#আমিই_সেই_তন্নি
#Nadia_Afrin
১৩
টানা রোদের মধ্যে মেয়েকে একা হেঁটে যেতে দেখে গাড়ি দাঁড় করালাম দ্রুত।
গাড়ির কাঁচ নামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”কোথায় যাও এই টানা রোদে?”
অর্নি থমথমে গলায় জবাব দিল,”ডান্স ক্লাসে।”
“তা হেঁটে কেন?রিক্সা নাওনি কেন?”
“বাবা হেঁটে যেতে বলেছে।হাঁটলে নাকি শরীর ভালো থাকে।”
“এই রোদের মাঝে হাঁটলে শরীর ভালো থাকবেনা বরং জ্বর চলে আসবে।বোকার মতো কথা তোমার বাবার।
গাড়িতে উঠে বসো আমি ড্রপ করে দিচ্ছি।”
অর্নি সুন্দর করে গাড়িতে উঠে বসলো।গাড়ি স্টার্ট দিলাম।মেয়ে এই রোদে হেঁটে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।
এসি করা গাড়ি আমার।ও গাড়িতে উঠতেই এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়েছি।অর্নি দেখলাম স্বস্তি নিয়ে সিটে হেলান দিল।পানি খেতে দিলাম।
একনজর তাকালাম ওর দিকে।মুখটা শুকনো লাগছে।খেয়ে আসেনি নাকি!
সুধালাম,”খেয়েছো তুমি অর্নি?”
ও মাথা দু-পাশে ঝাকায়।মানে খায়নি।
“সে কী!না খেয়ে বেড়িয়েছো কেন?”
“বাবা রান্না করতে পারেনি।”
আমি আর কিছু বললাম না।গাড়ি দাঁড় করিয়ে কলা পাউরুটি কিনে ওকে খেতে দিলাম।হাতের নাগালে এগুলোই পেয়েছি।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
ও খেলো সবগুলোই।
পৌঁছে গেলাম আমরা।গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে হাতে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে বললাম,”যাওয়ার সময় রিক্সা করে চলে যেও।আমার কাজ আছে।নিতে আসতে পারবোনা।”
বিদায় নিয়ে এতিমখানায় গেলাম।আমায় দেখা মাত্রই গণিত ম্যাম এগিয়ে এসে বললেন,”কী শুনলাম তন্নি?আলিফ-অর্নি নাকি বাবার কাছে গেছে?”
“হ্যা।দাওয়াত খেতে গেছে।শখ মিটলে চলে আসবে।”
“দেখলে তো,বলেছিলাম না আমি!এরকমটাই হবে একদিন।এজন্যই বলি নিজের জীবনে এগিয়ে যাও।”
“যাবো ভাবছি এবার থেকে।ছেলে-মেয়ে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাইলাম।ওরা তো পরই করে দিল আমায়।বাঁচার জন্য হলেও এবার তো কাউকে আকড়ে ধরতেই হয়।”
তৎক্ষণাৎ ম্যাম উৎসাহ নিয়ে বলে,”গুড ডিসিশন।ছেলে দেখা শুরু করি তাহলে?”
“আপাতত ওসব ভাবছি না।”
“তুমি মেয়ে বড্ড জেদি।এখন ভাববে না তো কবে ভাববে?সত্যিই এবার বুড়ো হয়ে যাবে তুমি।”
আমি শুধু হাসলাম একটু।ম্যাম রাগ দেখিয়ে চলে যায়।আমি কাজ শেষ করে চলে এলাম বাড়ি।
সবে বাড়িতে ঢুকবো এমন সময় আলিফের কল।
রিসিভ করলাম।
ও আমতা আমতা করছে।
বললাম,”ভনিতা ফেলে কী বলবে বলো।আমার সময় কম।”
“কিছু টাকা হবে আম্মু?বাজার করবো।ঘরে বাজার নেই।অর্নি না খেয়ে গেছে।আমিও না খেয়ে আছি।”
“কেন বাবা?কাল না কল করতে নিষেধ করলে।আজ আবার টাকা চাইছো কেন?জোর গলায় বাবার সঙ্গে চলে গেলে।এবার বাবা পেটের ভাতটাও জুটাতে পারছেনা?”
“উফ আম্মু দেবে কীনা বলো!”
কল কেঁটে দিলাম আমি।হাজার দুয়েক টাকা পাঠালাম।সন্তান ওরা আমার।না খেয়ে থাকলে কষ্ট আমারই হবে।
ঘরে এসে গোসল করলাম।মাথা মুছতে মুছতে ছাদে গেলাম।স্যারকে দেখলাম তার বাড়ির ছাদে কাপড় মেলছে।
আমায় দেখে মুচকি হাসলো তিনি।এগিয়ে এলো।আমার ছাদ বরাবর দাঁড়িয়ে বললেন,”কেমন আছেন এখন?”
“জ্বী ভালো।আপনি? হাত সেরেছে একটু?”
“জ্বী।কিছুটা ভালো অনুভব করছি।”
এরপর দুজনেই চুপ।আমি মাথা নত করে রইলাম।চুলে তোয়ালে প্যাচানো আমার।স্যার বললেন,”চুল দীর্ঘসময় ভেজা তোয়ালে দিয়ে বেধে রাখতে নেই।ঠান্ডা লেগে যাবে।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।
আমি চুলে বাধা তোয়ালেটা খুলে শুকোতে দিলাম।চুলগুলো হাত দিয়ে নেড়ে একপাশে এনে রাখলাম।পানি পড়ছে এখনো।
স্যার কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।বিব্রত বোধ করলাম আমি।বললাম,”কিছু বলবেন স্যার?”
উনি অপ্রস্তুত হয়ে বললেন,”নাহ।থাকুন আসি আমি।কিছু কাজ আছে।”
তড়িঘড়ি চলে গেলেন তিনি।আমিও নিচে এলাম।মন মরা হয়ে সোফায় বসে রইলাম।ভাবি পাশে বসে বলল,”এভাবে বাড়িতে মন খারাপ করে না থেকে কোথাও থেকে ঘুরে এসো তন্নি।”
“না ভাবি।ওসব ঘোরাফেরার বয়স আমার নেই।বাড়ি ছেড়ে বেড়োতে ইচ্ছে করেনা।”
ভাবি বিরক্ত হলো।উঠে চলে গেল।
আমি সোফাতেই হাঁটু মুড়ে বসে রইলাম।সন্ধ্যা হয়ে এলো।স্যার এলেন হাতে ইয়াবড়ো একটা কেক নিয়ে।
ওপরে লেখা ‘হ্যাপি বার্থডে তন্নি’
আমি ভীষণ অবাক হলাম।আজ আমার জন্মদিন উনি জানলো কী করে?আমার নিজেরই তো মনে নেই।
আমার অবাক হওয়া দুটো দৃষ্টি দেখে স্যার বললেন,”কী হলো?অবাক হলেন তো?
ভাবছেন আমি জানলাম কী করে?
আলিফের জমা দেওয়া ভকুমেন্ট থেকে আপনার এনআইডি কার্ড থেকে ডেট অফ বার্থ দেখেছিলাম আমি।তাই সারপ্রাইজ দিতে চলে এলাম।কেমন চমকে দিলাম আপনায়?”
আমি সত্যিই ভীষণ অবাক হয়েছি।মানুষটা আমার জন্য এতোটা করলো?আমার নিজের লোকেরাও কোনোদিন আমার কোনো বিষয় নিয়ে এতোটা মাথা ঘামায়নি।
স্যার কেকটা টেবিলে রেখে ভাবিকে ডাকলেন।বাইরে গেলেন।দু-ব্যাগ ভর্তি খাবার আনলেন।ভাবিকে বললেন,”আজ আপনার রান্নায় ছুটি ভাবি।তন্নি আজকে আমাদের ট্রিট দিচ্ছে।ঐযে সেদিন যাওয়া ঐ রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার এনেছি।
সব তন্নির জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ আমরা খাবো।”
“কিন্তু খাবার তো আপনি এনেছেন স্যার।”
“কিন্তু রেস্টুরেন্টটা তো আপনারও পছন্দ।”
ক্যান্ডেল ধরালেন তিনি।ছুড়ি আনলেন।আমায় সামনে দাঁড় করালেন।কেক কাঁটতে বলে।
ভাবি বলেন,”দুজনেই তো হাত কাঁটা হয়ে বসে আছো।কেক কাঁটবে কী করে?”
“আপনি এসে হেল্প করেন ভাবি।”
“আমি ওসব পারবোনা।যার যে হাত ভালো আছে সে হাত দিয়ে কাঁটো।দুজনে মিলে কাঁটো।আমি হাত তালি দেব।”
ভাবি একপ্রকার জোর করেই স্যার ও আমার হাতে ছুড়ি ধরিয়ে দেয়।দুজনে একত্রে কেক কাঁটি আমরা।স্যার সর্বপ্রথম আমায় খাইয়ে দেয়।এরপর ভাবিকে।আমিও তাদের খাইয়ে দিয়েছি।
উপহার স্বরুপ স্যার আমায় একটা সুন্দর গোলাপ ফুলের তোড়া ও একটি পায়েল দেন।
বলেন,”এই পায়েলটি পড়বেন আপনি।এটা খুব পুরোনো।আমি নিজে ডিজাইন দিয়ে বানিয়েছিলাম আমার প্রিয় মানুষটির জন্য।কিন্তু সে আমায় প্রতারণা করে চলে গেল।সেই থেকে জিনিসটা আমার কাছেই রয়ে গেছে দেওয়ার মানুষের অভাবে।
আজ খুব মন চাইলো আপনাকে দিতে।”
আমি একটু হাসলাম।উপহারটা নিলাম।
এবার খাবারের পালা।টেবিলে বসেছি সবে।স্যার টেবিল ভর্তি করে খাবার রাখলেন।ঢাকনা সরালেন।এতো খাবার দেখে আমার চোখ ছানাবড়া।
বললাম,”এতো কে খাবে?”
“আমরাই খাবো।”
ভাবিকে বসালেন তিনি।প্লেট গ্লাস সব রেডি করা হলো।চিকেন গ্রীলের দিকে নজর গেল আমায়।
চোখে পানি জমে।আনমনে বলে ফেলি,”জানেন স্যার গ্রীল খেতে আমার ছেলে ভীষণ পছন্দ করে।”
স্যার দু-দন্ড চুপ থেকে বললেন,”বেশ তো।ওদের কল করে আসতে বলি।”
আমার বারণ স্বত্ত্বেও স্যার কল করলেন।
ছেলে রেগে আছে আমার ওপর।সেই রাগ না গিয়ে খাটায় স্যারের ওপর।
আমার ধারণাই সত্য হলো।
স্যার আলিফকে কল করা আসতে বলা মাত্র আলিফ জবাব দিল,”বুড়ো বয়সে যতো ভিমরতি।আমাদের তাড়িয়ে সেলিব্রেট হচ্ছে।উনাকেই বেশি করে খেতে বলুন।আমাদের আসতে হবেনা।”
আর কিছু বলার আগেই স্যারের থেকে ফোন চেয়ে নিলাম আমি।
কানের কাছে ধরা মাত্র শুনতে পেলাম আকাশের কথা।
সে অপর পাশ থেকে বলছে,না করিসনা।বাড়িতে খাবার নেই।রাতে ওবাড়ি থেকে ভালো মন্দ খেয়ে আয় দু ভাই-বোনে।
আমি আর কিছু বললাম না।কল কেঁটে দিলাম।স্যার প্রশ্ন করলো,”কী হলো?কী বলল?”
বললাম,”আসবে ওরা।”
আকাশ হয়ত ভেবেছিল কল কেঁটে গেছে।কিন্তু আসলে তো কল কাঁটেইনি।আমিও সব শুনলাম।কতোটা ছোটলোক ও!
বাচ্চারা ওর আসল চেহারা কবে যে দেখবে!
অপেক্ষা করতে লাগলাম আমরা খাবার টেবিলে।ওরা এলে একসঙ্গে খাবো।
ওরা এলো ঘন্টা খানিক পর।আমার ধারণাতে ছিল স্যার এখানে আছে শুনে আকাশ হয়ত আসবেনা।
কিন্তু আমার ধারণাকে বদলে দিয়ে ছ্যাচড়ার মতো আকাশও খেতে চলে এলো।এতো অপমান করি তাও ওর লজ্জা হয়না।
এসেই দাঁত কপাট বের করে খেতে বসে পড়ে।
স্যার একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে রইলো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।বললাম,”আপনারা খান।আমি পরে খাবো।”
আকাশ ন্যাকামো স্বরে বলল,”তোমায় ছাড়া আমি খাবোনা তন্নি।প্লিজ বসো।আমার পাশের চেয়ারে বসো।”
ওর দিকে রক্তচক্ষুতে তাকালাম।
আলিফ রাগান্বিত স্বরে বলে,”আমাদের ডেকে এনে নাটক করা হচ্ছে নাকি?”
স্যার বললেন,”অযথা সিনক্রিয়েট হবে।আপনি বসুন তন্নি।খেয়ে নিন।”
বাধ্য হয়ে বসলাম।ভাবি খাবার বেড়ে দিল।
খাওয়া স্টার্ট করে সকলে।
আমি সবে এক লোকমা মুখে তুলবো এমন সময় আকাশ আমার পাতে লেগপিছ তুলে দিয়ে বলল,”তুমি খাও এটা।তুমিতো পছন্দ করো।”
স্যার সহ সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে।স্যার মাথা নিচু করলেন।
রাগে মনে হচ্ছে প্লেট ছুড়ে দেই ওর মুখে।
পাশ থেকে ভাবি চোখের ইশারায় কিছু বলতে নিষেধ করলো।ওকে কিছু বললে ও আরো নাটক করবে।পরিবেশ নষ্ট হবে।
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
অন্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।
চুপচাপ খাওয়া শেষ করলাম আমরা।খেতে খেতে রাত অনেকটা হয়ে এলো।এবার যে যার মতো বাড়ি যাবে এমন সময় শুরু হলো প্রচন্ড ঝড়।
তীব্র বাতাস।ও বৃষ্টি শুরু হলো।
পারুল ভাবি সঙ্গে সঙ্গে দৌড় ছাদে।তার কাপড় শুকোতে দেওয়া।
আমি আলিফ অর্নিকে চিৎকার করে বললাম,”সবকটা ঘরের জানালা খোলা।বৃষ্টির ঝাপটা এসে ঘর ভিজিয়ে দেবে।
তাড়াতাড়ি যাও সবাই জানালা বন্ধ করো।”
আলিফ অর্নি নিজেদের ঘরে দৌড়।
আমি আমার ঘরের দিকে দৌড় সিড়ি বেয়ে।স্যার ও পিছে পিছে আসতে লাগলেন আর বললেন,ধীরে চলুন।পড়ে যাবেন।লেগে যাবে।
আমি শুনছিনা।টেবিলের সঙ্গে লাগোয়া জানালা আমার।টেবিলে গুরুত্বপূর্ণ পেপার্স রাখা।ভিজে গেলে চরম ক্ষতি।
ঘরে ঢুকে দেখি সর্বনাশ আমার অলরেডি হয়েই গেছে।পেপার্সগুলো ভিজে গেছে অনেকটা।
আমি গিয়ে পেপার্স হাতে নিয়ে ঝাড়তে ও মুছতে লাগলাম।এরই মাঝে কারেন্ট চলে গেছে।ঘরে ঘুটঘুটে অন্ধকার।স্যার অন্ধকার হাতরে ঘরে প্রবেশ করে বলেন,”আপনি ঠিক আছেন তন্নি?”
আমি আমার কাজে ব্যস্ত।অন্ধকারের মাঝেই তিনি ধীরে ধীরে আমার সামনে দাঁড়ালেন।খোলা জানালা বন্ধ করতে নিলেন।
এরই মাঝে প্রচন্ড শব্দে বিদ্যুৎ চমকেছে।ধবধবে আলো ঘরে ঢুকেছে।ভয়ে আমি কাগজ ফেলে স্যারকে আকড়ে ধরেছি।
স্যার জানালা বন্ধ করে পেছনে ঘোরে।
বলেন,”ভয় পাবেন না।আমি তো আছিই।”
আমি তখনও তাকে ধরে।
স্যার ফিসফিসিয়ে বলেন,”বাচ্চারা এতো ভয় পায়।”
কিছুটা লজ্জা পাই।ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়াই।একটু হাসি।তিনি বলেন,”আপনার মুখে একটু হাসি দেখতেই এতো কিছু করেছি আমি।আপনার ভালো থাকা আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”
এরই মাঝে কার যেন পায়ের শব্দ।
হেঁটে হেঁটে এ ঘরের দিকে আসছে।ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে আকাশ এলো আমার ঘরে।
এসেই দুজনকে একসঙ্গে দেখে বলল,”এই অন্ধকারের মাঝে দুজন এক ঘরে কী করছো তোমরা?”
“সেটা কী তোমায় বলতে হবে?আমার ঘরে আসার স্পর্ধা হয় কী করে?
ভেবো না ঝামেলা করবে আর তোমায় আমি ছেড়ে কথা বলবো।মেরে চামড়া গুটিয়ে নেব।
আমার বাড়ি আমার ঘর।আমি যাকে ইচ্ছা রাখতে পারি।তাড়িয়েও দিতে পারি।”
আকাশ একটু ভয় পেলো হয়ত।শুকনো ঢোক গিলল।
আমি বের হতে ওর সামনে দিয়ে এলাম।স্যার ও এলেন।হাতে লাইট নেই আমার।লাইট জ্বালাতে হবে।নিচে আছে সব।সিড়ি বেয়ে নামছি ধীরে ধীরে।স্যার পেছনে।তার পেছনে আকাশ।হঠাৎ পা ফসকে যেতে নেয় আমার।স্যার ধরেন আমার হাত।তাকে ধরেই বাকি সিড়ি নামি আমি।
আকাশ এ দৃশ্য দেখে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে থাকে।
নিচে এসে লাইট জ্বালাই।স্যার চলে যেতে চান।
আমি বলি,”এই বৃষ্টির মাঝে যাবেন কীভাবে?”
“সমস্যা হবেনা।বাড়ি তো আমার বেশি দূরেনা।”
“সেজন্যই বলছি থেকে যান।বাড়ি তো কাছেই।বৃষ্টি থামলে নাহয় চলে যাবেন।
ভিজে গেলে জ্বর আসবে।”
ভাবি ও তাই বলে।স্যার বসে গিয়ে সোফায়।
আলিফ-অর্নিকে বললাম,”আজ থেকে যাও তোমরা।রাত অনেক হয়েছে।এই রাতে আর বৃষ্টির মাঝে যাওয়ার দরকার নেই।বাজ পড়ছে বাইরে।এসময় যাওয়া ঠিক হবেনা।”
আলিফ কিছু বলল না।অর্নি বলল,”আচ্ছা থেকে যাচ্ছি।তবে সকাল হলেই চলে যাবো।”
ওরা যে যার ঘরে গেল।
এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলো আকাশ।একে তো কেউ কিছু বলেনি।এ কেন যাচ্ছনা?
আকাশ গলা উচিয়ে বলে,”দেখলেন পারুল তন্নি এখনো আমায় নিয়ে কতো ভাবে!
আমার যেন কিছু নাহয় সেই চিন্তা করে।
যতোই ও বলুক আমায় ঘৃণা করে।আসলে কিন্তু মনে মনে আমাকেই ভালোবাসে।যতোই হোক আমি ওর সন্তানের বাবা।কতো স্মৃতি আমাদের।কতো মধুর সময়।এক বিছানায় থেকেছি আমরা।সব কী ভোলা যায়?”
আকাশ শেষ কথাগুলো স্যারের দিকে তাকিয়েই বললেন।
আমার গা ঘিনঘিন করে উঠছে ওর কথায়।রাগান্বিত স্বরে বললাম,”চুপ করবে নাকি ঘাড় ধরে বাড়ি থেকে বের করে দেব?”
ও চুপ করলো।
আমি গিয়ে স্যারের পাশে বসে বললাম,”বোর লাগছে স্যার?”
তিনি কিঞ্চিৎ হেসে বলেন,”নাহ ঠিক আছি।”
ওমনি আকাশ এসে আমার পাশে বসে বলল,”তোমার মনে আছে তন্নি এমনই এক বৃষ্টির রাতে তুমি আর আমি একসঙ্গে ছাদে ভিজেছিলাম।
কতো সুন্দর ওয়েদার ছিল সেদিন।ভিজতে ভিজতে তুমি পা পিছলে পড়ে গেছিলে।আমি তোমায় কোলে করে ঘরে নিয়ে এসেছিলাম।”
এ চুপ করবেনা বুঝলাম।স্যারের সামনে আমায় বিব্রত করছে ও ইচ্ছে করেই।স্যারকে দেখলাম মন খারাপ করে মাথা নিচু করে আছে।
আকাশ আবারো বলল,”আবার এক বৃষ্টির বিকেলে তুমি আর আমি হাতে হাত রেখে খালি পায়ে সবুজে ঘেরা রাস্তা দিয়ে হেঁটেছিলাম মনে আছে?
চোখে চোখ রেখে কতো কথা বলেছিলাম।
বাজ পড়ার আওয়াজে তুমি আমায় জড়িয়ে ধরেছিলে।”
এবার আমিও বললাম,”হ্যা সব মনে আছে।এটাও মনে আছে,এমনই এক বৃষ্টির রাতে তোমায় আর রিঙ্কিকে হাতেনাতে ধরেছিলাম আমি।
রাগে জুতো ছুড়ে মেরেছিলাম তোমায়।
আবার এমনই এক বৃষ্টির দিনে এলাকার লোকে তোমায় গণধোলাই করেছিল।মনে আছে সেসব?”
আকাশ এবার কাশতে কাশতে উঠে গেল।
ভাবিকে দেখছি মুচকি মুচকি হাসছে।সঙ্গে স্যারও।
চরম শিক্ষা পেয়েছে আকাশ।
ভাবি বলল,”বসেই তো আছি সব।বাইরে বৃষ্টিও হচ্ছে।এমন ওয়েদারে এককাপ গরম চা হলে মন্দ হয়না।
কী বলো সবাই?”
বললাম,”হলে তো ভালোই হয়।চা খেতে খেতে বৃষ্টি দেখবো।চলো ভাবি বানিয়ে আনি দুজনে।”
আমরা দুজন লাইট নিয়ে চা করতে গেলাম।স্যার ও আকাশ সেসময় একাই ছিলেন।
মিনিট পাঁচেক পর চা হাতে যখন ঘরে এলাম,আকাশ ও স্যারকে পাশাপাশি বসা দেখলাম।তবে স্যারের মুখ ভীষণ গম্ভীর।যেন কোনো বিষয় নিয়ে কষ্ট পেয়েছে সে।এদিকে আকাশের মুখে হাসি।
আমি বুঝলাম না কিছুই।ভাবির দিকে তাকালাম।ভাবি কানে কানে বলল,”নিশ্চয় এই ছেলে কোনো কলকাঠি নেড়েছে।”
চা টেবিলে রেখে নিজের হাতে স্যারকে দিয়ে আমারটা নিয়ে বসলাম।ভাবিও নিল এককাপ।আকাশকে কেউ না বললে সে নিজেই নিল।
স্যার একচুমুক খেয়ে কাপটা টেবিলে রেখে বললেন,”কিছু মনে করবেন না।আজ চা খেতে ইচ্ছে করছেনা।”
ওদিকে আকাশ একচুমুক খেয়ে মুখটা বিকৃত বানিয়ে বলে,”ওহ তন্নি চা অদলবদল হয়ে গেছে।এটা তোমার চা।তোমার তো কড়া লিকার পছন্দ।এটা কড়া লিকারে মিষ্টি কম চা।তুমি এটা খাও।আমি তোমারটা খাচ্ছি।”
আমি কিছু বলার আগেই আকাশ আমার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক বসায়।
বলে,”এটা অনেক সুস্বাদু।অনেক বেশিই সুস্বাদু।”
আবারো স্যারের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল ও।
পারুল ভাবি বিষয়টা বুঝতে পেরে বলল,”সমস্যা নেই।কড়া লিকারে আমি দু-কাপ চা বানিয়েছি।স্যারেরটাও কড়া লিকার।স্যারতো খাবেনা।তন্নি তুমি বরং ওটাই খেয়ে নাও।”
“হ্যা তাই করি।”
বলে কাপটি নিয়ে চুমুক দিলাম।আকাশকে দেখি রাগে ফুসছে।আমার হাসি পেল ভীষণ।
পাশে স্যারের মুখেও হাসি হাসি ভাব।
চা খাওয়ার পালা শেষ হলো।
বৃষ্টি তখনও কমেনি।
আকাশকে বললাম,”অর্নির ঘরের পাশে দেখবে খালি একটা ঘর আছে।সেখানে গিয়ে শুয়ে পড়ো।রাত তো অনেক হলো।নাটক ও তো অনেক হলো।ক্লান্ত হয়েছো নিশ্চয়!
নাকি আরো কিছু বাদ আছে?”
আকাশ জবাব না দিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে গেল।
স্যারকে বললাম,”আপনি ঘরে যেতে পারেন।নাহয় সোফাতেই একটু কাত হয়ে নিন।”
“নাহ।এখানেই ঠিক আছি।”
সোফায় শরীর এলিয়ে দিলেন তিনি।
ভাবিকে দেখলাম হাই তুলছে।সারাদিন খাটে মানুষটা।ঘুম পেয়েছে হয়ত।
বললাম,”ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ো ভাবি।বসে থেকে কী করবে।”
ঘরে গেল সে।আমিও ছেলে-মেয়ের ঘরের দিকে গেলাম।ঘায়ে কাঁথা টেনে বালিশ দিলাম ঠিক করে।জানালা গুলো চেক করলাম।পানি এনে মাথার কাছে রাখলাম।
সব শেষে নিচে এলাম।
দেখলাম স্যার ঘুমিয়ে গেছেন। যাওয়াটাই স্বাভাবিক।মানুষটা বড্ড পরিশ্রমী।কলেজে ক্লাস নেওয়া,আবার নিজস্ব কোচিং এ পড়ানো।
বাড়ির কাজ করা।রান্নাবান্না সহ নিজের কাজ সব তার একাকেই করতে হয়।
আজ আবার আমার জন্য কতোকিছু করেছে।
ক্লান্ত নিশ্চয় ভীষণ।
হাত-পা আকড়ে ধরে শুয়েছে।শীত করছে বোধহয়।বাইরের আবহাওয়া ভীষণ শিতল।বৃষ্টি হচ্ছে টানা।
একটা কাঁথা এনে তার গায়ে দিলাম।
নিচে বসলাম।ঘুমন্ত স্যারকে কতো নিষ্পাপ লাগছে।অবশ্য উনি মানুষটাই নিষ্পাপ।
আমি উনাকে দেখছি মন দিয়ে।
এমনই সময় আকাশের ডাক।সিড়ি থেকে ডাকছে সে।আমি উঠে দাঁড়ালাম।আকাশ বলল,”ঘুমাচ্ছো না কেন?বসে আছো কেন ওখানে?”
“সেটা শুনে তোমার কাজ নেই।কী বলবে সেটা বলো।”
“আমার একটা কাঁথা প্রয়োজন।শীত করছে।এসে দিয়ে যাও।”
“ওঘরের প্রথম ড্রয়ারেই আছে।নিজে নিয়ে নাও।”
আকাশ যেতে নেয়।কী যেন মনে করে পেছন ঘোরে।
বলে,”তুমি কী সারারাত ওখানেই বসে থাকবে আর উনাকে দেখবে?”
চলবে।