আমিই সেই তন্নি পর্ব-১৭

0
19

#আমিই_সেই_তন্নি
#Nadia_Afrin

১৭
জনসম্মুখে মাথা নুয়ে দাঁড়িয়ে আমি।
চারপাশের সকলে আমায় দেখছে।কেউ বা একটু হাসছে।
নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে আমার।কঠিন এই পরিস্থিতিতে কেউ নেই আমার পাশে।

স‍্যারের মা এগিয়ে এসে বলেন,”তোমার থেকে এমনটা আশা করিনি তন্নি।থাক যা হওয়ার হয়েছে।মেনে তো নিতেই হবে।”

লোক সম্মুখে শব্দ করে কেঁদে ফেললাম আমি।মুখ দিয়ে প্রশ্নটি অব্দি করতে পারছিনা।
একলোক তাড়া দিয়ে বলল,”এখন আর কেঁদে কী হবে?
যা ঘটার ঘটেছেই।
কাজি চলে এসেছে।দুজনে বসো।বিয়ে আগে পড়াই।তারপর বোঝাপড়া হবে।”

ইনি স‍্যারের চাচা হন।ফ‍্যামেলি ফটোতে দেখেছি তাকে।

কান্নাভেজা কন্ঠে বললাম,”আপনাদের যদি মনে হয় আমি কোনো অপরাধ করেছি,অন‍্যায় করেছি,তো এই সম্পর্ক এগোনোর প্রয়োজন নেই।
একজন অপরাধীকে কেন বিয়ে করবে উনি?”

কথাটা বলতে গিয়ে গলা ভেঙে আসে আমার।

স‍্যার এগিয়ে এসে চরম কঠোরতার সঙ্গে বলে,”আমায় কী আপনি পুতুল খেলা পেয়েছেন?যে ইচ্ছে হবে বিয়ে করবেন না।এখানে আমার মানসম্মান জড়িয়ে।বিয়ে আপনায় করতেই হবে।
বিয়ের পর বাকি কথা হবে।
আর যদি বলেন অন‍্যায়ের কথা।মনে করুন বিয়েটাই আপনার অন‍্যায়ের শাস্তি।”

চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস নিলাম।পরিস্তিতিকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।
স‍্যারের দিকে তাকাতে পারছিনা আমি।
কোন অন‍্যায়ের শাস্তি আমায় দেওয়া হচ্ছে জানিনা।
সমস্যা নেই।বিনা অপরাধে শাস্তি পাওয়ার অভ‍্যাস আমার আছে।তবে এবারের বিষয়টি আলাদা।
এবারে আমার প্রিয় ও ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে শাস্তি পাবো।
জানিনা আমার ধৈর্যের বাধ কতোটা সহ‍্য করবে।
তন্নির জীবনযাত্রা হয়ত আজই শেষ হবে।

চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসলাম।কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।
কবুল বলতে বলা হয় আমায়।একবার স‍্যারের দিকে তাকাই আমি।সে বুকে দু-হাত ভাঝ করে কঠোর ভাব নিয়ে বসে।
আর কিছু না ভেবে তিন শব্দের কবুল বলে নিজেকে তার করে দিলাম।
সবাই একত্রে ‘ আলহামদুলিল্লাহ্’ বলে।স‍্যারকেও বলা হয়।তিনি ও স্বীকার করে আমায় স্ত্রী হিসাবে।

বিয়ের পালা শেষ হয়।
আমি ঘরে চলে যাই।মাথার ওরনা বিছানায় ছুড়ে ফেলে হুহু করে কাঁদতে লাগি।
হঠাৎ কেউ আমায় আম্মু বলে ডাকে।সামনে তাকাতেই অর্নি এসে দাঁড়ায়।
ওর ছোট্ট হাতে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,”স‍্যরি আম্মু।”

আমি মেয়েকে জড়িয়ে ধরি বুকের মাঝে।কান্নায় ভেঙে পড়ি।আলিফ ও আসে।আমাদের দুজনকে একত্রে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমাদের ভুল হয়েছে আম্মু।তোমার কথাই সত্য ছিল আম্মু।
আব্বু মোটেও ভালো মানুষ নয়।
অর্নিকে পকেট মারা শেখাতে চেয়েছিল।আমায় চোর বানাতে চেয়েছে।লোকের বাড়ি চুরি করতে বলে।
দায়িত্ব করে আমাদের নিয়ে গেছে,অথচ কোনো দায়িত্ব পালন করেনা।কোচিং এর বেতন চেয়েছি।বলে,পড়া বাদ দিয়ে তার সঙ্গে চুরি করতে।সেও অনেক পড়েছে।কোনো লাভ হয়নি।সুতরাং পড়া বাদ দিয়ে হাতের কাজ,অর্থাৎ চুরিবিদ‍্যা শিখতে।নগদ পয়সা আসবে।
আবার আমাদের শিখিয়ে দেয় তোমার থেকে টাকা নিয়ে তাকে যেন দেই।বাড়ি যেন লিখে নেই।
বাড়ির মূল‍্যবান জিনিসগুলো বিক্রি করে তাকে যেন টাকা দেই।
অর্নিকে বলে একটু বড়ো হলে লোকের বাড়ি বুয়ার কাজে লাগিয়ে দেবে।মোটকথা আমাদের তাকে ইনকাম করে খাওয়াতে বলে।তার নাকি বয়স হয়েছে।চলতে অসুবিধা হয়।আমাদের দায়িত্বই যখন পালন করতে পারবে না,তখন নিয়ে কেন গেল!
তুমি যে টাকা দিয়েছিলে ঐটাকা সবটাই সে নিয়ে নিজে খরচ করেছে।
বাজার অব্দি করেনা।আমার কাছে কিছু টাকা ছিল।ঐটাকা দিয়ে কোনো মতে বিস্কুট পাউরুটি খেয়ে দুদিন ছিলাম আমরা।
এছাড়াও আমি মনে করি বাবার চরিত্রে সমস্যা আছে আম্মু।ঐ বস্তির এক মহিলা আছে।তার সঙ্গে আমাদের সামনে ঢলাঢলি করে।
যাষ্ট কোনো পরিবেশ নেই।
এতোকিছু দেখেও আমরা চুপ ছিলাম।
কিন্তু বাবা আজ সীমা অতিক্রম করে গেছে।একজনের পরামর্শে বাবাকে পরিক্ষা করার জন্য আমি আর অর্নি একলোককে দিয়ে বাবাকে ফোন দিয়ে বলিয়েছে,আমাদের এ‍্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।অবস্থা ভালো নয়।দ্রুত যেন টাকা নিয়ে হাসপাতালে আসে।
বিশ্বাস করো আম্মু,একথা শুনেই বাবা ফোন বন্ধ করে রেখেছে।কল দেই বারবার।বন্ধ দেখায়।
টাকা না হয় নেই বুঝলাম।তাই বলে দেখতেও আসবেনা?
আমরা তো উনার সন্তান।এতোটুকুও মায়া নেই আমাদের প্রতি?
অথচ আমার একটু সামান্য হাত কেঁটেছিল বলে,তুমি তোমার লাখ টাকার মিটিং ফেলে দৌড়ে এসেছিলে।
আমরা তোমার গুরুত্ব বুঝেছি আম্মু।
আমাদের ক্ষমা করে দাও। মিথ‍্যার পেছনে ছুটেছিলাম আম্মু।তুমি সারাজীবন আমাদের জন্য কষ্ট করেছো।আমাদের সুন্দর ভবিষ্যত তৈরির জন‍্য খেটেছো।আমরা তোমার মর্যাদা দিতে পারিনি।সন্তান হিসেবে আমরা ব‍্যর্থ।”

আলিফ মাথা নিচু করে।

অর্নি বলে,”আমায় তোমাকে বোঝা উচিৎ ছিল আম্মু।আমি পাপ করেছি।তোমায় কতো কষ্ট দিয়েছি।অথচ এই দুনিয়ায় একমাত্র তুমিই আমার আপন,প্রিয়জন।
আমি আর এমন করবোনা আম্মু।তোমার সব কথা শুনবো।
যেহেতু আমি আর ভাইয়া তোমায় প্রচুর দুঃখ দিয়েছি,তুমি চাইলেই আমাদের শাস্তি দিতে পারো।”

আমি আবারো অর্নিকে জড়িয়ে ধরলাম।
কান্নাভেজা কন্ঠে বললাম,”মায়ের কাছে সন্তান কখনোই অপরাধী হয়ে থাকতে পারে না।
আসলে কী জানিস,দুনিয়ার কেউ স্বার্থ ছাড়া চলেনা।এইযে তোদের আমি এতো ভালোবাসি।এর পেছনেও আমার স্বার্থ আছে।
সেটা হলো সন্তানকে একজন আদর্শবান মানুষ তৈরি করে লোক সমাজে বাহবা পাওয়া।মাথা উচু করে দাঁড়ানো।গর্ব করে বলা,ওরা আমার সন্তান।
দুনিয়াটা বড্ড কঠিন রে।কখন কার জীবনে কী হয়,সে নিজেও তা জানেনা।
আমি বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছিরে।এই জীবন আমার আর ভালো লাগেনা।
নাম-ডাক,যশ-খ‍্যাতি আমার কিচ্ছু চাইনা।
চল আমরা সব ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাই।
ছোট্ট দুটো ঘর করবো।আমরা মা,ছেলে-মেয়ে মিলে সুখে শান্তিতে থাকবো।”

“সেই ঘরেতে আমার কী একটু স্থান হবে?
আপনাদের সুখে কী আমিও একটু ভাগ বসাতে পারি?
আর আপনি তন্নি তো দেখছি বড্ড স্বার্থপর।সদ‍্য বিবাহিত স্বামীকে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
অন‍্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।

আমি কিছু বললাম না।
অভিমানে মন ভারী।মুখে কথা নেই।
অর্নি দৌড়ে গিয়ে স‍্যারের হাত ধরলো।স‍্যারকে ভেতরে নিয়ে আসতে আসতে বলল,”তোমায় ফেলে যাবো নাকি!
তুমিও আমাদের সঙ্গে যাবে।একসঙ্গে থাকবো সবাই।”

“কিন্তু তোমার মা তো আমার কথা বলছেই না।”

স‍্যার শিতল চোখে আমার দিকে তাকালো।
আমি মাথা নুয়ে বললাম,”আপনি তো আমার প্রতি বিরক্ত।আপনার ধারণা আমি আপনায় ঠকিয়েছি।”

“অবশ‍্যই ঠকিয়েছেন। এই যে আপনি সেদিন বললেন ওদের ছাড়াই থাকবেন আপনি।ভালো থাকার চেষ্টা করবেন।
অথচ আপনি কেঁদে কুটে অস্থির হচ্ছেন বাচ্চাদের শোকে।কিন্তু আমায় প্রকাশ করছেন না।
যার সঙ্গে আপনার বিয়ে,তাকে মনের অনুভূতি জানতে দিচ্ছেন না।তার থেকে নিজের ভালো মন্দ লুকাচ্ছেন।এটাও তো এক ধরনের ঠকানো তাই না?”

আমি অবাক স্বরে বললাম,”তাহলে নিচে যে সবাই,,,!”

“একটু মজা করছিলাম আপনার সঙ্গে।”

আশিক ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,”শুধু তাই নয়।উনিই কিন্তু আলিফ অর্নিকে এখানে নিয়ে এসেছে।
তোমার মন খারাপ জেনে উনি আমায় নিয়ে একটা জায়গায় যেয়ে আলিফকে ফোন করে ডাকে।এরপর দু ভাই-বোনকে বসিয়ে অনেক বোঝায়।একটা পরিক্ষা স্বরুপ ওদের অসুস্থতার কথা আকাশ ভাইকে বলতে বলেন ।তখনই আকাশ ভাইয়ের আসল চেহারা ওরা দেখতে পায়।
আকাশ আমার ভাই হলেও আমি তার পক্ষে নই।
যেদিন থেকে ভালো হতে চেষ্টা করেছি,খারাপ সঙ্গ ছেড়েছি।তাই নিজের ভাই অপরাধী জানতে পেরে তার সাপোর্টে নেই আমি।
আমার ভাইকে বিয়ে করে তুমি যেই দুঃখ ভোগ করেছো,উনাকে বিয়ে করে তার চেয়ে দ্বিগুণ সুখ পাবে।তোমায় নিয়ে ভীষণ ভাবে উনি।
এখন মনে হচ্ছে,তুমি ভাগ‍্যবতী।”

স‍্যারের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলাম আমি।
পারুল ভাবি,তটিনী,লতা আপা,ম‍্যাম সহ তার স্বামী এলেন।
আমায় নিয়ে হাসতে লাগলেন সকলে।লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি আমি।
কেঁদে কী বোকার মতো কাজটাই না করেছি আমি।আসলেই আমি ভীষণ বোকা!
এই সামান্য বিষয়টাও বুঝতে পারিনি।
ভাবি বলল,”আজ এই প্রথমবার তন্নি তোমার কান্না দেখে আমার রাগ না,ঘৃণা না,বরং হাসি পেয়েছে।”

সবাই খিলখিলিয়ে হাসছে।
সঙ্গে আমার বাচ্চা দুটোও। তটিনী বলে,”আপা যতোই বড়ো বড়ো কাজ করেন না কেন।বোকা ভাবটা রয়েই গেছে।
কিছু মনে করবেন না আপা।”

তটিনী মুখ টিপে হাসে।
এমন সময় এলেন স‍্যারের মা ও বাবা।
বললেন,”আমাদের ছাড়া কী গল্প গুজব হচ্ছে?”

আলিফ অর্নি দাদিয়া,দাদুভাই বলে ডেকে ওঠে।তাদের কাছে যায়।
উনারা আগলে নেয় বাচ্চাদুটোকে।

বললাম,”উনাদের সঙ্গেও ভাব করে নিয়েছিস তোরা?”

“শুধু ভাব নাকি।গলায় গলায় ভাব হয়ে গেছে আমাদের।আমরা তো এতোক্ষণ দাদিয়া,দাদুভাইয়ের কাছেই ছিলাম।
আমরা এসেছি কাকুদের সঙ্গেই।তোমায় সারপ্রাইজ দেব বলে লুকিয়ে ছিলাম।”

“হুম।আর তন্নি শোনো।তুমি আর ইয়াসির তো এখানেই থাকবে।আর আমার নাতি-নাতনিরাও এখানে থাকবে।সুতরাং তোমাদের কাছে পাবোনা আমরা।
সপ্তাহে তিন দিন তোমরা আমাদের কাছে গিয়ে থেকে আসবে।ছেলে না আসুক,আমাদের নাতি-নাতনি নিয়ে তুমি যাবে।
ঐ তিন দিনই অর্নি রাতে আমার কাছে থাকবে।
আমরা দু-বুড়ি মিলে গল্প করে কাঁটিয়ে দেব রাত।
বুঝলে তন্নি!তোমার শশুর বাবা বড্ড নাক ডাকে।
এ কবছরে জ্বালিয়ে মেরেছে।
এবার একটু সপ্তাহে তিনদিন নাতনিকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই।”
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।

এমনি বাবা বলল,”উহ!
তুমি যে ঘুমের ঘোরে হাত-পা ছুড়ে দাও,সেটা কী আমি বলেছি?
থাকগে!তুমি নাতনি নিয়ে থাকলে আমার জন্যও নাতি আছে।নাতি নিয়ে সারাদিন ক্রিকেট খেলে শরীর ফিট রাখবো।যাতে তোমার লাথি,ঘুসি খেয়েও মজবুত থাকতে পারি।
কী আমার ইয়াং ম‍্যান?পারবেতো খেলতে?”

“হ‍্যা অবশ্যই।আই লাভ ক্রিকেট।”

ছেলে-মেয়ে দুজনই আজ খুশি।
ওদের খুশি দেখে ভীষণ ভালো লাগে।সারাদিনের মন খারাপ গায়েব হয়েছে সেই কখনই।

মায়ের হাত দুটো ধরে বললাম,”আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ মা।আপনার জন্য আমি একজন মা পেয়েছি এতোবছর পর।
মা ডাকার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে।
আমার সন্তানদের আপনারা যে এতোটা আপন করে নেবেন কল্পনা করতে পারিনি।
জানেন মা,আমার ছেলে-মেয়ে দুটো কোনোদিন দাদির আদর পায়নি।দাদি কী জিনিস মেয়ে জানেই না।
আজ আপনি ওদের সেই আক্ষেপ দূর করলেন।
অথচ ওদের রক্তের যারা,কতোই না অবহেলা করেছে তারা।”

“শোনো মা তন্নি,আমরা ওতো আপন পর বুঝিনা।রক্তের সম্পর্কে কী হয়?নিজ রক্তের মানুষেরাই ঠকায় বেশি।দুঃখ দেয়।এর থেকে পরই ভালো।
রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও দুনিয়াতে একটা সম্পর্ক হয়।সেটা হলো মায়ার সম্পর্ক।
তোমার বাচ্চাদের দেখে মায়া জন্মে গেছে।
দুনিয়াতে বাঁচবোই কদিন?
যে কদিন আছি,সবাইকে নিয়ে আনন্দ করে থাকতে চাই।ছোট পরিবার আমার।বরাবরই চাইতাম ধারেকাছে অনেকে থাক।নাতিপুতি দিয়ে ভরা হোক সংসার।
তোমার জন্য আমার সেই ইচ্ছে পূরণ হলো।
কৃতজ্ঞ তোমার কাছে।”

“আজ আমি সত‍্যি গর্বিত।এতো সুন্দর একটা পরিবার পেয়েছি।আর কী চাই জীবনে!”

স‍্যার আমার অর্নির সামনে বসে বলল,”তোমার কাছে যদি একটা জিনিস চাই দেবে?”

“কী?”

স‍্যার একটু থেমে বলেন,”যদি কিছু মনে না করো,তুমি কী আমায় বাবা বলে ডাকবে?
সবসময় নয়।মাঝেমধ‍্যে একটু ডেকো।আমি খুশি
হবো।যদি তোমার আপত্তি না থাকে।
আমি হয়ত তোমাদের জন্ম দেইনি।কিন্তু তোমাদের ভীষণ পছন্দ করি আমি।”

অর্নি মুখ গম্ভীর করে চুপ করে রইলো।
উপস্থিত সকলে ওর উত্তরের আশায়।চরম নিরবতা কাজ করছে ঘর জুড়ে।
আমার মনের মাঝে তীব্র ধড়ফড়।কী জবাব দেবে আমার মেয়ে?

সকলকে অবাক করে দিয়ে অর্নি স‍্যারকে ‘বাবা’ বলে ডেকে জড়িয়ে ধরে।

স‍্যার তো মহা খুশি।
আনন্দে আমার চোখে পানি জমে।সবাই হইহই করে ওঠে।মেয়েকে নিয়ে আমরা সবাই ই একটু চিন্তিত। গম্ভীর স্বভাবের কিনা ও!
মানতে পারবে কিনা ভেবে টেনশন হচ্ছিলো।
কিন্তু আমার অর্নি কতো সহজেই সবটা মেনে নিল।

বললাম,”ধন‍্যবাদ স‍্যার।আপনি আমার মেয়ের অপূর্ণ ইচ্ছাটা পূরণ করলেন।ছোট থেকে বাবাকে পায়নি।মেয়ের আফসোস ছিল এই নিয়ে।
আজ ওর বাবা ডাকার স্বপ্ন পূরণ হলো।আসলেই আপনি অনেক বড়ো মনের মানুষ।সবাইকে আপন করতে জানেন।
আপনার মা-বাবাকে আমি সম্মান জানাই আপনাকে এতো সুন্দর মন মানসিকতায় গড়ার জন্য।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।

স‍্যার একটু হাসলেন মাথা নিচু করে।
আলিফ এগিয়ে এসে বলল,”তাহলে আমি আর বাদ থাকবো কেন?
আমিও সুযোগ লুফে নেই।স‍্যারকে বাবা বানিয়ে আলাদা সুযোগ পাই।”

“ সুযোগ না শাসন পাবে।তাও ডাবল। আগে শুধু স‍্যার হিসেবে শাসন করতাম।এবারে বাবা হিসেবেও শাসন করবো।”

আলিফ মুখ বাকায়।আমরা হাসি সকলে।

স‍্যার উচ্চস্বরে বলেন,”মা-বাবা,বউ,ছেলে-মেয়ে মিলে আজ আমার পরিবার পূর্ণ হলো।তো এই খুশিতে মিষ্টি মুখ করা যাক?”

তার বলতে দেরি নেই।ভাবি মিষ্টি নিয়ে হাজির।
সকলকে মিষ্টি দেয়।
স‍্যার আমায় খাইয়ে দেয়।এবার আমাকে খাইয়ে দিতে বলে।কিন্তু সকলের সামনে আমি একটু লজ্জা বোধ করি।
পাশ থেকে ছেলে বলে,”আম্মু তাড়াতাড়ি খাইয়ে দাও।তুমি খাওয়ানোর পর আমরা খাইয়ে দেব বাবাকে।”

খাইয়ে দিলাম।সকলে করতালি দেয়।আলিফ অর্নিও স‍্যারকে খাইয়ে দেয়।
একটা আনন্দময় সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়।
সারাজীবন এমন একটা সুখী পরিবারই চেয়েছি আমি।

মা তাড়া দিয়ে বলেন,”অনেক হলো খাওয়া-দাওয়া।চলো এবার শশুর ঘরে।
বউমা যতো তাড়াতাড়ি আমার ঘরে যাবে,তত তাড়াতাড়ি ঘর আলোকিত হবে।”

তটিনীকে তৈরি হয়ে নিতে বললাম।তটিনী ও আশিক যাবে আমাদের সঙ্গে।আলিফ অর্নিও যাবে।
নতুন পরিবেশ।একটু নার্ভাস লাগছিল।ওরা গেলে সাহস পাবো।
বাকি সবাইকেও যেতে বলেছি।তারা সব কাল যাবে নাকি।

মা সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল,”এইযে ছেলে-মেয়ে গুলো শোনো।আজ যেতে বললাম গেলে না।কাল সকাল সকালই চলে যাবে।তোমরা কিন্তু অথিতি নয় যে বাবু সেজে খেয়ে চলে আসবে।আমার মানুষ নেই তেমন।তোমরাই আপন আমার।আমরা নিজেরা বুড়ো হয়েছি।
কাল সকাল থাকতে গিয়ে সবাই মিলে আয়োজন করে রেধে-বেড়ে খেয়ে হইহুল্লর করবে।
কথা যেন মনে থাকে।”

সকালে ‘হ‍্যা’ সূচক মাথা নাড়ে।

গণিত ম‍্যাম কাল প্রোগ্রামে যেতে ফোনে অলরেডি ড্রেস,জুয়েলারি দেখা শুরু করে দিয়েছে।
সে এমনিতেই একটু সাজগোজ পছন্দ করে।
ম‍্যামের স্বামী বলে,”বিয়ে হলো তন্নির।তুমি এতো সাজবে কেন?”

“বিয়ে যারই হোক।সেটা ম‍্যাটার না।সাজাটাই বিষয়
তন্নির বিয়ে তোহ কী?আমি মন ভরেই সাজবো।
তন্নি আমার কতো প্রিয় জানো?ওর বিয়েতে সাজবোনা তো কার বিয়েতে সাজবো?
কী বলো তন্নি!”

“জ্বী অবশ্যই।তবে শর্ত একটাই।সাজের দিক দিয়ে সবার থেকে এগিয়ে থাকা চাই।”

“হুম।তুমি বাদে সবার থেকে এগিয়ে থাকবো।অলরেডি পার্লার বুকিং দিয়ে দিয়েছি আমি।”

ওমনি ম‍্যামের স্বামী স‍্যারের কাধে হাত রেখে বলে,”বিয়েতো করলি বন্ধু!বউয়ের খরচ ওঠাতে ওঠাতে লাল পতাকা না হয়ে যাস।”

“সমস‍্যা কী!কিডনি দুটোতো আছেই।”

সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।

এবার আমাদের বিদায়ের পালা।
নিচে আসি আমরা।দরজার কাছে গিয়ে পেছন ঘুরে দাঁড়াই।ভাবিকে বলি,”ভাবি আমার প্রতিবেশি ভাবি আজ রাতে এখানেই থাকবে।উনি একা এসেছে।বাড়ি দূরে।
তুমি আজ উনার সঙ্গে থেকো।
আমার লতা আপার ছেলে-মেয়েদের জন্য খাবার প‍্যাক করে রেখেছি আমি।মনে করে দিয়ে দিও।
স‍্যারের গ্রামের রাস্তা কিন্তু তোমার গ্রাম দিয়েই।যাওয়ার সময় মনে করে শশুর- শাশুড়ি আর ছেলেটাকে নিও।আমি গাড়ি রেখে যাচ্ছি।গাড়িতে করে ড্রাইভারকে নিয়ে সবাই যাবে।
মনে করে খেয়ে নিও।ঔষধের বক্স আমার ঘরে ড্রয়ারে আছে।”

“হয়েছে হয়েছে।এবার একটু থামো তন্নি।সারাজীবনের জন্য যাচ্ছোনা তুমি।আবার ফিরবে তো।
সব দিকে খেয়াল রাখতে হবেনা তোমায়।আজ তোমার ছুটি।সুখের দেখা পেয়েছো।সুখটাকে উপভোগ করো।”

একটু হাসলাম আমি।ফুলে সাজানো গাড়িতে গিয়ে বসলাম।সবাই আমাদের বিদায় জানায়।
গাড়ি চলতে শুরু করে।আমি ও স‍্যার পাশাপাশি।স‍্যার ড্রাইভ করছে।পেছনের সিটে আলিফ অর্নি।আরো পেছনে মা-বাবা।
তটিনী ও আশিক অন‍্য গাড়িতে আসছে।

হঠাৎ স‍্যার বলে ওঠে,”আচ্ছা আলিফ,বাড়ি গিয়ে আজ রাতে লুডু খেললে কেমন হয়?চারজন আছি।সুন্দর দুটো টিম হবে।
একদলে আমি আর অর্নি।আর তোমরা এক দলে।
কেমন হবে?”

“হবেতো ভালোই।তবে টিম মেম্বার চেঞ্জ।আমরা দাদিয়া,দাদুভাইয়ের সঙ্গে খেলবো।প্ল‍্যান আগে থেকেই করা আছে।”

অর্নি বলল,”আম্মু জানো সবখেলায় দুধভাত থাকে একজন।আমি তো বড়ো হয়ে গেছি।দুধভাতের বয়স চলে গেছে।
তুমি আমাদের একজন দুধভাত এনে দিও।এরপর ওকে আমাদের দিয়ে তোমরা জব ও নিজের কাজ করো।
আর আমি,দাদিয়া,দাদুভাই,ভাইয়া মিলে দুধভাতটাকে বড়ো করবো।আমরাও তিন ভাই-বোন হবো।”

লজ্জা মিশ্রিত স্বরে বললাম,”দূর!তা কখনো হয় নাকি!”

স‍্যার পাশ থেকে বলেন,”চেষ্টা করলে সবই সম্ভব।”

স‍্যারকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে চুপ করতে বললাম।গাড়িতে সবাই মিটিমিটি হাসছে।

হঠাৎ একটা কথা মনে এলো আমার।
ধীর স্বরে বললাম,”সত‍্যি কী এতোটা সুখেই পার হবে আমার বাকিটা জীবন?
নাকি ঝড় আসতে অপেক্ষা করছে?”

স‍্যার ভ্রু কুচকে বলেন,”মানে?”

“মানে আমি আকাশের কথা বলছি।”

পেছন থেকে আলিফ বলে,”আমিও সেই আশঙ্কা করছি আম্মু।এতো সহজে উনি পেছন ছাড়বেনা।না জানি কী করে বসে এবার!”

চলবে।