আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব-১৯+২০

0
88

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_19
#ইয়াসমিন_খন্দকার

ঈশিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার সামনে দাঁড়ানো মানুষটার দিকে। ইনি আর কেউ নন তোফায়েল আহমেদ। তামিমের মামা এবং টিনার বাবা। তাকে দেখামাত্রই ঈশিতা তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,”আঙ্কেল আপনি?”

“হ্যাঁ, আমি। কিছু জরুরি কাজে দেশে এসেছিলাম। ভাবলাম তোমার সাথে দেখা করে যাই। কিন্তু এখানে এসে যা শুনলাম…”

ঈশিতা বললো,”আমি আপনাকে অনেকবার কল দিয়েছিলাম আঙ্কেল। ম্যাসেজও করেছি।”

“হ্যাঁ, দেখেছি। আসলে আমি একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছিলাম। ফোনেও নেটওয়ার্ক ছিল না। তাই এতদিন তোমার ম্যাসেজ বা কল আমার নজরে আসে নি। কিন্তু যখনই আমি তোমার ম্যাসেজটা দেখেছি তখনই ছুটে এসেছি। আমি ভাবতেও পারছি না,আমার মেয়ে টিনা কিভাবে এমন করতে পারলো। ও কিভাবে ফাসালো তোমায়?”

আয়ুশ অবাক। কি বলছেন এই লোক? জাহানারা বেগম আয়ুশের উদ্দ্যেশ্যে বললেন,”তোফায়েল আহমেদ আমাদের আসল সত্যিটা বলেছেন। তোকে যেই ভিডিওটা টিনা পাঠিয়েছে সেটা কোন আসল ভিডিও নয়৷ সেটা একটা ড্রামা ছিল যেখানে তামিম ও ঈশিতা অভিনয় করেছিল। আর ছবিগুলোও অধিকাংশ এডিট করা। ওনার স্ত্রী ওনার মেয়ের মুখ থেকে সব সত্য বের করে এনেছেন।”

আয়ুশের অবাক হওয়ার পাল্লা বাড়লো। তোফায়েল আহমেদ ফোন দিলেন তার স্ত্রীকে। তার স্ত্রী ফোন রিসিভ করেই স্বীয় কন্যা টিনাকে বললেন,”তোর সব অপকর্ম সবার সামনে স্বীকার কর। আজ শুধুমাত্র তোর জন্য একটা মেয়ের সংসার ভেঙে যেতে বসেছে।”

টিনা কাঁদতে কাঁদতে বলল,”হ্যাঁ, আমিই সব করেছি। সব নাটক আমি সাজিয়েছি। সবকিছুই আমার কারসাজি। তামিম ব্রো ও ঈশিতার মাঝে এমন কোন সম্পর্ক নেই।”

ঈশিতা রেগে বললো,”তুমি আমার সাথে এমন কেন করলে টিনা? কি শত্রুতা ছিল আমার সাথে তোমার?”

টিনা মনে মনে ভাবলো,”যদি এখন আমি সবাইকে তামিম ব্রোর কথাটা বলে দেই তাহলে তামিম ব্রো কখনো নাহিদকে পেতে আমায় সাহায্য করবে না। এজন্য আমায় এখন সত্যটা গোপন রাখতেই হবে। অন্য কিছু একটা বলতে হবে।”

এই ভাবনা থেকেই টিনা বললো,”আমার ঈশিতাকে খুব হিংসা হতো। ও আমাদের সম্পর্কে কেউ না হয়েও আমার মা-বাবার এত প্রিয় ছিল, মা-বাবাও ওর সাথে আমার তুলনা টানত কারণ ওর মেডিকেলের রেজাল্ট আমার থেকে অনেক ভালো। এছাড়া ঈশিতা দেখতেও আমার থেকে অনেক সুন্দরী। এসব নিয়েই ওর প্রতি আমার রাগ ছিল।”

টিনার কোন কথাই যুক্তিযুক্ত লাগলো না আয়ুশ বা ঈশিতা কারো কাছেই। আয়ুশ ধমকে বলে উঠলো,”আমার মনে হয় আপনি কিছু লুকাতে চাইছেন। শুধুমাত্র এই সব সাধারণ কারণে আপনি কেন ঈশিতার সাথে আমার সম্পর্ক ভাঙতে চাইবেন। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন বড় কারণ আছে। সত্যটা বলুন।”

ঈশিতাও বললো,”হ্যাঁ, তুমি ভুল বলছ টিনা। আমার কাছেও এটা বিশ্বাসযোগ্য না।”

“এর পেছনে তামিমের হাত নেই তো?”

আয়ুশের প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় টিনা। বলে ওঠে,”না, না, তামিম ব্রোর কোন হাত নেই এখানে। তামিম ভাই তো জানেও না আমার এসব চক্রান্তের ব্যাপারে।”

ঈশিতাও বলে,”হ্যাঁ, তামিম ভাইয়া এমন মানুষ নয়। উনি আমাকে নিজেদের বোনের মতো দেখেন। উনি কত সাহায্য করেছেন আমায়। উনি এতোটা নিচে নামতে পারেন না। আমার মনে হয় অন্য কোন কারণ আছে যেটা টিনা বলতে চাইছে না।”

তোফায়েল আহমেদ বলেন,”এই টিনা তুই আসল সত্যিটা বল?”

টিনার কাছে এখন আর কোন উপায় ছিল না। তাই সে বানিয়ে বলতে থাকে,”ঈশিতা যখন প্রথম আমায় মিস্টার আয়ুশের ছবি দেখায় তখন আমি ওনার ছবি দেখেই ওনাকে পছন্দ করে ফেলি। ওদের এত মাখো মাখো প্রেম তাই আমার সহ্য হতো না। আমার উদ্দ্যেশ্য ছিল,এভাবে ওদের সংসারটা ভেঙে তারপর আয়ুশের খারাপ সময়ে ওর পাশে থেকে ওর মনে জায়গা করে নেওয়া।”

টিনার মা তাকে ঠাস করে একটা থাপ্প*ড় দিয়ে বলে,”ছি! তুই এত নিচ।”

টিনার কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে যায়। তোফায়েল আহমেদ বলেন,”আমার তরফ থেকেও ওকে একটা থা*প্পড় দাও। আর বাকিটা আমি লন্ডনে ফিরে গিয়ে দেখছি।”

বলেই তিনি ফোন রেখে দেন।

জাহানারা বেগম ঈশিতার কাছে এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”আমি তোমার কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চাইছি ঈশিতা। আমাদের তোমাকে এভাবে ভুল বোঝা উচিৎ হয়নি। আমাদের সবটা যাচাই করা উচিৎ ছিল। তুমি প্লিজ এসব মনে রেখো না”

ঈশিতা জাহানারা বেগমের হাত ধরে বলে,”ছি! ছি! মা, এসব আপনি কি বলছেন? আমি আপনাকে কোন দোষ দেব না। যেখানে আসল মানুষটাই আমাকে বিশ্বাস করেনি সেখানে আপনার কি দোষ?”

কথাটা অভিমানী সুরে আয়ুশের উদ্দ্যেশ্যেই বললো। আয়ুশ তখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। জাহানারা বেগম বুঝলেন এখন দুজনকে একটু স্পেস দেওয়া উচিৎ। তাই তিনি তোফায়েল আহমেদকে বললেন,”ভাইয়া, আপনি আসুন। আজ লাঞ্চটা আমাদের এখানেই করুন।”

তোফায়েল আহমেদ ভদ্রতাসূচক হেসে ঈশিতার উদ্দ্যেশ্যে বললেন,”টিনা তোমার সাথে যা যা করেছে সবকিছুর জন্য আমি হাতজোড় করে ক্ষমা যাচ্ছি।”

ঈশিতা বলে উঠলো,”ছি! ছি! আঙ্কেল। আপনি কেন ক্ষমা চাচ্ছেন? আমার তো আপনাকে ধন্যবাদ জানানো উচিত। আপনি আমার জন্য তো কম করেন নি। আজ আমি আপনার জন্যই নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে পারলাম। নাহলে তো আমার সংসারটাই ভেঙে যেতে বসেছিল।”

~~~~~~~
আলতাফ তালুকদার, গুলশেনারা বেগম, ঐশী সবাই একদম চুপ হয়ে গেছে। সব সত্যটা জানার পর তারা নিজেদের কাছেই ছোট হয়ে গেছে। ঐশী সবার উদ্দ্যেশ্যেই বললো,”আমাদের সবার উচিৎ ঈশিতার কাছে ক্ষমা চাওয়া। বিনা অপরাধে ওকে আমরা কোন কিছু যাচাই না করেই কত কথা শুনিয়েছি।”

আলতাফ তালুকদার বলেন,”আমাদের কি দোষ ছিল? সব প্রমাণ তো ওর বিরুদ্ধে ছিল।”

গুলশেনারা বেগমও ঐশীর সুরেই বলেন,”ও ঠিকই বলেছে আলতাফ। যাই হোক না কেন,আমরা অন্যায় করেছি। আর ক্ষমা চাইলে কেউ ছোট হয় না।”

ঐশীর ভীষণ খারাপ লাগছিল। ভীষণ অপরাধভোগে ভুগছিল ঈশিতাকে এত জঘন্য কথা বলার জন্য। নিজের কাছে আজ সে নিজে ভীষণ ছোট হয়ে গেছে।

~~~~~~~~~~~~~
ঈশিতা চুপচাপ বসে আছে বিছানায়। আয়ুশ কিছু বলার মতো খুঁজে পাচ্ছে না। আজ ঈশিতার কাছে অনেক ছোট হয়ে গেছে সে। আগে কখনো কারো কাছে এত ছোট হতে হয়নি।

দীর্ঘ সময় চুপ থেকে আয়ুশ ঈশিতার কাছে এসে বলে,”আমি সব কিছুর জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি ঈশিতা।”

“ক্ষমা চেয়ে কি হবে? আমাকে যে অপমান করেছেন..এই ৩ দিন আমার উপর দিয়ে যে ঝড় গেল তা কি ফিরে আসবে?”

“ঈশিতা…”

“ব্যস, অনেক হয়েছে। একটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বাসটাই বড়। বলা যায়, বিশ্বাসই সম্পর্কের ভীত। সে ভীত নড়বড়ে হলে সম্পর্ক ঠিক থাকে না। আপনি যদি আমার উপর বিশ্বাসই রাখতে না পারেন তাহলে আমি কিসের ভিত্তিতে এই সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখব?”

আয়ুশ নিশ্চুপ। ঈশিতা বলে,”কিন্তু আমি এই সম্পর্কটা ভাঙতে চাই না। আমি চাই,আপনার সাথে সংসার করতে। কিন্তু এত কিছুর পর এত সহজে আপনার সাথে মানিয়ে নিতে পারব না। তাই, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি..”

“কি সিদ্ধান্ত?”

“মানিয়ে নেয়ার জন্য সময় লাগবে। একটু সময় দেবেন আমাকে?”

“পাঁচ বছর কি কম ছিল যে তোমার আরো সময় চাই?”

“বেশ, তাহলে আর সময় দিতে হবে না। আজ থেকে আপনি আমার উপর স্বামীর অধিকার স্থাপন করতে পারেন।”

আয়ুশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,”এটা সঠিক সময় নয়। আমি তোমাকে ২ দিন আরো সময় দিলাম। আমি চাই সব ভুলে আবার নতুন করে শুরু করতে।”
to be continue…..

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_20(১৮+ সতর্কতা)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আয়ুশ ও ঈশিতার সম্পর্কের সমীকরণে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আয়ুশ ও ঈশিতার মাঝে ফারাক হিসেবে থাকা দুটো দিন পরিবাহিত হয়েছে। আজ ঈশিতা সম্পূর্ণ প্রস্তুত নিজেকে আয়ুশের সাথে মেলে ধরার জন্য। একজন স্বামীর অধিকার আয়ুশকে প্রদান করার জানি। আয়ুশ আজ অব্দি যেটা পায়নি সেটা তাকে দেয়ার জন্য।

ঈশিতা আজ খুব সুন্দর করে সেজেছে। তার পরণে লাল জামদানী শাড়ি। এটা তাদের বিয়ের শাড়ি। এই শাড়িটাতেই আজ সে নিজেকে মুড়িয়ে নেবে। ঠোঁটের এক কোণে স্মিত হাসি।

ঈশিতা অধীর আগ্রহ নিয়ে আয়ুশের রুমে বসে তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল আয়ুশের আসার সময় হয়ে এসেছে। ঈশিতার বুকের ধুকধুকানি বাড়লো। একটু পরেই আয়ুশ দরজা ভিড়িয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। ঘরে প্রবেশ করে ঈশিতাকে এভাবে শাড়ি পড়ে ঘোমটা টেনে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেল আয়ুশ। সামান্য কেশে বলল,”ঈশিতা তুমি?”

ঈশিতার শরীর যেন অসাড় হয়ে এলো। অনেক কষ্টে শীতল কণ্ঠে বলল,”হ্যাঁ, আমি। আজ আমাদের মধ্যকার সব দূরত্ব ঘোচানোর জন্য এসেছি।”

আয়ুশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ঈশিতার দিকে। এই দিনটার জন্যই তো সে এতগুলো দিন ধরে অপেক্ষা করে এসেছিল। অবশেষে আজকের দিনটা এলোই। আয়ুশ নিজেকে প্রথমে কিছুটা ধাতস্থ করে নিলো। অতঃপর গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলো ঈশিতার দিকে। ঈশিতার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে উঠছিল। আয়ুশ ঈশিতার কাছে এসে তার ঘোমটা তুলে ধরে। ঈশিতার কপালে চুমু খেয়ে বলে,”আজ আমি তোমাকে ভালোবাসা দিয়ে ভড়িয়ে দেব।”

বলেই ডুব দেয় ঈশিতার ঠোঁটে। ঈশিতা আয়ুশের প্রতিটা উষ্ণ ছোয়া উপভোগ করতে থাকে। আয়ুশ তাকে নিজের সাথে সম্পূর্ণ ভাবে মিশিয়ে নেয়। ঈশিতার শাড়ির আঁচল সরিয়ে ডুব দেয় তার বুকের দিকে, ঘাড়েও অধরের স্পর্শ একে দেয়। ঈশিতা সব স্পর্শ নিদারুণ ভাবে উপভোগ করতে থাকে। এই ৫ বছরের দূরত্ব যেন আজ এক রাতের ভালোবাসা পুষিয়ে দেবে। ঈশিতা আয়ুশের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,”আর কখনো আমায় ভুল বুঝবেন না তো?”

আয়ুশ বলে,”কখনোই না। তুমিও আর কখনো আমায় ছেড়ে যাবে না তো?”

“কোন প্রশ্নই ওঠে না।”

আয়ুশ প্রসন্ন হয়, সঙ্গে ঈশিতার। নিজের পরণের টিশার্টটা খুলে ফেলে আয়ুশ৷ অতঃপর ঈশিতাকে নিজের আরো কাছে টেনে নেয়। ঈশিতা মুখ গোজে আয়ুশের উদোম বুকে। আয়ুশ সম্পূর্ণ রূপে ঈশিতাতে মাতোয়ারা হয়ে যায়। ধীরে ধীরে ব্যস্ত হয় ঈশিতার সমস্ত বস্ত্র উন্মুক্ত করার জন্য। অতঃপর নিজের সমস্ত বস্ত্রও ত্যাগ করে মেতে ওঠে পবিত্র ভালোবাসায়। প্রথম দিকে ঈশিতার ভীষণ ব্যথা অনুভূত হয়। কারণ এই প্রথম কোন পুরুষের সাথে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, এতদিন ধরে নিজের সতীত্ব আগলে রেখেছিল সে। আজ নিজের স্বামীকে সেই সতীত্ব উপহার দিলো। প্রথমবার শারীরিক সম্পর্ক করায় তাই একটু বেশিই কষ্ট হচ্ছিল। তবে সব কষ্ট ফিকে হয়ে যাচ্ছিল আয়ুশের ভালোবাসার কাছে। আয়ুশের প্রতিটি স্পর্শ ঈশিতার মনে ভালোবাসার বীজ বপন করছিল। তার শীৎকার এবং চোখের কোনে জমা অশ্রু আয়ুশকে বিচলিত করে তোলে। আয়ুশ একপর্যায়ে ঈশিতাকে বলে,”তোমার কি খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে ঈশিতা?”

ঈশিতা দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,”না, আপনি কন্টিনিউ করুন।”

ঈশিতার থেকে অভয় পেয়ে আয়ুশ নিজের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। ঈশিতা নিজের স্বামীর স্পর্শ গুলো উপভোগ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা চূড়ান্ত উত্তেজনার মুহুর্তে পৌঁছে যায়। অতঃপর দুজনেই ক্লান্ত হয়ে যায়। আয়ুশ কাজ শেষে ঈশিতার কপালে চুমু দিয়ে বলে,”আমি আজ খুব খুশি।”

ঈশিতা বলে,”আমিও।”

অতঃপর আয়ুশ ঈশিতাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। সারাটা রাত এভাবেই কা’টিয়ে দেয় দুজন।

~~~~~~~~~
সকালে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে আজ ঈশিতার অনেক দেরি হয়ে গেছে। উঠে দেখে আয়ুশ রুমে নেই। তাকে তো অনেক সকালে কাজে বেরিয়ে যেতে হয়। তাই হয়তো চলে গেছে। ঈশিতা সারা রাত ব্যথায় ঠিক মতো ঘুমাতে পারে নি। তাই হয়তো তাকে আর বিরক্ত করে নি। তাই, ঈশিতা দ্রুত গোসল করে নিয়ে একটা হলুদ কালারের কাঞ্জিবরম শাড়ি পড়ে নিলো। শাড়িটায় বেশ লাগছে তাকে।

অতঃপর রুম থেকে বের হলো। জাহানারা বেগম রান্নাঘরে রান্না করছিলেন। ঈশিতা রান্নাঘরে এসে তাকে সালাম দেয়। জাহানারা বেগম সালামের জবাব দিয়ে বলেন,”আজ তোমার ঘুম থেকে উঠতে এত দেরি হলো কেন?”

ঈশিতা বিড়ম্বনায় পড়ে যায়। নিজেকে সামলে বলে,”আমার শরীরটা ঠিক ভালো ছিল না।”

“ওহ আচ্ছা। যাইহোক, এখন যখন এসেছ আমায় একটু কাজে সাহায্য করো।”

“জ্বি।”

ঈশিতা দেখলো জাহানারা বেগম আজ অনেক আয়োজন করছেন। এসব দেখে তার কৌতুহল হলো৷ তাই বলে ফেলল,”মা, আপনি আজ হঠাৎ এত রকমের পদ রান্না করছেন কেন?”

জাহানারা বেগম খুশি হয়ে বলেন,”আজ আমার ভাইয়া, ভাবি আসছেন যে।”

“মানে নাহিদ ভাইয়ার বাবা-মা?”

“হ্যাঁ, আর নাহিদও আসছে। নাহিদই নাকি কি একটা প্রয়োজনে ওর মা-বাবাকে জোর করে আনছে। আমি তো এত কিছু জানি না, কিন্তু আমার ভাই ভাবি আসছে আমায় তো বিশেষ খাতিরদারি করতে হবে। তুমি এসে ভালোই হলো। এখন তুমি আমায় সাহায্য করতে পারবে। এইজন্য তো একটা ঘরোয়া বউয়ের খুব দরকার।”

শেষের কথাটা শুনে খানিক চমকালো ঈশিতা। কারণ সে তো একদম ঘরোয়া নয়৷ বিদেশ থেকে ডাক্তারি ডিগ্রী নিয়ে ফিরেছে। পরশুদিন ঢাকা মেডিকেলে একজন ডক্টর হিসেবে জয়েন করবে। এটা শুনলে জাহানারা বেগম নিশ্চয়ই মনোক্ষুণ্ণ হবেন। কিন্তু তাকে তো তার স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে।

ঈশিতা এখন আর এ ব্যাপারে বেশি কিছু না ভেবে জাহানারা বেগমের হাতে হাতে সাহায্য করতে লাগল। কাজ অনেকটা এগিয়ে গেলো। ঈশিতার এত কাজ করার অভ্যাস নেই। ঘেমে নেয়ে একদম একশেষ। জাহানারা বেগম ব্যাপারটা লক্ষ্য করে বললেন,”তুমি এখন একটু যাও, ড্রয়িংরুমে গিয়ে এসির বাতাস খাও।”

ঈশিতা সায় জানিয়ে ড্রয়িংরুমে এলো। ঐশী নিজের রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুম পেরিয়ে রিডিংরুমের দিকে যাচ্ছিল। তার বিভিন্ন উপন্যাসের বই পড়ার অভ্যাস। ঈশিতাকে দেখে থমকালো। ঈশিতা ঐশীকে দেখে সামান্য হাসল। ঐশী সাহস করে এগিয়ে এসে বললো,”সরি।”

“সরি কেন?”

“সবকিছুর জন্য৷ আমি তোমাকে অনেক খারাপ কথা বলেছি। তাই সরি..”

“সে তো সবাই আমাকে অনেক কিছুই বলেছে। আমি কিছু মনে রাখিনি। আমরা তো একই পরিবার..এত কিছু মনে রেখে মনে রাগ পুষে লাভ কি?”

ঈশিতার কথায় ঐশীর হাসি চওড়া হয়। তবুও সে বলে,”আমি সত্যি ভীষণ লজ্জিত।”

“আরে এত লজ্জা পাওয়ার কিছু হয় নি।”

ঐশী আর ঈশিতা আরো কথা বলছিল৷ এমন সময় নাহিদ তার মা-বাবাকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। ঈশিতা তাদেরকে দেখে সালাম দিয়ে ভালো-মন্দের খোঁজ নেয়। ঐশীও নাহিদের মা-বাবার সাথে কথা বলে কিন্তু নাহিদকে এড়িয়ে যায়। কেন জানি এই পুরুষকে দেখলে তার ভীষণ অস্বস্তি বোধ হয়। রাজ্যের সব অস্বস্তি যেন ঘিরে ধরে। বিপরীত দিকে নাহিদ এসেছে থেকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে। এবাড়িতে পা রেখেই যে নিজের প্রেয়সীর দেখা পেয়ে যাবে ভাবে নি। তার মুখে সন্তুষ্টির হাসি। ঐশী আড়চোখে ব্যাপারটা খেয়াল করে বাহানা দিয়ে রিডিংরুমে চলে গেলো। নাহিদ কিছু সময় তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে মৃদু হাসল। অতঃপর মনে মনে বললো,”আপনি এতদিন আমার থেকে অনেক পালিয়ে বেরিয়েছেন ঐশী। কিন্তু এবার আর আমি আপনাকে সেই সুযোগ দেব না। এখন আমি একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। নিজ যোগত্যা বলে আপনাকে নিজের করে নেব। সেই ব্যবস্থা করতেই তো আজ এসেছি। এবার আর আপনি পালানোর কোন পথ খুঁজে পাবেন না। ধরা আপনাকে আমার কাছে দিতেই হবে।”

to be continue…..