আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব-০৯

0
89

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_9
#ইয়াসমিন_খন্দকার

ঈশিতার বিয়ের পর চলে গেছে কয়েকটা দিন। এই কয়েকটা দিন তার বেশ সাধারণ ভাবেই গেছে। আয়ুশ তাকে বই এনে দিয়েছে। যতটা সময় পায় সে পড়াশোনা করেই কাঁটায়। অন্য কাজে তেমন মন নেই। জাহানারা বেগম মাঝে মাঝে তাকে টুকটাক কাজ করতে বলেন সেটাও খুশি মনে করে নেয়৷ কারণ এই বাড়িতে তার শুধু জাহানারা বেগমকেই ভালো লাগে।

গুলশেনারা বেগম, আলতাফ তালুকদার ঈশিতার সাথে কথা বলে না। ঐশী কথা বলতে চাইলে ঈশিতাই তাকে এগিয়ে যায়। কারণ জাহানারা বেগমের কথায় ঐশীর সম্পর্কে খুবই নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে তার মনে৷ ঈশিরা মনে করে ঐশী ভীষণ কূটনি একটা মেয়ে। যার সঙ্গ এড়িয়ে চলাই মঙ্গল।

~~~~~~~
ঈশিতা বাগানে বসে বসে বই পড়ছিল৷ এমন সময় জাহানারা বেগম সেই স্থানে এসে বলে,”বৌমা, তুমি এখানে। আমি তোমাকে সব জায়গায় খুঁজছি।”

ঈশিতা বই পড়া থামিয়ে জাহানারা বেগমের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমাকে কিছু বলবে মা?”[ঈশিতা এখন জাহানারা বেগমকে “মা” বলেই সম্মোধন করে।]

জাহানারা বেগম হাসি মুখে ঈশিতার পাশে বসে বলেন,”তুমি বোধহয় জানো না, আগামীকাল আয়ুশের জন্মদিন। ও তো তোমার স্বামী। তাই তোমাকে জানিয়ে দিতে এলাম। যাতে করে তুমি একটু ওকে সারপ্রাইজ দিতে পারো।”

ঈশিতা এটা জেনে খুব একটা খুশি হয়না। এমনিতেও আয়ুশকে নিয়ে তার কোন প্রকার কোন আগ্রহই নেই। সে তো শুধু এসএসসি এক্সাম পর্যন্ত অপেক্ষা করছে। তারপর নিজের জীবনের সঠিক পথ বেছে নেবে। জাহানারা বেগম আশেপাশে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলেন,”তুমি আয়ুশকে ভালো একটা সারপ্রাইজ দেবে। আর হ্যাঁ, দেখবে যাতে ঐশী যেন আয়ুশের কাছে ঘেষতে না পারে। ও কিন্তু প্রতিবছর আয়ুশকে সারপ্রাইজ দেয়। মেয়েটার একটুও হুশজ্ঞান নেই। আয়ুশ এখন বিবাহিত, তাই ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার অধিকার একমাত্র ওর স্ত্রী মানে তোমার আছে। বুঝলা?”

ঈশিতা কি বুঝল জানে না কিন্তু জাহানারা বেগমের মন রাখার জন্য মাথা নাড়ায়। জাহানারা বেগম নিশ্চিত মনে চলে যাবার পর আবার নিজের মতো বই পড়তে থাকে।

জাহানারা বেগম চলে যাবার কিছুক্ষণ পর ঐশী আসে ঈশিতার সাথে দেখা করতে। ঈশিতা তাকায় ঐশীর দিকে। ঐশী হাসিমুখে তার পানে চেয়ে থাকলেও ঈশিতা ঐশীকে দেখেই ভ্রু কুচকে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। ঐশী ঈশিতার কাছে এসে বলে,”কি করছ?”

“দেখতে পারছেন না বই পড়ছি?”[ঐশীর কাঠ কাঠ জবাব।]

ঐশীর মুখের হাসি মিলিয়ে যায় ঈশিতার এমন ব্যবহারে। তবুও সে বলে,” তুমি মনে হয় একটু ব্যস্ত ছিলে। আমি বোধহয় তোমায় ডিস্টার্ব করে ফেললাম।”

ঈশিতা কোন কথা বলে না। ঐশী একটু পর বলে,”আগামীকাল আয়ুশ ভাইয়ার জন্মদিন। এটা জানো তো?”

“হ্যাঁ।”

“আমি ভাবছিলাম, আমরা দুজনে মিলে যদি কোন প্ল্যান করি তাহলে ভালো হয়।”

“কেন? আপনার আয়ুশ ভাইয়া কি ছোট বাচ্চা যে তার জন্মদিন ঘটা করে পালন করতে হবে বা কোন সারপ্রাইজ দিতে হবে? আমার এসব ঢং একদম পছন্দ নয়। আপনার যদি কিছু করার থাকে নিজে থেকে করুন। আমাকে একদম এসবের মধ্যে জড়াবেন না। সামনে আমার পরীক্ষা। আমার কাছে এখন এসব করার মতো এত ফালতু সময় নেই।”

ঐশীর মুখটা এবার একদম ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সে আর সইতে না পেরে বলে,”কথাগুলো ভালো ভাবেও বলা যেত ভাবি। তুমি সম্পর্কে আমার বড় হলেও বয়সে কিন্তু ৪-৫ বছরের ছোটই হবে। তাই একটু ভদ্রতা তো আশা করতেই পারি। তাই না?”

ঈশিতা কোন কথা বলে না আর। কথা বলতেও তার বিরক্ত লাগছিল। ঐশী আর অপেক্ষা না করে চলে যায় সেই স্থান থেকে। আয়ুশের জন্মদিনে যখন ঈশিতা কিছু করতে চাইছে না তখন সে একাই করবে। আয়ুশকে প্রতিবছরের মতো এবারও সুন্দর করে সারপ্রাইজ দেবে এটা ঠিক করে নিলো ঐশী।

~~~~~~
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১১ঃ৩০. আয়ুশ এখনো বাড়ি ফেরে নি। হয়তো কোন জরুরি কাজে ব্যস্ত আছে। তবে ঐশী এটা নিশ্চিত যে রাত ১২ টার মধ্যেই আয়ুশ বাড়িতে ফিরবে। এইজন্য ঐশী একা হাতে সব এরেঞ্জমেন্ট করেছে। অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে চারিপাশটা। এখন সযত্নে নিজের হাতে কেকও বানাচ্ছে। কেক বানানো শেষ করে টেবিলের উপর কেকটা সুন্দর করে সাজালো মেয়েটা। আজ সে তার আয়ুশ ভাইয়ার পছন্দের চকলেট কেক বানিয়েছে। এটা ভেবেই সে অনেক খুশি হলো।

জাহানারা বেগম হঠাৎ সেই স্থানে চলে আসেন। এসে ঐশীকে এসব এরেঞ্জমেন্ট করতে দেখে ভীষণ রেগে যান। এগিয়ে এসে ঐশীকে বলেন,”এসব কি করছিস তুই?”

ঐশী মৃদু হেসে বলে,”আজ তো আয়ুশ ভাইয়ার জন্মদিন তাই আমি ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি যেমনটা প্রতিবছর করি।”

ঐশীর কথা শুনে জাহানারা বেগম তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলেন,”তোর কি কোন সেন্স নেই? আগের বছর করেছিস সেটা নাহয় ঠিক ছিল কিন্তু এবার বিষয়টা আলাদা। আয়ুশ এখন বিবাহিত। একজন পর পুরুষের জন্য এত রাতে এসব আয়োজন করছিস। ওর স্ত্রী জানলে বিষয়টা সহজ ভাবে নেবে?”

ঐশীর হাসি মুখ মলিন হয়। বলে,”আমি ভাবিকে বলেছিলাম কিন্তু..”

“এ ব্যাপারে কথা বাড়াস না ঐশী। এতদিন আমি সব সহ্য করেছি মানে এই নয় এখনো সহ্য করব। তুই আগে আমার ছেলের অনেক ঘনিষ্ঠ ছিল তখন ও অবিবাহিত ছিল তাই আমিও কিছু বলিনি। কিন্তু এখন ও বিবাহিত। ওর স্ত্রী আছে। আমি চাই না, তোর জন্য ওদের বৈবাহিক সম্পর্কে সমস্যা তৈরি হোক। তুই এভাবে আমার ছেলে আর ছেলের বউয়ের মাঝে ঝামেলা তৈরি করিস না।”

ঐশীর চোখ বেয়ে নোনাজলের ধারা নামে। সে বলে,”বিশ্বাস করো বড় আম্মু, আমার মনে এমন কিছু নেই।”

“শোন, এসব ন্যাকা কান্না থামা। যা এখান থেকে। তোর মনে কি আছে আর কি নেই সেটা ঈশিতা বুঝবে না। আর হ্যাঁ, যদি ভালো চরিত্রের মেয়ে হোস, তাহলে আমার ছেলের থেকে দূরত্ব মেইনটেইন করে চলবি।”

এত অপমান আর ঐশী সইতে পারে না। সে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। ঐশী যেতেই জাহানারা বেগম হাফ ছেড়ে বলে,”যাক! আপদ বিদায় হলো।”

এরপর তিনি চলে যান ঈশিতার রুমে। ঈশিতা তখনো পড়ছিল। জাহানারা বেগম এসে বলেন,”বৌমা আমার সাথে নিচে চলো। জরুরি দরকার আছে।”

ঈশিতা স্বভাবতই শাশুড়ীর অবাধ্য হলো না। জাহানারা বেগম ঈশিতাকে নিয়ে নিচে এসে ঘরের লাইট নিভিয়ে দিলেন। ঈশিতা কিছু বুঝল না। কিছুক্ষণ পর কলিং বেল বেজে উঠতেই তিনি ঈশিতাকে বললেন,”যাও গিয়ে দরজাটা খুলে দাও।”

ঈশিতা তাই করলো। দরজাটা খুলতেই আয়ুশ ভেতরে ঢুকে বললো,”এখানে এত অন্ধকার কেন?”

তখনই জাহানারা বেগম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,”সারপ্রাইজ! হ্যাপি বার্থ ডে আয়ুশ!”

আয়ুশ খুশি হয়ে যায়। নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”ধন্যবাদ মা।”

“ধন্যবাদ আমাকে না দিয়ে নিজের বউকে দে। ও একা হাতে এসবকিছুর এরেঞ্জমেন্ট করেছে। এই কেকটাও নিজে তোর জন্য বানিয়েছে। আমি কত করে সাহায্য করতে চেয়েছি কিন্তু ও সাহায্য নেয় নি।”

ঈশিতা অবাক হলো। সে তো এমন কিছু করে নি। পরে ভাবলো হয়তো জাহানারা বেগম নিজে এসব করেছেন আর তাকে ক্রেডিট দিচ্ছে। তাই আর কিছু বললো না। আয়ুশও অবাক হয়ে ভাবল,”যেই মেয়েটা আমাকে সহ্য করতে পারে না, সে নিজে আমার জন্য এত কিছু করল!”

ভেবেই সে ঈশিতার দিকে তাকিয়ে বলল,”সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ।”

ঈশিতা বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। জাহানারা বেগম আয়ুশের দিকে চাকু বাড়িয়ে দিয়ে বলল,”১২ টা তো বাজতে চললো। দ্রুত কেকটা কা’ট।”

আয়ুশ তাই করলো। কেক কে’টে প্রথমে জাহানারা বেগমকে খাওয়ালো তারপর ঈশিতাকে। ঈশিতার দিকে আজ মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো আয়ুশ। উপরে দাঁড়িয়ে এদৃশ্য দেখে নিজের চোখের জল মুছে ঐশী বলল,”হ্যাপি বার্থডে আয়ুশ ভাইয়া। তুমি সুখী হও, এটুকুই চাওয়া। এরজন্য যদি আমায় তোমার থেকে দূরে থাকতে হয় তবে তাই সই।”

to be continue….