আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব-৩১ এবং শেষ পর্ব

0
92

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Last_Part
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আয়ুশকে ওটিতে নেওয়া হয়েছে। ঈশিতা বাইরে বসে আছে এখনো। আশায় আছে কোন সুখবর শোনার। এমন সময় একজন চিকিৎসক এলেন। ঈশিতা তার মুখোমুখি হয়ে বলল,”ও কেমন আছে এখন?”

“কাঁচটা বেশি ভেতরে ঢোকে নি, তাই আমরা সহজেই বের করতে পারছি। লাইফ রিস্ক নেই, একটু ব্লিডিং হয়েছে জাস্ট। একটু পরেই ওনার জ্ঞান ফিরবে। তখন গিয়ে দেখা করতে পারেন।”

ঈশিতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কিছু সময় পর আয়ুশের জ্ঞান ফিরলে ঈশিতা গিয়ে দেখা করলো। আয়ুশ ঈশিতাকে দেখে বললো,”তুমি এসেছ?”

ঈশিতা আয়ুশের কাছে বসে চোখের জল ফেলতে লাগল। আয়ুশ ঈশিতাকে কাঁদতে দেখে বলে,”এমা, তুমি কাঁদছ কেন? দেখো, আমি একদম ঠিক আছি।”

ঈশিতা আয়ুশের হাত টেনে নিয়ে সেখানে চুমু খেয়ে বলে,”আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেত, তাহলে আমি কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না। শুধু আমার জন্য আজ তোমার এই অবস্থা।”

“তুমি নিজেকে ব্লেইম দিও না ঈশিতা, সমান দোষের ভাগিদার তো আমিও।”

ঈশিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,”আমি এবার সব ভুল-বোঝাবুঝি আর দূরত্ব মিটিয়ে নিতে চাই। আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে চাই।”

আয়ুশ হেসে বললো,”আমিও তো সেটাই চাই।”

দুজনে একে অপরের দিকে তাকালো। অতঃপর একসাথে সমস্বরে হেসে উঠল।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~`
আয়ুশের হাত ধরে পুনরায় তালুকদার বাড়িতে প্রবেশ করলো ঈশিতা। জাহানারা বেগম তাদের দুজনকে বরণ করে ঘরে তুললেন। ঈশিতার হাত ধরে তার কাছে মাফ চেয়ে বললেন,”আমার জন্য তোমায় অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আমি মন থেকে তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।”

ঈশিতা জাহানারা বেগমের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”ছি, ছি! আপনি আর ক্ষমা চেয়ে আমায় লজ্জা দেবেন না। আমি আজ এখানে এসেছি আবার পুরাতন সব স্মৃতি ভুলে নতুন সুন্দর স্মৃতি তৈরি করতে।”

ঐশীও নাহিদের হাত ধরে তালুকদার বাড়িতে ফিরলো। ঈশিতার ফেরার কথা শুনে সে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারল না। গুলশেনারা বেগম, আলতাফ তালুকদারও আজ ঈশিতার কাছে তাদের পূর্বের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চেয়ে ঈশিতাকে সম্পূর্ণ ভাবে আপন করে নিলো।

ঐশীকে দেখেই ঈশিতা তার কাছে আসে। দুজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। ঐশী বলে,”এতদিন পর তোমায় দেখে খুব খুশি হলাম।”

ঈশিতা হেসে বললো,”আমিও আজ অনেক খুশি। তোমাদের সবাইকে কতদিন পর দেখলাম।”

জাহানারা বেগম বলেন,”আয়ুশ তুই ঈশিতাকে নিয়ে উপরে যা। তোদের উপর এই ক’দিন যা ধকল গেলো।”

আয়ুশ ঈশিতাকে ঈশারা করল উপরে যেতে। ঈশিতা আয়ুশের সাথে রওনা দিলো। পথিমধ্যে আয়ুশ বলল,”এবার কিন্তু আমাদের নতুন শুরুর পালা!”

“হ্যাঁ, জানি। কিন্তু আজ যদি আমাদের সন্তান আমাদের মাঝে থাকত তাহলে ভীষণ ভালো হতো।”

আয়ুশ হেসে বলে,”পুরাতন স্মৃতি ভুলে যাও। আমরা আবার আমাদের বেবিকে আমাদের মাঝে নিয়ে আসবো।”

বলেই চোখ টিপে। ঈশিতা লজ্জা পেয়ে যায়।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কয়েক বছর পর,
একটি শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে তালুকদার বাড়িতে প্রবেশ করলো ঈশিতা। তার মুখে এক চিলতে হাসি। অবশেষে তার সন্তান পৃথিবীতে এলো। আয়ুশ ও তার বহুদিনের বাসনা পূর্ণ হলো। গুলশেনারা বেগম ছুটে এসে নিজের প্রপুত্রের মুখ দেখলেন। আয়ুশ এসে দাঁড়ালো ঈশিতার ঠিক পাশেই। জাহানারা বেগম ছুটে এসে বললেন,”অবশেষে আল্লাহ আমাদের এত দিনের ইচ্ছা পূরণ করলেন। আমাদের বাড়িতে নতুন অতিথি দিয়ে পাঠালেন।”

আজ এই খুশির দিনে ঐশীও উপস্থিত। নাহিদও এসেছে তার সাথে। নাহিদের কোলে তাদের এক বছর বয়সী ছেলে। ঐশী ঈশিতার ছেলের মুখ দেখে বলে,”একদম আয়ুশ ভাইয়ার মতো দেখতে হয়েছে।”

আয়ুশ মৃদু হাসে। এরইমাঝে বাচ্চাটি হঠাৎ করে কেঁদে ওঠে। ঈশিতা তাকে চুপ করানোর চেষ্টা করে। জাহানারা বেগম বলেন,”একসাথে এতগুলো মানুষ দেখে হয়তো ও ভয় পেয়ে গিয়েছে। চলো আমরা সরে দাড়াই। আয়ুশ তুই ওদের নিয়ে যা।”

আয়ুশ ঈশিতাকে সাথে নিয়ে তাদের কক্ষে যায়। আয়ুশ হেসে বলে,”অবশেষে আমাদের বাবুকে আমরা আজ এত গুলো দিন পর, এই পৃথিবীতে আনতে পারলাম।”

ঈশিতা আয়ুশের সাথে নিজেদের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে পড়লো। সবার ভীষণ আনন্দ ছিল সেই সময়। ঈশিতা আয়ুশের কোলে মাথা রেখে বলে,”এখন শুধু আমাদের সন্তানকে ভালো ভাবে মানুষ করতে পারলেই আমাদের জীবন সফল।”

“হ্যাঁ, অতীতের সব ভুল ভ্রান্তি ভুলে এবার আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের সন্তানকে একটা সুন্দর ভবিষ্যত দিতে হবে।”

ঈশিতা শুরু থেকে তাদের জীবনের সব ঘটনা মনে করে। তাদের পুরো সম্পর্কটা ছিল দ্বিধায় পড়া। ঈশিতার আজও ভাবলে হাসি পায় এবং একটু রাগও হয় নিজের মনের উপর যে এক সময় কতটা পাগলামী করেছে। তার জেদ,একগুয়েমি এসবের জন্য কত কি ঘটেছে। আয়ুশ তাকে শুধু একবারই ভুল বুঝেছিল কিন্তু সে আয়ুশকে সবসময় ভুল বুঝে গেছে। তবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আর চায় না সে। ভবিষ্যত টা সুন্দর হোক এটাই কাম্য।

আয়ুশ ঈশিতার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তোমাকে আমি একটা গান শোনাতে চাই,শুনবে?”

ঈশিতা বলে,”হ্যাঁ, শোনাও।”

❝কারণে-অকারণে
নিষেধে বা বারণে
তোমার নামেই যত
জোছনা নিলাম
ভেতরে-বাহিরে
দহনে বা ধারণে
আমায় নিখোঁজ ভাবো
বাঁ পাশেই ছিলাম

চোখে জল নোনা কি?
নিয়ে গেল জোনাকি
কেন আমি পথে একা দাঁড়িয়ে?
আলোদের পিয়নে
সোডিয়াম নিয়নে যেন
সবই কোথায় হারিয়ে

আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি
তোমার দ্বিধায় পুড়ে যাই
এমন দ্বিধার পৃথিবীতে
তোমায় চেয়েছি পুরোটাই

আমি তোমার স্বপ্নে বাঁচি
তোমার স্বপ্নে পুড়ে যাই
এমন সাধের পৃথিবীতে
তোমায় চেয়েছি পুরোটাই
পুরোটাই…❞

আয়ুশ ঈশিতার ছেলে কেঁদে ওঠে। দুজনে একসাথে তাকে চুপ করানোর চেষ্টা করে।

~~~~~~
ঐশী ও নাহিদ ফিরে এসেছে বাসায়। ঐশী নাহিদকে জিজ্ঞেস করে,”বাবু ঘুমিয়েছে?”

নাহিদ মাথা নাড়িয়ে বলে,”হুম।”

“আচ্ছা, আমাকে দাও,আমি ওকে শুইয়ে দিচ্ছি।”

নাহিদ তাদের ছেলেকে ঐশীর কাছে দেয়। ঐশী তাদের ছেলেকে শুইয়ে দেয়। নাহিদ হঠাৎ করে পেছন থেকে ঐশীকে জড়িয়ে ধরে। ঐশী তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে ধরে। তখন নাহিদ ঐশীকে সামলে নেয়। নাহিদ বিচলিত হয়ে বলে,”দুঃখিত।”

ঐশী হেসে বলে,”আমার মতো ত্রুটিসম্পন্ন একজনকে জীবনে জড়িয়েছ। এরপর আমার উচিৎ তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়া, অথচ এই কাজটা সবসময় তুমি করো।”

আয়ুশ ঐশীকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে,”খবরদার আর এমন কথা বলবে। আমার ঐশীর মাঝে কোন ত্রুটি নেই।”

“খুব ভালোবাসা না আমায়?”

“প্রমাণ চাও?”

“প্রমাণ ছাড়াই আমি নিশ্চিন্তে বলতে পারি। কিন্তু আমার নিজেকে ছোট লাগে। তোমার এত ভালোবাসায় বিনিময়ে আমি তোমায় কি দিতে পেরেছি?”

নাহিদ ঐশীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার কাছে তুমি একাই যথেষ্ট। আমার আর কিছু দরকার নেই। সব কিছু ভুলে তুমি আমার কাছে সবসময় এভাবেই থাকো। আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি চিরকাল…”

❝আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি,
তোমার দ্বিধায় পুড়ে যাই।
এমন দ্বিধার পৃথিবীতে,
তোমায় চেয়েছি পুরোটাই❞

The End 🥰