আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব-২৫+২৬

0
85

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_25
#ইয়াসমিন_খন্দকার

ঈশিতা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আয়ুশের পানে। সবাই যখন তাকে নিয়ে নানারকম নোংরা কথা বলছে আয়ুশ তখন একদম চুপ। ইতিমধ্যেই জাহানারা বেগম, আলতাফ তালুকদারও সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। জাহানারা বেগমও ঈশিতার দিকে ঘৃণাভরা চোখে তাকিয়ে। ঈশিতা আয়ুশের কাছে গিয়ে বলে,”আপনি আমায় বিশ্বাস করুন প্লিজ। এর আগেও তো আমাকে একবার ফাসানো হয়েছিল৷ এবারও হয়তো…”

তখনই তামিম বলে ওঠে,”তুমি আবারও আগের মতো নাটক কেন করছ জান? এর আগে তো আমি মামাকে দিয়ে মিথ্যা নাটক করে সব ম্যানেজ করলাম। কারণ তোমার নাকি এই পরিবার থেকে সাহায্য দরকার। সেটা নিশ্চয়ই পেয়ে গেছ। তাহলে এখন এসব নাটক কিসের?”

“এইসব মিথ্যা।”

তামিম বলে,”এখনই প্রমাণ হবে মিথ্যা না সত্য।”

বলেই সে নিজের মামাকে কল করে। তিনি ফোনটা রিসিভ করতেই তামিম লাউড স্পিকারে দেয়। তিনি বলেন,”কি ব্যাপার ভাতিজা এতদিন পর আবার কল দিলে কেন? সেদিন তো তোমার কথায় আমি তালুকদার পরিবারের সামনে গিয়ে মিথ্যা অভিনয় করলাম। আর কিন্তু এসব করতে পারবো না। আমার বয়স হয়েছে..এখন কোথায় একটু ধর্মকর্মে মন দেব তা না তোমার আর ঈশিতার পাল্লায় পড়ে এসব করতে হচ্ছে। তুমি ঈশিতাকে বলো তো তাড়াতাড়ি ডিভোর্স নিয়ে চলে আসতে। তাহলে আর এসব অভিনয়ের প্রয়োজন হবে না।”

ঈশিতা ফোন কেড়ে নিয়ে চেচিয়ে বলল,”এসব কি বলছেন আপনি আঙ্কেল?”

“যা সত্যি তাই তো বলছি ঈশিতা মা। তুমি এত রিয়্যাক্ট করছ কেন?”

জাহানারা বেগম এগিয়ে এসে ঈশিতাকে ঠাটিয়ে চ’ড় মে*রে বলেন,”শয়তান মেয়ে…তোকে বিশ্বাস করে আমরা আবারো ঠকলাম। তুই প্রমাণ করে দিলি কতটা নিচ তুই। আমার ছেলে তোর জন্য এত কিছু করল আর তুই ওকে এত বাজেভাবে ঠকালি। তোর কোনদিনও ভালো হবে না।”

ঈশিতা আয়ুশের কাছে যায়। তার হাত বলে,”এই দুনিয়ার সবাই আমাকে অবিশ্বাস করুক, আমার কিছু যায় আসে না৷ শুধু আপনি আমায় বিশ্বাস করুন।”

আয়ুশ ঈশিতার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”অনেক হয়েছে আর না। বারবার আমি তোমায় বিশ্বাস করে এভাবে ঠকতে পারব না। আমিও একটা মানুষ ঈশিতা..আমারো আবেগ, অনুভূতি বলে কিছু আছে। আমার সহ্যসীমা পার হয়ে গেছে সবকিছু। তুমি আমার সাথে আর এমন করো না। তুমি যদি আমার কাছে সুখ না পাও তাহলে যাও তামিমের কাছে। ওর কাছে গিয়ে সুখের সন্ধান করো। আমাকে আর দ্বিধায় রেখো না। আমি তোমার দ্বিধায় আর বাঁচতে পারবো না, বাঁচতে চাইওনা। আমার মুক্তি দরকার এসব থেকে মুক্তি।”

বলেই হনহন করে সেই স্থান ত্যাগ করে। ঈশিতা অনেক অনুনয় বিনয় করে তার পায়ে পর্যন্ত পড়তে যায় কিন্তু কোন লাভ হয়না। আলতাফ তালুকদার গম্ভীর সুরে বলেন,”এই মেয়ে অনেক নাটক হয়েছে আর না..তোমার জন্য আমাদের পরিবারের মান সম্মান একদম শেষ হয়ে গেছে। এতগুলো মানুষ আমাদের পরিবারের দিকে আঙ্গুল তুলে আমাদের সম্মানহানি করছে। বলছে যে, তালুকদার পরিবারের বউ দুশ্চরিত্রা। এত অপমান আমরা আর নিতে পারছি না। এবার আমার ছেলেটাকে, আমাদের পরিবারকে, আমাদের সবাইকে তুমি মুক্তি দাও।”

এরইমধ্যে কিছু মহিলা বলাবলি করছিল,”দেখো এই মেয়েকে..কতটা নির্লজ্জ ও..আমরা হলে তো এত অসম্মানের পর গলায় দ** দিয়েছে মরতাম। আর এ কেমন বিলজ্জের মতো দাঁড়িয়ে আছে।”

“আরে এসব মেয়েদের আবার লজ্জা বলে কিছু আছে? চরিত্রহীন মেয়ে। এত ভালো স্বামী থাকতে বাইরে সুখের খোঁজ করে।”

এসমস্ত কথা ঈশিতাকে একদম ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল। সে আর সইতে না পেরে কান চেপে ধরে। জাহানারা বেগম এগিয়ে এসে ঈশিতার হাত ধরে হিরহির করে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে। ঈশিতা বলতে থাকে,”আমায় বিশ্বাস করুন মা..আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে। দয়া করে আমায় বিশ্বাস করুন..”

“চুপ..একদম চুপ..তোকে আমি আর কখনোই বিশ্বাস করবো না। তোকে বিশ্বাস করার বদৌলতে আজ আমাদের এত কিছু সহ্য করতে হচ্ছে। তোর জন্য সবার সামনে আমরা ছোট হয়ে গেলাম কিন্তু আর না..এবার তুই এই বাড়ি থেকে বের হ।”

বলেই দরজার কাছে নিয়ে গিয়ে ঈশিতাকে জোরে ধাক্কা দেয়। ঐশী মেঝেতে পড়ে মাথায় আঘাত পায়। কাঁদতে কাঁদতে আয়ুশকে ডাকতে থাকে কিন্তু আয়ুশ কোন সাড়া দেয় না।

ঈশিতা সেখানেই বসে থাকে। এমন সময় কেউ এসে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। ঈশিতা চোখ তুলে তামিমকে দেখে ঘৃণায় থুথু ছিটায় তার দিকে। তামিম থুথু মুছে ফেলে হেসে বলে,”যতই আমার মুখে থুতু ছিটাও না কেন..আমি ছাড়া এখন তোমাকে সাহায্য করার মতো আর কেউ নেই ঈশিতা।”

“তোমার দিকে তাকাতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। আমার নিজের প্রতিও ঘৃণা হচ্ছে এটা ভেবে যে একসময় আমি তোমার মতো ঘৃণ্য মানুষকে ভালোবাসতাম। তুমি আমার সংসারটা একদম তছনছ করে দিলে। দেখবে কোনদিনও তোমার ভালো হবে না। একদিন সব সত্যি সামনে আসবেই।”

“এত অপমানের পরেও কি তুমি আয়ুশের কাছে ফিরে যাবে? তাহলে আমি কি দোষ করলাম? সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বাসটাই আসল। কিন্তু তোমার স্বামী তো তোমাকে বিশ্বাসটাই করে না।”

“করতে হবে না বিশ্বাস। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আয়ুশ আমায় ছেড়ে দিয়েছে জন্য আমি তোমার কাছে যাব। তুমি তো আয়ুশের থেকেও জঘন্য। আর আয়ুশ আজ যা করল তাতে আমি আর কখনোই ওর কাছে ফিরতে চাই না। কিন্তু তবুও তোমার এই কদর্য মুখোশ আমি সবার সামনে আনতে চাই। যাতে সবাইকে বোঝাতে পারি যে, আমি দুশ্চরিত্রা নই।”

বলেই ঈশিতা হাটা শুরু করে। তামিম তার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,”কোথায় আর যাবে? সেই তো শেষে আমার কাছেই ফিরতে হবে।”

ঈশিতা হাটতে হাটতে অনেক দূরে আসে, তার কানে সবার করা গঞ্জনা বাজছিল। মাঝরাস্তায় এসে নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয়। ঈশিতার মাথায় হঠাৎ অদ্ভুত চিন্তা আসে। বিপদের সময় শয়তান আমাদের বেশি বেশি ধোকা দেয়। এক্ষেত্রেও তাই হলো। ঈশিতা স্বগোতক্তি করে বলল,”কি হবে নিজেকে আর নির্দোষ প্রমাণ করে? আমার আপনজন বলতে আমি যাদের জানতাম তারা কেউই তো আমায় বিশ্বাস করে না। আজ সবার চোখে আমি চরিত্রহীন। কি হবে এই জীবন রেখে?”

এমন ভাবনা থেকে ঈশিতা এগিয়ে যেতে থাকে। সামনে একটা খরস্রোতা নদী। ঈশিতা ভাবল আজ এই নদীতে ঝাপ দিয়ে নিজেকে শেষ করে দেবে। কিন্তু নদীর কাছে যাওয়ার পূর্বেই তার মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। ঈশিতা এদিক ওদিক তাকায়। কেউ নেই আশেপাশে। ঈশিতা হঠাৎ করেই জ্ঞান হারিয়ে সেখানে পড়ে যায়।
~~~~~~~~~~~~~~~
আয়ুশ নিজের কক্ষে এসে সমানে ঈশিতার কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছিল। ঈশিতাকে তো ভালোবাসত সে, তাকে বিশ্বাসও করতে চায়। কিন্তু পরিস্থিতি তাকে অবিশ্বাস করতে বাধ্য করে। আয়ুশের ভীষণ অস্থির লাগছিল তাই সে রুম থেকে বের হয়ে আসে। এসেই জাহানারা বেগমের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”ঈশিতা কোথায় মা?”

জাহানারা বেগম রেগে বলেন,”খবরদার আমার সামনে ঐ পাপী, দুরাচারী মেয়ের নাম নিবি মা। ওকে আমি বের করে দিয়েছি এই বাডি থেকে।”

“সেকি! এত রাতে ও কোথায় যাবে?”

“যেখানে খুশি যাকে তাতে তোর কি? ও মেয়ে মরুক বাঁচুক তাতে আমাদের আর কিছু নেই।”

“কিন্তু..”

“এতকিছুর পরেও তুই কিন্তু বলছিস!”

আয়ুশ আর কিছু বলে না। মনে মনে ভাবলো,”মা তো ঠিকই বলছে..যে আমার কথা ভাবে নি তার কথা আমি কেন ভাববো। ওর সাথে যা খুশি হোক তাতে আমার কিছু আসে যায়না।”

নিজের মনকে এসব বলে শান্তনা দিতে চাইলেও সে ব্যর্থ হয়। অবচেতন মন ঈশিতার চিন্তায় ব্যকুল হয়ে যায়। চমৎকার এক দ্বিধায় পড়ে যায় তার মন।

to be continue…..

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_26
#ইয়াসমিন_খন্দকার

ঈশিতার জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে আবিস্কার করে কোন এক হাসপাতালে। জ্ঞান ফিরতেই সে উঠে বসার চেষ্টা করে। এমন সময় একজন নার্স এসে বলে,”আরে কি করছেন..উঠবেন না। আপনার শারীরিক অবস্থা বেশি ভালো না, আপনার বিশ্রামের প্রয়োজন।”

ঈশিতা পিটপিট করে চেয়ে থাকে চারিপাশটায়। যায়গাটা তার অচেনা। ঈশিতা মনে করার চেষ্টা করল সর্বশেষ সে কোথায় ছিল৷ তখনই মনে পড়ে গেলো নিজের এক আত্মঘা*তী সিদ্ধান্তের কথা। ঈশিতার এবার ভীষণ রাগ হলো নিজের উপর। নিজের প্রতি
বিতৃষ্ণা জাগল। কেন এমন একটা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছিল সে? কাদের জন্য, যারা তাকে সামান্যতম বিশ্বাস পর্যন্ত করে না।

একজন ডাক্তার রুমে প্রবেশ করলেন। তিনি এসেই ঈশিতার কাছে এসে বললেন,”আপনি ঠিক আছেন এখন?”

ঈশিতা বলল,”জ্বি, ঠিক আছি।”

“এই অবস্থায় তো আপনার অনেক বেশি বিশ্রামের প্রয়োজন। আর আপনি এভাবে রাস্তা ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন!”

ঈশিতা কিছু বুঝতে না পেরে বলে,”মানে কি বলতে চাইছেন টা কি আপনি?!”

ডাক্তার বলে উঠলেন,”আপনি মা হতে চলেছেন।”

ঈশিতা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল ডাক্তারের দিকে। এ তিনি কি কথা শোনালেন! ঈশিতা বিমূঢ় হয়ে গেল। কথা বলার শব্দই হারিয়ে ফেলল। নিজের পেটে হাত বুলিয়ে বলল,”এ আমায় কি খবর শোনালেন আপনি!”

“কেন? আপনি খুশি হন নি?”

ঈশিতার ভেতর থেকে কোন অনুভূতির প্রকাশ ঘটছে না। যেন অনুভূতিহীন পাথর সে। মা হওয়া একটা মেয়ের কাছে সৌভাগ্য, সুখের খবর। ঈশিতারও এখন সুখী হবার কথা। কিন্তু সে পারছে না সুখী হতে। কারণ বর্তমানে সে যেই সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তাতে তার কাছে মুখ্য বিষয় হচ্ছে নিজেকে এই জীবনযুদ্ধে টিকিয়ে রাখা। সেই সময় এক নতুন প্রাণকে সে এই সংসার সমরাঙ্গনে কিভাবে সামলাবে?! তার বাবা কি তাকে স্বীকৃতি দেবে। এমন কথা মাথায় আসতেই ঈশিতার মনে পড়ে গেল আয়ুশের বলা কিছু তিক্ত কথা। ঈশিতা বলে উঠল,”আমার সন্তানের কারো স্বীকৃতির প্রয়োজন নেই। যে আমাকে বিশ্বাসই করে না, তার কাছে আমি আমার সন্তানের পিতৃত্বের দাবি নিয়ে যাবো না। প্রয়োজনে আমি একা হাতে আমার সন্তানকে মানুষ করবো। তবুও আমি কারো মুখাপেক্ষী হবো না,কারোই না। যেখানে বিশ্বাস নেই, সেখানে কোন সম্পর্কের মূল্যও নেই।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আয়ুশ তার প্রিয় বন্ধু রাসেলের সাথে ফোনে কথা বলছিল। রাসেল আয়ুশকে বলছিল,”বারবার কেন একই ভুল করিস তুই আয়ুশ? কেন আবার ভাবিকে ভুল বুঝলি? গতবার কি তোর শিক্ষা হয়নি?!”

আয়ুশ শান্ত স্বরে বলে,”আমি ঈশিতাকে ভুল বুঝিনি। আমি জানি, ও কোন ভুল করতে পারে না, এসব কিছু তামিমের ষড়যন্ত্র সে ব্যাপারেও আমি নিশ্চিত!”

“তাহলে তুই কেন ভাবিকে সমর্থন করলি না?”

আয়ুশ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”করিনি এর কারণ আছে। তামিম সবার সামনে ঈশিতার চরিত্রের দিকে আঙুল তুলেছে। আমি যদি ঈশিতাকে বিশ্বাস করতাম তাও আর পাঁচটা লোক ঈশিতার চরিত্রের দিকে আঙুল তুলতো। তাই আমি চেয়েছি, সবার সামনে তামিমের সব ষড়যন্ত্র বের করে আনতে। আর এজন্য তামিমকে এটা বিশ্বাস করানো জরুরি ছিল যে,আমি ঈশিতাকে ভুল বুঝেছি। সেজন্যই আমি সবার সামনে এমন প্রিটেন্ড করেছি যে আমি ওকে বিশ্বাস করি না। তামিম এখন নিশ্চয়ই আত্মতুষ্টিতে ভুগছে। ভাবছে ওর উদ্দ্যেশ্যে ও সফল। আমি এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই ওর পর্দাফাঁস করবো।”

রাসেল প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,”ও তাই বল। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। ভেবেছিলাম তুই বুঝি আবার ভাবিকে ভুল বুঝলি।”

“এখন শান্তি পাওয়ার সময় নেই রাসেল। আমি ভেবেছিলাম, সবার আড়ালে ঈশিতাকে সব কথা জানিয়ে দেব যে আমি ওকে ভুল বুঝিনি এবং নিজের সব পরিকল্পনার কথাও জানাবো। কিন্তু এদিকে একটা ব্লান্ডার হয়ে গেছে। আমি ঈশিতাকে কিছু জানানোর পূর্বেই মা ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।”

রাসেল ভয়ার্ত স্বরে বলে,”সেকি! ভাবি কোথায় এখন?”

“জানি না রে, দোস্ত। আমি বিগত কয়েক ঘন্টা ধরে সম্ভাব্য সব জায়গায় ওকে খুঁজে চলেছি। কিন্তু ওর কোন সন্ধান পাচ্ছি না। জানি না, ও কোথায় চলে গেছে। আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে।”

উদাস স্বরে বলে আয়ুশ।

রাসেল একজন পুলিশ অফিসার। তাই সে আয়ুশকে ভরসা দিয়ে বলে,”তুই একদম চিন্তা করিস না,আমি আসছি। যত দ্রুত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা দুজনে মিলে ভাবিকে খুঁজে বের করবো।”

“তুই ছাড়া এখন আমার আর ভরসা করার মতো কেউ নেই, রাসেল। তাই তো আমি অসহায় হয়ে তোকে বললাম।”

“একদম ঠিক করেছিস। আমি শীঘ্রই আসছি।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ঐশী বাসর ঘরে বসে নাহিদের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। এই নতুন ঠিকানায় তার প্রথম রাত অন্যরকম এক অনুভূতিতে ভাসিয়ে দিচ্ছে। যতদূর সে দেখেছে এই পরিবারের লোকগুলো কেউ খারাপ না। সবাই ঐশীর সাথে বেশ ভালো ব্যবহার করেছে। ঐশী সবার ব্যবহারে যথেষ্ট সন্তুষ্ট। আর নাহিদ! সে তো ঐশীর প্রতি যথেষ্ট দায়িত্বশীল আচরণ করেছে। ঐশীর মনে যেন নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। দাদির বলা কথা গুলো মনে পড়ে যাচ্ছে। তাহলে কি সত্যি এবার তার জীবনে সুখের আগমন ঘটতে চলেছে!

ঐশীর এহেন ভাবনার মাঝেই রুমে প্রবেশ করে নাহিদ। ঐশীর বুক কেপে ওঠে। এক অজানা শিহরণ অনুভূত হয়। নাহিদকে ভীষণ চিন্তিত লাগছিল। তামিম, ঐশীর ঘটনাটা সে শুনেছে। এটা শোনার পর থেকে তার মন খচখচ করছে।

নাহিদ চিন্তিত ভঙিতে ঐশীর পাশে এসে বসে। ঐশী মাথা নামিয়ে ছিল। অনেকক্ষণ নাহিদ চুপ থাকায় ঐশী মাথা তুলে নাহিদের দিকে তাকায়। নাহিদকে ভীষণ চিন্তিত লাগছিল। ঐশী নাহিদের চিন্তিত মুখভঙ্গি দেখে বলে,”আপনি ঠিক আছেন তো?”

নাহিদ ঐশীকে এখনই এসব বলে তাদের জীবনের এই সুন্দর মুহুর্ত নষ্ট করতে চায় না। তাই ব্যাপারটা চেপে যায়। কন্ঠে মাদকতা মিশিয়ে বলে,”না,আমি একদম ঠিক নেই। পাশে এত সুন্দরী বউ থাকলে কি ঠিক থাকা যায়?”

ঐশীর খানিক লজ্জা লাগলো। নাহিদ ঐশীর লাজুক মুখশ্রী স্পর্শ করতেই কেপে উঠলো তার বদন। চোখ বন্ধ করতেই আয়ুশের কথা মনে পড়লো। ঐশী নিজেক ধিক্কার দিয়ে বললো,”আমি এখনো অন্য কারো বিয়ে করা বউ। ঐ পুরুষ এখন আমার কাছে নিষিদ্ধ। হে আল্লাহ, তুমি আমার মন থেকে ওনাকে চিরতরে মুছে দাও। যাতে আমি জীবনটা নতুন উদ্যমে শুরু করতে পারি।”

নাহিদ নিজের বুকপকেট থেকে একটি সোনার আংটি বের করে ঐশীর অনামিকা আঙুলে পড়িয়ে দেয়। ঐশী নাহিদের পানে চায়। নাহিদ মৃদু হেসে বলে,”আজ থেকে আমাদের নতুন জীবনের সূচনা হলো। আমি জানি, তোমার কিছু অতীত ছিল। যা হয়তো সুখকর নয়। আমি কখনো সেই অতীত সম্পর্কে জানতে চাইবো না। আমি তোমাকে নিয়ে এক সুন্দর বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখি। আমার এই স্বপ্নপূরণে তোমায় পাশে পাবো তো?”

ঐশী নিশ্চুপ। সে বুঝে উঠতে পারে না এই অবস্থায় ঠিক কি বলা উচিৎ। তাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো নাহিদের পানে। নাহিদ ঐশীর কপালে আলতো পরশ একে দিলো। ঐশী আবারো কেপে উঠলো। নাহিদ ধীরে ধীরে ঐশীর আরো কাছে আসতে লাগল। ঐশী কোন বাধা দিলো না। বরং নাহিদের সাথে তাল মেলাতে লাগলো। অতীতকে ভোলার প্রয়াসে যুক্ত হলো ঐশী। জীবনে একজনকে ভুলতে আরেকজনের সঙ্গ প্রয়োজন। আজ নাহিদের মধ্যে যেন সেই সঙ্গই খুঁজে পেল।

আদর ভরা এক রাত্রী শেষে ঐশীকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নাহিদ বললো,”তোমার এই বিয়েতে মত ছিল না আমি জানি তবে দেখো এই বিয়েটাই তোমার জীবনে সবথেকে বড় মঙ্গলময় কিছু নিয়ে আসবে।”

ঐশী প্রতিত্তোরে বলার মতো কিছু খুঁজে পেল না। তবে সেও চায় নাহিদের বলা প্রত্যেকটা কথা যেন শতভাগ সত্য হয়।

to be continue…..