আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব-১৭+১৮

0
85

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_17
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আয়ুশের বদলে যাওয়া ব্যবহার ঈশিতাকে অবাক করেছে। সে বারবার গেছে আয়ুশের সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু আয়ুশ তাকে ফিরিয়ে দেয়। ঈশিতা বুঝে উঠতে পারে না কি তার সমস্যা কেন সে এমন অবহেলা করছে। তবে ঈশিতা ঠিক করে নিয়েছে সে যে করেই হোক আবার আয়ুশের মন জয় করবেই। এটা যতই কঠিন কাজ হোক সে করবেই। ঈশিতার এমন ভাবনা থেকেই সিদ্ধান্ত নিলো আজ সে বাড়ির সবার জন্য রান্না করবে। এতে শুধু আয়ুশ নয় বাকি সবার মন জয় করতে পারবে।

যেই ভাবা সেই কাজ। এই ভাবনা থেকেই আয়ুশ সহ পরিবারের সবার জন্য রান্না করতে লাগল ঈশিতা। বিভিন্ন রকম রান্না করলো একা হাতে। ঈশিতা ভাবলো এই রান্না দিয়েই সবার মন জয় করা সম্ভব।

তবে সে হোচট খেলো যখন এত কষ্ট করে রান্না শেষে সে সবাইকে পরিবেশন করতে গেলো। আলতাফ তালুকদার তো ঈশিতাকে দেখেই রেগে গেলেন। জাহানারা বেগমকে রাগ দেখিয়ে বললেন,”এসব রান্না কি এই মেয়েটা করেছে?”

জাহানারা বেগম মাথা নাড়ালেন। আলতাফ তালুকদার রেগে বলেন,”তোমার সাহস কি করে হয় এমনটা করার? কি করে ভাবলে তুমি যে তোমার রান্না করা খাবার আমরা খাবো? আমরা কেউ এই খাবার স্পর্শ করবো না।”

গুলশেনারা বেগম বলেন,”খাবারের উপর এভাবে রাগ দেখাতে নেই আলতাফ। আল্লাহ নারাজ হন।”

“তুমি যাই বলো না কেন আম্মা, আমি এই মেয়ের হাতের পানিও স্পর্শ করব না।”

বলেই আলতাফ তালুকদার উঠে চলে যান। ঈশিতার দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে নোনাজল। গুলশেনারা বেগম রাগ করে বলেন,”এই মেয়ে তুমি রান্না করতে গেলে কেন? তোমার জন্য আমার ছেলেটা না খেয়ে রইলো। কিন্তু আমি তো আর অন্ন নষ্ট করতে পারবো না। এই ঐশী চল আমরা অল্প খেয়ে উঠে পড়ি।”

ঐশী মাথা নাড়ালো। দুজনে অল্প পরিমাণে খেয়ে উঠে পড়লো। সবার এমন ব্যবহার একদম আশা করে নি ঈশিতা। সে ভেবেছিল তার প্রথম বার রান্না সবাই বেশ আয়েস করে খাবে। কিন্তু সবার থেকে যা ব্যবহার পেল তা অবিশ্বাস্য। জাহানারা বেগম এসে ঈশিতাকে শান্তনা দিয়ে বললেন,”তুমি একদম চিন্তা করো না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে দেখো। সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর যাইহোক না কেন, আয়ুশ তো আজ তোমার রান্না খেয়ে ভীষণ খুশি হবে দেখে নিও। আয়ুশের সব রাগ জল হবে। পরিবারের বাকি সবাই একটু বেশিই রেগে আছে তাই হয়তো সময় লাগবে কিন্তু আয়ুশ আজই একদম আবার আগের মতো তোমায় কাছে টেনে নেবে। এটা আমার বিশ্বাস।”

শাশুড়ীর কথায় ভীষণ ভরসা পেল ঈশিতা। তার মনে হলো এবার বুঝি সব ঠিক হয়ে যাবে। আয়ুশ তো প্রায়ই বলত, ঈশিতার সাথে একটা সুখের সংসার সাজাতে চায়। এবার ঈশিতা নিজে থেকে এত কিছু করছে জানলে তার থেকে খুশি আর কেউ হবে না।

~~~~~~
ঈশিতার বাকি দিন গুলো চলে গেলো আয়ুশের অপেক্ষায়। এজন্য সে নিজেও না খেয়ে রইলো। উদ্দ্যেশ্য, আয়ুশ ফিরলে সব মান অভিমান মুছে দুজনে মিলে একসাথে খাবে। জাহানারা বেগমও ঈশিতার এই সিদ্ধান্তে বড্ড খুশি। খুশির জোয়ার বইছে তার মনের মাঝে।

তিনি তো সবসময় এটাই চেয়েছিলেন যে ঈশিতা এবার সংসারী হোক। তাদের মাঝে সব সমস্যা মিটে যাক।

যাইহোক, দুপুরে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলো আয়ুশ। আয়ুশ কলিং বেল চাপতেই ঈশিতা গিয়ে নিজে দরজা খুলে তাকে হাসি মুখ উপহার দিলো। কিন্তু আয়ুশ তাকিয়ে রইল থমথমে গম্ভীর মুখে। ঈশিতার এটা ভালো লাগল না। তার সমস্ত খুশিও যেন মিলিয়ে গেল। আয়ুশ ঈশিতাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকলো। আয়ুশ সামনে এগোতে নিতেই ঈশিতা সাহস করে বলল,”আমি আজ নিজের হাতে আপনার জন্য অনেক কিছু রান্না করেছি। আপনি খাবেন তো?”

আয়ুশ ঈশিতার কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়লো। ঈশিতার মনে আশার সঞ্চার হলো। সে খুব সুন্দর করে থালায় খাবার বাড়ল আয়ুশের জন্য। অতঃপর তার দিকে খাবার বাড়িয়ে দিয়ে বললো,”এই নিন, খান।”

আয়ুশ কিছুক্ষণ চুপ করে দেখলো। তারপর এমন এক কাণ্ড করে বসলো যা ঈশিতা কল্পনাতেও আনে নি। এক মুহুর্তে সব খাবার ছুড়ে মারলো দূরে। চিৎকার করে বললো,”কোন সাহসে তুমি আমার জন্য খাবার করেছ? কি ভেবেছ টা কি তুমি? তোমার মতো দুশ্চরিত্রা মেয়ের হাতের রান্না আমি খাবো?”

ঈশিতা হতবাক হয়ে বললো,”আয়ুশ! এসব কি বলছেন আপনি? আমি দুশ্চরিত্রা!”

জাহানারা বেগম, আলতাফ তালুকদার, গুলশেনারা বেগম, ঐশী সবাই ছুটে এলো আয়ুশের চিৎকার শুনেই। জাহানারা বেগম এসে বললেন,”কি হয়েছে আয়ুশ? এভাবে চেচাচ্ছিস কেন?”

“চেচাব না তো কি? এই মেয়েটার এত অডাসিটি হয় কিভাবে? আমার জন্য কেন রান্না করেছ ও?”

” ও তোর স্ত্রী আয়ুশ।”

“কিসের স্ত্রী? যেই মেয়ে বিদেশে গিয়ে আমার অলক্ষ্যে অন্য ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ায় তাকে আমি স্ত্রীর মর্যাদা দেব?”

ঈশিতার চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু পড়ছে। সে অবিশ্বাস্যের কণ্ঠে বলে,”আমার নামে এসব বাজে কথা বলা বন্ধ করুন। কিসের ভিত্তিতে এসব বলছেন আপনি?”

আয়ুশ ভীষণ ক্ষেপে আছে।

“আমি চাই নি সবাইকে এসব দেখাতে কিন্তু তোমার এই অভিনয় দেখে আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না।”

বলেই সে সবাইকে তামিম ও ঈশিতার কিছু ছবি আর সাথে সেই ড্রামার ভিডিওটাও দেখায়। এটা দেখে ঈশিতা স্তব্ধ। জাহানারা বেগম বলেন,”ছি ঈশিতা ছি! আমি কত বিশ্বাস করেছিলাম তোমায় আর তুমি সেই বিশ্বাসের এই প্রতিদান দিলে?”

আলতাফ তালুকদার বলেন,”দেখলে তো জাহানারা এই জন্য আমি শুরু থেকে এই মেয়েকে পছন্দ করি না। তোমরা মা-ছেলে তো এই মেয়েকে নিয়ে অনেক আদিখ্যেতা দেখিয়েছ। এবার বোঝো তার ফল।”

ঐশী বলে,”বিদেশে যাওয়ার আগে তো খুব বড় বড় কথা বলেছিলে যে, তোমার চরিত্র হেফাজতে রাখার দায়িত্ব তোমার। এই তার নমুনা?”

গুলশেনারা বেগম রেগে বোম। তিনি বলেন,”আয়ুশ তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এক্ষুনি এই পাপটাকে এই বাড়ি থেকে দূর কর। ওর ত্রীসীমানায় থাকতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। এইজন্য বলছিলাম বউকে বিদেশে না পাঠাতে। এবার দেখেছিস তো এর পরিণাম।”

ঈশিতা সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আপনারা বিশ্বাস করুন..এই সব কিছু মিথ্যা। আমার আর তামিম ভাইয়ের মধ্যে এমন কিছু নেই।”

আয়ুশ ঈশিতাকে শক্ত করে ধরে বলে,”একদম মিথ্যা কথা বলবে না। আমি তোমার লেখা ডায়েরি পড়েছি। তুমি সেখানে লিখেছ তুমি তামিমকে পছন্দ করো।”

“হ্যাঁ, করতাম পছন্দ। কিন্তু সেটা বিয়ের আগে। বিয়ের পরে আমি ওনাকে সেই নজরে আর দেখিনা।”

“একটার পর একটা মিথ্যে, একটার পর একটা মিথ্যে শুধু বলেই যাচ্ছ।”

ঈশিতা জাহানারা বেগমের সামনে গিয়ে বলে,”মা, আপনি অন্তত আমায় বিশ্বাস করুন।”

জাহানারা বেগম একটা অবিশ্বাস্য কাহিনি করে বসেন। ঠাস করে থাপ্পড় মারেন ঈশিতাকে। আর বলেন,”তোমাকে বিশ্বাস করাই আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল। দূরে যাও আমার থেকে। আমার ঘৃণা হচ্ছে তোমায় দেখে।”

“মা, আপনিও?”

“খবরদার আমায় মা বলে ডাকবেনা। আয়ুশ, তোকে এই দুশ্চরিত্রা মেয়ের সাথে সংসার করতে হবে না। তুই একে ডিভোর্স দে।”

আয়ুশ এসে ঈশিতার হাত শক্ত করে ধরে বলে,”হ্যাঁ, মা। এবার তাই করবো।”

ঈশিতা হাত ঝটকা দিয়ে সরিয়ে বলে,”আমি আপনাকে ডিভোর্স দিবো না। আমাকে একটা সুযোগ দিন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার।”

“আর কত সুযোগ দেব তোমায়? ৫ বছর যথেষ্ট সুযোগ দিয়েছি আমার জীবন নষ্ট করার আর নয়।”

“আমাকে শুধু ৭২ ঘন্টা সময় দিন। এই ৭২ ঘন্টার মধ্যে আমি প্রমাণ করে ছাড়বো আমি কোন অন্যায় করিনি। এটা ঈশিতার চ্যালেঞ্জ।”

to be continue…..

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_18
#ইয়াসমিন_খন্দকার

ঈশিতা রুমে এসে দরজা লাগিয়ে বসে আছে। সবার এত অপমান, এত গঞ্জনা তার মনকে বিষিয়ে তুলেছে। নানা খারাপ চিন্তা মাথায় আসছে কিন্তু ঈশিতা নিজেকে সামলে রাখলো। জোরে শ্বাস নিয়ে বললো,”আমায় এখন কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিলে চলবেনা। আগে সবার সামনে এটা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিতে হবে যে আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। তারপর কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।”

ঈশিতা আয়ুশের দেখানো সমস্ত ভিডিওর কথা ভাবতে লাগলো। ঈশিতা খেয়াল করেছে আয়ুশ ফেসবুকে মেসেঞ্জারে এই ভিডিও এবং ছবি গুলো দেখাচ্ছিল। আর এই সব টিনার আইডি থেকে তাকে পাঠানো হয়েছে। ঈশিতা বোকা বনে গেল। এতক্ষণ তো এই কথাটা মাথাতেই আসে নি।

“টিনা আমার সাথে এমন কেন করল? ওর সাথে তো আমার কোন শত্রুতা নেই!”

ঈশিতা কিছুক্ষণ ভাবতে লাগলো। হঠাৎ করে তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। সেদিন যে তারা নাটক করেছে এই তথ্য তো টিনার মা-বাবা জানে। ঈশিতাকে তো টিনার মা-বাবা ভীষণ আপন করে নিয়েছে। একদম নিজের মেয়ের মতোই দেখেছেন। তারা নিশ্চয়ই সব জানলে ঈশিতার পক্ষেই কথা বলবে। টিনার সব চক্রান্ত তখন ফাঁস হয়ে যাবে। কিন্তু এর মাঝে ঈশিতার মনে এই চিন্তা এলো যে টিনা কেন তার কোন ক্ষতি করতে যাবে। তার সাথে তো ঈশিতার কোন পার্সোনাল শত্রুতা নেই। বরঞ্চ তাদের মধ্যে সম্পর্ক বেশ স্বাভাবিক ছিল। হিসাব গুলো কেন জানি মিলতে চাইছে না। কি স্বার্থ থাকতে পারে টিনার এসব করার পেছনে? ঈশিতা ভেবে পেলো না। তবে তার হাতে এখন এত কিছু ভাবার সময়ও নেই৷ আপাতাত তাকে সবার সামনে নিজের নির্দোষ হওয়ার প্রমাণ পেশ করতে হবে। তারপর বাকি কিছু।

~~~~
আয়ুশ সোফায় একদম মন খারাপ করে বসে আছে। জাহানারা বেগম আয়ুশের কাছে এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,”আমি বুঝতে পারছি তোর মধ্যে দিয়ে এখন কি বয়ে যাচ্ছে। তোর মনের অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি আয়ুশ। আমি নিজেও ভাবতে পারিনি ঈশিতা এমন একটা কাজ করবে এভাবে তোকে ধোকা দেবে।”

“প্লিজ মা, এসব আর বলো না। আমার আর এসব শুনতে ভালো লাগছে না।”

“তোকে শুনতে হবে আমার কথা। দেখ বাবা, ঈশিতাকে তুই যথেষ্ট সময় দিয়েছিস। এই পাঁচ বছর তোকে অপেক্ষা করানোর পর এখন ও এইসব ধোকাবাজি উপহার দিচ্ছে। এটা আমি মানতে পারছি না৷ ৭২ ঘন্টা পর যদি ও নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে না পারে তাহলে কিন্তু তুই ওর উপর একটুও দয়া দেখাবি না। ওকে তোর জীবন থেকে আর এই বাড়ি থেকে একদম দূর করে দিবি।”

আয়ুশ মাথা নাড়িয়ে বলে,”আমি এমনই করবো মা। ওকে অনেক সুযোগ দিয়েছি। ৫ বছর ওর জন্য অপেক্ষা করে নিজের জীবনের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করেছি কিন্তু আর না। এবার আমি সবকিছুর একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়ব। আমায় একটা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতেই হবে।”

~~~~~~~~
ঈশিতা টিনার বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু তার সব চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। তাদের ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না এবং সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। ঈশিতা যারপরনাই হতাশ। একটা সারাদিন দিন তার এসব চেষ্টাতেই কেটে গেল। কিন্তু এর কোন সুফল এলো না। ঈশিতার হাতে আর সময় মাত্র দুই দিন। এই দুদিনের মাঝে তাকে নিজের নিরপরাধ হওয়ার প্রমাণ দিতে হবে। নাহলে হয়তো আয়ুশ কোন বড় ডিশিসন নিয়ে নিবে, যা অবশ্যই তার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

ঈশিতা বুঝতে পারছে আজ যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এর পেছনে তার নিজেরও অনেক দায় আছে। বিয়ের পর থেকে আয়ুশ তার সাথে স্বাভাবিক হতে চাইলেও সে নিজের জেদ বজায় রেখেছে। তাছাড়া যেভাবে সে তামিমের কাছে সবসময় সাহায্য নিয়েছে সেটাও আয়ুশের খারাপ লাগতে পারে। তার উপর ঈশিতার লেখা ডায়েরি যেটা আয়ুশ পেয়েছে। এসব ঘটনার পর যেকোন পুরুষই সন্দেহ করবে এটাই স্বাভাবিক। আয়ুশ নিজের যায়গা থেকে একদম ঠিক আছে। ভুল শুরু থেকে ঈশিতারই। কিন্তু ঈশিতা এতদিন নিজের ভুল গুলো উপলব্ধি না করে বরং এড়িয়ে গেছিল। ভীষণ স্বার্থপরতা করেছে সব ক্ষেত্রে যার ফলে আজ এমন পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে। কোথাও না কোথাও এই পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে তারই দায় আছে। এসব জন্যই ঈশিতা আয়ুশের উপর পুরোপুরি রাগ করছে না বা তাকে ভুলও বুঝছে না। ঈশিতা জানে এখন যদি সে আবার নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে পারে যদি আয়ুশকে এটা বোঝাতে পারে যে তার সাথে তামিমের এমন কোন সম্পর্ক নেই তাহলে আয়ুশ নিজের ভুল বুঝতে পেরে আবার ঈশিতাকে কাছে টেনে নেবে। এই জন্য ঈশিতা আশায় বুক বেধে আছে।

এসব কিছুর পর হয় তো তাদের দুজনের ভীষণ সুখের সংসার হবে।

~~~~
আয়ুশ ঈশিতার মুখোমুখি। মুখোমুখি হয়েই বলে,”এখনো অব্দি কোন প্রমাণ জোগাড় হলো?”

ঈশিতা দুপাশে মাথা ঝাকিয়ে বলে,”না।”

“আর কিন্তু মাত্র ২ দিন। এর মাঝে যদি কোন প্রমাণ না দিতে পারো তাহলে কিন্তু আমি কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।”

“কঠোর সিদ্ধান্ত?”

“হ্যাঁ, কঠোর সিদ্ধান্ত। জানো, তোমার দিকে তাকাতেও আমার ইচ্ছা করছে না। শরিয়া আইন মোতাবেক তো তোমায় পা*থর নিক্ষেপ করে মা*রা উচিৎ, কত বড় স্পর্ধা তোমার বিয়ের পর পরপুরুষের সাথে রঙ্গ তামাশা করো।”

“আপনি আমায় ভুল বুঝছেন। সবটা জানার পর অনেক আফসোস করবেন দেখে দিয়েন।”

“আই উইশ..যেন আমায় আফসোস করতে হয়। কিন্তু আপাতত সবকিছু তোমার বিরুদ্ধে। তুমি নিজের সপক্ষে এখনো কোন প্রমাণ দিতে পারো নি, তাই আমার কাছে এখনো তুমিই অপরাধী।”

ঈশিতার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে। আয়ুশ আর কিছু না বলে চলে যায়। আয়ুশ চলে যাবার পর গুলশেনারা বেগম চলে আসেন সেখানে। ঈশিতাকে দেখেই কুকুর তাড়ানোর মতো করে বলতে থাকেন,”দূর হ শয়তান দূর হ।”

ঈশিতার গায়ে লাগে খুব। গুলশেনারা বেগম তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে থাকেন,”বেলাজ, বেশরম মেয়ে মানুষ। জামাই থাকতে অন্য লাং এর সাথে ঘষাঘষি করে। আমাদের সময় হলে একে ন্যাড়া করে গাধার পিঠে চড়িয়ে গোটা গ্রাম ঘোরানো হতো।”

ঈশিতা আর চুপ থাকতে পারে না। প্রতিবাদী সুরে বলে,”দোহাই লাগে এমন কথা বলবেন না। আমার অপরাধ এখনো প্রমাণ হয়নি।”

তখনই ঐশী সেখানে চলে আসে। এসেই ঈশিতার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”ছোটবেলায় শুনেছিলাম চোরের মায়ের বড় গলা আর এখন দেখতেও পারছি। তোমার লজ্জা বলে কিছু নেই? বিয়ের পর কোথায় সংসারে মন দেবে, পর্দা করে চলবে তা না বিদেশে গিয়ে বেশরম ভাবে বেপর্দা হয়ে চললে, স্বামীর থেকে দূরে গিয়ে অন্য ছেলেদের নিজের রূপ দেখাতে লাগলে। এটা তো হবারই ছিল। ”

ঈশিতা কিছু বলতে পারল না। সবাই তাকে এভাবে ঘিরে ধরলো। একটু পর আলতাফ তালুকদার এসে বললেন,”এই পাপটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের বাড়ি থেকে দূর হবে ততোই ভালো। এ থাকা মানেই আমাদের বাড়ি নাপাক হয়ে থাকা।”

সবগুলো কথা ঈশিতার বুকে ছুরির মতো বিধল। এতটাই ঝাঝালো।

~~~
২ দিন পর,
তালুকদার বাড়িতে সভা বসেছে। ঈশিতাকে তাড়ানোর সভা। আলতাফ তালুকদার আয়ুশের উদ্দেশ্যে বলেন,”ঐ মেয়েকে দেয়া ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম তো শেষ। এখনো ও নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে পারে নি। এবার কি তুমি কোন স্টেপ নিবে নাকি আমি ওকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করবো?”

গুলশেনারা বেগমও বললেন,”অনেক হয়েছে এবার দূর কর ঐ নাপাক মেয়েটাকে।”

জাহানারা বেগম বললেন,”সবাই ঠিক বলছে। আমরা অনেক সুযোগ দিয়েছি ওকে আর না।”

আয়ুশ সবার কথা শুনে ঈশিতার রুমে গেলো। অতঃপর ঈশিতাকে বললো,”তোমার সময় শেষ এখন বেরিয়ে যাও এই বাড়ি থেকে। যাবার আগে এই ডিভোর্স পেপারে সু করে দিও।”

ঈশিতা কান্নাভেজা চোখে আয়ুশের দিকে তাকায়। ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে কাপা কাপা হাতে সই করতে যায়। আয়ুশই যখন তাকে বিশ্বাস করছে না, তাকে চায়না তখন আর এই সম্পর্ক রেখে কি হবে। ঈশিতা ডিভোর্স পেপারে সই করতে যাবে এমন সময় জাহানারা বেগম এসে তাকে থামিয়ে দেয়। ডিভোর্স পেপারটা কেড়ে নিয়ে বলে,”থামো! দেখো কে এসেছেন।”

ঈশিতা সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়। অস্ফুটস্বরে বলে,”আপনি?!”

to be continue…..