#আয়ুর_প্রহর
#পর্ব_১১
#আয়িশা_নুর_তৃষ্ণা
_____
আয়ুশ নিচের দিকে তাকিয়ে চা খেতে খেতে দুই বোনের কথা শুনছিল।প্রহরের নাম শুনে মাথা উঠিয়ে প্রহরের দিকে তাকালো আয়ুশ।আয়ুশের চোখে চোখ পড়তেই প্রহর অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নিল।আয়ুশ চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে প্রণয় ও প্রেমার দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বললো,
“তবে যাওয়া যাক!”
__
কিন্তু ওইদিন তাদের আর যাওয়া হলো না।তারা বাইরে যাবার জন্য রেডি হচ্ছিলো।এমন সময়ই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল।ক্রমে ক্রমে বৃষ্টির গতিবিধি আরো বাড়তে থাকে।অগত্যা বাসায়ই থাকতে হয়।
রাতের খাবার শেষ করে একটু আড্ডা দিয়ে চারজন ঘুমোতে গেল।আয়ুশ,প্রহর তাদের রুমে।প্রেমা আরেক বেডরুমে।আর প্রণয় গেস্টরূমে।
বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে প্রণয় চোখের উপর হাত উপুড় করে রেখে ভাবতে লাগলো তার প্রেয়সীর কথা।প্রেয়সীর সাথে তার জীবন জড়িয়ে যাওয়ার কথা।
__
ওইদিন যা হয়েছিল,(পূর্বের ঘটনা)
প্রণয় আর অনীতার এংগেজমেন্ট হওয়ার আগে থেকেই প্রণয় আর অনীতা একে অপরকে চিনতো।ভার্সিটির সিনিয়র জুনিয়র হিসেবে তারা পরিচিত ছিল।
প্রণয় ভার্সিটিতে বিভিন্ন ফাংশনে উপস্থাপনা করতো।অনিতাও বিভিন্ন বক্তৃতায় নিজের নাম দিতো।এক অনুষ্ঠানে প্রণয় আর তার ব্যাচের একজন মেয়ের উপস্থাপনা করার কথা ছিল। কিন্তু ওই মেয়েটা সেইদিন কিছু সমস্যার কারণে ভার্সিটিতে আসতে পারেনি।
স্বচ্ছ ও পরিষ্কার ভাষায় বক্তৃতা করতে পারার জন্য,আলোচ্য বিষয়ের পুরো বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তুলতে পারার জন্য তখন পুরো ভার্সিটিতে অনীতাকে প্রায় সবাই চিনে।
তাই স্যাররা মেয়ে উপস্থাপকের জায়গায় অনীতা’কে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
অনীতা যেহেতু আগে থেকে কোনো প্রিপারেশন নেয়নি,তাই প্রণয়কে বলা হলো,সে যেন অনীতা’কে সবকিছু বুঝিয়ে দেয় এবং অনীতার সাথে রিহার্সেল করে।
অনীতাকে সবকিছু বুঝাতে প্রণয়ের বেশি বেগ পেতে হলো না।একবার বুঝাতেই অনীতা বুঝে গেল সব।
মঞ্চে গিয়ে প্রথমবারের মতো নার্ভাসনেস কাটাতে প্রণয় অনীতা’কে সাহায্য করেছিল বটে। কিন্তু দুইজন যুগল এর আন্তরিক চেষ্টায় তাদের অনুষ্ঠান খুব সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়।
কাছ থেকে অনীতার বাচনভঙ্গি,পরিপাটি কথাবার্তা প্রণয়কে মুগ্ধ করে।আস্তে আস্তে মুগ্ধতা গড়ায় ভালোলাগায়।আর ভালোলাগা থেকে এক ঝটকায় সেটা পরিবর্তিত হয় মায়ায়।
ভার্সিটির ফাঁকে ফাঁকে নানান অজুহাতে অনীতার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতো প্রণয়। মাঝেমধ্যে সফল হতো।কখনোবা হতাশ হতো।
মেয়েরা অনেক কিছুই সহজে বুঝতে পারে। বিশেষ করে তাদের প্রতি কারো আকৃষ্ট হওয়াটা তারা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারে।কেউ কেউ এই বিষয়টায় ন্যাকামি করে কেউবা হেসে উড়িয়ে দেয়।
কিন্তু অনীতার ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটলো না।সে বিষয়টাকে সিরিয়াস হিসেবে নিলেও বিষয়টা প্রণয়ের সামনে প্রকাশ করলো না।
একদিন অনীতা নিজে থেকেই প্রণয়কে দেখা করার জন্য ডাকলো।অনীতা ভেবেছিল,আজ সে প্রণয়কে সরাসরি সব জিজ্ঞেস করবে।
দেখা করার পর অনীতা প্রণয়কে বললো,
–“ আমি আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই প্রণয়!”
–“ তো বলে ফেলো!”
–“ আপনাকে ভেবেচিন্তে উত্তর দিতে হবে।আপনার হ্যাঁ বা না অথবা যেকোনো কথাই আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ!”
–“ তাহলে তো মনে হচ্ছে বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ!”
চিল মুডে কথা বললেও প্রণয়ের বুকের ধুকপুকানী বেড়ে যায়।অনীতা কি বলবে তাকে?
আগপিছে আর কিছু না ভেবে প্রণয় বললো,
–“ চলো,নদীর পাশের খোলা মাঠটায় যাই।ওখানে দাঁড়িয়ে কথা বললে শান্তভাবে উত্তর দিতে পারবো।”
–“ বেশ!চলুন!”
নদীর তীরে গিয়ে কথা বলার জন্য ওরা একটা ওরা রাস্তার কিনার দিয়ে পাশাপাশি হাঁটছিল।কি একটা ভেবে অনীতা মুখ ফিরিয়ে পিছনে তাকালে পিছনে একটা গাড়িতে তার বাবাকে দেখতে পায়।
অনীতার বাবা সেদিন বাসা থেকে এয়ারপোর্ট যাচ্ছিলেন।যাওয়ার সময় গাড়ির গ্লাসের ফাঁক দিয়ে অনীতাকে কোনো ছেলের সাথে দেখতে পেয়ে তিনি চমকে যান।ওইদিন একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং থাকার কারণে তিনি দেশের বাইরে চলে যান আর উনার ওয়াইফ অর্থাৎ অনীতার মাকে বলে যান,যেন তিনি শীঘ্রই অনীতার বিয়ের বন্দোবস্ত করেন।নিজে যাই করেন,মেয়ের নামে যেন কোনো কলঙ্ক না রটে!
ওইদিনের পরই কাকতালীয়ভাবে প্রণয়ের মায়ের সাথে অনীতার মা মিসেস শেহনাজের পরিচয় হয়।কথায় কথায় উঠে আসে তাদের উভয়ের বিবাহযোগ্য ছেলে-মেয়ে আছে।
এতো বড় পরিবার দেখে সাবিনা বেগম ও আর না করেননি। পরবর্তী সপ্তাহেই পাত্রী দেখবেন বলে মনস্থির করে ফেলেছিলেন।
না চাইতেও অনীতা জেনে ফেললো যে,তার কারো সাথে বিয়ের আলোচনা চলছে।সব ঠিকঠাক থাকলে সামনের সপ্তাহেই এংগেজমেন্ট।এইদিকে প্রণয়ের সাথে ওইদিন আর কথা এগুতে পারেনি অনীতা।বাবাকে দেখে তড়িঘড়ি করে বাড়িতে চলে এসেছিল সে।
কিন্তু আজ যখন জানলো তার বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে,সে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না।সে সাথে সাথে প্রণয়কে ফোন দিল।
–“ আসসালামু আলাইকুম!”
–“ ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
প্রণয়ের কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই অনীতা প্রণয়কে তার চারজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে ইমিডিয়েটলি দেখা করতে বললো।সাথে একটা লোকেশনে ঠিক করে দিলো।
অনীতার ফোন পেয়ে প্রণয় কিছু একটার আভাস পেলো।সে বুঝলো কিছু একটা হতে চলেছে।তাই সে অনীতার কথা মোতাবেক তার চারজন কাছের ও বিশ্বস্ত বন্ধুকে ডেকে নিলো।
নির্দিষ্ট জায়গায় আসার পরপরই অনীতা প্রণয়কে নিয়ে তার বন্ধুদের থেকে একটু দূরে নিয়ে গেল।
অনীতা প্রণয়ের সামনে দাঁড়িয়ে তার চোখে চোখ রাখলো।ছলছল দৃষ্টিতে বললো,
-“ আমাকে ভালোবাসেন প্রণয়?”
প্রণয় হকচকিয়ে যায়। কিন্তু ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে,
“ আজ বুঝতে পারলে?!”
প্রণয়ের কথা শুনে অনীতা বুঝে ফেলে সে যা ভেবেছে তাই সঠিক।সরাসরি আর কোনো ন্যাকামি না করে সে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
-“ আমাকে বিয়ে করতে পারবেন প্রণয়?বাসা থেকে পাত্র দেখছে।এবার বোধহয় বিয়ে দিয়েই দিবে!”
অনীতার এহেন কথা শুনে প্রণয় চমকে যায়।অনীতার বিয়ে মানে!
প্রণয় ঘাবড়ে যায়।এতোদিনের মায়াকে সে কখনোই হারাতে দিতে পারবে না।
এই কথা বললে অনীতা বলে,তাহলে আজকেই তাকে বিয়ে করতে হবে। নয়তো প্রণয় তাকে অচিরেই হারাবে!
অনীতার কথা শুনে প্রণয় জিজ্ঞেস করে,
“য়মন থেকে বলছো তো!”
“ একদম!”
অনীতার কথা শুনে প্রণয় ও ছেলেমানুষের মতো অনীতার কথায় সায় দেয়।অনীতার কথা অনুযায়ী ওইদিন ওই সময়টাতেই তাদের বিয়ে হয়ে যায়।
বিয়ে হওয়ার পরপরই অনীতার বাসা থেকে কল আসে।তাকে এক্ষুনি বাসায় যেতে হবে।
লুকিয়ে বিয়ে করলেও অনীতা আর প্রণয়ের ইচ্ছে ছিল, পারিবারিকভাবে সম্মতি নিয়েই তারা নতুন করে বিয়ে করবে।তাই ওইদিন দুজন দুইজনের বাসায় চলে গেল।
বাসায় যাওয়ার পর অনীতার বাসা থেকে অনীতার ফোন কেড়ে নেওয়া হলো।কারণ সে বাসায় বলেছিল,সে এক্ষুনি বিয়ে করতে চায় না।আর অনীতার মা অনীতার বাবাকে এই কথা শোনানোর পর অনীতার বাবা বলেছেন অনীতার থেকে ফোন নিয়ে নেওয়ার জন্য।
এইদিকে প্রণয়ের মা প্রণয়কে মেয়ে দেখতে যাবার জন্য রাজি করাতে পারেননি। কিন্তু যখনি তিনি ফোনে রাখা মেয়ের ছবি প্রণয়ের চোখের সামনে এনে দেখাতে লাগলেন তখনি প্রণয় হতভম্ব হয়ে গেল। পাশাপাশি রাজি হয়ে গেল।আর কেউ না জানুক,সে তো জানে এটা তার প্রেয়সী!
এতোদিন তার মাথায় ঘুরেছে কিভাবে সামাজিকভাবে সে অনীতাকে বিয়ে করবে।এখন যা হলো,“এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!”
সে নিজেও জানতো না,তার সাথে অনীতার বিয়ের কথাবার্তা চলছে।জানামাত্রই অনীতাকে ফোন দিতে গিয়েও থেমে যায় প্রণয়। সে ভাবে দেখাদেখির আগ পর্যন্ত আর অনীতার সাথে কথা বলবে না।দেখতে যাওয়ার দিন অনীতাকে সারপ্রাইজ দিবে।
আর এইদিকে অনীতা বিয়ে বসতে রাজী না হলে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়।এটাতে ও কাজ না হলে অনীতাকে বলা হয় “দেখতে এলেই বিয়ে হয়ে যায় না।এখানে কথা দিয়েছে।উনারা এসে দেখেই চলে যাবে।”
অনীতাও জানতো না তার সাথে যে ছেলের বিয়ের কথাবার্তা চলছে সে আর কেউ নয় বরং তার অর্ধাঙ্গ,তার স্বামী প্রণয়।
এংগেজমেন্টের দিন কনে দেখার সময় যখন সবাই কথা বলছিল তখন প্রণয়ের গলার আওয়াজ পেয়ে অনীতা চমকে উঠলো।চকিত নয়নে মাথা উঠালো সে।সামনে থাকা ব্যাক্তিটিকে পাত্ররুপে সে কখনোই আশা করেনি। কিন্তু এই নিরাশাই আজ তার সম্মুখে বাস্তবতা হয়ে ধরা দিচ্ছে।
আর তারপর,বড়রা কথাবার্তা বলতে গেলো।প্রণয়ের মা প্রণয়কে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন।
এরপর…….
এপরের ঘটনা তো সবাই জানেই….
__
এইদিকে
এসব ভাবতে ভাবতে প্রণয় যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল।ওইদিনের পর অনীতার সাথে মাত্র দুইবার কথা হয়েছে। কিন্তু আজকাল অনীতা যেন তাকে ইগনোর করছে।এই বিষয়টা কিছুতেই মেনে নিতে পারলো না প্রণয়।
প্রণয় এক হাত মাথার নিচে রেখে শুয়ে থেকেই অনীতাকে ফোন দিল। যথারীতি কল রিসিভ ও হলো।প্রণয় বললো,
-“ হ্যালো অনী”!
-“ জি,বলুন”
-“ কেমন আছো?”
-“ ভালো ”
-“ আমায় জিজ্ঞেস করবে না, কেমন আছি?”
কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতা!
উত্তর না পেয়ে প্রণয় আবার বললো,
-“ তুমি আমার সাথে এমন করছো কেন অনী?
-“ কি করেছি আমি?”
-“ তুমি ভালো জানো”!
-“ জানি না।”
-“ চলো না দেখা করি।”
-“ পারবো না”
-“কেন?কেন আমার সাথে এমন করছো অনি!?আমি কি খুব খারাপ ছেলে?”
-“ আপনার মধ্যে আমি আজ অব্দি কোনো মন্দ জিনিস দেখিনি।তাই আপনি আমার কাছে খারাপ ছেলে না।”
-“ তাহলে আমাকে একটু ভালোবাসো না অনি!বেশি না। একটুখানি!”
কোনো প্রত্যুত্তর এলো না।অনীতা ফোন রেখে দিয়েছে।
দু’পাশ থেকে দুইজনেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
একজন নিজের পছন্দের রমণীকে নিজের করে পেয়েও না পাওয়ার।
আর অন্যজন, নিজের ভালোবাসার মানুষটি তাকে ভালোবাসে জেনেও তার সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখিয়েও তাকে বারবার ফিরিয়ে দেওয়ার।তার সাথে তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার ভাবানুভূতি প্রকাশ করতে না পারার।
___
ওইদিন মধ্যরাতেই আরেকটা কাণ্ড ঘটে গেল।রাত তখন ৩:০০ টা বাজে।প্রণয়ের ফোন বেজে উঠলো।অনিতা কল দিয়েছে।দু বার রিং হয়ে কেটে গিয়েছিল।তৃতীয়বার রিং হতেই যাবে প্রণয় ঠুস করে ফোন কেটে দিয়ে নিজেই ব্যাক করে।ওপাশ থেকে রিসিভ করার সাথে সাথেই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে অনিতার আর্তনাদ যা প্রণয়ের কাছে অতি ভয়ানক লাগলো।
“প্রণয়,প্লিজ তাড়াতাড়ি বাসায় আসুন।এখানে একজন খু’ন হতে যাচ্ছে।।আমার ফোন থেকে সব নাম্বার ডিলিট হয়ে গিয়েছে।তাই ভাইয়াকেও কল দিতে পারিনি। শুধুমাত্র আপনার নাম্বার টাই মুখস্থ ছিল।আমার রুম বাড়ির পিছনের দিকে,নিচতলার দুই নম্বর রুমটা আমার রুম।প্লিজ প্রণয় তাড়াতাড়ি আসুন।এখানে খু’ন হতে যাচ্ছে।”
বলেই অনিতা ফুঁপিয়ে মুখে হাত চেপে কাঁদতে লাগলো।
অনিতার কান্না প্রণয়ের সহ্য হলো না।সে আর কিছু জিজ্ঞাসা করলো না অনীতাকে। শুধু বললো,
“ কাঁদবে না অনিতা।আমি এক্ষুনি আসছি।”
প্রণয় কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।এতোরাতে আয়ুশকে ডাকাও ঠিক হবে না ভেবে একাই অনিতাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।
প্রণয় বাসা থেকে বের হতে যাবে,এমন সময় দেখলো ফ্ল্যাটের দরজাটা ভেজানো।হয়তো কেউ এসেছিল। কিন্তু কে আসবে?
নাকি রাতে ফ্ল্যাটের দরজা লাগাতে ভুলে গিয়েছিল তারা। কিন্তু এমনটা তো হবার নয়।প্রণয় দেখেছিল,আয়ুশ নিজের হাতে দরজা লাগিয়েছে।
নাহ!আর কিছু ভাবার সময় পেলো না প্রণয়। বেঁচে থাকলে এসব পরেও ভাবা যাবে।আপাতত অনিতার কাছে যেতে হবে তাকে।
যাওয়ার আগে বাহির থেকে দরজা লক করে গেলো প্রণয়।
গ্যারেজ খোলাই ছিল। গ্যারেজে আয়ুশের গাড়ির পাশাপাশি প্রণয়ের মোটরসাইকেল রাখা ছিল।প্রণয় গ্যারেজে গিয়ে দেখতে পায়,সেখানে আয়ুশের গাড়ি নেই।কোথায় গেল আয়ুশের গাড়ি?
__
নিরব,সুনসান রাস্তা পেরিয়ে ল্যাম্পপোস্ট আর বাইকের মৃদু আলোতে মোটরসাইকেলে করে অনিতাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে প্রণয়।
ছেলে হলেও মাঝেমধ্যে ভুতের ভয় পেতো প্রণয়।অনেকসময় রাত্রিবেলা সাদা জামা পড়ে প্রেমা প্রণয় কে খুব ভয় দেখিয়েছে।এমনিতে সাহসী হলেও ভুত-প্রেতের ব্যাপারে একটু ভীতু হয়ে যায় প্রণয়।
কিন্তু আজকে যেন তার সমস্ত ভয়-ডর কোথাও উধাও হয়ে গিয়েছে।সে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালাতে লাগালো। দ্রুততার সাথে এগুলেও পথ যেন শেষই হচ্ছে না আজ।
তাড়াহুড়োতে বাইকের একপাশে হেলমেট ঝুলানো থাকলেও প্রণয় হেলমেট না পড়েই যাচ্ছিলো।
পিচ্ছিল রাস্তায় নিয়ম না মেনে এতো স্পিডে গাড়ি চালানোর কারণে একসময় মোটরসাইকেল গিয়ে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেল।ব্রেক সামলিয়ে উঠলেও প্রণয় টাল সামলাতে না পেরে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলো।মাথায় একটুখানি চোট ও খায় প্রণয়।তবে সেসব পাত্তা না দিয়ে সাথে সাথেই হেলমেট পড়ে নেয় সে।
আর একটু হলেই মোটরসাইকেলের লাইটটা ভেঙে যাচ্ছিল।প্রণয় সেদিকে খেয়াল না করে আবার আগের গতিতে বাইক চালিয়ে যেতে থাকে।
অনীতাদের বাড়ির একটু দূরে একটা ঝোপের আড়ালে প্রণয় তার মোটরসাইকেল আর হেলমেট সরিয়ে রাখে।এতো রাতে মোটরসাইকেলের আওয়াজ শুনলে কেউ সন্দেহ করতে পারে।
অনীতাদের বাড়িতে পৌঁছানোর পর প্রণয় বাড়ির বাইরে কয়েকজন লোকের আবছায়া দেখতে পায়।বাইরে জমজমাট অন্ধকার থাকার দরুন লোকদের চিনতে পারে না প্রণয়।
গেটের সামনে এতোগুলো লোক দেখে গেট দিয়ে ভিতরে ঢোকার রিস্ক নিতে পারেনা প্রণয়।তাই প্রণয় বুদ্ধি খাটায়।সে ঠিক করে,পাঁচিল ঘেরা বাড়ির ইটের ব্যারিকেড টপকে পিছন দিক দিয়ে বাড়িতে ঢুকবে। সর্বপ্রথম অনীতার রুমে যাবে।
নীচতলার বাড়ির পিছনের দিকের দুই নম্বর বেডরুমটা অনীতার।তাই প্রণয় ঠিক করে,জানালা দিয়েই সে অনীতার রুমে ঢুকবে।
পিচ্ছিল পাঁচিল টপকাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে প্রণয় এর। একে তো দৌড়ঝাঁপের অভ্যাস নেই।তার উপর সেই ছোটবেলায় এমন করে পাঁচিল টপকেছিল।তাই পাঁচিল টপকানোকেই একটা বড়সড় যু’দ্ধ মনে হলো প্রণয় এর।
অনেক কষ্টে পাঁচিল পেরোল প্রণয়।নিচতলার দুই নম্বর রুমটা খুঁজে পেতে বেশি দেরী হলো না।রুম সংখ্যা অনুযায়ী হিসেব করে সে ধরে ফেললো,এটাই অনীতার রুম।
অনীতার রুম ভেবে সে ওই রুমের জানালায় মৃদু আওয়াজে ঠকঠক করে ফিসফিসিয়ে বললো,
“ অনী,আমি এসেছি!জানালা খোলো।”
প্রণয়ের কথা শুনেই রুমের ওপাশে থাকা মানুষটা যেন তার প্রানস্পন্দন ফিরে পেলো।দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে প্রণয়ের আগমন খানিকক্ষণ অনুভব করে সাথে সাথেই জানালা খুলে গেল।
প্রণয় যেই না জানালায় লাফ দিতে যাবে,তক্ষুনি ভেসে এলো গু’লির আওয়াজ………………….
চলবে…..