আমিই সেই তন্নি পর্ব-১৪

0
21

#আমিই_সেই_তন্নি
#Nadia_Afrin

১৪
সকাল হতেই চলে গেছে সকলে।স‍্যার গেছেন মাঝরাতে।
সবাইকে বিদায় করে নিজের কিছু কাজ সারলাম।মিনিট বিশেক পর আলিফ কল করে টাকা চায়।যে ঘরে উঠেছে,তিনমাসের ভাড়া বাকি।বাবাকে সহ ওদের বের হয়ে যেতে বলেছে বাড়িওয়ালা।
টাকার খুব প্রয়োজন।ঘরে বাজারও নেই।ফ‍্যান নেই।দূষিত পানি।খেতে পারছেনা।ঘুমোতে পারছেনা।খালি মেঝে।ঠান্ডা লাগে।পিঠ শক্ত হয়ে আসে।প্রচন্ড গন্ধ নোংরার।
টাকা চায় মোটা অঙ্কের।সব ঠিক করবে।
আমার থেকে টাকা নিয়ে বাবার ঘর উন্নত করবে।
বললাম,”আমি কেন দিতে যাবো তোমার বাবার ঘর ভাড়ার টাকা?
আমায় কী টাকার মেশিন পেয়েছো তোমরা?
এখানে এক সংসার আমার।আবার তোমাদের নাটকের জন্য তোমাদেরও আলাদা সংসার টানবো।
মনে হয় টাকার গাছ আমি!
বাবার কাছে গিয়েও যদি আমার টাকা দিয়েই চলতে হয় তো ওখানে থাকার দরকার নেই।চলে এসো।তবে আমি কোনো টাকা দিতে পারবোনা আর।মানবিকতার খাতিরে একবার দিয়েছি হয়েছে।আর পারবোনা।”

আলিফ কল কেঁটে দিয়েছে।
আমি যা বলেছি ঠিক বলেছি।
নিচে এলাম।এসব বাচ্চাদের যন্ত্রণায় আমার পাগল হওয়ার উপক্রম।একেক সময় একেক কাজ করে বসে।যেখানে ডাক্তার আমায় বলেছে টেনশন না করতে।সেখানে ওরা সন্তান হয়েই আমায় বেশি চিন্তায় রাখে।

মাথা ধরে সোফাতে বসলাম।ভাবি এককাপ চা হাতে দিয়ে পাশে বসলো আমার।
সোজা বলল,”ছেলে-মেয়ে করে করে অনেক দিনই পার করলে।এবার আর নয়।জীবনে সঠিক মানুষ বারবার আসেনা।স‍্যারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম।তিনি তোমায় পছন্দ করে।বিয়ে করতে রাজি।শুধু তার মা-বাবার সঙ্গে একবার কথা বলতে চায়।এবার তুমিও প্রস্তুত হয়ে নাও।
আমি জানি তুমিও তাকে পছন্দ করো।”

“হুটহাট করে কী যে বলোনা তুমি ভাবি!”

“ভুল তো কিছু বলিনি মেয়ে।আগের পরিবেশ আর এখনকার পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা।আকাশ লোকটা আবারো তোমার পিছে লেগেছে।কারণে-অকারণে বাড়ি আসছে।ছেলে-মেয়েকে কেড়ে নিয়েছে।তোমায় একা পেয়ে তোমার সঙ্গ নিতে চাচ্ছে।
বাচ্চারা জানে ওরা যতো কিছুই করুক,দিনশেষে তুমি ওদের ঠিকই আগলে নেবে।এজন‍্য সাহস বেশি পেয়েছে।তোমায় অবহেলা,অপমান করে।তুমি পারছোনা শক্ত হতে।একবার শক্ত হলে তিনবার দূর্বল হও।এতে করে ওরা তোমায় হাসির খোড়াক বানিয়ে ফেলেছে।
আবার একাও থাকতে পারছোনা।ভুল সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছো। একাকিত্ব তোমায় গ্রাস করে নিচ্ছে তন্নি।খাও না,ঘুমাও না।মন খারাপ করে বসে থাকো।এভাবে কদিন বাঁচবে?
এরচেয়ে বরং জীবনকে আরেকটা সুযোগ দাও।অনেক তো চেষ্টা করলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকার।তোমার সব চেষ্টা ওদের কাছে মূল‍্যহীন।তাই নিজেকে আর ছোট বানিও না ওদের চোখে।”

কিছুক্ষণ ধ‍্যান ধরে থেকে বললাম,”আমার এখন কী করা উচিৎ ভাবি?”

“বিয়ে করা।একজন মানুষকে নিজের জীবন সঙ্গী করা।সুখে-দুঃখে কাউকে আকড়ে ধরা।
ওরা যেমন ওদের জীবন নিয়ে ব‍্যস্ত হয়ে পড়েছে,তুমিও এগিয়ে যাও।”

“এতে কী ওদের প্রতি অন‍্যায় হবেনা ভাবি?”

“নাহ কখনোই না।তুমি তো চেষ্টা করলে অনেক।ওরা তোমায় বুঝছেনা এখানে তোমার কী দোষ?
একা বাঁচা যায়না তন্নি।নিজের আত্মাটার জন্য হলেও এবার একটু ভালো থাকার চেষ্টা করো।
স‍্যারই পারবে তোমায় ভালো রাখতে।
ব‍্যাক্তিজীবনে তোমরা দুজনই দুঃখী।এবার এক হয়ে সুখী হয়ে যাও।
অন‍্যথায় তোমার জীবন আরো দুঃখে পর্যবসিত হবে।এখন তো ছেলে-মেয়ে কথা শোনাচ্ছে।কদিন পর দেখবে তোমার একাকিত্বের সুযোগ নিয়ে পুরো দুনিয়া তোমার দোষ ধরবে।ক্ষতির চেষ্টা করবে।
তোমায় আগলে রাখার কাউকে প্রয়োজন তন্নি।তুমি ভেসে যাচ্ছো সকলের অবহেলা- অবজ্ঞায়।”

একনাগারে কথাগুলো বলে থামেন ভাবি।
আমি সোফাতেই বসে রই।
ভাবি মূলত আমায় ভাবতে সময় দিয়েছে।ঘন্টাখানিক পর তিনি আমার উত্তর জানতে চান।
বলি,”স‍্যারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চাই আমি।”

ভাবি আমাদের কথা বলার ছাদে একটা ছোটখাটো ব‍্যবস্থা করে দেয়।
সন্ধ্যাতে স‍্যারকে ডেকে আনেন।

আজ আমরা দুজনেই মুখোমুখি।তবে কথা বলছিনা কেউই।কেমন একটা জড়োতা কাজ করছে দুজনের মাঝেই।
অবস্থা বুঝে স‍্যারই শুরু করেন কথা।বলেন,”আপনার মতামত কী তন্নি?যা বলার সোজাসুজি বলতে চাই আমি।জীবন আমার ও আপনার।সুতরাং সিদ্ধান্ত ও আমাদের নিতে হবে।”

“দেখুন স‍্যার আমি মেয়েটা বরাবরই নিজের বিষয়ে উদাসীন থেকেছি।আমি আমার নিজের থেকেও অপর পক্ষের মানুষকে নিয়ে ভেবেছি বেশি।এভাবে প্রতারিত ও হয়েছি।সবটাই জানেন আপনি।
এরপর ছেলে-মেয়েকে আকড়ে ধরেছিলাম।ভেবেছিলাম ওদের মানুষ করেই বাকিটা জীবন পার করে দেব।দিন শেষে ওরাই আমায় দেখবে।আমার ভবিষ্যৎ হবে।
কিন্তু তা হলোনা।একা আমি একাই রয়ে গেলাম।
তবে আফসোস নেই।
ভাগ‍্যে ছিল হয়েছে।ওরা যাই করুক,আমি কখনোই চাইনা ওদের ঠকাতে।বা অধিকার নষ্ট করতে।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
অন‍্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।

“দেখুন,এখানে অধিকার নষ্টের কিছু নেই।বিয়ে মানে এই নয় যে সব ছেড়েছুড়ে আমাদের শুধু একে-ওপরকে নিয়েই থাকতে হবে।আঠারো বছরের যুবক-যুবতি আমরা নই যে আবেগের চোখে নিজেদের ছাড়া কাউকে দেখবোনা।
আমাদের দুজনেরই আলাদা জীবন আছে।
আমি একজন শিক্ষক।আমার সকল স্টুডেন্টকে আমি আমার নিজের সন্তানের মতো দেখি।আলিফকেও সে নজরেই দেখি।
আমার জন্য রক্তের বা,সম্পর্কের বন্ধন ম‍্যাটার করেনা।আমি মানুষটা কোনো বন্ধন ছাড়াও মানুষকে আপন করে নিতে জানি।
আমাদের দুজনেই জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি।আমরা বুঝি প্রতিটি সম্পর্কের মূল‍্য ঠিক কতোখানি।
আমরা কোনো অবৈধ কাজ বা পাপ করছিনা।শুধু একটু একটা সম্পর্কের নাম নিয়ে পথ চলতে চাইছি।ভালো থাকতে চাইছি।আমি আপনায় সম্মান করি।আপনার কর্মকে সম্মান করি।
প্রতিটা সম্পর্কে বিশ্বাস ও ভরসা থাকা আবশ্যক।
আপনার প্রতি একটা বিশ্বাস আমার কাছে।
আপনি আমার জন্য আপনার সন্তানদের অথবা সন্তানদের জন্য আমায় কখনোই অবহেলা করবেন না।দু-দিক সামলেই পথ চলতে পারবেন অবশ্যই।
আমি আপনায় জোর করবোনা তন্নি।
আপনার জীবন,সিদ্ধান্ত ও আপনার।
তবে একটা কথা বলবো,আমি কখনোই কোনো কিছু আপনার ওপর চাপিয়ে দেবনা।আপনি সেচ্ছায় যা গ্রহণ করবেন যা আমার জন্য আবশ‍্যক হবে।আপনায় ভালো থাকতে হবে এটাই মূল।যা পেয়ে আপনি ভালো থাকবেন তাতেই আমার মত থাকবে।
আমার কাছে আপনি এবং আপনার মতামতের প্রায়োরিটি সবার আগে।”

আমি তার প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলাম।
একটু হেসে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,”তাহলে নতুন জীবনের সূচনায় এগিয়ে যাওয়া যাক?”

স‍্যার হাসলেন।আমার হাত ধরলেন।
হাতে হাত রেখে দূর আকাশের দিকে তাকালাম আমরা।
আমাদের মাঝে আর কিছু থাকুক বা না থাকুক,রয়েছে অটুট বিশ্বাস ও সম্মান।

দুদিন পার হলো।আমি ও স‍্যার নিজেদের চিনেছি আরো ভালো ভাবে। বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে গিয়েছি আমরা।একে-অপরের সঙ্গে গল্প করেছি।
খুব শিগ্রই হয়ত একে-অপরকে নিজের করে নেব।
আমাদের কথা মোটামুটি সবাই ই জেনেছে।সামনের শুক্রবার স‍্যারের মা-বাবা আসবেন।আমার সম্পর্কে সবটাই জেনেছেন তারা।সম্মতিও দিয়েছে।এবার তারা এসে চারহাত এক করে দেবেন গুরুজন হিসেবে।
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।

এ খবর পেয়ে আলিফ অর্নি সমেত আকাশ সেদিনই বাড়িতে এলো।এলো বললে ভুল হবে।আমিই আনিয়েছি।দুদিন হলো বাচ্চাদের নেয়নি,এরই মধ্যে মেয়েকে পকেট মারা শিখিয়েছে।খবর পেয়ে আকাশকে কল দিয়ে থ্রেট করেছি আমি।
বাচ্চাদের এখনই আনতে বলেছি বাড়ি।
সেজন্যই ও নিয়ে এসেছে।

আকাশ এসে বাড়িতে চিৎকার শুরু করেছি।আমি কেন বিয়ে করছি এ বয়সে।আমার চরিত্র খারাপ।আরো কতো কথা!

আমি প্রতিবাদের স্বরে বলেছি,”তুমি করলে দোষ নেই।আমি করলে চরিত্র খারাপ?
আমার জীবন আমি যা ইচ্ছে করবো।”

ও তেড়ে এসেছে আমায় আঘাত করতে।সঙ্গে সঙ্গে স‍্যার এসে ওকে থাপ্পড় দিয়েছে।
বলেছে,”কোন সাহসে আপনি উনার প্রতি উত্তেজিত হচ্ছেন?তাও উনারই বাড়ি এসে!
আমার হবু স্ত্রী সে।আপনি একজন বাহিরের মানুষ হয়ে আমার হবু স্ত্রীর প্রতি অমানবিক হতে পারেন না।”

একথা শুনে আলিফ এগিয়ে এসে বলে,”বাহ আম্মু!
তোমার এতো উন্নতি হয়েছে আমরা না থাকাতে?
বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে?
যদি তোমার বিয়ে করারই ছিল,তখন কেন করোনি?এখন আমরা বড়ো হয়েছি,কেন তুমি আমাদের লোক সমাজে হাসির খোড়াক বানাতে চাইছো?”
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।

“হাসির খোড়াক তো তোরা আমায় বানিয়েছিস।লোকের সামনে নিজের মায়ের সঙ্গে এমন ব‍্যবহার করিস,যে দূরে গিয়ে তারা আমায় নিয়ে হাসে।
আমি আজ এই সিদ্ধান্ত কম নিরুপায় হয়ে নেইনি।আমি বড্ড একা হয়ে পড়েছি।আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করেনা। একাকিত্ব আমায় কুড়ে কুড়ে খায়।যেই বয়সে আমার স্বামী নিয়ে জীবন উপভোগ করার কথা ছিল,সে বয়সে আমি চিন্তার
বোঝা মাথায় চেপে রেখেছি।সন্তানের চিন্তা।সন্তানের ভবিষ্যৎ এর চিন্তা।কখনো নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়ই পাইনি।লোকে বলতো নিজের জন্য কিছু করে রাখতে।আমি বলতাম আমার সন্তানই আমার ভবিষ্যৎ।ওরাই আমায় দেখবে।
কিন্তু হলো কী?
তোরা হলি মহা ব‍্যস্ত।মাকে সময় দেওয়া তো দূরে থাক,মায়ের সঙ্গে থাকতে পর্যন্ত ইচ্ছে করেনা তোদের।এই মেয়েকে পালতে আমার গায়ের ঘাম ছুটে গেছে।এক হাতে ওকে আগলে অন‍্য হাতে কাজ করেছি।সেই মেয়ে আমায় ডাকেনা অব্দি মা বলে।
ছেলের মুখে খাবার তুলতে নিজে না খেয়ে দিন পার করেছি।সেই ছেলের সময় হয়না আমার সঙ্গে বসে একবেলা ভাত খেতে।
তারা বড়ো হয়েছে,ব‍্যস্ততা তাদের গ্রাস করে নিয়েছে।কই আমি তো দেখাই না আমার ব‍্যস্ততা!
হাজারো কাজের মাঝেও তোদের সময় দিতে চাই।
আজ আমি এমন সিদ্ধান্ত কখনোই নিতাম না হয়ত।যদি না তোরা আমার একটু পাশে থাকতি।
আমায় বুঝতি।
অসুস্থ হয়ে আমি বিছানায় কাতরাই।তোদের পাশে পাইনা।কী লাভ হয়েছে আমার তোদের এতো ভালোবেসে?
সেই তো তোরা মায়ের অবদান ভুলে বাবার পিছু নিলি।তোর বাবা একসময় আমার ঘরের স্বামী ছিল।এক নারী কম দুঃখে তার ঘরের স্বামীকে ঘৃণা করেনা।তোরা যখন সংসারে প্রবেশ করবি,তখন বুঝবি আমার একথার মর্ম।এখন সব কিছুই সহজ লাগছে।কিন্তু সব কিছু এতো সহজ নয়।
এই একটা মানুষ আমায় জীবন্ত দাফন করেছে।চোখের সামনে নিজের স্বামীকে পর নারীর কাছে যেতে দেখেছি আমি।কুকুরের মতো ব‍্যবহার পেয়েছি তার থেকে।
আমার হৃদয়কে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত করেছে ও।
ওর মুখের সামান্য ঐ মিষ্টি কথা সব ভুলিয়ে দেবেনা আমায়।
আমি কখনো ওর বাড়ির লোকের কাছে সম্মান পাইনি।গাধার মতো খেটেছি আমি।পেয়েছি লাঞ্চনা।তোর বাবাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে পেয়েছি প্রতারণা।
তোরা আমার জন্য একটা ঘন্টা বের করতে পারিস না তোদের সময় থেকে।অথচ আমি আমার পুরো জীবন ব‍্যয় করে দিয়েছি তোদের পেছনে।তোদের,শখ- আল্লাদ পূরণ করতে জীবনে কখনো বিশ্রাম নেওয়ারই সময় পাইনি।
সেই তোরাই আজ আমার দোষ ধরিস।
খুব সহজে বলে দিলি,বিয়ে করার ইচ্ছে হলে তখন কেন করিনি!
তখন সময় ছিল ঠিকই।বয়স ও ঠিকই ছিল।কিন্তু পরিস্থিতি ছিল না।তোদের বাবা তোদের তাড়িয়ে দিয়েছিল।আমায় আকড়ে বেঁচেছিলি তোরা।আমার বয়স অল্প ছিল।তবুও অন‍্যদিকে নজর দেইনি।কেন জানিস?
শুধু মাত্র তোদের জন্য।আমি গেলে তোরা কার কাছে থাকতি?দুধের মেয়ে আমার,বাঁচতো আমায় ছাড়া?
অবুঝ ছেলে আমার,পারতো এই বড়ো পৃথিবীতে টিকে থাকতে?
ভাগ‍্যের জোরে বেঁচে থাকলেও মানুষ হয়ত হতিনা।রাস্তার টোকাই হতি।অথবা বাবার মতো মনুষ্যত্ব ছাড়া চোর-ছ‍্যাচড়।
এখন তোরা বড়ো হয়েছিস।আমি যদি আজ মারাও যাই,টিকে থাকতে পারবি সম্মান নিয়ে।
অন্তত সৎ পথে গায়ে গতরে খেটে তো খেতে পারবি।বোনটাকে তো দেখতে পারবি।
আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি ঠিকই।তোদের লেখাপড়া শিখিয়েছি। ভবিষ্যৎ এর পথ দেখিয়েছি।
আর কী চাস আমার থেকে?
এবার একটু আমায় নিজেকে নিয়ে ভাবতে দে।আমিও মানুষ।আমারও মনে সাধ-আল্লাদ আছে।যেই বয়সটা শখের ছিল,সেই বয়সে পারিনি।এবার মৃত্যুর আগে হলেও আমি একটু আমার দিকে নজর দিতে চাই।
তোরা কী চাসনা আমি ভালো নাকি?
নাকি তোরা প্রতিনিয়ত এভাবে কষ্ট দিয়ে যাবি আমায়,আর আমি ধুকে ধুকে মরবো।এটা চাস?
চাইলে বল বাবা!গলায় দড়ি পেচিয়ে নেই এখনি।তোদের জন্য সব যেহেতু করতে পেরেছি,এটাও পারবো।”

কথা গুলো বলে ছেলে-মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম।ওরা কোনো উত্তর দিচ্ছেনা।
আমি সামান্য হাসলাম।
বললাম,”জানিস বাবা,ছোট থেকেই আমার চাহিদা ভীষণ কম।অল্পতেই খুশি থাকি।সেই অল্পটাও জোটেনা কখনো।
আমি একটা মানুষ,যার অর্থবিত্ত,গাড়িবাড়ি সব আছে।কিন্তু মনে শান্তি নেই একফোটাও।
আমি অসুস্থ হলে কেউ এসে বসেনা কাছে।একটু হাত বুলিয়ে দেয়না মাথায়।মনে করে ঔষধ খাইয়ে দেওয়ার ও লোক নেই।কতো কথা জমে থাকে মনে।বলার বা শোনার মানুষ নেই।
স্বপ্ন ছিল সমুদ্র দেখার।কমিটি থেকে একবার সকলে সমুদ্রে ঘুরতে যাবে।আমাকেও যেতে বলল।আমার স্বপ্ন পূরণ তখন আমার হাতের মুঠোয় ছিল।সেই সুযোগটাও ছেড়ে দিলাম তোদের কথা ভেবে।মেয়ে ছোট,সমুদ্রের ঠান্ডা হাওয়ায় ঠান্ডা লাগবে।
এভাবে নিজের অহরহ স্বপ্ন আমি ত‍্যাগ করেছি তোদের জন্য।আর তোরা আমায় সময় টুকুই দিতে পারিসনা।অথচ পদে পদে ভুল ঠিকই ধরতে পারিস।
মা হিসেবে আমি পালন করেছি আমার সব দায়িত্ব।তোরা সন্তান হিসেবে কোন দায়িত্বটা পালন করলি বল আমায়?”

স‍্যার এগিয়ে এসে বললেন,”এতো সমস্যা যদি আমায় কেন্দ্র করে হয়ে থাকে তো থাক!
আমি আপনাদের জীবন ছেড়ে চলে যাবো।তবুও আমি চাই আপনারা ভালো থাকুন।একসঙ্গে হাসিখুশি থাকুন।
আমি সর্বক্ষণ চেয়েছি তন্নি ভালো থাক।আলিফ-অর্নিকে ছাড়া সে কখনোই ভালো থাকবেনা।
আলিফ-অর্নি যদি মনে করে আমি তাদের জীবন থেকে চলে গেলে তারা ভালো থাকবে,তাহলে তাই যাবো আমি।
অন‍্যের সুখ কেড়ে নিজের সুখ নিতে চাইনা আমি।”

“তার কোনো প্রয়োজন নেই স‍্যার।প্রতিটি মানুষ ওদের জন্য ত‍্যাগ স্বীকার করে করে ওরা পেয়ে বসেছে।এবার ওরাও একটু শিখুক ত‍্যাগ স্বীকার করতে।
আপন মানুষের সুখের জন্য সার্থ ত‍্যাগ করতে শিখুক ওরা।
অনেক হয়েছে আর নয়।
এবার সিদ্ধান্ত ওদের।ওরা যদি ওদের বাবাকে চায় তাহলে আমায় ত‍্যাগ করতে হবে আজীবনের জন্য।
আর আমি অবশ্যই নতুন জীবন শুরু করবো।
সেটাও ওদের মেনে নিতে হবে।আমি যদি ওদের সুখ চিন্তা করি,তাহলে ওদের ও দায়িত্ব আমার সুখের চিন্তা করা।
আমার শেষ সিদ্ধান্ত,আকাশকে আমি আমার জীবনে কোনো মতেই জায়গা দেব না।”

আলিফ-অর্নি দুজনেই চুপ।মাথা নিচু করে আছে ওরা।
আকাশ আবারো চিৎকার করে বলে,”তন্নি তুমি এসব আবেগী কথা বলে আমার থেকে আমার সন্তানদের কেড়ে নিতে চাইছো।
সবই তোমার চাল।এই লোক আর তোমার চাল।”

“লোক কাকে বলছো?সম্মান দিয়ে কথা বলো।উনি একজন শিক্ষক। ছলচাতুরি,চাল তোমার স্বভাব আমার নয়।
আবেগ দিয়ে মন গলানো তোমার কাজ।আমার নয়।আমি যা করেছি তা আমি বলেছি।
বিয়ে তো এবার আমি করেই ছাড়বো।অন্তত তোমায় দেখানোর জন্য হলেও।
উনাকে বিয়ে করে ভালো থেকে তোমায় দেখাবো আমি।
বলেছিলে না আমি কখনো সুখি হবো না।
এবার সুখকে হাতের মুঠোয় নিয়ে তোমার সামনে দিয়ে পথ চলবো আমি।”

“তন্নি একেবারে ঠিক বলেছে।আলিফ-অর্নির ব‍্যবহার ওকে কঠোর করেছে।আমি নিজ চোখে দেখেছি মেয়েটার কষ্ট।দিনের পর দিন তোদের জন্য হাহাকার করেছে।তখন কোথায় ছিলি তোরা?
আজ যেই একটু নিজের কথা ভেবেছে,নিজের মতো করে জীবন কাঁটাতে চাইছে,ওমনি ব‍্যাগরা দিতে চলে এলি দুই ভাইবোন তাই না?
তোরা আসলে চাস টা কী বল তোহ?
তোদের মা তোদের জন্য সারাজীবন খেটে মরবে,কোনো শখ আল্লাদ থাকবেনা।তোরা প্রতিনিয়ত তাকে কথার আঘাতে মারবি।আর সে চুপচাপ সহ‍্য করে করে তিলে তিলে শেষ হবে।কেমন সন্তান তোরা যে মায়ের দুঃখ বুঝিস না?
তোদের বাবা,যার কোনো চরিত্রের ছিড়ি নেই।সে বাড়ি বয়ে এসে তোর মাকে অপমান করে যায়।তুই ছেলে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখিস শুধু।
তোর মায়ের প্রাপ‍্য সম্মান তোরা কখনোই দিতে পারিসনি।না তুই পেরেছিস।না তোর বাবা।
স‍্যার মানুষটার চোখে তোর মায়ের প্রতি অগাধ সম্মান দেখেছি আমি।এজন‍্য বলেছি বিয়ে করতে।ছোট্ট এই জীবনে ওর ও ইচ্ছে করে সম্মান,ভালোবাসা পেতে।ও মানুষ।
মা টাকে দেখে তোদের মায়া হয়না?
এই একটা মেয়ে জীবনে কখনো সুখের দেখা পায়নি।এই যে তোরা সুখ-বিলাসিতায় বড়ো হচ্ছিস।তোর মা অন‍্যের জুঠা-বাসি মার-গাল খেয়ে বড়ো হয়েছে।
স্বামীর বাড়ির নির্মম অত‍্যাচার সয়েছে।শেষ ভরসা ছিলি তোরা।ভেবেছিল তোদের মানুষ করে সুখের দেখা পাবে।
সেই তোরাও বেড়িয়েছিস স্বার্থপর।নিজ স্বার্থে অটল।মায়ের কষ্টের মূল‍্য নেই।”

প্রত‍্যেকের মাথা নিচু।

ভাবি আবারো বলে,”এখন কেন মাথা নিচু তোদের?কোথায় গেল তোদের সেই বড়ো বড়ো কথা?
আজ ন‍্যায় যখন মাথা উচিয়েছে,অন‍্যায়ের তখন মাথা নিচু করেছে।”

আমি বললাম,”যে যাই করুক।আমি আর কারো কথা শুনবো না।
কেউ যদি আমার জন্য না ভাবে,তো আমার নিজেকেই নিজের জন্য ভাবতে হবে।অন্তত আমি আর আকাশের কাছে ছোট হবোনা।
স‍্যার আপনি আপনার বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলুন।সব ঠিক থাকলে সামনের সপ্তাহেই আমরা বিয়ে করবো।
আমার জীবন,আমার মর্জি,আমার স্বাধীনতা।
তন্নি এবার শুধু নিজেকে নিয়ে ভাববে।
নিজে ভালো থাকার চিন্তা করবে।”

চলবে।