উপন্যাসের নাম::#আমি_আছি
লেখনিতে:#সাদিয়া_আফরোজ
পর্ব: ৪
সোফায় গুটিসুটি হয়ে বসে আছে তৃধা। মাথা ব্যা*থায় চারপাশটা ঝাপসা লাগছে। শুধু মনে হচ্ছে বিছানায় গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করলে শান্তি । যদিও এই মুহূর্তে সেই পরিস্থিতিতে নেই। বাড়িটা তার না,না সে এইখানে কাউকে চেনে।
তৃধার দিকে বিচক্ষণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফরিদা হক। পা থেকে মাথা ওবদি খুঁটিয়ে দেখছে।
উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং, ছিপছিপে গড়নের শরীর,পরনে সুতির থ্রিপিস যদিও তার রংটা ফেকাশে হয়ে গেছে। চেহারা খানা বেশ মায়াবী হলেও তার মধ্যে মলিনতা বিদ্যমান। ঘোমটা এঁটে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। নাবীব শেখ তার স্ত্রীর বিচক্ষণতা দেখই বিরক্ত হলেন। ফরিদা হক তৃধার মাথার আ*ঘা*তটা দেখে নরম চোখে তাকালেন। মেয়েটাকে দেখে ভীষণ মায়া হলো তার। তিনি সোফা ছেড়ে তৃধার শিয়রে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,, বেশি খারাপ লাগছে নাতো?
তৃধা কিছুটা অবাকতার দৃষ্টিতে তাকায়। হয়তো ফরিদা হকের কাছ থেকে এমন ব্যাবহার সে আশা করেনি। অবশ্য না করারই কথা। এইবাড়ির চৌকাঠে পা রাখার পর নাবীব শেখ তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে শুধু দুটো কথা বলেছিলো,, ১, দেখো ফরিদা আমি কাকে নিয়ে এসেছি! ২,তোমার শূন্য বাড়ি পূর্ন করতে আমাদের আরেকটা মেয়ে নিয়ে এসেছি।
তার প্রতুত্তরে ফরিদা হক একটা বাক্যও বললেন না। শুধু দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ালেন। ফরিদা হকের ভাবাবেগ না হলেও নাবীব শেখের কথায় তৃধা বেশ চমকায়।
নাবীব শেখ ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে বলে উঠলো,, চেহারা দেখে বুঝছো না? ভারি খাবার খাওয়ার পর ঔষধ গুলো খাইয়ে দিও। জাকের বলেছে রাতে জ্বর আসবে। চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে জ্বর এক্ষুনি আসবে।
তৃধা পুনরায় মাথা নিচু করে ফেলল।কাল কোথায় ছিল আজ কোথায় আছে সেটা ভেবেই দুফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো।
ফরিদা হক নাবীব শেখের দিকে তাকালো। নাবীব শেখ তার স্ত্রীর দিকে ইশারা করলো। এতে ফরিদা হক যা বুঝার বুঝে গেছেন। তিনি তৃধার হাত ধরে তাকে গেস্ট রুমে নিয়ে গেল।
নাবীব শেখ হাত পা ছেড়ে সোফায় বসে গা এলিয়ে দিলেন। হাসপাতালের সামনে তৃধার বলা কথাটা শুনে তিনি বেশ অবাক হয়েছিল। মেয়েটার চোখে মুখে উপচে পড়া অসহায়ত্ব দেখে জিজ্ঞেস করেছিলো,, কোথা থেকে এসেছো ,কি হয়েছে? আপনজনেরা নেই মানে?
প্রতি উত্তরে তৃধা শুধু মুচকি হাসলো । তৃধার এমন অশ্রুসিক্ত চোখের হাসিটা ভীষণ ক*ষ্টের ঠেকলো নাবীব শেখের কাছে। তিনি তৃধার মাথায় স্নেহ মাখা হাত রেখে সুধালো,, কি হয়েছে মা? বাড়িতে ঝগ*ড়া হয়েছে? রাগ করে বেরিয়ে এসেছো?
তৃধা মাথা নেড়ে বললো,, না। রা*গ করার অধিকার হারিয়েছি মাত্র। নদীর একুল ভে*ঙে ওকুলে সংসার পেতেছিলাম। আজ সেই কুলটাও গেলো।
তৃধার কথায় নাবীব শেখের বুকটা ঈষৎ কেঁ*পে উঠলো। উঠবেই বা-না কেন! তার ছোট মেয়েটা প্রায় তৃধার বয়সী।তৃধার জায়গায় নিজের মেয়েকে কল্পনা করেই বুকটা হু হু করে উঠলো।
তৃধা কাপড়ের পুটলিটা শক্ত করে বুকে জড়িয়ে লম্বা শ্বাস টেনে নাবীব শেখের দিকে তাকিয়ে পুনরায় বলে উঠলো,, আজ তালাক হয়ে গেছে। সংসারটায় এখন আমার জায়গা নেই। প্রয়োজন ফুরিয়েছে,অপেক্ষমান ব্যাক্তি এখন আর অপেক্ষায় নেই। আপনি বরং বাড়ি ফিরে যান।
যতক্ষনে নাবীব শেখের ঘোর কাটল ততক্ষণে তৃধা কয়েক কদম সামনে বাড়িয়ে দিয়েছে। নাবীব শেখ দ্রুত চোখ মুছে তৃধার সামনে দাঁড়িয়ে হাত থেকে কাপড়ের পুঁটলিটা ছিনিয়ে নিয়ে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,,, এক বাড়িতে জায়গা না হলে অন্য আরেকটা বাড়িতে হবে। আপাতত আমার একটা মেয়ের অভাব। চলো বাড়ি যাবে।
তৃধা কিছু বলবে তার আগেই নাবীব শেখ তৃধাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,, আমি তোমার বাবার বয়সী, আমার কথা বোধহয় তুমি অমান্য করবে না?
নাবিব শেখের কথায় তৃধা চুপ করে রইলো। অপরিচিত হলেও আসলেই লোকটা তার বাবার বয়সী।
অতঃপর নাবীব শেখ তৃধাকে নিয়ে গাড়িতে বসলেন।তিনি জানেন শহর তলীতে একা একটা মেয়ে রাতের বেলা ঠিক কতটা সুরক্ষিত থাকতে পারে। মানুষের চেয়ে হা*য়*নার পরিমাণ যেখানে বেশি সেখানে একা একটা মেয়ে যে তাদের শি*কার হবে না এতে কনো সন্দেহ নেই। তাই তো তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো।
নাবীব শেখ বার কয়েক গেস্ট রুমের দিকে তাকিয়ে পুনরায় সোফায় মাথা এলিয়ে দিলেন। তিনি ভীষণ চিন্তিত একটা অপরিচিত মেয়েকে নিয়ে একটু বেশিই চিন্তিত। বার বার মনে হচ্ছে এই মেয়ের জায়গায় তার নবনী থাকলে কি হতো! নিজের মেয়ের কথা মনে হতেই রুহ্ কেঁ*পে উঠছে। বার বার মেয়েটার চেহারার আদলে নিজের মেয়েকে দেখছে।
প্রায় মিনিট বিশেক পর ফরিদা হক স্বামীর পাশে বসলেন। তার চিন্তিত কপালের ভাঁজে আলতো করে হাত রেখে বলল,, কি হলো? এতো চুপচাপ কেন?
নাবীব শেখ ফরিদা হকের হাতের স্পর্শে সোজা হয়ে উঠে বসলেন। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া সব ঘটনা স্ত্রী ফরিদা হককে খুলে বললেন।
ফরিদা হক গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, আল্লাহ সহায় ছিলো দেখেই কারো বেশি ক্ষ*তি হয়নি। তবে মেয়েটার কথা শুনে বেশি খারাপ লাগছে।
,, আমারো একই রকম লাগছে। মেয়েটার বয়স বেশি না। আমাদের নবনীর বয়সী হবে।
,, দেখে মনে হচ্ছে কোনো ভালো ঘরের মেয়ে হবে। দেখো ভাগ্যের পরিহাস। কার কপালে কি লেখা আছে কেউই জানে না। আচ্ছা শোনো, মেয়েটাকে আমরা রেখে দিবো। যেহেতু ওর কেউ নেই,, এই মুহূর্তে আমরাই ওর পরিবারের দায়িত্ব পালন করবো । কি বলো?
,, আমিও সেটাই ভাবছি। কিন্তু তোমার ছেলে মেয়েদেরকে কি বলবো?
,, কি বলবো মানে? যা সত্যি তাই বলবো। বাড়িতে আমি একা,আমারো তো একজন লাগে সময় কাটানোর জন্য।
,, যা ভালো বুঝো। মেয়েটা ভালো থাকলেই হলো। আপাতত কিছু জিজ্ঞেস করো না। যতটা সম্ভব মায়া মমতা দিয়ে আগলে রাখো।
ফরিদা হক স্বামীর কথার প্রতি উত্তরে বলে উঠলো,, সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি বরং ফ্রেশ হয়ে নাও। ফরিদা হক সোফা ছেড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। আপাতত মেয়েটার পরার জন্য নবনীর রুম থেকে কিছু ড্রেস নিয়ে আসবেন। পরে নাহয় কেনা যাবে।
______
নুসাইব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভ্রু জোড়া গুটিয়ে নিলো। প্রায় নয়টা বাজতে চললো এখনো পর্যন্ত মায়ের একটা কল, মেসেজ কিছুই এলো না। বিষয়টা নিয়ে টেনশন করার মত হলেও টেনশন করতে চাইছে না। মনে মনে ভেবে নিলো মা হয়তো ভুলে গেছে। যদিও কথাটা তার মস্তিষ্ক মানতে নারাজ। প্রতি ঘন্টায় যার কল মেসেজের আওয়াজ শুনে অভ্যস্ত আজ তার একটা কল মেসেজ কিছুই নেই। ব্যাপারটা নুসাইবকে টেনশনে ফেলছে বেশ। ফলশ্রুতিতে কপালে ভাঁজ পড়লো। ভারী বুকের বোঝা কমাতে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে মোবাইলে চোখ রাখলো। মন উসখুস করছে। মায়ের নাম্বারে কল দিয়ে যখন পেলো না তখন আর দেরী করলো না। মিটিং রুম ছেড়ে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে এলো। টেনশনে বার কয়েক পায়চারি করে ভাইয়ের নাম্বারে কল দিলো।
তমাল মেডিক্যাল স্টুডেন্ট। নাবীব শেখ আর ফরিদা হকের তৃতীয় তম সন্তান। তবে পরিবারের মধ্যে সে-ই একমাত্র ডানপিঠে বাউন্ডুলে স্বভাবের। পড়ালেখায় তাকে খুব বেশি সিরিয়াস দেখা না গেলেও তার রেজাল্ট দেখে বুঝার উপায় নেই। এই ডানপিঠে বাউন্ডুলে স্বভাবের ছেলেটাই তার ডিপার্টমেন্টের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী। যদিও নুসাইব ভাইয়ের এই রেজাল্ট নিয়ে সন্দিহান থাকে সব সময়। নুসাইব তমালকে “গুড ফর নাথিং” নামে আখ্যায়িত করলেও সময়ে সময়ে এই “গুড ফর নাথিং” -টাই কাজে আসে। আজো তার ব্যতিক্রম হলো না।
তমাল কেবল বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে মেসে ফিরছে। বেজে ওঠা মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে সবাইকে একপ্রকার ধ*মকে চুপ করালো।
সবাই তমালের অবস্থার গতিবেগ দেখে বুঝে গেছে কলটা তার বড় ভাই করেছে।
তমাল গলা পরিষ্কার করে কল রিসিভ করলো,,
আসসালামুয়ালাইকুম ভাইয়া।
,, ওয়া আলাইকুম সালাম। তমাল এই মুহূর্তে কোথায় তুই?
ভাইয়ের এমন প্রশ্নে ভড়কে গেছে তমাল। চারপাশে তাকিয়ে ভাইকে খোঁজার বৃথা চেষ্টা করলো। করবেই বা না কেন! এর আগে দুইবার তাকে এমন কল দিয়ে হাতে নাতে ধরেছে। চারপাশে তাকিয়ে নরম গলায় বললো,, এইতো ভাইয়া মেসে আছি। কেন কি হয়েছে?
,, আম্মু ফোন ধরছে না। সন্ধ্যা থেকে একবারো কল দেয়নি। এই মুহূর্তে বাড়িতে যা। দেখে আয় কি করছে।
ভাইয়ের এহেন কথায় কিঞ্চিত বিরক্ত হলেও সন্ধ্যা থেকে কল দেয়নি ব্যাপারটা তমালের হযম হলো না।
ছোঁয়াচে রো*গের মত ভাইয়ের টেনশন তাকেও ধরে ফেলল। তমাল চিন্তিত গলায় বলল,, বাবার নাম্বারে কল দিয়েছিলে? বাবাতো বাড়িতে থাকার কথা।
,, উঁহু! আসার সময় বাবা ছিল না। বাবাকে কল দিয়ে অযথা টেনশন বাড়ানোর প্রয়োজন নেই।
,, ঠিক আছে আমি যাচ্ছি। আরেকবার কল দিবো?
,, না আমি অলরেডি দুইবার দিয়েছি।
তমাল কিছু বলবে তার আগেই খট করে কলটা কেটে দিলো। কেন জানি টেনশনের মাঝেও তামালের দুপাটি দাঁতের মাঝে দুটো কঠিন গা*লি ঘোরাঘুরি করতে লাগলো। দুটো কল? মাত্র দুটো কল দিয়ে টেনশন? আরে দুটো কল তো আম্মুর কিচেন থেকে বের হতে হতেই কে*টে যাবে। তমালের রুমমেট গুলো এক জন আরেক জনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। তমাল সবার দৃষ্টি লক্ষ করে সবাইকে যেতে বললো। আপাতত তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাড়ি যাবে নাকি এইখানে দাঁড়িয়ে মিটমাট করবে। বাড়ি যেতে হলে ঘন্টা খানেক জার্নি করতে হবে। এই মুহূর্তে তা সম্ভব নয়।
নুসাইব পুনরায় মিটিং রুমে প্রবেশ করলো। ছোট ভাইয়ের উপর তার যথেষ্ট ভরসা আছে। ভালো কাজে না আসলেও একেবারে অকাজের না। পাড়ায় তার স্ট্রং সোর্স আছে। এই মুহূর্তে হয়তো বাড়িতে লোক পাঠিয়ে দিয়েছে। খবর এলো বলে।
নুসাইবের কথা একবিন্দুও মিথ্যা যায়নি। তমাল ঠিকই পাড়ার সাঙ্গোপাঙ্গোদের কল করে বলেছে। তারাও আর দেরি করেনি। বলার সাথে সাথে বাড়ির গেইটে হাজির। এইদিকে দারোয়ান না গেইট খুলে কুল পাচ্ছে ,না প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কুল পাচ্ছে।
রাফি আর রিমান এসেই গেইটের উপর হা*মলে পড়লো।। তারা দুজনই তমালের ছোটবেলার বন্ধু। তমালের কথা শুনেই এক ছুটে বের হয়।
তমাল ঘড়িতে সময় দেখছে। পাঁচ মিনিট হতে আরো পনেরো সেকেন্ড বাকি। এরা গেছে কিনা সেটাই তো ভেবে পাচ্ছে না। রাফির নাম্বারে কল দিবে ভাবতেই রিমানের নাম্বার থেকে কল এলো।
যতটা চিন্তা করছিলো তার কিছুই না। বরং তারা টোনা টুনিতে মিলে গল্প জুড়েছে।
তমাল লম্বা শ্বাস ফেলে আবার ভাইকে কল দিলো।
সব জানার পর নুসাইব পুনরায় মিটিংয়ে মনোনিবেশ করলো। যদিও ব্যাপারটা সন্দেহ জনক,তবে এখন আর ঘাটালো না। সুস্থ আছে , ঠিক আছে এইটাই যথেষ্ট।
____
মধ্য রাত।
পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ। কোথাও কোনো সাড়াশব্দের রেশ মাত্র নেই।
এই নিস্তব্ধতা বিরাজ করা বাড়িটাতে তৃধা জেগে। গায়ের জ্বরটা বেড়েছে বোধহয়। ডায়নিং রুমে জ্ব*লতে থাকা বাতির আলো গেস্ট রুম ওবদি আসছে। আবছা আলো আবছা অন্ধকারের খেলায় তৃধার দৃষ্টি স্থির। চোখ জোড়া ভিজে উঠছে বার বার । হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে আবার হাঁটু জড়িয়ে বসলো। গায়ের চাইতে মন পু*ড়ছে বেশি। কলিজা ঝ*ল*সে যাওয়ার মত অনূভুতি। কাল রজবের সাথে একই রুমে একই বিছানায় ছিলো। হোক রাগ অভিমান,হোক ঝগ*ড়া কিংবা মা*রা*মা*রি। মানুষটাতো ভালোবাসার ছিল। কিন্তু আজ! আজ তার ঘরে তার বিছানায়, তার বুকে কোথাও তৃধা নেই। তার সবটুকু জুড়ে অন্য কেউ। আচ্ছা তারা কি করছে এখন? নিশ্চয়ই ভালোবাসায় বুঁদ হয়ে আছে। মিষ্টি আলাপচারিতা আর সুখানুভূতির সাগরে ভাসছে।
ফিকরে কেঁ*দে উঠলো তৃধা। বুকটা জ্বা*লা করছে তার। নিঃশ্বাস নিতে ক*ষ্ট হচ্ছে বেশ। বুকের বাঁ পাশ খা*মচে ধরে হাউমাউ করে কেঁ*দে উঠলো।
নিস্তব্ধ বাড়িটাতে মূহুর্তে কা*ন্নার রোল ছড়িয়ে পড়লো। কা*ন্নার আওয়াজের প্রতিধ্বনিতে ভারী হলো বাড়ির শান্ত পরিবেশ।
ধ*ড়*ফড়িয়ে উঠলো নাবীব শেখ। হাতড়ে চশমাটা নিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দৌড়ে বের হয়। কা*ন্নার আওয়াজটা গেস্ট রুম থেকে আসছে দেখে রুমে ফিরে এলেন। স্ত্রীর পাশে বসে ধীর গলায় ফরিদা হককে ডাকলেন। স্বামীর ডাকে উঠে বসলো ফরিদা হক।
কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই নাবীব শেখ ইশারায় শব্দ শুনতে বললেন।
ফরিদা হক কা*ন্নার আওয়াজ শুনে বলে উঠলো,, মেয়েটা কাঁ*দছে!
,,হুম।
,,কি করি বলোতো? যাবো একবার? সবে মাত্র সংসার ভেঙ্গেছে। এই সময়টা একটা মেয়ের জন্য কতোটুকু কষ্টের সেটা সেই মেয়ে ছাড়া কেউ বুঝবে না।
,, যাও। গিয়ে পাশে বসো। এই সময়টা মানুষ তার আশেপাশে তাকে আগলে রাখার মত কাউকে চায় ।
দেরি করলো না ফরিদা হক। হড়বড়িয়ে বেরিয়ে গেলেন। তার পেছন পেছন ছুটলো নাবীব শেখ।
ভিড়িয়ে রাখা দরজাটা হাট করে খুলে ফেলল ফরিদা হক ।সেদিকে তাকিয়ে আলগোছে চোখ মুছে ফেললো তৃধা। কান্না আটকাতে চাইলেও হিচকিটা বন্ধ হয়নি।
তৃধার শিয়রে বসে তৃধাকে জড়িয়ে ধরলো ফরিদা হক। পর পর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,, কা*ন্না আটকে রাখার দরকার নেই মা। এই সময়টা মন খুলে কাঁদতে হয়। বুকে ক*ষ্টের পাহাড় তৈরি করার দরকার নেই মা।
তৎক্ষণাৎ দুহাতে ফরিদা হককে ঝা*পটে ধরল তৃধা। হা*উ*মা*উ করে কেঁ*দে উঠলো । ফরিদা হক তৃধাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চুপটি করে আছে। দরজার বাইরে হেলাল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাবীব শেখ। তার বুকটা ভারী হলো। একজন বাবা হিসেবে মেয়ের কষ্টে বুকের উপর পাথর চেপে আছে।
তৃধার কা*ন্নার বেগ বাড়ছে ব-ই কমছে না।
কা*ন্নার সাথে ফরিদা হকে জড়িয়ে ধরা হাতের বাঁধনটাও শক্ত হচ্ছে। ফরিদা হক নিজেও কাঁদছে।
এক পর্যায়ে তৃধা চি*ৎকার করে বলে উঠলো,, কি দো*ষ ছিল আমার, আল্লাহ আমার কি দোষ ছিল। কেন আমার সাথে এমন হলো? আমিতো তাকে ছাড়া কিছুই চাইনি। সব ছেড়ে এসেছি। তাহলে কেন সে ভালো না লাগার দোহাই দিয়ে আমাকে ছেড়ে দিলো। কেন ছেড়ে দিলো। আমি কি করবো এখন। কাকে নিয়ে বাঁচবো। কেন আমায় ডেকে নিলেনা খোদা কেন নিলে না।
তৃধার আহাজারিতে ফরিদা হক শব্দ করে কেঁ*দে উঠলো। বাদ যায়নি নাবীব শেখ। চোখ চোখ জোড়া ভিজে উঠেছে। আশ্রু কনা গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষা।
ফরিদা হক তৃধার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,, এমন কথা বলতে নেই মা। এমন কথা বলে না।
ফরিদা হকের কথায় সরে বসলো তৃধা। হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে হিচকি তোলা গলায় বলল,, আমি তার জন্য ঘর ছেড়েছি,আপন মানুষ ছেড়ে দিয়েছি, রাজ প্রাসাদ ছেড়ে তার কুঁড়ে ঘরে উঠেছি, নিজের সব টুকু দিয়ে তাকে আগলে বাঁচার চেষ্টা করেছি। দুই বছরে না আফসোস করেছি , না কোনো অভিযোগ। তাহলে কিসের কমতি ছিলো। কেন ভালোবাসাটা একটা মাসের ব্যবধানে ভালো না লাগায় পরিনত হলো আন্টি। আপনি আমাকে বলুন আমি আর কি করলে সে আমায় ছাড়তো না। কেন আমি ঘরে থাকা অবস্থায় সে অন্য কাউকে নিয়ে এলো। আমি কি করবো এখন। আমি কি করবো। এর চেয়ে তো ম*রন ভালো ছিলো।
ফরিদা হক ডুকরে কেঁদে উঠে তৃধাকে পুনরায় জড়িয়ে ধরল। তৃধা ফরিদা হকের বুকে মাথা রেখে কেঁদে ডুকরে কেঁদে উঠে বললো,,আমার বুকটা জ্ব*লে যাচ্ছে, কেউ কলিজাটা খা*ম*চে ধরেছে, সব খালি লাগছে,সব খালি লাগছে। এর চেয়ে তো ম*রন ভালো ছিলো।
কাঁদছে তৃধা কাঁদছে ফরিদা হক। নাবীব শেখ দাঁড়াতে পারলো না। আলগোছে চোখ মুছে রুমে চলে গেল। এইদিকে ফরিদা হক তৃধাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। আর মনে মনে বলছে, এমন রাত যেন কারো জিবনে না আসে।
_____
বারোটা বেজে একত্রিশ মিনিট। এইসময় বাড়ির দরজায় নুসাইবের গাড়ি। দারোয়ান কিছুটা অবাক হলো। এই সময় এই গাড়ি আর মালিক দুইটাই আসার কথা নয়। তিনি কৌতুহল দমিয়ে রেখে গেইট খুলে দিলো। গাড়ি পার্কিং এরিয়াতে রেখে বাড়িতে ডুকলো নুসাইব। দুইদিন যেখানে থাকার কথা সেখানে পুরোপুরি একটা দিনও টিকলো না।
কারনটা অবশ্যই তার মায়ের আচরণ। মা কিছু লুকাচ্ছে,তা না হলে তার আদরের বড় ছেলের খোঁজ খবর নেওয়া বন্ধ করতো না। কারনটা হয়তো ভালোও হতে পারে। কিন্তু নুসাইবের মন মস্তিষ্কের মধ্যে ভালোর চাইতে খারাপ কিছুর চিন্তাটাই বেশি আসছে। সেইজন্য সকাল সকাল রওনা দিয়েছে।
এদিকে ফরিদা হক তৃধাকে একপ্রকার জোর করেই নিজের সাথে সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতক্ষণে অবশ্য নামটা জানা হয়ে গেছে। তৃধা কিছু সময় মন খারাপ করে থাকলেও সেটা বেশিক্ষণ টিকলো না। ফরিদা হক ইনিয়ে বিনিয়ে তৃধার সাথে নানান গল্প করে যাচ্ছে। যা দেখে বাড়ির কাজের লোকেরা নিজেদের মধ্যে কানাগোসা করছে। তাতে ফরিদা হকের নজর নেই।
রান্না বান্না প্রায় শেষ। ফরিদা হক তৃধার হাতে ছোট মেয়ে নবনীর এক সেট জামা ধরিয়ে দিয়ে গোসলে পাঠালো। তৃধাও আর দাঁড়ালো না, যাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছে তাদের কথা অমান্য করবে না সে।
নাবীব শেখ বেশ খোশ মেজাজে আছেন। খোলা বারান্দায় রকিং চেয়ার বসে সপ্তম বারের মত গীতাঞ্জলিতে চোখ বুলোচ্ছেন।
তৃধা গোসল সেরে কিচেনে ফরিদা হকের কাছ ঘেঁষে দাঁড়ালো। কালকের পর থেকে এই কোমল মায়াময়ী রমনিকে তার খুব বেশিই আপন মনে হচ্ছে। তৃধার উপস্থিত টের পেয়ে মুচকি হাসলো ফরিদা হক।তৃধাকে রান্নার বিভিন্ন কলা কৌশল শেখাচ্ছেন। হঠাৎ করে কি মনে করে দেয়াল ঘড়িতে চোখ রাখলো। ঘড়ির কাঁটা তখন বারোটা ত্রিশ ছুঁই ছুঁই। মূহুর্তে দাঁতে দাঁত চেপে ফুসে উঠলো ফরিদা হক।
তৃধা জিজ্ঞেস করার আগেই বলে উঠলো,, দেখেছো সাড়ে বারোটা বেজে গেছে আর ওই বুড়ো এখনো গোসল সারেনি। নিশ্চয়ই বইয়ের মধ্যে মুখ থু*বড়ে পড়ে আছে। আজ খুন্তি দিয়ে ঝালাই করবো।
ফরিদা হকের কথায় কিঞ্চিত হাসলো তৃধা।
তৃধাকে দাড় করিয়ে নিজ কক্ষে ছুটলেন তিনি।
তৃধা একটা স্পেচুলা হাতে নিয়ে ভাজি গুলো নেড়েচেড়ে দিচ্ছে।
এমন সময় কিচেন দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো নুসাইব। তৃধা তখন ভাজি নাড়াচাড়া করতে ব্যাস্ত। ঘোমটা দেওয়া অবস্থায় তৃধাকে ঠিক নবনীর মত লাগছে। নুসাইব মুচকি হাসলো। অতঃপর নিঃশব্দে পেছনে দাঁড়িয়ে আলতো করে তৃধার মাথায় হাত রেখে বলল,, কি ব্যাপার বুচি আজ হঠাৎ রান্না ঘরে? আম্মুকি তোকে মে*রে পাঠিয়েছে?নাকি বকে*ছে?
আস্কমিক ঘটনায় চমকে স্পেচুলা হাতে ঘুরে দাঁড়ালো তৃধা। চমকায় নুসাইব ছিটকে গিয়ে অনেকটা দুরে সরে দাঁড়ায়। বোন ভেবে যার মাথায় হাত রেখেছিল সে আসলে অন্য কেউ।
চলবে,,
উপন্যাসের নাম::#আমি_আছি
লেখনিতে:#সাদিয়া_আফরোজ
পর্ব: ৫
একজন অপরিচিত মেয়েকে নিজের বাড়িতে দেখে ভড়কে গেল নুসাইব। মাথায় ব্যান্ডেজ করা তাও আবার বোনের ড্রেস পরিহিতা অবস্থায়।এমন সময় ফরিদা হক কিচেনে দরজায় এসে হাজির,তার পেছনে কাজের বুয়া রেবেকা। ফরিদা হক কিছু বলার আগেই নুসাইব কিচেন থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। রেবেকা সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে। এইদিকে তৃধা কি করবে বুঝতে পারছে না। স্পেচুলা হাতে নিচের দিকে তাকিয়ে আসফাঁস করছে। ফরিদা হক তৃধার হাত থেকে স্পেচুলা নিয়ে ভাজির লবন দেখে নিলো । সাথে রেবেকা-কে বলে পাঠালো নুসাইবকে যেন পানি দিয়ে আসে। রেবেকা শোনা মাত্র সেই দিকে ছুটলো।
,,আন্টি আমার জন্য আপনার পরিবারের মধ্যে কোনো সমস্যা হোক সেটা আমি চাই না। আমি বরং চলে যাই।
তৃধার কথা শুনে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল ফরিদা হক। অতঃপর তৃধার হাত ধরে বললো,, আমার পরিবারের মানুষ কখনোই এই নিয়ে সমস্যা করবে না। বরং খুশিই হবে। তুমি বরং রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও।
দাঁড়ালো না তৃধা ,বাধ্য মেয়ের মত রুমে ফিরে গেলো।
ফরিদা হক রুমে গিয়ে নাবীব শেখের খোঁজ করলেন। নাবীব শেখ সবে গোসলে গেছে। বের হতে সময় লাগবে। এইদিকে ফরিদা হক পড়েছে মহা বিপাকে। রাতে সাহস দেখালেও এই মুহূর্তে সেই সাহস আর কুলোচ্ছে না। তাও বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিলো।
নুসাইব পানির গ্লাস রেখে টাইয়ের নট ডিলে করে বিছানায় বসলো। ফরিদা হক বিনা বাক্যব্যয়ে ছেলের শিয়রে বসে গলা খাকিয়ে বলে উঠলো,, কি ব্যাপার দুইদিনের সফর একদিনে শেষ! ঘটনা কি?
নুসাইব শান্ত চোখে মায়ের দিকে চাইলো। মায়ের চেহারার আদলে টেনশন স্পষ্ট। কিছু একটা বলতে চেয়েও পারছে না।
ফরিদা হক নড়েচড়ে বসল।
,, কিরে এইভাবে কি দেখছিস?
,, দেখছি আরকি। বান্ধুবীর মেয়েকে পেয়ে আমার মা তার পেটের ছেলেকে কি ভাবে ভুলে গেছে সেটাই দেখছি। টেনশন হয় আম্মু , কাল থেকে আজ ওবদি একটা কল একটা মেসেজ দাওনি। আমার কেমন টেনশন হয় বুঝো তুমি?
ফরিদা হক হকচকিয়ে তাকালো। বান্ধুবীর মেয়ে শুনে ভড়কে গেলেও । ছেলের শেষের কথা গুলো শুনে বেজায় খারাপ লাগতে শুরু করলো। আসলেইতো! কাল থেকে আজ ওবদি মোবাইলটা ধরে দেখেনি। চার চারটা ছেলে মেয়েদের মধ্যে কাউকে কল দেওয়া হয়নি। অন্য দিন হলে সবাইকে বিরক্ত করে ফেলতো। অপরাধবোধে ঘিরে ধরলো।
মায়ের চেহারা দেখে নরম হলো নুসাইব। আবদারে জড়িয়ে ধরলো মাকে। নরম গলায় বলল,, টেনশন হয় আম্মু। মেহমান এসেছে সময় দিচ্ছো ঠিক আছে। কিন্তু একটাবারতো কল দিতে। কতটা টেনশন কাজ করছিলো জানো?
ফরিদা হক ছেলের মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে বললো,, আম্মুর একদম খেয়াল ছিলো না বাবা। মা আর কখনো এমন করবো না।
হাসলো নুসাইব মা তাকে এখনো ছোট বাচ্চার মতই আদর করে। অবশ্য প্রথম বাচ্চার জন্য মায়ের আদর একই রকম থাকে। হোক সে যুবক কিংবা বুড়ো।
নুসাইব গলা ঝেড়ে বলল, মেহমান কবে এসেছে?
নুসাইবের প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করলো ফরিদা হক।
,, তুই কিভাবে জানলি তৃধা আমার বান্ধবীর মেয়ে?
,, আমি জানবো কিভাবে! আমাকে রেবেকা খালা বললো।
ফরিদা হক দাঁতে দাঁত চেপে ফুসলো। ঘরে ঘরে ভে*জাল লাগানোর জন্য রেবেকার মত একটা বি*ষা*ক্ত বুয়াই যথেষ্ট। রেবেকার একটা খবর করেই ছাড়বে।
,, রেবেকা পানি দিতে এসে এইগুলো বলেছে?
,, হ্যাঁ।
,, ঠিক আছে তুই ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। সবাই একসাথে লাঞ্চ করবো।
,, ঠিক আছে।
ফরিদা হক যেতেই নুসাইব বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।
মেয়েটার চেহারার আদল পরিচিত মনে হচ্ছে। কিন্তু কোথায় দেখেছে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না। মস্তিষ্কের উপর প্রেশার দিয়েও কাজ হলো না। এমন অনেক সময় হয় ,যখন অপরিচিত ব্যাক্তিকে দেখে পূর্ব পরিচিত মনে হয়। আপাতত মাথা ঝেড়ে ব্যাপারটা ফেলতে চেষ্টা করল।
খাবার টেবিলে পিনপিনে নিরবতা বিরাজ করছে। এর মধ্যে ফরিদা হক তৃধাকে নিয়ে ডায়নিং টেবিলে আসলেন। নুসাইব এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। তৃধা বেশ দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে আছে। টেবিলে বসে সবার সাথে খাওয়াটা একটুও শোভন মনে হচ্ছে না তার। হঠাৎ একটা পরিবারে আশ্রয় নিয়ে তাদের সাথে ডায়নিং টেবিল শেয়ার করার ব্যাপারটা ঠিক মনে হচ্ছে না। বেশ লজ্জায় পড়লো তৃধা।
অন্যদিকে নাবীব শেখ তৃধাকে নিজের পাশে বসালেন। তার অন্য পাশে ফরিদা হক বসলেন। নুসাইব খাবার খাচ্ছে কম তাদের দুইজনের গতিবিধি দেখছে বেশি।
নাবীব শেখ তৃধাকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে তার সাথে ফরিদা হকতো আছেই। এইসব দেখে ভ্রু জোড়া গুটালো রেবেকা।
নুসাইব নিজের মা বাবার কাজ দেখে কিছুটা চিন্তিত। মেয়েটাকে এতো খাতির যত্ন কেন করছে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।
নাবীব শেখ মাছের কাঁটা বেছে তৃধার হাতে দিতেই নুসাইব অবাকের চূড়ান্ত সীমান্তে পৌঁছে গেছে। মনে মনে ভেবেই নিয়েছে এই মেয়েকে তার মা বাবা তার বউ করেই ছাড়বে। এইবার বোধহয় আর রক্ষা পাবে না।
_______
সন্ধ্যায় তমাল ভিডিও কল দেয়। মায়ের সাথে তার রাজ্যের আলাপ । এর মধ্যে নবনীও কল দিচ্ছে। তমাল বিরক্তে কপাল কুঁচকে ফেললো। এই বুচির জন্য দুটো মিনিট শান্তিতে কথা বলা যাবে না। নবনী ঘরের সবার ছোট। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছে। অর্থনীতি নিয়ে পড়ছে সে। মায়ের ফোনে কল দিয়ে ব্যাস্ত দেখে তমালের ফোনে অনবরত কল দিয়ে যাচ্ছে। তমাল মায়ের কল কেটে নবনী সহ গ্ৰুপ কল করলো। তিনজনের কথোপকথন চলছে । আধ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে তাও কথার শেষ নেই। নাবীব শেখ বেজায় বিরক্ত। এদের কথা শুরু হলে শেষ হবার নামই নেয় না। রাস্তায় কোথায় কাকে প্র*স্রা*ব করতে দেখেছে,কোন পাগল কাকে ধাওয়া করেছে, ভার্সিটিতে কোন টিচার কার প্রেমে পড়েছে সবটাই আলোচনায় আসবে। নাবীব শেখ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে ইশারায় তৃধাকে ডেকে পাশে বসতে বললেন। তৃধাও বাধ্য মেয়ের মত নাবীব শেখের পাশে বসলো। নাবীব শেখ ফরিদা হককে দেখিয়ে দেখিয়ে তৃধার কাছে বিচার দিচ্ছে। তৃধা নাবীব শেখের কথায় মিট মিট করে হাসছে। এইদিকে ফরিদা হক প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে ঠিকই খেয়াল করে। তাকে নিয়ে তার স্বামী সমালোচনা করছে দেখেই ফুঁসে উঠলেন। তিনি ক্যামরা ঘুরিয়ে নাবীব শেখকে দেখিয়ে বললো,, দেখেছিস তোরা! তোদের বাপ এখনো আমাকে নিয়ে সমালোচনা করছে।
তমাল মায়ের কথার চাইতে মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে ওঠা মেয়েকে দেখতে ব্যাস্ত।
নবনীও অবাক চোখে খুতিয়ে দেখছে। দুই ভাইবোন নিজেদের মধ্যে মেসেজ আদান-প্রদান প্রদান করতে ব্যাস্ত। ফরিদা হক খেয়াল করে দেখলো তার বাচ্চা দুটো তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। তিনি রাগলেন ,নাকের পাঠা ফুলিয়ে খট করে কলটা কেটে দিলেন।
নাবীব শেখ যেন এই সময়টার অপেক্ষাতেই ছিল। তিনি মিটমিট করে হাসছেন।
এইদিকে তৃধা স্বামী স্ত্রীর খু*নসুটি ঝ*গড়ার মাঝে কাঁ*টা হয়ে গেছে।
____
রাত প্রায় একটা ছুঁই ছুঁই। বাড়ি ফিরলো নুসাইব। দুপুরে খাওয়ার পর নুসাইব অফিসের কাজে বেরিয়েছিল ঠিকই , কিন্তু এরপর আর বাড়ি ফেরেনি। এর মধ্যে ফরিদা হক অনেক বার কল করলো । প্রতিবারই নুসাইব বলেছে তার ফিরতে দেরী হবে। অগত্যা ফরিদা হক খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লো। আসলেই দেরী করে ফিরেছে। সন্তান বাড়ি না ফিরলে মায়েরা ঘুমায় না। ফরিদা হকও ঘুমাতো না, সারাবাড়ি পায়চারি করতো। ঘুম না হওয়া তার উপর হাই প্রেশারের সমস্যা সব মিলিয়ে তার অবস্থার গতিবেগ ভালো ছিলো না। মায়ের শরীরের অবস্থা দেখার পর নুসাইবের কড়া নিয়ম ,রাত এগারোটার পর কেউ যেন হল রুমে না থাকে। রাত এগারোটা মানেই বেড টাইম। অবশ্য এই বাঁধাধরা নিয়ম মা বাবার জন্যই প্রযোজ্য। সেই থেকে ফরিদা হক রাত জাগে না। যদিও মাঝে মধ্যে ছেলের অগোচরে জেগে থাকেন তিনি।
ক্লান্ত নুসাইব, পেন্ডিংএ থাকা কাজ সব শেষ করে তবেই ফিরেছে। ফ্রেশ হয়ে রুম ছেড়ে বেরোয়। আপাতত খাওয়া দরকার। টেবিলে সাজানো খাবার দেখে মৃদু হাসলো নুসাইব। মা জেগে না থাকলেও ছেলের জন্য সবটা ঠিকই রেডি করে রেখে গেছেন। টেবিলে বসেই খাওয়া শুরু করলো। কোনোদিকে তাকানোর মত সময় নেই তার । ক্ষিদের চোটে পেটের মধ্যে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। খাওয়া শেষ করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠবে এমন সময় গুনগুনিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনে থামলো সে। নজর ঘুরিয়ে চারপাশ দেখে নিলো । উঁহু কোথাও কেউ নেই। নুসাইব ভেবেছে ভুল শুনেছে। আবার যেইনা এক সিঁড়িতে পা রাখল ওমনি কান্নার আওয়াজ শোনা গেলো। ঘুরে দাঁড়িয়ে সেই কান্নার আওয়াজ অনুসরণ করে এগোতে লাগলো।
হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁ*দছে তৃধা। পুরো দিন নিজেকে সামলে রাখলেও রাতের বেলা নিজের মনের সাথে পেরে উঠা দায়। বুকের ভেতর অ*সয্য য*ন্ত্রণা নিয়ে বালিশে মাথা রাখলেও দম বন্ধ হয়ে যাওয়াতে তৎক্ষণাৎ উঠে বসলো। ভালোবাসা ময় অসংখ্য মূহূর্ত চোখের সামনে ভাসছে তার। মনকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। এতো গুলো সুন্দর মূহুর্তের শেষে তাকে শূন্য হাতে ফিরতে হলো। তৃধা কখনো বুক থা*বড়ে,তো কখনো মাথার চুল খামচে ধরে। বিদ্ধস্ত লাগছে তৃধাকে।
নুসাইব ভিড়িয়ে রাখা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। উঁকি দিবে কি দিবে না সেই দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছে। একা একটা মেয়ের রুমে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখা কোনো সুপুরুষের কাজ নয়। অত্যন্ত অশোভন কাজ, যা নুসাইব কখনোই করবে না। কিন্তু এই মুহূর্তে রুমের ভেতর কান্নারত মানুষটার সুবিধা অসুবিধাও তো দেখা দরকার। যদি বড় কোনো সমস্যা হয়ে থাকে?
দেরি করলো না নুসাইব, ভিড়িয়ে রাখা দরজা আলতো করে ধাক্কা দিয়ে খুললো। আবছা আলোয় তৃধাকে দেখা যাচ্ছে। হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে দুহাতে চুল খামচে ধরে কাঁদছে। নুসাইবের উপস্থিতি টের পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।
নুসাইব ধীর পায়ে বিছানার পাশ থেকে ওড়না নিয়ে তৃধার গায়ে জড়িয়ে দিতেই টনক নড়লো তৃধার । তৎক্ষণাৎ মাথা তুলে নুসাইবকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। তাড়াতাড়ি চোখ মুছে সোজা হয়ে বসলো।
নুসাইব শান্ত গলায় বলল ,, ভুল বুঝবেন না। আসলে আমি কান্নার আওয়াজ শুনে এসেছি। যদিও নক না করে রুমে প্রবেশ করা উচিৎ হয়নি। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম কোনো সমস্যা হয়েছে।তাই নক না করেই ঢুকে পড়েছি।
তৃধা হেঁচকি ওঠা গলায় মাথা নেড়ে বললো,, সমস্যা নেই। আমি কিছু মনে করিনি।
নুসাইব গলা ঝেড়ে বলল,, আপনার কোনো সমস্যা হচ্ছে?খারাপ লাগছে? মাথা ব্যাথা করছে?আম্মুকে ডেকে দিবো?
নুসাইবের প্রশ্নে তৃধা দুই হাতে মানা করে বললো,, না না আমার কোনো সমস্যা হয়নি। আপনি ওনাকে ডাকবেন না। আমি ঠিক আছি।
তৃধার কথায় নুসাইব বুঝলো সমস্যাটা তার ব্যাক্তিগত। কয়েক সেকেন্ডের পিনপিনে নিরবতা ভেঙ্গে নুসাইব বলে উঠলো,, সমস্যা হয়তো ব্যাক্তিগত তাই জিজ্ঞেস করবো না। তা ছাড়া জিজ্ঞেস করার মত রাইট আমাদের কারো নেই। তবে সবার জিবনেই কিছুনা কিছু সমস্যা হয়। একান্ত ব্যাক্তিগত সমস্যা। যেটা না বলা যায় না বোঝানো যায়। হয়তো আপনার জিবনেও তাই। ধৈর্য্য ধরুন সব ঠিক হয়ে যাবে।
কথা শেষে দাঁড়ালো না নুসাইব। দরজা টেনে বেরিয়ে পড়লো। হঠাৎ করে এই কান্নারত মেয়েটার উপর বড্ডো মায়া হলো তার। আচ্ছা সে কি বিয়ে করতে অমত করেছিল? কোনো ভাবে তার মা-বাবা কিংবা আমার মা-বাবা ফোর্স করে নিতো? না না এইসব কিভাবে হবে। মেয়েটাতো আর ছোট নেই । অদ্ভুত প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। যদিও সব ভিত্তিহীন। নুসাইব এখনো জানেই না মেয়েটা কেন এসেছে তাও আবার হুট করে। যেখানে এতো বছরেও মায়ের কোনো বান্ধবীর নাম ওবদি শুনেনি সেখানে হঠাৎ করে বান্ধবীর মেয়ে এসে টপকালো। তাও আবার সে রাত হলে কেঁদে ভাসায়।নুসাইবের মনে প্রশ্নের ছড়াছড়ি। নুসাইব ঠিক করলো এই নিয়ে তিন্নির সাথে কথা বলবে।
এইদিকে তৃধা লজ্জায় পড়ে গেছে। কেমন বিব্রতকর পরিস্থিতি।হঠাৎ করে এই বাড়ির বড় ছেলে এসে পড়বে সে ভাবতেও পারেনি। তৃধার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করছে। এই বাড়ির মানুষ গুলোকে বিরক্ত করছে ভেবেই এমন অনুভূতি।
______
সকাল হতেই ফরিদা হক হাজির।তৃধা ওড়না গায়ে জড়িয়ে উঠতে নিলেই ফরিদা হক বাধসাধে। তৃধার পুরো মুখে চোখ বুলিয়ে বললো,, মেয়ে আবার কান্না করেছো তাইনা? চোখ মুখের অবস্থাতো খারাপ হয়ে আছে। একদম ফুলে একাকার। খবরদার ওই বে*য়া*দবের জন্য আর কাঁদবে না। তোমার চোখের পানি ওই বে*য়া*দব ডিজার্ভ করে না।
ফরিদা হকের শাসন করার ধরন দেখে মুচকি হাসলো তৃধা। ফরিদা হক তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে তৃধার চুল গুছিয়ে দিতে দিতে বলল,, হাসি সুন্দর,দেখতেও ভালো লাগে। দোয়া করি বাকি জিবন যেন এই ভাবেই হাঁসি মুখে থাকো।
ডায়নিং টেবিলে খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে নুসাইব। তার বাবা এলেও মা এখনো আসেনি। এইদিকে নাবীব শেখ গুনগুনিয়ে গান গাইছে। নুসাইবের মনে হচ্ছে কোনো না কোনো ভাবে তার বাবার মনে রং লেগেছে। নুসাইব গলা ঝেড়ে বলে উঠলো,, বাবা তোমাকে হঠাৎ এতো খুশি খুশি লাগছে! ঘটনা কি? সাম হাউ লটারি টিকেট জিতে গেলে নাকি।
নাবীব শেখ ছেলের কথায় নড়েচড়ে বসল। রুটির কোনা ছিঁড়ে মুখে পুরে দিয়ে বলে উঠলো,, হ্যাঁ লটারি। আমার শূন্য বাড়ি পূর্ণ করে তৃধা এলো। লটারি তো বটেই। আচ্ছা শোন একটা কথা বলি। আজকাল তোর মায়ের প্রেশারটা একদম পারফেক্ট। আর আমার তো ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। মনে হচ্ছে সব তৃধার জন্য।
মেয়েটার নামযে তৃধা সেটা নুসাইব সবে জানলো।এর আগে মা আরেকবার বলেছিল ঠিকই তবে সেটা সে খেয়াল করেনি। বার কয়েক মনে মনে তৃধা নাম আওড়ালো নুসাইব। বাবার কথায় এইটুকু পরিস্কার তৃধা নামের মেয়েটা তাদের কাছে একটু বেশি স্পেশাল। তবে কেন? শূন্য ঘর পূর্ণ করলোই বা কি করে। সেতো চলে যাবে । তাহলে?
রেবেকা খালা নাস্তার জন্য এক্সট্রা একটা প্লেট রেখে মুখ বেঁকিয়ে বলল,, দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা বদ অভ্যাস। ভাইজান আপনাগো মেহমানের বোধহয় সেই দিকে নজর নাই।
রেবেকার কথা শুনে নাবীব শেখ কিছু বলবে তার আগেই নুসাইব বলে উঠলো,, কাজের কথা ছাড়া বাড়তি কথা বলাও বদ অভ্যাস খালা। অবশ্য বদ অভ্যাস কম এইটা এক প্রকার বেয়াদবিও বটে। আপনি আমার মুরুব্বি এই জন্য শব্দটা আপনার জন্য মানানসই না। খেয়াল রাখবেন আর যেন ভুল না হয়। সে আমাদের মেহমান আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী নয়।
রেবেকা দাঁড়ালো না সোজা কিচেনে চলে গেছে।
নাবীব শেখ ছেলের সাথে একমত তাই তিনি আর কিছু বললেন না।
তৃধা সহ টেবিলে বসলো ফরিদা হক। তৃধা আর নুসাইবকে নাস্তা বেড়ে দিয়ে নিজেও বসলেন। নাবীব শেখ ভ্রু গুটিয়ে বসে আছে। নুসাইব বাবার প্লেট খালি দেখে মায়ের চেহারা দিকে তাকিয়ে আছে।
,, আমার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। আমার বিরুদ্ধে অ*পপ্রচার চালানো কোনো ব্যাক্তির উপর আমার মায়া হয় না।
ফরিদা হকের কথা শুনে নাবীব শেখ ফুঁসে উঠেছে। তৃধা কিঞ্চিৎ শব্দ করে হাসলো। নজর ঘুরিয়ে তাকালো নুসাইব। তৃধার হাঁসি মাখা চেহারার দিকে তাকিয়ে থমকায়। মেয়েটা হাসলে তার পুরো মুখ হাসে। তার হাঁসি সুন্দর। উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের চেহারা আদলে এই হাসি সুন্দর।
নাবীব শেখ পানি গ্লাস শব্দ করে রাখতেই নুসাইবের ধ্যান ভাঙল।
খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই নাবীব শেখ উঠে পড়লেন,তার সাথে ফরিদা হক নিজেও উঠে চলে গেলেন। এইদিকে তৃধা আর নুসাইব আছে শুধু। তৃধা লজ্জায় নুসাইবের দিকে একবারো তাকাতে পারেনি। রাতে তাকে কাঁদতে দেখেছে ব্যাপারটা যতবার মনে হচ্ছে ততবারই লজ্জায় সিটিয়ে যাচ্ছে।
এইদিকে নুসাইব তৃধার গতিবিধি লক্ষ্য করে বললো,, তৃধা আপনি ঠিক আছেন?
নুসাইবের মুখে নিজের নাম শুনে চমকে তাকালো তৃধা। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার হলো যখন তৃধা নুসাইবের দিকে সরাসরি তাকালো।
,, কি হলো ঠিক আছেন?
মাথা নাড়ালো তৃধা।
,, মাথায় আঘাত লাগলো কি করে?
নুসাইবের প্রশ্নে ছোট করে উত্তর দিলো,, রাস্তায় পড়ে গেছিলাম।
,, ওহ্ আচ্ছা। বাড়িতে কথা হয়েছে? আন্টি আংকেল আছে?
থমকায় তৃধা এই প্রশ্নের জবাব তার কাছে নেই। এই প্রশ্নের উত্তর অনেক আগেই দেওয়া বন্ধ করেছিল। মূহুর্তে তৃধার চোখ ভারী হলো। নুসাইব সেই চোখ জোড়ায় চোখ রেখে সুধোয়,, এনি থিং রং?
ভীড় করে থাকা অশ্রুকনা কপোল গড়িয়ে থুতনিতে এসে ঠেকলো। মাথা নিচু করলো সে।
তৃধার এমন আচরনে বেকুব বনে গেছে নুসাইব।এই প্রথম কোনো নারীর চোখের জলের কারন হতে হলো তাকে। ব্যাপারটাই যেন তাকে অপারাধীদের তালিকায় ফেলছে। ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে টিস্যু নিয়ে তৃধার সামনে ধরে বললো,, আ’ম স্যরি।
তৃধা নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। যার অর্থ সমস্যা নেই।
এইদিকে তমাল আর নবনী এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে। কাল সন্ধার পর দুই ভাই বোন যুক্তি করেছে সব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হবে। তাইতো নবনী আগেই রওনা দিয়েছে। তমাল বোনকে রিসিভ করে একসাথে বাড়ি এসে পৌঁছায়।তবে ঘটনার মুখোমুখি এতো তাড়াতাড়ি হবে সেটা জানতো না। দুই ভাইবোন এতক্ষণ যাবত একজন আরেকজনকে চিমটি দিতে দিতে হাত লাল করে ফেলেছে। দুইজনের মধ্যে কেউই চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। নুসাইবের টিস্যু নিয়ে ব্যাতিব্যাস্ত ভাব দেখে তৎক্ষণাৎ দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে উঠল,, “সখের নারী”!!
চলবে,,,
(ভুল গুলো শুধরে দিবেন।)