আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব-২৩+২৪

0
81

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_23
#ইয়াসমিন_খন্দকার

ঐশী এসে দাঁড়ালো নাহিদদের বাড়ির সামনে৷ তার উদ্দ্যেশ্য একটাই, জাহানারা বেগমকে যেকোন মূল্যেই ঐ বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। সবদিক দিয়ে দায়সারা হতে চায় সে। কলিংবেল বাজানোর কিছু সময় পর নাজমা বেগম এসে দরজা খুলে দেন। ঐশীকে দেখে তিনি অবাক হয়ে যান৷ ঐশী সালাম বিনিময় করে জানতে চায়,”বড় আম্মু কি এই বাড়িতে আছে?”

নাজমা বেগম বলে ওঠেন,”হ্যাঁ, আছে। তুমি ভেতরে আসো।”

“বড় আম্মুকে একটু ডেকে দিন না প্লিজ। ওনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”

“তুমি ভেতরে এসো আমি জাহানারাকে ডেকে দিচ্ছি।”

ঐশী সহাস্যে ভেতরে প্রবেশ করে। নাহিদ তখনই নিজের রুম থেকে বের হচ্ছিল। ঐশীকে দেখে সে থেমে যায়৷ গতকালকের ঘটনা মনে করে দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তবুও নাহিদ আড়চোখে ঐশীকে দেখছিল। যা ঐশীর অস্বস্তি বাড়িয়ে দেয়। এদিকে জাহানারা বেগম সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে ওঠেন,”কেন এসেছিস এখানে তুই? আর কি নাটক দেখা বাকি রেখেছিস?”

নাহিদ প্রতিবাদী সুরে বলে,”ঐশীর সাথে একদম এভাবে কথা বলবে না, বড় আম্মু।”

ঐশী আবার নাহিদকে রাগী সুরে বলে,”উনি আমার বড় আম্মু। আমাকে উনি শাসন কর‍তেই পারে। আপনি এরমধ্যে ঢুকবেন না।”

এটা বলার পর সে জাহানারা বেগমের সম্মুখে গিয়ে বলে,”আমি তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি বড় আম্মু। তুমি আমার সাথে ফিরে চলো।”

“জুতা মে*রে এখন গরুদান করতে এসেছিস? আমি ফিরবো না আর ঐ বাড়িতে।”

“তুমি চলে আসার পর ঐবাড়ির কেউ ভালো নেই বড় আম্মু। দাদি প্রতিনিয়ত কাঁদছে,এই বয়সে এসে নিজের বৌমাকে বাড়ি ছাড়তে দেখে তিনি ব্যথিত। বড় আব্বু মুখে কিছু না বললেও তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার বুক কষ্টে ফেটে যাচ্ছে।”

“তো আমি কি করব?”

“তুমি ফিরে চলো। প্রয়োজনে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসব।”

নাহিদ তাদের কথার মাঝে বলে ওঠে,”বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোথায় যাবেন আপনি?”

“সে ব্যাপার নিয়ে তো আপনায় ভাবতে বলিনি।”

জাহানারা বেগম সরাসরি জানিয়ে দেন,”আমার তোকে সহ্য হয়না এটা ঠিক কিন্তু আমি তোকে বাড়ি ছাড়া করতেও চাই না। আর তুই বাড়ি ত্যাগ করলে আমি ঐ বাড়িতে ফিরবো এটা ভাবলে তুই ভুল করবি। শুধু একটা শর্তেই আমি ঐ বাড়িতে ফিরব আর সেটা হলো তোকে নাহিদকে বিয়ে করতে হবে।”

“বড় আম্মু!”

“এছাড়া আর যাই করিস তুই আমি ফিরবো না।”

নাহিদের ধৈর্যের সীমা এবার ভেঙে যায়।

“তুমি এভাবে ঐশীর উপর চাপ প্রয়োগ করো না, ফুফু। আমি ওনাকে ভালোবেসে জয় করতে চাই, জোরজবরদস্তি করে নয়।”

জাহানারা বেগম নাহিদের কথা আমলে না নিয়ে বলেন,”আমি একবার যেটা বলে দিয়েছি সেটাই হবে। এখন তুই ভাব কি করবি।”

নাজমা বেগম মুচকি হাসেন। কারণ এটা তারই পরিকল্পনা। নিজের ছেলের ভালোর জন্য এতটুকু তো তাকে করতেই হতো। তিনিই জাহানারা বেগমকে এটা শিখিয়ে দিয়েছিলেন।

ঐশী উঠে দাঁড়ায়। ফিরতে ফিরতে বলে,”আমি ভেবে তোমায় সব জানাচ্ছি বড় আম্মু।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
গুলশেনারা বেগমের রুমে এসে বসে আছে ঐশী। তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেছে ঐশী। সব শুনে গুলশেনারা বেগম ঐশীর সামনে হাতজোড় করে বলেন,”তুই এই বিয়েটা করে নে, ঐশী। আমার সংসারটা রক্ষা কর তুই।”

“দাদি! তুমিও?!”

“আমি যা বলছি সবদিক ভেবেই বলছি৷ তোর তো বিয়ের বয়স হয়েছেই। আর নাহিদ তো ছেলে হিসেবে খারাপ নয়। বিয়েটা করতে তো তোর কোন অসুবিধা থাকার কথা না।”

“কিন্তু আমার মন যে মানতে চায়না?”

“মন না মানলেও মনকে মানাতে হবে। আয়ুশকে যে তুই আর পাবিনা এটা মেনে নে। আর বিয়ে না করলে তো অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ হয়না। তুই তো মোটামুটি ইসলামী মনস্ক, তোর তো এটা জানা উচিৎ। আজীবন একা থাকব এটাকে ইসলাম সমর্থন করে না। আজ নাহয় কাল তোকে বিয়ে করতেই হবে৷ আয়ুশ তোর কাছে কেবল একটা দ্বিধার নাম৷ যেই দ্বিধা তোকে বয়ে নিয়ে বেড়ালে চলবে না। তুই বিয়েটা করে নে। এতে তোরও ভালো আর এই সংসারেও শান্তি ফিরবে।”

ঐশী আর কিছু বলতে পারল না। কারণ গুলশেনারা বেগমের বলা কোন কথাই মিথ্যা নয়। তাই সে উঠে দাঁড়ালো। অতঃপর বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো। আয়ুশের কথা ভেবে কিছুক্ষণ কাঁদল। কেন যে মনে থাকে সে ভাগ্যে থাকে না?! ঐশীর কান্নার আওয়াজ ভারী হলো৷ অনেক ভেবে চিন্তে ঐশী বলল,”বড় আম্মুকে জানিও দাও, আমি নাহিদকে বিয়ে করতে রাজি আছি।”

গুলশেনারা বেগম স্বস্তি পান।

.
“ভেতরে আসতে পারি?”

ঐশী সবেমাত্র ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সময় আয়ুশের আগমন ঘটে। আয়ুশকে দেখে ঐশী মলিন হেসে বলে,”হ্যাঁ, এসো। বড় আম্মু কি চলে এসেছে?”

“হুম, মা এসেছে।”

“ভালো।”

“তুই কি মন থেকে এই বিয়েতে রাজি ঐশী?”

“মন থেকে রাজি না থাকলে কি রাজি হতাম?”

আয়ুশ ঐশীর কাছে এসে বলে,”তাকা আমার দিকে।”

ঐশী তাকায়। কিন্তু বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না। চোখ সরিয়ে নেয়। আয়ুশ বলে ওঠে,”তুই কি আমাকে ভালোবাসতি ঐশী?”

ঐশী হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার মুখ থেকে কোন কথা বেরোয় না।

“কি হলো চুপ করে আছিস কেন বল? ভালোবাসতি আমায়?”

“না..”

“তোর চোখ দেখে মনে হচ্ছে তুই মিথ্যা বলছিস।”

“ভালোবাসতাম না আমি তোমায় এখনো বাসি..”

বলেই কাঁদতে শুরু করে দেয় ঐশী। আয়ুশও আবেগপ্রবণ হয়ে যায়। ঐশীর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে,”দুঃখিত, আমার জন্য তোকে বোধহয় অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। সেসব হয়তো আমি বদলাতে পারবো না। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি তোকে কখনো নিজের বোনের থেকে বেশি কিছু ভাবিনি। তোর প্রতি করা কেয়ারগুলোও বোন হিসেবেই ছিল।”

“জানি আমি, ভাইয়া। দোষটা আসলে আমারই ছিল। আমিই বেশি কিছু ভেবে নিয়েছিলাম।”

“নিজেকে দোষ দিয়ে তুই মানসিক শান্তি পাবি না। দোষ আসলে কারো না, দোষ ভাগ্যের, দোষ পরিস্থিতির। আজ যদি আমি অবিবাহিত থাকতাম তবুও আমি তোকে ফিরিয়ে দিতাম। কারণ তুই আমার কাছে আমার নিজের বোনের মতোই। আর এখন তো আমি বিবাহিত।”

ঐশী কিছু বুঝতে পারছিল না। আয়ুশ বলল,”তুই যদি তোর মনের কথা আগেই আমাকে বলতি তাহলে ভালো হতো। তাহলে এতগুলো দিন তোকে এই কষ্ট মনে চেপে নিয়ে থাকতে হতো না, এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না। আমি না বললেই, তুই মুভ অন করতে পারতি। শুধু শুধু মিছে আশা মনে রেখে কষ্ট পেলি।”

ঐশীর কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে যায়।

“আমি কি করবো ভাইয়া? আমার মন যে মানতে চায় নি। আমি জানতাম, তোমাকে আমি পাবোনা। কিন্তু তবুও মনে আশা রেখেছিলাম। ঐ যে ছোটবেলায় শুনেছিলাম না, মন থেকে চাইলে সবকিছু পাওয়া যায়। আমি সেই আশাতেই ছিলাম এতগুলো দিন৷ ঈশিতা বিদেশে যাবার পর আমার মনে ক্ষনিক আশা জেগেছিল কিন্তু..ঐ যে ভাগ্য। সেটা যে আমার পক্ষে না।”

“আমি বুঝতে পারছি তোর কষ্টটা। তবে এখন তোকে এইসব কষ্ট ভুলে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য তোর নতুন করে জীবন শুরু করা প্রয়োজন। নাহিদ, ও অনেক ভালো ছেলে। তোকে অনেক ভালো রাখবে। দেখবি ওকে পেলে তুই আমাকে ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারবি। ঐ তোর জন্য উত্তম। কারণ ও তোকে ভালোবাসে৷ ঐ যে কথায় আছে না,তুমি তার কাছে বেশি সুখে থাকবে যে তোমায় ভালোবাসে নাতো যাকে তুমি ভালোবাসো। আমি কখনোই তোকে সেই নজরে দেখতাম না। ভালো থাকিস।”

বলেই চলে যায় আয়ুশ। ঐশী তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,”আজ থেকে আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচা ছেড়ে দিলাম। এখন থেকে শুরু হবে আমার নতুন জীবন।”

to be continue…..

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_24
#ইয়াসমিন_খন্দকার

ঐশী একটা লাল বেনারসি শাড়ি পড়েছে, সাথে সোনার অলংকার। আজকে তার বিয়ে নাহিদের সাথে। চারিদিকে চলছে আনন্দ আয়োজন৷ কিন্তু আনন্দ নেই ঐশীর মনে। কারণ সে মন থেকে এই বিয়েটা মেনে নিতে পারছে না। ঈশিতা এসে ঐশীকে সাজানো দেখে বলল,”ভীষণ সুন্দরী লাগছে তোমায়। নাহিদ ভাই তো একদম তাক লেগে যাবে!”

বিনিময়ে ঐশী শুধু মলিন হাসে। ঐশীর হাসি মিলিয়ে যায় মলীনতার ভাজে। ঈশিতা এমনটা দেখে বলে,”তুমি কি এখনো এই বিয়েটা নিয়ে খুশি নও?”

“যদি আমি বলি যে, আমি খুশি। তাহলে এটা মিথ্যা হয়ে যাবে।”

ঈশিতা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ঐশী বলে,”তুমি খুব ভাগ্যবান জানো, তুমি আয়ুশ ভাইয়ার ভালোবাসা পেয়েছ।”

“তোমাকে একটা কথা বলি, আমি কিন্তু বিয়ের সময় তোমার আয়ুশ ভাইকে একদম পছন্দ কর‍ত না কিন্তু তিনি আমায় পছন্দ করতেন। আর আজ দেখ, আমরা কত সুখী৷ কারণ তোমার আয়ুশ ভাইয়ার এত গভীর ভালোবাসা আমায় বাধ্য করেছে তাকে ভালোবাসতে। আর নাহিদ ভাইও তোমাকে অনেক ভালোবাসে। দেখবে তার থেকে এত ভালোবাসা পেয়ে তুমি ঠিকই মানিয়ে নেবে।”

ঐশী বিপরীতে কিছু বলে না৷ শুধু তাকিয়ে থাকে আকাশের পানে। মহান সৃষ্টিকর্তা সকলের ভাগ্য লিখে রাখে। ঐশীর ভাগ্যে হয়তো এমনটাই লেখা ছিল। ঐশী নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে। তাই এখন তার আর বেশি কষ্ট হচ্ছে না।

~~~~~~~~~~~~~~~
ঐশীকে এসে বসানো হয়েছে নাহিদের সামনে। বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়৷ কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। একসময় তিনি কনেকে কবুল বলতে বলেন। ঐশী অনেকক্ষণ চুপ থাকে। কবুল বলতে গিয়ে যেন তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ চলছে। তবুও ঐশী দুচোখ বুজে শক্ত করে নিলো নিজেকে। অতঃপর ধীর গলায় বললো,”কবুল।”

নাহিদ বেশি সময় না নিয়ে কবুল বলে দিলো। এরই মাধ্যমে এক গভীর বন্ধনে বেঁধে গেলো দুজনে।

ঐশী কবুল বলার পর থেকে মনমরা হয়ে বসেছিল। নাহিদ তার কানে কানে এসে বলে,”যত মনমরা হয়ে থাকার শখ এখন থাকো। আজ থেকে তোমার সব দুঃখ আমি গ্রাস করব। সুখের চাদরে মুড়িয়ে দেব তোমায়। কথা দিলাম প্রেয়সী। আমি জানি, এই বিয়েতে তোমার মত ছিল না। কিন্তু দেখবে একদিন তুমি ঠিকই আল্লাহকে ধন্যবাদ দেবে।”

ঐশী কিছু বলল না৷ তবে সে চায় খুশি হতে, যা হয়েছে তা মেনে নিতে। ভাগ্যকে অস্বীকার করার তো কোন উপায় নেই৷ ভাগ্যকে মেনে নেওয়াই সব থেকে ভালো পন্থা৷ জীবনে সুখ খুব কম পেয়েছে ঐশী। পায়নি বললেও ভুল বলা হয়না। জীবনে সুখ দুঃখের পাল্লা মাপলে দুঃখের পাল্লাই ভারী হবে। তাই এখন সে জীবনে এক চিমটি সুখ চায়। দুঃখের গল্প থেকে মুক্তি চায়। দীর্ঘ কয়েক বছর সে বেঁচেছে দ্বিধাদ্বন্দে। তবে আর না। সে আর এই দ্বিধা বয়ে নিয়ে বেড়াবে না। জীবনকে আরেকটা সু্যোগ দেবে নতুন করে গড়ার জন্য। সুন্দর গড়া জীবনে সুন্দর কাহিনি রচনা করবে। নাহিদ নাহয় সেই জীবনে তার সঙ্গী হবে। আর তার সাথে বাকি জীবনটা সুখে শান্তিতে কাটাবে।

~~~~~~~~~~~
নাহিদের বিয়ে উপলক্ষে আজ তামিমও এসেছে এই স্থানে যেহেতু সে নাহিদের প্রিয় বন্ধু। তামিম আজ এসেছে থেকে ঈশিতাকে দেখছে। ঈশিতা সবার সামনে তামিমের সাথে কথা বলার সুযোগ পায় না। তবে ভীড় একটু কমতেই তামিমের কাছে গিয়ে বলে,”কেমন আছ তামিম ভাই?”

“আছি কোনরকম, তুই তো বিদেশ থেকে এসেছিস থেকে আমায় ভুলেই গেছিস।”

“ভুলে যাই নি তো। আসলে অনেক ব্যস্ত ছিলাম তাই আরকি যোগাযোগ করতে পারি নি।”

“হুম, বুঝলাম।”

এরমধ্যে আয়ুশ তামিম ও ঈশিতাকে একসাথে দেখে রেগে গেলো। সে তাদের কাছে এসে ঈশিতার হাত ধরে বলে,”তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।”

বলেই ঈশিতাকে একপ্রকার টেনে নিয়ে যায়। তামিম বাঁকা হেসে বলে,”এভাবে নিজের বউকে আমার থেকে দূরে রাখতে পারবা না আয়ুশ। আমার পছন্দের জিনিসকে কিভাবে নিজের করে নিতে হয় সেটা আমি খুব ভালো করেই চিনি।”

এদিকে ঈশিতা আয়ুশকে বলে,”আপনি এভাবে আমাকে তামিম ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে এলেন কেন? উনি কি মনে করলেন?”

“কি মনে করে করুক। তুমি ওর থেকে দূরে থাকবে ব্যস।”

“কেন?”

“কেন তুমি জানো না? কিছুদিন আগেই ওকে নিয়ে আমাদের মাঝে এত ঝামেলা হলো৷ এসবের মধ্যেই ভুলে গেলে!”

“সেটা আপনার ভুল ছিল। আপনি আমার উপর বিশ্বাস রাখতে চান নি।”

“আমি এত তর্ক করতে চাই না ঈশিতা। তোমাকে যা বলছি তাই শুনে চলবে।”

ঈশিতা আর কথা বাড়ায় না।

~~~~~~~~~
ঐশীর বিদায়ের পালা আসে। সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ে। বিশেষ করে গুলশেনারা বেগম। ঐশী নিজেও আজ কাঁদছে। জাহানারা বেগমও একটু মিছে কান্না করলেন। যদিওবা ঐশীর বিদায়ে তিনি মোটেই দুঃখী নন। বরং অনেক খুশি তিনি। তবু সবার সামনে একটু লোক দেখানো কান্না তো করতেই হবে।

এত সবার মধ্যে আয়ুশ ঈশিতাকে কোথাও দেখতে পেল না। আবার তামিমও সেখানে উপস্থিত ছিল না৷ যদিও তার বরযাত্রীর সাথে যাবার কথা। এই বিষয়টা আয়ুশের মনে খটকা তৈরি করলো। আয়ুশ আশেপাশে খুঁজতে গেল।

এদিকে ঈশিতার মাথা ব্যথা করছিল জন্য সে চুপ করে বাইরের দিকে একটা রুমে বসে ছিল। তামিম ঈশিতার কাছে এসে বলে,”তোকে এমন লাগছে কেন? কোন অসুবিধা?”

“আমার মাথাটা একটু ব্যথা করছে। তুমি এখানে? বরযাত্রীর সাথে যাবে না তামিম ভাই?”

তামিম ঈশিতার আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে বলল,”তোকে এই অবস্থায় রেখে কিভাবে যাই!”

ঈশিতার অস্বস্তি বোধ হয়৷ সে দূরে সরে যেতে চায়। তামিম ঐশীকে আরো শক্ত করে ধরে বলে,”আমার থেকে আর দূরে থাকিস না তুই!”

“তামিম ভাই কি করছ?! ছাড়ো আমায়।”

তামিম ঈশিতাকে আরো কাছে টানতে থাকে। ঈশিতা ধস্তাধস্তি শুরু করে দেয়। তামিম ঈশিতাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। ঈশিতার গায়ে জ্বর ছিল খানিক। তাই তার শরীরে জোর ছিল না। ঈশিতা বলল,”আমি কিন্তু চিৎকার করব..”

“কর না। এতে তোরই সম্মান যাবে। সবাই যদি এসে আমাদের এই অবস্থায় দেখে তাহলে তোকে কি ভাববে?!”

ঈশিতা তামিমের কাছে অনুরোধ করতে থাকে তাকে ছেড়ে দেয়ার। এমন সময় আয়ুশ সেই স্থানে চলে আসে। আয়ুশ এসেই বলে ওঠে,”তামিম!”

ঈশিতার উপর থেকে সরে আসে তামিম। আয়ুশ এসে তামিমের কলার চেপে ধরে৷ তাকে মা***রতে থাকে। তামিমও প্রতিবাদ করে। এরমধ্যে আরো কিছু মানুষ সেখানে চলে আসে। তামিম সবার সামনে বলে,”আমাকে ছাড়ো আয়ুশ”

“তোর এত বড় সাহস আমার দিকে হাত বাড়াস!”

“আমি তোর বউয়ের দিকে হাত বাড়াই নি। ও নিজেই আমাকে ওর কাছে ডেকেছে।”

ঈশিতা বলে ওঠে,”এসব মিথ্যা কেন বলছেন তামিম ভাই?! আপনিই তো…”

আয়ুশ তামিমকে ছেড়ে ঈশিতার কাছে আসে। ঈশিতাকে বলে,”তামিম যখন তোমার ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করছিল তখন তুমি প্রতিবাদ করো নি কেন? অন্তত চিৎকার তো করতে পার‍তে সেটা কেন করো নি? নাকি এসব স্পর্শ উপভোগ করছিলে?!”

“আয়ুশ! এসব কি বলছেন আপনি? আমি কেন..”

তামিম বলে,”আর নাটক করিস না জান। সবাই যখন সব জেনে গেছে তখন আর নাটক করে লাভ নেই। আমি এখন একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। তুইও তাই। এখন আমাদের আর তোমার স্বামীর বাড়ির সাহায্য লাগবে না। তাই এইসব অভিনয়ও অর্থহীন।”

ঈশিতা আয়ুশকে বলে,”বিশ্বাস করুন এসব মিথ্যে..”

এদিকে আশেপাশে উপস্থিত মানুষ নানারকম কথা বলতে থাকে। সবাই ঈশিতার চরিত্রের দিকে আঙুল তোলে। আর ঈশিতা আয়ুশের প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায় বসে থাকে।

to be continue…..