আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব-০৫

0
102

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_5
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আজ আয়ুশ-ঈশিতার বিয়ে। ঐশীর মন আজ স্বাভাবিক ভাবেই ভালো নেই। সকাল থেকে নিজেকে একটা বদ্ধ ঘরে আবদ্ধ করে রেখেছিল সে। সমানে কেঁদে চলেছিল। এসবের মধ্যেই নামিরা এসে ঐশীকে একা রুমে বসে থাকতে দেখে বলে,”ঐশী, তুমি এভাবে একা ঘরে বসে কি করছ? আয়ুশ ভাইয়ার গায়ে হলুদের সময় হয়ে এসেছে। সবাই ওকে হলুদ মাখাচ্ছে। চলো তুমিও মাখাবে।”

ঐশী বলে,”আসলে আপু আমার শরীরটা ঠিক ভালো লাগছে না।”

“তোমাকে দেখে তো সুস্থই মনে হচ্ছে। আর তোমার একমাত্র কাজিনের বিয়ে বলে কথা। চলো আমার সাথে।”

এই বলে নামিরা ঐশীকে একপ্রকার জোর করেই নিয়ে আসে। গায়ে হলুদের স্থানে আসতেই ঐশীর চোখ আটকে যায় আয়ুশের মধ্যে। আয়ুশ আজ হলুদ কালারের একটা পাঞ্জাবি পড়েছে গায়ে হলুদ উপলক্ষে। পাঞ্জাবিটা বেশ মানিয়েছে তাকে। ঐশী একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় কিছুক্ষণ। নামিরা, ঐশীকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যায়৷ জাহানারা বেগম ঐশীকে দেখে মৃদু হেসে তার দিকটা হলুদের বাটি এগিয়ে দিয়ে বলে,”এই নে ঐশী, তোর আয়ুশ ভাইয়ার গায়ে হলুদ মাখিয়ে দে তো।”

ঐশী কাপা কাপা হাতে হলুদ তুলে নেয়। এরপর ছলছল নয়নে এগিয়ে যায় আয়ুশের দিকে। আয়ুশের গালে আলতো করে হলুদ ছুইয়ে দেয়। আয়ুশকেও আজ বেশ আনন্দিত লাগছে।

নাহিদ একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিল। ঐশীকে দেখে সে এগিয়ে আসে কথা বলার জন্য। ঐশী আয়ুশকে হলুদ মাখিয়ে চলে যেতে নিতেই নাহিদের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিতেই নাহিদ ঐশীকে আগলে নিলো। ঐশীর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল এক ফোটা অশ্রু। যা আজও নজর এড়ালো না নাহিদের। সে বিচলিত হয়ে উঠল। বোঝার চেষ্টা করল ঐশীর কান্নার কারণ৷ ঐশী ততক্ষণে নিজেকে সামলে বসে পড়ে। নামিরা ঐশীর কাছে এসে বলে,”তুমি ঠিক আছো তো?”

“জ্বি, আপু।”

নাহিদ বলে,”দুঃখিত। আমার সাথে ধাক্কা লেগেই..”

ঐশী ত্বরিত বলে,”না, না ভাইয়া। আপনি কেন দুঃখিত বলছেন? আপনি আমাকে আগলে ধরলেন জন্যই তো আমি বেঁচে গেলাম। আমারই একটু সাবধানী হওয়া উচিত ছিল।”

ঐশীর মুখে ভাইয়া ডাকটা একদম ভালো লাগে না নাহিদের। কিন্তু সে চুপচাপ এই ডাকটা হজম করে নেয়।

~~~~~~~~
ঈশিতার গায়েও হলুদ মাখানো হচ্ছে। ঈশিতার গা যেন জ্বলে যাচ্ছে হলুদের ছোয়ায়৷ একদম সহ্য হচ্ছে না কিছু। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পড়ে সবকিছু মানিয়ে নিতে হচ্ছে। ঐশীর বড় মামি তার গায়ে হলুদ মাখিয়ে বলতে থাকে,”তোর গায়ে হলুদ তো বেশ ভালোই ফুটে উঠেছে। দেখবি তোর বর তোকে অনেক ভালোবাসবে।”

ঈশিতা রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। মনে মনে বলে ওঠে,”ঐ লোকের ভালোবাসা আমার চাই না। আর বর..হু, বিয়েটা হলে তো উনি আমার বর হবে। না হবে এই বিয়ে, আর না উনি হবেন আমার বর।”

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হবার পর ঈশিতার মামাতো বোন তার হাতে ফোন দিয়ে বলে,”দুলাভাই কল করেছে। কথা বলে নাও আপু।”

ঈশিতার একদম ইচ্ছা ছিল না আয়ুশের সাথে কথা বলার৷ কিন্তু তাকে বলতে হলো৷ আয়ুশ ভিডিও কল করেছিল। ঈশিতাকে মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষন দেখে বলে,”তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।”

“যা বলার জন্য ফোন করেছেন সেটা বলুন।”

ঈশিতার স্পষ্ট কথা। আয়ুশ একটু নড়েচড়ে বসল। অতঃপর বলল,”তুমি যে বিয়েতে আর কোন ঝামেলা করো নি, চুপচাপ বিয়েতে রাজি হয়ে গেছ এজন্য ধন্যবাদ। দেখিও আমি তোমার সব ইচ্ছা পূরণে তোমার পাশে থাকব।”

ঈশিতা সাথে সাথে সেই ফোনটা রেখে দিয়ে বলে,”সেই সুযোগ আমি আপনাকে দেব না।”

~~~~~~~~~~~~~
ঐশী গুলশেনারা বেগমের কক্ষে আসেন। একটু পরেই আয়ুশ বরযাত্রীদের সাথে নিয়ে ঈশিতাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা দেবে। যত সময় এগোচ্ছে ঐশীর মন ততটাই দূর্বল হচ্ছে। হারানোর যন্ত্রণা তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। গুলশেনারা বেগম ঐশীকে দেখে বলেন,”তুই এখানে কি করছিস ঐশী? বরযাত্রী যাবি না।”

ঐশী কোন কথা না বলে গুলশেনারা বেগমের কাছে গিয়ে তার কোলে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে। গুলশেনারা বেগম ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলেন,”তুই এভাবে কাঁদছিস কেন?”

“আমি মেনে নিতে পারছি না দাদি..আয়ুশ ভাইয়া এভাবে অন্য কারো হয়ে যাবে সেটা আমি মেনে নিতে পারছি না।”

গুলশেনারা বেগম অবাক হয়ে যান। ঐশীর মাথাটা তুলে বলেন,”এসব কি বলছিস তুই? এসব কথার মানে কি? তুই কি..তুই কি আয়ুশকে…”

ঐশী মাথা দুপাশে নাড়িয়ে বলে,”হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি ভালোবাসি আয়ুশ ভাইয়াকে।”

গুলশেনারা বেগমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। তিনি বলেন,”তুই এই কথা আমায় আজ বলছিস? আগে বলিস নি কেন বোকা মেয়ে? আজ তো আমি চাইলেও তোর জন্য কিংবা করতে পারব না।”

ঐশী কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আমি আগে বলিনি কারণ আয়ুশ ভাইয়া নিজে থেকে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছে। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি আমাকে চান না।”

“কাঁদিস না সোনা। আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখিস। তুই যখন এত কিছু বুঝেছিস তখন এটুকু বুঝবি যে আয়ুশ তোর ভাগ্যে নেই। আল্লাহ তোর ভাগ্যে আয়ুশকে লিখে রাখেন নি।”

“এটাই তো আমি মেনে নিতে পারছি না দাদি। যেই মানুষটাকে আমি এত ভালোবাসলাম তাকে কখনো পাবো না..নিজের চোখের সামনে তাকে আরেকজনের সাথে সংসার করতেই দেখতে হবে..”

“হায় আল্লাহ! তোর এই কষ্ট যে আমার সহ্য হচ্ছে না ঐশী৷ কিন্তু আমি এখন নিরুপায়।”

“দাদি! আমার বুক ফেটে যাচ্ছি দাদি! আমার বুক ফেটে যাচ্ছে আমার..মনে হচ্ছে কেউ আমার বুকে চাকু ঘোরাচ্ছে।”

গুলশেনারা বেগম ঐশীকে শক্ত করে আকরে ধরে বলেন,
“শক্ত হ ঐশী। এখন তোকে অনেক শক্ত হতে হবে। অনেক ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। আল্লাহ তোর সহায় হোক।”

~~~~~~
ঐশী নিজেকে সামলে এসে দাঁড়ালো বাইরে। গুলনেশারা বেগম ঐশীকে সাথে আসতে বারণ করেছিল কিন্তু ঐশী একপ্রকার জেদ করেই আয়ুশের বরযাত্রী হতে এসেছে। কারণ সে নিজের চোখে দেখতে চায় ভাগ্য তাকে কতটা কষ্টের সম্মুখীন করতে পারতে।

কেঁদে কেঁদে ঐশীর চোখ ফুলে লাল হয়ে গেছে। নাহিদ দূরে দাঁড়িয়ে ঠাহর করল সেটা। আর মনে মনে বলল,”একদিন আমি আপনার সব কষ্টের কারণ খুঁজে বের করে, সব কষ্ট দূর করে দেব ঐশী। এটা আমার প্রতিজ্ঞা।”

★★★
ঈশিতাদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছে বরপক্ষ। সবাই তাদের খাতির যত্ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এদিকে সবার মাঝে ঐশীকে বড্ড বিচলিত লাগল। সে একবার সামনাসামনি দেখতে চায় ঐ ভাগ্যবতী মেয়েকে। যে তার শখের পুরুষকে পাবে। তাই ঐশী এগিয়ে গিয়ে পাত্রীপক্ষের একজনকে বলল,”আমি ঈশিতার সাথে দেখা করতে চাই। আমাকে একটু ওর সাথে দেখা করিয়ে দিতে পারবেন?”

“হ্যাঁ, কেন নয় চলুন।”

ঐশী যেতে লাগল। যাওয়ার পথে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেল। যার সাথে ধাক্কা খেল সে একটা মেয়ে। তার গায়ে কালো চাঁদর জড়ানো। ভীষণ তাড়াহুড়োয় আছে মনে হলো। দৌড়ে চলে যাচ্ছে বাইরের দিকে। ঐশীর নজর গেল মেয়েটার পায়ের দিকে। আলতা পড়া খালি পা। ঐশী যারপরনাই অবাক হলো কিন্তু পাত্তা দিলো না। ঐশী ঈশিতার রুমে গিয়ে দেখল রুম ফাঁকা। যার সাথে সে এসেছিল তাকে জিজ্ঞেস করল,”ঈশিতা কোথায়?”

“এখানেই তো ছিল। কোথায় গেল হঠাৎ।”

সে ঈশিতাকে ডাকতে লাগল এদিক ওদিক খুঁজতে লাগল। কিন্তু ঈশিতাকে কোথাও পাওয়া গেল না। ঐশীর হঠাৎ একটু আগে চাদর জড়ানো মেয়েটার কথা মনে পড়লো। তাহলে কি ঐ মেয়েটাই ঈশিতা। তাহলে কি মেয়েটা পালিয়েছে! ঐশীর হঠাৎ করেই ভীষণ আনন্দ বোধ হলো। তবে কি আল্লাহ তার দিকে মুখ তুলে চাইলো। এবার কি ভাগ্য তাকে সাহায্য করবে আয়ুশ ভাইয়াকে নিজের করে পেতে!
to be continue….