গল্প- আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে
পর্ব- ২৬
লেখিকা- সালমা চৌধুরী
আবির মেঘের কাছে এসে শান্ত স্বরে বললো,
“তানভিরের আজকে কাজ আছে৷ কালকে পরীক্ষা দিয়ে তোর তা*ড় ছিঁ*ড়া বান্ধবীটাকে নিয়ে রিক্সা করে এখানে চলে আসিস৷ এখন চল । ”
মেঘ জিজ্ঞাসু চোখে চেয়ে শুধালো,
“কোথায়?”
আবির তাকাতেই মেঘ মাথা নিচু করে ফেললো৷ বুঝতে পারলো কথায় কথায় প্রশ্ন করাতে আবির ভাই রে*গে গেছেন। মেঘ লক্ষী মেয়ের মতো বাইকের পেছনে বসে আছে । ঘন্টাখানেক মেঘকে নিয়ে বাইকে ঘুরেছে, ফুচকা, আইসক্রিম থেকে শুরু করে যে যে স্ট্রিটফুড পেয়েছে, মেঘের পছন্দ মতো সবই কিনে খাইয়েছে আবির।
বিকেলের পর থেকে আবহাওয়া খা*রাপ হতে শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে মেঘের গ*র্জন শুরু হয়ে গেছে৷
মেঘ তখন আচার খেতে ব্যস্ত। আবির মেঘের দিকে চেয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,
“বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে তো। বাসায় যাবি না?”
মেঘ আচার খেতে খেতে আবির ভাইয়ের অভিমুখে চেয়ে আহ্লাদী কন্ঠে বলে উঠলো,
“বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছে করছে । ”
আবির কপাল কুঁচকে চেয়ে আছে, অপলক সেই দৃষ্টি ।
মেঘ মনে মনে বলছে,
“এই গোধূলি আলোতে আপনার হাতে হাত রেখে বৃষ্টিতে ভিজতে চাই। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটাকে চিৎকার করে বলতে চাই,
এই মানুষটাকে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি। আমার কল্পনার জগতে আবির ভাই শুধুই আমার। ”
আবির কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থেকেই শক্ত কন্ঠে বললো,
“বৃষ্টিতে ভিজে নিজের কি হাল করছিলি মনে নেই?”
মেঘ একগাল হেসে উত্তর দিলো,
“এবার আর এমন হবে না। কারণ আপনি……”
আবির গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
“আমি কি?”
মেঘ মাথা নিচু করে মুচকি হেসে বললো,
” কিছু না। ”
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরা শুরু হয়ে গেছে। আবির আশপাশ দেখছে। মেঘ হাত থেকে ঘড়ি খুলে ব্যাগে রেখে আবির ভাইকে ব্যাগটা দিয়ে বলল,
” আবির ভাই, ব্যাগ টাকে রেইনকোট দিয়ে ঢেকে রাখবেন, প্লিজ৷ ”
মেঘের কথায় আবির নির্বোধের ন্যায় মেঘের দিকে চেয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো,
“রেইনকোট পড়া দরকার তোর আর তুই তোর ব্যাগকে রেইনকোট পড়াতে বলছিস! ”
মেঘ হাসিমুখে বললো,
” বই খাতা ভিজলে তো পড়তে পারবো না। আমি ভিজলে তো সমস্যা…. ”
এতটুকু বলতেই আবিরের চোখে চোখ পরলো মেঘের। আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে, মেঘ আস্তে করে বললো,
“নেই..!”
আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে জানালো,
“ভিজতেছিস ভিজ, জ্ব*র যদি হয় তাহলে তোর খ*বর আছে বলে দিলাম৷ সমস্যা আছে কি নেই সেটা তখন বুঝাবো৷ ”
মেঘ বিড়বিড় করে বললো,
“আগে আপনার সাথে বৃষ্টি উপভোগ করে নেয়
তারপর প্রয়োজনে জ্বর – সর্দি উপভোগ করে নেব৷ ”
বৃষ্টি বাড়তে শুরু করেছে, মানুষ ছোটাছুটি করছে। আবির আর মেঘ দাঁড়িয়ে মানুষের ছোটাছুটি দেখছে, একসময় বারিবর্ষণ শুরু হয়েছে। দুজনের সর্বাঙ্গ ভিজে একাকার অবস্থা।কিন্তু কেউ যেনো একচুল নড়ছে না। মেঘ আকাশের পানে মুখ করে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি উপভোগ করছে, আর আবির সেই মায়াবী মুখের অভিমুখে নে*শাক্ত চোখে চেয়ে আছে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির ঝলক।
মেঘ আকাশের পানে চেয়ে, মনে মনে কতকিছু চেয়ে ফেলেছে তা আবিরের অজানা ৷ মেঘের খুব ইচ্ছে করছে আবির ভাইয়ের হাতে হাত রেখে বৃষ্টিতে হাঁটার৷ কিন্তু আবির ভাইয়ের হাত ধরার সাহস তো ছোট্ট অষ্টাদশীর এখনও হয় নি। তারপর ভাবলো, পাশাপাশি হাঁটতে পারলেই মনে শান্তি লাগবে।
মেঘ কিছু সময় পর স্বাভাবিক হয়েছে, তৎক্ষনাৎ আবির দৃষ্টি সরিয়ে কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো৷
মেঘ আবিরের দিকে চেয়ে আহ্লাদী কন্ঠে বললো,
” চলুন না, হাঁটি । ”
মেঘের কথা শুনে আবির সহসা দু কদম এগিয়েছে, মেঘ তখনও আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে৷ আবির নিজের বামহাত বাড়িয়ে বললো,
“হাতটা ধর নাহয় কখন আবার বৃষ্টিতে পা পিছলে পড়ে যাবি। ”
কথাটা বলতে দেরি হয়েছে, কিন্তু আবিরের হাত খপ করে ধরতে এক সেকেন্ড দেড়ি করে নি মেঘ। এমনভাবে হাত আঁকড়ে ধরা দেখে আবির সামনের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো।
অষ্টাদশী তো জানে না এই আবিরের মনে, অষ্টাদশীর চেয়েও হাজার গুণ বেশি প্রেমানুভূতি সর্বক্ষণ বিচরণ করে৷ ২৪ ঘন্টা আবিরের মাথায় শুধু মেঘই ঘুরপাক খায় । অষ্টাদশী কি ভাবে! কি চাই!
সবই আবির বুঝতে পারে। তবে কিছু প্রকাশ করে, কিছু অপ্রকাশিত রাখে।
রাজপুত্র আর রাজকন্যা হাতে হাত রেখে পাশাপাশি হাঁটছে। আবিরের দৃষ্টি সামনের দিকে থাকলেও, মেঘের সম্পূর্ণ দৃষ্টি আবিরে নিবন্ধ । ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসি যেনো সরছেই না বরং ক্রমে ক্রমে বেড়েই যাচ্ছে৷ মেঘের বুকের ভেতরে থাকা সুপ্ত ভালোবাসা গুলো কোনো বাঁধা মানতে চাইছে না। এই বৃষ্টিসিক্ত গোধূলিতে প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে বলতে ইচ্ছে করছে,
“এই মানুষ টাকে আমার চাই৷ সম্পূর্ণ আমার করে পেতে চাই৷ ”
মেঘ হাবিজাবি ভাবতে ভাবতেই অকস্মাৎ রাস্তার পাশে থাকা গাছের শেকড়ের সাথে হোঁচট খেয়ে উপুড় হয়ে পড়তে গেলে, আবিরের বাম হাতে থাকা মেঘের হাতটা আবির শক্ত করে ধরে, সহসা ডান হাতে মেঘের পেট বরাবর আঁকড়ে ধরলো ৷ কয়েক সেকেন্ডের জন্য মেঘের মনে হয়েছিল পৃথিবীটা বুঝি থমকে গেছে। আচমকা হোঁচট খাওয়ায় মেঘের স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লেগেছে। নিজের উদরে আবির ভাইয়ের শক্তপোক্ত হাতের ছোঁয়া বুঝতে পেরে মেঘ বিষ্ময় চোখে উদরে রাখা হাতের দিকে চাইলো। বৃষ্টিতে ভিজে পড়নের সুতি জামাটা আগে থেকেই গায়ের সাথে মিশে ছিল৷ আবির ভাই জামার উপর দিয়ে ছোঁয়ার পরও, মেঘের মনে হচ্ছে উ*ন্মুক্ত উ*দরে হাত রেখেছে আবির ভাই। মেঘের সর্বা*ঙ্গ শিহরিত হলো, বুকের ভেতরে থাকা হৃ*দপি*ণ্ডটা বাহিরে বেড়িয়ে আসতে চাইছে,মেঘের নিঃশ্বাস গলায় আটকে যাচ্ছে । হোঁচটের ফলে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের কোণা উঠে র*ক্ত বের হচ্ছে, স্না*য়ুত*ন্ত্রে ক্রমাগত সি*গনাল দেয়ার ফলে মেঘ বুঝতে পেরে “উফফ” করে উঠলো।
নিজেকে কন্ট্রোল করে মেঘ দাঁড়িয়ে পায়ের দিয়ে চাওয়ার আগেই ব্য*থা বুঝতে পেরে ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে। আবির সঙ্গে সঙ্গে বসে পরলো আঙুল টা দেখতে, র*ক্ত যা বের হচ্ছে সবই বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে চলে যাচ্ছে। পকেট থেকে একটা ওয়ানটাইম ব্যা*ন্ডেজ বের করে আপাতত আঙুলে পেঁচিয়ে দিলো। আবিরের ছোঁয়াতে পায়ের ব্যথা সারলো কি না কে জানে, মেঘের মনের ব্যথা যেন এক সেকেন্ডেই সেরে গেছে। মেঘ বাকরুদ্ধ হয়ে চেয়ে আছে, তার চোখ দিয়ে শুধু পানি পরছে। আবির দাঁড়িয়ে দুহাতের উল্টো পিঠ দিয়ে,মেঘ গাল বেয়ে পড়া চোখের পানি তার সাথের বৃষ্টির পানি মুছে দেয়ার চেষ্টা করলো।
তারপর আবির তপ্ত স্বরে বললো,
“এত সামান্য ব্যথায় এভাবে কাঁদলে হবে?”
তৎক্ষণাৎ মেঘের ফুঁপানোও বন্ধ হয়ে গেছে। মেঘ কিছু বলার আগেই, আবির আচমকা মেঘকে কোলে তুলে নিলো৷ মেঘের চোখ কোটর ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে, নিজেকে সামলাতে সহসা একহাতে আবিরের শার্টের বোতামসহ কিছুটা অংশ চেপে চোখ বন্ধ করে ফেলছে। রাস্তার দুপাশে বড় বড় গাছ, বৃষ্টিতে ভেজা পিচঢালা রাস্তায় মেঘকে কোলে নিয়ে আবির হাঁটছে । কিছুটা সময় পর মেঘ চোখ খুলে, বৃহৎ চোখে আবিরের শ্যামবর্ণের চেহারায় চেয়ে আছে, আবিরের চুলে, নাকে,মুখে গালে পড়া বৃষ্টির ফোঁটার কিছুটা মেঘের মুখেও ছিটকে পরছে।
মেঘ ধীর কন্ঠে বললো,
“নামিয়ে দেন, আমি যেতে পারবো। ”
আবির ভাইয়ের এভাবে কোলে তুলে নেয়াতে মেঘের সর্বা*ঙ্গে কা*রে*ন্টের শ*ক খেয়েছে। এই মানুষটা কাছাকাছি আসলেই যেখানে মেঘের হৃ*দপি*ণ্ডের ধুকপুকানি বেড়ে যায়, সেখানে এভাবে কোলে তুলাতে তার সবকিছু যেনো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তাই মন না চাইতেও আবিরকে বললো, নামিয়ে দিতে।
আবির নিরেট কন্ঠে বললো,
” চুপ করে থাক। ”
মেঘ নিশ্চুপ হয়ে আবির ভাইকে দেখছে। ধ*মক খেয়ে মন খারাপ হওয়ার বদলে তার ঠোঁটে মিষ্টি হাসি লেগে আছে। কিছুদূর যাওয়ার পর, একটা চায়ের দোকানের কাছে গিয়ে, পিচ্চি ছেলেকে ডেকে বললো চেয়ার দিতে, খোলা আকাশের নিচে ছেলেটা চেয়ার দিলো, আবির মেঘকে বসাতেই মেঘ বলল,
“আপনি তখন না ধরলে পড়ে নিশ্চিত আমার মা*থা ফা*টতো। ”
আবির শক্ত কন্ঠে জবাব দিলো,
“এত সহজে তোর কিছু হতে দিব না,
পরিস্থিতি যতই বেসামাল হোক,
আমি ঠিকই তোকে সামলে রাখবো।”
এই কথা শুনে মেঘ বিস্ময় চোখে আবির ভাইয়ের পানে চেয়েছে। কথার গভীরতা ঠিক কতটা, সেটা বুঝতে না পারলেও, কথাটা তার খুব মনে ধরেছে। বৃষ্টি কিছুটা কমে এসেছে, আবির শান্ত কন্ঠে বললো,
“চা খাবি?”
মেঘ ঘাড় কাথ করে সম্মতি দিলো। বেশিকরে আদা কুচি দিয়ে দু-কাপ লিকার চা নিয়ে আসছে। এককাপ মেঘকে দিয়ে আবির কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে।
মেঘ চা খাওয়ায় মনোযোগ দিলো, বৃষ্টিতে বসে এভাবে চা খাওয়া এটায় জীবনে প্রথমবার । বৃষ্টির ছোট ছোট ফোঁটা চায়ে পরছে আর মেঘ আপন মনে চা খাচ্ছে ।
হঠাৎ মেঘের অভিমুখে আবির কেমন করে চাইলো, আবির মিহি কন্ঠে ডাকল,
“মেঘ!”
আচমকা আবির ভাইয়ের সুমধুর কন্ঠে নিজের নাম শুনে মেঘ বরফের ন্যায় জমে গেলো। আবিরের তপ্ত দৃষ্টি মেঘের হৃ*দপি*ণ্ডে ক্রমাগত ছু*রি চালাচ্ছে, এই বুঝি ছোট্ট অষ্টাদশীর প্রা*ণ টা দে*হ ছে*ড়ে বেড়িয়ে যাবে। মেঘ কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জবাব দিল,
“জ্বি…!”
আবির তখনও শীতল চাউনিতে মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কয়েক সেকেন্ড পর প্রগাঢ় কন্ঠে শুধালো,
“যদি কখনো এমন হয়, তোর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় দুটা জিনিস থেকে যেকোনো একটাকে বেছে নিতে বলা হয়। তখন তুই কি করবি?”
আবির ভাইয়ের বলা এত কঠিন কথার মানে মেঘ বুঝতে পারছে না। কপাল গুজিয়ে আবির ভাইয়ের দিকে চেয়ে কথাটা বুঝার চেষ্টা করছে। আবির কন্ঠ খাদে নামিয়ে পুনরায় প্রশ্ন করল,
“পারবি তো একটাকে বেছে নিতে? ”
মেঘ নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে। মেঘের মাথায় হাজারটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আবির ভাই তাকে এমন করে কেনো জিজ্ঞেস করছে, ওনি কোথাও গেলে তো আমার পছন্দের সবজিনিস না চাইতেও নিয়ে নেন, বেছে নিতে দেন না। তাহলে কি এমন জিনিস যা একটায় বেছে নিতে হবে। মেঘের নিরুত্তর পরিস্থিতি দেখে আবির মনে মনে বললো,
” যেদিন তুই দুটা প্রিয় জিনিস থেকে একটা বেছে নিতে পারবি, মন শক্ত করে বলতে পারবি এটায় আমার লাগবে, সেদিন তোকে এই প্রশ্ন টা দ্বিতীয় বার করবো। ”
আবির গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
“বাদ দে এসব। আরেক কাপ চা দিতে বলছি তুই চা খা। আমি বাইক টা নিয়ে আসি। ”
আবির আশপাশ দেখে। চায়ের টাকা দিয়ে আরেক কাপ চা দিতে বলে বাইক আনতে চলে গেছে। ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ নিয়ে মেঘকে বাসার সামনে নামিয়ে দিলো।
বরাবরের মতো মেঘ আজও প্রশ্ন করলো,
“বাসায় আসবেন না?”
আবির মৃদু হেসে উত্তর দিলো,
“আসবো একটু পর। তুই সাবধানে রুমে যাস, আঙ্গুলে চাপ যেন না পরে। ”
মেঘ ধীর পায়ে হেঁটে বাড়িতে ঢুকে গেলো। আবির চলে গেলো অজানা গন্তব্যে।
পেইজঃ Salma Chowdhury – সালমা চৌধুরী (scsalma90)
★★★★
আজ মেঘ ইচ্ছে করেই একটু সাজুগুজু করছে। চোখে গাঢ় করে কাজল দিলো, হালকা গোলাপি রঙের রঞ্জক লাগিয়েছে ঠোঁটে। আবির ভাইয়ের পছন্দের রঙ অনুসরণ করে একটা সাদা রঙের ড্রেস পরেছে সাথে সুন্দর হিজাবও পরে নিয়েছে। হুটহাট আবির ভাই কোচিং এর সামনে চলে আসে বিধায় সে সাদামাটায় ঘুরে। তবে আজ আবির ভাইয়ের সাথে ঘুরবে এটা সে আগে থেকেই জানে। তাই সেজেছে।
পরীক্ষা শুরুর আগেই বন্যাকে বলেছে তানভির ভাইয়ার ট্রিটের কথা তবে বন্যা কোনোভাবেই রাজি হচ্ছিলো না। মেঘ জোর করে রাজি করিয়েছে। যথারীতি পরীক্ষা শেষে দুই বান্ধবী রিক্সা করে নির্দিষ্ট জায়গাতে চলে এসেছে। আবির আর তানভির আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলো। মেঘ দূর থেকে আবিরকে দেখেই একগাল হাসলো৷
কাজল কালো সেই ডাগর ডাগর আঁখি আর অকৃত্রিম, মায়াবী হাসি দেখে আবিরের মন উতলা হয়ে উঠেছে। অন্তঃস্থলে শিহরণ জাগছে। বক্ষস্পন্দন জোড়ালো হচ্ছে, আবির ঢুক গিলে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার দৃষ্টি যেনো সরছেই না। আবিরের অশান্ত মনকে শান্ত করার সকল ক্ষমতা বিলীন হয়ে গেছে৷ আবির মনে মনে বিড়বিড় করে বলছে,
“আমায় ধ্বং*স করতে কেনো উঠেপড়ে লেগেছিস?”
মেঘ রা নামতেই তানভির রিক্সা ভাড়া দিয়ে দিলো।
শান্ত কন্ঠে শুধালো,
“আসতে সমস্যা হয় নি তো কোনো?”
দুজনেই মাথা নেড়ে না করলো।
তানভির বন্যার দিকে চেয়ে ছোট করে বলল,
“Congratulation ”
বন্যা হেসে উত্তর দিল,
“Thank You”
তানভির আবিরকে ডাকলো,
“ভাইয়া চলো..!”
তানভিরের ডাকে আবির স্বাভাবিক হলো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“চল।”
কাছেই একটা রেস্টুরেন্টে গেছে খেতে। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে আবির শুধু মেঘকে দেখছে, মেঘ তাকালেই দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে। এই চোখে জাদু আছে যা এই শ্যামবর্ণের, সু*ঠাম দেহি পুরুষকে মূহুর্তেই দূ*র্বল করে দিয়েছে। না পারছে দীর্ঘ সময় ঐ চোখে চেয়ে থাকতে আর না পারছে নিজেকে সংযত রাখতে। অন্যদিকে বন্যা আর তানভিরেরও কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে। তবে চোখে চোখ পরতেই দুজনেই সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। বন্যা সবুজ রঙের একটা ড্রেস পরেছে সাথে হিজাব পরা। এত সাজগোছ নেই, দেখতে খুবই সাদামাটা, গায়ের রঙ ফর্সা হলেও সেটা মেঘের তুলনায় কিছুটা চাপা৷ ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আছে। উচ্চতায়ও মেঘের তুলনায় ১ ইঞ্চি কম হবে। হাসিটা মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর । তবে সচারাচর মেয়েটা হাসে না। বেশিরভাগ সময় সিরিয়াস মুডেই থাকে৷ খাওয়া শেষে বেড়িয়েছে সবাই। মেঘ আর বন্যা দুজনেই তানভিরকে ধন্যবাদ জানালো ট্রিটের জন্য৷
আবির একবার তানভিরের দিকে চেয়ে চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করলো। তারপর আবির গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“তানভির আমি মেঘকে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি। তুই বন্যাকে বাসায় পৌছে দিয়ে তারপর যেখানে ইচ্ছে যাবি৷ ”
তানভির স্বাভাবিক কন্ঠে জানালো,
“ঠিক আছে ভাইয়া।”
মেঘ বন্যাকে টা টা দিয়ে বাইকে বসলো৷ আবির দেরি না করে মেঘকে নিয়ে জায়গা ত্যাগ করলো। আবিররা যাওয়ার পর ই তানভির বাইকে বসে বন্যার দিকে চেয়ে বললো,
“উঠো”
বন্যা ঠান্ডা স্বরে জানালো,
“আমি রিক্সা করে চলে যেতে পারবো। ”
তানভির একটু রা*গী ভাব নিয়ে বললো,
“শুনো নি ভাইয়া কি বলছে? তোমায় বাসায় দেয়ার পর আমার দায়িত্ব শেষ হবে। উঠো। ”
বন্যা আর কথা বাড়ালো না হেলমেট পড়ে, মাঝখানে জায়গা রেখে বাইকে বসলো । পেছন দিকে ধরে রেখেছে৷ তানভির জীবনে প্রথম মেয়েকে নিয়ে বাইক চালাচ্ছে তাই কিছুটা ভ*য়ে আছে৷ এজন্য এত জোরে বাইক চালাচ্ছে না। কিছুটা যাওয়ার পর রাস্তার পাশে বাইক রেখে বললো,
” তুমি একটু দাঁড়াও আমি আসছি৷ ”
বন্যা সাইডে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে তানভির একটা শপিং ব্যাগ বন্যার দিকে এগিয়ে দিলো,
বন্যা জিজ্ঞাসু চোখে চেয়ে বললো,
“কি এতে? ”
তানভির শান্ত স্বরে বলল,
“তোমার রেজাল্টের গিফট। ”
বন্যা কোনোভাবেই নিতে রাজি হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তানভির ধ*মক দিলো,
“বলছি নিতে, নাও ”
বন্যা ভ*য়ে কিছুটা কেঁপে উঠলো। কাঁপা কাঁপা হাতে ব্যাগ টা নিয়ে ছোট করে বলল,
“Thanks”
তানভির মৃদু হেসে আবার বাইকে বসলো। পিচঢালা রাস্তায় বাইক চলছে। বন্যা নিরব, শান্ত মেয়ের মতো চুপচাপ বসে আছে। নিরবতা ভেঙে তানভির বললো,
“গতকাল ভাইয়া আর বনু মিলে আমায় এই বাইকটা গিফট করেছে। কেমন হয়েছে বলো তো?”
বন্যা হাসিমুখে উত্তর দিলো,
“অনেক সুন্দর হয়েছে। ”
তানভির পুনরায় বলল,
“তারজন্যই আজকে ট্রিট দিলাম।”
বন্যা এবার মৃদুস্বরে শুধালো,
“আমায় ট্রিট দেয়ার কি প্রয়োজন ছিল। আমি তো…!”
এটুকু বলতেই তানভির বললো,
“তোমাকে দেয়ার প্রয়োজন ছিল। ঐদিন তোমাদের বাসায় খেয়ে আসলাম৷ তাছাড়া তুমি বনুর বেস্টফ্রেন্ড। আর আমাকে যেভাবে ভাইয়া ভাইয়া ডাকো আমি তো মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে যায় যে আমি কার ভাই। ”
কথাগুলো শুনে বন্যা কিছুটা লজ্জা পেলো তারপরও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো। এরমধ্যে বন্যাদের বাসার গলি পর্যন্ত চলে আসছে। বন্যা তাড়াহুড়ো করে বললো,
“ভাইয়া এখানে নামিয়ে দেন, প্লিজ। ”
তানভির বাইক থামিয়ে বললো,
“আবার!”
বন্যা হেলমেট খুলতে খুলতে তপ্ত স্বরে বললো,
“সরি তানভির ভাই। এখান থেকে হেঁটেই যেতে পারবো। কেউ দেখলে সমস্যা হবে। ”
সমস্যা বুঝতে পেরে তানভির স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“সাবধানে যেও৷ আর পড়াশোনা করো ঠিক মতো। আল্লাহ হাফেজ। ”
বন্যাও আল্লাহ হাফেজ বলে, শপিং ব্যাগ নিয়ে গলি দিয়ে হাঁটছে। তানভির কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে চেয়ে রইলো সেদিকে তারপর আবার বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।
আবির বাসার দিকে না গিয়ে অন্যরাস্তায় যাচ্ছে দেখে মেঘ চিন্তিত স্বরে বললো,
“বাসায় যাবেন না?”
আবির কঠিন স্বরে জবাব দিল,
“বাসায় যাওয়ার এত তাড়াতাড়ি কিসের তোর। ”
মেঘ আর কিছু বললো না। আবির ভাইয়ের কাছাকাছি তো সেও থাকতে চাই কিন্তু তানভিরের সামনে আবির বলেছে, বাসায় চলে যাবে এজন্যই মেঘ জিজ্ঞেস করেছিল। আবির মেঘকে নিয়ে একটা পার্কে এসেছে। পার্কে মানুষের ভিড় দেখে আবির কিছুটা ভী*ত হলো। মেঘের দিকে চেয়ে বললো,
“ঢুকবি নাকি অন্য কোথাও যাবো? ”
মেঘ একগাল হেসে উত্তর দিলো,
“এসেছি যখন তাহলে ঢুকি। ভালো না লাগলে চলে যাব নে। ”
আবির মেঘের হাত ধরে হাঁটছে৷ মেঘ আশেপাশে তাকাচ্ছে আর বার বার আবির ভাইয়ের শক্ত করে ধরে রাখা হাতের দিকে তাকাচ্ছে। এমনভাবে হাত ধরে রেখেছে যেন ছেড়ে দিলেই তার প্রেয়সী হারিয়ে যাবে বহুদূরে। মেঘ সেই হাত ধরা দেখে গতকালের ন্যায় বারবার লজ্জায় আড়ষ্ট হচ্ছে। মেঘ চারপাশে তাকিয়ে দেখছে, কত কত মানুষ, কেউ কেউ পরিবার নিয়ে এসেছে, ছোট বাচ্চা নিয়ে এসেছে, বন্ধুরা মিলে ছবি তুলছে, আড্ডা দিচ্ছে। বেশ কয়েকটা কাপল ও দেখেছে হাত হাত রেখে হাঁটছে।
সেসব দেখে মেঘেরও নিজেকে আবির ভাইয়ের প্রেমিকা মনে হচ্ছে। এটা ভাবতেই লজ্জায় দু গাল লাল হয়ে গেছে, ঠোঁটের মুচকি হাসি যেনো সরছেই না।
একটা ফাঁকা ব্র্যাঞ্চ দেখে আবির মেঘকে ইশারা দিলো বসার জন্য । আবির কিছুটা দূর থেকে একটা আইসক্রিম নিয়ে আসছে।মেঘকে আইসক্রিম দিয়ে মেঘের থেকে কিছুটা দূরে বসেছে আবির।
মেঘ আপন মনে আইসক্রিম খাচ্ছে একবার আবির ভাইকে দেখছে আবার আশপাশ দেখছে।
আবির আচমকা ডেকে উঠলো,
“তাকা এদিকে। ”
হঠাৎ ডাকায় মেঘ কিছুটা কেঁপে উঠেছে। তারপর স্বাভাবিক ভাবে ঘাড় ঘুরিয়ে আবির ভাইয়ের দিকে তাকালো।
আবির ভ্রু কুঁচকে চিন্তিত স্বরে বলল,
“এভাবে সেজেছিস কেনো?”
মেঘ মুভ ভোঁতা করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েক মুহুর্ত পর বললো,
“কই সাজছি। শুধু কাজল আর…!”
এটুকু বলতেই আবির বলল,
“শুধু কাজল টাও আর দিবি না। ”
আবির মনে মনে বলল,
” তোর এই চোখের মায়ায় আমি ছাড়া, আর কাউকে পরতে দিব না । ”
মেঘ আহ্লাদী কন্ঠে শুধালো,
“কাজল দিলে কি আমায় অনেক সুন্দর লাগে?”
আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বললো,
“ঐ যে দূরে গাছটা দেখা যাচ্ছে, ঐ গাছের ঢালে বসে থাকা পে*ত্নী টার মতো লাগে। এজন্যই বলছি কাজল পরে রাস্তাঘাটের মানুষকে ভ*য় দেখাইস না। ”
মেঘ নিচের ওষ্ঠ উল্টে আবিরের দিকে চেয়ে আছে, চোখ পানিতে টইটম্বুর হয়ে গেছে, পল্লব ঝাপটালেই গাল বেয়ে গরিয়ে পরবে। আবির কপাল কুঁচকে চেয়ে আছে।
বিরক্ত নিয়ে বলল,
“তোর সমস্যা কি মেঘ ? কিছু বলার আগেই কা*ন্না করে দেস কেন? এক মিনিট কাঁ*দলে ১ ঘন্টা মাথা ব্যথায় ভুগিস সেটা মাথায় থাকে না?”
মেঘ অবাক চোখ তাকিয়ে ভেজা কন্ঠে প্রশ্ন করল,
“আপনি কিভাবে জানেন আমার মাথা ব্য*থা হয়?”
আবির ঢুক গিলে কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বলল,
” এটা জানা এমন কোনো কঠিন বিষয় না। দূরে ছিলাম মানে এই না যে সব ছেড়ে গেছিলাম। চল বাসায় যায়৷ ”
(চলবে)
গল্প- আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে
পর্ব- ২৭
লেখিকা- সালমা চৌধুরী
সময় চলে যাচ্ছে নিজস্ব গতিতে। মাঝখানে কেটে গেছে বেশকিছুদিন৷ আবিরের ব্য*স্ততম দিন কাটছে। এই সপ্তাহে নির্বাচন তানভিরেরও ব্য*স্ততা বেড়েছে তিনগুণ। নির্বাচনের কাজে এতটায় ব্য*স্ত, কখনো রাত ২-৩ টায় বাসায় ফিরে, কখনো বা ফিরেও না। নিজস্ব বাইক থাকাতে এখন তেমন একটা সমস্যা হচ্ছে না। বাইক কেনার পর বাসায় টুকিটাকি সমস্যা হলেও সবকিছু আবির ই সামলে নিয়েছে৷
আগামী মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশন টেস্ট। তার কিছুদিন পর মেডিকেল পরীক্ষা। কোচিং এর ক্লাস শেষ, এখন শুধু মডেল টেস্ট পরীক্ষা চলছে। ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত কোচিং এর পরীক্ষা হয়, পরীক্ষার পড়া, জান্নাত আপুর পড়া তার সাথে নিজস্ব পড়ার চাপ তো রয়েছেই। তবে সবকিছুর মাঝেও আবির ভাই যেনো মেঘের সমস্ত পৃথিবী ঘিরে রয়েছে। সকাল আর রাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আবিরকে দেখা এখন মেঘের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। শুক্রবারটা শুধু ব্যতিক্রম। তবে শুক্রবারে মেঘ নাস্তা খেতে যাওয়ার আগে চুপিচুপি আবির ভাইয়ের দরজা পর্যন্ত এসে আবির ভাই কে দেখে যায়। ধ*রা পরার ভ*য়ে রুমের ভেতরে ঢুকে না।
আজ আবিরের অফিসে মিটিং আছে। রেডি হয়ে কোনো রকমে হালকা নাস্তা করেই বেড়িয়ে পরেছে। প্রথমে বাবার অফিসের কাজ শেষ করতে হবে৷ ১২ টায় মিটিং টাইম দিয়েছে। ১১.৫০ নাগাদ আবির নিজের অফিসে পৌঁছেছে। রাকিবের পার্সোনাল সমস্যার জন্য এখনও অফিসে আসতে পারে নি।
আবির রাকিবকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করছে,
“কই তুই? আমি কি ওয়েট করবো নাকি মিটিং শুরু করবো?”
রাকিব জ্যামে আঁটকে আছে। ঢাকা শহরের জ্যাম মানে লাগছে তো লাগছেই শেষ আর হবে না। রাকিব ঠান্ডা স্বরে বলল,
“তুই শুরু কর। আমি কাছাকাছি আছি। আসতেছি। ”
আবির আর কথা বাড়ায় নি। জাস্ট ১২ টায় মিটিং শুরু করেছে, ২ মিনিটও হয় নি কথা শুরু করেছে। এর মধ্যে টেবিলে রাখা মোবাইল ফোনে ভাইব্রেশন হচ্ছে৷ বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে ফোনের দিকে তাকাতেই রীতিমতো আশ্চর্য হয়ে গেলো। কাঙ্ক্ষিত নাম্বার থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ে কল চলে আসছে। সহসা আবিরের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠেছে। সামনে বসে থাকা স্টাফ রাও অবাক চোখে সেই হাসি দেখছে। কারণ এই মানুষ টা অফিসে থাকাকালীন ভুল করেও হাসে না। প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কোনো কথা বলে না। গোমড়ামুখো মানুষের হাসি এত সুন্দর হয় তারা হয়তো সেটা ভেবেই চেয়ে আছে৷ আবির ফোন হাতে নিয়েছে, ফোনের স্ক্রিনে নাম ভেসে উঠেছে –
💘হৃদয়হরনী💘
সাথে একটা হাস্যোজ্জল ছবি। নাম্বার টা আরও ১ বছর আগে থেকেই সেইভ করা ছিল আবিরের ফোনে৷কিন্তু এই প্রথমবার কল আসছে।
আবির সবার উদ্দেশ্যে “Excuse me” বলে কল টা রিসিভ করে। বুকের ভেতর হৃ*দপিণ্ড টা খুশিতে ধুকপুক করছে।
আবির কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। এক সেকেন্ডেই আবিরের হাসি গায়েব হয়ে গেছে। বুকের ভেতরটা মো*চড় দিয়ে উঠেছে।
ফোনের ওপাশ থেকে কান্নাজড়িত কন্ঠে ডাকলো,
“আবির ভাই! ”
এই ডাকে আবিরের হৃদয় ভেঙে বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। কপাল কুঁচকে পুরো কন্ঠে প্রশ্ন করল,
“কি হয়েছে তোর? ”
কান্নার তোপে কথা বলতে পারছে না। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে৷ আবির পুনরায় ডাকলো,
“এই মেঘ, কি হয়েছে তোর?”
মেঘ কোনোরকমে বলল,
“একটা ছেলে আমার হাত ধরে…”
এটুকু বলতেই আবার কান্না শুরু করেছে।
আবিরের বুকের ভেতর তান্ডব চলছে, তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়েছে বুকে৷ সেই যন্ত্রণা বুক খুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। হৃদয়ের তোলপাড় চোখে ভাসতে বেশি সময় লাগে নি। চোখের বর্ণ পরিবর্তন হতে শুরু করেছে, ক্ষণিকের ব্যবধানে র*ক্তবর্ণ ধারণ করেছে চোখ৷ রুমে ৩ টা এসি চলছে তারপরও আবির ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
আবির উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
“কোথায় আছিস?”
মেঘ কাঁদতে কাঁদতে জায়গার নাম বললো।
আবির শক্ত কন্ঠে বলল,
“আমি আসছি এখনি। ”
“মিটিং অফ” কথাটা বলেই আবির ভীষণ তাড়াহুড়োতে মিটিং রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে। সবাই আশ্চর্য বনে গেছে। আবিরের চোখ টকটকে লাল হয়ে গেছে। পড়নের ব্লেজার খুলে নিজের রুমের দরজা থেকে ভেতরে ছুঁড়ে ফেলে বের হয়ে যাচ্ছে।
আবিরের PS ছুটে এসে ডাকছে,
“কোথায় যাচ্ছেন স্যার, আজকের মিটিং টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ”
আবির অ*গ্নিদৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
“আমার যাওয়াটা এর থেকেও অনেক বেশি দরকার। আটকিয়ো না আমায়। ”
কথায় রাগের তীব্রতা স্পষ্ট।
PS চিন্তিত স্বরে বলল,
“স্যার, ওখানে একটু পরে গেলে হয় না? অথবা অন্য কেউ গেলে মিটিং টা আপনি করতে পারতেন। ”
আবির রাগান্বিত কন্ঠে হুঙ্কার দিয়ে উঠলো,
“কার বুকে এত সাহস, যে আমার কলিজায় হাত দিছে। ঐ কু*ত্তা*র বা*চ্চারে না মা*র*লে আমার শান্তি হবে না। ”
এরমধ্যে রাকিব অফিসে ঢুকছে। আবিরের চিৎকার শুনে ছুটে আসে৷ আবিরের এত ভ*য়ং*কর রূ*প দেখে ভী*ত স্বরে প্রশ্ন করে,
“মেঘের কিছু হয়ছে? ”
আবির কোনো কথা না বলে রা*গে ক*টমট করতে করতে চলে যাচ্ছে। রাকিব পিছন থেকে ডেকে বলল,
“আমি কি যাব তোর সঙ্গে? ”
আবির শক্ত কন্ঠেই বলল,
“লাগবে না। ”
আবির এক প্রকার দৌড়ে বেড়িয়ে গেছে অফিস থেকে। রাকিব এবার PS এর দিকে চেয়ে শুধালো,
“কি হয়ছে? ”
ছেলেটা শান্ত স্বরে সব বর্ণনা করলো। রাকিব স্বাভাবিক কন্ঠে শুধালো,
“কোনো কথায় মেঘ নাম শুনছো?”
ছেলেটা উপর-নিচ মাথা নাড়লো।
রাকিব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“ভাই, আজ প্রথমবার আবিরের পথ আটকাইছো তাই তোমায় কিছু করে নি। ভবিষ্যতে আর কোনোদিন আবিরকে আটকানোর চেষ্টা করো না। তাহলে ওর সম্পূর্ণ রা*গ তোমার উপর ঝা*ড়বে। আবিরের পৃথিবীর ৯৯.৯৯% জুড়ে শুধু মেঘ। বাকি ০.০১% তার পরিবার, আমরা,অফিস সবকিছু। যা বলছে তাই করো মিটিং অফ রাখো। ”
ছেলেটা ভী*ত কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
“মেঘ কি স্যারের গার্লফ্রেন্ড? ”
রাকিব মৃদু হেসে উত্তর দিলো,
“শুধু গার্লফ্রেন্ড হলে বোধহয় এতকিছু করতো না। আবির বেঁচে আছেই শুধু এই মেঘের জন্য। না হয় কবেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতো। ”
ছেলেটা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে রাকিবের দিকে। রাকিব তা বুঝতে পেরে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“সেসব বাদ দাও। কিন্তু ভবিষ্যতে এমন কাজ আর করো না। অন্ততপক্ষে মেঘের ব্যাপারে তো কোনোদিন নাক গলাবাই না, তাহলে দেখবা তুমি আছো কিন্তু তোমার নাক নেই। সো বি কেয়ার ফুল। যতটা কুল আর শান্ত আবিরকে দেখো সে এতটাও শান্ত নয়। ”
রাকিব চিন্তিত স্বরে বিড়বিড় করে নিজের কেবিনে যাচ্ছে,
“আল্লাহ জানে কোন বি*পদে আছে। ”
জ্যামের জন্য মেইন রোড দিয়ে যাওয়া অসম্ভব, অনেকটা রাস্তা ঘুরে আবির ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছে ।
মেঘ একটা ব্রেঞ্চে বসে কাঁ*দছিল । আশেপাশে ২-৩ টা লোক দাঁড়িয়ে আছে। আবিরকে বাইক থেকে নামতে দেখে মেঘ দৌড়ে গিয়ে আবিরকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করেছে। একটা মেয়ের মনের বিরুদ্ধে কোনো কিছু ঘটলে সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটে আপন মানুষের সামনে৷ মেঘের ক্ষেত্রেও এমনটায় ঘটেছে। আবিরকে দেখে যেনো নিজের প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তাই সব শক্তি ঢেলে কাঁদছে । আবির একহাতে হিজাবের উপর দিয়ে মেঘের মাথা আঁকড়ে ধরে রেখেছে। অন্য হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে আছে।
নিজের সবটা রাগ হজম করে শান্ত স্বরে বললো,
” কিছু হবে না আমি আছি তো। একটু শান্ত হ, প্লিজ। ”
কয়েক মুহুর্ত চলে এই বাঁধহীন কান্না৷ কিছু সময় পর মেঘ বুঝতে পারে, এভাবে আবির ভাইকে জরিয়ে ধরা ঠিক হয় নি । সঙ্গে সঙ্গে মেঘ নিজে থেকে সরে দাঁড়ায়৷ মেঘের কান্না জরিত মুখ আবিরের সত্ত্বাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। মেঘের চোখ মুখ ফুলে গেছে, সারা মুখে র*ক্তচা*প বেড়ে গেছে যার ফলে গাল, নাক, থুতনি সব লাল হয়ে আছে।
আবির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, দু হাতে মেঘের চোখ মুছে ভারী কন্ঠে শুধালো,
“কোন ছেলেটা?”
মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। আবিরের চোখ ও সেদিকে পরেছে। একটা ছেলে গাছের দাঁড়িয়ে আছে। তাকে ঘিরে ৪-৫ জন লোক দাঁড়িয়ে আছে। আবির কোনো কথা না বলে, ছেলের কাছে গিয়ে এলোপাতাড়ি ঘু*ষি, লা*ত্থি শুরু করেছে। আচমকা আক্রমণে ছেলেটা বেসামাল হয়ে গেছে। আশেপাশে থাকা ৪-৫ জন ভ*য়ে কিছুটা দূরে সরে গেছে। আবিরের রা*গান্বিত চাউনি আর মুখ দেখে তারা যেনো আটকাতেও সাহস পাচ্ছে না। মেঘ বিষ্ময় চোখে আবির ভাইয়ের পানে চেয়ে আছে, আবির ভাইয়ের এই রূপ জীবনে প্রথমবার দেখছে। বাসায় কয়েকবার শুনেছে আবির ভাই মা*রপি*ট করেছে কিন্তু আজ তা নিজের চোখে দেখছে। থ*রথ*র করে কাঁপছে অষ্টাদশীর ছোট দেহ। ছেলেটার নাক-মুখ দিয়ে র*ক্ত গরিয়ে পরছে, কিন্তু আবির এক সেকেন্ডের জন্যও থামছে না। ছেলেটা প্রথম কয়েকবার আটকানোর চেষ্টা করলেও এখন তার নিথর দেহ পরে আছে। এই সময় পুলিশে গাড়ি এসে থামে। দুজন কনস্টেবল গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত এসে আবিরকে আটকানোর চেষ্টা করছে। ৪-৫ জন লোকের মধ্যে একজন এসপি স্যারের কাছে গিয়ে বলে,
“স্যার আমিই আপনাকে কল করেছিলাম। কিন্তু হুট করে এই ছেলে এসে এভাবে মা*রতে শুরু করেছে। ”
এসপি স্যার দ্রুত আবিরের কাছে গিয়ে বলে,
“থামুন আপনি। এভাবে মারছেন কেনো? আমাদের বিষয়টা দেখতে দিন। ”
দুই কনস্টেবলের সাথে আরও কয়েকজন লোক আবিরকে টেনে হিঁচড়ে ছেলেটার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। এসপি স্যার ছেলেটাকে একটু দেখে তারপর আবিরের দিকে তাকায়। সঙ্গে সঙ্গে কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করে,
“তুমি ইকবালের ভাইপো না?”
আবির তখনও রাগে ফুঁ*সতে। দাঁতে দাঁত চেপে রা*গ হজম করার চেষ্টা করছে তার সাথে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে । এসপির কথা শুনে, ওনার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে উত্তর দেয়,
“জ্বি। ”
এসপি এবার স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“তুমি বিদেশ ছিলে না এতবছর? আবির ই তো নাম তোমার? ”
আবির কপাল কুঁচকে পুনরায় উত্তর দেয়,
“জ্বি। ”
এসপি মৃদু হেসে বলে,
“আমি ইকবালের কলেজ ফ্রেন্ড। ছোট বেলায় তোমাদের বাসায় অনেকবার গিয়েছি। এখনও ইকবালের সাথে মাঝে মাঝেই কথা হয় আমার।
তা তুমি এই ছেলেকে এভাবে মা*রছিলে কেন?”
আবির ঘাড় ঘুরিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়েছে, মেঘ নিশ্চুপ, বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে বৃহৎ চোখে চেয়ে আছে, শরীরের কম্পন এখনও তীব্র। আবিরের সাথে সাথে এসপি ও ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো মেঘকে৷
আশেপাশের লোক বলছে,
“স্যার ঐ মেয়েটার সাথেই অস*ভ্যতা করেছে ছেলেটা৷ ”
এসপি আবিরের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,
” তোমার বোন?”
আবির মেঘের দিকে চেয়েই উত্তর দিল,
“চাচাতো বোন। ”
এসপি একবার ছেলেটাকে দেখছে, আশেপাশে মানুষের কথা শুনছে। তারপর আবিরকে কিছুটা সরিয়ে সাইডে নিয়ে বলল,
“তোমরা আমার পরিচিত। আমি চাই না এই বয়সে তোমরা কোনো কেইসে ফেঁ*সে যাও। সামনে তোমাদের ভবিষ্যৎ আছে। আর ওরা নে*শাখো*র, ওদের বড় বড় লোক আছে। আমরা ঐ গ্যাং টা ধরার চেষ্টা করছি। তাদের ধরতে পারলে, এরা কিছুই না। তাই বলি তুমি তোমার বোনকে নিয়ে চলে যাও। বিষয়টা আমি দেখছি। ”
আবি কথাগুলো শুনলো, দুহাত এখনও মুষ্টিবদ্ধ করে ক*টম*ট করছে। বুঝতে পারলো এখানে কিছু বলে লাভ নেই। তাই কথা না বলেই মেঘের কাছে চলে গেছে। এসপি আর দুই কনস্টেবল আহত ছেলেটাকে নিয়ে থানায় চলে যাচ্ছে ।
আবিরের এলোমেলো চুল, ঘামে ভেজা শার্ট শরীরের সাথে চেপে আছে, চোখ মুখে ঘাম আর রা*গ দুটায় জ্বলজ্বল করছে। চোখ এখনও লাল রঙা হয়ে আছে৷ কয়েক সেকেন্ড মেঘের কাঁপা কাঁপি দেখে আবির চলে গেলো। দোকান থেকে একটা পানির বোতল কিনে নিজের চোখে মুখে পানি দিলো,সাথে মাথায় কিছুটা পানি ঢেলে রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।
মেঘের কাছে গিয়ে তপ্ত স্বরে বলল,
“নে পানি খা। ”
মেঘ আবিরের দিকে চেয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে বোতল টা নিলো। আবিরের চুলের পানি মুখে পরছে, মুখ থেকে পানি শরীরে, নিচে টুপটুপ করে পরছে। । মেঘ নির্বোধের ন্যায় চেয়ে আছে। আচমকা আবির একটু নিচু হয়ে মেঘের ওড়নার মাথা টেনে নিজের মুখ আর চুল মুছতে শুরু করেছে।
আবিরের এমন কান্ডে মেঘ যেনো আশ্চর্য বনে গেলো । আবির চোখ মুখ মুছে পুনরায় মেঘের দিকে চেয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
“মনে কর তুই কিছু দেখিস নি। এখন একটু পানি খা। ”
মেঘ ঢকঢক করে কিছুটা পানি খেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ছেলেটার আচরণে যতটা ভ*য় পেয়েছিল তার থেকেও তিনগুণ ভ*য় পেয়েছে আবির ভাইয়ে পে*টা*নো দেখে। তখনই রাকিব কল করেছে, আবির কল রিসিভ করে ঠান্ডা ক*ন্ঠে বলল,
“বল!”
রাকিব চিন্তিত স্বরে শুধালো,
“ঝা*মেলা কি বেশি? আমি আর রাসেল কি আসবো?”
আবির ভারী কন্ঠে বলল,
“না আসতে হবে না। আমি চলে আসবো। ”
রাকিব,
“তাহলে কি মিটিং ডাকবো?”
আবির মেঘের দিকে চেয়ে ২ সেকেন্ড ভেবে জানালো,
“হ্যাঁ৷ আসতেছি আমি।”
রাকিব চিন্তিত স্বরে পুনরায় প্রশ্ন করলো,
“মেঘ কোথায়?”
আবির জবাব দিল,
“আছে, এখানেই।”
রাকিব মৃদু হেসে প্রশ্ন করলো,
“মেঘকে নিয়ে আসবি অফিসে?”
আবির
“হ্যাঁ , রাখছি। ” বলে কল কেটে দিয়েছে।
আবির ফোন পকেটে রাখতে রাখতে স্বভাব-সুলভ ভারি কন্ঠে শুধালো,
“এখন বাসায় না গেলে কি খুব সমস্যা হবে? আমার একটা মিটিং আছে। মিটিং শেষ করে তোকে বাসায় দিয়ে আসলে চলবে?”
মেঘ ঘাড় কাথ করে সম্মতি দিলো। তারপর অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেছে। অফিস গেইটের সামনে আসতেই রাকিব আর রাসেল একটা তাজা ফুলের তোড়া নিয়ে হাজির হলো,
মেঘের দিকে চেয়ে, তোড়া এগিয়ে দিয়ে হাসিমুখে রাকিব বলল,
“ওয়েলকাম, ম্যাডাম। ”
মেঘ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
“আমি ম্যাডাম হলাম কিভাবে? আমি তো… ”
এতটুকু বলতেই আবির ধমকে উঠলো,
” যা দিচ্ছে নে। এত কথা বলতে হয় কেন?”
মেঘ আর কথা বাড়ালো না চুপচাপ ফুলের তোড়া নিলো। তারপর আবিরের পেছন পেছন আবিরের কেবিনে চলে গেলো। আবির কেবিনের দরজা আটকে বলল,
“হিজাব খুলে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আয়৷ ”
মেঘ কিছুক্ষণের মধ্যে হাতমুখ ধৌয়ে, হিজাব খুলে চুল ঠিক করে বেড়িয়ে এসেছে। আবির টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে ল্যাপটপে কিছু একটা চেক করছিলো৷ মেঘ রুমে আসতেই আবির নিজের চেয়ার দেখিয়ে বলল,
“বস এখানে। ”
মেঘ বিড়বিড় করে বলল,
“এটা তো আপনার চেয়ার। ”
আবির চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই মেঘ মাথা নিচু করে চুপচাপ আবিরের চেয়ারে বসে পরলো। আবির ২ মিনিট ল্যাপটপে কাজ করে, ভারী কন্ঠে বলল,
“আমি শাওয়ার নিতে যাচ্ছি। কেউ ডাকলে দরজা খুলার দরকার নেই। তুই নিজের মতো রেস্ট নে। ”
আবির ৫ মিনিটে শাওয়ার নিয়ে কোমড়ে টাওয়েল জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়েছে। চোখে মুখে চি*ন্তার ছাপ। আচমকা আবিরকে এভাবে দেখে মেঘের বুকটা কেঁ*পে উঠলো। উন্মুক্ত শরীর, শুধু কোমড় থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঢাকা। মেদ হীন পেটে সিক্স প্যাকের হালকা চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। শরীরে থাকা বিন্দু বিন্দু পানির কণাগুলো চিকচিক করছে। তা দেখে মেঘের হৃৎস্পন্দনের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। আবির এসে চেয়ারের দু হাতল চেপে মেঘের ঘনিষ্ঠ হয়ে মেঘের দিকে তাকালো। মেঘও বিস্ময় চোখে চেয়ে আছে আবিরের চোখের দিকে। এই চোখের ক্রো*ধ এখনও কমে নি। এত কাছে আসাতে, আবিরের নিঃশ্বাস ছুঁয়ে দিলো মেঘের লালিত মুখমণ্ডল। মেঘের রক্তসঞ্চালন বেড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মেঘের শিরা-উপশিরায় তু*ফান চলছে।
আবিরের দৃষ্টি মেঘের নেত্রে নিবদ্ধ। কন্ঠ চারগুণ ভারি করে শুধালো,
“ঐ ছেলে তোর হাত ছাড়া অন্য কোথাও ছুঁয়েছিল?”
আবিরের প্রশ্ন মেঘের কর্ণপাত হলো কি না কে জানে, খানিকটা সময় সময় পর মেঘ চিবুক নামাতে নিলে, আবির দু আঙুলে আটকে দেয়। মেঘ পুনরায় আবিরের মুখের পানে তাকায়, চোখে মুখে ক্রো*ধ স্পষ্ট। আবির পুনরায় রা*গান্বিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
“বল শুধু আর কোথায় ছুঁয়েছে, ঐ কু*ত্তা*র বা*চ্চা*রে জ্যা*ন্ত ক*ব*র দিয়ে আসবো। ”
আবির ভাইয়ের মুখে ভ*য়ংক*র কথা শুনে মেঘের শরীর কেঁপে উঠলো । ঢুক গিলে, কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল,
“আর কোথাও ছুঁয় নি। ”
আবির ভারী কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
“সত্যি তো?”
মেঘ আস্তে করে বলল,
“সত্যি”
এরমধ্যে দরজায় রাসেল ডাকছে,
“আবির, মিটিং এর সময় হয়ে যাচ্ছে। ”
আবির এবার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেঘের থেকে দূরে সরে দাঁড়ালো । টেবিলের উপর রাখা ফোনে টাইম দেখে নিলো। একটা শার্ট আর প্যান্ট পরে রেডি হয়ে চলে যাচ্ছিলো, দরজা পর্যন্ত গিয়ে থমকে দাঁড়ালো। মেঘের দিকে চেয়ে বলল,
“দরজা টা ভেতর থেকে ব*ন্ধ করে রাখ। কফি আর নাস্তা দিতে বলে যাচ্ছি। দরজা থেকেই নিবি,কেউ ভেতরে যেনো না ঢুকে। আমি মিটিং শেষ করে আসছি। ”
আবির চলে গেছে কিছুক্ষণের মধ্যেই আবিরের PS কিছু খাবার আর এক কাপ কফি নিয়ে আসছে। মেঘ নাক পর্যন্ত ওড়না টেনে, মাথা নিচু করে খাবার গুলো নিলো। তারপর দরজা বন্ধ করে। ওড়না সরিয়ে রুমটা ভালোভাবে দেখছে । দেয়ালে কিছু কিছু মোটিভেশন লেখা, তার সাথে একটা দেয়ালে দুটা হাতের ছবি আঁকা। যে ছবিটা আবির ভাইয়ের ফোনে মেঘ দেখেছিলো। একটা বড় হাতের উপর একটা পিচ্চির হাত শক্ত করে ধরা৷ নিচে দুটা লাইনও লেখা,
“আমার দেহে প্রাণ আছে যতদিন,
এই হাত ছাড়বো না আমি ততদিন।”
তার নিচে 🖤D🖤 এভাবে লেখা।
অক্ষর দেখে মেঘ কপাল কুঁচকে চেয়ে আছে। মাথায় কিছুই ঢুকছে না। D দিয়ে কার নাম হতে পারে। মেঘের নাম M দিয়ে, জান্নাত আপুর নাম J দিয়ে। মেঘ বিড়বিড় করে বলল,
“তাহলে কি জান্নাত আপুর অন্য নাম আছে?”
(চলবে)