গল্প- আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে
পর্ব- ২০
লেখিকা- সালমা চৌধুরী
“অতীত……..”
আবিরের কাদম্বিনী নুপুর পড়ে চঞ্চল পায়ে সারাক্ষণ খান বাড়িতে ছুটোছুটি করতো অথচ আবির সামনে আসলেই তার পা থেমে যেতো, মুখ লুকাতো মায়ের আঁচলের নিচে। আবির খুব চেষ্টা করেছিলো ললনার অভিমান ভা*ঙানোর কিন্তু সে প্রতিবার ই ব্য*র্থ হয়েছিল । পড়তে গেলে, ঘুমাতে গেলে সেই চঞ্চল পায়ের নুপুরের শব্দ আবিরের হৃ*দয় ভে*ঙে চূ*র্ণবিচূ*র্ণ করতো। যেই ছুটোছুটি, যেই চঞ্চলতা সে নিজের চোখে দেখতে পারে না তার শব্দ কানে আসলে আকাশ ভে*ঙে পরতো মাথায় । তাই খুলিয়ে নিয়েছিল মেঘের পায়ের নুপুর ।
দেশছেড়ে যাওয়ার কিছুদিন পূর্বে, তানভিরকে জরিয়ে ধরে দুবছরের জমাটবদ্ধ নীল পাহাড় ভে*ঙে অঝরে কেঁ*দেছিল আবির । বোধশক্তি হওয়ার পর সেটায় ছিল আবিরের প্রথম কান্না। লোকে বলে পুরুষ মানুষের কাঁ*দা নিষে*ধ, কা*ন্না এলেও কাঁদা যাবে না । চাপিয়ে রাখতে হবে তা মনের গহীনে। কিন্তু যখন জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা হারিয়ে যায় বা নিজের থেকেও প্রিয় ব্যক্তির সাথে দূরত্ব বেড়ে যায় তখন পুরুষ মানুষ চাইলেও নিজেকে শক্ত রেখে, অনুভূতি চেপে রাখতে পারে না।
তানভির আবিরের সেই ম*রা কান্না দেখে বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে ছিল, কয়েক মুহুর্ত পর আবিরকে জরিয়ে ধরে কয়েকশত বার শুধু জিজ্ঞেস করেছিল, কি হয়েছে? কি হয়েছে ভাইয়া? কাঁদছো কেন? বলো আমায়…
কিন্তু বাঁ*ধহীন কান্নার ফলে আবির কোনো উত্তর ই দিতে পারছিলো না।
পরক্ষনেই তানভির উপলব্ধি করেছিল, হয়তো দেশ ছেড়ে, প্রিয়জনদের ছেড়ে চলে যাবে তাই এভাবে কাঁদছে। সে আর প্রশ্ন করে নি,চুপচাপ ভাইয়ের কান্নার গভীরতা মাপতে ব্য*স্ত হয়েছিল
আবিরের সেই ক্র*ন্দন স্থির হয়েছিল প্রায় ১ ঘন্টা।কা*ন্নার মাত্রা কিছুটা কমার পর তানভির ধীর কন্ঠে শুধিয়েছিল,
“কি হয়েছে ভাইয়া? এভাবে কাঁদছো কেনো?”
আবির কা*ন্নারত কন্ঠে শুধু বলেছিল,
“আমি ওকে ছেড়ে এতদূর কিভাবে থাকবো?”
গভীর রাত, শান্ত, নিস্তব্ধ একটা পরিবেশে আবিরের এই কথাটা তানভিরের হৃ*দয়ে গিয়ে লেগেছিল। তানভিরের বয়স তখন সবেমাত্র ১৬ তে পরেছে। এতকিছু না বুঝলেও ভাইয়ের কথাটার মানে সে স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিল।
তানভির ছোট করে প্রশ্ন করেছিল,
“কে সে?”
আবির তখনও অ*ঝরে কেঁ*দেই চলেছে, গলা খাঁকারি দিয়ে ছোট করে বলেছিল,
“মেঘ”
তানভির বিমোহিত নয়নে তাকিয়ে ছিল বেশ খানিকক্ষণ । তারপর ভাইকে শান্ত করে, ছাদের ফ্লোরে বসে আবিরের অব্য*ক্ত প্রেমানুভূতি শুনেছিল। তানভিরের কাঁধে ছিল গু*রু দায়িত্ব, একদিকে মায়ের পেটের বোন অন্যদিকে চাচাতো ভাইয়ের নি*র্মল কা*ন্না ।
সবকিছু শুনে শেষমেশ তানভির আবিরের চোখ মুছে, মুচকি হেসে শান্ত কন্ঠে বলেছিল,
“তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া। আমি আছি তো মেঘকে দেখে রাখার জন্য । তোমার ভালবাসা তোমার ই থাকবে। ”
সেই রাতে একফোঁটাও ঘুমাই নি দুভাই। সারারাত জেগে শুধু মেঘকে নিয়েই অধিবেশন করেছিল । এমনকি দেশ ছেড়ে যাওয়ার দিনও আবির তানভিরকে জরিয়ে ধরে শুধু একটা কথায় বলেছিল,
“ওকে দেখে রাখিস, ওর উপর যেনো কেনো আঁচ না পরে। ”
আবির দেশ ছাড়ার পর থেকে মেঘকে দেখে রাখার গুরুদায়িত্ব পরেছে তানভিরের উপর। মেঘ কোথায় যায়, কার সাথে মিশে, খাওয়া,পড়াশোনা, স্কুল-কলেজ,টিউশন, পছন্দ -অপছন্দ সবকিছু দেখে রাখা ছিল তানভিরের প্রথম কাজ৷ শতব্যস্ততার মাঝেও আবির দিনে কমপক্ষে তিনবার করে তানভিরকে কল দিয়ে শুধু মেঘের খোঁজ নিতো। ৭ বছরে এমন একটা দিন কাটে নি যে আবির মেঘের খোঁজ নেয় নি। তবে গত ৭ বছরে মেঘের কোনো ছবি দেখে নি আবির, তানভির অনেকবার বলেছে, পাঠাতেও চেয়েছিল কিন্তু আবিরের এক কথা, বেঁ*চে থাকলে দেশে ফিরেই মেঘকে দেখবে ।
আবির দেশে ফেয়ার দিন এয়ারপোর্টে আসার পর, তানভির আবিরকে জরিয়ে ধরে কানে কানে বলেছিল,
“আজ থেকে আমি রিলাক্স করবো, তোমার বউ তুমি সামলাবে। ”
আবির মুচকি হেসে বলেছিল,
” বউকে সামলাতেই তো ৬ মাস আগে ফিরতে হলো।”
আবির চেয়েছিল আরও ৬ মাস পর নিজেকে গুছিয়ে একেবারে আসতে কিন্তু হঠাৎ ই অ*নাকা*ঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলো যার ফলশ্রু*তিতে ৬ মাস ওয়েট করা আবিরের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
যেই ছেলের জন্য ছোট্ট কাদম্বিনীর গা*য়ে হা*ত তুলেছিল আবির, যার জন্য তাকে ৯ বছর যাবৎ প্রেয়সীর থেকে দূরে থাকতে হয়েছে সেই জয় নামক ছেলে পুনরায় আবির্ভূত হয়েছিল মেঘের জীবনে। HSC পর মেঘকে যে কোচিং এ ভর্তি করানো হয়েছে সেই কোচিং এ জয়ও ভর্তি হয়েছিল তা তানভির & আবিরের অজানা ছিল। জয় মেঘকে দেখার পর থেকে খুব চেষ্টা করছিল কথা বলার জন্য৷ কিন্তু কোনোভাবেই সুযোগ হইতেছিল না। কোচিং থেকে আবিরকে তা জানানোর পর, ছেলের ব্যাচ টাইম চেইঞ্জ করে দিতে বলেছিল আবির। তারপর তানভিরও কয়েকদিন মেঘকে কোচিং এ দিয়ে আসছে এবং নিয়ে আসছে । কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয় নি। ঐ ছেলে মেঘের ব্যাচ টাইমের আগে- পরে কোচিং এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। আবির তানভিরকে ঐ ছেলে সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলে, দিনশেষে জানতে পারে এই ছেলেই ছোটবেলার সেই জয়। এটা জানামাত্র আবিরের মাথায় র*ক্ত উঠে গেছিলো। ইমার্জে*ন্সি ভি*সা ম্যানেজ করে দেশে ফিরেছে। দেশে ফিরেই ৯ বছরের রা*গ,ক্রো*ধ, আ*ক্রো*শ সবটা ঢেলে জয়কে পিটিয়েছিল আবির ।
পেইজঃ Salma Chowdhury – সালমা চৌধুরী (scsalma90)
★★★★
বর্তমান _____
তানভির ঘন্টাখানেক মেঘের মাথায় জলপট্টি দিয়েছে কিন্তু জ্বর যেনো কোনোভাবেই কমছে না। হালিমা খান ঘুমিয়ে পরেছিলেন হঠাৎ সজাগ হয়ে তানভিরকে জলপট্টি দিতে দেখে উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
“কিরে তুই এখনও এখানে? সেই কখন এসেছিস, খাবি না?”
তানভির ছোট করে বললো,
“খিদে নেই। ”
হালিমা খান পুনরায় বললেন,
“আবিরও মনে হয় খায় নি, দুই ভাই মিলে খেতে যা। ”
তৎক্ষনাৎ আবিরের কথা মনে পরলো তানভিরের, বিড়বিড় করে বললো,
“এই রে ভাইয়া কোথায় আছে?”
সঙ্গে সঙ্গে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো, স্বাভাবিক কন্ঠে মাকে বললো,
” আম্মু একটু পর পর বনুর জ্বর টা চেক করো, সমস্যা মনে হলে আমায় ডেকো। ”
কোনোরকমে কথাগুলো বলে স্প্রীডে বের হলো মেঘের রুম থেকে, এক ছুটে চলে গেলো আবিরের রুমে। কিন্তু আবির রুমের কোথাও নেই, বেলকনিতেও নেই। তানভির রুম থেকে বের হয়ে করিডোর থেকে নিচে দেখলো, নিচেও আবির নেই।
তানভির দৌড় দিলো ছাদের দিকে, ছাদের দরজা থেকেই চোখে পরলো আবির সিঙ্গে*ল সোফাতে বসে আকাশের পানে মুখ করে বসে আছে।
এক মুহুর্ত দেরি না করে তানভির বৃষ্টির মধ্যেই আবিরের কাছে দৌড়ে গেলো।
ছোটাছুটির ফলে তানভিরের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, কয়েকবার ঘনঘন শ্বাস ছেড়ে আবিরকে ডাকলো,
“ভাইয়া… বৃষ্টির মধ্যে বসে আছো কেন? রুমে চলো!”
আবির আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখেই শক্ত কন্ঠে উত্তর দিলো,
“তুই রুমে যা। ”
তানভির পুনরায় বললো,
“প্লিজ ভাইয়া, রুমে চলো। কি পাগলামি শুরু করছো তোমরা?”
আবির ক্র*ন্দিত কন্ঠে জবাব দিলো,
“আমার জন্য মেঘের আজ এই অবস্থা। আমার ম*রে যাওয়া উচিত। ”
আবিরের অবিদিত কথায় তানভিরের প্রচন্ড রা*গ হলো, রা*গে ফুঁস*তে ফুঁ*সতে বললো,
“তোমাদের ম*রতে হবে না আমিই ম*রে যায় তাতেই তোমাদের শান্তি হবে ”
আবির ধ*মকের স্বরে বললো,
“তানভির ”
তানভির ধীরকন্ঠে বললো,
“আমাকে ধ*মকাচ্ছো কেন। বনু না হয় অবুঝ, পাগলামি করে ফেলছে, তাই বলে তুমি কেনো পাগলামি করছো ভাইয়া? তোমার কি এমন কাজ করা মানাচ্ছে?”
একটু থেমে রাশভারি কন্ঠে পুনরায় বললো,
“রাকিব ভাইয়া তোমার অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে আমায় কল দিয়েছিল। তুমি যদি স্ট্রং না থাকো তাহলে মেঘকে কে সামলাবে বলো? তুমি তো জানো ভাইয়া, আমার জীবনে মেঘ আর তুমি সবচেয়ে কাছের মানুষ৷ তোমার বা মেঘের কিছু হলে আমি বাঁ*চতে পারবো না৷ প্লিজ পা*গলামি করো না। রুমে চলো। ”
প্রথম কথা গুলো শক্ত কন্ঠে বললেও শেষ কথাগুলো বলার সময় তানভিরের গলা ভিজে আসছিলো।
আবির যেনো বিগ্রহের ন্যায় বসে আছে। তানভির বেশ কিছুক্ষণ শান্ত কন্ঠে আবিরকে বুঝিয়ে রুমে নিয়ে গেছে। আবিরকে শাওয়ার নিতে ঢুকিয়ে তানভির ও নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসেছে। আবিরের মুখোমুখি তানভির বসেছে। ছাদে অন্ধকার থাকার কারণে আবিরের অভিব্যক্তি বুঝা যায় নি। আবিরের চোখ- মুখ ফুলে আছে, দেখে বুঝায় যাচ্ছে বেশখানিকটা সময় কেঁ*দেছে তারউপর বৃষ্টি । এখনও চোখ টকটকে লাল হয়ে আছে।
তানভির আবিরের হাতটা সামনে এনে এপাশ- ওপাশ ঘুরিয়ে দেখলো। হাতের অবস্থা খুব খারাপ। তানভির ঔষধের বক্স থেকে একটা মলম বের করে অল্প অল্প করে লাগিয়ে দিচ্ছে, আবির দাঁতে দাঁত চেপে তা সহ্য করছে। গত ১ ঘন্টা যাবৎ আবিরকে বুঝিয়ে তানভির রুমে এনেছে, এখন কোনোভাবেই রিয়েক্ট করা যাবে না৷ তানভির যথেষ্ট শান্ত আর হাস্যোজ্জ্বল একটা ছেলে তবে রা*গ উঠলে কেমন যেন গ*ম্ভীর হয়ে যায়।
আবিরের হাতে মলম লাগিয়ে তানভির আস্তে করে বললো,
“ব্যান্ডেজ করে দিবো ভাইয়া?”
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে জবাব দিলো,
“ব্যান্ডেজ লাগবে না। খোলা থাকলে তাড়াতাড়ি ঠিক হবে । ”
তানভির স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“ভাইয়া খাবে না?”
আবির গ*ম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো,
“না”
তানভির কোমল স্বরে বললো,
“প্লিজ ভাইয়া চলো না খেতে যাই।”
আবির নিরেট কন্ঠে জানালো,
“আমি খাবো না বললাম তো। তুই খেয়ে নে”
তানভির বুঝতে পারলো ভাইকে জোর করে কোনো লাভ হবে না । তাই চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। আবিরের বাকি রাত কাটলো বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে ভারী বর্ষণ কমেছে, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও এক সময় কমেছে । ফরজের নামাজ পড়ার জন্য আবির বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে ফিরেছে ঘন্টা দুয়েক পর। প্রতিদিন সকাল বেলা নিচে রান্না আর পেপার পড়ার ধুম লাগলেও আজ ড্রয়িংরুম সম্পূর্ণ ফাঁকা। আবির দীর্ঘ পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠলো। মেঘের রুমে সবাই হুমড়ি খেয়ে পরেছে।
আলী আহমদ খান, মোজাম্মেল খান,ইকবাল খান থেকে শুরু করে বাড়ির তিন কর্তী, এমনকি মীম আদি আর তানভিরও উপস্থিত সেখানে।
মেঘ শ*ঙ্কিত হয়ে রইলো। সবাই যেনো একজোটে মেঘের উপর হা*মলা চালাচ্ছে। মেঘ সবার দিকে বার বার তাকাচ্ছে শুধু।
মোজাম্মেল খান রাগান্বিত কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,
“বৃষ্টিতে ভিজতে গেছিলি কেনো? বৃষ্টিতে ভিজলে যে জ্বর উঠবে, সেই বোধশক্তি কি তোর হয় নি এখনও?”
ইকবাল খান মোজাম্মেল খানকে শান্ত করতে ব্যস্ত।
এরমধ্যে আলী আহমদ খান ধীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
” এখন এক মিনিট নষ্ট করা একটা দিন নষ্ট করার সময়। ইচ্ছেকৃত জ্বর বাঁধানো কি ঠিক হয়েছে তোমার?”
কথাটা শান্ত স্বরে বললেও এই কথার অভিপ্রায় অষ্টাদশীর বোধগম্য হলো।
মালিহা খান, আকলিমা খানও যেনো একজোটে বিলাপ শুরু করেছে । যে যার মতো প্রশ্ন করছে, কোথা থেকে ভিজে আসছিস? কখন গেছিলি? ভিজলি কেনো? আরও কত কত প্রশ্ন ।।
মেঘ নির্বাক চোখে শুধু তাকিয়ে আছে। সে কি করে বলবে,
“আবির ভাই অন্য কোনো মেয়ের প্রতি কনসার্ন, এইটা সহ্য করতে না পেরে এমনটা করেছে। ”
হালিমা খান কোমল কন্ঠে বললেন,
“তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি মা? অল্প খেয়ে নে প্লিজ!”
মেঘ সবার উপরে উঠা রা*গ যেনো মায়ের উপর ঝা*ড়ল, কাঁপা কাঁপা গলায় চিৎকার দিয়ে বললো,
“বললাম তো খাবো না, তেঁতো লাগে সবকিছু । ”
কথাটা ঠিকমতো শেষও করতে পারলো না। আবির হাজির হলো রুমে। মেঘের দৃষ্টি আবিরের দিকে পরতেই অকস্মাৎ কম্বল টানলো কপাল পর্যন্ত ।
আবির গম্ভীর কন্ঠে বললো,
” এখানে এত ভিড় করার মতো কি হয়েছে? অসুস্থ রোগী দেখতে এসেছো, দেখে চুপচাপ চলে যাবে। রোগীকে এত প্রশ্ন করছো কেন? ডাক্তার বলেছেন, ওরে কোনোপ্রকার চাপ না দিতে৷ অনুগ্রহ করে ওকে একটু শান্তিতে থাকতে দাও । ”
একদমে কথাগুলো বললো আবির। ইকবাল খান ভাতিজার রা*গ বুঝতে পেরে শান্ত কন্ঠে বললেন,
” না মানে মেঘ জেনে-বুঝে বৃষ্টিতে কেনো ভিজেছে এটায় সবাই জিজ্ঞেস করছিলো। আর কিছু না ”
আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বললো,
“ওর ইচ্ছে হয়েছে বৃষ্টিতে ভেজার তাই ভিজেছে। তাছাড়া জ্বর হলে মাথা ফ্রেশ হয়। এখন সবাই নাস্তা করতে যাও। ”
মেঘ কম্বলের নিচ থেকে ভেঙচি কেটে মনে মনে বললো,
“যার জন্য করি চু*রি সেই বলে চো*র।আপনি আমায় বাধ্য করেছেন বৃষ্টিতে ভিজছে আর এখন সবার সামনে সেটা আমার ইচ্ছে বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। বাহ হি*টলার বাহ! কি বু*দ্ধি আপনার! ”
বাড়ির কেউ কোনো কথা বললো না। চুপচাপ সকলে রুম থেকে বের হতে লাগলো।
আবির গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“তানভির, মেঘের জন্য নাস্তা নিয়ে আয়। ”
হালিমা খানও চলে গেলেন মেঘের নাস্তা রেডি করতে।
মেঘ তখনও কপাল পর্যন্ত কম্বল টেনে রেখেছিলো। রুম নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় মেঘ ভেবেছে সবাই চলে গেছে। তাই এক আঙুলে আস্তে করে কম্বল টা কপাল থেকে নামাতেই চোখ পড়লো আবির ভাইয়ের শাণিত চোখের দিকে৷
মেঘ আর আবিরের চোখাচোখি হতেই আবির একটানা দুবার ভ্রু নাচালো। আবির ভাইয়ের এমন কান্ডে মেঘ হেসে ফেললো, তৎক্ষনাৎ মনে পরে গেলো, ও তো আবির ভাইয়ের উপর রে*গে আছে। অকস্মাৎ মুখ গোমড়া করে ফেললো মেঘ।
আবির চেয়ার টেনে মেঘের বিছানার পাশে বসে মৃদু কন্ঠে শুধালো,
“এখন কেমন লাগছে? জ্বর কি কমেছে? ”
মেঘ ওষ্ঠ উল্টালো কিছুই বললো না।
আবির সহসা মেঘের কপালে হাত রাখলো সাথে একবার গলায় হাত রেখে সঙ্গে সঙ্গে কপাল কুঁচকে হাত সরিয়ে নিলো। তটস্থ হয়ে বললো,
“এখনও তো অনেক জ্বর..!! ”
বসা থেকে উঠে টেবিল থেকে থার্মোমিটার নিয়ে বিছানায় বসে মেঘের জিহ্বার নিচে ধরলো। মেঘ হা করে তাকিয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে। আবির কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো মেঘের দিকে। দুজনেই নিস্ত*ব্ধ, দুইজোড়া চোখ গভীরভাবে অনুবন্ধী । মেঘের বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হচ্ছে।
এরমধ্যে তানভির গলা খাঁকারি দিয়ে রুমে ঢুকলো। তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি সরিয়ে নিলো আবির। তানভিরের কন্ঠ শুনে মেঘও দৃষ্টি সরিয়ে ভাইয়ের দিকে চাইলো। আবির থার্মোমিটার চেক করতে ব্যস্ত হলো, তানভির ভাইয়ের দিকে প্লেট বাড়াতেই মেঘ চোখ গোল গোল করে তাকালো। মনে মনে বললো,
“এখনও কি আবির ভাই খাইয়ে দিবেন আমায়?”
আবির কোনোদিকে না তাকিয়ে ছোট করে বললো,
“তুই খাইয়ে দে। ”
তানভির বিস্ময় সমেত তাকালো আবিরের দিকে । আবির তানভিরকে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই তানভির স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো,
“ঠিক আছে আমিই খাইয়ে দিচ্ছি। ”
আবির বিছানা থেকে উঠে চেয়ারে বসে আছে৷ তানভির মেঘকে উঠিয়ে খাওয়ানো শুরু করলো। মেঘ জোর করে অল্প অল্প খাচ্ছে। তানভির মেঘকে এটা সেটা বলে বলে বুঝাচ্ছে আর খাওয়াচ্ছে। আবির যেনো নিরব দর্শক, একবার ফোনের দিকে দেখছে একবার মেঘের খাওয়া দেখছে। কোনোমতে অল্প খেয়ে মেঘ শীতল কন্ঠে বললো,
“আর খাবো না ভাইয়া”
তানভিরও আর জোর করলো না। পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো মেঘের দিকে। খাওয়া শেষে পানির গ্লাস টেবিলে রাখতে রাখতে তানভির বলে উঠলো,
“ভাইয়া, বনুকে ঔষধ গুলো খাইয়ে দাও প্লিজ । আমি নিচে যাচ্ছি, খুব খুদা লাগছে । ”
তানভির রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে গেছে। আবির ফোন পকেটে রেখে টেবিল থেকে ঔষধ রেডি করে মেঘের দিকে এগিয়ে দিলো। মেঘও মাথা নিচু করে ঔষধ গুলো খেয়ে নিলো।
আবির নিরেট কন্ঠে বললো,
“” সাবধানে থাকিস। ’”
আবির চলে যেতে নিলে মেঘ আবিরের ডানহাত আঁকড়ে ধরে।
সহসা আবির ব্যথায় “উফফ” করে উঠলো।
মেঘ সঙ্গে সঙ্গে হাত ছেড়ে দিলো। মেঘ ভেবেছে আবির ভাই হইতো বিরক্ত হয়েছেন মেঘের ছোঁয়াতে। অকস্মাৎ মেঘের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
কাঁদো কাঁদো কন্ঠে মেঘ বললো,
“”আমি ম*রে গেলে আপনি……””
এতটুকু বলতেই আবির অ*গ্নিদৃষ্টিতে চাইলো অষ্টাদশীর দিকে৷ মেঘ কথা সম্পন্নও করতে পারলো না।
আবির রা*গান্বিত কন্ঠে বললো,
“চুপ। ”
আবির দাঁতে দাঁত চেপে পুনরায় বললো,
“আর কোনোদিন যদি তোর মুখে এই কথা শুনি তাহলে ঐদিনই তোকে মে*রে বু*ড়িগ*ঙ্গায় ফে*লে দিয়ে আসবো। ”
মেঘের ছোট হৃদয়টা আবির ভাইয়ের কথায় আবারও চূ*র্ণবিচূ*র্ণ হলো । একটু রম্য স্বরেও তো বলতে পারতেন, তা না মে*রে ফে*লবেন।
মেঘের অক্ষিপট ভিজে আসছে। চিবুক নামিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
” এই বাড়ির কেউ আমায় ভালোবাসে না, সবাই শুধু ব*কে। সবার রা*গ ঝাড়ার একমাত্র জায়গা আমি। কেউ কেউ তো আবার গা*য়েও হা*ত তুলেন। ”
শেষ কথাটা বলে আবিরের দিকে তাকালো। পল্লব ঝাপটাতেই গাল বেয়ে অশ্রু গরিয়ে পরলো ।
আবির অষ্টাদশীর মুখের পানে চেয়ে মনে মনে বললো,
“এই কেউ টা তোকে ইচ্ছেকৃত মারতে চাই নি, এটা কি করে বুঝাবো তোকে। এই কেউটা যে নিজের থেকেও বেশি তোকে ভালোবাসে, তোকে মা*রার সাধ্যি কি তার আছে? আমি পারছি না তোকে বুকে জরিয়ে চিৎকার করে বলতে যে, তুই আমার সবকিছু, তোকে ছাড়া আমি নিঃস্ব। ”
আবির বিছানার পাশে বসে গলা খাঁকারি দিয়ে তপ্ত স্বরে বললো,
“তুই হয়তো জানিস না কারো অলিখিত কাব্য তুই। কারো স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়ার কারণ তুই। তোর ডাগর ডাগর চোখের চাউনীতে কারো বিনাশ নিশ্চিত। তোর অনাদেয় কর্মকান্ডে খুব শীঘ্রই কারো মস্তি*ষ্কে র*ক্তক্ষ*রণ ঘটানোর কারণ হবে। সময় থাকতে সাবধান হয়ে যা মেঘ। ”
মেঘ বিস্ময়কর দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। জ্বরের ঘোরে কথাগুলোর মানে বুঝলো কি না কে জানে। মেঘ কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,
” কার?”
আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রখর স্বরে বললো,
“তোর বাবা-মায়ের। ”
[নিজের মনের ভাব চাচ্চু আর মামনির উপর চাপিয়ে দিতে বাধ্য হলো আবির। ]
মেঘ অক্ষি পল্লব ঝাপটে বৃহৎ নয়নে চেয়ে আছে আবিরের দিকে।
আবির ঠান্ডা কন্ঠে বললো ,
“আর কার ভালোবাসা প্রয়োজন তোর? আমার আব্বু যেখানে আমার সাথে প্রয়োজনের বাহিরে কোনো কথা বলে না সেখানে তোর ইচ্ছে- অনিচ্ছা নিয়ে ভাবে, আম্মুর ভালোবাসা আশা করি আমার তোকে বুঝাতে হবে না। কাকামনি- কাকিয়া তো ওদের সন্তানের থেকেও তোকে বেশি আদর করে। চাচ্চু আর মামনির কথা কি বলবো তোকে, চাচ্চুর আর মামনির খুব শখ ছিল একটা মেয়ে বাবুর। তোর জন্মের পর দুজন খুশিতে এত কান্না করছে যে এলাকার মানুষ ভেবেছিল এই বাড়িতে কেউ মা*রা গেছে। তানভির ছেলে হয়েও এতটা গুরুত্ব পায় নি, যতটা গুরুত্ব তুই চাচ্চু আর মামনির থেকে পাস। তানভিরের জীবনে বাবা-মায়ের পরেই তোর অবস্থান। মীম-আদি তো তোরই ভ*ক্ত । খান বাড়িতে তোর যতটুকু অগ্রাধিকার তা আমাদের কারো নেই। আর কার ভালোবাসা চাস? ”
একসাথে কথাগুলো বলে আবির থামলো তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
“উল্টাপাল্টা কথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দেয়া বোকামি ছাড়া কিছুই না । ”
মেঘ ডাগর ডাগর চোখে তাকিয়ে চিন্তিত কন্ঠে শুধালো,
“আপনার কথা বললেন না কেনো?”
মেঘের প্রশ্ন শুনে আবির ঢুক গিলে কপাল কুঁচকালো, তারপর শক্ত কন্ঠে বললো,
“তোর এখন রেস্ট নেয়া প্রয়োজন । ”
আবির চেয়ার থেকে উঠতে নিলে মেঘ আবিরের ডানহাতের দু আঙুল আঁকড়ে ধরে।
সঙ্গে সঙ্গে আবির দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে ফেলে। মেঘ সহসা আবিরের হাতের দিকে চাইলো। আবিরের হাতের কাটা অংশে চাপ পরায় র*ক্ত বের হচ্ছে৷ সঙ্গে সঙ্গে হাত ছেড়ে দেয় মেঘ।
মেঘ আর্তনাদ করে বললো,
“আবির ভাই আপনার হাত এতটা কেটেছে কিভাবে?”
আবির তপ্ত স্বরে শুধু বললো,
“এমনি। ”
আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মেঘ নির্বাক চোখে তাকিয়ে আবির ভাইয়ের প্র*স্থান দেখলো৷
মেঘের মনে পরলো মেইন গেইটের পাশের দেয়ালে ঘু*ষি দেয়ার কথা, ধরে নিলো এর ফলেই আবির ভাইয়ের হাত কে*টেছে। অষ্টাদশী জানতেও পারলো না তাকে থা*প্পড় দেয়ার অপরাধে আবির কতশত ঘু*ষিতে নিজেকে আ*হত করেছে।
গতকালের ঘটনাগুলো পরপর মনে হতেই মেঘের নিজের উপর বড্ড রা*গ হলো। আবির ভাইয়ের অনুভূতি জানতে চাওয়ার কি দরকার ছিল।৷ রা*গে নিজের গালে থা*প্পড় দিতে ইচ্ছে হলো মেঘের। আবির ভাই জান্নাত আপুকে পছন্দ করলে মেঘের ব্যাপারে কোনো অনুভূতি থাকবে না এটায় তো স্বাভাবিক । আবিরের সাথে এই জীবনে কখনো মেঘের সুসম্পর্ক ছিলো বলে মনে পরছে না মেঘের। এই হি*টলার স্বভাবের ব্যক্তির জন্য আজ সে জ্বরে ভুগছে এটা ভাবতেই মাথায় র*ক্ত উঠছে৷
আবির মেঘের রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমে গেলো। একটা তালা নিয়ে ছাদের গেইটে তালা ঝুলিয়ে দিলো। তারপর নাস্তার টেবিলে চলে গেলো। ততক্ষণে নাস্তার টেবিল ফাঁকা হয়ে গেছে। তিন কর্তী রান্নাঘরে কাজ করছে আর এটা সেটা নিয়ে কথা বলছে।
আবির রান্নাঘরের সামনে গিয়ে রাশভারি কন্ঠে বললো,
“ছাদের গেইটে তালা দিয়ে দিয়েছি। তোমাদের কারো ছাদে যাওয়ার প্রয়োজন হলে, আমার রুম থেকে চাবি নিয়ে যেও। ”
আকলিমা খান চিন্তিত কন্ঠে শুধালেন,
“মেঘ কি রাতে ছাদে গিয়ে ভিজেছিল ?”
আবির উপর নিচ মাথা নাড়লো শুধু ।
মালিহা খান হালিমা খানের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“যে মেয়ে ভূ*তে ভ*য় পাই, সন্ধ্যার পর বৃষ্টি হলে কানে আঙুল দিয়ে বসে থাকে সেই মেয়ে এত রাতে ছাদে গেলো কিভাবে?”
হালিমা খান নির্বাক চোখে তাকিয়ে রইলো মালিহা খানের দিকে। এই প্রশ্নের উত্তর ওনার কাছেও নেই।
আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বললো,
“তোমাদের এসব নিয়ে গবেষণা করতে হবে না। যা হওয়ার হয়েছে। মেঘকে এই বিষয় নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন করবা না। ছাদে না যেতে পারলে এমন কান্ডও আর ঘটাতে পারবে না। এই টপিক এখানেই শেষ। ”
আবির চুপচাপ নাস্তা করে নিজের রুমে চলে গেছে।
পেইজঃ Salma Chowdhury – সালমা চৌধুরী (scsalma90)
★★★★
তানভিরের সারাদিন কাটলো চায়ের পর চা খেতে খেতে। আবিরের জন্য ঘন্টাখানেক তানভিরকেও বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছিল যার ফলস্বরূপ গলা ব্যথা, সর্দির উপক্রম হয়েছে। বিকেলে আবার এমপির সম্মেলনে যেতে হবে। তাই চা কফি খেয়ে গলা ঠিক রাখছে। দুপুরে খাবার খেয়ে বেড়িয়ে পরেছে সম্মেলনের উদ্দেশ্যে। আবির সারাদিনেও রুম থেকে বের হলো না। ৩ টার দিকে মালিহা খান আদিকে পাঠিয়েছিল ডাকার জন্য। কিন্তু আবির ঘুমাচ্ছে দেখে আদি দরজা থেকেই চুপচাপ চলে আসছে।
আরও কিছুক্ষণ পর বাধ্য হয়ে মালিহা খান নিজেই সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলেন ছেলের রুমে।
দরজা থেকে একবার আবিরকে ডাকলো কিন্তু কোনো সাড়া নেই। মালিহা ছেলের কাছে গিয়ে বাহুতে হাত দিতেই আঁতকে উঠলেন। জ্বরে আবিরের গাঁ পু*ড়ে যাচ্ছে৷ ডানহাত ফু*লে গেছে কনুই পর্যন্ত।
মালিহা খান এইযে ছেলেকে ডাকছে, আবির জ্বরের ঘোরে কিছুই বলতে পারছে না। মালিহা খান রুম থেকে বেরিয়ে হাঁকডাক শুরু করলেন। ইকবাল খান সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন, ভাবির ডাক শুনে দৌড়ে গেলেন৷মেঘ ঘুমাচ্ছিলো হালিমা খান মেঘের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছিলেন। বড় ঝা য়ের আর্তনাদে মেঘের রুম থেকে বেড়িয়ে ছুটে গেলেন আবিরের রুমে।
আবিরের মুখমন্ডল অন্ধকার হয়ে আছে। হাতের ব্য*থা সাথে দীর্ঘ সময় বৃষ্টিতে ভেজার ফলে এই দশা হয়েছে।। ইকবাল খান সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার কে কল দিয়েছেন। ঘন্টাখানেক পর পরিস্থিতি শান্ত হলো। আবিরকে ব্যথার ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে। মালিহা খান ছেলের মাথায় জলপট্টি দিতে ব্যস্ত হলো। হালিমা খান বেড়িয়ে মেঘের রুমে গেলেন ততক্ষণে মেঘের ঘুম ভে*ঙে গেছে।
হালিমা খানের থমথমে চেহারা দেখে মেঘ শঙ্কিত হলো, উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,
“কি হয়েছে আম্মু?”
হালিমা খান মেয়ের কাছে বসতে বসতে বললেন,
“তোরা তিন ভাই বোন মিলে কি শুরু করছিস বল তো?”
মেঘ স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“কেনো? কি হয়েছ? ”
হালিমা খান তপ্ত স্বরে বললেন,
“এদিকে তোর অবস্থা খারাপ ওদিকে তানভিরের লাগছে সর্দি । সকাল থেকে চা কফি খেতে খেতে কিছুক্ষণ আগে বের হলো। । এখন আবার আবিরের.. ”
মেঘ আঁতকে উঠে প্রশ্ন করলো,
“কি হয়েছে আবির ভাইয়ের?”
হালিমা খান কোমল কন্ঠে বলা শুরু করলেন,
“রাত থেকেই তো ছেলেটা দৌড়ের উপর । বৃষ্টিতে ভিজে অফিস থেকে আসছে তারপর তোরে ছাদ থেকে রুমে এনে রেখে ডাক্তার আনতে গেছে আবার ডাক্তার কে দিয়ে ঔষধ নিয়ে আসছে। কিভাবে যেন হাত কাটছে, সেই হাত ফুলে, ব্যথায় এখন জ্বর উঠে গেছে। জ্বরে চোখ খুলতে পারছে না ছেলেটা ”
মেঘ মায়ের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে,
“আবির ভাই আমার জন্য এতকিছু করেছে….????”
(চলবে)
গল্প- আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে
পর্ব- ২১
লেখিকা- সালমা চৌধুরী
তৎক্ষনাৎ মেঘের অভিব্যক্তি বদলে গেলো, চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কপাল কুঁচকালো। মনে মনে বললো,
“আমি ওনাকে নিয়ে ভাবছি কেনো? ? ওনাকে নিয়ে ভাবার তো মানুষ আছেই। তাছাড়া ওনি আমায় মে*রেছেন তার শা*স্তি আল্লাহ ওনাকে দিয়েছেন। আমার তো এতে খুশি হওয়ার কথা।”
কথাগুলো ভেবেই গাল ফুলালো তারপর মায়ের মলিন মুখের পানে একবার তাকিয়ে আবার মনে মনে বলা শুরু করলো,
“যেখানে আম্মু-আব্বু আর ভাইয়া কোনোদিন আমার গা*য়ে হা*ত তু*লে নি, সেখানে ওনি আমার গা*য়ে হা*ত তুললেন কোন অধিকারে? তাও আবার আরেকজনের জন্য। ওনি আমাকে পছন্দ করলেও মেনে নিতাম, ওনি তো জান্নাত আপুকে ভালোবাসেন তাহলে আমার উপর অধিকার দেখাতে আসেন কেন? কারো জীবনে অবা*ঞ্ছিতের ন্যায় পড়ে থাকার চেয়ে, একাকী জীবন কাটানো অনেক ভালো। আমি আপনার জীবনে অবা*ঞ্ছিত হয়ে থাকতে চাই না।
আজ থেকে আমার মনে হি*টলারের কোনো অ*স্তিত্ব থাকবে না। একবার সুস্থ হয় শুধু, আমার জীবনের সকল সিদ্ধান্ত আমি নিবো৷ আমার ব্যাপারে কাউকে নাক গ*লাতে দিব না । ”
হালিমা খান মেয়ের কপালে হাত রেখে ব্যস্ত হলেন জলপট্টি দেয়ার জন্য । গতরাত থেকে নাওয়াখাওয়া এক করে মেয়ের যত্ন নিচ্ছেন। চোখ- মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। মেঘের মাথায় জলপট্টি দিতে দিতে মেঘের চুলে হাত দিলেন। দীর্ঘ চুলে জট লেগে অগোছালো হয়ে আছে।
হালিমা খান কোমল কন্ঠে মেয়েকে বললেন,
“তুই সুস্থ হলে, তোকে নিয়ে পার্লারে যাব।”
মেঘ ছোট করে শুধালো,
“কেন?”
হালিমা খান শ্বাস ছেড়ে,শীতল কন্ঠে বললেন,
“তোর চুল গুলো কাটাতে হবে। ”
মেঘ আঁতকে উঠে বললো,
“না….. চুল ছোট করবো না আমি।”
হালিমা খান মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ঠান্ডা স্বরে বুঝাচ্ছেন,
“তুই তো নিজের যত্নই নিতে পারিস না, চুলের যত্ন কিভাবে নিবি? তার থেকে ভালো এখন চুল গুলো কেটে দিলে, ভর্তি পরীক্ষা দিতে দিতে দেখবি বড় হয়ে যাচ্ছে! ”
মেঘ চুপচাপ মায়ের কথা শুনছে, কোনো প্রতিবাদ করলো না,চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। এখনও জ্বর ১০০° c তেই আছে। ঔষধ খাওয়ানো হচ্ছে, তারপরও কমছে না। প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলে না, সারাক্ষণ চোখ বন্ধ করেই শুয়ে থাকে আর না হয় ঘুমায়।
পেইজঃ Salma Chowdhury – সালমা চৌধুরী (scsalma90)
★★★★
তানভির বিকেলে বের হয়েই এমপির সম্মেলনে গেলো। সেখানে পোগ্রাম শেষ করে, তারা কয়েকজন মিলে এলাকায় বেরিয়েছে ভোট চাওয়ার জন্য। এক গলিতে কয়েকটা বাসায় ভোট চাওয়ার পর আচমকা তানভিরের নজর পরে মেইনরোডে। সাথের কয়েকজনকে দায়িত্ব দিয়ে তানভির দৌড়ে বেড়িয়ে এসেছে গলি থেকে।
মেইন রোডে এসে গলা উঁচু করে ডাকলো,
“এই মেয়ে, দাঁড়াও । ”
বন্যা সহসা পিছনে ঘুরলো, তানভিরকে দেখে বিস্মিত হয়ে বললো,
“ভাইয়া আপনি?”
তানভির কয়েক কদম এদিয়ে বন্যার মুখোমুখি হয়ে গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
“আমি তোমার কোন জন্মের ভাই?”
তানভিরের গোমড়ামুখো কথায় বন্যা কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেলো, উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,
“না মানে, আপনি মেঘের ভাইয়া তাই….”
তানভির এবার কিছুটা ক*ড়া স্বরে বললো,
“আমাকে ভাইয়া ডাকার অধিকার শুধু মেঘের। তোমার ইচ্ছে হলে তানভির ভাই বলতে পারো কিন্তু মায়ের পেটের ভাইয়ের মতো ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকবা না। ”
বন্যা আস্তেআস্তে বিড়বিড় করলো,
“মেঘের ভাইগুলো এমন কাটখোট্টা কেন? এতদিন শুধু মেঘের মুখেই শুনতাম এখন দেখি সত্যি সত্যি । ”
তানভির টিস্যু দিয়ে নাক মুখে, ছোট করে শুধালো,
“কোথায় যাওয়া হচ্ছিলো?”
বন্যা তটস্থ হয়ে বললো,
“ফুচকা খেতে। ”
বন্যা পুনরায় স্বাভাবিক কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
আপনি এখানে কেনো ভাইয়া……..
প্রশ্ন শেষ করার আগেই চোখ পরলো তানভিরের দিকে। তানভির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। বন্যা ঢুক গিলে ছোট করে বললো,
“সরি, তানভির ভাই!”
তানভির মুচকি হেসে উত্তর দিলো,
“সামনেই নির্বাচন তাই ভোট চাইতে এসেছিলাম৷”
বন্যা নিরুদ্বেগ কন্ঠে বললো,
“ওওও”
তানভির কপাল কুঁচকে বললো,
“এভারে রিয়েক্ট করলা কেন? আমাদের এমপিকে কি পছন্দ না? ভোট দিবা না?”
বন্যা আতঙ্কিত হয়ে তাকালো তানভিরের দিকে,
ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে বললো,
“না না তেমন কোনো বিষয় না। তাছাড়া আমি তো ভোটার ই হয় নি৷ ”
তানভির বিরক্তি নিয়ে বললো,
“তাতে কি হয়েছে? তোমার আব্বু, আম্মু, বড় বোন তো আছে, তারা তো ভোটার। যেভাবে রিয়েকশন দিচ্ছো মনে হচ্ছে, গোষ্ঠীর কাউকে ভোট দিতে দিবে না। ”
বন্যা মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে আস্তে করে বললো,
” আপনাদের এমপিকেই ভোট দিতে বললো। ”
তানভির মোলায়েম কন্ঠে বললো,
“ঠিক আছে। এখন বাসায় যাও। কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমাদের বাসায় আসছি। সবাইকে হালকা নাস্তা দিও ”
বন্যা চোখ গোল গোল করে চাইলো। তারপর ছোট করে বললো,
“আমি ফুচকা খেতে যাচ্ছিলাম। ”
তানভির কন্ঠ ভারী করে বললো,
“একদিন ফুচকা না খেলে কি ম*রে যাবে?”
বন্যা নির্বাক চোখে চেয়ে রইলো।
তানভির গলা খাঁকারি দিয়ে পুনরায় বলে উঠলো,
” ভেবো না তোমায় জোর করছি। সত্যি বলতে সম্মেলন থেকে সরকারি এদিকে চলে আসছি, ওরা সকালের পর থেকে এখনও খায় নি কিছু। তোমাদের এদিকে নাস্তা খাওয়ার মতো কোনো দোকান, রেস্টুরেন্ট কিছুই নেই। কাজ না শেষ করে যাওয়াও সম্ভব না।আবার সন্ধ্যার আগে কাজ শেষ করতে হবে। তুমি বনুর বেস্টফ্রেন্ড সেই সুবাদে তোমাকে বলছি। আমাকে না খাওয়ালেও চলবে ওদের জন্য একটু চা বিস্কুট আর হালকা নাস্তার ব্যবস্থা করে দিলে খুব ভালো হতো। ”
বন্যা স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“জ্বি অবশ্যই । আমি বাসায় গিয়ে ব্যবস্থা করছি , আপনি সবাইকে নিয়ে বাসায় আসবেন প্লিজ। ”
বন্যা পুনরায় প্রশ্ন করলো,
“বাসা চিনেন? ”
তানভির উপর নিচ মাথা নাড়লো।
বন্যা আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বাসার দিকে হাঁটা দিলো।
বন্যাদের মধ্যবিত্ত পরিবার। বাবা সরকারি কর্মকর্তা । বন্যারা ২ বোন আর ১ ভাই। বন্যার বড় বোনের স্নাতক শেষ এখন চাকরির জন্য পড়াশোনা করছে আর বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে, বন্যা ছোট মেয়ে, তাছাড়া বন্যার একটা ছোট ভাই ও আছে এখন ক্লাস ৮ এ পড়ে নাম রিদ।
বন্যা বাসায় গিয়ে আম্মুকে আর বোনকে বলে রান্নার ব্যবস্থা করছে। কিচ্ছুক্ষণ সময়ের মধ্যেই নুডলস, পাকোড়া, ফিরনি সাথে চা বিস্কুট রেডি করে ফেলেছে।
কিছুক্ষণ পর হাজির হলো সকলে। এলাকার সববাড়িতে বলে শেষের দিকেই গিয়েছে বন্যাদের বাসায়। কলিং বেল চাপতেই কিছুক্ষণের মধ্যে বন্যা এসে দরজা খুলে দিলো। তানভির দুটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিলো বন্যার দিকে।
সবাইকে বসতে বলে বন্যা ভিতরে চলে গেছে। বন্যার আম্মু সকলকে নাস্তা দিতে ব্যস্ত৷ বন্যার বোন কাজ শেষ করে আগেই নিজের রুমে চলে গেছেন।
একটা শপিং ব্যাগ খুলতেই চোখে পরলো পার্সেল করা ফুচকা। বন্যা আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে আছে আর বিড়বিড় করে বলছে,
“তানভির ভাই আমার জন্য ফুচকা এনেছেন? ওনি কবে থেকে এত ভালো মানুষ হলেন?”
তারপর দ্বিতীয় শপিং খুলে দেখলো এতে আপেল,মাল্টা আরও কি কি ফল।
বন্যাদের বাসায় টুকটাক নাস্তা করে বেরিয়ে পরছে সকলে । বন্যা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে মায়ের সাথে মেইনগেইট পর্যন্ত এসে দাঁড়িয়েছে।
তানভির হাসিমুখে বন্যার মায়ের বিদায় নিলো। তারপর বন্যার দিকে চেয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“তোমার বান্ধবী অসুস্থ , খোঁজ নিও ওর। আসছি ”
তারপর চুপচাপ বেড়িয়ে চলে গেলো তানভির।
পেইজঃ Salma Chowdhury – সালমা চৌধুরী (scsalma90)
★★★★
তানভির যাওয়ার পরপরই বন্যা রুমে এসে মেঘকে কল দিলো। টানা দু’বার কল বেজে শেষ হয়েছে, তৃতীয় বার রিসিভ হলো।
বন্যা চিন্তিত স্বরে শুধালো,
“তুই নাকি অসুস্থ ? কি হয়েছে তোর?”
মেঘ জ্বরের ঘোরে কথা বলতে পারছে না। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
“জ্বর! তোকে কে বললো?”
বন্যা স্বাভাবিক কন্ঠে জবাব দিলো,
“তানভির ভাই আসছিলো। ওনিই বলে গেলেন। ”
মেঘ কপাল কুঁচকে গলায় একটু জোর দিয়ে বললো,
“ভাইয়া তোদের ওখানে গেছিলো কেন?”
বন্যা বললো,
“আমাদের এলাকাতে ভোট চাইতে এসেছিলেন আরও কয়েকজন ছিল। আমাদের বাসায় হালকা নাস্তা করে গেছেন আর তোর কথা বলে গেছেন। ”
মেঘ ঠান্ডা কন্ঠে বললো,
“ওহ আচ্ছা ”
বন্যা পুনরায় শুধালো,
“জ্বর কি বেশি? আর জ্বর কিভাবে বাঁধালি? ”
মেঘ ভরাট শীতল কন্ঠে উত্তর দিলো,
” হুম অনেক জ্বর, এমনেই উঠছে।”
মেঘ মনে মনে ভাবছে,
“আবির ভাই থা*প্পড় মে*রেছে এটা কোনোভাবেই বন্যাকে বলা যাবে না। ”
বন্যা উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
“বেবি, শুন না?”
মেঘ জ্বরের ঘোরেই বলছে,
“বল শুনছি”
বন্যা দ্বিগুণ উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
“জানিস তোর ভাই তো আমার জন্য ফুচকা নিয়া আসছে আজ। ”
মেঘ এবার চোখ গোল গোল করে চাইলো। গলা ঝেড়ে বললো,
“কাহিনী কি পুরোটা বল। ”
বন্যা এবার স্বাভাবিক কন্ঠে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বললো। সবটা শুনার পর মেঘের সোজাসাপ্টা উত্তর ,
“শুন আমার ভাই যতই রা*গ দেখাক না কেনো, দিনশেষে আমার পছন্দের সব জিনিস ভাইয়াই এনে দেয়। আবির ভাইয়ের মতো এত নি*ষ্ঠুর না। তাই ভবিষ্যতে আমার ভাইয়াকে নিয়ে বা*জে কথা বলবি না ”
বন্যা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,
“আবির ভাইয়ের সাথে আবার কিছু হয়েছে নাকি?”
মেঘ থা*প্পড়ের কথা এড়িয়ে গিয়ে বললো,
“ওনার ফোনে একটা মেয়ের ছবি দেখেছি তাছাড়া জান্নাত আপুর সাথেও গতকাল কত মধুর স্বরে কথা বলেছেন । আমার মনে হয় জান্নাত আপুকেই ওনি পছন্দ করেন। ”
বন্যা বিরক্তি নিয়ে বলা শুরু করলো,
“ফা*লতু ব্যা*টারে নিয়া একদম ভাববি না তুই। তোর জন্য কি*উট একটা বয়ফ্রেন্ড খোঁজে দিব। তুই কোনো চিন্তা করিস না। ঐ ব্যা*টার কথা তো ভুলেও ভাববি না। ঐ ব্যাটা কি হারাচ্ছে সেটা একদিন ঠিক বুঝবে। ”
মেঘের অক্ষিপট ভিজে আসছে, গলা খাঁকারি দিয়ে আস্তে করে বললো,
“সময় পেলে আমায় দেখতে আসিস, রাখছি এখন। ”
সঙ্গে সঙ্গে কল কেটে দিলো মেঘ। বন্যাও বুঝতে পারলো মেঘের মন খারাপ। তাই আর বিরক্ত করে নি। মেঘ নিরবে কিছুক্ষণ চোখের জল ফেলে বিড়বিড় করে বললো,
“আমাকেও অ*নুভূ*তিহীন আর নি*ষ্ঠুর হতে হবে যাতে দুনিয়ার কোনো ক*ষ্ট আমায় ছুঁতে না পারে। ”
তারপর রুমের ছাদের দিকে চেয়ে অন্যমনস্ক কন্ঠে গুনগুন করে গান গাইছে,
আবছায়া চলে যায় হিজলের দিন,
অ*ভিমান জমে জমে আমি ব্য*থাহীন।
আহারে জীবন…আহা জীবন
জলে ভাসা পদ্ম যেমন….
পেইজঃ Salma Chowdhury – সালমা চৌধুরী (scsalma90)
★★★★
রাত ৯ টার দিকে আলী আহমদ খান আর মোজাম্মেল খান বাসায় ফিরেছেন। খাওয়াদাওয়া শেষ করে আবিরকে দেখতে এসেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তানভির ও বাসায় ঢুকেছে। নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মেঘের রুমে গেলো। হালিমা খান মেঘের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন, মেঘ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। মেঘের কাছে কিছুক্ষণ বসে আবিরের রুমে চলে গেলো তানভির। মালিহা খান ছেলের মাথার কাছে বসে বসে মাথায় হাত বুলাচ্ছেন , জ্বর কিছুটা কমেছে তবে হাতে হালকা ব্যথা সাথে ফুলাটাও আছে। আলী আহমদ খান আর মোজাম্মেল খান চেয়ারে বসে আছেন।। তানভির রুমে ঢুকে অন্যপাশে ঘুরে এসে আবিরের বিছানায় বসলো। কপালে হাত দিয়ে তাপমাত্রা বুঝার চেষ্টা করলো।
আলী আহমদ খান গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“আবার কোথায় মা*রপিট করেছিলে ?”
আবির নিস্তব্ধ হয়ে ছাদের দিকে চেয়ে আছে।
আলী আহমদ খান পুনরায় শুধালেন,
“কি হলো? কাকে মে*রে নিজের হাতের এই অবস্থা করেছো?”
আবির আব্বুর দিকে চেয়ে নরম স্বরে বললো,
“আমি খুবই ভদ্র ছেলে, মা*রপিট একদমই পছন্দ করি না। আপনি শুধু শুধু টেনশন করেন আমাকে নিয়ে। ”
আবিরের ভাবের কথা শুনে তানভির বিস্ময় চোখে চেয়ে আছে আর মনে মনে বলছে,
“বাহ ভাইয়া বাহ! কি নাটক টায় না করছো? বলতেই হয়,
আপনি গুরু আমি শিষ্য বুদ্ধি আমার কম,
আপনি বুঝাইয়া দিলে বুঝিতে সক্ষম। ”
মোজাম্মেল খান কঠিন স্বরে বলে উঠলেন,
“মা*রপিট যদি না ই করবা তাহলে এই অবস্থা হলো কেন শরীরের?”
আবির আমতা আমতা করে বললো,
” রাস্তায় কিসের সাথে ধা*ক্কা লেগে কে*টে গেছিলো। ”
তানভির মিটিমিটি হাসছে আর মনে মনে বিড়বিড় করছে,
” আহারে বেচা*রা ভাই আমার।”
আলী আহমদ খান বিরক্তির স্বরে বললেন,
“আগেই বলেছিলাম বাইক না কিনতে। তিন তিনটা প্রাইভেট কার থাকার পরও তোমাদের হয় না। আজকে যদি গাড়িতে চলাচল করতে তাহলে বৃষ্টিতে ভিজতেও হতো না, হাতের এ অবস্থাও হতো না, আর এখন এভাবে জ্বরে পরে থাকতা না।”
শ্বাস ছেড়ে আবার বলা শুরু করলেন,
“ঠিকই তো তোমার বন্ধু সেদিন এসে তোমার কোম্পানির ওপেনিং ডে’র ইনভাইটেশন দিয়ে গেলো, তুমি আ*ধমরা হয়ে পরে থাকলে ওপেন কে করবে?”
আবির ছোট করে বললো,
“আমি ই করবো। ”
কপাল কুঁচকে আলী আহমদ খান হু*ঙ্কার দিয়ে বললেন,
“এসব ভ*ণ্ডামি বাদ দিয়ে কাজে মনোযোগ দাও। মা*রপিট করে জীবনে কিছুই করতে পারবা না, শুধু শ*ত্রুর সংখ্যা ই বাড়াবা। কোম্পানি শুরু করার অনুমতি চেয়েছো, অনুমতি দিয়েছি। এখন যদি কোম্পানির কাজের বাহিরে নিজের মর্জি মতো চলো তাহলে আমাকেও কঠোর হতে হবে। এই আমি বলে রাখলাম। ”
মালিহা খান কোমল কন্ঠে বললেন,
“ও তো বললো মা*রপিট করে নি!”
আলী আহমদ খান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
“তোমার ছেলের বয়সটা আমিও পার করে এসেছি, কোন কারণে কি হতে পারে সে সম্পর্কে আমার সম্পূর্ণ ধারণা আছে। একটা সময় রা*জনীতি আমিও করেছি, রা*জনীতির জন্য কত কত জায়গায় আমিও মা*রপিট করেছি । কি লাভ হয়েছে তাতে? দিনশেষে সব ছেড়ে ব্যবসা শুরু করতে হয়েছে। তোমার ছেলেকে সময় থাকতে বুঝাও এসব ঝা*মেলাতে না ঝরিয়ে, কাজে মন দিতে। ”
আলী আহমদ খানের কথা শুনে আবির,তানভির আর মালিহা খান তিনজনই বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর মালিহা খান নরম স্বরে বলে উঠলেন,
“আপনার র*ক্ত ই তো পেয়েছে। ”
বড় আম্মুর কথা শুনে তানভির ফিক করে হেসে উঠলো।
আলী আহমদ খান বিরক্ত হয়ে বললেন,
“তোমরা ছেলেকে লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলছো। তুলো, তুলো আমার সমস্যা নেই। একদিন শুধু আমার কানে ওর মা*রপিটের খবর আসুক……””
কথা না শেষ করেই রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেলেন আলী আহমদ খান। তানভির নিঃশব্দে হেসেই চলেছে।
মোজাম্মেল খান কঠিন স্বরে বলে উঠলেন,
“এত হেসে লাভ নেই, রা*জনীতি করার অনুমতি পেয়েছো বলে যা তা করে বেড়াবে তা কিন্তু সহ্য করবো না আমরা ৷
তোমাদের দু’ভাইকেই সাবধান করে দিচ্ছি, এই বাড়িতে থাকতে গেলে বাধ্য ছেলের মতোই থাকতে হবে। ”
মোজাম্মেল খানও বেড়িয়ে গেছেন।
মালিহা খান ছেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
“তুই এত বছর বাহিরে ছিলি, এখানে কার সাথে ঝা*মেলা করিস?”
আবির কপাল কুঁচকে তাকালো মায়ের দিকে, কন্ঠ ভারী করে বললো,
“আম্মু, তুমি অন্ততঃ এসব কথা বলো না। আমি মা*রপিট করি নি। এমনেই কে*টে গেছে। এত চি*ন্তা করো না তো। ”
আবির শ্বাস ছেড়ে আবার বললো,
বিশ্বাস না করলে তোমার সামনে তানভির কে জিজ্ঞেস করছি,
“কিরে তানভির, আমি কি মা*রপিট করি?”
আবিরের এরকম প্রশ্নে ভ্যাবাচেকা খেলো তানভির৷ কিছুটা নড়েচড়ে, হাসি চেপে বললো,
“না… একদম ই না। ভাইয়া র মতো নিষ্পা*প একটা শিশু কি মা*রপিট করতে পারে? বড় আম্মু তুমি শুধু শুধু চি*ন্তা করছো। ”
মালিহা খান কিছু বলার আগেই আবির বলে উঠলো,
“আম্মু তুমি এখন আব্বুর কাছে যাও৷ রাগে ফুঁস*তেছে মনে হয়। তুমি ওনাকে সামলাও গিয়ে। আমি ঠিক আছি। সমস্যা হলে কল দিব নে৷ ”
মালিহা খানও ছেলের কথামতো বেড়িয়ে মেঘকে দেখে নিচে চলে গেলেন।
আবির মোলায়েম কন্ঠে তানভিরকে শুধালো,
“মেঘ কেমন আছে?”
তানভির স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলো,
“শরীরের তাপমাত্রা তো কমছে না। ঘুমাচ্ছে দেখে আসলাম। আম্মু বললো বিকেলে একটু নাকি কমেছিল জ্বর। ”
আবিরের চেহারায় চিন্তিত ভাব স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
তানভির কিছুটা তপ্ত স্বরে বললো,
“নিজেকে আ*হত করে কি লাভ হলো? দিব্যি দুজন দুই রুমে পরে অসুস্থতায় ভুগতেছো। তুমি সুস্থ থাকলে তো বনুর কেয়ার করতে পারতা। ”
আবির চুপচাপ শুয়ে আছে। কিছুই বলছে না। আবিরকে নিরব থাকতে দেখে তানভির ছোট করে শুধালো,
“ব্যথা কমেছে হাতের?”
আবির গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো,
“কিছুটা”
তানভির পুনরায় প্রশ্ন করলো,
“খেয়েছো ভাইয়া?”
আবির সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো,
“হ্যাঁ”
আবির হঠাৎ ই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে তানভিরকে প্রশ্ন করলো,
“কোথায় যাবি বলছিলি? গেছিলি? কি খাওয়ালো?”
তানভির হাসিমুখে উত্তর দিলো,
“নাস্তা খাওয়াইছে। ”
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“Go ahead ”
তানভির শান্ত স্বরে বললো,
“রেস্ট নিবা? লাইট অফ করে দিব?”
আবির উপরনিচ মাথা নাড়লো শুধু।
তানভির লাইট অফ করে বেরিয়ে গেছে। ঘন্টাখানেক পর আবির কোনোরকমে উঠে নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে ধীরগতিতে মেঘের রুমে এসেছে। হালিমা খান কোনো কারণে নিচে গেছেন। বারান্দার লাইটের আলোতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, মেঘ গভীর ঘুমে মগ্ন । ২৪ ঘন্টার জ্বরেই অষ্টাদশী মুখমণ্ডল মলিন হয়ে গেছে। মেঘের ঘুম বরাবরই খুব গভীর। বাড়িতে বড়সড় দূ*র্ঘটনা হলেও,ঘুমে থাকলে মেঘ কিছুই বুঝতে পারে না। এখন তো জ্বর, তারউপর ঔষধের প্রভাবে সারাদিন রাত শুধু ঘুমায়।
আবির বিছানার পাশে মেঘের কাছাকাছি এসে বসেছে। বাম হাত এগিয়ে দিলো অষ্টাদশীর কপাল বরাবর । জ্বরের তীব্রতা বুঝতে পেরে দীর্ঘশ্বাস ফেললো৷ অষ্টাদশীর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বিড়বিড় করে বললো,
“আল্লাহ, ওর সব ব্যাধি আমায় দাও, তবুও ওকে তুমি সুস্থ করে তুলো প্লিজ। ওর এই অসুস্থতা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। ”
কিছুটা সময় নিস্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইলো অষ্টাদশীর ক্লান্ত বদনে৷ মনে মনে কতশত ভাবনারা যেনো বাঁধ ভেঙে ছুটোছুটি করছে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে শীতল কণ্ঠে বলা শুরু করলো,
“I am Sorry Megh, আর কোনোদিন তোর গায়ে হাত তুলবো না। প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দিস আমায়। গত ৯ বছরের মতো, এবার অন্তত দূরে সরিয়ে দিস না । রা*গ কর আর যাই কর কিন্তু কথা বলিস প্লিজ । তুই কথা না বললে এবার হইতো দেশ নয়, দু*নিয়া ছেড়েই চলে যাব। ”
কথাগুলো একবারে বলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ধীর পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেলো আবির৷
রুমে গিয়েই ফোন হাতে নিয়ে ডাক্তারের নাম্বারে কল করলো, ডাক্তারের সাথে কথা শেষ করে একটা ছোট পৃষ্ঠাতে দুটা ঔষধের নাম লিখতে লিখতে তানভিরকে কল করলো।
তানভির ১ মিনিটের মধ্যে রুমে হাজির হলো। আবির ওয়ালেট থেকে ১০০০ টাকার নোট বের করলো। ঔষধের নাম লেখা পৃষ্ঠা আর টাকা টা তানভিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“কষ্ট করে এই দুটা ঔষধ নিয়ে আসবি প্লিজ, আর বাকি টাকা দিয়ে ওর জন্য খাবার নিয়ে আসিস। ”
তানভির পৃষ্ঠা হাতে নিয়ে ঠান্ডা স্বরে বললো,
“টাকা লাগবে না আমার কাছে আছে।”
আবির শক্ত কন্ঠে বললো,
” নিতে বললাম নে। আর ঔষধ এনে একটা ওরে এখনই খাওয়াইয়া দিস। ”
তানভির “ঠিক আছে” বলে টাকা নিয়ে বেড়িয়ে পরেছে।
আবির বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে ফোনের ওয়ালপেপারে দেয়া মেঘের ছবিটা মনোযোগ দিয়ে দেখছে। আবির দেশে ফেরার পর শুক্রবারে যখন সব আত্মীয়রা আবিরকে দেখতে আসছিলো সেই সময়ে, সোফায় আবির আর মেঘ মুখোমুখি বসেছিল তখনই আবির মেঘের ছবি তুলেছি। সেই ছবিটায় ইডিট করে ওয়ালপেপার দিয়ে রেখেছে।৷ ছবিটা দেখতে দেখতে হঠাৎ ই ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো আবিরের তারপর গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করলো,
তুই তো আমার সব রে পা*গল,
তুই তো আমার সব
তুই তো আমার বেঁচে থাকার
বড়ো অনুভব।
পেইজঃ Salma Chowdhury – সালমা চৌধুরী (scsalma90)
★★★★
কেটে গেলো দু’দিন আবির কিছুটা সুস্থ হয়েছে, হাতের ব্যথা একেবারে সারে নি, ঔষধ চলছে। এরমধ্যে রাকিব,রাসেল সহ বাকি বন্ধুরাও দেখতে এসেছিল আবিরকে৷ এই দুদিনে মেঘের জ্বর কমেছে ঠিকই তবে শরীর অ*তিরিক্ত দূ*র্বল। হালিমা খান ঘন্টায় ঘন্টায় মেয়ের জন্য এটা সেটা রান্না করে নিয়ে আসে আর মেয়েকে জোর করে খাওয়ান। আবির রাতে- দিনে বেশ কয়েকবার করে মেঘকে এসে দেখে যায়। মেঘ সজাগ থাকলেও আবিরকে দেখলেই চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। আবির দু-একটা কথা বললেও মেঘ যেনো নিস্ত*ব্ধ হয়ে থাকে, সর্বোচ্চ মাথা নাড়ে শুধু ।
রবিবার রাতে আবির বিছানায় বসে বামহাতে ল্যাপটপে কাজ করছিলো। আগামীকাল ১ তারিখ। আবিরের অফিসের ওপেনিং ডে।
ইকবাল খান দরজায় এসে হালকা কাশি দিয়ে বললেন,
“ভিতরে আসবো?”
আবির ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে কাকামনির দিকে চেয়ে বললো,
“কাকামনি, ভেতরে আসো। ”
ইকবাল খান চেয়ারে বসতে বসতে শুধালেন,
“শরীরের কি অবস্থা এখন? কাল কি অফিস করতে পারবি?”
আবির ঠান্ডা কন্ঠে জবাব দিলো,
“পারবো। তাছাড়া রাকিব, রাসেল তো আছেই সমস্যা হবে না আশা করি। ”
ইকবাল খান একটু শক্ত কন্ঠে বললেন,
“কালকে কিন্তু বাইক নিয়ে বের হবি না। আমি তোকে নিয়ে যাব। ”
আবির মাথা নিচু করে বললো,
“আমি যেতে পারবো বাইকে। ”
ইকবাল খান এবার কিছুটা রে*গেই বললেন,
“তোকে তো তোর বাবা চাচার সাথে যেতে বলছি না। তুই আমার সাথে যাবি। আমি তো নিজের টাকা দিয়ে গাড়ি কিনেছি। এখানে ওনাদের অধিকার নেই। ”
আবির গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“তারপরও”
ইকবাল খান রা*গান্বিত কন্ঠে বলে উঠলেন,
“তারপরও বলতে কিছু নেই। তুই আমার সাথে যাবি এটায় শেষ কথা। আর তুই যদি এই অবস্থায় বাইক নিয়ে বের হতে যাস তখন তো ভাইজান ডাইরেক্ট নি*ষেধ করবেন। তখন তো বাবার আদেশ মানতে ঠিকই বা*ধ্য হবি। এত ঝামেলার দরকার নেই তুই কাল আমার সাথে যাচ্ছিস এটায় শেষ কথা। ”
আবির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
” ঠিক আছে ।”
সোমবার সকাল সকাল আবির একেবারে পরিপাটি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে মেঘের রুমে ঢুকলো। ফিটফাট, সুদর্শন আবির ভাইকে দেখে মেঘের বুকের ভেতর ধুকপুক শুরু হয়ে যাচ্ছে। মেঘ বিপুল চোখে তাকিয়ে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করছে,
“ওনাকে এত ভাল্লাগে কেন ? দেখলেই যেনো মনটা শান্তিতে ভরে যায়।”
আবির মেঘের কাছাকাছি এসে মোলায়েম কন্ঠে শুধালো,
“বসতে পারি?”
মেঘ নির্বাক তাকিয়ে রইলো, কয়েক মুহুর্ত পর মাথা হেলিয়ে বুঝালো, বসার জন্য।
আবির মেঘের কাছাকাছি বসে, ঠান্ডা হাতে মেঘের কপালে আলতো করে ছুঁতেই মেঘ কিছুটা কেঁ*পে উঠলো ।
আবির চিন্তিত স্বরে বললো,
“জ্বর তো নেই তারপরও চোখমুখ এত শুকনো লাগছে কেন? খাস না কিছু?”
মেঘ কিছুই বলছে না।
আবির পুনরায় বললো,
“বাহিরের কিছু খাবি? আসার সময় নিয়ে আসবো?”
মেঘ সঙ্গে সঙ্গে মাথা নেড়ে না করলো।
আবির উদগ্রীব হয়ে বললো,
“কি খাবি বল, রেস্টুরেন্টের খাবার? কেক, বিস্কিট, চানাচুর, চিপস, চকলেট নাকি আইসক্রিম? ”
মেঘ আস্তে করে বললো,
“কিছু খাবো না। ”
আবির ভ্রু নাচিয়ে শুধালো,
“চিপস ও খাবি না?”
মেঘ ছোট করে বললো,
“না।”
না বলেই সঙ্গে সঙ্গে ওষ্ঠ উল্টালো।
আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
” আচ্ছা বাদ দে, আজ আমার নিজস্ব অফিসের প্রথম দিন। দোয়া করিস আমার জন্য । ”
মেঘ আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে,
“আবির ভাই আমার কাছে দোয়া চাইতে এসেছেন! এটা কি স্বপ্ন নাকি?”
মেঘ মন খারাপ সরিয়ে হাসিমুখে বললো,
“ফি আমানিল্লাহ। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। ”
মনে মনে বললো,
“দোয়া করি আপনি আপনার ব্যবসা আর জান্নাত আপুকে নিয়ে সু*খে থাকুন।”
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
” ধন্যবাদ। তুই সাবধানে থাকিস আর খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করিস। আসছি”
আবির রুম থেকে বের হতে হতে মনে মনে বলছে,
“দোয়া কর যেনো খুব তাড়াতাড়ি সাকসেসফুল হতে পারি আর তোকে আমার করে নিতে পারি। ”
(চলবে)