আলগোছে আছো হৃদমাঝারে পর্ব-০৭

0
73

#আলগোছে_আছো_হৃদমাঝারে
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_সাত
[১৮+ এলার্ট]
“আমার কষ্ট হইতাছে। আমারে ছাড়েন। আমার ব্যাথা লাগতাছে। আমি তো মই*রা যামু। ছাড়েন আমারে।”
লিলির কাতর কণ্ঠে কথাগুলো শুনেও ছাড়ল না। দুজন মিলে একসাথে লিলির শরীরটা খু*বলে খাচ্ছে। প্রায় ২ঘন্টা ধরে চলছে এই অত্যাচার। লিলি এর মাঝে দুইবার জ্ঞান হারিয়েছিল৷ তবুও ছাড়েনি। আর সহ্য করতে পারল না, ছোট্ট লিলি। পুনরায় জ্ঞান হারাল। এবার ছেলে দুটোও বিরতিতে গেল। একজন হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠল,
“ইয়ার, মেয়েটা বড্ড নেশালো৷ কিছুতেই ছাড়তে ইচ্ছা করছে না।”
দ্বিতীয় জন তাল মিলিয়ে বলে উঠল,
“বেশি লোড নিতে পারবে না। মা’রা যেতে পারে।”
আগের ছেলেটা এবার মুখে বিশ্রি হাসি প্রয়োগ করে বলে উঠল,
“ডেড বডির সাথে সে*** করার মজাই আলাদা।”
ছেলেটার কথা শুনে দ্বিতীয়জন নাক ছিটকে উঠল। দাঁড়িয়ে প্যান্টের চেইন লাগাতে লাগাতে বলতে লাগল,
“তুই আস্তো মেয়েবাজ, শা*লা কু*ত্তা। আমার আর ইচ্ছা নাই। আমি যাই। তুই এই মেয়ের সাথে যা খুশি কর। আমার দেখার বিষয় না।”
বলেই চলে গেল। যাওয়ার আগে একবার লিলির বস্ত্রহীন নিস্তব্ধ দেহের দিকে তাকাতে ভুলল না।



“মিস জায়রা, শুনছেন?”
জায়রা সবে মাত্র কলেজ থেকে বেরিয়েছে। পেছন থেকে পরিচিত কণ্ঠ শুনে দাঁড়িয়ে পড়ল। ঘুরে তাকিয়ে পরিচিত একজনের মুখ দেখে ঠোঁটদ্বয়ে হাসি ফুটল। হাস্যজ্বল বাক্যে বলল,
“শুনছি, মিস্টার জাইহান।”
জাইহান মুচকি হাসল। জায়রা চোখ সে হাসি এড়ায়নি। ছেলেটা খুব সুন্দর করে হাসে। কিন্তু কেন? ছেলেদের এমন ভাবে মেয়েদের হাসতে হবে কেন? এমন হাসি দিলে যে কোনো মেয়ে প্রেমে পড়ে যাবে। ধুর! কি ভাবছি? নিজের ভাবনায় নিজেই বিরক্ত হলো জায়রা। মনে মনে বলে উঠল,
“জীবনে দ্বিতীয় বার যে আসবে সে খুব দামী হবে। পারফেক্ট নয়, পার্মানেন্ট হবে।”
জাইহান জায়রার দিকে এগিয়ে এসে শান্ত বাক্যে জিজ্ঞেস করল,
“কিছু প্রশ্ন করার ছিল আপনাকে। যদি আপত্তি না থাকে তাহলে কি একসাথে কোথাও বসতে পারি?”
জায়রা হেসে বলল,
“নো, মিস্টার জাইহান। বসতে আমার খুব আপত্তি আছে…।”
জাইহানের মুখটা চুপসে গেল। তা দেখে জায়রা হেসে নিচু স্বরে বলল,
“তবে হাঁটতে কোনো আপত্তি নেই। চলুন একসাথে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি। রাজি, মিস্টার জাইহান?”
জাইহান হেসে ফেলল। ধুর! ছেলেটা বার বার হাসে৷ হেসে বলল,
“রাজি, মিস জায়রা।”
দুজন একসাথে হাঁটতে শুরু করল। জাইহান কিছুটা কনফিউজড। কিভাবে প্রশ্ন করা যায়? যদি কোনো প্রশ্নে জায়রা বিরক্ত হয়! উফফ! প্রেমে পড়লে ছেলেরা সব বিষয়ে একটু আধটু কনফিউজড হয়ে যায়। জাইহানের নিরবতা দেখে জায়রা বলে উঠল,
“আমার সাথে সেদিন কি ঘটেছিল সেটাই জিজ্ঞেস করবেন, তাই তো?”
জাইহান বরাবরের মতো হাস্যজ্বল বাক্যে বলল,
“মেজর জেনারেল আমির হোসেনের মেয়ে যে বুদ্ধিমতী তা আমি আগের থেকেই জানি।”
জায়রা হেসে ফেলল। জিজ্ঞেস করল,
“আমাকে আগের থেকে চিনতেন বুঝি?”
“চিনতাম তবে স্যারের মেয়ে হিসেবে নয়।”
“তাহলে…।”
“আমার হৃদয়ের বাগানে এক ফুল ফুটেছিল। নাম ছিল তার ‘অপরিচিতা’। সে ফুলের নাম খুঁজতে গিয়ে পেয়েছি ‘পরিচিতাকে’।
জাইহানের এহেন বাক্যে জায়রা থমকাল। অবাক পানে তাকাল জাইহানের দিকে। কিছুই বুঝে উঠতে পারল না। অবুঝের মতো প্রশ্ন করল,
“কে সেই অপরিচিতা?”
“তুমি।”
জাইহান কথাটা বলে দাঁড়িয়ে পড়ল। ভয় ভয় চোখে তাকাল জায়রার দিকে। জায়রা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে জাইহানের দিকে। সন্দিহান স্বরে জিজ্ঞেস করল,
“আমি মানে?”
জাইহান চট জলদি উত্তর দিল,
“তুমি! তুমি মানে আপনি। মানে বুঝালাম যে, আপনি জেনে কি করবেন? এটা তো আমার ব্যক্তিগত বিষয়। আর মানুষটাও আমার ব্যক্তিগত।”
জায়রার মুখ দেখে মনে হলো কথাটা সে বিশ্বাস করে নিয়েছে। ছোট্ট করে উত্তর দিল,
“আচ্ছা।”
জাইহান গোপনে হাঁফ ছাড়ল। দুই হাত পকেটে ঢুকিয়ে প্রশ্ন করল,
“সেদিন কি হয়েছিল, মিস জায়রা?”
জায়রা কিছুক্ষণ চুপ থাকল। হাত দিয়ে চুলের খোঁপাটা খুলে দিল। সাথে সাথে এক গুচ্ছ চুল ছড়িয়ে পড়ল সর্বাঙ্গ ছেয়ে। চুল গুলো এখন হাটুর দুই /তিন ইঞ্চি নিন অব্দি। কেন? কে*টে ফেলেছে বুঝিতে? উত্তেজিত কণ্ঠে জাইহান প্রশ্ন করেই ফেলল,
“চুল কে*টেছেন কেন, জায়রা?”
জায়রা অবাক হলো। এই প্রথম জাইহান শুধু নাম নিয়ে জায়রাকে সম্মোধন করেছে। জাইহানের চোখ, মুখে বিষন্নতা। কিন্তু কেন? জায়রা ছোট করে উত্তর দিল,
“হ্যাঁ।”
“কিন্তু কেন?”
জাইহানের বিষন্ন স্বর। জায়রা শান্ত বাক্যে উত্তর দিল,
“দুই, এক মাস পর পর চুল কে’টে ছোট করে রাখি।”
জাইহান এবার কেমন অধিকার বোধ খাটিয়ে বলে উঠল,
“এবার থেকে আর কাটবেন না, জায়রা।”
জায়রা হাসল। ছেলেটার কণ্ঠে কেমন অধিকারবোধ ফুটে উঠেছে। জায়রা হেসে জবাবে সুন্দর করে উত্তর দিল,
“ঠিক আছে। কা*টব না। খুশি?”
জাইহান মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেলল। বলল,
“চুল হলো নারীর সৌন্দর্যের প্রতীক। আর লম্বা চুল হলো ইমোশন। ঠিক যেমন আপনি আমার প্রিয়, তেমন আপনার চুলও আমার ভীষণ প্রিয়। আমার প্রিয় জিনিসে হাত লাগাবে না, মিস জায়রা।”
“আমি আপনার প্রিয় মানে? কি বুঝাতে চাইলেন, মিস্টার জাইহান?”
জাইহান থতমত খেয়ে উঠল৷ কী হয়েছে আজকে ওর? বার বার মুখ ফস্কে হৃদয়ের অগোছালো কথাগুলো বেরিয়ে আসছে কেন? জাইহান প্রসঙ্গ পাল্টে প্রশ্ন করল,
“আপনাকে কি আপনার হবু স্বামী মলেস্ট করার ট্রাই করেছে, মিস জায়রা?”
জায়রা সাথে সাথে উত্তর দিল,
“না।”
“তাহলে কে সে?”
জাইহানের পাল্টা প্রশ্নে জায়রা নরম সুরে বলা শুরু করল,
“আমি জানি না। আমাকে সেদিন কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার রাস্তায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এক ঘন্টার আগেই তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। কেন ছেড়ে দেয় তা আমি জানিনা। কিন্তু ওই এক ঘন্টা আমার সাথে তারা নোংরামি করেছিল, আমাকে বাজে ভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিল। ছুঁয়ে ছিল। তাদের বিশ্রি হাতের ছোঁয়া মনে করতে চাইনা। আমার শরীর জ্বলে যায়। ভীষণ যন্ত্রণা হয়। গা ভর্তি ঘৃণা জন্মায়।”
জায়রা কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলে। হুট করে ফুটপাতের ধারে দেয়াল ঘেষে বসে পড়ে। জাইহান নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। জায়রাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে গেল। কম্পিত সুরে প্রশ্ন করল,
“আপনি ঠিক আছে, জায়রা?”
জায়রা ছলছল চোখে তাকাল। জাইহানের চোখে চোখে রেখে কান্নারত বাক্যে বলল,
“আপনি আমাকে একটা হেল্প করবেন, জাইহান?”
“বলুন।”
“আমাকে একটা গাড়ি ডেকে দিবেন? বাড়ি যাব। মাথা যন্ত্রণা করছে।”
জাইহান উত্তর দিতে পারল না। নিরবে হাত বাড়াল জায়রার দিকে। জায়রা জাইহানের হাতটা শক্ত করে ধরে উঠে দাঁড়াল। জাইহান আজ সিভিল ড্রেসে বের হয়েছে, গাড়িও নেই সাথে। একটা সি.এন.জি ডেকে জায়রাকে তুলে দিল। নিজেও উঠে বসল জায়রার পাশে। তা দেখে জায়রা নিচু স্বরে প্রশ্ন করল,
“আপনি কোথায় যাবেন?”
জাইহান শান্ত বাক্যে বলল,
“আপনার সাথে।”
জায়রা প্রশ্নোত্তর চোখে তাকাতেই জাইহান নিচু বাক্যে বলল,
“আপনি ঠিক নেই, মিস জায়রা। এই মুহূর্তে আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া আমার দায়িত্ব।”
জায়রা আর প্রশ্ন করল না। জাইহান ঠিকানা বলতেই সি.এন.জি চলতে শুরু করল। জায়রা মাথা ঠেকালো সীটে। কিন্তু ঝাঁকুনিতে মাথায় ব্যাথা লাগছে। তবুও সরছে না। কারণ মাথা ভনভন করে ঘুরছে। বসে থাকা সম্ভব না। এখান থেকে ক্যান্টনমেন্ট যেতে কমপক্ষে দুই ঘন্টা লাগবে। জ্যামে আটকালে তো কথাই নেই। জাইহান জায়রার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও বলে উঠতে পারছে না। হাসফাস করছে। শান্তি লাগছে না। অশান্ত মন মন বার বার জায়রাকে বুকে নেওয়ার ইচ্ছা বাঁধছে। জাইহান অনেক ভেবে চিন্তে আমতা আমতা করে বলে উঠল,
“জায়রা শুনছেন?”
“হু।”
“আমার কাঁধে মাথা রাখবেন?”
কথাটা বলেই ঢোঁক গিলল জাইহান। জায়রা কী এখন খারাপ ভাববে? জায়রা চুপ রইল। কিছু সেকেন্ড অপেক্ষা করে জাইহান পুনরাই বলে উঠল,
“আপনি মাথায় ব্যাথা পাচ্ছেন, জায়রা। যদি সমস্যা না থাকে, তাহলে আমাকে ভরসা করতে পারেন।”
জায়রা কথা বলল না। জাইহান আশা ছেড়ে দিল। দৃষ্টি দিল বাইরের দিকে। কিছু মুহূর্ত পর অনুভব করল জায়রা জাইহানের কাঁধে আলগোছে মাথা রাখছে। জাইহানের বুকের ভেতরে হৃদযন্ত্রটা এবার লাফিয়ে উঠল। ধুকপুক শব্দ করছে৷ মনটা নিমিশেই শান্ত হয়ে গেল। কী শান্তি! আচ্ছা প্রিয় মানুষ পাশে থাকলে বুঝি এত শান্তি লাগে? কিন্তু জায়রা তো জাইহানের এক দফা প্রিয় মানুষ। জায়রা কী কোনোদিন জাইহানকে ভালোবাসবে?



আজ সকাকে লিলির মৃ*ত দেহ পাওয়া গেছে যাত্রাবাড়ীর এক ময়লার স্তুপের ভেতর। কী জঘন্য ভাবে মা*রা হয়েছে মেয়েটাকে! দুই পা ভেঙে ফেলা হয়েছে৷ এক ধারের বুকের নরম অংশ কেটে রাখা হয়েছে। ছিহ! কী নোংরা, বিকৃত মস্তিষ্কের লোক কাজটা করেছে! কোনো মানুষ এমন করতে পারে? জাইহান নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে নিজের কেবিনে। মাথা হ্যাং হয়ে আছে। চোখের সামনে বার বার লিলির অর্ধ-উলঙ্গ দেহ ভেসে উঠেছে। এই ছোট্ট মেয়েটাকে কতটা কষ্ট দিয়ে মা*রা হয়েছে ভাবতেই জাইহানের গা শিউরে উঠছে। আমেনা বেগমের পাগল প্রায় অবস্থা। ভাবনার মধ্যেই জাইহানের ফোন বেজে উঠল। হাসপাতাল থেকে ফোন করা হয়েছে। জাইহান ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে জানানো হলো,
“জাইহান, লিলি নামক মেয়েটির মৃ*ত্যু হয়েছে প্রায় ১২ঘন্টা আগে। তবে একটা প্রচন্ড খারাপ সংবাদ আছে।”
জাইহান কাঁপা-কাঁপি স্বরে প্রশ্ন করল,
“কী সেটা?”
ওপাশ থেকে থমথমে বাক্যে জানানো হলো,
“লিলির মৃ*ত দেহের সাথে কেউ যৌ** সম্পর্কে লিপ্ত ছিল।”
কথাটা জাইহানের কানে যেতেই জাইহানের গা ঘৃণায় শিউরে উঠল। শিরশির করতে থাকল সর্বাঙ্গ। গা গুলিয়ে আসছে শুনেই। আচ্ছা, আজকাল মানুষের কি মস্তিষের বিকৃতি ঘটেছে? নাকি মানুষ গুলো প*শুতে রুপ নিয়েছে?

#চলবে