আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব-১৫+১৬

0
86

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_15
#ইয়াসমিন_খন্দকার

ঈশিতা লন্ডনে থেকে নিজের পড়াশোনায় ফোকাস করে। তার লক্ষ্য এখন একজন ভালো ডাক্তার হওয়া। তবে সে নিয়মিত আয়ুশের সাথে কল দিয়ে তার খোঁজ খবর নেয়। আয়ুশকে বারংবার বলে তার জন্য অপেক্ষা করতে। আয়ুশও ঈশিতার সামনে এই বিষয়ে কম কথা বলার চেষ্টা করে। এদিকে ঐশী বুঝতে পারে আয়ুশ ঈশিতাকেই ভালোবাসে এবং তার সাথেই সংসার করতে চায়৷ তাই ঐশীর মনে আয়ুশকে নিজের করে নেবার ভাবনা ঘোরাফেরা করলেও সে নিজেকে সামলে নেয়। জোর করে কারো ভালোবাসা পাওয়া যায়না এটা ঐশী খুব ভালো করেই জানে৷ তবে সে হাল ছাড়ে না৷ ঐশী শুধু অপেক্ষা করতে থাকে যে কবে আয়ুশের মন থেকে ঈশিতা মুছে যাবে এবং সে সেই স্থান পূরণ করতে পারবে। তবে আয়ুশের মনে ঈশিতা ছাড়া যেন আর কোন ভাবনাই নেই।

ঐশী তাই তো একদিন অবলীলায় আয়ুশকে কল্পনা করে বলে,”তোমার মনে বা জীবনে কি আমি কখনো ঠাঁই পাবো না আয়ুশ ভাইয়া? সবসময় এভাবেই থাকতে হবে? আমি যে, #তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি আয়ুশ ভাইয়া!”

৫ বছর পর❞

তালুকদার বাড়ির মধ্যে দিয়ে অনেক হাওয়া বয়ে গেছে। এই ৫ বছরে পরিস্থিতি বদলেছে অনেক। গুলশেনারা বেগম এখন অনেকটাই শয্যাশায়ী হয়ে গেছেন। সাংসারিক ব্যাপারে এখন আর তার কোন আগ্রহ নেই। আলতাফ তালুকদারও বয়সের ভাড়ে নুইয়ে গেছেন। এখন তিনি ব্যবসার দায়িত্ব আয়ুশের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। আয়ুশও নিজের চাকরি সামলে ব্যবসায় যতটা পারছে সময় দিচ্ছে।

ঐশীর জীবন যেন এক যায়গায় আটকে আছে৷ এখনো সে আয়ুশের প্রতীক্ষায় বসে আছে। পড়াশোনা শেষ করে এখনো সে অবিবাহিত বসে আছে আয়ুশের জন্য। আয়ুশকে পাওয়ার জন্য কখনো কোন কূটনীতিও অবলম্বন করে নি। শুধু তার জন্য প্রতীক্ষা করে গেছে৷ ঐশীর দৃঢ় বিশ্বাস একসময় আয়ুশ তার প্রতি সদয় হবে৷ কিন্তু এই ৫ বছরে অন্তত সেটা হয়নি। এদিকে জাহানারা বেগম এখন সংসারের সর্বময়ী কর্ত্রী। এখন তিনি অজানা কারণে ঐশীর বিয়ে দিতে উদ্যত হয়েছেন। তিনি চাইছেন ঐশী বিয়ে করে নিক। নিজ উদ্যেগে ঐশীর জন্য ছেলেও দেখছেন। যদিওবা ঐশী সব ছেলেকেই কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জাহানারা বেগম যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছে তখন যে তিনি ঐশীর বিয়ে দেবেনই এটা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

আজ ঐশী গুলশেনারা বেগমের পাশে বসে তাকে কোরআন পাঠ করে শোনাচ্ছে৷ ঐশীর সুমিষ্ট কণ্ঠে কোরআন পাঠ শুনে গুলশেনারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকেন। ঐশীর কোরআন পাঠ শেষ করার পর গুলশেনারা বেগম বলে ওঠেন,”তোকে কিছু বলতে চাই ঐশী।”

“জ্বি, দাদি। বলো।”

“তুই আর ক’দিন এমন সন্ন্যাসিনীর মতো জীবন-যাপন করবি? এবার একটু নিজের কথা ভাব। একটা ভালো ছেলে দেখে…”

“এটা সম্ভব নয় দাদি।”

“কেন সম্ভব নয়? আয়ুশের অপেক্ষায় আর কতদিন বসে থাকবি তুই? এতদিনেও কি বুঝিস নি যে আয়ুশ তোর হবার নয়?”

ঐশী নিশ্চুপ থাকে। অনেকক্ষণ চুপ থেকে তারপর বলে,”মন থেকে কিছু চাইলে আল্লাহ সেই ইচ্ছা অবশ্যই পূরণ করে। ”

“তুই ভুল করছিস ঐশী। দ্বিধার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছিস তুই। শেষে দেখবি তোর জীবন শূণ্যতায় ভরে যাবে।”

“আমি শূণ্যতার সাথেই মানিয়ে নেব। তবু আয়ুশ ভাইয়া ছাড়া অন্য কারো সাথে আমি সংসার…এটা আমি ভাবতেও পারি না দাদি। আর আমার চিন্তায় অন্যায় কি? আমি তো কখনোই জোরপূর্বক আয়ুশ ভাইয়ার জীবনে প্রবেশ করতে চাইনি। শুধু অপেক্ষা করে গেছি যেটা প্রয়োজনে আজীবন করে যাব।”

“জানি না, আল্লাহ তোকে কতটা ধৈর্য দিয়ে এই দুনিয়ায় প্রেরণ করেছে। তবে আমার পরামর্শ এটাই, এই দ্বিধার জীবন তুই ছেড়ে দে। এটা মেনে নে যে, আয়ুশ তোর হবার নয়।”

“যদি আয়ুশ ভাইয়ার না হই তো ঠিক আছে কিন্তু অন্য কারোরও হবো না আমি।”

ঐশীর এহেন জেদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে নেন গুলশেনারা বেগম। এমনিতেও এখন তার জীবনের শেষ সময় চলছে। তাই এখন আর তিনি এসব দুনিয়াবি বিষয়ে চিন্তা করতে চান না। আগে আয়ুশ-ঈশিতা এসব নিয়ে কথা বললেও এখন এসব আর করেন না। সংসারের বিষয়েও মাথা ঘামান না। শেষ জীবনটা আল্লাহর আরাধনা করেই কাটাতে চান তিনি৷ তবে ঐশীকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই। সে যে তার ছেলের রেখে যাওয়া আলামত। তাই নিজে বেঁচে থাকতে ঐশীর একটা ব্যবস্থা না করে গেলে মৃত্যুর পর কিভাবে নিজের ছোট ছেলে আর বৌমার মুখোমুখি হবেন? এই চিন্তাই তাকে কুড়ে কুড়ে খায় প্রতিটা মুহুর্তে। তাই তো তিনি আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত ঐশীর সুবুদ্ধি চেয়ে দোয়া করেন। তিনি চান মেয়েটার ভাগ্যে যেন এক পশলা সুখের আগমন হয়।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
জাহানারা বেগম আজ নিজের হাতে রান্না করছেন। তাও হরেক রকমের পদ। তাকে এত সব রান্নায় ব্যস্ত দেখে আয়ুশ প্রশ্ন করে,”আজ হঠাৎ এত স্পেশাল আয়োজন কেন মা? কোন স্পেশাল কিছু কি আছে?”

জাহানারা বেগম বলেন,”তেমন কিছু না। যাইহোক, কাল রাতে আমার ঈশিতার সাথে কথা হলো। তুই নাকি এক সপ্তাহ থেকে ওর সাথে কথা বলছিস না। এসবের কারণ কি আয়ুশ? মেয়েটার সাথে এমন করছিস কেন? ও তোকে কত ভালোবাসে, এত দূর বিদেশে গিয়েও তোকে ভুলে যায়নি৷ আর তুই এমন করছিস?”

“ঈশিতার কিছু সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিতে পারিনি মা। ও লন্ডনে নিজের এত সুন্দর ক্যারিয়ার ছেড়ে দেশে ফিরতে চায়। এটা কি ঠিক বলো?”

“কেন ঠিক নয়? ও কি আজীবন বিদেশে পড়ে থাকবে? এদেশে থেকেও তো ভালো কিছু করা যায়। ও এসে এবার সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিক। আমি আর কতদিন একা হাতে সবটা সামলাবো?”

আয়ুশ প্রতিত্তোরে কিছু বলল না৷ জাহানারা বেগম রান্না করতে করতে মনে মনে বললেন,”ঈশিতাকে ফিরতেই হতো। ঐ ঐশীর ব্যবহার আমার মোটেই সুবিধার লাগছে না। এতদিন ধরে ওর বিয়ে দেবার চেষ্টা করছি কিন্তু বিয়ে করছে না, নিশ্চয়ই আমার ছেলের ঘাড়ে ঝুলে বসার পরিকল্পনা নিয়ে আছে। এটা আমি কিছুতেই হতে দেব না। সেজন্য ঈশিতাকে তো ফিরতে হতোই।”

হঠাৎ বাড়ির কলিং বেল বেজে ওঠে। ঐশী ড্রয়িংরুমে থাকায় সে শুনতে পেয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। বিস্ময়ের সুরে বলল,”তুমি?!”

ঈশিতা হেসে বললো,”হ্যাঁ, আমি। আবার ফিরে এলাম নিজের সংসারে। নিজের স্বামীর কাছে।”

ঐশীকে পাশ কা’টিয়ে ঈশিতা তালুকদার বাড়িতে প্রবেশ করে। জাহানারা বেগম রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে বললেন,”কে এলো রে?”

ঈশিতাকে দেখেই তিনি খুশি হয়ে বললেন,”তুমি এসে গেছ ঈশিতা? এসো, এসো। তোমার জন্যই তো এত আয়োজন করছি।”

ঐশী বলল,”বড় আম্মু তুমি কি জানতে ঐশী আজ ফিরবে? তাহলে আমাদের বলো নি কেন?”

জাহানারা বেগম দায়সারা ভাবে বলেন,”বলার প্রয়োজন মনে করিনি তাই।”

ঐশীর মুখ থমথমে হয়ে যায়।
ঈশিতা বলে,”আরে না,আমি চেয়েছিলাম সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে। এইজন্য মাকে নিষেধ করেছিলাম সবাইকে জানাতে। মা, ও কোথায়?”

“ও মানে আয়ুশ? ও তো ওর রুমে। যাও গিয়ে ওকে অবাক করে দাও।”

ঈশিতা আয়ুশের রুমের দিকে পা বাড়ায়। ঐশী ঈশিতার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। জাহানারা বেগম বলেন,”যাক, এতদিনে আমার বাড়ির বউ বাড়িতে ফিরল। এখন আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারব। চারিদিকে যা চিল শকুনের নজর আমার ছেলের দিকে।”

ঐশী বুঝল কথাটা তাকে উদ্দ্যেশ্য করেই বলা। তবে সে কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না।

ঈশিতা গিয়ে দাঁড়ালো আয়ুশের দরজার সামনে। দরজায় নক করার কিছুক্ষণ পর আয়ুশ দরজা খুলে ঈশিতাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে গেল। ঈশিতা হেসে বললো,”সারপ্রাইজড!”

আয়ুশকে প্রথমে খুশি লাগলেও হঠাৎ তার মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। রেগে সে ঈশিতার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো। ঈশিতা স্তব্ধ। আয়ুশ চিৎকার করে বললো,”কেন এসেছ এখানে তুমি? লন্ডনে ফিরে যাও আবার। তোমাকে আমি চাই না!”

to be continue…..

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_16
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আয়ু্শ যে ঈশিতাকে চায়না এই কথাটা ঈশিতা মেনে নিতে পারছে না। ঈশিতার মুখে আধার নেমে এলো। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো নোনাজল। অভিমান ভরা কন্ঠে ঈশিতা বলে উঠল,”আমার সাথে এমন করছেন কেন আয়ুশ? এক সপ্তাহ থেকে আমার সাথে কোন কথা বলছেন না। আমাকে এড়িয়ে চলছেন। আজ ভেবেছিলাম আমাকে দেখে ভীষণ খুশি হবেন কিন্তু আপনি এমন ব্যবহার করছেন। আমি কি জানতে পারি আমার দোষটা কোথায়?”

আয়ুশ নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টায় রত হয়। ধীর গলায় বলে,”আমি কোন কথা বাড়াতে চাইছি না। তুমি যাও এখান থেকে। তোমার উপস্থিতি আমার সহ্য হচ্ছে না।”

“যাবো না, আমি। এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব।”

আয়ুশ রেগে দরজা খুলে বের হয়। ঈশিতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঈশিতার হাত ধরে তাকে দূরে নিয়ে গিয়ে বলে,”তোমায় আমি বলেছিলাম না, তোমায় আর দেশে ফিরতে হবে না। তাহলে কেন ফিরলে তুমি? আমাকে শান্তিতে থাকতে দেখে তোমার ভালো লাগছিল না বুঝি? এই জন্য আমার লাইফটা হেল করতে চলে এসেছ।”

“আপনি এমন ভাবে কথা বলছেন কেন আয়ুশ?”

“তুমি জানোনা কিছু? আর কত নাটক করবে তুমি? পাঁচ বছর ধরে আমার সাথে অনেক নাটক করেছ। আমি বোকা ছিলাম তাই তোমার নাটকগুলো সত্য ভেবেছিলাম তবে এখন আমার চোখ খুলে গেছে। তোমায় আর নিজের ত্রীসীমানায় দেখতে ইচ্ছা করছে না। তোমায় স্পর্শ করতেও আমার ঘৃণা লাগছে বিশ্বাস করো। যাইহোক, তুমি এসেছ এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। আইনত এবং সামাজিক মতে তুমি এখনো আমার স্ত্রী। এই সম্পর্কটার জন্যই তোমার এখনো অধিকার আছে আমার জীবনে। তবে এই অধিকার আর থাকবে না। এবার আমি তোমাকেও মুক্তি দেব আর নিজেও এই ছেলেখেলার বিয়ে থেকে মুক্তি পাবো। নিজের জীবন নতুন করে শুরু করতে পারব।”

“এসব কি যা তা কথা বলছেন আপনি আয়ুশ? কেন করছেন এমন?”

আয়ুশ ঈশিতার কথার কোন উত্তর না দিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। ঈশিতা আয়ুশকে ডাকতে থাকে কিন্তু সে কোন সাড়া দেয় না। ঈশিতা সেখানে বসেই কাঁদতে থাকে। আয়ুশ দূর থেকে ঈশিতাকে কাঁদতে দেখে। তার ইচ্ছা হয় কাছে এসে ঈশিতাকে জড়িয়ে ধরে তাকে সামলাতে কিন্তু সে নিজেকে দমিয়ে রাখে। আয়ুশ দ্রুত নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে সেও ওখানেই বসে পড়ে। এতক্ষণ অনেক কষ্টে নিজের কান্না আটকে রেখেছিল সে। তবে এবার আর পারলো না। আয়ুশ এবার নিজেও কান্নায় ভেঙে পড়লো। ঈশিতার উদ্দ্যেশ্যে বলল,”কেন ঈশিতা কেন? এভাবে ঠকালে কেন আমায়? আমি তো ৫ বছর তোমার অপেক্ষায় বসেছিলাম। তোমার জন্য কত স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম। আর তুমি এভাবে আমার সব স্বপ্ন ভেঙে দিলে! কি কমতি ছিল আমার মাঝে যে এভাবে তুমি আমায় ধোকা দিলে। তোমার ঐ চোখের জলে আমি আর ভুলবো না আর না।”

~~~~~~~~~~
টিনা, তামিমের মামাতো বোন। লন্ডনের একটা বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করছে সে বর্তমানে। হঠাৎ তার ফোনে কাঙ্খিত নম্বর থেকে ফোন এলো। টিনা হাস্যজ্বল মুখে ফোনটা রিসিভ করলো। রিসিভ করেই বলল,”হ্যালো, ব্রো। কেমন আছ?”

তামিম বলল,”আই এম ফাইন। তোর খবর বল?”

“আমার খবর জানাবো নাকি তুমি যেই খবর জানতে কল দিয়েছ সেসব জানাব?”

“তুই তো বুদ্ধিমতী। তাই আমাকে নিশ্চয়ই তোকে কিছু বুঝিয়ে দিতে হবে না।”

“হা হা হা। যাইহোক, মিশন কমপ্লিট। তোমার কথা মতো আমি ঈশিতার বর আয়ুশের ফোনে তোমার আর ঈশিতার কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি পাঠিয়ে দিয়েছি। সাথে তোমাদের ঐ ড্রামার পার্টটাও।”

তামিম মৃদু হাসে। এক বছর আগে সে যখন লন্ডন গেছিল তখন বাসায় একটা অনুষ্ঠানে তারা ড্রামায় অভিনয় করেছিল। সেখানে ঈশিতা ছিল নায়িকা এবং সে নায়ক। সেসবই টিনা রেকর্ড করে রেখছিল। আর এখন সুযোগ বুঝে সেসব ব্যবহার করেই আয়ুশ ও ঈশিতার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করছে তারা দুজনে মিলে।

টিনা তামিমকে বলে,”তবে আমি বুঝতে পারছি না ব্রো, তুমি ঐ ঈশিতার মধ্যে এমন কি পেলে যে একটা বিবাহিতা মেয়ের সংসার ভাঙতে উঠেপড়ে লেগেছ। আমি এসব করতাম না কিন্তু তুমি এমন ভাবে অনুরোধ করলে যে না করে থাকতে পারলাম না। মিস্টার আয়ুশ তালুকদারের সামনে সবটা এমনভাবে পোট্রে করলাম যে উনি মনে করছেন তুমি আর ঈশিতা মিলে ওনাকে ঠকাচ্ছ। ঈশিতা তোমার সাথে কোন সম্পর্কে আছে।”

“ঈশিতাকে আমি সেই যবে প্রথম দেখেছি তখন থেকে পছন্দ করি। কিন্তু ও তখন অনেক ছোট ছিল জন্য নিজের মনের কথা বলতে পারিনি। ওকে আমি এতোটা ভালোবেসেছি যে ও ছাড়া অন্য আর কারো দিকে কখনো নজর দেইনি আমি। যদি ঐ আয়ুশ লোকটা মাঝখানে চলে না আসত তাহলে এতদিনে আমি ঈশিতাকে নিজের করে নিতাম। কিন্তু….যাইহোক, এখনো সময় আছে। যেকোন মূল্যেই আমি ঈশিতাকে নিজের করে নেব। তার জন্য যা করতে হয় করব।”

টিনা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,”আমিও যথাসাধ্য তোমায় সাহায্য করব।”

বলেই টিনা ফোন রেখে দেয়। ফোন রেখেই বলে,”ঈশিতা তুমি বড্ড লাকি যে তামিম ব্রো তোমায় ভালোবাসে। আমার মনে হয়, তামিম ব্রো এর থেকে ভালো তোমাকে কেউ ভালোবাসতে পারবে না। তাই আমি নিজের কাজ নিয়ে একটুও আফসোস করছি না। বরং আমি খুশি হবো যদি তোমার সংসার ভেঙে যায় আর তামিম ব্রো তোমাকে পায়। বিনিময়ে আমিও তো তামিম ব্রো এর বেস্টফ্রেন্ড নাহিদকে পাবো। তামিম ব্রো তো বলেছে তোমার সংসারটা ভাঙতে পারলেই নাহিদের সাথে আমার সেটিং করে দিবে। তার জন্য এতটুকু তো আমি করতেই পারি।”

বলেই টিনা নিজের ফোনে নাহিদের একটা ছবি বের করে শুয়ে পড়লো বিছানায়।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ঈশিতা জাহানারা বেগমের রুমে এসে বসেছে। জাহানারা বেগম ঈশিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,”আমি জানি না আয়ুশ তোমার সাথে এমন কেন করছে। তবে তুমি কোন চিন্তা করবে না। দেখবা সব ঠিক হয়ে যাবে। ও হয়তো একটু অভিমান করেছে। এতগুলো বছর পর তুমি ফিরলা আর বাড়িতে এই পরিস্থিতি..যাইহোক কতক্ষণ আর না খেয়ে থাকবে। চলো খেয়ে নেবে।”

“আমার খেতে ইচ্ছা করছে না মা।”

“না বললে তো আমি শুনব না। এসো আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।”

বলেই জাহানারা বেগম ভাত নিয়ে এসে ঈশিতাকে খাইয়ে দেন। ঈশিতা যেন জাহানারা বেগমের মাঝে নিজের মাকে খুঁজে পায়। জাহানারা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার জন্যই সবকিছু এমন হয়ে গেছে তাই না, মা? আমি যদি বিদেশে না যেতাম তাহলে আপনার ছেলে এভাবে আমার উপর রাগ করে থাকত না। আমার শ্বশুর মশাই, দাদি শাশুড়ী সবার মন আমি জয় করতে পারতাম।”

“এখন এসব বলে তো কোন লাভ নেই বৌমা। আগে যা হয়েছে তা অতীত, তা আমরা বদলাতে পারব না। কিন্তু এখন যা হবে তা আমাদের হাতেই রয়েছে। তুমি এখন চেষ্টা করো নিজের স্বামীর মন জয় করার, এই বাড়িতে নিজের অবস্থানটা শক্ত করার।”

ঈশিতা মাথা নাড়ায়। জাহানারা বেগম বলেন,”আয়ুশ তোমার উপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারবে না। তুমি শুধু ক্যারিয়ার নিয়ে আর এত না ভেবে সংসারে মন দাও।”

ঈশিতা বললো,”আমি আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছি না। আমি এখন শুধু আমার স্বামী-সংসার নিয়ে ভাবছি। আগে নিজের স্বামী-সংসার ঠিক করব। তারপর ক্যারিয়ার। আমি জানি না, আয়ুশের কি হয়েছে। তবে আমি ওর সব অভিমান, সব রাগ মুছে দেব।”

“এটাই তো চাই।”

to be continue…..