আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব-০৮

0
82

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_8
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আয়ুশ বাসর ঘরে প্রবেশ করেই দরজা লাগিয়ে দিলো। ঈশিতা ত্বরিত উঠে বসল। ভয় লাগছিল তার খুব। তার শাড়ির আঁচলের তলায় লুকানো ছিল একটা চাকু। ঈশিতা ভেবেই রেখেছি আয়ুশ যদি তার কাছে আসার চেষ্টা করে তাহলে সে আজ রক্তারক্তি বাঁধিয়ে দেবে।

আয়ুশ বাসর ঘরে এসেই ঈশিতাকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে,”আমি কোন কাপুরুষ নই যে, তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে স্বামীর অধিকার ফলানোর চেষ্টা করবো। তাই নিজের পিছনে যেটা লুকিয়ে রেখেছ সেটা বের করে ফেলে দাও।”

ঈশিতা চাকুটা বের করলো। অতঃপর সেটা মেঝেতে ফেলে দিয়ে বলল,”আপনি কিন্তু নিজের কথাটা রাখবেন। একদম আমার কাছে আসবেন না।”

ঈশিতা চাকুটা ফেলে দিতেই আয়ুশ তার কাছে গিয়ে খপ করে ঈশিতার হাতটা ধরে ফেলল। ঈশিতা ভয় পেল প্রচুর। আমতাআমতা করে বলল,”কি..কি করছেন এটা..ছাড়ুন আমায়..আপনি কিন্তু কথা দিয়েছিলেন যে..”

ঈশিতাকে পুরো কথার বলার সুযোগ না দিয়ে আয়ুশ তার মুখ চেপে ধরে বলে,”হুশ, একদম চুপ। আমি তোমার অনেক কথা শুনেছি। এবার আমি বলবো আর তুমি শুনবে। ভয় নেই আমি জোরজবরদস্তি করব না। শুধু কিছু কথা বলব যা তোমার শোনার প্রয়োজন।”

এটা বলে সে একটু দম নিয়ে বলে,”আমি বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করেছি। তুমি যে নির্দোষ সেই ব্যাপারে প্রমাণও উপস্থাপন করেছি। তাই তারা এই ব্যাপারে বিবেচনা করে দেখেছে। তোমার এক্সপেল লেটার বাতিল হয়েছে। এই বছর তুমি আবার এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে। তাই এখন থেকে ভালো ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দাও। আর কিন্তু বেশি সময় নেই এসএসসি পরীক্ষার।”

বলেই ঈশিতার মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে দেয়। ঈশিতা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,”যাই হোক না কেন, আমি কিন্তু আপনার সাথে সংসার করতে ইচ্ছুক নই।”

আয়ুশ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আমি তোমায় জোর করে সংসারে আটকে রাখব না। তুমি এসএসসি পাশ করো তারপর একটা ভালো কলেজে এডমিশন পেলে আমি তোমাকে আমি হোস্টেলে রাখার ব্যবস্থা করব। তারপর তুমি ওখানে গিয়ে পড়াশোনা করিও। এরপর চাইলে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে তুমি নিজের ভবিষ্যৎ নিজে গড়ে তুলতে পারবা।”

ঈশিতা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়। সে এমনটাই চাইছিল। ঈশিতার লক্ষ্য জীবনে বড় কিছু করা। সংসার করা নয়। এজন্য ঈশিতা চায় যেকোন মূল্য এই সংসার থেকে মুক্তি।

আয়ুশ সোফায় গা এলিয়ে বলে,”তুমি গিয়ে বিছানাতে শোও। কাল আমি তোমাকে বই এনে দেব। তুমি পড়াশোনা শুরু করো। আর কিছুদিন একটু এখানে মানিয়ে নিও। আর এসব কিছুকে আমার দয়া মনে করার কোন দরকার নেই। আমার অপরাধবোধ থেকেই আমি এসবকিছু করছি। আমি চাই না, আমার জন্য তোমার মায়ের শেষ ইচ্ছা অপূর্ণ থাকুক। তুমিও ভালো ভাবে পড়াশোনা করিও।”

ঈশিতাও এত কিছু না ভেবে বিছানায় শুয়ে পড়ে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সকালে ঘুম থেকে উঠে ঈশিতা দেখে আয়ুশ নিজের রুমে নেই। ঈশিতা আর এত কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। বাইরে আসতেই দরজায় কেউ নক করলো। ঈশিতা গিয়ে দরজা খুলতেই দেখতে পেল জাহানারা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। ঈশিতা তাকে দেখে মৃদু হেসে বলল,”আন্টি আপনি?!”

“আন্টি না, আমাকে মা বলো। তুমি বুঝি এখনই ঘুম থেকে উঠলা?”

“জ্বি।”

“ওহ, আচ্ছা। ঠিক আছে দ্রুত আমার সাথে নিচে চলো। নিচে গিয়ে সবাইকে চা খেতে দাও। সংসারের কাজ করেই তো সবাইকে ইমপ্রেস করতে হবে।”

ঈশিতা বুঝতে পারল না তার কি করার দরকার। সে তো এখানে সংসার করতে আসে নি। এসেছে পড়াশোনা করার জন্য। ঈশিতার এমন ভাবনার মাঝেই জাহানারা বেগম তাকে একপ্রকার টেনে নিয়ে গেলো। ঈশিতাকে রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে তার হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে বলল,”যাও, তোমার শ্বশুর আর দাদি শাশুড়ী ওখানে বসে আছেন। ওনাদেরকে দিয়ে চা টা দাও। আর সালামও জানাবে।”

ঈশিতা মাথা নাড়ালো। যদিও তার এসবকিছু করার কোন ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু জাহানারা বেগমের প্রতি তার একটা মায়া তৈরি হয়েছে। উনি কত ভালো আচরণ করছেন ঈশিতার সাথে। ঈশিতার যেন মায়ের অভাবটা দূর হচ্ছে জাহানারা বেগমের সান্নিধ্য পেয়ে। তাই তার কথার অবাধ্য হতে চাইলো না। চা হাতে নিয়ে চলে এলো বসার ঘরে। গুলশেনারা বেগম বসে টিভি দেখছিলেন আর আলতাফ তালুকদার টিভি দেখছিলেন।

ঈশিতা গুলশেনারা বেগমের কাছে গিয়ে বললেন,”আসসালামু ওয়ালাইকুম দাদি, এই নিন চা খান।”

গুলশেনারা বেগম গতকালের ঘটনা নিয়ে ভীষণ রেগে ছিলেন ঈশিতার উপর। এই মেয়েটার জন্য আত্মীয়-স্বজনদের সামনে তাদের পরিবারের অনেক ফেইস লস হয়েছে। ঈশিতাকে দেখে রাগ আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে ঈশিতাকে ধাক্কা দিয়ে বললেন,”দূর হয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে।”

ধাক্কার ফলে ঈশিতার হাতে গরম চা ছিটকে পড়লো। সে ব্যাথায় চেচিয়ে উঠল। জাহানারা বেগম ছুটে এলেন। আলতাফ তালুকদারও হচকচিয়ে গেলেন। জাহানারা বেগম এসে ঈশিতাকে দ্রুত নিয়ে গেলো। গিয়ে পানি ঢালতে লাগল তার হাতে।

ঐশী সবেমাত্র বসার ঘরে এলো। এই কাহিনি দেখে সে হতবাক। ক্রাচে ভড় দিয়ে এগিয়ে এসে নিজের দাদিকে বলল,”এটা তুমি কি করলে দাদি? মেয়েটার যদি কিছু হয়ে যেত।”

“আমার মাথা গরম হয়ে গেছিল। কিন্তু আমি চাইনি এমন কিছু হোক। আমি তো… ”

“তোমার ওকে সরি বলা দরকার দাদি।”

গুলশেনারা বেগম তেজ দেখিয়ে বললেন,”আমি কেন সরি বলবো? ঐ মেয়ে আমাদের পরিবারের সাথে ইচ্ছাকৃত ভাবে যেটা করেছে তার তুলনায় এটা কিছুই না। আমি তো আর ইচ্ছা করে করিনি। ও কি সরি বলেছে? তা না করে সকাল সকাল চা নিয়ে মন গলাতে এসেছে।”

ঐশী আর কিছু বলতে পারল না। ঈশিতার অবস্থা দেখতে রান্নাঘরের দিকে গেলো।

এদিকে জাহানারা বেগম ঈশিতার হাতে পানি দিতে দিতে বললেন,”আম্মার ব্যবহারে কিছু মনে করো না। উনি এটা ইচ্ছাকৃত করেন নি। তুমিই বলো কেউ যদি কারো কানের কাছে ২৪ ঘন্টা কারো নামে বিষ ঢালে তাহলে কি এমন ব্যবহার করা স্বাভাবিক না?”

ঈশিতা বুঝতে না পেরে বলল,”মানে?”

জাহানারা বেগম বলতে লাগলেন,”তুমি এখনো অনেক ছোট। এত সবকিছু বুঝবে না। ঐ ঐশী মেয়েটা আছে না। ও তো সবসময় আমার শাশুড়ীর কাছে তোমার নামে বিষ ঢালে। এজন্যই তো উনি তোমার সাথে এমন করলেন।”

ঈশিতার মনে ঐশীর প্রতি নেতিবাচক ধারণা বাড়ল৷ এরমধ্যে ঐশী রান্নাঘরে এসে বলল,”বড় আম্মু ও কি ঠিক আছে?”

জাহানারা বেগম দায়সারা ভাবে বললেন,”হ্যাঁ, ঠিক আছে।”

ঐশী স্বস্তি পেলো। ঈশিতার উদ্দ্যেশ্যে বলল,”তুমি কিছু মনে করো না ভাবি। দাদি মানুষ হিসেবে খারাপ নন। তোমার উপর রেগে আছে তাই এমন কাণ্ড করে ফেলেছেন।”

ঈশিতা মনে মনে বললো,”সারাক্ষণ বিষ ঢাললে তো এমন হবেই। যাইহোক, এমনিতেও আমি এখানে পার্মানেল্টলি থাকব না তাই কারো সাথে ঝামেলা করে লাভ নেই।”

তাই ঈশিতাও কোন রিয়্যাক্ট করল না। এর মাঝে আয়ুশ ছুটে এসেছে বাড়িতে। জাহানারা বেগম তাকে ফোন করে সব বলেছেন। সে এসেই নিজের দাদিকে ডাকতে লাগল। গুলশেনারা বেগম বললেন,”কি হয়েছে আয়ুশ? আমায় ডাকছিস কেন?”

জাহানারা বেগম ততক্ষণে ঈশিতাকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়। আলতাফ তালুকদার অফিসে বেরিয়ে গেছেন। ঐশী গুটি গুটি পায় এগিয়ে আসে। আয়ুশ ঈশিতার হাত ধরে তাকে নিজের দাদির কাছে এনে বলে,”আমার স্ত্রীর কাছে এখনই ক্ষমা চাও।”

“আয়ুশ! তুই কি বলছিস খেয়াল আছে?”

“তুমিই তো আমাকে শিখিয়েছ দাদি যে কারো কাছে যদি আমরা অন্যায় করি তাহলে ক্ষমা চেয়ে নিতে। ক্ষমা চাইলে কেউ ছোট হয়না এটাও তুমিই বলো। তাহলে অসুবিধা কোথায়?”

“এই মেয়েটা যেই অন্যায় করেছে তার জন্য ক্ষমা চাইছে?”

“বড়দের থেকেই তো ছোটরা শিখবে দাদি।”

আয়ুশ গুলশেনারা বেগমকে কথার প্যাচে ফেলে দিলো। গুলশেনারা বেগম আর কোন উপায় না পেয়ে উদাস মনে বললেন,”দুঃখিত।”

বলেই তিনি গটগট পায়ে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। ঐশী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। যাইহোক, সব ঝামেলা মিটল তাহলে।

to be continue….