আরেকবার আবর্তন পর্ব-০৭

0
14

#আরেকবার_আবর্তন ( সপ্তম পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<১৩>
সেইদিনের সেই ভাবনার পরে কটা দিন কেটে গেছে | আজ শিউলি স্কুলে পড়ানো শেষ করে বাজারে গেছিলো একটু | বাবার ওষুধগুলো কেনাও বাকি ছিল কিছু ! সেইসব করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে গেছিলো আজ | কিন্তু মাঝ রাস্তায় এসে অটো ধরতে যাওয়ার সময়ই ঝামেলা | আজ কি একটা ঝামেলা হয়েছে না কি দুপুরে , তাই ওদের বাড়ির রুটের সমস্ত অটো বন্ধ | তাই আর কোনো উপায় না দেখে শিউলি দুটো বাজারের ভারী ব্যাগ নিয়ে হাঁটতেই শুরু করেছিল | কপালে ভোগান্তি থাকলে যা হয় | কিন্তু হঠাৎ সেইদিন ভোগান্তি কাটিয়ে একটা গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছিল মাঝরাস্তায় ওর সামনে | শরৎ এ-কদিনে মোটামুটি ঠিক হয়ে হসপিটালে জয়েন করেছিল আবার | ও ই ফিরছিলো হসপিটাল থেকে ড্রাইভ করে | মাঝ রাস্তায় ওই চেনা মুখটা কে দেখতে পেয়ে আপনাআপনিই ব্রেকে পা চলে গেছিলো ওর | তারপর গাড়ির জানলার কাঁচ নামিয়ে শিউলিকে জিজ্ঞেস করেছিল , ———- “এই ভারী দুটো ব্যাগ নিয়ে এইভাবে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিস কেন তুই ?”
শিউলি আচমকা এই ছেলেটাকে দেখে দু সেকেন্ড থমকে গেছিলো এখন | তারপর একটু কথা সাজিয়ে বলেছিলো , ———— ” না , আসলে অটো বন্ধ আমাদের রুটে | তাই হাঁটছিলাম | সামনে থেকে রিকশা নিয়ে নিতাম আমি |”
কথাটা শুনে শরৎ আর কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা না করে সোজা গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়েছিলো ওর সামনে, তারপর অর্ডার করার মতন করেই বলেছিলো , ——— ” আর রিক্সায় উঠে কাজ নেই তোর | আমিও বাড়ি ফিরছি | চল , একসঙ্গে ফিরবো |”
না , আর না বললেও যে শরৎ শুনবে না , সেটা শিউলি জানে | তার ওপরে বাজারের ব্যাগগুলো সত্যি বড্ডো ভারী | তাই আর কিছু না বলে ও শরতের অর্ডারটা ফলো করেছিল | ব্যাগসমেত নিজেকে নিয়ে বসেছিল ছেলেটার গাড়িতে | তবে রাস্তাটা চলতে শুরু করলেও ও চুপই ছিল | অনেকদিন হলো এইরকম চুপচাপ থাকতেই ভালো লাগে শিউলির ! কারোর সাথে কথা শুরু করা , কথা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া , এসবকে কেমন বাড়তি একটা কাজ বলে মনে হয় ওর | তবে সেদিন ও চুপ থাকলেও শরৎ বকবক করছিলো কেমন নিজে থেকেই | তিন বছর আগের চুপচাপ শান্ত গম্ভীর ছেলেটা আজকাল যেন নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে ওর সামনে | এই শরৎ তো একতরফা বকে যেতে পারে | এমন কি নিজের কথা দিয়ে ওকে হাসিয়েও দিতে পারে | এই যেমন কিছুক্ষন আগেই বললো , ———– ” তুই মনে হয় তোর জবটাকে খুব সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলেছিস লাইফে ! একদম গম্ভীর চুপচাপ দিদিমনি হয়ে থাকিস সারাক্ষন | প্রায় দশ মিনিট হলো আমরা একই গাড়িতে একসঙ্গে যাচ্ছি | কিন্তু তুই মনে হয় হ্যাঁ , হুম ছাড়া একটা এক্সট্রা ওয়ার্ডও খরচ করিসনি এতক্ষনে ! ইন্ডিয়াতে কি হাসার সাথে সাথে কথা বলতে গেলেও সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয় আজকাল ? তোকে দেখে তো আমার সেরকমই মনে হচ্ছে |”
কথাটা শুনে শিউলি না চাইতেও আলতো হেসে ফেলেছিলো হঠাৎ | তারপর দু সেকেন্ড ভেবে বলেছিলো , ——- ” কেন ? কি বলবো আমি ? কি কথা বলার আছে আর ! দেশ , সমাজ , রাজনীতি নিয়ে কিছু শুনতে চাও না কি ?”
শরৎ এবার ওর কথার উত্তরে এক সেকেন্ডও সময় না নিয়ে বলেছিলো , ——– ” না না | তুই চাইলে গরুর রচনাও বলতে পারিস | আমার শুনতে কোনো প্রব্লেম নেই | চলবে |”
না , শিউলি এর আর কোনো জবাব দিতে পারেনি ঠিক | বরং অনেকদিন বাদে মন খুলে হেসে ফেলেছিলো শরতের সামনে | আর শরতের মুখেও এবার এক চিলতে হাসি এসে ভিড় করেছিল হঠাৎ | তারপর কিছু না বলেই ও মাঝ রাস্তায় আবার গাড়িটা দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলো সেইদিন | তারপর শিউলিকে কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ না দিয়ে নিজে থেকেই বলে উঠেছিল , ——– ” তুই পাঁচ মিনিট ওয়েট কর | আমার একটা ছোট্ট কাজ আছে | এক্ষুনি আসছি |” ….. কথাটা শেষ করেই ও গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে গেছিলো শিউলির সামনে | শিউলি ঠিক ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি সেই মুহূর্তে ! কি আবার জরুরি কাজ কে জানে ! কোনো জেরক্স করানোর আছে না কি ! এই রাস্তার উল্টো দিকে তো একটা জেরক্স , আর একটা আইসক্রিমের দোকান ছাড়া অন্য কিছু নেই | এইসবই ভাবছিলো একা একা চুপচাপ বসে , তখনই হঠাৎ শরৎ দুটো চকলেট আইসক্রিম নিয়ে হাজির | তারপর শিউলির কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই একটা আইসক্রিম ওর হাতে ধরিয়ে বলে উঠলো , ———– ” ‘এইসব আবার কি !’ , ‘আইসক্রিম কেন আনতে গেলে !’ , ‘কি দরকার ছিল !’ , এইসব ভদ্রতার লাইন একদম বলিস না প্লিজ | আসলে আমার আইসক্রিম খেতে খুব ইচ্ছে করছিলো , তাই এনেছি | আর কি বল তো , ফুচকা , আইসক্রিম এই দুটো জিনিস একা খেয়ে মজা নেই | তাই তোকে আমাকে কম্পানি দিতেই হবে এখন | যাইহোক এবার আইসক্রিমটা গোলে যাওয়ার আগে দয়া করে খেতে স্টার্ট কর | আইসক্রিম হাতে নিয়ে টাইম ওয়েস্ট করাটা ঠিক না !”
না , শিউলি সত্যি এরপর আর কোনো ভদ্রতার লাইন বলতে পারেনি ঠিক ! আসলে ওর বলার আগেই তো শরৎ সব লাইনগুলো গুছিয়ে বলে ফেললো ওর সামনে | তাই চুপচাপ আইসক্রিমে কনসেনট্রেট করা ছাড়া আর কোনো উপায়ই ছিল না ! তবে সত্যি , এই সেপ্টেম্বর মাসের পচা গরমে হঠাৎ একটা আইসক্রিম ভেতর থেকে মনটাকে ভালো করে দিলো একদম বিনা নোটিশে | কতদিন মনে হয় এরকম বেহিসেবি , আচমকা ভালো লাগা আসেনি ওর কাছে ! সব সময় টাকার টেনশন, বাবার শরীর , পার্থর ভয় , সংসারের কথা ভাবতে ভাবতে লাইফের ছোট ছোট মিনিট সেকেন্ডগুলোকে হারিয়ে ফেলেছিলো যেন শিউলি কোথাও | আজ মনে হচ্ছে সেই হারানো মিনিট সেকেন্ডগুলো ঠিক এড্রেসটা খুঁজে ওর কাছে ফিরে এসেছে হঠাৎ , ছোট্ট একটা আইসক্রিম হয়ে | এর জন্য মনে মনে শরৎকে একটা থ্যাঙ্ক ইউ তো বললোই , চুপচাপ নিঃশব্দে |
<১৪>
এরপর আস্তে আস্তে একটা মাস কেটে গেছে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে | এটা অক্টবরের ফার্স্ট উইক | আর দেড় সপ্তাহ বাদেই শহরে দূর্গা পুজো | চারিদিকে প্যান্ডেল বাঁধার কাজ প্রায় তুঙ্গে | সঙ্গে এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে অদ্ভুত একটা সোনালী রঙের রোদ , আর শরতের নীল পরিষ্কার আকাশ | আগে হলে এই শরৎ , এই আকাশ দেখে শিউলির নিজের মন ভাঙার গল্পটা মনে পরে যেত ! কিন্তু এইবার আর সেই খারাপ লাগাটা নেই মনে | হয়তো শরৎই সেইসব পুরোনো কথাকে আর মনে রাখতে দেয়নি ! জোর করেই ভুলিয়ে দিয়েছে সব কেমন | নিজের কাজে , নিজের ব্যবহারে , নিজের কথায় নতুন একটা ভালো লাগা তৈরী করেছে শিউলির মনে | তাই মনে হয় আজকাল শিউলি শরৎকে দেখলে আর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে না ! আলতো হাসি , টুকটাক কথা চলেই আসে ওর | তারপর শরতের নাম্বার থেকে ওর কাছে ফোন এলে ও আর অবাক হয় না ! কিছু না ভেবেই ফোনটা ধরে কথা বলতে শুরু করে দেয় | তবে হ্যাঁ , শুধু এই তিন বছর বাদে আর বেহিসেবিভাবে ভাবে না কিছু | কোনো রূপকথার স্বপ্ন আর দেখে না ও | বাস্তবের ভিড়েই ভালো থাকার চেষ্টা করে সব সময় | এটাই যা তফাৎ | যাইহোক , সেইদিন এই ভালো থাকার চেষ্টাটাকে সঙ্গে করেই শিউলি ধর্মতলা গেছিলো | বাবা মায়ের জন্য পুজোর কিছু কেনাকাটি করতে | অনেকদিন বাদে এইভাবে পুজোর মার্কেটিং করতে এলো আজ | হয়তো তিন বছর আগের পুরোনো দিনগুলোকে ফিরে পাওয়ার একটা অদ্ভুত ইচ্ছে শুরু হয়েছে ওর মনে ! এইসবই ভেবে দোকানগুলো ঘুরছিলো এক এক করে | মায়ের শাড়ি , বাবার শার্ট , পারফিউম , দেখে দেখে কিনছিল মন দিয়ে | তবে সেদিন এইসবের মধ্যে একটা রেস্টুরেন্টের পাশ দিতে যেতে গিয়ে পা টা থমকে গেলো হঠাৎ শিউলির | কাঁচের বড়ো দেয়ালের ওপারে সেই খুব চেনা মুখটা বসে আছে , একজন নতুন মুখের সাথে | শরৎ এখানে এই মেয়েটার সাথে ! দৃশ্যটা দেখে আপনাআপনি না চাইতেও ভেতর থেকে কিছু একটা যেন ভাঙলো ওর | তাই কয়েক সেকেন্ডের জন্য কিছুতেই আর রাস্তাটা দিয়ে এগিয়ে যেতে পারলো না ও | চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো এক জায়গায় শিউলি | কিন্তু এই মুহূর্তে কাঁচের দেয়ালের ওপার থেকে শরতের চোখও হঠাৎ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা শিউলির দিকে এসে আটকে গেছে | ও এখানে কি করছে ! হাতে শপিং ব্যাগ | কেনাকাটি করতে এসেছিলো না কি এখানে ! এইসব ভাবনার ভিড়েই ও উঠে দাঁড়ালো | তারপর উল্টো দিকের মেয়েটাকে কিছু না বলেই সোজা রেস্টুরেন্টের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো রাস্তায় , শিউলির সামনে | কিন্তু শিউলির অন্ধকার মুখটা দেখে হঠাৎ মনে হলো এই মেয়েটার সাথে ওকে এই রেস্টুরেন্টে বসে থাকতে দেখে শিউলি উল্টো পাল্টা কিছু ভাবেনি তো ! এই রে ! ভাবেনি তো কিছু চলছে শরতের এই মেয়েটার সাথে ! এইসব ভেবেই ও নিজে থেকে বলে উঠলো , ————- ” তুই এখানে কি করছিস ? চল , ভেতরে রেস্টুরেন্টে চল | ও নিশা , আমার কলিগ | আলাপ করিয়ে দিচ্ছি তোর সঙ্গে | ” ………. কথাটা শেষ করেই ও শিউলির হাতটা ধরলো এবার , ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য | কিন্তু শিউলি কিছুতেই এক পা এগোলো না আজ | বরং জোর করে একটু হাসার চেষ্টা করে বললো , ———- ” না না | তোমরা গল্প করো | আমার একটু তাড়া আছে | আমি আসছি |” …
কথাটা শেষ করেই সেইদিন শিউলি শরতের হাতটা নিজের হাত থেকে সরিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো সেই মুহূর্তে , তবে শরৎ আর একবার ওর হাতটা শক্ত করে ধরে ওকে দৃঢ় গলায় বললো হঠাৎ , ————– ” তুই অন্য কিছু ভাবছিস না তো ? ও কিন্তু শুধুই আমার কলিগ | একটা কেস নিয়ে আলোচনা করার জন্য এখানে এসেছিলাম জাস্ট | ব্যাস , আর কিছুই না |”
শিউলি এবার নিজেকে একটু গুছিয়ে দৃঢ় গলায় বলে উঠলো শরৎকে , ——— ” কিছু হলেও বা আমার কি ! ভালো তো | ”
শরৎ আচমকা এরকম একটা কথা শুনে কিছু বুঝতে না পেরে অবাক হয়েই জিজ্ঞাসা করলো , ———– ” মানে ? কি বলছিস তুই ?”
শিউলি এর উত্তরে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে একটু গুছিয়ে বললো , ——— ” মানে তোমার সাথে কারোর যদি রিলেশন থাকেও , সেটা তো ভালো ব্যাপার | আমি জানলে খুশিই হবো |”
শিউলির এই গোছানো উত্তর শুনে শরৎ এর মুখটা অন্ধকার হয়ে গেলো হঠাৎ | ও আরেকবার নিজের মনেই বলে উঠলো , ——– ” মানে ! তোর সত্যি কিছু যায় আসে না ? তুই তো আমাকে !”
না , শরতের কথাটাকে সেদিন শিউলি শেষ করতে না দিয়েই বলে উঠেছিল , ———– ” ঐসব পুরোনো কথা | আর তিন বছর আগে যা বলেছিলাম , তার উত্তরও তো তুমি সঙ্গে সঙ্গেই দিয়ে দিয়েছিলে আমাকে | খুব ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলে যে যেটা আমি ভাবছি , সেটা একতরফা | হ্যাঁ , এতো কিছু জেনে প্রথমে আমার খুব খারাপ লেগেছিলো | কিন্তু তারপর মনে হয়েছে এটাই হয়তো ঠিক | সব সময় তো আমি যা চাই, আমি যা ভাবছি সেইসব ভাবনা মিলবে এরকম কোনো কথা নেই ! আর সেই না পাওয়া , খারাপ লাগাগুলোকে একসেপ্ট করেই লাইফে এগিয়ে যেতে হয় | নইলে ভালো থাকা যায় না | আর আমিও এগিয়ে গিয়েছি | যাইহোক , আমার সঙ্গে আর এতক্ষন দাঁড়িয়ে কথা বলতে হবে না এখন | ভেতরে মেয়েটা অপেক্ষা করছে | যাও |”
কথাটা শেষ করেই শিউলি সেইদিন আর দাঁড়ায়নি ওই রাস্তায় | শরতের দিকে ফিরে না তাকিয়েই এগিয়ে গিয়েছিলো নিজের সঙ্গে , ভিড় রাস্তায় | এই এগিয়ে যাওয়াটাই হয়তো ঠিক | তিন বছর আগে যেই কষ্টটা পেয়েছে একজনের জন্য , সেটা তো বার বার নিজেকে দিতে পারবে না ও | বার বার ভেঙে যেতে পারবে না শরতের কথা ভেবে | আর শরৎ এই কদিন ওর জন্য যা যা করেছে , সেটা ওর অবস্থার কথা ভেবে করেছে | শরৎ মানুষ হিসেবে তো ভালো ! তাই হয়তো একটা মেয়েকে কেউ ধরে মারছে , মেয়েটার সঙ্গে নোংড়ামি করছে , এটা ও ঠিক মেনে নিতে পারেনি ! সেই জন্য নিজে থেকে হেল্প করতে এগিয়ে এসেছিলো সব সময় | এর আর অন্য কোনো মানে নেই | আর এই রেস্টুরেন্টে বসে থাকা মেয়েটাই হয়তো শরতের গার্লফ্রেন্ড ! কিন্তু পুরোনো ঘটনাটার জন্য শরৎ সেটা মন খুলে একসেপ্ট করতে পারলো না ঠিক শিউলির কাছে ! ভেবেছে হয়তো পুরোনো কথা ভেবে ওর খারাপ লাগবে | কষ্ট হবে আবার | তাই বলতে পারলো না সত্যিটা | তবে শিউলি আর এই পুরোনো কথাগুলো মনে রাখতে দেবে না শরৎকে | ওর খারাপ লাগা , কষ্টগুলোর কথা অন্য কারোর ভাবার তো দরকার নেই ! শরৎ ওকে ভালোবাসতে পারেনি বলে ওর সামনে অন্য কাউকে কোনোদিনও ভালোবাসতে পারবে না , এরকমও তো কোনো কথা নেই ! তাই শিউলি সাজানো উত্তরটা দিয়ে আজ ওই পুরোনো একতরফা গল্পটাকে একেবারে শেষ করে এলো শরতের সামনে | আর এই মাঝের তিন বছর যথেষ্ট সময় , না পাওয়া , খারাপ লাগাগুলোকে একসেপ্ট করার জন্য | একটা নিজের লেখা গল্পকে পুরোপুরি শেষ করে দেয়ার জন্য | শরৎকে নিজের মন থেকে একেবারে মুছে ফেলার জন্য | আর ঠিকই তো , যেই ফিলিংসগুলোর দাম কেউ কখনো দিলো না , সেগুলোকে জমিয়ে রাখার আর তো কোনো মানে নেই ! শেষ তো ওকে করতেই হতো সব ! নিজে থেকে , নিজের জন্য | কথাগুলো এক মনে ভাবতে ভাবতেই শিউলি সেদিন বাড়ি ফিরেছিল বিকেলে | তবে আজ কোনো কারণ ছাড়াই অনেকদিন বাদে একটা পুরোনো কষ্টের জল এসে জমছিল ওর মনে ! চোখটা বার বার ভিজে যাচ্ছিলো তাই নিজে থেকে কেমন | আসলে জোর করে যতই শেষ করার চেষ্টা করুক , ওই পুরোনো না লেখা একতরফা গল্পটার রেশ আজও হয়তো রয়ে গেছে মনে ! তাই এই জলটা এসে ভিড় করছে শিউলির চোখে |
চলবে।