#আমিই_সেই_তন্নি
#Nadia_Afrin
১৬
আজ আমার বিয়ে।জীবনের স্পেশাল একটা দিন।নিজেকে লাল টকটকে শাড়িতে মুড়িয়ে নিয়েছি।গা ভর্তি গহনা আমার।
আর হালকা একটু সাজ।
তবে মনে কোনো আনন্দ নেই।বাচ্চা দুটোর কথা মনে হতেই বুক ভারী হয়ে আসছে।
আজ ওরা থাকলে আমি সবচেয়ে খুশি হতাম।
ভাবি এলেন।
আমায় দেখে বললেন,”ছোট থেকে শুনেছি বিয়ের দিন মেয়েদের রুপ খোলে।আমি বিশ্বাস করতাম না।বলতাম রুপ কী সিন্ধুক নাকি যে খুলে যাবে।
কিন্তু আজ বিশ্বাস হচ্ছে কথাটা।তোমায় দেখতে অপূর্ব লাগছে তন্নি।”
আমি শুকনো হাসলাম।
ভাবি আমার থুতনি তুলে বলল,”কী ব্যাপার?মন খারাপ কেন?বিয়েতে খুশি নও?”
আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,”বাচ্চাদুটোর জন্য ভীষণ মন খারাপ করছে ভাবি।”
“কী আর করবে বলো!
ভেবে নাও ভাগ্যে ছিল।তোমার অবস্থা বুঝতে পারছি,তবুও বলবো আজকের দিনে মন খারাপ করে রেখোনা।”
এই বলে চলে যায় তিনি।
স্যারের মা আসেন।আমায় দেখে অনেক প্রশংসা করেন।বলেন,”রাণীর হালে স্বামীর ঘরে যাচ্ছো।আমার ছেলে তোমায় রাজরাণী করে রাখবে দেখে নিও।”
বাড়িতে জমজমাট আয়োজন চলছে।কাছের নিকট আত্মীয় উপস্থিত বিয়েতে।আমার পক্ষ থেকে এতিমখানার কজন উপস্থিত।
স্যারের মা চলে যেতেই বিছানায় গিয়ে বসলাম আমি।হঠাৎ পেছন থেকে তন্নি বলে ডেকে উঠেছে কেউ।পেছন ঘুরতেই দেখলাম প্রতিবেশি সেই ভাবি।আমি গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলি,”এতো দেরি করলেন কেন ভাবি?”
“ছেলে নিয়ে রেডি হয়ে আসতে আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।তবে তোমার দেওয়া কাজটা কিন্তু আমি করেছি। তটিনীকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি আমি।ও আসছে বাচ্চা নিয়ে।”
ভাবির বলতে না বলতেই তটিনী এলো দরজার সামনে।কোলের ছোট মেয়েকে নামিয়ে দিয়ে বাচ্চা রেখে সোজা দৌড় আমার দিকে।এসেই জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করেছে।অভিমান, অভিযোগের বস্তা খুলেছে।আপনি আমার সঙ্গে কথা বলেন না,আমার থেকে নিজেকে আড়াল রেখেছেন,লুকিয়ে থেকেছেন আরো কতো কী!
আমি ওকে সামলে নিয়ে বললাম,”স্যরি বোন আমার।ক্ষমা করে দাও।আসলে আমি ইচ্ছে করেই নিজেকে তোমার থেকে দূরে রেখেছি।আশিক তো আমায় তেমন পছন্দ করতো না।তাই আমি যদি তোমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে অশান্তি হয় ভেবে কথা বলিনি।
দু-দুটো মিষ্টি বাচ্চা নিয়ে সুখের সংসার তোমার।চাইনি আমার জন্য ঝামেলা হোক।”
“আগের দিন আর নেই আপা।দিন শেষে সবাই আপনার মর্ম বুঝেছে।আশিক অনেক বদলে গেছে আপা।ও আর বদমেজাজি,খিটখিটে নেই।মেয়ের জন্মের পর পরিবর্তন হয়েছে।
ও এসেছে।লজ্জার জন্য ঘরে ঢুকতে পারছেনা।ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।”
বাহিরে উকি দিয়ে উচু স্বরে বললাম,”ভেতরে এসো আশিক।”
আশিক নত মুখে ভেতরে এলো।
কোনো কথা বলছেনা।
আমিই আগ বাড়িয়ে বললাম,”কেমন আছো আশিক?”
সঙ্গে সঙ্গে ও হুড়মুড়িয়ে আমার দু-পা আকড়ে ধরেছে।ওর ব্যবহারে আমি অবাকই হয়েছি।
কাঁদো স্বরে বলে,”আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ।তোমার সঙ্গে অনেক অন্যায় করেছি আমরা।প্রতিজনের শাস্তি হয়েছে।আমারও হয়েছে।হারানো সেই সম্মান আজও ফিরে পাইনি আমরা।লোকে আজও আমাদের দেখলে নাক ছিটকোয়।
আমি আর আগের মতো নেই।চেষ্টা করছি নিজেকে শুধরে নেওয়ার।ভালোর পথে যেদিন থেকে এসেছি,তোমার কথা মনে হয়।অন্যায় গুলোর কথা মনে হয়।প্রচন্ড অনুতপ্ত আমি।
ভেবেই রেখেছিলাম,দেখা হলেই ক্ষমা চাইবো।
কিন্তু কোন মুখ নিয়ে আসতাম তোমার সামনে?
আজ সুযোগ পেয়েছি।তাই চলে এসেছি।
আমার জ্ঞানে এতোটুকু বুঝেছি,ক্ষমা চাইলে কেউ ছোট হয়না।
তোমার প্রতি যা অন্যায় করেছি,তাতে সারাদিন পা ধরে থাকলেও পাপ মোচন হবেনা।”
বললাম,”উঠে দাঁড়াও ভাই।তোমায় কখনো দেবর ভাবিনি আমি।ভাই মনে করতাম। পুরোনো সব দিনের কথা থাক।আমি তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছি ভাই।তবে অনুরোধ থাকবে,আমার এই বোনটাকে তুমি যত্নে রাখবে।আমার সঙ্গে যা হয়েছে,তা যেন তটিনীর সঙ্গে না হয়।”
আশিক চোখের পানি মুছে বলে,”তুমি আজ আবারো এক বড়ো মনের পরিচয় দিলে।
আমি কখনো ভুলবো না তোমার কথা।
ভাই বলে ডেকেছোই যখন,আজ আমি একজন ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করতে চাই।আমার বোনের বিয়ে আজ,দায়িত্ব আছে বহু।
তোমরা থাকো।আমি কাজে লেগে পড়ি।”
আশিক খুশি মনে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
তটিনী ভ্রু উচিয়ে বলে,”দেখলেন তো আপা,মানুষটার কতো পরিবর্তন হয়েছে!”
“হবেই তো।এমন সুন্দরী একটা বউ ও মিষ্টি বাচ্চারা থাকলে পরিবর্তন হতে বাধ্য।
তোমাদের দেখে বড্ড ভালো লাগলো।এভাবেই মিলেমিশে থেকো সারাটি জীবন।”
তটিনীর মেয়েটাকে কোলে নিলাম।মেয়েটা ভীষণ মিষ্টি।ওর বর্তমানে দুই ছেলে-মেয়ে।ছেলেটা বড়ো হয়ে গেছে।স্কুলে পড়ে।
ড্রয়ার থেকে টাকা বের করে বাচ্চাদুটোর হাতে দিলাম।
প্রথমবার ওদের সঙ্গে দেখা আমার,কিছু না দিলে কেমন দেখায়!
তটিনী আমায় নিজের পাশে বসিয়ে বলল,”আজ আপনাকে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে আপা।আমি মেয়ে হয়েই আপনাকে দেখে ক্রাশ খাচ্ছি রীতিমতো।না জানি বরবাবুর কী হবে!”
ভাবি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,”কী আর হবে!
জ্ঞান হারিয়ে যাবে বউ দেখে।এরপর পানি ঢেলে বিয়ে পড়াতে হবে।”
ভাবির কথায় সকলে হাসে।
আমি বললাম,”আপনারা এসেছেন খুবই খুশি হয়েছি আমি।মনটা হালকা লাগছে।”
তটিনী স্যারকে দেখতে চায়।পারুল ভাবি নিয়ে যায় তাকে।
প্রতিবেশি ভাবি আমার পাশে বসে বলেন,”সবসময় সুখে থেকো।অনেক দুঃখ করছো জীবনে।
আর শোনো,আশিক ও তটিনীকে তোমার বাচ্চাদের বিষয়ে সবটাই বলেছি আমি।
আমিই ওদের নিষেধ করেছি এই প্রসঙ্গে কোনো কথা না বলতে।যাতে তোমার মন খারাপ না হয়।”
আমি মাথা নত করে বসে রইলাম।
ভাবিও ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলেন।এবার আমি একা।আয়নার সামনে দাঁড়ালাম।
আজ প্রথমবার বউ সেজেছি আমি।আগের বারে পালিয়ে বিয়ে ছিল।
বউ সাজার ভীষণ শখ ছিল একসময়।কিন্তু ভাগ্যে হয়নি।তাই আজ আমার এক নতুন অনুভূতি হচ্ছে।নিজেকেই নিজের ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে।
আমার মা-বাবা আজ বেঁচে থাকলে কতো খুশি হতো।
চোখের কোণে পানি জমে আমার।আলতো হাতে মুছে ফেলি তা।ফোন হাতে নেই।একজনকে কল করি।কিন্তু রিসিভ হলোনা।
মনটা একটু খারাপই হলো।পেছন ঘুরে বিছানায় বসলাম আমি।
হঠাৎ কেউ আমার চোখ ধরলো।হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম।
সে সামনে এলো।
ইনি আমার বস্তির সেই লতা আপা।
আপাকে জড়িয়ে ধরলাম আমি।পেছনেই ভাই দাঁড়িয়ে।ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে বললাম,”ছেলে-মেয়ে কোথায়?ওদের কেন নিয়ে আসেননি?”
“মেয়েটা শশুর বাড়ি।ছেলে দুটো কাজে।তাই আনতে পারিনি।আমি আর তোমার ভাই ই চলে এলাম।”
“ভালো করেছেন আপা।আমি খুব খুশি হয়েছি।আপনাদের কথা ভীষণ মনে পড়ে আমার।
আজ আমার এই বিশেষ দিনে আপনাদের পাশে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে।
আমার তো আপন বলতে কেউ নেই।আপনারাই আমার আপন।”
“মন খারাপ করোনা তন্নি।তুমি নতুন জীবন শুরু করছো শুনে খুশি হয়েছি।”
“চাচির কথা আজ ভীষণ মনে পড়ছে আমার আপা।উনি থাকলে কতোই না ভালো হতো।মানুষটা বড্ড ভালো ছিল।
শুনেছি আপা খালা নাকি বিছানাগত হয়েছে।কিছু জানেন এ বিষয়ে?”
“হ্যা রে বোন।সত্যি শুনেছো।খালা মৃত্যু শয্যায়।
জীবনে কম তো অন্যায় করেনি।
হয়ত কর্মফল ভোগ করছে।উনার ছেলেরা চলে এসেছে বিদেশ থেকে।বউদের হাতে সংসার।বেচারাকে খাটায় ভীষণ।
কলপারে পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙেছে শুনেছিলাম।এরপর থেকেই বিছানাগত।না জানি কবে ঐ দুনিয়ায় পারি জমায়।”
আফসোসের স্বরে বললাম,”মানুষটা যা ই করুক।উনার প্রতি আমার মায়া হয় বড্ড।যদি পারতাম তাকে একটু সাহায্য করতাম।”
লতা আপা কিছু বললেন না।আর একটু বসে নিচে গেলেন বর দেখতে।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে ড্রয়ার থেকে আলিফ-অর্নির একটা ছবি বের করি।বুকে চেপে রইলাম কিছুক্ষণ।
মনের মাঝে শান্তি অনুভব হচ্ছে কিছুটা।
পারুল ভাবি দৌড়ে এলো।
বলল,”তন্নি ইয়াসির স্যারকে কল করো তো একবার।
উনি আশিক ছেলেটার সঙ্গে কোথায় যেন গেছে।”
আমি ভ্রু কুচকাই।
আশিকের সঙ্গে কোথায় যাবেন উনি?উনারা তো পূর্ব পরিচিত নয়।তাহলে আশিক উনাকে নিয়ে কোথায় গেল?
আশিকের মনে কী তাহলে কোনো চক্রান্ত আছে?
না না!
এমন হলে তটিনী অবশ্যই আমায় সতর্ক করতো।
স্যারের নাম্বারে কল করলাম আমি।কেঁটে দিল সে।এবার যেন আরো চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি।
ভাবি পিঠে হাত রেখে বলল,”চিন্তা করোনা।চলে আসবে।হয়ত কোনো দরকারে বা কিছু কিনতে গেছে।”
“কিছু কেনার হলে ভাইকে নিয়ে যেতে পারতো।ভাই তো উনার পরিচিত।আশিককেই কেন নিল?
চেনা নেই,জানা নেই।”
“সেটা তো আমিও বুঝতে পারছিনা।আচ্ছা তুমি বসো।আমি দেখি ওরা এলো কিনা।বা স্যারের মা-বাবা কিছু জানেন কিনা।”
দ্রুত পায়ে চলে যায় ভাবি।
আমি চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে থাকি।
প্রায় আধঘন্টা পার হয়ে যায় এভাবেই।স্যারের আসার নাম নেই।ফোন ও রিসিভ করেনা।টেনশনে রীতিমতো ঘামছি আমি।ভাবিরও পাত্তা নেই।
বাধ্য হয়ে আমিই ঘর ছেড়ে বেড়িয়েছি।
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
অন্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।
চারপাশের রমরমা আয়োজন।যে যার মতো খাচ্ছে,মজা করছে।
কেউ কেউ আলাপচারিতায় ব্যস্ত।বিয়ে বলে কথা!
আমায় বেড়োতে দেখেই গণিত ম্যাম এগিয়ে এলো।মজার ছলে বলল,”কাকে খুঁজছো?”
“ইয়াসির স্যারকে।”
“বাহ বাহ!বিয়ের আগেই বরকে চোখে হারাচ্ছো দেখছি।”
“আসলে ঠিক তা নয়।আমি মানে,,,!”
“হয়েছে আর বলতে হবেনা।সবই বুঝি আমি।”
এরই মাঝে পারুল ভাবি এগিয়ে এসে বলেন,”তন্নি আজ চলে যাবে তো,তাই নিজের বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছে।”
এই বলে কথা কাঁটিয়ে আমায় নিয়ে সরে আসে সে।
আসলে আজ আমায় স্যারের গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে বিয়ের পর।তার মা-বাবা এটাই চান।
ওখানে দু-তিনদিন থাকার পর আবারো এখানে ব্যাক করবো আমরা।বেশি দিন থাকতে পারবো না কারণ স্যারের কলেজ আছে।আবার আমারো কাজ আছে।
তবে সপ্তাহের ছুটির দিনে যাবো মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে।চেয়েছিলাম তারাও এখানে এসে আমাদের সঙ্গে থাকুক।কিন্তু উনারা গ্রামের শান্ত পরিবেশ ছেড়ে এখানকার কোলাহলে আসতে চান না।
আমরা যেখানে থাকি,সেটাও একসময় গ্রামই ছিল।কিন্তু এখন আর নেই। পাকা রাস্তা,বড়ো বড়ো দোকান ও মার্কেট বসে গ্রামটিও শহরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে।সর্বক্ষণ কোলাহল লেগেই থাকে।
ভাবি বলেন,”কোনো খবর পাইনি তন্নি।
চিন্তা এবার আমারো হচ্ছে।বিয়ের সময় হয়ে এসেছে।কাজি আসবে আর আধঘন্টা খানিক পরই।এর মাঝে স্যার না এলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।
“কপালে যা আছে তাই হবে।দুঃখ যদি থাকে সেটাই হবে।ছোট থেকে কম তো সহ্য করিনি।এটাও করে নেব।ভাববো ভাগ্যে মন্দ ছিল,তাই হয়েছে।
তবে স্যারকে আমি বিশ্বাস করি ভাবি।সে অন্তত আমায় ঠকাবে না।”
“বিশ্বাস তো আমিও করি রে বোন।তবে পুরুষ মানুষ তো!”
আর কিছু বললেন না তিনি।আমি ঘরে চলে গেলাম।
জানিনা ভাগ্যে কী আছে!
আমার এই সাঁজ পোষাক কী আজ লোক হাসির কারণ হবে?
এবার যদি আমি প্রতারিত হই,গোটা পুরুষ জাতের ওপর থেকে বিশ্বাস চলে যাবে।
হঠাৎ নিচ থেকে কোলাহলের আওয়াজ পেলাম।দৌড়ে ঘর ছাড়লাম।দেখলাম স্যার বর বেশে বাড়িতে প্রবেশ করছে।তবে মুখটা তার থমথমে।
একবার ওপরে তাকালেন তিনি।আমি একটু হাসলাম তাকে দেখে।তবে সে কোনো রেসপন্স দেখালো না।থমথমে মুখেই প্রবেশ করলো।তার মা-বাবার ঘরের দিকে গেল।
সে কী আমায় বিয়ে করতে চাচ্ছেনা?
নিজ ঘরে এসে স্যারের নম্বরে কল দিলাম আবারো।সে কেঁটে দেয়।ভাবলাম হয়ত মা-বাবার সঙ্গে কথা বলছে।
আমি বরং অপেক্ষা করি।মিনিট পাঁচেক পার হলো।
আবারো কল দেই।সে এবারও কেঁটে দেয়।
নাহ!এবার আর ধৈর্য্য কুলোচ্ছেনা।ইচ্ছে করছে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করি।কিন্তু বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে এটা করতে পারছিনা।
পারুল ভাবিকে ডেকে আনলাম।বললাম,”স্যারকে গিয়ে একটু বলো আমার সঙ্গে দেখা করতে।খুব প্রয়োজন।”
ভাবি গেল।মিনিট দুয়েক পর ফিরেও এলো।
বলল,”বলেছি তন্নি।স্যার বলল পরে দেখা করে নেবে।”
তারমানে কী সত্যি উনি আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে না?এড়িয়ে যাচ্ছে?
“আচ্ছা ভাবি উনার হাতে ফোন দেখেছো?”
“হ্যা।সে তো ফোন হাতেই কী যেন করছিল।সম্ভবত ম্যাসেজ করছিল।”
“তাহলে কল কেন ধরছেনা উনি?”
“এখন আবার দাও।এখন তো ফোন উনারই হাতে।”
ভাবি বলতে না বলতেই কল দিলাম।রিসিভ করলোনা।ম্যাসেজ করলাম।উত্তর নেই।
এবার যেন ঘামতে লাগলাম আমি।
তারমানে উনার সত্যিই কিছু হয়েছে।
কিন্তু হয়েছেটা কী?
না জানা পর্যন্ত আমি শান্ত হতে পারছি না।সিদ্ধান্ত নিলাম আমি নিজেই যাবো তার সঙ্গে কথা বলতে।
ভাবিকে ঘরে রেখেই বের হলাম।ওঘরের সামনে সবে দাঁড়িয়েছি,স্যার বেড়িয়ে এলেন ভেতর থেকে।আমি তার মুখপানে চেয়ে রইলাম।সে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়না।ফোন টিপতে টিপতে চলে যায়।
আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি।উনার এমন ব্যবহারে আমি হতবাগ!
সেকেন্ড দশেক পর তিনি আবারো এলেন।ঘরে ঢুকতে নিলেন।
বললাম,”আপনার সঙ্গে কথা আছে আমার স্যার।”
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
“আর কী কথা থাকতে পারে আপনার?
যা হওয়ার তা হয়েই গেছে।”
এই বলে তিনি ঘরে ঢুকে গেলেন।
আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে।
নিজ ঘরে আসতে নেই।নিচে আশিককে দেখলাম হেসেহেসে কথা বলছে।
ঘরে এসে দরজা দিলাম।ধপ করে বিছানায় বসেছি।হয়ত আকাশের কথায় ঠিক।আমার ভাগ্যে সুখ নেই।জানিনা কোন কারণে স্যার এমনটা করলো।
আকাশের বলা সেদিনের কথাটি কী উনি বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন?
নিয়ে থাকলে সেদিন তাহলে কেন কিছু বলেনি।
এতোটাই দূর্বল উনার বিশ্বাসের ভীত।
কিছু জানার থাকলে আমায় বলতে পারতো।আজ পর্যন্ত উনার কাছে লুকাইনি তো কিছু।সত্যই বলেছি সব।এবারেও বলতাম।অন্তত মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কোনো সম্পর্ক গড়ার মেয়ে আমি নই।
সারাজীবন সত্যের পথে থেকেছি।আজ এরকম একটা পবিত্র বিষয়ে মিথ্যা বলবো না।
উনি যদি আমায় বিশ্বাস না ই করে থাকে,গাড়ির মধ্যে কেন এতো বিশ্বাসের বাণী শোনালো।
আমি মেয়েটাকে সবাই কেন ঠকায়?
খুব সহজে কাউকে মনে আনিনা আমি।বহু চেষ্টার পর কাউকে যদি মনের মাঝে নিয়েও ফেলি,সে ই আমায় চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়।গলা টিপে মা*রে আমার অনুভূতি গুলোকে।
স্যারের প্রতি তো আমি এগিয়ে যাইনি।উনি নিজেই বাধ্য করেছে আমায় তার প্রতি আস্থা আনতে।সব জেনেই আমার সঙ্গে নিজেকে জুড়তে চেয়েছেন।তাহলে আজ কেন এমন করছে?
কেন লোক সমাজে আমায় হাসির খোড়াক বানাতে চাইছে?
কী দোষ আমার।আমার ভাগ্য খারাপ হলে আমার কী করার থাকতে পারে?
একা থেকেও শান্তি নেই আমার।আবার কারো সঙ্গ নিতে চাইলেও দোষ।কোথায় যাবো আমি?
আপন মনে এসব ভাবতে ভাবতে কাঁদলাম কিছুক্ষণ।
চোখের পানিতে কাজল নষ্ট হয়েছে।
উঠে দাঁড়িয়ে আয়নার কাছে গেলাম।কী লাভ এসব সাঁজ পোশাক রেখে?
লোকে একটু পর আমায় নিয়ে হাসবে।
হাতের চুড়ি সবে মুঠ করেছি খুলতে।এমন সময় ভাবি এলেন।
এসেই বললেন,”আরে আরে করছো কী তুমি?
চুড়ি কেন খুলছো?
এতো তাড়াতাড়ি সব খুলে ফেললে হবে?
নাটক সাঁজিয়ে এসেছো,সবাই তোমায় খুঁজছে এবার।তোমার থেকে এমনটা আশা করিনি তন্নি।
ছিহ তন্নি ছিহ!”
এবার আমি উচ্চস্বরে কেঁদে বললাম,”তুমিও এমনটা বলছো ভাবি?
কী অন্যায় আমার?কেন এমন করছো সবাই।”
“থাক আর নাটক করতে হবেনা।যা করার করেই ফেলেছো।এবার চলো নিচে চলো।”
এলিয়ে যাওয়া সাঁজ টুকু ঠিক করে দেয় ভাবি।
জোর করে নিচে নিয়ে যেতে লাগে।
আমি তো কেঁদে কেটেই অস্থির।একবার ভাবির মুখপানে তাকালাম।সে হাসছে নিচের দিকে তাকিয়ে।নিচের সবাই ও হাসছে।হয়ত আমার কান্না দেখে মজা পাচ্ছে।স্যার ও মিটিমিটি হাসছে।তার ও ভালো লাগছে আমার চোখের পানি।
নিচে দেখি কাজি বসা।বাইরের লোকের সামনে আজ আমি অপমানিত হবো।
ঘরে ফিরে গলায় দড়ি দেব।আর বাঁচার ইচ্ছে নেই আমার।
চলবে।