আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব-১৩+১৪

0
81

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_13
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আজ ঈশিতার জীবনের এক অন্যতম বিশেষ দিন। আজকের ঘটনা হয়তো তার জীবনে অনেক বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে। আজ সে নিজের মাতৃভূমি ছেড়ে বিদেশের মাটিতে পা রাখতে চলেছে।

সকাল থেকেই নিজের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলো। লন্ডনে গিয়ে তামিমের মামার পরিবারের কাছে থাকবে ঈশিতা। তামিম সেই ব্যবস্থা করে ফেলেছে। এদিকে সকাল থেকে ঈশিতার দিন কাটছে বিষন্নতায়। আজ তো তার ভীষণ খুশি হওয়ার কথা ছিল। সে আজ তার স্বপ্নের দিকে পা বাড়াবে। কিন্তু কোন এক বিশেষ কারণে খুশি করতে পারছে না ঈশিতা। কারণটা কি তবে আয়ুশ? তাকে ছেড়ে যেতে কি কষ্ট হচ্ছে ঈশিতার। এটা সে জানে না। ছোটবেলায় মা বলত, বিয়ে এক অদ্ভুত সম্পর্ক। এক হালাল সম্পর্ক, যা দুটি হৃদয়কে একই সুতোয় বাধে। তবে কি সেই সম্পর্কের বাধনে আটকা পড়ে গেলো ঈশিতা। না, ঈশিতাকে এখন এসব ভাবলে চলবে না। এখন তার একটাই উদ্দ্যেশ্য, নিজের আর নিজের মায়ের স্বপ্ন পূরণ করা। অন্য কোন কিছু নিয়ে মাথা ঘামাবে না সে।

ঈশিতা আজ সকালে আবার এলো জাহানারা বেগমের সাথে দেখা করতে। জাহানারা বেগম প্রথমে তো ঈশিতার সাথে কথা বলতে চাইলেন না। তাকে এড়িয়ে যেতে চাইলেন কিন্তু পরে ঠিকই ঈশিতাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো করে বলতে লাগলেন,”লন্ডনে না গেলে তোমার হয়না মা? তুমি তো চাইলে এখান থেকেই পড়াশোনা করতে পার। আমার সংসারটা এভাবে ভাসিয়ে দিয়ে যেও না তুমি। আমার এই অনুরোধটা রাখো।”

ঈশিতার ভীষণ খারাপ লাগলো জাহানারা বেগমের মুখে এমন কথা শুনে। বিবেকের কাছে কি তবে এবার সে প্রশ্নের সম্মুখীন। একবার তার মনে চিন্তা এলো জাহানারা বেগমের কথাটা মেনে নেওয়ার৷ কিন্তু পরোক্ষণেই সে নিজেই নিজেকে ধমকে বোঝালো। তার কাছে আগে তার স্বপ্ন এরপর বাকি কিছু। ঈশিতা জাহানারা বেগমের কাছে আশ্বাস দিয়ে বললেন,”আপনি একদম চিন্তা করবেন না মা। আমি আপনার সংসার ভাসিয়ে দিয়ে কোথাও যাচ্ছি না। আমি আবার ফিরবো। নিজের পড়াশোনা শেষ করে আবার ফিরব এখানে। এই আমি আপনাকে কথা দিলাম।”

জাহানারা বেগম বিষন্নতায় মগ্ন হলেন। তিনি ভেবেছিলেন ঈশিতা তার সিদ্ধান্ত থেকে সড়ে আসবে। কিন্তু এই মেয়ে তো নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। তাই তিনিও আর কিছু বললেন না।

ঈশিতা উঠে চলে এলো নিজের রুমে। আয়ুশ সেখানে ঈশিতার জন্য অপেক্ষা করছিল। ঈশিতা আসতেই আর বললো,”তোমাকে কাল যে ডিভোর্স পেপারসটা দিয়েছিলাম সেটা কোথায়?”

ঈশিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,”এখন এসব নিয়ে কিছু বলতে চাইছি না। আমি বিদেশ থেকে ফেরার পর এই নিয়ে কথা বলবো।”

“কিন্তু…”

“কোন কিন্তু নয়।”

আয়ুশ আর কথা বাড়ালো না।

~~~~~~~~~~
যাওয়ার আগে পুরো তালুকদার বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো ঈশিতা। এমনি ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয়ে গেল ঐশীর সাথে। ক্রাচে ভড় দিয়ে ঈশিতার সম্মুখে এসে দাঁড়িয়ে আছে সে। ঈশিতা ঐশীকে পাশ কা*টিয়ে যাওয়ার সময় ঐশী বলে উঠল,”এভাবে আয়ুশ ভাইয়াকে ঝুলিয়ে রেখে যাচ্ছ কেন তুমি?”

ঈশিতা থামলো। ঐশীর উদ্দ্যেশ্যে বললো,”ঝুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছি মানে?”

“দুঃখিত, গতকাল রাতে আমি তোমার আর আয়ুশ ভাইয়ার কথোপকথন শুনে ফেলেছিলাম। তোমাদের এই বিয়েটা তো একটা শর্ত ছিল তাই না? তুমি তো কখনো এসব সংসার করতে চাওনি। তোমার ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করার। আয়ুশ ভাইয়া তো তোমাকে সেই সুযোগ করে দিলো। গতকাল তোমার হাতে ডিভোর্স পেপারস ও তুলে দিলো৷ তো তুমি কেন আয়ুশ ভাইয়াকে মুক্তি দিলে না? কি চাও তুমি? আয়ুশ ভাইয়া আজীবন তোমার অপেক্ষায় বসে থাকুক?”

ঈশিতা লম্বা শ্বাস টেনে বললো,”এটা আমাদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার। এর মাঝে তুমি না ঢুকলেই বোধহয় ভালো হবে। আর একটা কথা, আমি তোমার আয়ুশ ভাইয়াকে ঝুলিয়ে রেখে কোথাও যাচ্ছি না। আমাদের বিয়ে হয়েছে, সংসারটা এখনো হয়নি সেভাবে। তবে তার মানে এই না যে, কখনো হবে না। আমি আবার ফিরবো আমার সংসারে। আগে নিজের স্বপ্নটা পূরণ করি তারপর ভাববো সংসার নিয়ে!”

“তোমার মনে হচ্ছেনা তুমি ভীষণ স্বার্থপরতা করছ?”

“পৃথিবীর সকল মানুষই স্বার্থপর। আমিও তাদের বাইরে নই। নিঃস্বার্থ কেউ হতে পারে না। যারা পারে তারা মহামানুষ। তবে আমি বা তুমি কেউ সেই মহাপুরুষের তালিকায় পড়ি না।”

বলেই ঈশিতা চলে গেলো। ঐশী ঈশিতার বলা শেষ কথাটা ভাবতে লাগলো। কি বোঝাতে চাইল মেয়েটা? ঐশী স্বার্থপর?! ঐশী একটু ভাবল, আসলেই তো ব্যাপারটা তাই। এতদিন ঐশী আয়ুশের থেকে দূরে থেকেছে কারণ সে ভেবেছে আয়ুশ ঈশিতার সাথে সুখে আসে। তারা একে অপরকে ভালোবাসে। কিন্তু এখন যখন ঐশী সত্যিটা জানতে পেরেছে তখন তার মনে নতুন করে আশারা দানা বেঁধেছে আয়ুশকে নিয়ে। ভীষণ স্বার্থপর হতে মন চাইছে। তার মন তাকে বলছে,”কার জন্য স্বার্থ ত্যাগ করবি তুই? যেই আয়ুশের কথা ভেবে তুই সরে এসেছিলি সেই আয়ুশই তো এই বিয়েটা করে সুখে নেই। তোর আয়ুশ ভাইয়া এখনো সম্পূর্ণরূপে ঐ মেয়ের হয়ে যায়নি। কারণ ওদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তাই এখনো তোর সুযোগ আছে আয়ুশকে নিজের করে নেওয়ার।”

আর ব্যস, এমন ভাবনায় কাবু হয়ে পড়েছে ঐশী। ঈশিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,”আর ফিরো না তুমি ঈশিতা। তুমি আয়ুশ ভাইয়াকে সুখী করতে পারবে না। আয়ুশ ভাইয়াকে কেবল আমিই সুখী করতে পারব। আর কেউ পারবে না, কেউ না। আল্লাহ, তুমি দেখো ঈশিতা যেন আর না ফেরে। আর যেন না ফেরে ও। জীবন বারবার সুযোগ দেয় না। কিন্তু আমাকে যখন একবার সেই সুযোগ দিয়েছে তখন আমি সেই সুযোগ লুফে নিতে চাই।”

~~~~~~
ঈশিতাকে নিয়ে ঢাকা শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়েছে আয়ুশ। তাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিলো। ঈশিতার ফ্লাইটের সময় হয়ে এলো। আয়ুশ বললো,”যাও এবার।”

ঈশিতা হঠাৎ করে একটা অদ্ভুত কাণ্ড করে বসলো। আয়ুশকে জড়িয়ে ধরে বললো,”আমার জন্য একটু অপেক্ষা করবেন প্লিজ। আমি আবার ফিরবো আপনার কাছে। দয়া করে আমি না ফেরা পর্যন্ত অন্য কাউকে নিজের জীবনে আসতে দেবেন না।”

আয়ুশ হতবাক। বরফের মতো জমে রইলো৷ ঈশিতা আয়ুশকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো ফ্লাইটের দিকে। আর আয়ুশ তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার পানে। হঠাৎ আয়ুশের ঠোঁটে অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠল।

.
ঈশিতা এসে বসলো ফ্লাইটে তার বরাদ্দ আসনটি। তার সামনের আসনটিতে একটা ভীষণ কিউট বাচ্চা বসে৷ ঈশিতা বাচ্চাটির গাল টিপে দিয়ে বললো,”তোমার নাম কি বাবু?”

বাচ্চাটা বেশ গম্ভীর প্রকৃতির মনে হলো। বয়স আনুমানিক ৩-৪ বছর হবে। গাল ফুলিয়ে বলল,”আমার নাম পোহোর চোধুরি”

ঈশিতা হেসে বললো,”প্রহর চৌধুরী?”

বাচ্চাটা মাথা নাড়ালো। এমন সময় একজন মহিলা এসে বসলো বাচ্চাটির পাশে৷ ঈশিতার দিকে তাকিয়ে মহিলাটি সামান্য হেসে বললো,”ও আপনাকে বিরক্ত করে নি তো?”

“আরে না, না৷ আমিই তো ওকে বিরক্ত করলাম।”

মহিলাটি বললো,”আপনাকে দেখে তো মনে হয়না খুব বেশি বয়স। একা একা যাচ্ছেন?”

“জ্বি, বিদেশে পড়তে যাচ্ছি।”

“আপনার নাম?”

“ঈশিতা। আপনার?”

“আমার নাম, প্রণালী।”

হেসে কথাটা বললো সে। এমন সময় প্রণালীর পাশের সিটটিতে এসে বসলো তার স্বামী সমুদ্র চৌধুরী। সে এসেই প্রহরের গাল টিপে বললো,”আমার বাবাই কেমন আছে এখন?”

প্রহর বললো,”বালো।”

ঈশিতা প্রণালীদের প্রশ্ন করলো,”আপনারা লন্ডনে কেন যাচ্ছেন?”

প্রণালী বলল,”আমার শাশুড়ী পুষ্পা চৌধুরী লন্ডনে চিকিৎসাধীন আছেন। ওনার সাথেই দেখা করতে যাচ্ছি।”

“ওহ আচ্ছা।”

এভাবে টুকিটাকি কথা চলতে থাকে।

to be continue…..

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_14
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আয়ুশ বাড়িতে ফিরতেই দেখতে পায় বাড়িতে যেন কুরুক্ষেত্র বেঁধেছে। গুলশেনারা বেগম একটু আগেই হজ থেকে ফিরেছেন। আর ইতিমধ্যেই তিনি ঈশিতার দেশ ত্যাগ করে বিদেশে গিয়ে পড়াশোনার ব্যাপারে জেনে গেছেন। গোঁড়া, রক্ষণশীল ঘরানার গুলশেনারা বেগম এটা কিছুতেই মানতে পারছেন না৷ বাড়িতে এসে এসব শুনে তিনি জাহানারা বেগমের উপর চেচাচ্ছেন। রেগে রেগে বলছেন,”কেমন মেয়েকে নিজের ছেলের বউ করে এনেছ তুমি? বাড়ির বউ ডেংডেং করে বিদেশে পড়তে চলে গেল। আমার মাথা কাজ করছে না। এতগুলো দিন মেয়েটা স্বামীর থেকে দূরে থাকবে ওর চরিত্র ধরে রাখতে পারবে তো? আর সবথেকে বড় কথা স্বামীর হক তো আদায় হবে না। এই অনাচার আমি কিছুতেই মেনে নিব না।”

আয়ুশ তার দাদির সমস্ত কথাই শুনেছে। সে এগিয়ে এসে বলে,”আমার এতে কোন অসুবিধা নেই দাদি। আমার ঈশিতার উপর পূর্ণ সমর্থন আছে। ও আগে নিজের ক্যারিয়ার গড়ুক তারপর আমাদের সংসার নিয়ে ভাবা যাবে।”

গুলশেনারা বেগম বলেন,”ঐ মেয়ে কি তোকে যাদুবিদ্যা দিয়ে বশ করল নাকি আয়ুশ? তুই এ কেমন অবিবেচকের মতো কথা বলছিস? না, অনেক হয়েছে। আমার সংসারে আমি এসব কোন ধরনের কোন অনাচার মানব না। ঐ মেয়ে গেছে তো ন্যাটা চুকে গেছে। এমনিতেও ঐ মেয়েকে বাড়ির বউ হিসেবে আমার একেবারেই পছন্দ ছিল না। এবার আমি একটা ভালো মেয়ে দেখে আয়ুশের বিয়ে দিব।”

আয়ুশ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়,”আমি মনেপ্রাণে ঈশিতাকে আমার স্ত্রী মানি। ওকে ছাড়া আর অন্য কাউকে আমার স্ত্রী বলে মানবো না।”

আলতাফ তালুকদার সবেমাত্র বাড়িতে এলেন। ছেলের কথায় তিনি রেগে গিয়ে আয়ুশের গালে চ*ড় বসিয়ে দিয়ে বললেন,”বেয়াদব! এতদিন ধরে তোমার অনেক বেয়াদবি সহ্য করেছি কিন্তু আর নয়৷ এবার তোমাকে আমাদের কথা শুনতেই হবে৷ ঐ ঈশিতাকে আমরা আর এই বাড়ির বউ বলে মানি না।””

জাহানারা বেগম অসহায় হয়ে সব দেখছেন। তার যে এখন কিছুই করার নেই। এই ভয়টাই তো তিনি পাচ্ছিলেন৷ তার সব রাগ এখন ঈশিতার উপর। ঐ মেয়েটার জন্যই সবকিছু এমন এলোমেলো হয়ে গেল। একটা সাজানো সংসার ফেলে উনি গেলেন ক্যারিয়ার ঠিক করতে। এখন তো এই সংসার টিকে থাকার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই।

কথায় আছে কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ। এই কথাটা যেন আবার সত্য প্রমাণিত হলো। এতকিছুর মাঝেও ঐশীর কাছে সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে। মুখোশ খুলে বাইরে আসছে তার আসল রূপ। ঐশী মনে মনে বলে,”এবার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমি আয়ুশ ভাইয়াকে নিজের করে নেব। আয়ুশ ভাইয়া তো ঈশিতাকে কখনো স্পর্শ পর্যন্ত করেনি, ওদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর কিছুই হয়নি। আয়ুশ ভাইয়া এবার শুধু আমার হবে শুধুই আমার।”

এসব কথা ভেবেই হাসল ঐশী। এখন তার একটাই কাজ। যেকোন মূল্যে আয়ুশকে নিজের দিকে প্ররোচিত করা। তাহলেই ষোলকলা পূর্ণ হবে। সফল হবে তার পরিকল্পনা।
~~~~~~~~~~~~
ঈশিতা লন্ডনে এসে সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। যদিওবা এসব করতে তার অনেক সময় লাগছে৷ তবে তামিমের মামা এবং মামি ভীষণ ভালো মানসিকতার। তাদের সাথে মানিয়ে নিতে ঈশিতার মোটেও সমস্যা হচ্ছে না বরং ভালোই লাগছে অনেক। তবে লন্ডন শহরে মানিয়ে নেয়া তার জন্য কষ্টকর। গ্রামে বড় হয়ে ওঠা এক সাধারণ মেয়ের কাছে এত অত্যাধুনিক শহরে থাকার অভিজ্ঞতা একেবারেই ভিন্ন। ঈশিতা তো ভেবে পাচ্ছে না এই শহরে নিজেকে কিভাবে মানিয়ে নেবে। আদৌ পারবে তো?

এরমাঝে তার ফোনে এলো জাহানারা বেগমের কল। ফোনটা রিসিভ করতেই জাহানারা বেগম ঈশিতাকে ভৎসনা করে বলল,”লোভী, স্বার্থপর মেয়ে। তোমার জন্য আমার সংসার টা ভেসে যেতে বসেছে। তুমি তো আমার সংসারে অলক্ষী হয়ে এসেছিলে আর আমি তোমায় মাথায় তুলেছিলাম। তোমার কখনো ভালো হবে না দেখে নিও। আমার ছেলেটাকে কষ্ট দিয়ে তুমি সুখী হতে পারবে না।”

বলেই তিনি ফোন রেখে দেন৷ ঈশিতা কিছু বুঝে উঠতে পারে না। কিছু বলারও সুযোগ পায় না। জাহানারা বেগমের থেকে এমন কিছু আশা করেনি সে। মহিলাটা তাকে কতই না ভালোবাসত। ঈশিতা এরপর আয়ুশকে ফোন করল। আয়ুশ ফোনটা রিসিভ করতেই ঈশিতা জিজ্ঞেস করল,”কেমন আছেন আপনি? ওদিকের পরিস্থিতি ঠিকঠাক তো?”

“আমি ভালোই আছি। আর এখানকার পরিস্থিতিও ভালো৷ তুমি বলো ওখানকার কি অবস্থা? লন্ডনে কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো?”

“না, এদিকেও সব ঠিক আছে।”

“বেশ, তবে আর কি। তুমি নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করো৷ এটাই তো চেয়েছিলে তুমি। যা চেয়েছ তাই পেয়েছ। এখন তুমি নিশ্চয়ই অনেক খুশি।”

“এভাবে বলছেন কেন?”

“তো কিভাবে বলব?”

ঈশিতার ভীষণ খারাপ লাগলো। আবেগের বশে বলল,
“আমার কাজগুলো কি ভীষণ স্বার্থপর ছিল?)”

“এই প্রশ্ন তুমি আমাকে না করে নিজেকে করো উত্তর পেয়ে যাবে।”

ঈশিতা স্তব্ধ।

“আপনারা আমায় ভুল বুঝছেন।”

“কেউ তোমায় ভুল বুঝছে না। তুমি নিজের মতো থাকো। মনে করো, তুমি বিদেশে যাওয়ার পর থেকে আমাদের রাস্তা আলাদা হয়ে গেছে।”

“এমন করে বলবেন না।”

“আমি না বললেই বাস্তবতা বদলাবে না ঈশিতা। তুমি তো কখনো আমার সাথে সংসার করতে চাও নি। আর আল্লাহ হয়তো তোমার সেই চাওয়াটাই পূর্ণ করতে চলেছেন।”

“আপনি একদম এমন ভাবে বলবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“হয়তো।”

“আমি ফিরবো, আমার জন্য একটু অপেক্ষা করবেন।”

“কত বছর অপেক্ষা করব? আজীবন?”

“এমন বলবেন না।”

এপর্যায়ে ধৈর্য হারালো আয়ুশ। রেগে বললো,”তো কিভাবে বলবো? আর কোন ভাষায় কথা শুনতে চাও তুমি? তুমি কি মনে করো সবকিছু এতটাই সহজ? তুমি যেভাবে চাইবে সেভাবেই সব হবে? দুনিয়াটা তোমার মর্জি মতো চলবে না ঈশিতা। তোমার জন্য আজ আমার বাবা প্রথমবার আমার গায়ে হাত তুলেছে, আমাদের সংসারে অশান্তি হচ্ছে শুধু তোমার জন্য। আমি এত সবকিছু মেনে নিতে পারছি না। আমার এবার মুক্তি চাই এসব থেকে।”

“মুক্তি?”

“হ্যাঁ, মুক্তি। তুমি নিজের জীবন নিজের মতো গুছিয়ে নাও। আমি এভাবে দ্বিধা নিয়ে বাঁচতে পারবো না আজীবন। আমার শান্তি চাই।”

ঈশিতা স্তব্ধ, বিমূর্ষ। তবে সে হার মানবে না। আয়ুশকে বলল,”আমি জানি, আপনি মুখে যাই বলুন আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করবেন। আমি সেই আশাতেই রইলাম। আজ থেকে ঠিক ৫ বছর পর আমি দেশে ফিরবো। আপনাকে আমার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে মিস্টার আয়ুশ, করতেই হবে।”

বলেই ঈশিতা ফোন রেখে দেয়। আয়ুশ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে বিছানায়। তার কিছু ভালো লাগছে না। সবকিছু এলোমেলো লাগছে। জড়িয়ে যাচ্ছে সবকিছু।

~~~~~~~~~~~
ঐশী ঈশিতাকে ফোন দিলো। ঈশিতা ফোন রিসিভ করতেই ঐশী বলল,”তুমি এত স্বার্থপরতা কেন করছ ঈশিতা? কেন আয়ুশ ভাইয়াকে এত দ্বিধায় রাখছ? তোমার সমস্যাটা কি? আয়ুশ ভাইয়াকে সুখী হতে দিতে চাও না তুমি?”

“তোমায় এসব বলতে বাধ্য নই।”

“তুমি একটা লোভী, স্বার্থপর মেয়ে। যে নিজের ছাড়া কারো কথা ভাবো নি। আয়ুশ ভাইয়ার কথা তো নাই৷ তোমার সাথে এই পৃথিবীর কোন পুরুষই সুখী হবে না। তুমি এক অভিশপ্ত নারী। বিদেশে গেছ, তোমার চরিত্র আর কয়দিন ঠিক থাকবে? তখন কি তোমার মতো দুশ্চরিত্রাকে আয়ুশ ভাইয়া নিজের বউ হিসেবে মানবে? নাকি আমরা তোমায় তালুকদার বাড়ির বউ মানব?”

“আমার চরিত্র হেফাজত করার দায়িত্ব আমার। এই নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। এটাই প্রথমবার জন্য আমি কিছু বললাম না। কিন্তু এরপর আমার সম্মন্ধে এমন কিছু বললে আমিও কিন্তু ছেড়ে কথা বলবো না।”
to be continue…..