#আমি_মায়াবতী
#পর্ব_৪২
#লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা
“মায়া, সিম্পল কিছু নাও। তোমরা মেয়েরা যে আটা ময়দা মাখতে পারো মাশাল্লাহ, দেখলেই বমি আসে আমার।”
মায়া কিছু বলার আগেই কবিতা উঠে কাব্যর হাত খামচে ধরে বলে,”ঠ্যাস মারা কথা কস কেন? বলেই দে আমি আটা ময়দা মাখছি। আর বমি আসলে দূরে যায়ে বমি কর। কাছে করলে গন্ধে থাকা যাবে না।”
কাব্য নিজেকে কবিতার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”ঠ্যাস মারলাম কই? আমি তো ভালোভাবেই বলছি।”
“নেহাত এইটা শপিংমল, না হলে তোর খবরই ছিল আজকে। চুপচাপ বসে থাক এইখানে। আমরা পছন্দ করবো। তোর কাজ শুধু টাকা পেমেন্ট করা।”
কবিতা কাব্যকে ছেড়ে আবার শপের ভিতরে ঢুকতেই কাব্য বিরবির করে বলে, “খবর তো প্রতিদিনই হয়। কিন্তু কোনোটাই কাগজে ছাপা হয়না। ”
কাব্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কবিতা আর মায়ার শপিং করা দেখছিল।আজকে সবাই মায়া আর কাব্যের বিয়ের জন্য শপিং করতে এসেছে।পরিবারের বড়রা মিলে ঠিক করেছে আপাতত শুধু কাবিন করে রাখবে। মায়ার পরীক্ষা শেষ হলে সামনের বছর অনুষ্ঠান করে তাকে তুলে নিয়ে যাবে। এখন আপাতত ঘরোয়াভাবে সবকিছু করবে শুধু কাছের আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে।মায়ার জন্য শাড়ি কেনা শেষ। বড়রা জুয়েলারি কিনতে ব্যস্ত।সেই সুযোগে কবিতা মায়াকে নিয়ে এসেছে নিজের জন্য কিছু কিনতে। বিয়েটা মায়ার হলেও সবচেয়ে বেশি আগ্রহ কবিতারই। সাবিহা আর রিজা আরো আগেই সব কেনাকাটা শেষ করেছে। কবিতারও শেষ।কিন্তু সে কিছুতেই স্থির করতে পারছেনা আর কিছু লাগবে কি লাগবে না।কাব্য ভালোমতোই জানে এইসব আটা ময়দা কিনে ও ঘরে বসিয়েই রাখবে। বিয়ের দিন কিছুই ব্যবহার করবে না। সকাল হতেই নাচতে নাচতে পার্লারে চলে যাবে। তাই শুধু শুধু এখানে টাকা খরচ এইসব কেনার কোনো মানেই হয়না। তারউপর আবার এখনও কেউ তার কোনো কিছু কেনা না কেনা নিয়ে কিছুই বলছে না। তিনঘণ্টা ধরে এসে শুধু মায়ার শাড়িটাই কেনা হয়েছে। এইজন্যই বোধহয় তার বাবা আর মায়ার বাবা আসতে চায়নি। হয়তো তারা মেয়েদের এইসব ব্যাপারে ভালোভাবেই জানে। তাই বলির পাঠা হিসেবে তাকেই পাঠিয়েছে। উপরের ফ্লোরে তার মা-খালামনি আর মায়ার আম্মা আর ফুপি গয়না পছন্দ করেই যাচ্ছে। কিন্তু কোনোটা কিনার মনস্থির করতে পারছেনা। কাব্য একবার নিচে আর একবার উপরে ঘোরাঘুরি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে বসে আছে।
“ভাইয়া, আমার সব শপিং শেষ। চল উপরে চল। ”
কবিতার ডাকে সামনে তাকিয়ে দেখে তার সামনে কবিতা আর মায়া দাঁড়িয়ে আছে। কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তোর শেষ? ”
“হ্যাঁ, শেষ তো। উপরে চল।”
“তোর শেষ। ওর তো শেষ না। ওকে এখন একলা ছেড়ে দে। ওর কেনাকাটা বাকি আছে এখনো। ”
মায়া অবাক হয়ে বলে,”আমার তো আর কিছুই বাকি নেই। চলুন উপরে।”
কাব্য কিছু বলার আগেই কবিতা বলে,”ইডিয়ট। তোমার হবু বর তোমার সঙ্গ চাইছেন। তার সাথে কিছু সময় কাটাও।তার হাতে হাত রেখে কিছু কথা বলো। তার সাথে কিছু খেতে যাও। তার সাথে কিছু….. ”
কবিতাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই কাব্য বলে, “থামবি তুই? মায়ার সাথে কিছু কথা আছে আমার। তুই উপরে যা৷ দেখ ঐখানে কতদূর হলো সব।”
কবিতা কাব্যকে একটা ভেঙ্গচি কেটে উপরে চলে যায়। কবিতা চলে যেতেই মায়া বলে,”আপনি কি পাগল? ও একা গেল। সবাই এখন কি ভাববে? কিছুই লাগবে না আমার। আর আপনার কিছু বলার থাকলে আপনি ফোনে বলতেন। এখন চলুন। না হলে আমি অনেক লজ্জাজনক একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়বো।”
কাব্য মায়াকে একটা ধমক দিয়ে বলে,”এতো বেশি কথা কেন বলো তুমি?সবসময়ই দেখি শুধু ছটফট করো। একটু স্থির হয়ে থাকতে পারো না?”
“ওকে, ফাইন। বলুন কি বলবেন।”
“তুমি শিওর এখন বিয়েটা করতে চাও তুমি?”
“হ্যাঁ, আর এইটা তো আর সেইরকম বিয়ে না। ঘরোয়াভাবে কাবিন হবে। আর কাবিন হলেও আপনি তো আমাদের বাসায় থাকবেন না। আপনিই তো জানিয়েছেন এইসব।”
“আমি কি আর ভেবেছিলাম আমার বাপ তোমার বাপ কে তাই বলবে আর তোমার বাপ রাজি হয়ে যাবে।”
মায়া অবাক হয়ে বলে, “মানে কি? কি বলছেন এইসব?আমি তো বুঝতে পারছিনা। ”
“আরেহ,আমি তো ভেবেছিলাম আমি বলবো এইসব কিন্তু তোমার বাবা বলবে বিয়ে করলে বউ রেখে দূরে কেন থাকবে। মাঝে মাঝে আমিও আসতাম যেতাম তোমার বাসায়। কিন্তু তোমার বাবা তো রাজি হয়ে গেছে। এখন এই একটা বছর আমি আমার বিয়ে করা বউ কি শ্বশুরবাড়িতে রেখে আমি আমার বাড়িতে থাকবো?”
মায়া কি বলবে ভেবে পায় না। কিন্তু একসময় ফিক করে হেসে উঠে। কাব্য তাকে রাগ দেখিয়ে বলে,”মজা করা হচ্ছে আমার সাথে?”
মায়া তবুও নিজের হাসি থামায় না। কাব্য ওর দিকে তাকিয়ে বলে,”থাক। একটা বছরই তো। থাকবো বউ ছাড়া কোনোরকমে। এতো বছর থাকতে পারলাম আর একটা বছর এমন কি। ”
মায়া হাত নাড়িয়ে হাসতে হাসতে চলে যায় সেখান থেকে। আর কাব্য মাথা চুলকাতে চুলকাতে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।
★★★
“এই ভাইয়া, বল না আমি কি পড়বো গায়ে হলুদের দিন? হলুদ শাড়ি না লেহেঙ্গা? ” নিজের কেনা সবগুলো ড্রেস নাড়তে নাড়তে কাব্যকে জিজ্ঞেস করে কবিতা।
“হুমম। পড় যেকোনো একটা। তোকে তো সেই পেত্নীর মতোই লাগবে।”
“রাগাবি না বলে দিচ্ছি বেয়াদব। বাবা কিন্তু বাসায় আছে। ডাকবো কিন্তু আমি।”
“নাহ। তোকে একেবারে পরীর মতো লাগবে। আলিফ লায়লার সেই সাদা পরীর মতো।”
“ইডিয়ট। আমি পড়বো হলুদ ড্রেস। আমাকে সাদা পরীর মতো কেন লাগবে? বল হলুদ পরীর মতো লাগবে। ”
“হুমম। তোকে সবচেয়ে সুন্দরী সোফা নিজবা আছে না? সোফা নাকি সোবা নিজবা ঠিক তার মতো লাগবে।”
কবিতা কাব্যর দিকে চোখ গরম করে বলে,”আমি কি ওর মতো কুটনী?”
“নাহ। ও কুটনী কিন্তু সুন্দরী তো। আমি কি বলেছি ওর মতো কুটনামী করবি তুই?বলেছি ওর মতো সুন্দর লাগবে।”
“কথার প্যাঁচে ফেলবি না আমাকে।মেরে ফেলবো তোকে ভাইয়া।”
“এখন আর ভাইয়াকে কথায় কথায় মেরে ফেলা যাবে না। ভাইয়ার বউ পরে কান্নাকাটি করবে।” কথাটা বলতে বলতে ওদের কাছে আসে ওদের বাবা।
“হ্যাঁ, হ্যাঁ। জানি, জানি আমি।”
কাব্য ওর বাবাকে বলে,”তুমি হঠাৎ আমার রুমে? কিছু হয়েছে নাকি?”
“হ্যাঁ, কতকিছুই তো হয়েছে।”
“কি হয়েছে?”
“তোর বড়ফুপিকে তোর বিয়ের কথা জানিয়েছিলাম আগেই। এখন তোর কোনো ফুপিই আসবে না।”
“কেন? কি সমস্যা?”
“মায়াদের বাসায় অনুষ্ঠান করলে নাকি তারা আসবে না।”
“কিন্তু এইটা তো সেইরকম কোনো অনুষ্ঠানের বিয়ে না। গায়ে হলুদও হবে না সেইভাবে।”
“কিন্তু তারা সেটা মানবে না। বেশিকিছু না হলেও তারা চাইছে আমরা যেন কোনো কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করে অনুষ্ঠান করি।”
“পাগল হইছো বাবা? এইসব কোনো কথা?মায়ার বাবার উপর তো প্রেশার পড়ে যাবে। আর সবকিছুই তো ঠিকঠাক ছিল। ৩ দিন পর বিয়ে আর আজ এইসব কি শুরু করলো এইসব?”
“কি আর করা যাবে?তাদের রেখে তো আর বিয়ে হবে না। আমি কথা বলেছি মায়ার বাবার সাথে। উনি রাজি হয়েছেন। আমিও না হয় সামিল হবো তার সাথে।”
কাব্য প্রায় রেগেই বলে,”উনাদের কি কোনো কাজে ঝামেলা না করলে হয়না? এইজন্যই কি আজ কেনাকাটা করার সময়ও এলোনা। আবার এই বাড়িতে এসে সবাইকে বলে বেড়াবে আমাদের কোনো পছন্দ নেই। কাব্যর মা-খালারাই সব কিছু ঠিকঠাক করেছে। উনাদের ফোন দিয়ে বলে দাও মায়ার বাবার বাড়িতেই অনুষ্ঠান হবে। উনারা আসলে আসবে না আসলে আসবে না। আমরা চেয়েছিলাম কাছের মানুষগুলোকে নিয়ে কোনোমতে বিয়েটা শেষ করবো। কিন্তু উনাদের ব্যবহার দেখে তো মনে হচ্ছে না যে উনারা আমাদের আপন কেউ।”
“ছিহ কাব্য। এইভাবে বলতে নেই। উনারা গুরুজন। উনাদের ছাড়া কোনো কিছুই হবে না। বড়দের দোয়া ছাড়া তোরা সুখী হতে পারবি না তো।” কাব্যর মা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে।
“উনাদের নিয়ে সেন্টারে গেলেও আমাকে দোয়া করবেনা মা। হয়তো বলবে খাবার ভালো না, খাবার কম পাইছি, ডেকোরেশন সুন্দর না ব্লা ব্লা ব্লা।”
“যথেষ্ট বলেছো কাব্য।আমি জানি ওরা সবসময় অন্যায় আবদার করে কিন্তু ভাইপোর বিয়েতে হয়তো উনাদেরও শখ আহ্লাদ আছে।”
“মা, কথা কিন্তু তোমাকেই শুনতে হবে। উনাদের হয়ে সাফাই গাইবে না মোটেও। আমি তো ফুপিকে বলেছিই সামনে বছর সবই হবে। কিন্তু তারা মানলো না। আসল কথা হচ্ছে উনারা গসিপ করতে পারবেনা কারো সামনে যে উনাদের ভাইপোর বিয়ে বাড়িতেই হয়েছে। তাও আবার মায়াদের ছোট্ট ফ্ল্যাট বাড়িতে। অন্যকে নিজেদেরটা দেখাতেই উনারা বেশি ভালোবাসে।”
“কাব্য, মায়ার বাবা একা সবকিছু করবে না। বিয়ে শুধু উনার মেয়ের একা হচ্ছেনা। আমার ছেলেরও হচ্ছে।আমারও দায়বদ্ধতা আছে। এখন আর এই বিষয় নিয়ে আর কোনো কথা শুনতে চাই না আমি।” কথাগুলো বলেই কাব্যর বাবা বের হয়ে যায় রুম থেকে।
কাব্য ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “কি চাইলাম আর কি হচ্ছে এইসব?”
কাব্যর মা কাব্যর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,”বিয়ে বাড়িতে টুকটাক এইসব হয়ই বাবা। এইসব কোনো বিষয় না। বিয়ের পর তো আর তারা থাকতে আসবে না এইখানে।”
কাব্যর মাও চলে যায় সেখান থেকে। এতোক্ষণ কবিতা চুপচাপ ছিল। সবাই চলে গেলে সে কাব্যকে বলে,” একেতো বিয়ে করা বউকে রেখে দূরে থাকার যন্ত্রণা সইবি এখন আবার এই কাহিনি। কি আর করার। থাক, আমি যাই।”
★★★
“এখন কি করবো সাগরিকা? আমার হাতে তো এখন ক্যাশ তেমন নেই। জানোই তো তুমি সবকিছু। আমার একার রোজগারে এতোগুলো মানুষের খাওয়া পড়া চলছে।” অনেকটা ভেঙে পড়া গলায় সাগরিকাকে বলে রিজভী।
“তুমি চিন্তা করোনা। কিছু একটা ব্যবস্থা হবেই। আর তাছাড়া বড় মেয়ের বিয়ে। একটু ধুমধাম করেই তো করতে হবে। কাব্যর বাবা কি বলেছে? কত টাকা লাগবে সব মিলিয়ে? ”
“কালকে জানাবেন বলেছে।”
“হুমম। অনেক সময় আছে এখনো। তুমি দুশ্চিন্তা করো না। টাকার একটা ব্যবস্থা ঠিকই হয়ে যাবে।”
“আমারও সমস্যা ছিল না। কিন্তু ব্যবসা তো জানোই।টাকা একদিক দিয়ে আসে আর যায়। কিছুদিন আগেই একটা প্রোজেক্ট এ সব দিয়েছি। এখন সেটার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তো টাকা আসবে না।”
“ভেবো না তো। প্রবলেম হলে আমাদের ডিপোজিট টা না হয় ভাঙবো।”
রিজভী প্রায় আঁতকে উঠে বলে,”কি বলছো এইসব?”
“প্রয়োজন হলে সেটাই তো করতে হবে।”
“কিন্তু? ”
“কোনো কিন্তু না।”
“আসবো মা?”
রিজভী আর সাগরিকা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মায়ার নানা-নানী দাঁড়িয়ে আছে সামনে। সন্ধ্যার সময়ই তারা এসেছেন বিয়ে উপলক্ষে। সাগরিকা আর রিজভী দ্রুত নিজেদের সামলে নিয়ে বলে, “আসুন আসুন। ভেতরে আসুন।”
মায়ার নানা বেশ ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে চেয়ারে বসে বললেন,” তোমাদের সব কথাই শুনলাম। আমি জানি তোমাদের এখন হাতটান চলছে। কয়েকদিন আগেই তো শুনলাম নতুন বাড়ি বানাইছো গ্রামে। এখন তো হাতটান হবেই। তবে, আমরা বলি কি আমরাও তো আছি। আমরাও তো মায়ার অভিভাবক।মায়াকে তো এই জীবনে কিছুই দিতে পারিনি। কিছু টাকা না হয় আমাদের থেকেও নিও বাবা। আমরা খুশি হবো। জানি আমরা না দিলেও তোমরা কোনো না কোনোভাবে জোগাড় করবা। কিন্তু তোমাদের চলতে যে খুব কষ্ট হবে।”
“মিয়াভাই।আমারে বলোনাই কেন যে তোমার টাকা লাগবো? আমার আর আছে কারা তোমরা ছাড়া?আমিও তো সাহায্য করতে পারি তোমাগো।”
রিজভী চমকে উঠে বলে,”তুই কি সাহায্য করবি আমাকে?”
রিতু খাটের একপাশে বসে তার শাড়ির আচলের কাছে থেকে একটা বড়সড় বাক্স বের করে খাটের উপর ঢেলে দেয়। দেখা যায় সেগুলো সোনার গহনা।
রিজভী প্রায় আর্তনাদের মতো করে বলে,”এইগুলো পেলি কই থেকে তুই?”
রিতু একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,”আমার মায় তো আমারে এইগুলার লোভেই অতো কম বয়সে বিয়া দিছিলো মিয়াভাই।এইগুলা আমি বিক্রি করিনাই। আমার স্বামীর স্মৃতি। শত অভাব আর কষ্টের মাঝেও বিক্রি করি নাই। ভাবছিলাম আমার রিজারে দিবো। কিন্তু এখন এইটা মায়ার জন্য বেশি দরকার। তোমার জন্য, তোমার সম্মানের জন্য, আমাদের সম্মানের জন্য বেশি দরকার।তুমি এইগুলা বিক্রি কইরা যা টাকা পাইবা, সেইগুলা দিয়া কাজ হইয়া যাইবো।”
“না,না। এইসব তোর জিনিস। আমি কেন নিবো? আর এইসব তো রিজার জন্য। মায়ার জন্য কেন খরচ করবি?”
“রিজার জন্য রিজার মামা আছে। সেই দিবে।”
“মায়ার বাবা, তুমি বরং এইগুলা বন্ধক দাও।পরে ধীরে ধীরে ছাড়িয়ে এনো।” সাগরিকা বলে।
মায়ার নানা বলে,” আমাদের থেকে কি কিছুই নিবা না?”
রিজভী মায়ার নানার হাত ধরে বলে,”আপনি মায়াকে যা দিতে চান, সেটা মায়াকেই দিয়েন। মায়ার দাদাবাড়ির একজন মানুষ নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছে মায়ার জন্য। আর আমি তো আছিই। যতোটা পারবো করবো। আমাকে অহংকারী ভাববেন না বাবা। ”
মায়ার নানার চোখ বেয়ে পানি আসতে চায়। কিন্তু পুরুষ মানুষ যে বড় অদ্ভুত। তারা যে লোক সমাজে কাঁদে না। উপস্থিত সবার চোখে পানি। একটু আগেও যে রিজভী টাকার চিন্তায় ঘুমুতে পারছিলো না, তার চোখেও এখন রাজ্যের ঘুম নেমে আসছে।তার মায়ার জন্য সবাই যে আছে এখন।সবাই মায়াকে ভালোবাসে।
কিন্তু দুটো ঘর পরেই অবস্থান করা মায়া জানতেও পারলোনা, সে যে নিজেকে জনমদুখিনী ভাবে, সে সেটা মোটেও নয়।
চলবে…..
#আমি_মায়াবতী
#পর্ব_৪৩
#লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা
মায়া চুপচাপ বসে আছে জানালার ধারে। মনটা তার ভীষণই খারাপ। এতো শুভ একটা কাজে কি এমন হলো যে সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে?আম্মা, ফুপি,কাব্য,নানা-নানি সবাইকেই সে জিজ্ঞেস করেছে। কেউ তার কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। তার বিয়ের তারিখ পিছিয়ে গেছে। আবার সে শুনেছে কাবিন হবে না শুধু, সম্পূর্ণ বিয়েই হবে। তাকে নিয়ে যাবে কাব্যদের বাড়ি। মায়া খুব আশা নিয়ে বসেছিল বউ সাজার জন্য। এখন আবার নাকি ৬ দিন অপেক্ষা করতে হবে। কেউ তার কোনো প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে না। নিজেকেই নিজে জিজ্ঞেস করে সে,সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো?সবকিছু ভালোয় ভালোয় সম্পন্ন হবে তো? নাকি আবার কোনো নতুন ঝড় এসে এলোমেলো করে দিয়ে যাবে সবকিছু?
“মায়া, রেডি হয়ে নে তাড়াতাড়ি। সাবিহা আর রিজা তো সাজগোজ করছে। তোর ফুপি রেডি হয়ে বসে সবাইকে বকাঝকা করছে। এখন এসে যদি দেখে তুই কিছুই করিস নি, তাহলে তোকে কিন্তু খুব বকবে।”
সাগরিকার কথায় মায়া বলে, “কি এমন হলো আম্মা, যে আমাকে এতো তাড়াতাড়িই ঐ বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছো? তোমরাই তো বলেছিলে যে শুধু কাবিন হবে। এখন আবার কি হলো?”
সাগরিকা বুঝতে পারলো মায়ার মনের অবস্থা। কিন্তু সব কথা তো ওকে বলা যাবে না। তাই বললো,”আমিও জানিনারে মা। তোর বাবা বললো।”
“বিয়ের জন্য কি কোনো হল ভাড়া করেছে বাবা?”
“হ্যাঁ, কাব্যর বাবা আর তোর বাবা মিলে তিনদিনের জন্য ভাড়া করেছে। তোর গায়ে হলুদ ঐখানেই হবে। কাব্যকে হলুদ দিবে ওদের বাড়িতেই।ওদের বাড়িতো অনেক বড়। কিন্তু বৌভাত সেন্টারেই করবে।”
“অহ। তাহলে তো অনেক টাকাই খরচ হয়ে যাবে বাবার। কিছুদিন আগেই তো গ্রামে ঘর দিলো। এখন আবার এতো অনুষ্ঠান করে বিয়ে।বাবার উপর তো অনেক চাপ পড়ে যাচ্ছে মনে হয়।”
“তোকে টাকা নিয়ে ভাবতে কে বলেছে? চুপচাপ রেডি হয়ে নে।বৌভাতের দিন যে শাড়িটা পড়বি, সেটা কিনতে যেতে হবে। গয়নাও কিনতে হবে কিছু।”
“সিম্পল গয়না পড়বো বৌভাতের দিন আম্মা। বিয়ের দিনের গয়নাগুলো তো অনেক ভারি ভারি।”
“সেটা তোর ইচ্ছে। কিন্তু এখন রেডি হয়ে নে। সাবিহা আর রিজা চলে আসবে কিন্তু এখনই তোকে ডাকতে।”
“তুমি যাবে না আম্মা?”
“নাহ।”
“কেন?”
“মেয়ের মায়ের অনেক কাজ বুঝলি? মা হলে বুঝতে পারবি।তাছাড়া তোর নানা-নানিও তো যাচ্ছে। ঐ বাড়ি থেকে কাব্য, কবিতা আর কাব্যর দুই ফুপি আসবে।”
“অহ, আচ্ছা। কিন্তু তুমি গেলে ভালো হতো।”
“নিজের বিয়ে। তুই নিজে পছন্দ করে সবকিছু কিনবি। না হলে পরে ভালো না লাগলে সারাজীবন আফসোস করবি। বুঝলি?”
“ঠিক আছে।”
★★★
সাবিহার ইচ্ছে করছে হাউমাউ করে এখন কান্না করতে। মায়াও মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। রিজা কোনো কথাই বলছেনা। কাব্যর বড় ফুপি আর তার মেয়ে নায়লা তাদের কথায় কথায় দামী দামী জিনিস নিয়ে খোঁটা দিচ্ছে৷ যেমন একটু আগে তারা এসেছে নিজস্ব গাড়িতে চড়ে। মায়ারাও এসেছে। কিন্তু তাদের তো একটাই গাড়ি। তাই তাদের নানা-নানি আর ফুপি অন্য গাড়িতে আসছে। এখনও এসে পৌঁছাতে পারেনি তারা৷ কাব্যরাও আসতে পারেনি জ্যামের কারণে। সেই সুযোগে কাব্যর ফুপি আর ফুপাতো বোন মিলে ওদের অপমান করছে। মায়া কিংবা সাবিহা দুজনই জানে কাব্যদের তুলনায় তাদের বাবার টাকা-পয়সা কমই আছে। কাব্যদের একটা বাংলো বাড়ি আছে সেখানে মায়াদের শুধু একটা ফ্ল্যাট। সেটা নিয়েও খোটা দিয়েছে মায়াকে। আর কাব্যর ফুপাতো বোন নায়লা তো বলেই বসেছে মায়াকে,”কি দেখে যে কাব্য তোমাদের মতো ঘরের মেয়েকে পছন্দ করেছে কাব্যই জানে। ওর রুচি যে এতো খারাপ আমরা জানতাম না। আমরা তো ভেবেছিলাম ও আমাদের মতোই কোনো বড়ঘরের মেয়েকে বিয়ে করবে।”
মায়ার ইচ্ছে করছে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে। এইসব কথা যে সরাসরি কেউ কাউকে বলে সেটা জানা ছিল না তাদের।
“এই স্যরি স্যরি লেইট হয়ে গেলো। অনেক সময় ধরে বসে আছো তোমরা? আমরা আসলে জ্যামে পড়ে গিয়েছিলাম।”
মায়া কবিতার গলার আওয়াজ পেয়েই ছুটে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে। কাব্য ওর ফুপির কাছে যাওয়ার সময় দেখে কারো মুখেই হাসি নেই। ও মুহুর্তেই বুঝে যায় ফুপি ওদের কিছু বলেছে।ফুপিকে সালাম দিয়ে বসে মায়াকে বলে,”তোমার নানা-নানি আর ফুপি কই?”
রিজা জবাব দেয়,”ওরাও জ্যামে পড়েছে। সময় লাগবে আসতে।”
কাব্যর ফুপি বলে,”ওনাদের জন্য কি অপেক্ষা করবো নাকি এখন? টাকা তো আমরাই পেমেন্ট করবো চল পছন্দ করে কিনে ফেলি।”
কাব্য কিছু বলার আগে নায়লা বলে,”হ্যাঁ, সেটাই।শুধু শুধু অন্যের জন্য সময় নষ্ট করবো কেন?”
কাব্য বলে,”আমরা অন্যের জন্য অপেক্ষা করবো কেন?যাদের বিয়ে হচ্ছে, তাদের জন্য অপেক্ষা করবো।”
মায়া বলে,”সমস্যা নেই। ওরা চলে আসবে। আপনারা চলুন না। ”
নায়লা বলে,”হ্যাঁ, সেটাই চল কাব্য। ”
সবাই শাড়ির দোকানের দিকে এগুলে কাব্য মায়াকে জিজ্ঞেস করে,”কি হয়েছে মায়া? সবার মন খারাপ কেন?ফুপি কি কিছু বলেছে?”
“নাহ। কি সব আবোলতাবোল বলছেন আপনি? ফুপি আমাকে কেন কিছু বলবে? কেউ কিছুই বলেনি।”
“তাহলে এইরকম মন খারাপ করে আছো কেন?”
“কই মন খারাপ করে বসে আছি? আমি তো হাটছি। চলুন সামনে।”
সবাই মায়ার জন্য শাড়ি পছন্দ করছে। নায়লা একটা কমলা রঙের শাড়ি এনে মায়ার গায়ে জড়িয়ে বলে,”এইটা কেমন লাগবে? সুন্দর না?”
কাব্য জানে মায়া কি পছন্দ করে। মায়া তাকে বলেছে সে বিয়ের দিন লাল শাড়ি পড়বে আর বৌভাতের দিন কালো।কাব্যও যেন কালো পড়ে। কাব্য নায়লার কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে বলে,”নিঃসন্দেহে শাড়িটা সুন্দর।কিন্তু মায়ার এই রঙ পছন্দ না। মায়া বৌভাতের জন্য কালো শাড়ি পছন্দ করেছে। আমিও কালোই পড়বো। পুরো কাপল ড্রেস। ভালো লাগবে না?”
নায়লা কিছু বলার আগেই ওর মা বলে,”ছিহ! কালো কোনো রঙ হলো? বিয়ের জন্য কেউ কি কালো শাড়ি নেয়?ছেলেরা না হয় পড়ে কিন্তু কালো শাড়ি কেউ কিভাবে পড়ে?অশুভ রঙ।”
কবিতা এইবার বেশ রেগেই বলে,”ফুপি, যাদের বিয়ে হচ্ছে, তাদেরকেই না হয় সিদ্ধান্ত নিতে দাও। জীবনে তো বিয়ে একবারই করে মানুষ। তাই ওদের ইচ্ছেমতোই ওদের সবকিছু করতে দাও।”
কবিতার মুখের উপর ওর ফুপি আর কিছুই বলেনা। কারণ কবিতার জেদ সম্পর্কে তার ভালোই ধারণা আছে। এইখানে এই শপিংমলেও যে তার সাথে যে সে রাগারাগি করবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
মায়ার ইচ্ছে অনুযায়ী ওদের ড্রেস কেনা হলে রিজা বলে,”মা যে কেন আসছেনা। আমাদের জামা কখন কিনবো?”
কাব্যর ফুপি ব্যঙ্গ করে বলে,”আজকে মনে হয় আসবেও না। কাব্যকেই তোমাদের ড্রেস কিনে দিতে হবে। হ্যাঁ রে কাব্য, বিয়ের আগেই শ্যালিকাদের জামা-জুতো দিবি নাকি?”
“আমি থাকতে আমার নাতনীদের অন্যকেউ জামা-জুতো কেন দিবে?দিলেই বা আমার নাতনীরা নিবে কেন?ওদের এই নানার কি কম আছে নাকি কিছু? ”
সবাই পিছনে তাকিয়ে দেখে মায়ার নানা-নানি আর ফুপি এসেছে। ফুপি এসে রিজার মাথায় চাটি মেরে বলে, “ফোন ধরছিস না কেন?সাইলেন্ট করে রেখেছিস? ফাজিল মেয়ে।”
কাব্য ওর ফুপির সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয়। মায়ার নানা রিজা আর সাবিহার শপিংয়ের সব টাকাই পেমেন্ট করে। রিজা যেন কাব্যর ফুপিকে শুনিয়ে শুনিয়েই বলে,” নানাভাই, আমি তোমার বউ হতে রাজি আছি তোমার বড় বউ মেনে নিলেই হলো এবার।”
মায়ার নানি বলে,”আমার বুড়ো বরের পিছনে পড়েছিস কেন মেয়ে?”
“এই যে দেখছোনা, কত দামী দামী গিফট দিল আমাকে। বিয়ে হলে তো রোজই দিবে। কত রিচ একটা পারসন অথচ অন্যদের মতো শো-অফ করে বেড়ায় না। অনেক মানুষকে তো দেখি কোনো কিছু খরচ না করেই মুখেই শুধু ফটর ফটর করে।”
মায়ার নানা-নানি আর ফুপি কিছু না বুঝলে বাকিরা বুঝতে পারে কথার অর্থ। মায়া রিজাকে বলে,”চুপ কর তো। শুধু বাজে কথা।”
কাব্যর বড় ফুপি নায়লাকে বলে,”তোর ছোটখালা কে কল দে। আসছেনা কেন ও?”
“খালামনি জ্যামে আঁটকে আছে।কাছাকাছিই আছে। চলে আসবে।”
মেয়েদের সবার ড্রেস কেনা শেষ হলে সবাই কাব্যর জন্য কিনতে যায়। মায়ার শাড়ির সাথে মিল রেখেই ওর জন্যও কিনে। কাব্য টাকা পেমেন্ট করতে গেলে মায়ার নানা ওকে সেটা করতে দেয়না। তার একটাই কথা,”মায়ার বিয়ের শাড়ি,বৌভাতের শাড়ি তোমরা দিয়েছো। অন্তত তোমার একটা ড্রেসের দাম আমাদের দিতে দাও।”
কাব্য না নিতে চাইলেও মায়ার নানা জোর করেই দেয়। ঠিক সেই সময়েই কাব্যর ছোট ফুপি সেখানে আসে৷ ওর বড় ফুপি বোনের কাছে গিয়ে কিছু বলার আগেই মায়ার নানাকে দেখে ওর ছোট ফুপি বলে,”আসসালামুআলাইকুম স্যার, ভালো আছেন?”
মায়ার নানা সালামের জবাব নিয়ে বলে,”ভালো আছি মা। তুমি মিলি না? খুব ব্রাইট স্টুডেন্ট ছিলে তো তুমি। এখন কি করছো?”
“আমিও শিক্ষক স্যার। তবে আপনার মতো ভালো শিক্ষক না অতোটা।”
“কেউ কি কারো মতো হয় মা? সবাই নিজেদের মতোই হয়।”
“হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই।”
“তুমি তাহলে কাব্যর ফুপি?”
“জ্বি,স্যার৷ আপনি মায়ার নানাভাই?”
“হ্যাঁ। ”
“ভালোই তো হলো। আমরা আত্মীয় হয়ে গেলাম এখন থেকে।”
কাব্যর বড় ফুপি বোনকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে বলে,”লোকটার হাবভাব আমার মোটেও ভালো লাগেনা। কেমন যেন।”
“থামো তো তুমি আপু। উনি যথেষ্ট ভালো মানুষ। এইসব ভুলভাল কথা বলে উটকো ঝামেলা করবে না মোটেও।”
বড় বোনের এই আচরণ তার মোটেও ভালো লাগে না। কথায় বলে না, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আড্ডাখানা? বাড়িতে কোনো কাজ নেই, বড়লোকের বউ। বাইরেও কোনো কাজ করেনা। তাই সারাদিন একজনের বদনাম অন্যজনকে বলেই দিন পার করে। নিজে তো এমন হয়েছেই। মেয়েটাকেও এমন বানিয়েছে।
★★★
“আপনাদের ছেলে কিন্তু অনেক বুঝদার। আমার অবস্থাটা ভালোভাবেই বুঝেছে। কিন্তু আমি আসলে এতো তাড়াতাড়ি চাইনি মায়াকে অন্যের ঘরে পাঠাতে।” কাব্যর মা-বাবাকে কথাগুলো বলে রিজভী।
কাব্যর মা বলে,”চিন্তা করবেন না ভাই। মায়া আমাদের বাড়িতে মেয়ের মতোই থাকবে। ওর কোনো অযত্ন হবে না।”
“আমরা সেটা জানি ভাবি। তবুও আমরা খুব কম সময়ই ওকে আমাদের কাছে পেয়েছি। আপনারা তো সবকিছু জানেনই।”
“তাতো জানিই। কিন্তু ভাগ্যে যেদিন বিয়ে লেখা আছে, সেদিন তো বিয়ে হবেই।”
“হ্যাঁ, ভাগ্যের উপর কারো হাত নেই তো আর।”
“সেন্টারটা ভালোই বড়। তাইনা মায়ার বাবা? সবকিছু ফিক্সড তো? ডেকোরেশন এর লোক,ক্যাটারিং? ”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ সবই ঠিক করা শেষ। আপনাদের দুই বেয়াইনকে শুধু দেখাতে নিয়ে এলাম। না হলে পরে আবার বলবে পছন্দ হয়নি। মায়েদের পছন্দ না হলে ছেলে মেয়েদের পছন্দ হবে না।”
কাব্যর মা ওর বাবার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,”খোঁচা মেরে কথা বলবে না কিন্তু। ”
“যথাআজ্ঞা।”
কাব্য মায়ার বাবাকে রিকোয়েস্ট করেছিল যেহেতু এতো টাকা খরচই হচ্ছে, তাহলে এখন সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে। শুধু শুধু সামনের বছর করে কি লাভ। মায়া না হয় বিয়ের পর বাবার বাড়িতেই বেশি থাকবে। কাব্যর বাবারও পরিকল্পনা ভালো লেগেছিল। তাই সেও সায় দিয়েছে। বিয়ের তারিখও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে দূরের আত্মীয়রাও আসতে পারে। আজ মায়াদের শপিং করতে পাঠিয়ে বাবা-মায়েরা এসেছিল কমিউনিটি সেন্টার দেখতে।তারা গল্প করছিল ঠিক সেই সময় কাব্যর বাবাকে কল করে কাব্যর বড় ফুপি। কাব্যর বাবা একটু দূরে গিয়ে বোনের কল ধরতেই ওপাশ থেকে রাগান্বিত স্বরে বলে, “আমরা এতোটাই পর হয়ে গেছি যে এইরকম একটা মায়ের মেয়েকে বিয়ে করাচ্ছিস ছেলেকে। মেয়েটা না হয় তোর ছেলের মাথা খেয়েছে। তোদের মাথাও কি চিবিয়ে খেয়েছে নাকি যে তোরাও ছেলের কথামতো ঐরকম একটা মেয়েকে ছেলের বউ করছিস?আমাদের একবার জানালিও না। চুপিচুপি সব ঠিক করে ফেলেছিস। শোন, এই মেয়েকে ছেলের বউ করলে তোর সাথে সব সম্পর্ক এখানেই শেষ করবো।”
চলবে…..