আলোছায়াতে প্রণয়াসক্তি পর্ব-১০

0
729

#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১০
ক্যামেলিয়া চলে যাবার পর আলফি টেবিলে দুই হাতের কনুই ঠেকিয়ে হস্তদ্বয় মুঠোবন্দী করে রহস্যময় হাসলো। তখন আলফির পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এসে বলল,

“স্যার, মিস ক্যামিলিয়ার এক্টিভিটিতে আমরা নজর রাখছি।”

“রাখো। এই ডিল তেমন বড়ো কিছু না আমার কম্পানির জন্য৷ জাস্ট সত্যিটা দুনিয়ার সামনে আনার জন্যই এই ডিল।”

“ইয়েস স্যার।”

তারপর অ্যাসিস্ট্যান্ট চলে যায়। আলফিও অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে।
——
অমাবস্যা পেরিয়ে পূর্ণিমা আসার দ্বারপ্রান্তে। আলফির বাবা-মা কাল রাতে অটোয়াতে এসেছেন। থাকবেন এখানে দুই-তিন সপ্তাহ। উনারা আসার পর থেকে নিঝুম প্রথমে গাট হয়ে থাকলেও আলফির মা মিসেস আরলিন খুব মিশুক প্রকৃতির। ছুটির দিন আজ। নিঝুমের ইউনিভার্সিটি বন্ধ। ঘুম থেকে উঠে নিঝুম মিসেস আরলিনের সাথে রান্নাঘরে গল্প করছে। কথায় কথায় নিঝুম বলে,

“আন্টি, হোয়াই ডু ইউ গাইজ লিভ ইন নিউইয়র্ক ফর মোস্ট অফ দ্যা টাইম? আই মিন, হেয়ার ইজ অ্যা বিউটিফুল হাউজ।”
(আন্টি, আপনারা বেশিরভাগ সময় নিউইয়র্কে কেন থাকেন? আমি বলতে চাচ্ছি, এখানে এতো সুন্দর একটা বাড়ি আছে।)
সাথে মিনমিন করে বলে, ” তাছাড়া আলফিও এখানে থাকে।”

মিসেস আরলিন মুচকি হেসে বললেন,
“ওহ ডিয়ার, একচুয়েলি আই ওয়াজ লাভড টু লিভ উইথ মাই ইন ল’স। দে ওয়ার সো লাভলি। স্পেশিয়ালি মা। হোয়েন আই ওয়াজ সেভেন্টিন, মাই মম ডা*ইড। দেন আই ওয়েন্ট টু নিউইয়র্ক টু স্টাডি। ইন নিউইয়র্ক, আই মেট উইথ জুনায়েদ এন্ড হিজ ফ্যামিলি। দে অলয়েজ ট্রিটেড মি গুড।”
(ওহ প্রিয়, আসলে আমি আমার শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে থাকতে ভালোবাসতাম। উনারা খুব ভালো ছিলেন। বিশেষ করে মা। আমি যখন ১৭ বছরের তখন আমার মা মা*রা যান। তারপর আমি নিউইয়র্কে আসি পড়ালেখার জন্য। সেখানে জুনায়েদ ও তার পরিবারের সাথে দেখা হয়। উনারা আমাকে খুব ভালোবাসতেন।)

তারপর চু*লা বন্ধ করে হাড়িটা নামিয়ে বলেন,
“আলফিও তার দাদা-দাদির খুব প্রিয় ছিল। আলফি অটোয়াতে আসুক সেটাও উনারা চাননি। কিন্তু আলফি ওয়াজ সো স্টাবর্ন দ্যাট টাইম। সেভেন ইয়ারস এগো, দে লেফট আস। কিন্তু আমরা এখনও নিউইয়র্কেই থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।”

মিসেস আরলিনের মুখে এতো সুন্দর বাংলা শুনে নিঝুম অবাক হয়। তা দেখে মিসেস আরলিন হেসে ফেলেন। বলেন,
“মা ও জুনায়েদ আমাকে বাংলা শিখিয়েছে। একচুয়েলি মম ওয়াজ নট সো গুড ইন ইংলিশ। সো… আমি এখন বাংলা খুব ভালো বলতে পারি।”

নিঝুম হাসলো। তারপর বলল,
“তাহলে তো ভালোই। এখানে আলফি ছাড়া বাকি সবার সাথে আমার ইংলিশে কথা বলতে হয়। রিসেন্টলি এক ইন্ডিয়ান বাঙালি মেয়ের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়েছে। ও আমার ডিপার্টমেন্টের না।”

মিসেস আরলিন হাসলেন। তারপর নাস্তা সব নিয়ে টেবিলে সাঁজিয়ে রাখলেন। আলফি ও আলফির বাবাকে ডাকলেন। নাস্তা খেতে খেতে আলফি বলল,

“তুমি এই ডাল-সবজিটা খুব ভালো বানাও। গ্রান্ডমায়ের মতো। অনেকদিন পর এসব খাচ্ছি।”

মিস্টার জুনায়েদ মুখ ফসকে বলে ফেললেন,
“তোমার মা তোমার দাদীর থেকে শিখেছে। এবার তোমার মা তোমার বউকে শেখাবে।”

আলফি কেঁশে উঠলো। মিসেস আরলিন ছেলের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে স্বামীকে চোখের ইশারায় শাসালেন। নিঝুম মলিন মুখে খাচ্ছে। সে অতোশতো ভাবেনি। সে ভাবছে, হুট করে তার জীবনে ওই বিয়েটা না আসলে সেই হয়তো আলফির বউ হতো। আলফির মাকে তার খুব পছন্দও হয়েছে। এদিকে এতোদিন হয়ে গেলো, তিন সপ্তাহ। জায়ান কি সত্যি তার খোঁজ পায়নি? প্রায় রাতে সে ঘুমের মাঝে জায়ানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন গুলো এতোটা বাস্তব হয় যে তার মনের মধ্যে গেঁথে থাকে। ইদানীং সে আলফির সাথেও খুব একটা কথা বলে না। পড়াশোনার ব্যস্ততার সাথে সাথে সে কিছুটা এড়িয়েই চলে। মনের মাঝে তার একটা অপরাধবোধ কাজ করে। না চাইতেও এক অপ্রিয় পুরুষের সাথে যেই বন্ধনে সে বাঁধা পড়েছে, সেই বন্ধনটা তো পবিত্র। জীবনের উনিশটা বসন্তে সে অনেক কিছু সহ্য করেছে। সেখানে এটাও নাহয় সহ্য করে নিবে। কিন্তু মাঝেমাঝে খুব কষ্ট হয় তার। বড়ো আব্বু যদি তার সাথে এটা না করতো তাহলে সে আলফির সাথে সুন্দর একটা জীবন শুরু করতে পারতো।

আলফি নিজেকে স্বাভাবিক করে নিঝুমের দিকে তাকালো। নিঝুম কেমন নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে টেবিলের দিকে তাকিয়ে আনমনে খাচ্ছে। আলফি ইশারায় মিসেস আরলিনকে তা দেখালো। মিসেস আরলিন নিঝুমের কাঁধে হাত রেখে সহাস্যে বললেন,

“এখনও তো আলফির বউকে পাচ্ছি না। বাট আমি এখন নিঝুমকে কুকিং শেখাতে পারি। কি নিঝুম, শিখবে?”

বেখেয়ালি থেকে সজাগ হয় নিঝুম। কৃত্রিম হেসে মাথা দুলায়।

——
রান্নাঘরে দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি চলছে। মিসেস আরলিন নিঝুমকে সাথে নিয়ে রান্না করছেন। আলফি ও মিস্টার জুনায়েদ ল্যাপটপ নিয়ে বাড়ির দক্ষিণ পাশে টেবিল চেয়ার নিয়ে বসেছে। বাবা-ছেলের কাজের কথা শেষে মিস্টার জুনায়েদ বললেন,

“তুমি কতোদিন নিঝুমের থেকে সত্যিটা লুকাবে?”

আলফি হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“যতোদিন আমি দুনিয়ার সামনে নিজের নামে রি*উমারের সত্যটা ক্লিয়ার করছি।”

“ক্লিয়ার তো হয়ে গিয়েছিল। তুমি যে স্বেচ্ছায় ওই রুমে যাওনি সেটাও প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল। তোমাকে ড্রাং*ক অবস্থায় ক্যামেলিয়া হোটেল রুমে নিয়ে গিয়েছিল।”

“সেই রুমের সিসিটিভি অফ ছিল। প্রমাণ শুধু এটাই হয়েছিল, ক্যামেলিয়া ও আমার মধ্যে মিউচুয়াল সবকিছু ছিল। দেখাচ্ছিল দুজনেই আমরা ড্রাং*ক ছিলাম। রে*প এলি*গেশনটা মিথ্যা প্রমাণ হয়েছিল শুধু। কিন্তু আমার সেন্সে আমি যতোটুকু মনে করতে পারি, আমাদের মধ্যে কিছুই হয়নি। এমনকি ক্যামেলিয়া জে*লে আমার কাছে গিয়ে বলেছিল সে এসব আমার উপর রি*ভেঞ্জ নিতে করছে। তাই আমি আবারও ক্যামেলিয়ার সাথে কাজ শুরু করেছি।”

মিস্টার জুনায়েদ বললেন,
“তাহলে নিঝুমকে এখন কেন বিয়ে করলে? নিঝুম এখানে আসার পর সব কিছু প্রমাণ হওয়ার পর বিয়ে করতে।”

“আমি তাই চেয়েছিলাম। কিন্তু নিঝুমের চাচার কম্পানির সাথে আমাদের যে বিজনেস ডিলটা তুমি করতে চেয়েছিলে, সেটা করতে আমি বাংলাদেশে যাই। সেখানে আমি উনার আরেক বিজনেস পার্টনার মানে যার থ্রো তে তুমি নিঝুমের আঙ্কেলের কম্পানির সাথে ডিল করবে ভেবেছিলে। তিনটা কম্পানি একসাথে কোলাবোরেশন করবে। সেই লোকের সাথে নিঝুমের আঙ্কেলের কিছু কনভারসেশন আমি শুনে ফেলেছিলাম। লোকটা মিডেল এইজের। নিঝুমের আঙ্কেলের কাছে নিঝুমকে বিয়ে করার প্রপোজাল দিয়েছিল। এন্ড যদি বিয়ে দেয় তবে এই ডিল হলে যেই পরিমান লাভ তার কম্পানির হবে সেগুলো সে নিঝুমের আঙ্কেলকে দিয়ে দিবে। নিঝুমের আঙ্কেল একটু হেজিটেট করলেও আমার মনে হচ্ছিল তিনি রাজি হয়ে যেতেন। কারণ ওই লোকের কারণেই সে আমাদের সাথে এতো বড়ো ডিলটা করতে পারছিলেন। এজন্য আমি ওই লোকের কম্পানিকে এন্ড মোমেন্টে ডিল সাইনের আগেই সরিয়ে দেই। তারপর নিঝুমের চাচাকে আমার ও নিঝুমের বিয়ের প্রপোজাল দেই। আমি নিঝুমকে বলতাম যে, ‘তোমার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।’ কিন্তু নিঝুমই যখন আমাকে মেসেজ করে বলল যে যার সাথে ওর বিয়ে হয়েছে সে গু*ন্ডা, রে*পিস্ট, মা*ফিয়া এসব। তখন আমি আর আমার পরিচয় বলিনি। এসব যে ওই লোক ছড়িয়েছে তাতে সন্দেহ নেই।”

“বুঝলাম। দেখো কতোদিন লাগে। মেয়েটা খুব মিষ্টি। তুমিই যে জায়ান আহমেদ, জানলে দুঃখ পাবে।”

আলফি তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“কিছু করার নেই, ড্যাড। আমার কাছে আর কোনো বেটার অপশন নেই। ক্যামেলিয়ার সাথে ডিলটা খুব জলদি শেষ হবে। তারপরই ওর ট্রুথ রিভেল হবে।”

মিস্টার জুনায়েদ ছেলের কাঁধের হাত রেখে ভরসা দিলেন।

চলবে ইন শা আল্লাহ,