আলগোছে আছো হৃদমাঝারে পর্ব-০৮

0
77

#আলগোছে_আছো_হৃদমাঝারে
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_আট
[১৮+ এলার্ট]
“মৃ*ত লা*শের সাথে যৌ*নসম্পর্ক করে নেক্রোফিলিয়া নামক মানসিক ব্যাধির রোগীরা। ‘বাধা দেবে না বা প্রত্যাখ্যান করবে না’, মূলত এমন যৌ*ন সঙ্গী পাওয়ার বাসনা থেকে মরদেহের সাথে যৌ*ন সংসর্গ করে থাকে নেক্রোফাইলরা। নেক্রোফিলিয়া, পেডোফিলিয়া, এক্সিবিশনিজম, ফ্রটারিজম, সেক্সুয়াল স্যাডিজম, পাইরোমেনিয়া, ক্লেপ্টোম্যানিয়া এই সাত ধরনের মানসিক রোগীরা হতে পারে ভয়ংকর অপরাধী।”
মনিকা বেগম কথাগুলো বলেই থামলেন। ছেলেকে এইসব বলতে তার মুখে বাধছে। তবুও কি আর করার? তিনি যেহেতু একজন ডাক্তার সেহেতু চক্ষুলজ্জা বাদ দিয়ে হলেও রোগ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা তার দায়িত্ব। জাইহান নিশ্চুপে শুনছিল। মনিকা বেগম পুনরায় বলে উঠলেন,
“লিলির সাথে যা হয়েছে তা কাল তোমার বোনের সাথেও হতে পারে, তাই দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করো।”
জাইহান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বেরিয়ে গেল। দুইদিন কেটে গেছে মাঝে। এর মধ্যে কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি এখন অব্দি। লিলির চাচাতো ভাই পরিবার সহ উধাও। জাইহান হন্য হয়ে খুঁজছে। কিন্তু কোনো সূত্র মেলাতে পারছেনা। কি আশ্চর্য! এই শহরে এত বড় একটা চক্রান্ত ঘটছে অথচ এত দিন কোনো প্রশাসন কিছু জানে নি? খোঁজ নেয়নি? এতগুলো মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট হয়ে গেছে? মাথায় কাজ করছে না জাইহানের। জাইহান নিজের রুমে এসে বসতেই জাহিশ দরজা থেকে ডেকে উঠল,
“ভাই, আসব?”
জাইহান ছোট্ট করে উত্তর দিল,
“হ্যাঁ।”
জাহিশ ভেতরে এসে জাইহানের পাশে বসতে বসতে বলল,
“ভাই, কোনো খবর পেলে?”
জাইহান হাঁফ ছাড়ল। শান্ত বাক্যে বলে উঠল,
“না। নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।”
জাহিশ এবার চুপ থাকল। সেকেন্ড কয়েক চুপ থেকে ধীর কণ্ঠে বলে উঠল,
“এইরকম কেস সলভের দায়িত্ব তো আমাদের না। আমাদের দায়িত্ব দেশ ও দেশের মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। বাইরের শত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। এতদিন যাদের উপর দায়িত্ব ছিল তারা কি করেছে?”
জাইহান কিছু মুহূর্ত চুপ থেকে বলা শুরু করল,
“পুলিশ এখনো কাজে ফিরেনি। কবে ফিরবে তাও জানা নেই। তারা ফিরলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলব। জবাব চাইব। দেশের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, সরকার পতন, পুলিশের নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা, সবথেকে বড় কথা এতগুলো তাজা রক্ত ঝরে না পড়লে হয়তো, এই কেসটাও ধামাচাপা পড়ে যেত। এই ১৫বছর যেমন বহু অন্যায়, অত্যাচার ধামাচাপা পড়ে ছিল, ঠিক তেমন ভাবে এই কেসটাও হয়তো কোনো এক থানায় ডায়েরিতে স্টোর রুমে ধুলোর স্তুপে পড়ে থাকত। আমরা খুব ভাগ্যবান যে এমন একটা কেস হাতে পেয়েছি। সলভ না করা প্রযন্ত দায়িত্ব ছাড়ব না। দরকার পড়লে চাকরি ছেড়ে দিব। তবুও এই কেসের শেষ অব্দি দেখে ছাড়ব। অপরাধীদের ঠিক খুঁজে বের করব। লিলিসহ, আমাদের কতগুলো বোনকে নির্মমকে প্রাণ দিতে হয়েছে এখন অব্দি জানিনা। তবে জেনে ছাড়ব। ওদের সাথে অবিচার করতে পারব না, ভাই। যতদিন না অব্দি আমার বোনদের হ*ত্যাকারীদের খুঁজে না পেয়েছি, ততদিন আমার শান্তি নেই। একটুও শান্তি নেই।”
কথাগুলো এক দমে বলে হাঁফ ছাড়ল জাইহান। জাহিশ চুপচাপ শুনছিল। জাইহান থামতেই জাহিশ জাইহানের কাঁধে হাত রেখে ভরসা দিয়ে বলে উঠল,
“আমি খুব ভাগ্যবান, ভাই। যে আমি তোকে ভাই হিসেবে পেয়েছি। দুনিয়ার সবাই যদি তোর বিরুদ্ধে চলে যায়, তবুও তুই আমাকে পাশে পাবি। যেখানে যাবি, শুধু আমাকে দেখবি।”
জাইহান হাসল। জাহিশ পুনরায় বলে উঠল,
“ভাই, লিলির ভাই সালমানের কোনো খোঁজ পেলি?”
জাইহান শান্ত বাক্যে বলল,
“না। পালিয়েছে। তবে পালিয়ে যাবে কোথায়? ও যদি মাটির নিচেও থাকে, তাও আমি খুড়ে বের করব।”
জাহিশ প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বলে উঠল,
“তুমি হাত ধরব আর আমি পা। শা*লা টেনে গর্তের থেকে উঠিয়ে আগে পা*ছায় কয়টা লাঠি ভাঙব। ওকে?”
জাইহান হেসে ফেলল। জাহিশকে ধমকে বলল,
“বেশি পাকামো শিখেছিস। যা ঘুমাতে যা।”
জাহিশও হেসে চলে গেল। কিন্তু যাওয়ার আগে বলতে ভুলল না,
“ভাই আগামী ২৪ঘন্টার মধ্যে সালমানকে খুঁজে এনে তোর সামনে দাঁড় করাব, প্রমিস।”
জাহিশ চলে যেতেই জাইহান দরজা আটকে বিছানায় শুয়ে পড়ল। মাথাটা বড্ড ব্যাথা করছে। কী এক যন্ত্রণা! মন ভর্তি ভালোবাসার ব্যাথা তো মস্তিষ্ক ভর্তি নির্মমতার ব্যাথা! কী অদ্ভুত মিল! দারুন না?



“শু**য়ো*রের বাচ্চা, তোরে কি বলছিলাম? তোরে কি বলছিলাম লিলিকে মে*রে ফেলতে?”
রিজভানের হুংকারে সামনে থাকা আলিফের মধ্যে কোনো হেলদোল দেখা গেলো না। বরং আলিফ নিজের মতো ড্রিংকস করতে ব্যস্ত। রিজভান মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। তা দেখে আলিফ ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠল,
“এত প্যারা নিচ্ছিস কেন, মামা? আমার বাবা পুলিশের এস.আই। কোনো কিছু হবে না। সব সামলে নিবে। ফাঁসবো না আমরা। চিল ব্রো।”
রিজভান পুনরায় দাঁতে দাঁত চেপে বিশ্রি গালি প্রয়োগ করে বললল,
“ বা** চিল। তোমার বাবা আমার বা*ল। তোমার বাবার ক্ষমতা গত পনেরো বছর ছিল। এখন আর তোমার বাবার ক্ষমতা নেই। বরং তোমার বাবার গায়ে ওই ইউনিফর্ম দেখলে, পাবলিক গণধোলাই দিবে। বা* বুঝাইতে আইছে আমারে।”
আলিফ হেসে ফেলল। শব্দ করে হাসল। কিছুটা মন ক্ষুন্ন হয়ে উত্তর দিল,
“মামা, আমার বাবা পুলিশ বলেই কিন্তু এই ঘটনাটা ধামাচাপা পড়ে ছিল। এতদিন আমার বাবাকে ছায়া বানিয়ে তোরা নিজেদের সাধ্য হাসিল করেছিস। আর এখন আমার বাবার উপকার ভুলে গেলি? ভেরি ব্যাড, মামা। ভেরি, ভেরি ব্যাড।”
রিজভান কিছুক্ষণ চুপ থাকল। জিজ্ঞেস করল,
“লিলিকে কেন মা*রলি?”
আলিফ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। হেসে হেসে বর্ননা করতে লাগল,
“মামা, ওই মেয়ের যেই ফিগার! উফফ! বিশ্বাস কর ছাড়তেই ইচ্ছা করছিল না। কিন্তু শা*লার আমার পোড়া কপাল। শালির র*ক্ত কিছুতেই থামছিল না।”
রিজভান চকিতে তাকাল। জিজ্ঞেস করল,
“তার মানে রক্তক্ষরণে মৃ*ত্যু হয়েছে লিলির?”
আলিফ আফসোসের ভঙ্গিতে বলল,
“হ্যাঁ, বা*ল।”
রিজভান চুপ করে গেলো। আলিফ প্রশ৷ করল,
“তোর জানে জিগার নোভা মামনি কই?”
রিজভান চোখ তুলে তাকাল। রাগী বাক্যে বলে উঠল,
“ও আমার জি.এফ। ও’কে নিয়ে কোনোরকম বাজে কমেন্ট করবি না।”
আলিফ হেসে বলেই ফেলল,
“জায়রা কই?”
রিজভানের দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
“ওই শা*লিরে তো আমি উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব। আমাকে যেভাবে অপমান করেছে তার শাস্তি ও পাবে।”
“মামা, জায়রার মতো সুন্দরীরে রেখে তোর কেন ওই নোভার দিকে নজর গেল?”
“নোভার প্রতি আমি খুব ছোট থেকেই উইক ছিলাম। নোভা যখন থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া শুরু করল, তখন থেকে ওর প্রতি ফিজিক্যাল ফিলিংশ কাজ করতো আমার। কতবার নোভাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিজের চাহিদা পূরণ করেছি হিসেব নেই। বেড পার্টনার বানাতে গিয়ে৷ লাইফ পার্টনার বানিয়ে ফেলেছি।”
কথাগুলো বলে রিজভান হাসল। আর যাইহোক রিজভান নিজের ভালোবাসার প্রতি সঠিক থাকার চেষ্টা করে। আলিফ এবার বেশ গভীর ভাবনা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“এতই যখন নোভার প্রতি তোমার ভালোবাসা, তাহলে জায়রার পিছনে কেন ঘুর ঘুর করছিলে?”
রিজভান শান্ত বাক্যে উত্তর দিল,
“জায়রাকে হাত করতে পারলে জায়রার বাবার খুব কাছাকাছি থাকা যেত। জায়রাকে একবার নিজের কাছে নিয়ে আসতে পারলে, জায়রাকে কেন্দ্র করে এই কেসটা ধামাচাপা দেওয়া যেত। কিন্তু বা*ল আমার অতি লোভে সব হারালাম।”
আলিফ হাসল। বোতলে থাকা ড্রিংকস টুকু শেষ করে বলে উঠল,
“জায়রা তোকে সত্যি ভালোবাসতো, মামা। ভুলে যাস না, ‘যে ঠকায়, সেও ঠকে’। আফসোস যেন করতে না হয় কোনোদিন। তারপর দেখবি আমার মতো ভবঘুরে প্রেমিক হয়ে গেছিস।”
বলে হাসতে হাসতে উঠে গেল। ডান্স করতে থাকা মেয়েটার সাথে গিয়ে ডান্সে মগ্ন হলো।



“মায়রা, আজ থেকে বাইরে বের হওয়া বন্ধ।”
জাইহানের কড়া বাক্যে কথাটা শুনে মায়রা অসহায় চোখে মনিকা বেগমের দিকে তাকাল। তা দেখে মনিকা বেগমও জাইহানের সাথে তাল মিলিয়ে বলে উঠলেন,
“হ্যাঁ, এখন থেকে তুমি একা কোথাও যাবে না। যখনি বাইরে বের হবে আমাদের কাউকে সঙ্গে নিয়ে বের হবে।”
মায়রা কিছু বলল না। মন খারাপ হলেও পাত্তা দিল না। তার ভাই, মা নিশ্চয়ই ভালোর জন্য বলছে। দেশের এই পরিস্থিতিতে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমেছে। তার মধ্যে অসহায় মেয়েগুলোর উপর এভানে নির্যাতন চলছে। আল্লাহ জানেন কার ভাগ্যে কি আছে? যদি মায়রার সাথে এমন হয়____ভেবেই মায়রা কেঁপে উঠল। মা আর ভাইয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিল। এর মধ্যেই জাইহানের ফোনটা বেজে উঠল। জাহিশ ফোন করেছে। জাইহান ফোন রিসিভ করতেই জাহিশ বিস্ফোরিত বাক্যে বলে উঠল,
“ভাই…।”
জাহিশ হাঁফাচ্ছে। জাইহান এপাশ থেকে চিন্তিত বাক্যে জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে, ভাই?”
জাহিশ ওপাশ থেকে বলে উঠল,
“সালমানের খন্ডিত দে*হ পাওয়া গেছে।”
জাইহান নিস্তব্ধ হয়ে পড়ল। নিজেকে অসহায়ের থেকেও বড় অসহায় লাগছে। সব প্রমাণ এভাবে লোপাট করে দেওয়া হচ্ছে। আচ্ছা প্রমাণ লোপাট করে দেওয়ার উপায় কি এত জঘন্য হয়?

#চলবে