গল্প- আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে
পর্ব- ০৮
লেখিকা- সালমা চৌধুরী
“মনের উপর কারও হাত নেই। মনকে আমি যা বুঝাবো আমার মন তাই বুঝবে” এই স্লোগান দিতে দিতে নিজেকে শক্ত করলো মেঘ।
আজকে সে ফজরের আজানের সময় উঠেছে৷ রাতে এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়েছিল। দিন যত যাচ্ছে পরীক্ষা তত কাছে আসছে। যেভাবেই হোক চান্স পেতে হবে। প্রথম টার্গেট মেডিকেল, দ্বিতীয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এজন্য সবই পড়তে হচ্ছে তাকে।
নামাজ পরে পড়তে বসেছে মেঘ। ৭-৭.৩০ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। সকালে খালি পেটে বেশিক্ষণ থাকা ক*ষ্টকর তাছাড়া পড়াশোনা করলে আরও বেশি খুদা পাই। গতকাল সন্ধ্যায় খেয়েছিল সারারাত কিছু খাই নি৷ খুদায় চু চু করছে পেট। দৌড়ে নিচে গেলো মেঘ…
মেঘের দৌড় দেখে ভ*য় পেয়ে গেলেন হালিমা খান, ওনিও রান্নাঘর থেকে ছুটলেন।
হালিমা খান: “কি হয়ছে তোর, এভাবে ছুটছিস কেন?”
মেঘ: “আমার খুব খুদা পাইছে আম্মু তাড়াতাড়ি খেতে দাও।”
হালিমা খান: তুই কখন উঠেছিস?
মেঘ: ফজরের সময় উঠেছি তারপর পড়াশোনা করেছি। তাড়াতাড়ি খেতে দাও আমায়.।
হালিমা খান যেনো খুশিতে গদগদ হয়ে গেলেন। ওনার মেয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দিচ্ছেন সাথে খাওয়া দাওয়াতেও। এ তো প্রতিটা মায়ের ই প্রধান ইচ্ছে। ওনি ছুটে গেলেন রান্নাঘরে। মেঘের পছন্দের সব খাবার হাজির করলেন মেয়ের সামনে।
মেঘ খুদার তাড়নায় ঝটপট খাবার শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো৷ আজকে তার কোচিং, প্রাইভেট কিছু নেই। সন্ধ্যায় শুধু শাহরিয়ার ভাইয়া পড়াতে আসবেন। সারাদিনের একটা রুটিন করে নিলো মেঘ। টার্গেট সেট করে পড়াশোনা করলে পড়াশোনা তাড়াতাড়ি এগোয়৷
পেইজঃ গল্প কথা (golpokotha70)
★★★★
এদিকে ৮ টার পর বাড়ির সবাই খেতে বসেছে। আবির একেবারে রেডি হয়ে নেমেছে। চেয়ার টেনে বসতে বসতে নজর পরে, সামনের চেয়ার টা ফাঁকা। নিষ্পলক তাকিয়ে কয়েক সেকেন্ডে স্বাভাবিক হয়ে খাওয়া শুরু করে।
ইকবাল খান জিজ্ঞেস করলেন, “মেঘ কোথায়, উঠেনি এখনও? ”
হালিমা খান প্রফুল্ল মেজাজে উত্তর দিলেন,
“ও নাকি সেই ভোর বেলা উঠেছে। পড়তে পড়তে খুদা লাগছে তাই কিছুক্ষণ আগেই খেয়ে গেলো। ”
আলী আহমদ খান শীতল কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,
“শাহরিয়ার কি গতকাল এসেছিল?”
হালিমা খান পুনরায় উত্তর দিলেন, “গতকাল আসে নি তো ভাইজান, মেঘ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছে। ”
আলী আহমদ খান স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,
“হয়তো কোনো সমস্যা আজ আসবে নিশ্চয়ই”
কেউ আর কোনো কথা বললো না,চুপচাপ খাওয়াতে ব্যস্ত সকলে।
কিছুক্ষণ পর খাওয়া শেষে উঠে চলে গেলেন বাড়ির কর্তারা। বসে আছে নাকি চার ভাই বোক। মীম আর আদি খুনসুটি করে খাওয়াতে ব্যস্ত।
তানভির হঠাৎ আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভাইয়া তোমার কি কিছু হয়ছে?”
আবির নড়েচড়ে বসেছে, মুখ গোমড়া করে উত্তর দিলো, “কিছু হয় নি”৷
তানভির আর কথা বাড়ায় নি চুপচাপ নিজের খাওয়া শেষ করলো।
এদিকে নিজের খাবার শেষ করে, ফ্রেশ হয়ে আবিরও অফিসে চলে গেলো। বাকিরাও নিজেদের কাজে ব্যস্ত হলো।
পেইজ: গল্প কথা (golpokotha70)
★★★★
সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে সকলেই বাড়ি ফিরলো, ফিরলো না কেবল আবির।
আগামী মাস থেকে আবিরের নতুন কোম্পানি শুরু হবে সেই কাজেই ব্যস্ত সে। সারাদিন বাবার কোম্পানির কাজ সামলে সন্ধ্যার পর প্রায় ই এসে দেখতে হয় নিজের অফিসের কাজ কর্ম । সাথে তার আরও দুজন বন্ধু আছে। একজন রাকিব আরেকজন রাসেল । আবিরের পরেই তাদের পোস্ট আবির এর অবর্তমানে তারাই সামলাবে কোম্পানি । কয়েক বছর যাবৎ আবিরের সাথে প্ল্যান করে রেখেছিল এটারই পূর্ণতা পেতে চলেছে।
(golpokotha70)
★★★★
এদিকে গতকালের ন্যায় আজও পড়ার রুমে অপেক্ষা করছে মেঘ। কিন্তু শাহরিয়ার ভাইয়া আসার কোনো খবর নাই। এই পৃথিবীতে কারো জন্য অপেক্ষা করা হলো সবচেয়ে ক*ষ্টের কাজ এটা মেঘের অভিমত। তাই রা*গে ফুঁ*সতে ফুঁ*সতে বড় আব্বুর কাছে দাঁড়ালো।
আলী আহমদ খান সোফায় বসে কফি খেতে খেতে টিভি দেখছিলেন।
মেঘ জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো বড় আব্বুর দিকে তারপর আস্তে করে বললেন, “ভাইয়া কি পড়াতে আসবেন না?”
আলী আহমদ খানের মনোযোগ সরলো টিভির দিক থেকে৷ এক পলক তাকালো মেঘের দিকে তারপর পকেট থেকে ফোন বের করে ডায়েল করলেন শাহরিয়ারের নাম্বারে। প্রথমবার রিসিভ হলো না। দ্বিতীয় বার রিসিভ হলো,
আলী আহমদ খানঃ তুমি আসছো না কেনো? পড়াবে না?
শাহরিয়ার শীতল কন্ঠে উত্তর দিলো, “আংকেল আমার জন্য বাসাটা দূরে হয়ে যায়। সময় মেইনটেইন করাও একটু সমস্যা তাই আমি আর আসতে পারবো না। সরি। ”
আলী আহমদ খানঃ তাহলে তুমি এই কথাটা প্রথম দিন ই জানাতে পারতে।।
শাহরিয়ার গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো, “একটু অসুস্থ ছিলাম আংকেল, হাসপাতাল থেকে আজই ফিরেছি। আপনাকে সময় করে ফোন দিতাম আমি। ”
আলী আহমদ খান: কি হয়েছে তোমার?
শাহরিয়ারঃ “তেমন কিছুটা, হালকা ব্যথা পেয়েছি। দোয়া করবেন আংকেল, আল্লাহ হাফেজ। ”
আলী আহমদ খান :” সাবধানে থেকো। আল্লাহ হাফেজ। ”
আলী আহমদ খান মেঘকে জানালেন পড়াবে না, মেঘ কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সোফার পাশে৷
তখন ই সিঁড়ি দিয়ে নামছিল তানভির, মেঘের কাছে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, “এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
মেঘ মাথা নিচু করো, পাতলা অধর নেড়েচেড়ে বলে, “শাহরিয়ার ভাইয়া পড়াবেন না আমায়!”
তানভির:” তাতে মন খারাপ করার কি আছে? মানুষের সমস্যা থাকতেই পারে! ”
মেঘ চোখ তুলে তাকালো ভাইয়ের পানে,
তানভির বড় আব্বুর দিকে তাকিয়ে পুনরায় বললো, “আমার একজন পরিচিত আপু আছে, ওনিও ভালো পড়ান জানি, আপনি অনুমতি দিলে আমি কি কথা বলে দেখবো?”
আলী আহমদ খান তানভিরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন,” হয়তো মনে মনে ভাবলেন যেই ছেলে জীবনে পড়াশোনায় করে না সেই ছেলে আবার বোনের জন্য টিউটর খোঁজছে।”
মুখ ফোটে বললেন, ‘দেখো তোমার মতো গর্দ*ভ হয় না যেনো’
তানভির হাসি মুখে বললো এবার, ‘২-১ দিন পড়ার পর মেঘের যদি মনে হয় পড়বে তাহলেই ফিক্সড করবো’
আলী আহমদ খান এবার যেনো স্বস্তি পেলেন, সহজভাবেই বললেন,” ঠিক আছে কালকেই আসতে বলো তাহলে”
তানভির আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।
মেঘ ও নিজের মতো বই খাতা নিয়ে রুমে চলে গেলো।
পেইজ: গল্প কথা
★★★★
আজ মঙ্গলবার, মেঘ রেডি হয়ে একেবারে নিচে নামলো, ক্লাসের টাইম ৩০ মিনিট এগিয়ে দিয়েছে তাই তাড়াতাড়ি যেতে হবে। খাবার টেবিলে বসে তাড়াহুড়োয় খাবার খাচ্ছে মেঘ। সামনের চেয়ার ফাঁকা এতেই যেনো মেঘের স্ব*স্তি কাজ করছে। রবিবারের ধ*মক খাওয়ার পর থেকে মেঘ ইচ্ছে করেই আবির ভাইয়ের থেকে দূরে দূরে থাকতে চাই।
এদিকে আবির ৮ টার দিকে না খেয়ে অফিসে চলে গেছেন। নিজের অফিসে কাজ শেষ করে তারপর বাবার অফিসে যাবে।
মেঘ ও খাওয়া শেষ করে কোচিং এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
২ টায় মেঘ কোচিং থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসেছে। ২ লুকমা মুখে তুললেই কারো পায়ের শব্দে ফিরে তাকায় মেঘ। আবির ভাই খাবারের টেবিলের দিকে আসছেন, মেঘ গলায় খাবার আটকে গেছে, গিলতে পারছে না মেয়েটা। কোনোরকমে পানি দিয়ে খাবার টা গিললো। এদিকে আবির বেসিন থেকে হাত ধৌয়ে এসে মামনিকে বললো খাবার দিতে,
বসলো গিয়ে মেঘের বিপরীতে রাখা চেয়ারটাতে।
মেঘের চিবুক নামলো গলায়, দৃষ্টি তার প্লেটের দিকে, মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছে মেয়েটা, হাত পা কাঁ*পাকাঁ*পি শুরু হয়ে যাচ্ছে। ২ দিন পালিয়ে থেকেও লাভ হলো না।
বার বার কানে বাজছে রবিবারের সেই কথাটা “এমন থা*প্পড় দিব যার দাগ ১ মাসেও যাবে না”
কে চাই স্বেচ্ছায় মা*ইর খেতে, কোনোরকমে খেয়ে সরে পরলেই বাঁ*চে সে। খাওয়ার গতি বাড়ালো, নাকে মুখে খাবার ঢুকাচ্ছে মেঘ।
আবির ক্ষি*প্ত দৃষ্টিতে তাকালো মেঘের দিকে, গম্ভীর গলায়, কপাল কুঁচকে বললো,
“কি হয়েছে তোর?”
মেঘের নি*শ্বাস আটকে আছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। সারাশরীরের কম্পনের মাত্রা তীব্র হলো এজন্য কথা বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে, কিন্তু আজ তাকে বলতে হবে, হি*টলারের মুখোমুখি হতে হবে তাকে।
নিজেকে নিজে সাহস দিলো,
মেঘের সরল স্বীকারোক্তি, “কিছু হয় নি আমার।”
আবির কিছু বলতে গিয়েও গিলে ফেললো কথাটা, এরমধ্যে হালিমা খান আবিরের খাবার নিয়ে এসেছেন। আবির খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন।
হালিমা খান আবিরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “সকালে কিছু খেয়েছিলি বাবা?”
আবির গুরুভার কন্ঠে উত্তর দিলো, “খায় নি”
হালিমা খান কিছুটা চিন্তিত কন্ঠে বললেন, “সকালে খেয়ে গেলেই পারতিস, একটু দেরি হলে না হয় হতো!”
আবির কোনো উত্তর দিলো না।
মেঘ মনে মনে ভাবছে, আমায় যে লোক হু*মকি দেয়, “ঠিকমতো খেতে হবে”, সে নিজে যখন না খেয়ে থাকে তখন তাকে কেনো কেউ ধম*ক দেয় না। সব দোষ এই মেঘের। থাক*বোই না এই বাড়িতে৷ উঠতে চাই টেবিল থেকে তৎক্ষণাৎ চোখ পরে আবির ভাইয়ের দিকে, আবির মাথা নিচু করে খাচ্ছে। এখন উঠতে গেলেই নিশ্চয় ধ*মক দিয়ে আবার বসাবেন, কে জানে আবার থা*প্পড় ই মা*রেন কি না। এসব ভেবে মেঘ আবার বসে দ্রু*তগতিতে খাওয়া শুরু করে।
আবির ভাই রাগে একপ্রকার চিৎকার দিয়ে উঠলেন,
“একটা থা*প্পড় দিব তোকে, এভাবে খাচ্ছিস কেন?”
মেঘ থমকে গেলো, ধ*মক খেয়ে চোখ টলমল করছে তার, মুখের ভাত গুলো কোনোরকমে গিললো,
মনে মনে ভাবলো, “আমাকে থা*প্পড় দেয়ার এত ইচ্ছে আপনার?”
আবিরের থা*প্পড়ের ভয়ে ২ দিন যাবৎ খাবার টেবিলে সবার সাথে খায় না মেয়েটা। কে জানতো এই দুপুর বেলা আবির ভাই অফিস থেকে বাসায় চলে আসবে। জানলে হয়তো আগে খেয়ে নিতো না হয় আবির ভাই খাওয়ার পর খেতে আসতো।
কেনো এই মানুষ টা তার সামনে আসে। কেনোই বা এত রা*গ দেখায় ভেবে পায় না মেঘ। হঠাৎ মনে পরে যায় ঘুম থেকে উঠে বলা,স্লোগান টা। মনের উপর কারো হাত নেই। মেঘ ভয় পাবে না আবিরকে।
তারপর স্বাভাবিক ভাবে প্লেটের ভাতগুলো শেষ করে হাত ধৌয়ে সিঁড়ি দিকে যেতে নেয়, সোফার কাছে পর্যন্ত যেতেই মীম আর আদি দৌড়ে এসে জাপ্টে ধরে মেঘকে৷ আকস্মিক ঘটনায় কিছুটা ঘাবড়ে গেলো মেঘ,তারপর স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
” কি হয়েছে তোদের?”
মীম ফিসফিস করে মেঘকে বললো, “আপু প্লিজ আবির ভাইয়াকে বলো না আমাদের নিয়ে বাইকে ঘুরতে, কখনো বাইকে উঠি নি প্লিজ বলবা!”
মেঘ কোনো কিছু না ভেবেই বললো, “আমি বলতে পারবো না।”
আদিঃ প্লিজ প্লিজ প্লিজ আপু। আমরা বলার সাহস পাচ্ছি না। প্লিজ তুমি একটু বলো না প্লিজ।
মেঘ আবারও গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো, ” আমি পারবো না বলতে। তোদের ঘুরতে ইচ্ছে করে তোরা বল। ”
মেঘ মনে মনে ভাবছে, “তোরাই সুখে আছিস আমাকে তো উঠতে বসতে মা*রার হুম*কি দিচ্ছে! আমি এবার এটা বললে নিশ্চিত এখনই খাবো থাপ্প*ড় টা।”
আবিরের খাওয়া শেষ এদিকে আসতে দেখে মেঘ চাইলো সে তাড়াতাড়ি রুমে চলে যাবে।
কিন্তু আদি আর মীম আরও করুন স্বরে বলছে, “প্লিজ তুমি বলো না। ”
এবার মেঘ রেগে কটমট করে বলে, “আমি বললাম তো পারবো না।।”
মীম আর আদি যেন চুপসে গেলো।
মেঘ আর এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না। সিঁড়ি দিয়ে উঠায় ব্যস্ত।।
আবির বিষয়টা লক্ষ্য করেছে, আবির আদিকে জিজ্ঞেস করে,
“কাকে কি বলতে বলছিস ওকে?”
মীম শ্বাস টেনে সাহস নিয়ে বললো, “ভাইয়া আমাদের আপনার বাইকে নিয়ে ঘুরাবেন প্লিজ?”
মেঘ সিঁড়িতে উঠতে উঠতে ফিসফিস করে বলছে, “হিট* লার নিবে বাইকে তোদের? সেগুরে বালি৷”
আবির কন্ঠ তিনগুণ ভারি করে উত্তর দিলো,
“আমার বাইকে কাউকে উঠাবো না,
কিছুদিন পর তানভির কে বাইক কিনে দিব। তখন ও তোদের নিয়ে ঘুরবে। ”
আদি অকস্মাৎ প্রশ্ন করে বসলো,
“তুমি তানভির ভাইয়াকে নিয়ে ঘুরো না?”
আবির এবার স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো, “এখনও তানভির আমার বাইকে উঠে নি! তবে ভবিষ্যতে উঠতে পারে । ওর সাথে তোদের কি সম্পর্ক?”
মীম আর আদি বোবা হয়ে রইলো।
মেঘের কথা ফলে যাওয়াতে নিজেকে নিয়ে গর্ব করতে করতে রুমের দিকে যাচ্ছে আর ভাবছে দুই ভাইয়ের গলায় গলায় সম্পর্ক অথচ বাইকে উঠার পারমিশন দেয় নি ছি: সহসা অভিব্যক্তি পাল্টালো মুখের৷ বিড়বিড় করে বললো হিট*লারের থেকে ভালো আর কি আশা করা যায়?
রুমে গিয়ে সোজা শুয়ে পরলো মেঘ। ফোনটা হাতে নিলো। এই ২-৩ দিনে একবারের জন্য ও ফে*সবুকে ঢুকে নি সে।
মন খারাপ কাটাতে ঢুকলো ফে*সবুকে, কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরির পর একটা পোস্ট সামনে আসছে
১ দিন আগে আবির ভাই ফেসবুক একটা অসম্ভব সুন্দর ছবি আপলোড দিয়েছেন সাথে ছোট করে ক্যাপশন লিখেছেন
“শূন্যতা আমায় ঘিরে আছে,
আর আমি ঘিরে আছি মোহে”
মেঘ ছবিটা দেখে যতটা খুশি হলো তার থেকে বেশি চিন্তিত হলো ক্যাপশনে কি বুঝিয়েছেন ওনি তা ভাবতে। সে ক্যাপশন বুঝার চেষ্টায় মগ্ন হলো,
“ওনি কি তাহলে সত্যি কারো সাথে রিলেশনে আছেন!? ”
তৎক্ষণাৎ উত্তর আসলো মনের ভেতর থেকে, “”ওনি প্রেম করলে তোর কি, তোরে যে উঠতে বসতে থা*প্পড় দে*য়ার ভ*য় দেখায়, তোর লজ্জা করে না এই হি*টলার কে নিয়ে ভাবতে!!!””
সঙ্গে সঙ্গে ডাটা অফ করে ফোন রেখে দিলো মেঘ, সত্যি ই তো, সে তো আবির ভাইয়ের উপর রা*গে আছে তাহলে আবার আবির ভাইকে নিয়ে ভাবছে কেনো..!
এদিকে আবির ভাই রুমে এসে ৫-১০ মিনিট রেস্ট নিয়ে নিজের ল্যাপটপ আর কিছু কাগজপত্র নিয়ে বেরিয়ে পরেছে৷
পেইজ: গল্প কথা(golpokotha)
★★★★
সন্ধ্যায় মেঘের নতুন টিউটর এসেছে। বয়স এত বেশি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সে পড়াশোনা করছেন এবার ৩য় বর্ষে আছেন। দেখতে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দরী, গোলগাল চেহারা, বোরকা পরে হিজাব পরে এসেছেন। গুছিয়ে কথা বলেন, সুন্দর করে বুঝিয়ে পড়িয়েছেন মেঘকে। মেঘ যেনো পড়ার থেকেও বেশি মুগ্ধ হয়েছে ওনার কথার স্টাইলে।
ওনার নাম জান্নাত। মেঘের ওনাকে এতই ভালো লেগেছে যে দু দিন পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারলো না। জান্নাত আপু চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলেন বড় আব্বুর কাছে। জানালেন, ওনার কাছেই পড়বে সে।
‘আলী আহমদ খান’ “যেনো কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেন, তারপরও মেঘকে বললেন, কখনো যদি মনে হয় তোমার পড়ার ঘাটতি হচ্ছে তাহলে আমি নতুন টিউটর আনবো, তুমি চিন্তা করো না। পড়াশোনায় মনোযোগ দাও!”
মেঘ “ঠিক আছে” বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
রাতের সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করলো কিন্তু আবির নেই। ইদানীং আবির অফিস শেষ করে নিজের নতুন অফিসে চলে যায়। ওখানে সব গুছানো, প্ল্যানিং করা এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে। রাত ১১ টার আগে ফিরেই না। কেউ অপেক্ষাও করে না তার জন্য। কারণ আবিরের ক*ড়া নির্দেশ আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করলে আমি আর ফিরবোই না। সেই থেকে মা আর মামনি শুয়ে পরে। আবির ১১ টার পরে এসে ফ্রেশ হয়ে নিজের মতো খায়।
★★★★
কেটে গেলো আরও দুদিন। দেখা হলো না মেঘ আর আবিরের। সকালে আবির খেতে আসলেও মেঘ আগে আগেই খেয়ে পা*লায়, সে আবির ভাইয়ের মুখোমুখি হতে চাই না।
মেঘ ছোটবেলা থেকেই খুব আবেগী আর জে*দি৷ অল্পতে কা*ন্না করা তার স্বভাব। আর কোনো বিষয়ে জে*দ করলে তা সহজে কাটে না। যেমন সামান্য কয়ে*কটা থা*প্পড়ের জন্য আবির ভাই এর সাথে ৯ বছরের উপরে কথা বলে নি একটিবার। আবির ভাই দেশে আসাতে মনে অন্যরকম অনুভূতি জন্মানো শুরু করেছিল সবেমাত্র। কিন্তু আবির ভাইয়ের হুমকি তে অনুভূতি গুলো চা*পা পরে যাচ্ছে। মেঘ নিজেই যেনো অনুভূতি গুলোকে মাটি চা*পা দিতে ব্যস্ত।
কথায় আছে,
‘চোখের আড়াল হয়ে গেলে,
মনের আড়াল হতে বেশি সময় লাগে না’
এজন্য মেঘ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যেনো আবির ভাইয়ের সামনে সে না পরে৷ সবাই টেবিলে বসার আগেই সে খেয়ে নিজের রুমে চলে যায়, আবির ভাই অফিসে গেলে সে কোচিং এর জন্য বের হয়, দুপুরে আবির ভাই থাকে না বলে একটু রিলাক্সে খেতে পারে৷ রাতেও জান্নাত আপু পড়িয়ে যায় ৭.৩০ নাগাদ তখন ই খেয়ে রুমে চলে যায়। তখন তো আবির ভাই ফিরেই না দেখা হবে কি ভাবে..!!
Page: golpokotha70
★★★★
সেই রবিবার থেকে মেঘ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার রাত, মেঘ নিজের পড়া শেষ করে শুয়ে মোবাইল টা হাতে নিয়েছে। আবির ভাইয়ের কথা খুব মনে হচ্ছে তার, তাই আবির ভাইয়ের আইডি তে ঢুকলো কিন্তু কোনো আপডেট নেই। মনের ভেতরটা কেমন জানি মোচড় দিলো মেঘের। মঙ্গলবার দুপুরে খেতে বসেছিল একসাথে তারপর আর দেখেই নি সে।
মেঘের খুব ইচ্ছে করছে আবির ভাইকে দেখার।৷ মনকে কোনোভাবেই শান্ত করতে পারছে না। মনের জোর গুলোও নিস্তেজ হয়ে পরেছে। অনেকক্ষণ মনকে বুঝিয়ে ব্যর্থ হলো তাই রুম থেকে বের হয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়েছে আবির ভাইয়ের রুমের দিকে। রাত তখন ১১ টার উপরে। ড্রয়িং রুমে একটা হালকা আলোর বাল্ব জ্বলছে, পুরো বাড়ি অন্ধকার। মেঘ আবির ভাইয়ের রুমের সামনে দাঁড়ালো।
দরজা চাপানো, আস্তে করে ধাক্কা দিলো মেঘ। চেক করতে চাইছিলো খোলা কি বন্ধ। মেঘের হালকা ধাক্কাতেই খুলে গেলো দরজা। কিছুটা ঘাবড়ে গেলো মেঘ। যদি আবির ভাই রুমে থাকেন তাহলে আজ থা*প্পড় নিশ্চিত। তাই দুগালে হাত দিয়ে আস্তে করে উঁকি দিলো রুমে৷
রুমের বারান্দায় বাল্ব জ্বলছে । সেটার আলোয় রুমে আসছে। মোটামুটি আলোকিত হয়ে আছে রুমটা। আবির ভাই কোথাও নেই। বিছানা টানটান করে পাতানো। টেবিলে বই, খাতা, কাগজপত্র এলোমেলো সাথে একটা ল্যাপটপের আলো জ্ব*লছে। চেয়ারের উপর ২-৩ টা কাপড় এলোমেলো পরে আছে। ছেলেদের রুম সচরাচর যেমন হয়।
মেঘ মনে মনে ভাবছে, “আবির ভাই কি এখনও ফেরে নি?”
নিজের রুমের দিকে ফিরে ১ কদম এগুতেই কানে ভেসে আসে গানের সুর । দাঁড়িয়ে পরলো মেঘ, মনে মনে ভাবছে,
“গান কে গাইছে, আবির ভাই নয় তো?!”
আবারও ঘুরে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো সিঁড়ির কাছে। মেঘ এই জীবনে কোনোদিন সন্ধ্যার পর ছাদে যায় নি৷ সবাই গেলেও যায় না, ওর ভ*য় লাগে, সন্ধ্যা বেলা নাকি ছাদে তাঁনারা ঘুরে বেড়ায়, সারারাত ছাদেই থাকেন এ ভয়ে ছাদে পা বাড়ায় না। সিঁড়ি নিচে থমকে দাঁড়ালো মেঘ,
“এই গান কি তাঁনারা গাইতেছেন? আমাকে আকৃষ্ট করে নেয়ার জন্য? ”
যাবে কি যাবে না এটায় ভাবছে মেঘ, বুকে সাহস নিয়ে দু কদম এগিয়েছে মেঘ, একটু উঁকি দিয়ে দেখলো ছাদের দিকে৷ ছাদের গেইট খোলা। এটা দেখে মনে সা*হস পেলো মেয়েটা৷
তাঁনারা গান গাইলে গেইট খুলার কি দরকার। তারপরও আল্লাহ আল্লাহ করে এগুচ্ছে মেঘ৷
গেইটের কাছে এসে বুকে হাত রেখে উঁকি দিলো ছাদের দিকে। ছাদের এক কর্ণারে নজর পরলো, চেয়ারের উপর হেলান দিয়ে বসে আছে কেউ একজন৷ চাঁদের উপর থেকে মেঘ সরে যেতেই স্পষ্ট বুঝা গেলো এটা আবির ভাই৷
মেঘ নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পরলো, এত রাতে আবির ভাই ছাদে কি করেন, কৌতুহল হলো মেঘের,
আগে কি গান গেয়েছে তা মেঘ বুঝতে পারে নি,
নিচ থেকে শুধু সুর টায় শুনেছে। এখন আবির ভাই নিরব। কয়েক মুহুর্ত পর আবির ভাই আবার শুরু করলো,
“ছোট্ট বুকে মেঘ জমিয়ে ক্যানরে কাঁদিস পাখি?
তুই ফিরবি বলে আমি কেমন সন্ধ্যা নামায় রাখি
ছোট্ট তোর ওই ওমের ডানায় নাক ঘষতে দিবি কি?
বুকের ভেতর ঘুলঘুলিতে একলা পাখি হবি?
তুই বুকের ভেতর ঘুলঘুলিতে একলা পাখি হবি?”
মেঘ উদ্বিগ্ন নয়নে তাকিয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে, ছেলেদের গান শিখতে হয় না, তারা খালি গলাতে গান গাইলেও যেনো অসম্ভব সুন্দর লাগে। মেঘ মুগ্ধ হয়ে আবিরের গান শুনছে।
আবির ভাই একই লিরিক্স বার বার গাওয়াতে গানে মনোযোগ দিলো মেঘ,
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো মেঘ, “” এই গান কাকে উদ্দেশ্য করে গাইছেন ওনি? আমাকে নিয়ে নয়তো? এটুকু বলতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো মেঘের, তৎক্ষনাৎ মনে হলো ওনি আমাকে নিয়ে কেনো গান গাইবেন, আমি কে!
তানভির ভাই তো সেদিন বললো আবির ভাইয়ের জীবনে কেউ আছে তাহলে কি তার কথা ভেবেই গাইতেছেন? সঙ্গে সঙ্গে হাসি গায়েব হয়ে গেলো মেঘের৷ নিস্তব্ধ আঁখিতে তাকিয়ে আছে সে, বুকের বা পাশে হালকা ব্যথা অনুভব হলো, ওনার মনে সত্যি অনেক দুঃখ না হয় এমন গান কেউ গায়..!!””
এরমধ্যে আবির ভাইয়ের গান থেমে গেলো, কিছুক্ষণ নিরব থেকে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে ধরলো, আ*গুন দিয়ে জ্বা*লালো সেই সিগা*রেট।
এদিকে মেঘের মাথায় আকাশ ভে*ঙে পরেছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে ক*ষ্ট হচ্ছে, আবির ভাই সিগারেট খান.? দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকু পাচ্ছে না অষ্টাদশী । অকস্মাৎ দরজার এখানেই বসে পরেছে সে৷
মেঘের জাত শ*ত্রু হলো সিগারেট। যেখানে সিগারেটের গ*ন্ধ মেঘ সহ্য করতে পারে না, সিগারেটের গ*ন্ধে তার শ্বা*সকষ্ট হয়ে যায়। সেখানে আবির ভাই সিগারেট খাচ্ছেন। এটা যেনো মেঘ মানতেই পারছে না৷
ওষ্ঠদ্বয় উল্টে নিরবে চোখের জল ফেলে অষ্টাদশী। যাকে সে মিস করছিল, এতক্ষণ তাকে দেখার জন্য উদ্বেগ ছিল। তাকে খোঁজে এসে এরকম একটা দৃশ্য দেখবে তা সে কল্পনাও করে নি। অষ্টাদশীর মনটা নির্ম*মভাবে হ*ত্যা করেছে আবির ভাই।আবির ভাই অষ্টাদশীর মনে আর বসন্তের ফুলের মতো ফুটবে না । আবির ভাইয়ের প্রতি খুব রা*গ হলো মেঘের , রা*গের সাথে কান্নার মাত্রাও বাড়তে লাগলো। ছাদের দরজার পাশে বসেই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে মেঘ। নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার কোনো ভাষায় খোঁজে পাচ্ছে না অষ্টাদশী।
আচমকা আবির ভাই হাজির হলো মেঘের সামনে। মেঘ তখনও কা*ন্নায় ব্যস্ত৷
আবির গম্ভীর কন্ঠে শুধালো,
“এখানে কি করছিস?”
(চলবে)
গল্প- আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে
পর্ব- ০৯
লেখিকা- সালমা চৌধুরী
আবির ভাইয়ের কন্ঠ শুনে মেঘ ভূ*ত দেখার মতো চমকে উঠলো, মেঘের কা*ন্নার তীব্রতা এতোটায় বেড়ে গেছিলো যে ছাদের কর্ণার থেকে আবির শুনতে পেয়ে ছুটে এসেছে।
অতিরিক্ত কা*ন্নায় মেঘের শরীর কাঁ*পছে। জোর করে কা*ন্না থামিয়েছে। এখনও নাক টানছে আর জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ছে।
আবির ভাই গম্ভীর স্বরে পুনরায় বললো,
“কথা বলছিস না কেন, এত রাতে এখানে কি করিস?”
মেঘ এবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে, ছাদের ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে ধীরস্থির কন্ঠে উত্তর দিলো,
“এমনেই এসেছিলাম”
আবিরের শরীর ঝুঁকে এলো, মেঘ তখনও ছাদের ফ্লোরেই বসা। চাঁদের আলোতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো মেঘের অভিব্যক্তি৷ চিবুক নেমেছে গলায়, হাত পা কাঁপছে, ভ*য় আর কা*ন্নার প্রতিক্রি*য়া দুটায় অনুভব করতেছে অষ্টাদশী।
আবির আচমকা মেঘের বাহুতে ধরলো, এক টানে দাঁড় করালো মেঘ কে।
মেঘের শরীরের কম্পন তীব্র হলো, হৃদপিণ্ডের ধুপধাপ বেড়ে যাচ্ছে সহসা৷ চোখ তুলে তাকাতে পারছে না।
আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো মেঘের দিকে, রা*গে ক*টমট করতে করতে বললো,
“তুই কাঁদছিলি কেনো?”
মেঘ উত্তর খোঁজে পাচ্ছে না। কিভাবে বলবে, আবির ভাইয়ের সি*গারেট খাওয়া আর অন্য মেয়েকে উদ্দেশ্য করে গান গাওয়াতে তার ভেতর থেকে এমনিতেই কা*ন্না আসছে।
মেঘ মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো।
আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছুটা স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“তুই কি সবসময় রাতবিরাতে ছাদে আসিস?”
মেঘ তৎক্ষনাৎ বিদ্যুৎ বেগে কতক্ষণ মাথা নাড়লো, নাবোধক সম্মতি জানালো, তারপর
আস্তে আস্তে বললো,
” এই জীবনে কোনোদিন সন্ধ্যার পর ছাদে উঠি নি আমি”
আবির ভাই উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,
“তাহলে আজ আসলি কেন?”
মেঘ নিস্তব্ধ, নিরব। কিছু বলার সাধ্য নেই বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললো মেয়েটা৷ এত রাতে ছাদের আসার কোনো অজু*হাতও খোঁ*জে পেলো না অষ্টাদশী ।
আবির কয়েক পা এগিয়ে মেঘের অনেকটা ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ালো। আবির ভাইকে এত কাছাকাছি দেখে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার হাল হলো মেঘের৷ আবিরের গায়ের গ*ন্ধে মা*তাল হওয়ার অবস্থা। ভ*য়ংকর পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচাতে দু কদম পিছিয়ে গেলো মেঘ। কিন্তু পিছনে আর জায়গা নেই দরজার পাশের পিলারে পিঠ ঠেকলো মেঘের। থরথ*র করে কাঁপছে অষ্টাদশীর ছোট দেহটা। পায়ের পাতা শিরশির করছে । সরে যেতে চাইলো সামনে থেকে,
আচমকা আবির ভাই দুহাতে পিলারের দু পাশ চেপে ধরলো, কিছুটা ঝুঁকে মুখোমুখি হলো মেঘের,
আবির ভাইয়ের উষ্ণ শ্বাস, তীব্র দৃষ্টি মেঘকে নাজেহাল করে দিচ্ছে। মা*নসিক টানাপো*ড়নে পরে গেল মেঘ ৷ বুকের ভেতর কেউ অবিরাম নৃত্য করছে যার শব্দ বাহির থেকে শুনা যাচ্ছে। শরীর ঘামতে শুরু করেছে।
আবির ভাই হঠাৎ ই শীতল কণ্ঠে বললেন,
“এতবছর তো খুব পা*লায় বেড়াইছিস! এখন দেখবো কতটা পা*লাতে পারিস তুই।”
আবির ভাইয়ের ঠান্ডা হুম*কিতে কেঁপে উঠলো অষ্টাদশী। এই কথা শুনামাত্র মেঘের শরীরে হাই ভোল্টেজের ঝাঁকুনি দিলো। মেঘের বক্ষস্পন্দন জোড়ালো হলো।
আবির ভাই সরু নেত্রে তাকিয়ে আছে অষ্টাদশীর পানে,
হয়তো মেঘের টাল*মাটাল অবস্থা বুঝতে পেরে সরে গেলো সামনে থেকে৷
পুনরায় শক্ত কন্ঠে বললো,
“রুমে যা”
আবির সরে যাওয়াতে স্বস্তি পেলো মেঘ। দীর্ঘশ্বাস ফেলছে বারবার। কয়েক মুহুর্ত পর সিঁড়ির দিকে নামতে গেলো, অন্ধকার সিঁড়। পিছন ফিরে তাকিয়ে বুকে সা*হস নিয়ে ডাকলো,
“আবির ভাই”
আবির ভাই উল্টো দিকে ফিরে ছিল, ডাক শুনে ঘুরে তাকালো,
“হুমমমমম”
মেঘ ভয়ে ভয়ে বললো ,
“আমাকে একটু রুম পর্যন্ত দিয়ে আসবেন! প্লিজ”
আবির বিস্ময় কন্ঠে বললো,
“কেনো? হাঁটতে পারছিস না?
মেঘ মাথা নিচু করে আস্তেধীরে বললো,
“ভয় লাগছে!”
“কেন?”
“তাঁনারা যদি আমায় ধরে ফেলে!!”
আবির ভাই কয়েক সেকেন্ড থেমে, স্ব শব্দে হেসে উঠলো,
আবির মেঘের কথায় হাসছে ভাবতেই খুশি লাগছে মেঘের৷ আবির ভাইয়ের হাসির শব্দে মেঘ অবাক হয়ে তাকালো আবির ভাইয়ের দিকে, ততক্ষণে আবির ভাইয়ের হাসি গায়েব৷ এবার আবির ভাই ঠাট্টার স্বরে শুধালো,
“তা তুই ছাদে আসার সময় কি তাঁনারা বেড়াতে গেছিলো?”
আবির ভাইয়ের এমন কথায় আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে মেঘ।
আবির ভাই সহসা বলে উঠলো,, ” তুই যা আমি পিছনে আছি!”
মেঘ আর কিছু বলার সাহস পেলো না অবশ্য বলবেই বা কি!
দুটা সিঁড়ি নামতেই হঠাৎ কি ভেবে থমকে দাঁড়ালো মেঘ,
আবির ভাই নিরুদ্বেগ কন্ঠে শুধালো,
“আবার কি হলো?”
মেঘ দুবার জোরে জোরে শ্বাস ছাড়লো,মনে তীব্র সাহস নিয়ে, পিছন ফিরে তাকালো।
আবির ছাদের দরজার পাশে দাঁড়ান ৬ ফুট লম্বা তারউপর মেঘ বেশ কয়েকটা সিঁড়ি নেমে গেছে। এখান থেকে আবির ভাইয়ের লম্বা শরীরটা চাঁদের আলোয় সুপারি গাছের মতো মনে হচ্ছে ।
মেঘ উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
“আবির ভাই আপনি সিগা*রেট খান কেনো?”
মেঘের কথায় আবির যেনো ছোটোখাটো টাশকি খেল।মুহুর্তেই গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“তার জবাবদিহি কি তোকে দিতে হবে?”
মেঘ এবার কোমল কন্ঠে বললো,
“সিগারে*ট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষ*তিকর, আর আমি..”
এটুকু বলেই থেমে গেলো,
আবির ভাই এবার কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বললো,
“আর তুই কি?”
মেঘ ভ*য়ে ভ*য়ে বললো,
“কিছু না”
মেঘ আর থামলো না, সিঁড়ি দিয়ে নামতে ব্যস্ত হলো।
মেঘ করিডোরে হাঁটছে, আবির পেছনে মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বা*লিয়ে সিঁড়ি নিচ পর্যন্ত নামলো।
মেঘ আর পিছন ফিরে আবিরকে দেখার সাহস পাচ্ছে না। নিজের রুমের দরজা পর্যন্ত এসে রুমে ঢুকার সময় এক পলক তাকালো আবির ভাইয়ের দিকে,
আবির নিচে তাকিয়ে মোবা*ইল চাপছে। মেঘ রুমে চলে গেলো।
পেইজ: গল্প কথা(golpokotha70)
★★★★
আবিরের আরও একটি রাত কাটলো নির্ঘুম, নিস্তব্ধ। প্রত্যেক সপ্তাহে ছুটির দিনের আগের রাতে আবির সারারাত জেগে থাকে। এটা তার বহু বছরের অভ্যাস। বিদেশে থাকাকালীন ও তাই করতো। দেশে এসে প্রতি বৃহস্পতিবার রাত নিজের মতো একাকী কা*টায়৷ হয়তো নিজেকে নিয়ে ভাবে, নিজের স্বপ্ন, ইচ্ছে, ভালোবাসা, প্রিয়জন সবকিছু নিয়েই ভাবে।
মেঘ নিজের রুমে শুয়ে ছাদের বিষয়গুলো ভাবছে, আবির ভাইয়ের এত কাছে আসা, আবির ভাইয়ের বলা সেই কথাগুলো বার বার মাথায় ঘুরছে। কখন ঘুমিয়েছে নিজেও জানে না।
★★★★
সকাল সকাল খাবার টেবিলে খাবার খাচ্ছে সবাই। শুক্রবার দিন ভালোমন্দ রান্না হয়।
মেঘের মনটা আজ খুব ভালো। কেনো ভালো নিজেও জানে না তবে আবির ভাইয়ের প্রতি ভ*য় টা কিছুটা শিথিল হয়েছে। খাবার টেবিলে আবির ভাই নেই৷
মন টা কিছুটা খারাপ হলো কিন্তু তেমন পাত্তা দেয় নি। নিজের মতো খেয়ে পড়তে বসেছে। প্রতি শুক্রবারে প্রাইভেটে ১ ঘন্টার পরীক্ষা থাকে। ১ সপ্তাহে যা পড়ায় তার উপর পরীক্ষা থাকে৷ ৩ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত পরীক্ষা।
অন্যদিকে তানভির ব্যস্ত হয়ে পরেছে রাজনীতি নিয়ে৷ সামনে এমপি নির্বাচন, তাদের প্রিয় নেতা মনোনয়ন কিনেছেন৷ সবাই মিটিং মিছিলে ব্যস্ত। জনসমর্থন যাচাই করে মনোনয়ন দেয়া হবে। তানভিরদের এখন সব এলাকায় যেতে হচ্ছে। জনগণের সুবিধা অসুবিধা শুনছে, লিস্ট করছে।
এমপি নির্বাচনের কয়েকমাস পরেই হবে সভাপতি নির্বাচন। তানভিরের টার্গেট সভাপতি হওয়া। তাই তাকে আরও বেশি এক্টিভ থাকতে হচ্ছে।
পেইজ: গল্প কথা (golpokotha70)
★★★
২.৩০ টা নাগাদ মেঘ বেরিয়েছে পরীক্ষা দিতে। আজ একটু আগেই চলে এসেছে। পরীক্ষা শুরু হতে এখনও ১০ মিনিট বাকি। তাই বন্যা আর মেঘ গল্প করছে৷
বন্যা: কিরে তোর হি*টলার ভাইয়ের কি খবর রে? কিছু তো আর বললি না, ছবি দেখাবি বলছিলি তাও দেখালি না। সত্যি সত্যি মন থেকে বের করে দিয়েছিস?
মেঘ: মুখে যা বলি তার সবটায় কি পারি?
এত চেষ্টা করেও তো পারলাম না মন থেকে তাড়াতে৷ গতরাতে থাকতে না পেরে গেছিলাম ওনাকে দেখতে৷
একটা বাঁশ যে খাইছি!!
বন্যা: কেন কি হয়ছে?
মেঘ: কি আর হবে লুকিয়ে দেখতে গেছিলাম, আবির ভাইয়ের কাছে ধরা পরে গেছি!
বন্যা: ব্যাটার চোখ আছে তাহলে! ভালো হয়ছে গেলি কেন তুই!
মেঘ মনে মনে ভাবছে এখন যদি বন্যাকে বলি আবির ভাইয়ের জন্য কা*ন্না করছি তাহলে বন্যা তো আমায় এখানেই বালি চা*পা দিয়ে দিবে।
বন্যা আর মেঘের একটায় সিদ্ধান্ত ভার্সিটি ভর্তির আগে কোনো প্রকার প্রেম, বন্ধুত্ব, ক্রাশ কিছুই খাওয়া যাবে না। কোচিং এ নতুন কারো সাথে কথায় বলে না৷ মেঘ আগে আসলে বন্যার জন্য সিট রাখে, বন্য আগে আসলে মেঘের জন্য সিট রাখে। বিষয়টা অনেকটা হাইস্কুল জীবনের মতো। এত কিছুর পরও মেঘ আবির ভাইয়ের উপর ক্রাশ খেয়ে ফেলেছে । এরজন্য বন্যা অবশ্য প্রতিনিয়ত ই মেঘকে বুঝাচ্ছে৷ স্যার চলে আসছেন এতক্ষণে। পরীক্ষা শুরু হলো যথারীতি।
পেইজ: গল্প কথা (golpokotha70)
★★★★
৪ টায় পরীক্ষা শেষ করে দুই বান্ধবী হাতে হাত ধরে বের হয়েছে। আশেপাশে মেঘদের গাড়ি নেই৷ তাই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ড্রাইভার আংকেল কে ফোন দিবে ভাবলো।
হঠাৎ বাইক নিয়ে আবির হাজির হলো,
হেলমেট পরা, সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট,কালো শো, হাতে কালো ফিতার ঘড়ি, শার্টের বোতামের ফাঁকে সানগ্লাস ঝুলানো।
মেঘের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে ডাকলো,
“মেঘ”
মেঘ আর বন্যা দুজনেই ডাক শুনে তাকিয়েছে৷ মেঘ এক পলক তাকাতেই চিনতে পারলো এটা আবির ভাই, আবারও নতুন করে ক্রাশ খেলো সে, মনে মনে ভাবছে,
“কিন্তু ওনি এখানে কেনো? ওনি কি আমায় নিতে এসেছেন? কই সেদিন তো মীম আর আদিকে ধমকে বললো কাউকে বাইকে উঠাবে না, তারমানে আমাকেও নিশ্চয় উঠাবে না! না উঠাক, ওনার বাইকে উঠতে আমার বয়েই গেছে! কিন্তু ওনি আসলো কেনো, আল্লাহ জানেন কোন পাপের শাস্তি দিতে এখানে এসেছেন। আল্লাহ বাঁচাও!”
এসব হাবিজাবি ভাবনায় ব্যস্ত মেঘ৷ এদিকে বন্যা মেঘের হাতে ঝাপটে ধরে আছে।
আবির ভাই মেঘের দিকে খানিকক্ষণ সুস্থির বনে তাকিয়ে আছে, হয়তো মেঘের অভিব্যক্তি বুঝার চেষ্টা করছিলো, এবার হেলমেট খুলে মেঘের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললো,
‘উঠ’
মেঘ তো ঘোরে আছে, আনমনে হাবিজাবি ভাবনায় ব্যস্ত৷ আবির ভাইয়ের কথা কানেই গেলো না৷
বন্যাও মনেযোগ দিয়ে দেখছে ছেলেটাকে৷ আগে কখনোই এই ছেলেকে দেখে নি, আবিরকে বন্যা চিনে না৷ তানভিরকে দেখেছে। কিন্তু এই ছেলে কে? মেঘকে বাইকে উঠতে বলছে। বন্যা মেঘকে আরও শক্ত করে ধরে আছে।।
আবির ভাই এবার ধ*মকে উঠলো,
“এই মেঘ, উঠতে বললাম তো!”
মেঘ এবার চমকে উঠে! গোল গোল চোখে তাকায়, পরপর দুবার জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে৷ তারপর বন্যার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো, “ওনি আবির ভাই”
তৎক্ষনাৎ বন্যা মেঘের হাত ছেড়ে দিলো৷ হয়তো আবির ভাইয়ের চোখ মুখ দেখে ভয় পেয়েছে।
মেঘ কয়েকপা এগিয়ে আবির ভাইয়ের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে।
ততক্ষণে আবির ভাই বাইক থেকে নেমে দাঁড়িয়ে পরেছেন।
আবির ভাই উদ্বিগ্ন কন্ঠে মেঘকে বললেন,
“এই তুই কি কিছু খাস?”
মেঘ কপাল কুঁচকে বললো,
“মানে? কি খাবো?”
“কোন দুনিয়ায় থাকিস তুই ডাকলে শুনিস না”
মেঘ চুপচাপ মাথা নিচু করে রইলো।
আবির ভাই আবার বললেন,
” বাইকে উঠ”
মেঘ যেনো নিজের কানতে বিশ্বাস করতে পারছে না, আবির ভাই তাকে বাইকে উঠতে বলছে, এটাও সম্ভব৷
মেঘের হেলদোল নাই দেখে বাইক থেকে হেলমেট নিয়ে নিজেই পরিয়ে দিলো মেঘকে। তারপর পুনরায় বাইকে বসে আবার বললেন,
“তুই কি উঠবি?”
এতকিছু না ভেবে হাসিমুখে ঐ পাশে গিয়ে বাইকে উঠে বসলো মেঘ। আবির ভাইয়ের গায়ের সাথে গা লাগছেই কেঁপে উঠলো কিছুটা। মেঘ কাঁধে হাত রাখবে নাকি রাখবে না তা নিয়ে দুটানায় আছে। এমনিতেই জীবনে প্রথম বাইকে উঠছে। তারপর আবার আবির ভাইয়ের বাইকে ।
আবির ভাই যেনো বুঝে নিলো মেঘের অস্থিরতা।
শীতল কন্ঠে বললেন,
“ধরে বস না হয় পরে যাবি”
কাঁপাকাঁপা হাতে কাঁধে হাত রাখলো মেঘ, সঙ্গে সঙ্গে হৃৎস্পন্দনের মাত্রা বাড়ছে অষ্টাদশীর।
এদিকে বন্যা তাকিয়ে দেখছে তাদের আর ভাবছে,
“মেঘের বর্ণনায় কোনো ভুল ছিল না, আবির ভাই সত্যি ই অসাধারণ। যেকোনো মেয়ে এক দেখাতেই ক্রাশ খাবে। মেঘের ক্রাশ খাওয়ায় ভুল কিছু না। ”
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাইক স্টার্ট দিলো আবির, কিছুটা ভ*য়ে আবির ভাইয়ের কাঁধে জোড়ে চেপে ধরলো মেঘ, কান দিয়ে শা শা করে বাতাস ঢুকছে, প্রথমবার বাইকে উঠার অনুভূতি অসাধারণ। মেঘ নিভু নিভু চোখে চারপাশ দেখার চেষ্টা করছে।
বেশকিছুক্ষণ পর তারা পৌঁছে গেলো, “বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে”
মেঘ আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে। আবির ওকে শপিং এ নিয়ে আসছে৷ ভাবতেই পারছে না সে, এত খুশি রাখবে কোথায়।
আবির মেঘকে নিয়ে একটা হিজাবের দোকানে গেলো, রেগুলার পড়ার জন্য হিজাব চাইতেই দোকানদার জর্জেট হিজাবের বক্স বের করে দিলো।
“মেঘের বুঝতে বাকি নেই, রবিবারে বলেছিল হিজাব পড়ে যেতে কিন্তু মেঘ ওড়না মাথায় দিয়ে যাচ্ছিলো, কি করবে সে। মা আর বড় মা ছাড়া মেঘ তো একা শপিং এ যায় নি কখনো। বড় আম্মুরাও এখন শপিং করবেন না। তাই মেঘ ভেবেছিলো কিছুদিন ওড়না মাথায় দিয়ে যাবে তারপর ওনারা শপিং এ গেলে নিয়ে আসবে।। ”
মেঘ বক্স থেকে বেছে বেছে ৩ টা আলাদা করেছে৷
তারপর আবিরকে জিজ্ঞেস করলো,
“এই তিনটা নিব?”
আবির মেঘের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দোকানদার কে জিজ্ঞেস করলেন,
“এগুলোর মধ্যে কয়টা কালার আছে আপনার কাছে?”
দোকানদার বললেন, “ভাইয়া আপাতত ২৪ টা আছে, আপনি চাইলে আরও দিতে পারবো তবে কিছুদিন পরে নিতে হবে!”
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,
“সবচেয়ে বড় সাইজের হিজাব ২৪ টা কালার ই দেন”
আবিরের কথা শুনে মেঘ তড়িৎ বেগে তাকালো আবিরের দিকে, তৎক্ষনাৎ চোখ নামিয়ে শক্ত গলায় বললো,
“এতগুলো লাগবে না, ৩ টা হলেই হবে!”
আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছে মেঘের দিকে,কটমট করে বললো,
“তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি?”
ভ*য়ে সিটিয়ে পরলো মেঘ। আর কিছু বলার সাহস পেলো না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে । যেখানে তার কোচিং সপ্তাহে ৩-৪ দিন। ২-৩ টা হিজাব হলেই হয়ে যায়। ২৪ টা নেয়ার কোনো মানেই হয় না।। কিন্তু কিভাবে বুঝাবে হিট*লারকে।
আবির ভাই নিজে পছন্দ করে আরও কয়েকটা পার্টি হিজাবও নিলো। মেঘ মাথানিচু করে মনে মনে শুধু আবির ভাইকে ব*কেই গেলো।
আবির শপিং ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে মেঘকে বললো,
“চল”
মেঘ মুখের উপর জিজ্ঞেস করে ফেলেছে,
” কোথায়?”
আবির ভাই আবারও রাগান্বিত কন্ঠে কটমট করে বললো,
“কোথায় যাবো না যাবো কি তোরে বলে যাইতে হবে?”
মেঘের নিজের মাথায় নিজে গাট্টা দিতে মন চাচ্ছে। সবসময় আম্মু, বড় আম্মুকে আর বন্যাকে কথার পাল্টা ঝটপট প্রশ্ন করে অভ্যস্ত মেঘ। তাই আবির ভাইকেও তেমনি জিজ্ঞেস করে ফেলছে৷
আবির ভাইয়ের পিছন পিছন একটা জুয়েলার্সের দোকানে ঢুকলো মেঘ। আবির ভাই একজনকে জিজ্ঞেস করলেন,
“আজকে কি নেয়া যাবে?”
লোকটা হাসিমুখে উত্তর দিলো
” জ্বি ভাইয়া, দু মিনিট বসুন আমি বের করে দিচ্ছি। ”
২ মিনিটের মধ্যেই লোকটা পূনরায় প্রশ্ন করলেন, “ভাইয়া প্যাকিং করে দিবো?”
আবির ভাই তৎক্ষনাৎ বললেন,
“প্যাকিং লাগবে না, রেডি হলে আমায় দেন”
লোকটা ১ জোড়া নুপুর এগিয়ে দিলো আবির দিকে।
মেঘও উৎসুক জনতার ন্যায় নুপুর ২টা দেখছে, অনেক মোটা আর খুব সুন্দর ডিজাইনের ।
হঠাৎ আবির ভাইয়ের কান্ডে মেঘ কারেন্টের খাম্বার ন্যায় স্তব্ধ হয়ে গেছে।
আবিরের এক হাঁটু ফ্লোরে আরেকটা পা স্বাভাবিক রেখে নিচে বসেছে। যেভাবে প্রপোজ করে অনেকটা সেভাবে। সহসা মেঘের এক পা নিজের হাঁটুর উপর রেখে একটা নুপুর পরিয়ে দিল,
এদিকে মেঘের নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার অবস্থা, হৃদপিণ্ড কম্পনের তীব্রতা বুঝতে পেরে মনে হচ্ছে এই যাত্রাই আর বাঁচবে না। আবির ভাইকে না করার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। খাম্বার মতোই স্থির, যা হওয়ার তা তো শরীরের ভিতরে হচ্ছে, র*ক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বাড়ছে, মনে হচ্ছে এই বুঝি প্রেশার উঠে যাচ্ছে মেঘের।
দু পায়ে নুপুর পরিয়ে আবির পুনরায় চেয়ারে বসে, মেঘের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“দেখ, কেমন লাগছে ”
মেঘ তখনও নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে,
আবির রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
“তোকে নুপুর দেখতে বলছি, আমায় না! ”
আবিরের কথায় দোকানদার জোরে হাসি শুরু করেছে৷
ততক্ষণে মেঘ স্বাভাবিক হলো, পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি পায়ের দিকে তাকালো,
সত্যিই অনেক সুন্দর লাগছে, ফর্সা পা গুলো দেখতে অন্যরকম লাগছে।
খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
“অনেক ধন্যবাদ আবির ভাই”
আবির ভাই দোকানের বিল পরিশোধ করে কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে গেলেন,
মেঘের মাথায় শুধু ঘুরছে এইসব কিছু স্বপ্ন, একটু পর ঘুম ভাঙবে আর সব শেষ হয়ে যাবে।
রেস্টুরেন্টে বসে আবির ভাই মেঘের দিকে ম্যানু কার্ড এগিয়ে দিলেন, আর বললেন,
“তোর যা খেতে ইচ্ছে করে অর্ডার দে।”
মেঘ নিজের পছন্দ মতো কাচ্চি সাথে বোরহানি বললো৷
ওয়েটারকে ২ টা কাচ্চি দিতে বললো আবির। সাথে ২ টা বোরহানি।
মেঘ উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আবির ভাই, আপনার কি কাচ্চি পছন্দ? ”
আবির এবার বিরক্ত হয়ে বললো,
“আমার পছন্দ অপছন্দ তোর জেনে কাজ নেই৷ ”
মেঘের মুখটা চুপসে গেছে। খাবার আসায় দুজন চুপচাপ খাবার খেলো। মেঘ অবশ্য কয়েকবার চোখ তুলে তুলে আবিরকে দেখছিলো কিন্তু আবিরের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই৷
সব কাজ শেষে আবির বাইকে উঠতে যাবে তখন মেঘ আবির ভাইকে ডাকলো,
“আবির ভাই”
“হুমমম”
“না, কিছু না!”
আবির এবার সত্যি সত্যি রেগে গেল। কন্ঠ তিনগুন ভারি হলো, রাগান্বিত স্বরে বলে উঠল,
“তোকে হিজাব আর নুপুর দিয়েছি বলে খুশিতে বেশি লাফাইস না! মাথায় ওড়না দিয়ে বউয়ের মতো চলাফেরা যাতে না করতে পারিস সেজন্য হিজাব দিয়েছি। আর তুই সারাক্ষণ টুইটুই করে কোথায় ঘুরিস তা তোর নুপুরের শব্দেই বুঝতে পারবো, এতে তোকে শা*স্তি দিতে সুবিধা হবে।”
মেঘ আহাম্মক বনে গেলো, কি না কি ভাবছিলো সে, আবির ভাই ভালোবেসে গিফট দিচ্ছে, আহা সে কি অনুভূতি। ”
সেই অনুভূতিতে এক বালতি পানি ঢেলে দিলো আবির ভাই।
আবির কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললেন,
“উঠ”
মেঘ ভ*য়ে ভ*য়ে চুপচাপ পিছনে উঠলো, এবার আর আবির ভাইকে ধরে বসবে না ঠিক করলো।
আবির ধম*কে উঠল,
“এক কথা তোকে কতবার বলতে হয় মেঘ, ধরে বস, না হয় রাস্তায় ফেলে চলে যাব”
মেঘের ছোট দেহ কম্পিত হয়।৷ সহসা চেপে ধরে আবির ভাইয়ের কাঁধ। আবিরের অভিব্যক্তি বুঝা গেলো না।বাসার সামনে পর্যন্ত আসলো কিন্তু কেউ কোনো কথা বললো না।
বাসার সামনে বাইক থামিয়ে বললো,
“বাসায় যা”
মেঘ বাইক থেকে নেমে, আবির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি যাবেন না?”
“না”
“কোথায় যাবেন?”
আবির বিরক্তি নিয়ে বললেন,
“তুই কে যে তোকে আমার বলে যাইতে হবে কোথায় যাব না যাবো! আর একবার আমার মুখের উপর প্রশ্ন করবি সঙ্গে সঙ্গে থা*প্পড় দিব!”
মেঘের মুখটা চুপসে গেছে, চিবুক নামিয়েছে গলায়, পাতলা ওষ্ঠে বিড়বিড় করে বললো,
“হিট*লার একটা। ”
আবির ভাই তৎক্ষনাৎ জবাব,
“আমি হি*টলার হলে তুই কি?”
আবির ভাই শুনে ফেলছে? আঁতকে উঠলো মেঘ, আবির ভাইয়ের দিকে তাকানোর সাহস হলো না, থা*প্পড়ের ভয়ে ছুটে পালালো বাড়ির ভিতর।
আবির নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে অষ্টাদশীর পায়ের দিকে, নুপুরের ঝনঝন শব্দ কানে লাগছে৷ অকস্মাৎ আবিরের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির ঝলক দেখা গেলো।
(চলবে)