আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব-১০

0
78

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_10
#ইয়াসমিন_খন্দকার

ঈশিতা মন খারাপ করে বসে আছে রুমের মাঝে। একটুও ভালো লাগছে না তার কোন কিছুই। আজ আয়ুশের জন্মদিন উপলক্ষে পুরো বাড়ি জুড়ে বিরাট আয়োজন। অনেক নামীদামী গেস্টেরও আসার কথা। তবে এসবে মোটেই আগ্রহী নয় সে। জাহানারা বেগম ঈশিতাকে একটা ভাড়ী জামদানী শাড়ি দিয়েছে। এখন নাকি তাকে এটা পড়ে সবার সামনে যেতে হবে। ভেবেই তার কেমন লাগছে৷ শাড়িটা একবার হাতে নিয়ে বলে,”এই গরমে এত ভাড়ী শাড়ি! আর আমি তো শাড়িতে অভ্যস্তও নই।”

আয়ুশ সবেমাত্র রুমে প্রবেশ করল। ঈশিতার কথা তার কানে এসেছে। রুমে এসেই সে কাবার্ড থেকে নিজের জন্য একটা শার্ট বের করতে করতে বলে,”তোমার ইচ্ছা না হলে পড়ো না। এত রাগ করার কি আছে!”

ঈশিতা সব রাগ ঢাললো আয়ুশের উপর।

“আপনার মা আমায় কতবার করে পড়তে বলেছে। না পড়লে ব্যাপারটা কেমন দেখাবে ভেবে দেখেছেন?”

আয়ুশ বলল,”এতই যদি চিন্তা হয় তো পড়ো।”

ঈশিতা বলল,”হ্যাঁ, তাই তো করতে হবে। এই মিথ্যা বিয়ে নিয়ে যে আর কত নাটক হবে আমি জানি না।”

“আস্তে কথা বলো। কেউ শুনে ফেলবে।”

“শুনে ফেললে ফেলুক। আপনি নিজেই তো বলেছেন এই বিয়ের কোন মূল্য নেই৷ আমি এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর আমায় নিজের মতো ছেড়ে দিবেন।”

“হ্যাঁ, বলেছি। আর আমি ঠিক সেটাই করবো।”

“মনে থাকে যেন।”

“থাকবে।”

আয়ুশ মন খারাপ করে রুম থেকে বের হয়। এই মেয়ের মুড বোঝা বড় মুশকিল। কখনো নিজে থেকেই আয়ুশের জন্মদিনের আয়োজন করে আবার কখনো এমন আচরণ! মেয়েটা কেন তাকে এত দ্বিধায় রাখছে জানে না। হতাশার সুরে বলে,”তোমার এই দ্বিধা নিয়ে আমায় আর কতদিন বাঁচতে হবে আমি জানি না ঈশিতা।”

~~~~~~~~~~~
গতকালকের ঐ বিশ্রী ঘটনার পর থেকে ঐশীর মন ভীষণ খারাপ৷ গতকাল যেন জাহানারা বেগম ঐশীকে সুপষ্ট করে তার অবস্থানটা বুঝিয়ে দিয়েছে। এই ঘটনা ঐশীকে তার গণ্ডি বুঝিয়ে দিয়েছে। বিয়ের পর আয়ুশ আর তার মাঝে যে কত বড় পাচিল তৈরি হয়েছে সেটা বুঝতে আর বাকি নেই ঐশীর৷ তাই সেও পণ করে নিয়েছে দূরে থাকবে ঐ মানুষটার থেকে। যে তার জন্য এখন শুধুই এক বিভীষিকাময় নিষিদ্ধ পুরুষ।

ঐশী যখন নিজেদের রুমে বসে এসবই ভাবছিল তখনই তার রুমে এলেন গুলশেনারা বেগম। এসে ঐশীর পিঠে হাত রাখলেন। ঐশী নিজের অজান্তেই কখন চোখের কোণে অশ্রু জমিয়ে ফেলেছিল জানে না। দ্রুত সেই অশ্রুবিন্দু গুলো মুছে বলে,”কিছু বলবে দাদি?”

গুলশেনারা বেগম ঐশীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”এভাবে চোখের পানির মতো কি নিজের দুঃখো গুলোও মুছে ফেলতে পারবি তুই?”

ঐশী নিশ্চুপ। গুলশেনারা বেগম বলতে থাকেন,”গতকাল রাতের সব ঘটনা সম্পর্কে আমি অবগত। ঐ শাশুড়ী-বউ মিলে কি অমানবিক কাজটাই না করলো তোর সাথে। তুই এত কষ্ট করে আয়ুশের জন্য এত কিছু করলি অথচ ওরা সব প্রশংসা লুটে নিলো!”

“তুমি বড় আম্মুকে এই ব্যাপারে কিছু বলো নি তো?”

“বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বলিনি। ঐ মেয়েটা এই বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর যেভাবে আয়ুশ ওর কাছে আমাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করালো তাতে আমার আর ঝামেলা করার ইচ্ছা হয়নি। কিন্তু রাগ হয়েছে প্রচুর।”

“এই রাগটা গিলে ফেল দাদি। যেভাবে চলছে সেভাবেই সবটা চলতে দাও। আমি সবটা মেনে নিয়েছি। আয়ুশ ভাইয়া এখন আমার কাছে পরপুরুষ। আমার উচিৎ হয়নি তার জন্য কিছু করতে যাওয়া।”

“তুই কোন ভুল কাজ করিস নি ঐশী। কই ঈশিতা তো ওর বউ। ও তো কিছু করল না নিজের স্বামীর জন্য। অথচ তুই যখন করলি তখন সব সুনাম নিজের করে নিলো।”

ঐশী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,”এসব ব্যাপারে আর কথা না বাড়ানোই মঙ্গল দাদি। বাদ দাও এখন। আজ বাড়িতে কত মেহমান আসবে।”

“কথা ঘোরাস না। তুই যে আয়ুশকে কতোটা ভালোবাসিস আমি জানি। আল্লাহ যে কেন তোর সাথে এমন করল..”

“আল্লাহর প্রতি কোন অভিযোগ করো না দাদি। তিনি যা করেন বান্দার ভালোর জন্যই করেন। আমি মেনে নিয়েছি আয়ুশ ভাইয়া আমার জন্য মঙ্গলজনক ছিলেন না জন্যই আমি ওনাকে পাই নি।”

“তোর মতো বুঝ যদি সবার থাকতো।”

~~~~~~~~~~~~~~
জাহানারা বেগম এর উপহার দেওয়া ভারী শাড়িটাই পড়েছে ঈশিতা। যদিও এটা পড়ে তার চলতে ফিরতে অসুবিধা হচ্ছে তবুও সে নিজেকে সামলে নিচ্ছে। আজ পুরো বাড়ি মেহমানে গজগজ করছে। ইসমাইল হোসেনও এসেছেন। সাথে এসেছে তার হবু বউ৷ তাদের দিকে তাকাতেই ঈশিতার ভীষণ ঘৃণা অনুভূত হলো। ঈশিতার নিজের বাবাকে কোনকালেই বিশেষ পছন্দ ছিল না। মাই ছিল তার কাছে সব। মায়ের মৃত্যুর পর যে বাবার প্রতি ঘৃণার পরিমাণ চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েছে। ঈশিতা ওদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ঐশী আজ নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছে অসুস্থতার বাহানায়। আলতাফ তালুকদারকেও মনমরা লাগছে। গুলশেনারা বেগম এসব জন্মদিন পালন পছন্দ করেন না তাই তিনিও অনুপস্থিত। শুধুমাত্র জাহানারা বেগমকেই একমাত্র খুশি লাগছে। আয়ুশের মুখশ্রী দেখে অবশ্য বোঝার উপায় নেই তার মনে কি চলছে। তবে ঈশিতা খেয়াল করেছে কালো শার্টে বেশ ভালোই লাগছে ফর্সা সুদর্শন লোকটাকে। ঈশিতার পরনে নীল শাড়িটাও চোখ ধাধিয়ে দেয়ার মতো। আয়ুশ যে কতবার আড়চোখে তাকিয়েছে তার ইয়াত্তা নেই।

অনুষ্ঠান চলতে থাকে নিজের মতো। আয়ুশের কেক কা*টার সময় উপস্থিত হয়। এমন সময় হঠাৎ কেউ একজন বলে ওঠে,”আমাকে ছাড়াই কেক কা*টবা ব্রো? এটা কি ভাবে সম্ভব? ভুলে গেলে নাকি আমায়?”

জাহানারা বেগম হাসি মুখে এগিয়ে গিয়ে বললেন,”আরে নাহিদ তুই! তুই আসবি আমরা তো জানতাম না। ভাবি তো বলল তোর নাকি সামনে সেমিস্টার ফাইনাল এক্সাম আবার নাদিয়া এক্সাম শুরু হয়ে গেছে এজন্য তোরা আসতে পারবি না।”

“আসার তো কথা ছিল না কিন্তু না এসে পারলাম না। আমার আয়ুশ ভাইয়ার জন্মদিন বলে কথা।”

মুখে একথা বললেও নাহিদ মনে মনে জানে সে কেন এসেছে। সে মূলত এসেছে নিজের প্রেয়সীকে দেখে দুচোখের তৃষ্ণা নিবারণ করার জন্য। তার আঁখিযুগল খুঁজে চলেছে সেই শান্ত স্বভাবের শুভ্র পরিকে। তাকে না দেখলে যে তার চোখের তৃষ্ণা মিটবে না। এজন্য তো শত ব্যস্ততা ফেলে চলে এসেছে। কিন্তু তার চোখ আর শুভ্র পরিকে খুঁজে পেল না। ব্যথিত হলো মন। অতঃপর হেসে সবার উদ্দ্যেশ্যে বলল,”আমি কিন্তু একা আসিনি। আমার এক বন্ধুকে সাথে নিয়েছি। ও কিন্তু প্রথমে আসতেই চাইছিল না। আমি একপ্রকার জোর করেই ধরে বেঁধে এনেছি ওকে। ঠিক করিনি?”

জাহানারা বেগম বলেন,”একদম ঠিক করেছিস তুই? তা তোর সেই বন্ধু কোথায়।”

নাহিদ পিছন ফিরে ইশারা করে বলল,”তুই কি এখনো বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবি? আয় ভেতরে আয়।”

সাথে সাথেই ভেতরে চলে এলো শ্যামবর্ণের এক অতিব সুদর্শন যুবক। যাকে দেখেই ঈশিতা চরম বিস্মিত হলো। ছেলেটা এগিয়ে এসে জাহানারা বেগমকে সালাম দিলো। জাহানারা বেগম সালামের উত্তর দিয়ে বললেন,”এসো ভেতরে এসো।”

যুবকটি সামনে তাকাতেই ঈশিতার সাথে তার চোখাচোখি হয়ে যায়। ঈশিতার মতো সেও অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে ঈশিতার দিকে। দুজনের দৃষ্টি যেন আজ একই কথায় বলছে। ঈশিতা যেন আজ কোন কিছুর তোয়াক্কা করল না। এগিয়ে এসে যুবকটির একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে আপ্লুত কন্ঠে বলল,”কেমন আছ তামিম ভাই?”

to be continue….