আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব-১৬+১৭

0
24

গল্প- আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে
পর্ব- ১৬
লেখিকা- সালমা চৌধুরী

আবির ২ টা চেয়ার এনে পরিষ্কার জায়গাতে রেখে নিজেই টিস্যু দিয়ে মুছে বললো,
“বোস এখানে”

আবির ৩ প্লেট ফুচকা অর্ডার দিয়ে এসেছে। মেঘের মন খুশিতে ভরে গেছে। আবির ভাইয়ের সাথে এতটা সময় সে আজই প্রথম কাটাচ্ছে। এই অনুভূতিহীন মানুষটা এককথায় ফুচকা খাওয়াতে রাজি হয়ে গেছে এটা ভেবেই মেঘ অজান্তে হেসে ফেললো,

আবির পাশের চেয়ারে বসতে বসতে চোয়াল শক্ত করে বললো,
“বেকুবের মতো হাসছিস কেন?”

আবিরের কথায় মেঘ কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেলো। ভণিতা ছাড়াই জবাব দিলো,
“এমনি”

ততক্ষণে ফুচকা চলে এসেছে। তিন প্লেট ফুচকা দেখে মেঘ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“এত ফুচকা কি আমাদের? ”

আবির উদ্বেলিত ভঙ্গিতে বলে,
“শুধু তোর, এগুলো খাওয়ার পর মন চাইলে আরও নিতে পারিস৷ ”

মেঘ আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে আছে, সহসা দুই অধরের মাঝে ফাঁকা হয়ে গেছে।

মেঘের দিকে চেয়ে আবির কপাল গোঁটায়। বিরক্তি নিয়ে বললো,
“মুখ টা বন্ধ করে খা। ”

মেঘ প্রথম প্লেট হাতে নিয়ে চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো। আবির বসে বসে ফোন চাপছে। মেঘ আগপাছ না ভেবে একপ্লেট ফুচকা কয়েক মুহুর্তে নির্বাণ করে ফেললো। দ্বিতীয় প্লেট হাতে নিয়ে আবির ভাইয়ের দিকে তাকালো তারপর সচেতন কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
“আবির ভাই, আপনি খাবেন না ফুচকা?”

আবির গুরুভার কন্ঠে বললো,
“আমি এসব খাই না”

মেঘ কোমল কন্ঠে বললো,
“আজ একটু খেয়ে ফেলুন , অনেক সুস্বাদু! ”

আবির ফোনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মেঘের দিকে ক্ষুদ্র চোখে তাকালো,দাঁত খিচে বললো,
“তুই খাচ্ছিস খা, আমি খাবো না”

মেঘের প্রেমানুভূতি এতটায় তীব্র যে আবিরের তপ্ত স্বরের কথাগুলো কানেই যাচ্ছে না । হাস্যোজ্জ্বল মুখে আবির ভাইয়ের দিকে চেয়ে আহ্লাদী কন্ঠে বললো,

“একটা খান না প্লিজ”

আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাইলো, অকস্মাৎ অভিব্যক্তি বদলে গেলো আবিরের, খরখরে কন্ঠে বললো,
“দে”

মেঘ তৎক্ষনাৎ প্লেট বাড়ালো আবির ভাইয়ের দিকে,

আবির ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে বললো,
“একটা ফুচকার জন্য আমি হাত নষ্ট করতে পারবো না, তুই খাইয়ে দে”

মেঘ চোখ বড় করে তাকালো, জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালো, মেঘের ডাগর ডাগর চোখে তাকানো দেখে আবির নিজের দৃষ্টি সংযত করে ফোনের দিকে তাকালো৷

মেঘ ধীর হস্তে ফুচকায় টক দিয়ে, আলতো হাতে আবির ভাইয়ের মুখের সামনে ধরতেই আবির হা করলো, মেঘও দু আঙুলে কোনোরকমে ফুচকা মুখে দিয়ে হাত সরালো দূরে৷ যেনো আবির ভাইয়ের ছোঁয়ায় কারেন্টের শক খেয়েছে।

ফুচকা মুখে পরতেই আবির ভ্রু কুঁচকে চোখ বন্ধ করলো, কোনোরকমে গিললো,দাঁত কিরকির করছে। দাঁতে দাঁত চেপে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
” উফ, কিভাবে খাস এত টক?”

মেঘ দাঁত বের করে হাসে, ঠাট্টার স্বরে বলে,
“এভাবেই”

আবির দাঁতে দাঁত চেপে ধরে আছে। ক্ষুদ্র চোখে তাকিয়ে আছে অষ্টাদশীর পানে।৷ কিছু বলতে চেয়েও বলছে না।

হঠাৎ চোখ পরে দূরে, রাকিব দূর থেকে ফোন ধরে দাঁড়িয়ে আছে, আর দাঁত কেলিয়ে হাসছে। আবির কপাল কুঁচকে তাকালো, মেঘের চেয়ারের পিছনে হাত নিয়ে দু আঙুলে ইশারা দিলো,সঙ্গে সঙ্গে ফোন পকেটে রেখে জায়গা ত্যাগ করলো রাকিব।

মেঘ আপন মনে ফুচকা খাচ্ছে। ২য় প্লেটের শেষ ফুচকায় অতিসামান্য টক দিয়ে আবির ভাইয়ের দিকে বাড়ালো,

আবির সঙ্গে সঙ্গে হুংকার দিয়ে উঠলো,
“আর খাবো না!”

মেঘ পল্লব ঝাপটে অধর নেড়ে বললো,
” একটা খাইতে নেই, এটায় শেষ প্লিজ!”

আবির আগে থেকেই ভ্রু গুটিয়ে, চোখ বন্ধ করে হা করলো। তবে এটাতে টক কম দেয়ায় তেমন প্রভাব পরে নি। কোনোরকমে খেয়ে নিলো ফুচকাটা৷ একটু পানি খেয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে শুধালো,

“একটা খেলে কি হয়?”

মেঘের ঠোঁটে ফুটে উঠে রক্তজবার ন্যায় হাসি, তৎক্ষনাৎ হাসি থামিয়ে বললো,
“একটা খেলে পানিতে পরে যেতেন”

আবির বোকার মতো চেয়ে আছে মেঘের দিকে, কয়েক মুহুর্ত পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিরক্তি নিয়ে বলল,
“কি? কোত্থেকে শুনিস এসব আজগুবি কথাবার্তা? ”

মেঘ বিজ্ঞের ন্যায় মাথা দুলিয়ে বললো,
“আমার সোর্স আছে ”

মেঘ মাথা নুইয়ে মুচকি হাসে।। আবির মেঘের কথা শুনে কপাল গোটায়, কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে অকস্মাৎ বলে উঠে,
“আমি পানিতে পরলে তো তুই ই সবচেয়ে খুশি হতিস”

মেঘের উদ্বেলিত মনোভাব কমে আসে। সিক্ত চোখে তাকায় আবিরের দিকে। আবিরের নিরেট চোয়াল দেখেই মেঘ তটস্থ হয়ে সহসা চিবুক নামিয়ে মনে মনে বলে,
“আমি আপনাকে পানি পরতে দিব না, আপনার কিছু হলে আমি কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো। কে আমার স্বপ্নের রাজকুমার হবে?”

আবির চুপচাপ চেয়ার থেকে উঠে চলে যায়। মেঘ কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর মুখ তুলে তাকায়, তাকিয়ে দেখে আবির ভাই নেই। পিছনে ঘুরে দেখলো আবির ভাই টাকা দিচ্ছেন৷ ১ মিনিটের মধ্যেই আবির এসে চেয়ারের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে বললো,
“তোর খাওয়া শেষ হইছে?”

মেঘ মাথা নেড়ে “হ্যাঁ বললো”

আবির ২ টা টিস্যু এগিয়ে দিলো মেঘের দিকে। আবির খরখরে কন্ঠে বলল,

“চল তাহলে”

মেঘ উঠে আবির ভাইয়ের পিছন পিছন হাঁটে। বাইকের কাছে গিয়ে আবির মেঘের দিকে একটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দেয়।

মেঘ হাতে নিতে নিতে বলে,
“কি এখানে?”

“মীম আর আদির জন্য নিয়েছি” জবাব দিলো আবির৷

“মনের ভেতরের মুগ্ধতা মেঘের ঠোঁটের কোণে ভেসে উঠলো, আবির ভাইকে সে কখনো বলতেই পারতো না মীম আর আদির জন্য নেয়ার জন্য। মেঘ কে যে খাওয়াতে এনেছে এটায় অবাক কান্ড আবার তাদের জন্য ও নিচ্ছে। মেঘ বিড়বিড় করে বললো,
” বাহ! আবির ভাই।”

আবির চোখ পা*কিয়ে তাকালো, হালকা স্বরে ধ*মকে উঠলো,
” এই মেয়ে, উঠবি? ”

মেঘ সঙ্গে সঙ্গে আবির দিকে তাকায়, স্বাভাবিক হয়ে উঠে বসে বাইকের ব্যাক সিটে। বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আবির চলে যায়। মেঘ খুশিতে গদগদ হয়ে মীম আর আদির কাছে যায়।

পেইজঃ Salma Chowdhury – সালমা চৌধুরী (scsalma90)

★★★★

আবির মসজিদে মাগরিবের নামাজ পরে বাইক স্টার্ট দেয়। একেবারে এসে থামে বন্ধুদের আড্ডার মহলে।রাকিব আর রাসেল আড্ডা দিচ্ছিলো। মোবারক আর লিমন এখনও আসে নি, রাস্তায় আছে মনে হয়।
আবির বাইক থেকে নামতে নিলে রাকিব দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে জরিয়ে ধরতে যায় আবিরকে। আবির বাইক থেকে নেমেই ২-৩ ঘু*ষি বসিয়ে দেয় পেটে। ঘু*ষিগুলো এত জোরে না লাগলেও রাকিব কিছুটা নত হয়ে যায়। রাসেল বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আঁতকে উঠে বলে,
“কি হয়ছে তোদের?”

রাকিব কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলে,
“উফ, এমনে কেউ মারে?”

আবির রাগান্বিত কন্ঠে বললো,
“তোর যেমন মুখ বেশি চলে , আমার তেমনি হাত বেশি চলে”

রাসেল পুনরায় শক্ত কন্ঠে বললো,
“আরে হইছে টা কি, বলবি আমায়?”

রাকিব হাসতে হাসতে জবার দিলো,
“আর বলিস না, আবিরকে বিকালে ফুচকার দোকানে দেখে আমি পুরাই টা*শকি খাইছি, যেই আবির এত বছরে ফুচকার দোকানের আশেপাশে যায় নি সে কেনো ফুচকার দোকানে আসছে আমার জানতে হবে না? আমি দৌড়ে গেছি আবিরের কাছে। আবিরের পাশে মেঘকে দেখে আমিতো আরও অবাক। খুশিমনে ওদের আপ্যায়ন করার জন্য বললে ফেলছিলাম, আমার পক্ষ থেকে ফুচকা খাওয়াবো সেই ঝা*ল এখন মিটাচ্ছে। ”

আবির গম্ভীর কন্ঠে বললো,
” ও আমার কাছে জীবনে প্রথম ফুচকা খাওয়ার আবদার করছে, তুই কেনো খাওয়াবি! ”

রাসেল সহসা বলে উঠলো,
“ঠিকই তো। আবিরের ও কে তো আবিরই খাওয়াবে। ”

রাকিব পুনরায় ঠাট্টার স্বরে বললো,
“এজন্যই তো আমি বলছিলাম, সারাজীবন তো আবির ই খাওয়াবে এবার নাহয় আমি খাওয়ায়।”

রাসেল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
“তুই কি এই কথা ওদের সামনে বলে ফেলছিলি?”

রাকিব আবার বললো,
“একটু বলছি। না মানে আমার কি দোষ, উত্তেজনায় মেঘ কে প্রথমে ভাবি বলে ফেলতে চাইছিলাম। ”

রাসেল অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো রাকিবের দিকে, অকস্মাৎ বলে উঠলো,
” ঠিকই আছে। আরও খা মা*ইর । ”

রাকিব আবিরের দিকে তাকিয়ে নাক টেনে কিছুটা আবেগি কন্ঠে বললো,
“মাফ করে দে ভাই। মুখ ফঁসকে আর কিছু বলবো না।”

আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বললো,
“মুখ ফঁসকে বলছিলি ভালো কথা, তুই আমাদের রোমান্টিক মুহুর্তে বেগরা দিছিস কেন? আমি কি তোর প্রেমে কখনো বেগরা দিছি?”

রাকিব ভেংচি কেটে বললো,
“আমারটা তো মেঘের মতো এত লক্ষী না, আজ পর্যন্ত একটা ফুচকাও নিজের প্লেট থেকে দেয় নি আমাকে বরং আমার প্লেট থেকে আরও নিয়ে নেয়। ”

আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়, কিছু বলার আগে রাকিব পুনরায় বলা শুরু করলো,
“মেঘ তোর জন্য সারাদিন না খেয়ে বসে থাকতে পারে আর আমারটা এক গামলা খেয়ে তারপর আমার সাথে ঝ*গড়া লাগে। যদি ঘুরতেও নিয়ে যাই, বাসা থেকে বের হয়ে সে আগে ফুচকা,চটপটি, হালিম খেয়ে নেয় একা একা। তারপর আমার সাথে দেখা করতে আসে। আমি যেখানে নিজে শান্তিতে প্রেম করতে পারি না সেখানে তোকে কেমনে করতে দেয়?”

আবির কপাল গোটিয়ে ক্ষুদ্র চোখে তাকিয়ে আছে।

রাসেল সহসা বলে,
“রাকিব, কি করছিস তুই?”

রাকিব আবারও হাসি শুরু করলো, এবার হাসির মাত্রা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। হাসতে হাসতে বললো,

“রাসেলরে তোকে তো একটা জিনিস দেখানোই হয় নি। আয় বোস, একটা OMG জিনিস দেখায় তোকে।”

আবিরের দিকে তাকিয়ে পুনরায় দাঁত কেলিয়ে বললো,
“আয় নিজের কুকী*র্তি দেখে যা! ”

তিন বন্ধু চেয়ার টেনে বসছে এরমধ্যে মোবারক আর লিমন ও এসেছে। ৫ জনেই চেয়ার কাছাকাছি এনে বসেছে। আবির ভেবেছিল ছবি দেখাবে তাই এতটা মনোযোগ দেয় নি।

কিন্তু রাকিব একটা ভিডিও অন করলো। পিছন থেকে ভিডিও করেছে। মেঘের হিজাবের কারণে মুখটা তেমন ভাসে নি। কিন্তু আবিরের মুখের একপাশে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। মেঘ আবিরকে মুখে তুলে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছে।

এতটুকু দেখেই মোবারক আর রাসেল চিৎকার দিয়ে উঠে,

“আবির… তুই ফুচকা খাইছিস?”

লিমন অতর্কিত কন্ঠে বললো,
“আবির, তুই এক মেয়ের পাশে বসে ফুচকা খাচ্ছিস তাও মেয়ে খাইয়ে দিচ্ছে ! ”

রাসেল এবার হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললো,
“এটা এক মেয়ে না রে, আবিরের জীবনের একমাত্র মেয়ে। ”

মোবারক আবিরের দিকে চেয়ে সহসা বলে উঠে,
“মেঘ নাকি নাম শুনেছিলাম। ওনিই কি সে?”

আবির শুধু উপর নিচ মাথা নাড়ায়।

লিমন অভিযোগের কন্ঠে বললো,
“এটা আমি মানতে পারলাম না৷সেদিনও তো তোকে কত জোর করলাম ফুচকা খেতে। চেপে ধরেও তোকে খাওয়ানো গেলো না আর আজ..!”

রাকিব দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,
“মেঘ কিছু বললে আবির আবার না করতে পারে না।”

তিন বন্ধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো আবিরের দিকে।

রাসেল সহসা বলে উঠলো,
“তুই তো টক খাস না জীবনেও, ফুচকা কেমনে খেলি?”

আবির মুচকি হেসে জবাব দিলো,
“শুধু টক কেনো, ও আমায় বিষ দিলে আমি সেটাও চুপচাপ খেয়ে নিবো।”

চারবন্ধু এবার বিস্ময়কর দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকালো । কয়েক মুহুর্ত সবাই চাওয়াচাওয়ি করলো।

মোবারক হাসিমুখে বললো,
“বিয়ে কবে খাচ্ছি বন্ধু?”

আবির ঠাট্টার স্বরে বললো,
“আর বিয়ে….”

লিমন কিছুটা চিন্তিত হয়ে বললো,
“কেনো? কিছু হয়ছে?”

আবির কিছু বলার আগেই রাকিব হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
“সেদিন যদি মেঘ রাজি হইতো তাহলে আবির আজ বিবাহিত থাকতো। ”

তন্মধ্যেই রাসেল বলে বসলো,
“তুই মেঘকে কবে প্রপোজ করলি আর কবেই বা রিজেক্ট করলো শুনলাম না তো!”

আবির চোখ-মুখ গোটাল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাইলো রাসেলের দিকে৷

রাকিব পুনরায় বললো,
“আরে দূর প্রপোজ না। আবির মেঘকে বলছিলো, তুই পড়াশোনা না করলে বাদ দে। করতে হবে না তোর পড়াশোনা। কিন্তু মেঘ বেচারি বুঝলোই না, বলে বসলো পড়াশোনা করবো ”

লিমন কিছুটা ভেবে বললো,
“পড়াশোনা না করলে কি করতি?”

আবির দাঁত খিচে বললো,
“পড়াশোনা করবে না বললে ১ ঘন্টার মধ্যে কাজী এনে বিয়ে করে ফেলতাম। ”

রাসেল স্ব শব্দে হেসে উঠলো। আর বললো,
“মেঘ যদি রাজি না হতো?”

আবির রাগান্বিত কন্ঠে জবাব দিলো,
“জোর করে বিয়ে করলে রাজি কি আবার। ”

লিমন,মোবারক আর রাসেল এত বেশি জানে না। রাকিব আবিরের সবকিছু জানে। রাকিবের সাথে রাসেল চলাফেরা করায় রাসেল টুকটাক জানে।

লিমন দাঁত বের করে ঠান্ডা কন্ঠে শুধালো,
” বিয়েটা তো মেঘকে বলেও করতে পারিস। তাহলে তো আমরাও বিয়েটা খেতে পারি আর তোর বউও বিয়ের পরে পড়াশোনা করতে পারে। ”

আবির দীর্ঘশ্বাস ফেললো, কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,

“এই কাজ আমি কখনোই করবো না। ”

মোবারক প্রশ্ন করলো,
“কেনো?”

আবির গম্ভীর কন্ঠে বলা শুরু করলো,
“কারণ মেঘকে বা বাসায় ঝামেলা করে আমি এখন বিয়েটা করলে, জীবনের কোনো এক সময়ে, মেঘের মনে হতে পারে আমি ওর যোগ্য না। পড়াশোনা, বাহিরে চলাফেরা, বন্ধুমহলের সাথে সে আমাকে মানাতে পারলো না। মেঘের কখনো যদি মনে হয় আমি ওর জীবনে জোর করে এসেছি বা মেঘ আমার থেকে মুক্তি চাই তখন আমি কি করবো ? তার থেকে ভালো, ও পড়াশোনা করুক, নিজে প্রতিষ্ঠিত হোক। যখন ওর মনে হবে আমাকে ছাড়া ওর চলবে না তখনই আমি ওকে বিয়ে করবো। ”

গভীর মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিল সকলে। মোবারক মাথা চুলকে বললো,
“একটু আগে যে বললি জোর করে বিয়ে করবি?”

আবির এবার কপাল কুঁচকে, বিরক্তি নিয়ে বলা শুরু করলো,
“মেঘ যদি বলতো সে পড়াশোনা করবে না তাহলে আমি জোর করে বিয়ে করতাম। কারণ তখন তার পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছে থাকতো না, জীবনে চলার পথে নতুন বন্ধু হতো না। আমাকে ঘিরেই ওর পৃথিবী হতো। একটা না একটা সময় গিয়ে আমার প্রেমে পড়তে বাধ্য হতো। ”

লিমন এতক্ষণ নিরব থাকলেও এবার চিন্তিত স্বরে বললো,
“”সবই বুঝলাম কিন্তু ভাবির জীবনে যদি অন্য কেউ চলে আসে তখন কি তুই ভাবিকে ছেড়ে দিবি?””

রাকির ফিক করে হেসে উঠলো, তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো,
“”যা বলেছিস তুই, আবির দিবে মেঘকে ছেড়ে, হাসাইলি। এই আবির দেশেই আসছে এক ছেলেকে পি*টাইতে । ছেলের অপরাধ কি! ছেলে মেঘের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিলো। কথা বলার চেষ্টাতেই ছেলে এখনও হাসপাতালে ভর্তি, যদি প্রেম করার চিন্তা করে তখন আবির কি করবে,তোরাই ভাব। “”

রাসেল, লিমন আর মোবারক সম স্বরে চিৎকার দিয়ে উঠলো,

“”আবির…..!””

আবির নিরেট কন্ঠে বললো,
“আস্তে”

আবির পকেট থেকে ফোন বের করে টাইম দেখে বললো,
“নামাজের সময় হয়েছে। চল নামাজে যাই। ”

সবাই নামাজ পরে বের হলো। রাকিব দাঁত কেলিয়ে বললো,
“শুন আজ আবির আমাদের ট্রিট দিবে। কি খাবি বল তোরা”

আবির বিরক্তি নিয়ে বললো,
“আমি কেনো ট্রিট দিবো? আমি কি বিয়ে করছি নাকি?”

রাকিব মুখ বাঁকিয়ে বললো,
“বিকেলে যে বললি আনলিমিটেড ফুচকা খাওয়ানোর ক্ষ*মতা তোর আছে তাহলে এখন আমাদের খাওয়া। ”

আবির গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“এই অফার শুধু আমার কাদম্বিনীর জন্য। ”

লিমন অকস্মাৎ বলে উঠলো,
“আমাদের আনলিমিটেড খাওয়াতে হবে না লিমিটেডই খাওয়া। তোর কাদম্বিনীর তরফ থেকে। ”

আবির কিছুটা ভেবে বললো,
“ঠিক আছে, চল!”

তিনটা বাইকে ৫ বন্ধু চললো। আবির একা, বাকি দুই বাইকে দুজন করে। নামিদামি রেস্তোরাঁয় এসে বসলো সকলে।

আবির উৎফুল্ল কন্ঠে শুধালো,
“বুফে খাবি নাকি কাচ্চি?”

৪ বন্ধু চোখাচোখি করলো,রাসেল মুচকি হেসে বললো,

“দেখলি লিমন, মেঘের কথা বলতেই বুফে অফার করছে। কি ভালোবাসা। ”

মোবারক বলে বসলো,
“তাহলে দুদিন পর পর ভাবির কথা বলে খাবার খাওয়া যাবে ”

আবির কড়া কন্ঠে জবাব দিলো,
“এটায় আমার বিয়ের আগে আমাদের পক্ষ থেকে তোদের প্রথম এবং শেষ ট্রিট। এতদিন মেঘের কথা এত ডিটেইলস জানতি না তাই ট্রিটের কথা উঠে নি আজ যেহেতু জানছিস তাই ট্রিট দিচ্ছি আর কিছুই না। ”

সবাই কাচ্চি আর বোরহানি নিলো। আবির ফোন বের করে টাইম দেখে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করলো। বাকি চার বন্ধু এখনও খাচ্ছে।
আবির হাত ধৌয়ে টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বললো,
“তোরা কি আর কিছু খাবি?”

“কেনো চলে যাবি নাকি?” রাকিব বললো।

আবির মুচকি হেসে বললো,
“তোদের ভাবি আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”

সবাই একসাথে বলে উঠলো,
“অ্যাহ”

লিমন অভিমানী স্বরে বললো,

“বাহ বন্ধু বাহ! এক বাড়িতে প্রেম করে যা মজা নিচ্ছিস, এদিকে আমার সব কাজিনের বয়স ৫ বছরের এর কম। জীবনটা বেদনার। ”

আবির একগাল হেসে বললো,
“আর কিছু না খেলে বিল দিয়ে দিচ্ছি ”

সবাই বললো,
“আর কিছু খাবো না, দোয়া করি তোরা সুখী হ।”

আবির বিল পরিশোধ করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।

পেইজঃ Salma Chowdhury – সালমা চৌধুরী ( scsalma90)

★★★★

এদিকে মেঘ সন্ধ্যার পর বাসায় এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে পড়তে বসেছিলো। ঘন্টাদুয়েক পড়ে খেয়ে নিয়েছে। আবির শুক্রবারে বাহিরেই বন্ধুদের সাথে হাবিজাবি খায় । রাতে বাসায় ফিরে আর ভাত খাই না। এজন্য মেঘও শুক্রবারে আবির ভাইয়ের কথা ভাবে না,সবার সাথে খাবার খেয়ে নেয়। ঘন্টাদুয়েক পড়াশোনা করে আবির ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছে মেঘ। আজ আবির ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা উতলে পরছে মেঘের। ভাবছে আবির ভাই ফিরলে এককাপ কফি করে দিবে আবির ভাইকে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ আবির ভাইকে বাইক নিয়ে গেইট দিয়ে ঢুকতে দেখে এক দৌড়ে নিচে চলে যায়। ড্রয়িং রুমে কেউ নেই৷ খাওয়াদাওয়া শেষ অনেকক্ষণ আগেই সবকিছু গুছিয়ে সবাই সবার রুমে চলে গেছেন। মেঘ পা টিপে রান্নাঘরে যায়৷

আবির চাবি দিয়ে লক খুলে বাসার ভিতরে ঢুকে৷ বড় বড় কদম ফেলে হাঁটে সিঁড়ির দিকে। মেঘ ছোট একটা পাতিল টান দেয় পানি বসানোর জন্য। এই পাতিলের নিচে যে আরেকটা পাতিল ছিল সেটা তার চোখে পরে নি৷ পাতিল ফ্লোরে পরতেই জোরে শব্দ হয় , শব্দ শুনে আবির পাশ ফিরলো, তাকালো রান্নাঘরের দিকে। মেঘ চোখ বন্ধ করে, একহাতে পাতিল সহ, আরেকটা খালি হাতের আঙুল দিয়ে দু কান চেপে ধরে আছে।

মেঘকে রান্নাঘরে দেখে আবিরের পায়ের র*ক্ত মাথায় উঠে গেছে। দ্রুত পায়ে হেঁটে গেলো রান্নাঘরের দিকে।

আবির দাঁতে দাঁত চেপে, গম্ভীর কন্ঠে শুধালো,
“এখানে কি করছিস?”

আবির ভাইয়ের কন্ঠ শুনে কেঁ*পে উঠে মেঘ। ভ*ড়কে যায় কিছুটা। মনে মনে ভাবছে,

“যদি বলি আবির ভাইয়ের জন্য কফি করতে আসছি তাহলে আমি শেষ।”

নরম স্বরে আস্তে করে মেঘ বললো,
” কফি খেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো।”

আবির সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পরখ করলো অষ্টাদশীর আপাদমস্তক । গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“তুই ডাইনিং এ বোস। আমি আনছি”

মেঘ তটস্থ নজরে চাইলো। দৃষ্টি তার নিরেট। কয়েক মুহুর্ত পর পাতিল রেখে ডাইনিং টেবিলের চেয়ার টেনে বসলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রান্নাঘরে।

আবির বেসিন থেকে হাত ধৌয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই দুকাপ কফি নিয়ে ডাইনিং এ আসলো। এককাপ মেঘের দিকে এগিয়ে দিলো বসলো মেঘের বিপরীতে ।

মেঘ আস্তে আস্তে ফুঁ দিয়ে এক চুমুক খেলো। সঙ্গে সঙ্গে বিস্ময়কর চোখে তাকালো আবির ভাইয়ের দিকে। তারপর আরেক চুমুক দেয় কফিতে।

আবির কফিতে এক চুমুক দিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,
“চিনি ঠিক আছে?”

মেঘ সহসা উপর নিচ মাথা নাড়লো।

আবির ভ্রু নাচিয়ে শুধালো,
“তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”

মেঘ বিস্ময় কন্ঠে বললো,
“আপনি এত ভালো কফি বানাতে পারেন? কিভাবে শিখেছেন?”

আবির নিরুদ্বেগ কন্ঠে উত্তর দিলো,
“বাহিরে থাকলে এরকম অনেক কিছুই শিখতে হয়। পরিস্থিতিই শিখিয়ে দেয়।। ”

মেঘ কি বুঝলো কে জানে, একগাল হেসে বললো,
“Thank you Abir Vai”

অকস্মাৎ আবিরের অভিব্যক্তি বদলে গেলো, ভ্রু কুঁচকে ধম*কের স্বরে বলে উঠল,

“বাড়িতে এতগুলো মানুষ আছে,সাথে একজন হেল্পিং হ্যান্ড থাকার পরও তুই রান্নাঘরে ঢুকলি কোন সাহসে?”

আবির ভাইয়ের ধ*মকে চমকে উঠলো মেঘ। অক্ষিপল্লব কাঁপছে তিরতির, ঘামতে শুরু করেছে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে।

আবির দ্বিতীয় বার গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“দরকার হলে তোর জন্য আরও দুজন হেল্পিং হ্যান্ড রাখবো। তারপরও তোকে যেনো আগামী ৩ মাস রান্নাঘরে পা দিতে না দেখি। ”

কথা শেষ হওয়া মাত্রই হাতে কফির কাপ নিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।

মেঘ মানব মুর্তির ন্যায় চেয়ারে বসে রইলো ।

(চলবে)

গল্প- আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে
পর্ব- ১৭
লেখিকা- সালমা চৌধুরী

আবির গভীর রাতে মেঘের দরজায় ডাকছে। দরজা খুলায় ছিল তারপরও ওনি ঢুকছেন না। কন্ঠ উঁচু করে বললেন,
“আসবো?”

মেঘ একগাল হেসে তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলো,
“আমার রুমে আসতে আপনার অনুমতির প্রয়োজন নেই। ”

আবির মেঘের মাথার কাছে বিছানায় বসে কোমল কন্ঠে বললো,
“তুই এত কিউট কেন, মেঘ?”

আবির ভাইয়ের আজগুবি কথা শুনে বিস্ময়কর চোখে তাকালো,
বারান্দায় জ্বালানো লাল রঙের লাইটের আলোতে আবিরের মুখমন্ডল টকটকে লাল বর্ণের হয়ে আছে।

আবির কেমন করে চেয়ে আছে মেঘের দিকে, আবির ঠোঁট কামড়ে বললো,
” তোর এই ডাগর ডাগর চোখের চাউনি আমায় বারবার আ*হত করে। অভিমানী সেই কন্ঠস্বর আমাকে বারংবার তোর প্রেমে পরতে বাধ্য করে। তোর অকৃত্রিম হাসি আমার সারাদিনের ক্লান্তি নির্বাণ করে। ”

মেঘ হা করে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। মুখ ফ*সঁকে বলে উঠলো,
“আপনি আমায় ভালোবাসেন,আবির ভাই?”

আবির সঙ্গে সঙ্গে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। কিছু না বলেই চলে যাচ্ছে।

মেঘ পিছন থেকে ডাকছে,
“আবির ভাই”

আবির ফিরেও তাকাচ্ছে না।
পুনরায়” আবির ভাই ” চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো বিছানায়।

আশপাশে তাকিয়ে দেখে কোথাও আবির ভাই নেই। বারান্দার লাইটের আলোতে স্পষ্ট দেখা গেলো রুমের দরজা বন্ধ। মেঘ বিস্ময় সমেত তাকিয়ে রইলো দরজার পানে। ফ্যানের বাতাসে চুলগুলো উড়ে চোখে মুখে ঝাপটে পরছে।

কয়েক মুহুর্ত লাগলো মেঘের বুঝতে, যে এটা স্বপ্ন ছিল।

মেঘ দীর্ঘশ্বাস ফেললো, দূর-দূরান্ত থেকে আজানের শব্দ ভেসে আসছে। মেঘ মোবাইল টা হাতে নিয়ে টাইম দেখলো। ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে। মেঘ ফোন থেকে আবির ভাইয়ের নামে সেইভ করা ফাইল টা বের করে আবির ভাইয়ের ছবিগুলো দেখতে লাগলো৷ কিন্তু মেঘের মস্তিষ্ক জোড়ে মাত্র দেখা স্বপ্নটায় ঘুরছে৷

মেঘ বিড়বিড় করে বললো,
“স্বপ্নেও ভালোবাসি বললেন না, হি*টলার তো হি*টলার ই!”

নামাজ পরে পড়তে বসেছে মেঘ। ভোরবেলা থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে৷ ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া৷ পড়ার থেকেও মাথায় দুষ্টুমি ঘুরছে বেশি৷ তারপর ও জোর করে ১-২ ঘন্টা পড়ে খাবার টেবিলে আসলো প্রতিদিনের মতো।

আবির একেবারে পরিপাটি হয়ে নামছে সিঁড়ি দিয়ে তা দেখতে মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। মনে পরে গেলো ভোররাতের স্বপ্নের কথা। ফিটফাট আবির ভাইকে দেখে নিলো আপাদমস্তক। একটা কালো শার্ট হাত তার কনুই পর্যন্ত উঠানো, হাতে একটা ব্লেজার,প্যান্ট টাও একই রঙের, চোখে কালো সানগ্লাস, ঘড়ি পড়তে পড়তে নিচে নামছেন। দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসলেন ডাইনিং এর দিকে। মেঘ তখনও অভিভূতের ন্যায় চেয়ে আছে আবির ভাইয়ের পানে।

আর গুনগুন করে গান গাইছে,

“”কালো সানগ্লাসটাই কেনো এত সুখ।
হে যুবক,
দৃষ্টিতে যেন সে রাসপুতিন,
খু*ন হয়ে যাই আমি প্রতিদিন,
নামধাম জানি, সাথে তার সবকিছু,
তবুও নিলাম আমি, তার পিছু।।””

আবির কাছাকাছি এসে সানগ্লাস খুলে, কপাল গুটালো কিন্তু মেঘের হুঁশ নেই।

আবির গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
“কি হয়ছে তোর ?”

মেঘ একটু নড়েচড়ে উঠলো। গান থামিয়ে কন্ঠ খাদে নামিয়ে জবাব দিলো,
“ব্লেজার পরলে আপনাকে কেমন লাগবে সেটায় ভাবছি। ”

আবির পুনরায় সানগ্লাস চোখে দিলো, কনুই পর্যন্ত তুলা হাত নামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্লেজার পরে নিলো।

মেঘ উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
“মাশাআল্লাহ, কারো নজর না লেগে যায়!”

অকস্মাৎ মেঘ চেয়ার থেকে উঠে আবির ভাইয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আবির ভ্রু কুঁচকে চাইলো,
মেঘ সহসা আবিরের ডানহাতের কনিষ্ঠা আঙুলে হালকা করে কামড় দেয়। আবির নির্বাক চোখে তাকিয়ে অষ্টাদশীর কান্ড দেখছে।

১ সেকেন্ডের মধ্যে মেঘ দূরে সরে গিয়ে চেয়ারে বসে পরে। নিজের কর্মকান্ডের প্রতি এখন নিজের ই রাগ হচ্ছে। আবির ভাই কিভাবে রিয়েক্ট করবে আল্লাহ জানেন, মনে মনে ভীত হচ্ছে অষ্টাদশী।

আবির স্বাভাবিকভাবে হেঁটে মেঘের বিপরীতে বসতে বসতে গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
“সুন্দর লাগলেই বুঝি ছেলেদের আঙুলে কামড় দেস তুই?”

মেঘ চমকে উঠে তাকায় আবির ভাইয়ের দিকে, সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়ে ডানে বামে, অভিমানী স্বরে বলে উঠে,

“মীম ছাড়া কারো আঙুলে কামড় দেয় না ”

আবির কিছু বলার আগেই হালিমা খান খাবার নিয়ে হাজির হলেন। একগাল হেসে বললেন,
“কি ব্যাপার দুই ভাই বোন আজ গল্প করছে নাকি?”

আবিরকে দেখে পুনরায় বললেন,
“মাশাআল্লাহ, তোকে খুব ভালো লাগছে!”

ততক্ষণে আস্তেআস্তে সবাই খাবার টেবিলে আসতে শুরু করেছে। ইকবাল খান এসে আবিরকে দেখেই বলে উঠলেন,

“মাশাআল্লাহ আবির, তোকে তো অনেক সুন্দর লাগছে। এতদিকে তোকে CEO মনে হচ্ছে । তোর লুকেই আজকের মিটিং জমে যাবে!”

আলী আহমদ খান ও ছোট করে বললেন,
“মাশাআল্লাহ ”

মোজাম্মেল খান চেয়ারে বসতে বসতে বললেন,
“ভাইজান, আবিরকে বলা দরকার না কথাটা?”

আলী আহমদ খান ১ সেকেন্ড থেমে বলে উঠলেন,
“ও হ্যাঁ, আমার তো মনেই ছিল না।”

আবির নিরেট কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
“কি হয়েছে?”

আলী আহমদ খান সহসা বললেন,
“তোকে একটু রাজশাহী যেতে হবে!৪-৫ দিনের জন্য ”

আবির ২ আঙুল দিয়ে কপালে আলতো করে ছুয়েছে সাথে একপলক মেঘকেও দেখে নিয়েছে। মেঘ মনোযোগ দিয়ে খাবার খাচ্ছিলো তবে এই কথা শুনে মুখে খাবার নিয়েই চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছে আবিরের পানে।

আর মনে মনে বলছে,
“প্লিজ আবির ভাই, আপনি যাবেন না, প্লিজ”

আবির বাবার দিকে এক নজর তাকালো, তারপর মাথা নিচু করে বললো,
“আমি এখন কোথাও যেতে পারবো না। ”

মোজাম্মেল খান অকস্মাৎ বললেন,
“কেনো?”

আবির মনে মনে বললো,
“আমি দূরে গেলে কারো খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, রাতে ঘুম হা*রাম হয়ে যায়। ”

সহসা গলা খাঁকারি দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে আবির বলে উঠলো,
“আমার অফিসে কাজ আছে। ১ সপ্তাহ পর অফিস শুরু হবে, এই অবস্থায় সবকিছু ফেলে আমি কোথাও যেতে পারবো না। ”

মোজাম্মেল খান এবার আলী আহমদ খানের দিকে চেয়ে বললেন,
“তাহলে কি আমি যাব ভাইজান? ”

আলী আহমদ খান কিছু বলার আগেই পুনরায় আবির বলে উঠলো,

“কাউকেই যেতে হবে না। আমার পরিচিত লোক আছে আমি এখান থেকেই কাজ করাতে পারবো। তারপরও যদি সমস্যা হয় তখন তোমাদের আমি জানাবো। তবে আগামী ২*৩ মাস আমি কোথাও যাব না এটা বলে রাখলাম। চট্টগ্রামের কাজ মোটামুটি শেষ করে আসছি। সিলেটের কাজও কাকামনি শেষ করে আসছেন। রাজশাহীরটা আমি দেখছি তোমাদের যেতে হবে না।”

মেঘ নিঃশব্দে হাসছে।

সবাই চুপচাপ খাবার খাচ্ছে। আবির খাবার শেষ করে উঠে যাবে তখন ইকবাল খান ডেকে উঠলে,
“আবির বাহিরে বৃষ্টি, বাইক নিয়ে বের হইস না। আমি খাবার শেষ করে তোকে নিয়ে যাবো। একটু বস। ”

আবিরও বাধ্য ছেলের মতো ছোফায় বসে রইলো। তারপর ইকবাল খানের সঙ্গে গাড়িতে করে অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন।

পেইজ; Salma Chowdhury – সালমা চৌধুরী (scsalma90)

★★★★

সারাদিনই বৃষ্টি হয়েছে আজ, মেঘের কোচিং, টিউশন কিছুই নেই, রুমে বসে সারা বেলা পড়াশোনা করেছে। বিকেলে বৃষ্টি কমে এক চিলতে রোদ বেরিয়েছে আকাশে। মেঘের আর পড়তে ইচ্ছে করছে না। তাই বই রেখে মোবাইল হাতে নিয়ে পুরো বাড়ি চক্কর দিলো কিন্তু সবাই ঘুমাচ্ছে তাই আড্ডা দেয়ার মতো কাউকে পেলো না। হঠাৎ মনে হলো,অনেকদিন ছাদে যাওয়া হয় না। সেই যে রাতের বেলা আবির ভাইয়ের গান শুনে ছাদে গিয়েছিলো তাও আবার ছাদের দরজা পর্যন্ত। তারপর থেকে আর ছাদের দিকে পা বাড়ায় নি মেঘ।

মেঘ স্কুল, কলেজে পড়ার সময় প্রতিদিন বিকেল বেলা ছাদে যেতো। ফুল গাছ লাগানো আর তাদের যত্ন নেয়া ছিল তার নে*শা। তবে HSC র আগে টেস্ট পরীক্ষা থেকে মেঘ ছাদে যাওয়া ভুলেই গেছে। টিউশন,কোচিং শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যার পর হয়ে যেতো। আর সন্ধ্যার পর ছাদে যাওয়ার মতো এত সাহস অষ্টাদশীর নেই। সেই থেকে গাছের যত্ন ছেড়ে দিয়েছে৷ গাছেরাও অযত্ন, অবহেলায় ম*রে গেছে। তখন থেকে মেঘ আর ছাদে যায় না।

মেঘ গুঁটি গুটি পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠলো ছাদে। ছাদের গেইট খুলতেই চোখ ছানাবড়া হলো অষ্টাদশীর। ছাদের যতটা অংশ চোখে পরছে পুরোটায় গাছে ভর্তি। মেঘ পা বাড়ালো ছাদের দিকে সম্পূর্ণ ছাদ পরিষ্কার করে তাতে তিন সারি গাছের টব রাখা। এক কর্ণারে শুধু ফলের গাছ বাকিসবটায় ফুলগাছে ভরপুর। নয়নতারা, বেশ কয়েক রঙের গোলাপের গাছ, পর্তুলিকার গাছ তবে বিকেল বেলাতে ফুল নেই, কাঠগোলাপের গাছ, জিনিয়া, অপরাজিতা,রঙ্গন থেকে শুরু করে কতকত ফুলের গাছ যার অধিকাংশ গাছের বা ফুলের নামই জানে না মেঘ।

মেঘ নিজেকে নিজে প্রশ্ন করছে,
“এতগাছ কে আনলো? তানভির ভাইয়া তো জীবনেও ছাদে আসে না। তাহলে কি আবির ভাই?”

সহসা মেঘের চোখে মুখে উজ্জ্বলতা ফুটে উঠলো।

ছাদ ভর্তি এতো গাছগাছালি দেখে মেঘের ভীষণ ভালো লাগছে। সবটা ছাদ ঘুরে দেখলো সারাদিন বৃষ্টি থাকায় পানি দেয়ার প্রয়োজন হলো না। ২০ – ৩০ টা ছবিও তুলেছে ফুলের আর গাছের। ততক্ষণে সূর্য ডুবতে শুরু করেছে। গোধূলি আলোতে ফুলের মুগ্ধতা দেখে মেঘ লো*ভ সামলাতে না পেরে একটা গোলাপ ফুল ছিঁ*ড়ে নিয়েছে । এতদিন পর নিজের বাড়ির ছাদে এত এত ফুল গাছ আর ফুলের সমাহার দেখে আবেশিত হয়ে পরেছে মেঘ।

এদিকে আবির করিডোর দিয়ে নিজের রুমের দিকে আসছিলো৷ আবির মেঘকে দেখে ঠায় দাঁড়িয়ে পরলো সেখানে। এদিকে মেঘ আপন মনে ফুলের গন্ধ শুঁকছে আর হাঁটছে । আশেপাশে বা সামনে কেউ আছে কি না তাতে তার কোনো মনোযোগ নেই।

হঠাৎ আবিরের প্রশস্ত বুকের সঙ্গে ধা*ক্কা খেলো মেঘ৷ নিজেকে সামলানোর আগেই আবির মেঘের বাহু চেপে ধরে, সহসা স্বাভাবিক হয়ে মুখ তুলে চায় মেঘ। আবির ভাইয়ের তপ্ত দৃষ্টি দেখেই মাথা নুইয়ে ফেলে পুনরায়।

আবির বাহু চেপে ধরে, দ্বিগুণ ভারি কন্ঠে ধ*মকে উঠে,
“ফুল ছিঁড়েছিস কোনো? ”

মেঘ ঢুক গিলে, মৃদু কন্ঠে বললো,
“SoRRy”

আবির পুরু কন্ঠে শুধালেন,
“Sorry টা আমায় না বলে গাছকে বলিস”

মেঘ নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে আছে। আবির ভাইয়ের ধমকে ভিজে আসে নেত্রদ্বয়।

আবির মেঘের বাহু ছেড়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে মেঘ চলে যেতে নেয়৷

আবির পুনরায় নিরেট কন্ঠে ডেকে উঠলো,
“শুন”

মেঘ ঐখানেই দাঁড়িয়ে পরেছে। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে উত্তর দিলো,
“জ্বি”

আবির এবার কিছুটা স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলো,

“সময় পেলে গাছগুলোর একটু যত্ন নিস, এগুলো তোরই!”

মেঘ এবার বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকায় আবিরের দিকে৷ নিষ্পলক তার দৃষ্টি , চোখ টলমল করছে পূর্বের জমা পানিতে, অধর সরে আছে কিছুটা দূরে৷

কয়েক মুহুর্ত পর উত্তেজিত কন্ঠে শুধালো,
“আমার?”

আবির পূর্বের অভিব্যক্তি বজায় রেখে জবাব দিলেন,

“হ্যাঁ! তোর নাকি ফুলের গাছ অনেক পছন্দ । তাই এনে দিলাম, এখন যত্ন নেয়ার দায়িত্ব তোর। আর হ্যাঁ গাছের যত্ন নিতে গিয়ে দুনিয়া ভুলে যাস নে যেন ”

মেঘ বশিভূ*ত চোখে চেয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে৷
আবিরও এবার সরাসরি চোখ রাখে মেঘের চোখে মুখে৷ দু’ফোটা অশ্রুর দাগ হয়ে গেছে , সম্পূর্ণ গাল টকটকে লাল হয়ে আছে, গালের মাঝে একটা গাঢ় কালো রঙের তিল জ্বলজ্বল করছে।

আবিরের দূর্বোধ্য দৃষ্টি দেখে, নিজের দৃষ্টি সংযত করলো মেঘ।

কোমল কন্ঠে বললো,
“Thank you Abir Vai”

আবির কিছু বলার আগেই পুনরায় মেঘ প্রশ্ন করলো,

“আজ এত তাড়াতাড়ি চলে আসলেন যে?”

আবির উত্তর দিলো,
“একটু পর আবার বের হবো। ”

অষ্টাদশী পল্লব ঝাপটে আবির ভাইয়ের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করে,
“কফি খাবেন আবির ভাই?”

আবির খরখরে কন্ঠে শুধালো,
“গতরাতে কি বলেছি তোকে, মনে নেই?”

মেঘ মাথা নিচু করে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
“অন্য কাউকে বলি করে দিতে?”

আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে জবাব দিলো,
“লাগবে না। তুই রুমে যা। ”

মেঘ ও আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ রুমে চলে গেলো।
রুমে শুয়ে শুয়ে বিকেলে তুলা ছবিগুলো দেখছিলো মেঘ সেখান থেকে কয়েকটা ছবি আপলোড দিলো ফেসবুকে “স্পেশাল গিফট” সাথে কয়েকটা লাভ ইমুজি দিলো ক্যাপশনে।

পেইজ: Salma Chowdhury – সালমা চৌধুরী (scsalma90)

★★★★

সন্ধ্যার পর মেঘ পড়তে বসেছে। কিছুক্ষণ পরই ফোনে কল বেজে উঠলো। বন্যা কল দিচ্ছে, তৎক্ষনাৎ রিসিভ করলো মেঘ,

বন্যাঃ আসসালামু আলাইকুম
মেঘঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছিস?
বন্যাঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুই কেমন আছিস?
মেঘঃ আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো।

বন্যা উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো,
” এই তোকে এত গাছ কে দিলো রে?”

মেঘ স্ব শব্দে হেসে বললো,
“আবির ভাই”

“কি? আবির ভাইয়া?” আঁতকে উঠে বন্যা।

মেঘ পুনরায় বলে উঠে,
“হ্যাঁ,কবে আনছেন জানি না। কিছুদিন যাবৎ মীমের রুমে কাজ চলছে,ছাদেও কাজ চলছিলো তাই আমি তেমন বের হয় নি রুম থেকে আর ছাদেও যায় না অনেকদিন যাবৎ । আজ হঠাৎ ছাদে গিয়ে দেখি ছাদ ভর্তি গাছ, ছাদের পরিবেশ পুরোই চেইঞ্জ ।৷ আসার সময় আবির ভাই বলছেন এগুলো নাকি আমার।”

বন্যা উদ্বেলিত ভঙ্গিতে বললো,
“বাহ! তোর শখ তো তাহলে পূরণ হয়েই গেলো৷ তুই তো খুব করে চাইতি তোর ছাদভরা গাছ হোক, যেদিকেই তাকাবি শুধু গাছ আর গাছ থাকবে। দেখলি তো আল্লাহ তোর ইচ্ছে পূরণ করেছেন?””

মেঘ খুশিমনে বললো,
“তুই সময় করে আসিস বাসায়,ছাদে যাব নে। আর হ্যাঁ সকাল বেলা আসিস ”

“ঠিক আছে” বন্যা উত্তর দিলো। তারপর দুই বান্ধবী বেশকিছুক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে কথা বলে রেখে দিলো।

পেইজঃ Salma Chowdhury – সালমা চৌধুরী

★★★★

রবিবার থেকে ব্যস্ততায় কাটছে সকলের সময়। বর্ষাকাল থাকায় হুটহাট বৃষ্টি নেমে যায়। আবির বৃষ্টি না থাকলে বাইকে অফিসে যায় আবার বৃষ্টি থাকলে গাড়িতে যায়। মেঘ ও কোচিং টিউশন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো৷ আবির ভাইয়ের সাথে তার টুকটাক দেখা হয়। হয়তো খাবার টেবিলে নাহয় সিঁড়িতে অথবা করিডোরে।

আজ বৃহস্পতিবার। আবির সন্ধ্যার পর সোফায় বসে আছে হাতে ফোন আর সামনে কফির কাপ নিয়ে৷ মেঘ ও তখন বই নিয়ে রুম থেকে বের হয়েছে, কিছুক্ষণ পরেই জান্নাত আপু আসবে। মেঘ করিডোর থেকে সিঁড়ির কাছে আসতে আসতে নিচের দিকে একবার তাকায়।।

চোখ পরে সোফায় বসা আবির ভাইয়ের দিকে। এক হাতে কফির কাপ নিয়ে কফি খাচ্ছের অন্য হাতে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছেন। মোবাইলের হোমপেইজে সাদাকালো রঙের একটা ছবি। মেঘ গভীর দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু ক্লিয়ার বুঝা যাচ্ছে না৷ মেঘ দ্রুত পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নেয় যাতে কাছে গিয়ে ছবিটা দেখতে পারে কিন্তু মেঘের নুপুরের শব্দে আবির ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে মোবাইল পকেটে রেখে দেয়৷
মেঘ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আবির ভাইয়ের দিকে চেয়ে চেয়ে নিচে নামছে আর মনে মনে বলছে,

“কে এই মেয়ে যার ছবি আবির ভাইয়ের ফোনের ওয়ালপেপারে রেখেছেন। আমাকে দেখতেই হবে এই মেয়ে কে!”

আবির কফি শেষ করে দীর্ঘ পায়ে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে৷ মেঘ কিছুক্ষণ সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে পুনরায় পড়ার রুমের দিকে চলে যায়।। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই জান্নাত আপু পড়াতে আসেন। আজ একটু বেশি সময় নিয়ে পড়িয়েছেন আপু। মোটামুটি ৮.৩০ এর কাছাকাছি বেজে গেছে ।ড্রয়িংরুমে কেউ নেই জান্নাত পড়ানো শেষে বের হতে যাবে। মেঘও তখন পিছন পিছন পড়ার রুম থেকে বের হয় দরজা লাগানোর জন্য।

জান্নাত দরজার কাছাকাছি যেতেই আবির বাহির থেকে দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে। মুখোমুখি দেখা হয় আবির আর জান্নাতের।

জান্নাত সহসা হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলে,

“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, কেমন আছেন?”

আবিরও হাসি মুখে উত্তর দেয়,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি কেমন আছো?”

মেঘ পড়ার রুমের কিছুটা সামনে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছে । আর বিড়বিড় করে বলছে,
“আবির ভাই জান্নাত আপুকে চিনে? কিন্তু কিভাবে? তাহলে কি আবির ভাইয়ের ফোনে তারই ছবি ছিলো?”

(চলবে)