উপকারের নয়।বুকে পাহাড় সমান কষ্টের।দু-দুটো সন্তান থাকার পরও খারাপ সময়ে কাউকেই পাইনা আমি।আমি তন্নি সবদিক সামলে নিতে জানি।মেয়ে কাছে থাকলে ওকে সামলেই কাজ করতে পারতাম।এতে করে মনটাও প্রফুল্ল থাকতো আমার।
মনের কথা মনেই রইলো আমার।প্রকাশ আর হলোনা।কিছু কিছু সময় মানুষ আসলেই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।
আলিফ অর্নি দুজনেই একত্রে বলে ওঠে,”বাবা আজ থেকে এ বাড়িতেই থাকবে।”
ভাবি এগিয়ে এসে বলল,”ছিহ তন্নি!তুমি কী মানুষ?লজ্জা নেই তোমার?
এই সন্তানদের জন্য এতো ত্যাগ স্বীকার করছো?
যারা কীনা মায়ের আদর্শ ভুলে দুশ্চরিত্র বাবার তালে পড়ে মাকে অপমান করে।
বলতে বাধ্য হচ্ছি তন্নি,তোমার টাকা আছে,সততা আছে।কিন্তু লজ্জা নেই।আত্মসম্মান নেই।লজ্জা নারীর ভূষণ।যা তোমার নেই।নিজেকে ঠিক কতোটা নিচ বানিয়েছো ভেবে দেখো।
তোমার এই চোখের পানি আমার ঘৃণা লাগছে।”
ভাবির কথাগুলো আমার মনোবল জাগ্রত করে।সত্যিই তো!
নিজেকে আর কতো ছোট করবো আমি?
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
অন্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।
সোজা দাঁড়িয়ে বললাম,”বাবার জন্য খুব বুক পুড়লে বাবার সঙ্গে চলে যেতে পারো তোমরা।যারা আমার মর্ম বুঝলোনা।বাইরের লোকের সামনে আমায় অপমান করলো,তারা থেকেও লাভ নেই।”
আলিফ ধীর স্বরে বলে,”একথা বলতে পারলে তুমি আম্মু?”
আমি জবাব দিলাম না কোনো।
অর্নি তার বাবা ও আলিফকে টেনে টেনে বাইরে নিয়ে যেতে যেতে বলল,”চলো সবাই।আমাদের এখানে থাকতেও হবেনা।উনি থাক পারুল আন্টিকে নিয়ে।আমরা কে হই ওনার।”
আকাশের মুখ দেখলাম শুকনো।ও তো বাচ্চা নিতেই এসেছিল।উদ্দেশ্যতো পূরণ হলো।তাহলে মুখ কেন এমন?খুশি হওয়ার কথা ছিল তার।
ওরা চলে গেল।
কিছু সময়ের ব্যবধানে কী হয়ে গেল!
আমি সোফায় ধপ করে বসে পড়লাম।দু-হাতে মুখ ঢেকে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম।
ভাবি আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,”শান্ত হও তন্নি।জীবন কারো জন্য থেমে থাকেনা।পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও।”
এই বলে চলে গেলেন তিনি।আমি কাঁদতে কাঁদতে সেখানেই শুয়ে পড়লাম।বুকে বালিশ চেপে চোখ দিয়ে অশ্রু ফেলছি নিঃশব্দে।
অনেকটা সময় কেঁদেছি।শ্বাসকষ্ট শুরু হলো রীতিমতো। বাথরুমে গিয়ে চোখে-মুখে পানি দিলাম।কান্না থামেনা তবুও।বাড়িটা যেন খা-খা করছে ওদের শূন্যতায়।
নিজ ঘরে গেলাম।ঝীম মেরে বসে রইলাম।
কলেজ থেকে ফিরে রাত প্রায় নটার দিকে ইয়াসির স্যার এলেন আমার বাড়ি।এসে হয়ত পারুল ভাবির থেকে শুনেছে সবটা।
দৌড়ে আমার ঘরে এলেন তিনি।
পাশে বসলেন।
আমি তখন নিশ্চুপ।স্যার একের পর এক প্রশ্ন করলেন।আমি চুপ।শুধু কাঁদছি।
কিছুপল পর তিনি বললেন,”চোখের পানি মুছুন।আপনার কষ্ট সহ্য হচ্ছেনা।সকল ভালো মানুষেরই দুনিয়ার জীবনে কষ্ট থাকে বেশি।এটা একটা পরিক্ষা।আপনার সততার পরিক্ষা।
আপনি চলুন আমার সঙ্গে।থানায় যাই আমরা।কেস করি।ছেলে-মেয়েদের ফিরিয়ে আনবো আমরা।ওরা আপনার প্রাপ্য।ওরা অবুঝ তাই ভুল করেছে।”
“অর্নি নাহয় ছোট।আলিফ ও কী ছোট?ও তো দেখেছে আমার ত্যাগ স্বীকার,দুঃখ গুলো।ও কীভাবে পারলো এই কাজ করতে?
ভিত্তিহীন যুক্তি আমায় দেবেন না অনুগ্রহ করে।
আমি বাচ্চা নই।”
স্যার মাথা নিচু করলেন।
বললেন,”সত্যিই আলিফের আচরণে আমি অবাক হয়েছি।ভেবেছিলাম পড়াশোনার ক্ষেত্রে যেমন ভালো,মানবিকতার দিক দিয়েও উন্নত।”
আমি কাঁদলাম।
স্যার আর কিছু বললেন না।উঠে দাঁড়ালেন।
যাওয়ার সময় শুধু একটা কথাই বলল,”নিজেকে শক্ত রাখুন।ধৈয্য ধরুন।”
উনি চলে গেল।
আমি বসে রইলাম।সারাটারাত ঘুম হয়নি।থেমে থেমে কেঁদেছি।মাঝরাতে উঠে বারান্দায় বসে রইলাম অন্ধকারের মাঝে।আবার গোসল করলাম মাঝরাতেই।একপ্রকার পাগলের কান্ড।
সন্তান ছিল আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।আজ সেই সন্তানই চলে গেছে আমায় ছেড়ে।আমায় একলা করে দিয়েছে।
আমার বেঁচে থেকে লাভ কী?
মরে যাই,মুক্তি পাই।
ছাদে উঠেছি।মাথা ঠিক নেই আমার।ছাদে দাঁড়িয়ে আনমনে বাচ্চাদের কথা ভাবলাম।
দুই তলা বাড়ি আমার।এই ছাদ থেকে লাফঝাপ দিলে মরার সম্ভবনা কমই।এটুকু সেন্স আমার আছে।
তাই হাতে ছুড়ি নিয়েছি একটা।
তবে এখানে কিছু করলে চলবেনা।বাড়িতে অন্য মানুষও থাকে।
ধীরে ধীরে নিচে এলাম।সদর দরজা খুলে বাইরে গেলাম।এক কোণে গিয়ে দাঁড়ালাম।চোখ বুজে হাতের ওপর ছুড়ি রাখলাম।যেই না হাতের সিরায় টান দিতে যাবো ওমনি কেউ ধরে নিল আমায়।
পেছন থেকে ভাবি বলছে,”কী করছো কী এসব তন্নি।ছুড়ি ফেলে দাও বলছি।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।
আমি শুনলাম না তার কথা।একপ্রকার ধস্তাধস্তি শুরু হলো দুজনের মাঝে।ভাবি পেরে উঠছেনা পেছন থেকে।কোনো মতে আমার হাত ধরে রেখেছে সে।
সাহায্য করার মতো কেউ নেই ও।ভাই আসেনি গ্রাম থেকে।তিনি দুদিন পর আসবেন।
দাড়োয়ানের ডিউটি সন্ধ্যা পর্যন্ত।বাকিরাত ভাই সামলাতো।
ভাবি ও আমার মাঝে চরম ধস্তাধস্তি শুরু হয়।গায়ে যেন প্রচন্ড শক্তি এসে গেছে অলৌকিক ভাবে।ভাবি অব্দি পেড়ে উঠছে না আমার সঙ্গে।
উপায়ন্ত না পেয়ে ভাবি চিৎকার শুরু করে।আমার বাড়ির পাশেই স্যারের বাড়ি।সর্বপ্রথম স্যারের কানেই পৌঁছে ভাবির চিৎকার।
তড়িঘড়ি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি।এসেই দেখে এই অবস্থা।
তৎক্ষণাৎ ধরে আমায়।হাত থেকে ছুড়ি নিতে নিলে হাতে কেঁটে যায় অনেকটা।
সঙ্গে আমারও লাগে।র*ক্ত আসে দুজনের হাত দিয়েই।
ততক্ষণে স্যার ছুড়ি নিয়ে দূরে ছুড়ে ফেলেছেন।
ভাবি রক্ত দেখে দৌড়ে বাড়িতে প্রবেশ করে ঔষধ আনতে।
আমি শান্ত হইনি তখনো।ছুট্টে গিয়ে গাছের সঙ্গে মাথা গুতো দিচ্ছি।
স্যার এগিয়ে আসেন।আমার দু-বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলেন,”পাগল হয়ে গেছেন নাকি?
কী করছেন এসব?বাচ্চাদের কাজ আপনাকে মানায় না তন্নি।আপনি যথেষ্ট ম্যাচিউর।”
আমার যেন হুস ফেরে এবার।কাঁদতে কাঁদতে স্যারের কাধে হেলান দেই।
“আলিফ-অর্নি আমার প্রাণ স্যার।ওদের ছাড়া আমি বাঁচবোনা।”
“ ধৈর্য্য ধরুন।ওরা অবশ্যই ফিরে আসবে।মা আপনি।সন্তান মাকে ছাড়া থাকতে পারেনা।”
উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।শান্ত করার চেষ্টা করে।ভাবি মেডিসিন বক্স নিয়ে আসলে স্যার আমায় নিয়ে একটা ব্রেঞ্চেতে বসেন।
হাতে ঔষধ লাগিয়ে দেন।আমি নির্বাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি শুধু।নেই কোনো অনুভূতি।সামনে থাকা মানুষটার হাত দিয়েই রক্ত ঝড়ছে অঝোরে।অথচ আমায় নিয়ে ব্যস্ত তিনি।
ঔষধ লাগিয়ে ভাবিকে বলে ব্যান্ডেজ করে দিতে।
ব্যান্ডেজ করা শেষে দাঁড় করায় আমায়।
স্যার বলেন,”এখন আর বাড়িতে যাচ্ছিনা।আপনি ভাবি আজ উনার কাছে থাকবেন।দেখে রাখবেন।একটা ব্যাথার ঔষধ খাইয়ে দিয়েন।বাড়িতে তো পুরুষ মানুষ নেই কোনো।যদি কোনো সমস্যা হয়, আমায় ডাকবেন।”
ভাবি আমায় নিয়ে বাড়িতে গেলেন।স্যার ও চলে গেলেন।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
“এটা তুমি কী করতে যাচ্ছিলে তন্নি?
তোমার থেকে এমনটা আশা করিনি।ভাগ্যিস আমার ঘুম ভেঙেছিল।দরজা খোলার আওয়াজে ঘুম ভেঙেছে।বেড়িয়ে এসে দেখি এই অবস্থা।
এমন কাজ করার চিন্তা মাথাতেও আনবেনা কোনোদিন।ওপরে গিয়ে কী জবাব দিতে?এই জীবনটা নাহয় যেমন-তেমন ভাবে গেল!এই কাজ করলে সৃষ্টিকর্তাকে কী জবাব দিতে?
তুমি ধৈর্য্য ধরো।তোমার শেষটা অবশ্যই সুন্দর হবে।তবে যা বুঝছি,তোমায় আর একা রাখা যাবেনা।”
আমায় ঘরে নিয়ে শুইয়ে দেয় ভাবি।সেও আমার পাশেই শুয়ে পড়ে।মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
ঘুমিয়ে যাই আমি।
ঘুম ভাঙে বেলা আটটায়।ফ্রেশ হয়ে নিচে আসি।
আমায় দেখেই ভাবি বলেন,”আমি খাবার রেডি করছি।তুমি ততক্ষণে স্যারকে একটু দেখে এসো।কাল তোমায় বাঁচাতে গিয়ে বেচারার হাত কেঁটে গেছিলো অনেকখানি।তোমার চিন্তায় আমিও বেসামাল ছিলাম।
তুমি গিয়ে একটু খোঁজ নিয়ে এসো।আমি সময় পাইনি।উঠতে দেরি হয়ে গেছে।
স্যার মনে হয় কলেজ যাবে একটু পরেই।দ্রুত যাও।”
ভাবির কথা শেষ হতে না হতে ছুট লাগালাম আমি।সত্যিই তো!এতো কিছুর মাঝে বিষয়টি মাথাতেই ছিল না।কতোটা অকৃজ্ঞ হয়ে গেছি আমি!
স্যারের বাড়ির সদর দরজা খোলা।বাহির থেকে একবার উকি দিলাম।স্যারকে দেখতে পেলাম না।ভেতরে ঢুকলাম।ভেতরের ঘরে স্যার তখন চুল চিরুনি করছে।আমায় দেখে ভেতরে আসতে বললেন।
চুপচাপ প্রবেশ করলাম ঘরে।
উনার হাতের দিকে তাকালাম।হাতে একটা রুমাল বাধা শুধু।রক্ত এখনো দেখা যাচ্ছে।এতোক্ষণ এই অবস্থাতেই ছিলেন তিনি?না জানি কতো যন্ত্রণা হয়েছে!
উৎকণ্ঠা হয়ে বললাম,”একি স্যার আপনি হাতে ব্যান্ডেজ করেননি কেন?কাল ঝামেলার জন্য আমার খেয়াল ছিল না।তাই বলে আপনি এভাবেই থাকবেন?আপনার ইনফেকশন হয়ে যেতে পারেতো।শুধু একটা রুমাল বেধে রেখেছেন কেন?”
“ঐ আসলে আমার বাড়িতে মেডিসিন বক্স নেই।সবে শিফ্ট হয়েছি তো!
ওতো রাতে কোনো দোকানও খোলা পেতাম না তাই রুমাল দিয়ে বেধে রক্ত পড়া বন্ধ করেছি কোনো মতে।”
আমি মাথা নত করে বললাম,”আমার জন্য আপনার অনেকটা কষ্ট হলো স্যার তাইনা?
দুঃখিত আমি।খুবই দুঃখিত।”
“ব্যাপার না।ঠিক হয়ে যাবে।যাওয়ার পথেই ব্যান্ডেজ করে নেব।”
“তা হবেনা।আপনি চলুন আমার সঙ্গে।আমার বাড়িতে সব ব্যবস্থা থাকতে আপনি এমন খামখেয়ালি করবেন ভাবতে পারিনি।”
স্যারকে নিয়ে একপ্রকার টেনেই আমার বাড়ি নিয়ে এলাম।নিজ দায়িত্বে ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করে দিলাম।বেচারা কাঁটা হাতে কিছু রাধতেও পারেনি।
জোর করে ব্রেকফাস্ট করালাম।
এরপর তিনি বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।
আমায় সাবধানে থাকতে বললেন।
ছেলের নাম্বারে কল দিলাম আমি।আগেও দিয়েছি একবার।ধরেনি।কেঁটে দিয়েছে।না জানি কী করছে আমার বাচ্চাদুটো।কোথায়ই বা আছে!
আকাশকে বিশ্বাস করিনা আমি।
যদিও এখন আর সেই সময় নেই।তবে মেয়েটাতো ছোট।অবুঝ।আলিফ এখন বড়ো হয়েছে।বোনকে সে দেখে রাখবেতো নিশ্চয়।
তবুও মন আমার শান্ত হচ্ছেনা।মা তো আমি।
ওরা কোথায় আছে,কেমন আছে না জানা অব্দি শান্তি পাচ্ছিনা।গলা দিয়ে খাবার নামছেনা।
এক পরিচিত ছেলেকে কল করলাম।ছেলেটা টোকাই টাইপের।সব খবর ওর কাছে পাই।
মূলত কোনো ডিল সাইন করার আগে খোঁজ খবর নেওয়া স্বরুপ ওকে রেখেছি।ব্যাপারটা একটু হাস্যকর হলেও কাজের বেশ।
কল দিয়ে বললাম,”এলাকায় খোঁজ নাও।আমার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ওর বাবা মানে আকাশ কোথায় গিয়ে উঠেছে খবর জানাও।কাল আকাশ এসে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে গেছে।”
ও ‘জ্বী ম্যাডাম’ বলে কল কেঁটে দেয়।
ভাবি আমায় খেতে বলে।খাইনা আমি।এড়িয়ে যাই।ঘন্টা দুয়েক পর ছেলেটা খবর দেয় আকাশ এক বস্তিতে গিয়ে উঠেছে ছেলে-মেয়ে নিয়ে।
বললাম,আজ থেকে তোমার দায়িত্ব ওদের ওপর নজর রাখা।সব খবর আমায় জানাবে।
কল রেখে বিছানায় বসলাম আমি।
নিজেদের দু-তলা বাড়ি রেখে বাবার সঙ্গে বস্তিতে গিয়ে উঠেছে।
আলিফকে আবারো কল দিলাম।লাউড স্পিকার হয়ে গেছে খেয়াল করিনি।ভাবি তখন আমার ঘরে এসেছে খাবার নিয়ে।
আলিফ কল রিসিভ করেছে তখনই।করেই রাগান্বিত স্বরে বলে,”কী সমস্যা আম্মু?কল দাও কেন বারবার?বাড়ি থেকে তাড়িয়ে শান্তি হয়নি তোমার?”
ছেলেটার ব্যবহারে রাগ হলো আমার।যার কাছে আমার মায়া নেই তাকে আমার মায়া করে লাভ কী?
বললাম,”কল দিয়েছি দেখে দোষ হলো নাকি?
ঠিক আছে।ভুল হয়েছে আমারই।
কল যেহেতু দিতে না ই করলি,আমায় যেন প্রয়োজন না পড়ে তোদের।বাবার কাছে গিয়েছিস বাবার কাছেই থাক।আজ থেকে তোদের সব দায়িত্ব তোদের বাবার।
আমি আর একটা পয়সাও খরচ করবোনা তোদের জন্য।”
আলিফ কল কেঁটে দেয় সঙ্গে সঙ্গেই।
পারুল ভাবি বলেন,”এতোদিনে একটা উচিৎ কথা বলতে পারলে তাহলে।
“ওদের ব্যবহার আমার মুখের কথাকে এমন বানিয়ে দিয়েছে ভাবি।সহ্য করতে করতে আমি বড্ড ক্লান্ত।এই বাচ্চাদের ব্যবহারে নিজেকে আর মানুষই মনে হয়না আমার।
তাই আজ আমি কঠোর হয়েছি।”
“তোমার জন্য বিশেষ কিছু চিন্তা করেছি আমি।”
“কী ভাবি?”
“আগেই বলবোনা।আগে মানুষটার সঙ্গে কথা বলে নেই।তবে বিষয়টা বিশেষ।হয়ত তোমার জীবনের নতুন কিছু হবে।”
সামান্য হেসে বললাম,” নতুনত্বের আর কিছু নেই আমার জীবনে।
এবার দু-চোখ বুজতে পারলে বাঁচি।”
“ওসব বলতে নেই বোন।জীবনকে সহজ করে নিতে হয়।তুমিও পারবে।শুধু চেষ্টা করো।”
আর কিছু বললাম না আমি।ভাবি খাবার দিয়ে চলে যায়।
আমি খাবারের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকি।
না জানি কী খেয়েছে আমার বাচ্চাগুলো।আলিফতো সকালে উঠে দুধ,কলা ও পাউরুটি খায়।ওদের বাবা কী এনে দিয়েছে ওসব?
আসলেই আমরা মায়েরা সন্তানের চিন্তায় একটু বেশিই চিন্তিত থাকি সবসময়।
ভাবি দরজা দিয়ে উকি দিয়ে বলে,”খাবারের দিকে তাকিয়ে না থেকে খেয়ে নাও।ওতো চিন্তা করোনা।ওরা নিজ ইচ্ছায় গেছে।তুমি যেতে বলোনি।তোমার দোষ নেই।
সুখের ভাত খেতে খেতে তোমার ছেলে-মেয়ে বিরক্ত হয়ে গেছে।এবার বাবার কাছে গিয়ে গিয়ে একটু দুঃখ দেখে আসুক।
বাস্তবতা কী জিনিস বুঝুক ওরা।”
চলবে।