#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১১
অক্টোবর পেরিয়ে নভেম্বর। প্রকৃতিতে শরতের ছোঁয়া বহাল থাকলেও শীতের পরশও বেশ জোরেশোরেই আসতে শুরু করেছে। নিঝুমের সময় কাটছে ইউনিভার্সিটির ক্লাস ও বাড়িতে এসে আলফির মায়ের সাথে। আজ সকালেই মিসেস আরলিন ও মিস্টার জুনায়েদ টরেন্টো গিয়েছেন নিজের বোনের বাড়িতে বেড়াতে। আলফিরও আজ ক্লাস আছে। তাই নিঝুমকে আজ ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিতে আলফির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে মিস্টার জুনায়েদ ও মিসেস আরলিন অটোয়াতে আসার পর যেসব দিন আলফির ক্লাস থাকে সেসব দিন মিস্টার জুনায়েদই নিঝুমকে ইউনিভার্সিটি থেকে নিয়ে আসেন।
আলফি অফিস থেকে সরাসরি ইউনিভার্সিটি গিয়েছে। সে এখন নিঝুমকে লাইব্রেরিতে থাকতে বলে ক্লাস করছে। লাইব্রেরিতে আরও কিছু স্টুডেন্ট আছে। কিছুক্ষণ আগেই সন্ধ্যা নেমে গেছে। নিঝুম লাইব্রেরিতে পড়ছে। হঠাৎ একটা মেয়ে এসে বলল,
“সামওয়ান ইজ ওয়েটিং ফর ইউ আউটসাইড।”
“হু?”
“আই ডিডেন্ট আস্ক হিজ নেম। বাট হি ইজ সো হ্যান্ডসাম এন্ড টল।”
বলেই মেয়েটি অন্য একটা টেবিলে গিয়ে বসলো। নিঝুম ভাবলো আলফিই ডাকছে। ইউনিভার্সিটিতে অনেকের ক্রা*শ আলফি। তাছাড়া আলফি ছাড়া এখনই কেউ ডাকবে না। নিঝুম আলফির নাম্বারে ডায়াল করতে করতে লাইব্রেরি থেকে বের হলো। এখনও আলফির ক্লাসের সময় শেষ হতে ঘণ্টার মতো বাকি। প্রায়ই ২০-৩০ মিনিট আগে আলফির ক্লাস শেষ হয়। আজ হয়তো আরও তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে।
নিঝুম লাইব্রেরির বাহিরে এসে কাউকে দেখলো না। তাই সে ভবনের বাহিরে গেলো। বাহিরে যেতেই অন্ধকার। আজ কি এখানে লাইট নষ্ট হয়ে গেছে? ভাবলো নিঝুম। তারপরই দেখলো একজন দাঁড়ানো গাছের কাছে। পেছন থেকে দেখে আলফি মনে হলো না। আলফি তো সাদা শার্ট পরিহিত ছিল। আর দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তি কালো জ্যাকেট পরনে। ততক্ষণে আলফি কলও রিসিভ করেছে। নিঝুম ফোনে আলফির কণ্ঠ শুনে আবার ভেতরে প্রবেশ করতে ঘুরে। তৎক্ষণাৎ পেছন থেকে দুজন তার মুখ চেপে ধরে। অতর্কিত নিঝুমের ফোনটা ছিটকে ঘাসের উপর পড়ে। ছাড়া পেতে গোঙ্গাতে থাকে নিঝুম। ফোনের অপরপাশে আলফি হঠাৎ নিঝুমের গোঙানির আওয়াজ পেয়ে ক্লাসের মাঝে উঠে দাঁড়ায়। ফ্যাকাল্টিকে কিছু না বলে ক্লাসের বাইরে ছুট লাগায় সে। হাতে ফোন তার। কানে এয়ারপড। ক্লাসে উপস্থিত সকলে হকবাক হয়ে চেয়ে থাকে।
নিঝুম ছাড়া পেতে খুব চেষ্টা করছে। কিন্তু দুজন সবল দেহী মানুষের সাথে কী পারে? ওর এই ছাড়া পাওয়ার চেষ্টার মাঝে একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পায়। বলছে,
“ওহ নিঝুম বেব! হোয়াই আর ইউ স্কেয়ার্ড? ইটস মি, অ্যালেক্স। রিল্যাক্স, বেব!”
নিঝুম অ্যালেক্সকে এভাবে দেখে যেন হতভম্ব। অ্যালেক্স তাকে ডেকে পাঠিয়েছে? আর এরা অ্যালেক্সের লোক? নিঝুম কিছু বলতে ছটফট করছে খুব। কিন্তু অ্যালেক্স ওর লোকদের ইশারা করতে ওরা নিঝুমকে একটা ইন*জেকশন পুশ করে দেয়। চেতনা হারিয়ে ঢলে পড়ে নিঝুম। তারপর অ্যালেক্স ও-কে গাড়িতে তুলে ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যায়।
যেখান থেকে নিঝুমকে নিয়ে গেছে আলফি সেখানে এসে দেখে কেউ নেই৷ জায়গাটা ফাঁকা। সে নিঝুমের কল কেটে আবার ওর নাম্বারে কল করে। ফোনের রিংটোন বেজে উঠে কাছে কোথাও। অতঃপর ঘাসের উপর ফোনটা কুড়িয়ে পায়। আলফি চিন্তায় ও অস্থিরতায় দ্রুত নিজের গাড়ির দিকে ছুট লাগায় আর কল করে তার অ্যাসিস্ট্যান্টকে। বলে,
“শাহরিয়ার, এখনি অ্যালেক্সের লোকেশন ট্র্যাক করো। ওর ফোন বা গাড়ি। দুটোর লোকেশনই ট্র্যাক করে আমাকে জানাও।”
তারপর কল কেটে সে গাড়ি স্টার্ট দেয়। তার ধারণা অ্যালেক্স নিঝুমকে তার ফ্লাটে নিয়ে যাবে। তাই সে সেদিকেই গাড়ি ঘোরায়। নিঝুমের ফোনে সে অ্যালেক্সের কথা শুনেছিল। অ্যালেক্স যে এরকম করবে তা সে ভাবতেও পারেনি। অ্যালেক্স সবসময় ফ্লার্ট করা, গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করা এসব করে। কিন্তু কিড*ন্যাপিং? রাগে মা*থার র*গ গুলো দপদপ করে যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে! স্টিয়ারিংয়ে বারকয়েক ঘু*ষি দিয়েও রাগ কমছে না তার। ইতোমধ্যে গাড়ির স্পিড অনেক হাইতে তুলে দিয়েছে। সামনের গাড়ি গুলোকে স্পিডে ওভারটেক করে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরই শাহরিয়ার অ্যালেক্সের লোকেশন তাকে জানায়। অ্যালেক্স তার ফ্লাটে যাচ্ছে না। শহরের বাহিরের দিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আলফিও সেদিকেই যাচ্ছে। আলফিকে দেখলে যে কেউ বলবে সে এখন খু*ন-টাও করে ফেলতে পারে!
এদিকে শাহরিয়ার অ্যালেক্সের লোকেশন পু*লিশকেও দিয়ে দিয়েছে। শাহরিয়ারের ধারণা তার বস এখন যতোটা রেগে আছে, তা যে কারও প্রাণের জন্য ক্ষতিকারক। যদি আলফির দ্বারা কোনো খু*ন*খা-রা-বি হয়ে যায় তবে? আলফির রাগ সম্পর্কে তার ধারণা কিছুটা হলেও আছে। তাই সে আগে থেকেই পু*লিশে ইনফর্ম করে দিয়েছে।
প্রায় দুই ঘণ্টা পর অ্যালেক্সের লোকেশন স্থির দেখাচ্ছে। আলফিও সেই জায়গার কাছাকাছি। সে যেই স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে, তাতে আর পাঁচ-সাত মিনিট লাগবে পৌঁছাতে।
অ্যালেক্স গাড়ি থামিয়ে নিঝুমকে তার পুরোনো ফার্ম হাউজে নিয়ে যায়। সে অনেক স্পিডে গাড়ি চালিয়ে এসেছে। নিঝুম এখনও সেন্সলেস। ফার্ম হাউজের ভেতরে গিয়ে নিঝুমকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বেশ শক্ত করে হাত দুটো বেঁধে ফেলে। তারপর ঘরের সব আলো নি়ভিয়ে দেয়। কালো মোটা পর্দা টেনে দেয় যাতে বাহির থেকে কেউ বুঝতে না পারে৷ পর্দা টানা শেষ হতেই সে গাড়ির শব্দ পায়। ভ্রুঁকুটি করে অ্যালেক্স। পর্দা খানিক সরিয়ে বাহিরের স্ট্রিট লাইটের আলোয় দেখতে পায় তার গাড়ির পেছনেই একটা গাড়ি এসে থেমেছে। গাড়ি থেকে একটা লোক নেমে চারিদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে কিছু খুঁজছে। এখন রাত সাড়ে দশটার মতো বাজে। আর এটা কমার্শিয়াল এড়িয়ার থেকে দূরে। এখানের বাড়িগুলোর মানুষজন দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়ে। কিছু বাড়িতে এখনও আলো জ্বলছে আবার কিছু বাড়ি ফাঁকাও। অ্যালেক্স বুঝে যায় আলফি তার খোঁজ পেয়ে গেছে। রাগে অ্যালেক্স খানিক জোরেই পর্দা টেনে দেয়।
চতুর্দিকে নজর বুলিয়ে আলফি খেয়াল করে একটা বাড়ির পর্দা হঠাৎই সরে গেছে। যেন পর্দার আড়ালে কেউ ছিল। অ্যালেক্সের গাড়ি যেই বাড়ির সামনে রাখা সেই বাড়ির পাশের বাড়িতেই সবে পর্দা সরেছে। বাড়িটা পুরোনো। দেখেই মনে হচ্ছে অনেকদিন জঙ্গল পরিষ্কার হয়নি। বাড়ির গা বেয়ে জঙলি লতার ঢাল ছাদ পর্যন্ত উঠেছে। আলফির মনে পড়ে, অ্যালেক্স তাকে বলেছিল তার বাবার একটা পুরোনো ফার্ম হাউজ আছে যা শহর থেকে দূরে। সেখানে তাদের বছরেও যাওয়া হয় না। তার বাবা-মা কিংসটোনে থাকে। আলফি দ্রুত বাড়িটির দিকে ছুটে যায়।
অ্যালেক্সের হাত-পা কাঁপছে। আলফি তার খোঁজ এতো দ্রুত কীভাবে পেয়ে গেল? সে তো আলফিকে খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে দেখে এসেছিল। এমনকি আজকের ক্লাসের লেকচার অনুযায়ী ক্লাসটা ফুল টাইম লাগবে বলে তার ধারণা। তাহলে? ভাবতে ভাবতে তার নজর নিঝুমের দিকে যায়৷ এই মেয়েটা তাকে ইগনোর করে যা তার সহ্য হয় না। এই পর্যন্ত কোনো মেয়েই অ্যালেক্সকে ইগনোর করেনি। বরং মেয়েদের আলোচোনার মধ্যমনি সে। কিন্তু এই নিঝুম! মেয়েটা নাকি বিবাহিত। কিন্তু তার বিশ্বাস হয় না। বিবাহিত হলে মেয়েটা আলফির বাড়িতে থাকবে কেন? আলফির থেকে কি সে কম সুদর্শন? তাছাড়া মেয়েটাকে দেখেও মনে হয় না বিবাহিত। তাই আজ সে মেয়েটাকে একটা শিক্ষা দিতেই এখানে নিয়ে এসেছে।
আবছা আলো-আঁধারিতে নিঝুমের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে হুট করে ঘোর লেগে যাচ্ছে অ্যালেক্সের। ওর মুখের উপরে আসা চুলগুলো হালকা হাতে সরিয়ে দেয়। মেয়েটি সত্যি নজরকাড়া সুন্দরী। কানাডার সুন্দরী মেয়েদের থেকে একদম আলাদা ধরনের সৌন্দর্য। এজন্যই বুঝি এশিয়ান মেয়েদের সৌন্দর্য সবসময় ঐশ্বরিক মোহময় হয়? অ্যালেক্স নিঝুমের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
“ইউ উইল বি মাইন, বেব!”
তারপরই সে……
চলবে।