আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব-২১+২২

0
95

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_21
#ইয়াসমিন_খন্দকার

“আমি ঐশীকে বিয়ে করতে চাই।”

নাহিদের এমন প্রস্তাব শুনে জাহানারা বেগম হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। তার পাশে বসা ঈশিতা অবশ্য বেশ স্বাভাবিক। কারণ তামিম ভাই আগেই তাকে এই ব্যাপারটা বলেছিল। নাহিদের বাবা জাহাঙ্গীর আলম নিজের বোন জাহানারাকে বলেন,”তুই তো জানিস,আমার ছেলে এখন একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। আমরা অনেক দিন থেকেই ওর বিয়ের ব্যাপারে ভাবছি। ওকে এই ব্যাপারে জানাতেই ও বলল, ও ঐশীকে পছন্দ করে এবং তাকেই বিয়ে করতে চায়৷ আর তুই তো জানিস, আমি ছোটবেলা থেকে নিজের ছেলের কোন চাওয়াই অপূর্ণ রাখিনি। এক্ষেত্রেও তার ব্যতয় ঘটবে না। তাই আমি চলে এলাম ঐশীর জন্য নিজের ছেলের প্রস্তাব নিয়ে। আশা করি, তোর শ্বশুর বাড়ির কারো কোন সমস্যা হবে না।”

জাহানারা বেগম বলে ওঠেন,”সব ঠিক আছে কিন্তু ঐশীর পায়ে যে..”

নাহিদের মা নাজমা বেগম বলেন,”আমিও শুরুতে এটা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলাম জাহানারা। কিন্তু আপনার ভাতিজা তো জানিয়েই দিয়েছে এই ব্যাপারে সে কোন কথা শুনবে না। ও তো বলেই দিয়েছে ঐশীকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না। আর এমনিতেও বিয়ে করবে ওরা, সংসারটাও ওরাই করবে। তাহলে ওদের যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে আমাদের আর কিসের আপত্তি?”

জাহানারা বেগম আর কিছু বলতে পারলেন না। তবে তিনি এই প্রস্তাবে মোটেই রাজি হন নি। নেহাতই নিজের বড় ভাই-ভাবি বড় মুখ করে এসেছেন তাই। নাহলে ঐশীর সাথে নিজের ভাতিজার বিয়ের কথা তিনি ভাবতেও পারেন না। এমন সময় আলতাফ তালুকদারও উপর থেকে নিচে নেমে এসে ড্রয়িংরুমে এলেন। তাকে দেখেই জাহাঙ্গীর আলম সালাম বিনিময় করলেন। আলতাফ তালুকদার সোফায় বসে বলে উঠলেন,”কেমন আছেন ভাইয়া?”

জাহাঙ্গীর আলম হেসে বললেন,”আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?”

“আমিও ভালোই আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি। যাইহোক, এতদিন পর এলে, আজকে কিন্তু থেকে যেতে হবে।”

“থাকার জন্য তো আসিনি আলতাফ। আমি আসলে এখানে একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।”

“প্রস্তাব?! কিসের প্রস্তাব?”

জাহাঙ্গীর আলম সহাস্যে বলেন,”আমার ছেলে নাহিদের অনেক পছন্দ হয়েছে আপনার ভাইঝি ঐশীকে। ও ঐশীকে বিয়ে করতে চায়। সেটারই সম্মন্ধ নিয়ে এলাম। আপনার এতে কোন আপত্তি নেই তো?”

আলতাফ তালুকদার প্রস্তাবটা শুনে ভীষণ খুশি হলেন।

“আপত্তি থাকতে যাবে কেন ভাইয়া? এটা তো অনেক ভালো প্রস্তাব। নাহিদকে তো আমরা ছোট বেলা থেকে দেখছি একদম সোনার টুকরো ছেলে। কেউ ওর নামে বদনাম করতে পারবে না, নিজের যোগ্যতায় আজ সে প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। এমন ছেলেই তো খুঁজছিলাম আমাদের ঐশীর জন্য।”

“বাহ, তাহলে তো হয়েই গেলো। তোমার যখন কোন আপত্তি নেই তাহলে কথা বাড়াই?”

“আসলে ভাইয়া, আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে আম্মা এবং ঐশীর সাথেও কথা বলতে চাইছিলাম। আম্মু এখন এ বাড়ির মুরুব্বি। আর বিয়েটা যেহেতু ঐশীর তাই ওর মতামত নেওয়াটাও জরুরি।”

জাহানারা বেগম বলে ওঠেন,”ও আবার রাজি হবে না কেন? এমন পাত্র পেয়েছে সেটাই ওর সৌভাগ্য। আমাদের নাহিদের মধ্যে কোন কিছুর কমতি আছে নাকি?”

এরইমধ্যে সেখানে উপস্থিত হলেন গুলশেনারা বেগম। তিনি আসতেই জাহাঙ্গীর আলম ও নাজমা বেগম তাকে সালাম জানালো এবং খোঁজ খবর নিলো। অতঃপর আলতাফ তালুকদার তাকে সবটা খুলে বলেন৷ গুলশেনারা বেগম খুশি হয়ে বলেন,”এতো অতি উত্তম প্রস্তাব। আমিও চাইছিলাম আমার মৃত্যুর আগে ঐশীর একটা ব্যবস্থা করতে। আমি কিছুদিনের মধ্যেই পাত্র দেখা শুরু করতাম। সেক্ষেত্রে নাহিদ দাদুভাই এর মতো এত ভালো পাত্র আর কোথাও পেতাম কিনা সন্দেহ।”

ঐশী রিডিংরুমে থেকে বই নিয়ে ফিরছিল। সবাইকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। নাজমা বেগম উঠে গিয়ে ঐশীর হাত ধরে তাকে নিয়ে এসে নিজের পাশে বসান। অতঃপর ঐশীর হাতে দুটো বালা পড়িয়ে দিয়ে বলেন,”বাহ, কি সুন্দর লাগছে। আজ তো বেশি কিছু নেই, তাই এটা দিয়েই তোমাকে দোয়া করলাম। এই বালা জোড়া আমার শাশুড়ী আমাকে দিয়েছিলেন আজ আমি তোমায় দিলাম।”

ঐশী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। গুলশেনারা বেগম ঐশীকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলেন,”ওনারা তোকে নাহিদের বউ করতে চান। আমাদের বড়দের কারো কোন আপত্তি নেই।”

ঐশী সাথে সাথেই বলে ওঠে,”কিন্তু, আমার আপত্তি আছে।”

বলেই সে নিজের হাতের বালা জোড়া খুলে নাজমা বেগমের হাতে দিয়ে বলে,”আমায় ক্ষমা করে দেবেন আন্টি কিন্তু এই বিয়েতে আমার মত নেই। আমি বিয়েটা করতে চাইছি না।”

বলেই সে উঠে দাঁড়ায়। ক্রাচে ভড় দিয়ে সবার সামনে থেকে চলে যায়। নাহিদের মা-বাবা ভীষণ অপমানিত বোধ করে। জাহানারা বেগম তো সবথেকে বেশি রেগে যান। বিষয়টা স্বাভাবিক করার জন্য জাহাঙ্গীর আলম সবার সামনে বলে ওঠেন,”তাহলে আজ আমরা উঠি। যেই কারণে এলাম সেটা যখন হলো না তখন এখানে থেকে তো আর কোন লাভ নেই। নাজমা, নাহিদ চলো।”

কর্কশ কন্ঠে চাপা ক্রোধ ঢেলে বললেন তিনি। নাহিদ ব্যথিত নয়নে ঐশীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছিল। নাজমা বেগম ঝাড়া দিয়ে বলেন,”আমাদের এত অপমানিত করেও কি তোর শান্তি হয়নি? চল, এখান থেকে। এরপর আমাদের পছন্দ করা মেয়েকেই তোকে বিয়ে করতে হবে।”

নাহিদ উঠে দাঁড়ায়। আপাতত এখানে থাকলে সমস্যা বাড়বে। তবে এত জলদি নাহিদ ঐশীকে ভুলে যাবে না। সে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। ঐশীকে তার কাছে ধরা দিতে হবে এমনটাই তার পণ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ঐশী নিজের রুমে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে। কান্নায় চোখ বুজে আসছিল। ভাগ্য কেন তাকে এরকম ভাবে বিড়ম্বনায় ফেলল? ভাগ্যের এই লীলাখেলা সে মানতে পারছে না। ভাগ্য আজ তাকে একদম অসহায় করে দিলো। ঐশী কান্না করতে করতে বলতে লাগলে,”তুমি এমন কেন করলে আল্লাহ? আমাকে কেন এত অসহায় বানিয়ে দিলেন? আমি তো আয়ুশ ভাইয়াকেই ভালোবেসেছি সেই ছোট থেকে, আজও ভালোবাসি। চাইলেও তাকে ভুলতে পারছি না। তবুও তো নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। ঈশিতা ও আয়ুশ একে অপরের পরিপূরক এটাও মেনে নিয়েছি। তাদের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াই নি। আমি শুধু বাকি জীবনটা একটু স্বস্তিতে কাটাতে চাই। আমার আর কোন চাওয়া পাওয়া নেই। তবে আমি অন্য কাউকে নিজের জীবনে মেনে নিতে পারবো না। আয়ুশ ভাইয়াকে পাই নি তাতে আমার কোন ক্ষোভ নেই তোমার প্রতি। কিন্তু তাই বলে তার স্থানে অন্য কাউকে বসাতে হবে? নিজের ভালোবাসার মানুষকে ভুলে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে? এমনটা আমার পক্ষে আর সম্ভব না। আমি বাকিটা জীবন একা কাটিয়ে দেব কিন্তু ওর স্থান আর কাউকে দেব না। তুমি আর আমাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেল না আল্লাহ, ফেলো না।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আয়ুশ বাড়িতে এসেই দেখলো বাড়িতে চরম অশান্তি। জাহানারা বেগম চিৎকার করে বলছেন,”ঐ মেয়ের সাহস কি করে হয় আমার ভাই ভাবিকে এভাবে অপমান করার? আমার ভাই ভাবি আজ কত অপমানিত হয়ে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। এটা আমি মানতে পারছি না। ঐ মেয়ের চৌদ্দ গুষ্ঠির ভাগ্য ভালো যে, আমার ভাইপোর সম্মন্ধ এনেছিল নাহলে তো ওকে কেউ ছুঁয়েও দেখত না। আর ঐ মেয়ে এত দেমাগ দেখায় কোন সাহসে৷ আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।”

আয়ুশ ঈশিতার কাছে এসে বলে,”কি হয়েছে ঈশিতা? মা এমন করছে কেন?”

আয়ুশকে ঈশিতা সব ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে আয়ুশ অবাক হলো। বিস্ময়ের সাথে বললো,”কিন্তু ঐশী নাহিদকে বিয়ে করতে না করল কেন?”

ঈশিতা বলল,”হয়তো ও অন্য কাউকে পছন্দ করে।”

“সত্যি কি এমন? কই আমি তো জানি না।”

ঈশিতা চুপ করে গেলো। আয়ুশ না জানলেও সে ঠিকই জানে ঐশীর মনে কে রয়েছে।

to be continue…..

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_22
#ইয়াসমিন_খন্দকার

তালুকদার বাড়িতে যেন আজ লঙ্কাকাণ্ড শুরু হয়ে গেছে। জাহানারা বেগম কিছুতেই তার ভাই-ভাবির অপমান মানতে পারছেন না। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে তিনি ঐশীকে নিয়ে নানা অশ্রাব্য কথা বলতে লাগলেন। গুলশেনারা বেগম এসব সইতে না পেরে বললেন,”দোহাই লাগে বৌমা, তুমি এবার চুপ যাও। বাপ-মা হারা এতিম পঙ্গু মেয়েটা এমনিতেই ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট সহ্য করে বড় হয়েছে। কখনো মা-বাবার ভালোবাসা পায়নি, আলতাফ নিজের কাজে ব্যস্ত আর তুমি শুধু ওকে দায়িত্ব ভেবে যা করার করেছ। আজ মেয়েটা এত খোটা দিচ্ছ কেন? কি করেছে ও? তোমার ভাই-ভাবিকে ধাক্কা দিয়ে তো বের করেনি। শুধু বলেছে সে তাদের ছেলেকে বিয়ে করতে পারবে না। এটা কি আমার নাতনীর অনেক বড় দোষ হয়ে গেছে?”

“আপনি তো নিজের নাতনির দোষ দেখবেন না। সব দোষ তো আমারই এখন।”

আলতাফ তালুকদার রাগী সুরে বলেন,”আহ, জাহানারা। এসব ঝামেলা বন্ধ করো এবার। যা হবার হয়ে গেছে।”

আয়ুশও নিজের বাবার তালে তাল মিলিয়ে বলে,”হ্যাঁ, মা। বাবা ঠিকই বলছে। তুমি আর এসব নিয়ে ঝামেলা করো না প্লিজ। ঐশীর ইচ্ছে হয়নি ঐশী বিয়েটা করে নি। এ নিয়ে এত কথা হচ্ছে কেন?”

জাহানারা বেগম আজ নিজের মধ্যে নেই। তিনি বলে ওঠেন,”ঐ কালনাগিনী মেয়ের বিয়ে করার ইচ্ছা হবে কেন? ওর নজর তো পড়েছে আমার ছেলের উপর। তোর আর ঈশিতার সংসার নষ্ট করার জন্য এ বাড়িতে পড়ে আছে।”

“বড় আম্মু!”

ড্রয়িংরুমে এসে নিজের নামে এসব কথা শুনে ঐশী স্তব্ধ হয়ে যায়। জাহানারা বেগমের মনে এত বিষ তাকে নিয়ে। এদিকে ঐশীকে দেখে জাহানারা বেগমের রাগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। তখনকার দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠল। আরো বড় একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললেন তিনি। রাগের মাথায় ঐশীর কাছে গিয়ে ঠাটিয়ে চ*ড় মা**রেন ঐশীকে। জাহানারা বেগমের এই কাণ্ডে সবাই হতবিহ্বল। তবু তিনি থামবার পাত্র নন। ঐশীর চুলের মুঠি ধরে বলেন,”ডাই**নি একটা। তুই জন্ম নেবার পর থেকে আমাদের সংসারে একটার পর একটা অশান্তি হয়েছে। তুই আমাদের সাজানো গোছানো সংসার‍টা শেষ করে দিয়েছিস। নিজের বাবা-মাকে খেয়ে তোর শান্তি হয়নি এখন আমাদের সবার মাথা খেতে চাস।”

ঐশীর চোখ দিয়ে ছপছপ করে জল পড়ছিল। ঈশিতা আর আয়ুশ এসে ঐশীকে তার থেকে রক্ষা করে। আলতাফ তালুকদার আর নিজেকে থামিয়ে রাখতে পারেন না। সবার সামনে জাহানারা বেগমের গায়ে হাত তোলেন। ৩৫ বছরের সংসার জীবনে এই প্র‍থম তিনি নিজের স্ত্রীর গায়ে হাত তুললেন। হুংকার দিয়ে বললেন,”মুখ সামলে কথা বলো জাহানারা। তুমি ভুলে যেও না এই বাড়িটা আমার। আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমার ভাইয়ের মেয়ের ব্যাপারে তুমি কোন সাহসে এমন জঘন্য কথা বলছ?”

জাহানারা বেগমের মাথা এমনিই ঠিক ছিল না। ছেলের সামনে স্বামীর হাতে মা*র খেয়ে আর তিনি নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। চেচিয়ে বলে উঠলেন,”হ্যাঁ, এখন তো তুমি আমার গায়েই হাত তুলবে। সত্য কথা বলে ফেলেছি যে। এতদিন চুপ ছিলাম তাই ভালো ছিলাম, আজ মুখ খুলতেই আমি খারাপ। ঠিক আছে, তুমি থাকো নিজের ভাইয়ের মেয়েকে নিয়ে। আজ আমার গায়ে হাত তুলে তো তুমি প্রমাণ করে দিলে যে আমার থেকে ঐশীর মূল্য তোমার কাছে বেশি। আমি আর থাকবো না তোমার সংসারে।”

বলেই তিনি দৌড়ে নিজের রুমের দিকে গেলেন। জামা-কাপড় গুছিয়ে বাইরে চলে এলেন। তাকে দেখেই ঈশিতা ছুটে গিয়ে বললেন,”এসব আপনি কি শুরু করে দিয়েছেন মা? এসবের মানে হয় কোন?”

“যেই সংসারে আমার কোন মূল্য নেই সেখানে আমি থাকবো না। তুমি আমার ছেলেটাকে দেখে রেখো ঈশিতা, ঐ কালনাগিনী যেন আমার ছেলের কাছে ঘেষতে না পারে।”

বলেই তিনি হনহন করে বেরিয়ে যেতে লাগলেন। গুলশেনারা বেগম তার পথ আটকে বললেন,”এসব কি ছেলেমানুষি শুরু করে দিয়েছ বৌমা? এই বয়সে এসে তুমি কিনা সংসার ত্যাগ করবে? এসব তোমায় মানায় না। এই সংসার তো তোমারই।”

“সেটা আপনার ছেলে আজ বেশ ভালো ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছে আম্মা। আর আপনি এখন আমায় আটকাচ্ছেন কেন? যখন আপনার ছেলে আমার গায়ে হাত তুলল তখন তো প্রতিবাদ করলেন না।”

আয়ুশ এগিয়ে এসে রাগী কন্ঠে বললো,”এটা কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে মা। একটা সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে এসব কি শুরু করে দিয়েছ তোমরা?”

“এসব তোর কাছে সামান্য বিষয় মনে হয়? এই মেয়েটার জন্য তোর বাবা আমার গায়ে হাত তুলেছে। বিবাহিত জীবনে এর আগে কোনদিন সে এমনটা করে নি।”

ঐশী এবার এগিয়ে এসে বললো,”তোমার কোথাও যাওয়ার দরকার নেই বড় আম্মু। আমাকে নিয়েই তো যত সমস্যা, আমিই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।”

গুলশেনারা বেগম বললেন,”এসব কি বলছিস তুই? এবাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবি তুই?”

আলতাফ তালুকদার হুংকার দিয়ে বলে উঠলেন,”ঐশীকে কোথাও যেতে হবে না। জাহানারা তোমার যদি ইচ্ছা হয় তাহলে তুমি এখনই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাও। আমার পূর্ণ অনুমতি আছে। আর কেউ ওকে আটকাবে না এটা আমার নির্দেষ।”

জাহানারা বেগম ব্যথিত হলেন। গুলশেনারা বেগম বলে উঠলেন,”এসব তুই কি বলছিস আলতাফ? রাগের মাথায় এমন আজেবাজে কথা বলিস না। এতে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হবে।”

“আমি যা বলছি একদম ভেবে চিন্তেই বলছি আম্মা।”

জাহানারা বেগম আর দাঁড়ালেন না। ব্যাগপত্র সব কিছু নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন। আয়ুশ হতাশ চোখে সবটা দেখলো। একে একে সবাই স্থান ত্যাগ করলো। আলতাফ তালুকদার নিজের রুমের দিকে গেলেন এবং গুলশেনারা বেগম গেলেন তাকে বোঝাতে। আয়ুশ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিজের মায়ের পেছনে গেল তাকে বোঝাতে। দাঁড়িয়ে রইলো একা ঐশী আর ঈশিতা।

ঈশিতা ঐশীর কাছে এসে বলে,”এবার তুমি শান্তি পেয়েছ তো?”

ঐশী হতাশ সুরে বলে,”মানে?! আমি কেন এসবে শান্তি পাবো?”

“এটাই তো চেয়েছিলে তুমি যে, বাড়িতে একটা অশান্তি হোক। নাহলে তুমি নাহিদ ভাইয়ার পরিবারের লোকের সাথে এমন ব্যবহার করলে? তুমি কি বুঝতে পারো নি এর ফলে এমন কিছু হবে? নিজের পরিবারের সম্মানের কথা তো একবার ভাবতে।”

ঐশী বলে উঠল,”তুমি নিজেও তো পরিবারের সম্মানের কথা না ভেবে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গেছিলে। আর এখন তুমি আমায় জ্ঞান দিচ্ছ?”

ঈশিতা একটু থেমে বলে,”আমার পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল।”

“পরিস্থিতি ভিন্ন বলে কিছু হয়না ঈশিতা। নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কোন কিছু মেনে নেওয়া যায় না। তুমি পেরেছিলে আয়ুশ ভাইয়াকে সহজে মেনে নিতে?”

ঈশিতা আবারো চুপ। ঐশী মলিন হেসে বলে,”যদি মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কোন কিছু মানার ক্ষমতা আমাদের থাকতো তাহলে জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যেত৷ তবে এমনটা হবার নয়।”

ঈশিতা এবার একটু নরম সুরে বলে,”কিন্তু এখন সবটা তোমার হাতে আছে। তুমি দয়া করে এই বিয়েতে রাজি হয়ে যাও। তাহলেই দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাহলে মাও আবার বাড়িতে ফিরে আসবে।”

“আমি কোন পুতুল নই ঐশী, আমি একজন রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। আমার উপর এভাবে জোর করে কিছু চাপিয়ে দেয়া যাবে না।”

“নাহিদ ভাইয়া ছেলে হিসেবে খারাপ নয়। ও তোমাকে অনেক ভালোবাসে। অনেক বছর থেকে। তোমাকে ছাড়া সে বাঁচবে না।”

“ভালোবাসলেই যে তাকে পেতে হবে এমন কোন কথা নেই। আমিও তো একজনকে ভালোবেসে তাকে পাইনি। তো, আমি কি মরে গেছি? বাস্তবতা এমনই ঈশিতা। তুমি প্লিজ আমাকে আর এনিয়ে কিছু বলো না। প্রয়োজনে আমি এই বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে হলেও বড় আম্মুকে ফিরিয়ে আনব। কিন্তু নাহিদকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।”

বলেই ঐশী ক্রাচে ভড় দিয়ে স্থান ত্যাগ করে।

to be continue…..