#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৩
নিঝুমের জ্বর ছেড়ে গেছে। জ্বরের ঘোরে মেয়েটা তার বড়ো আম্মুকে খুঁজছিল। সবসময় তো মিসেস আয়েশাই ওর পাশে থেকেছেন। মাতৃস্নেহে আগলেছেন। তাই অসুস্থতায়ও উনাকেই মনে পড়ছে। জ্বর ছাড়ার পর এখন ঘুমাচ্ছে। মিস্টার জুনায়েদ ও মিসেস আরলিনও এসে পৌঁছেছেন। আলফি উনাদেরকে পুরো ঘটনা বলেছে। মিসেস আরলিন এখন নিঝুমের মাথার কাছে বসে আছেন। একটু পর জ্ঞান ফেরে নিঝুমের। চোখ খুলে প্রথমেই মিসেস আরলিনকে দেখতে পায়। পরক্ষণেই কাল রাতের স্মৃতি মনে পড়তেই চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে বসে। মিসেস আরলিন ও-কে জাপটে বুকের মাঝে ধরলে বুঝতে পারেন, কান্নার তালে কাঁপছে মেয়েটা। তিনি সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
চিৎকারের শব্দে আলফি ও মিস্টার জুনায়েদও ওই ঘরে আসে।
“রিল্যাক্স, ঝুম৷ তুমি এখন সেফ৷ অ্যালেক্স পু*লিশ কাস্টাডিতে আছে৷ হি উইল বি পা*নিশড।”
নিঝুম এখনও ট্রমার মধ্যে আছে। মিসেস আরলিন ও-কে জাপটে আগলে আছেন। আলফি ওর হাত ধরতে গেলেই আঁতকে পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাথিত হয় আলফি। মিসেস আরলিন ও-কে ইশারা করলেন, তিনি দেখছেন। রুম থেকে বেরিয়ে গেল আলফি। তারপর গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকেই বেরিয়ে গেলো।
——–
আলফি এখন অ্যালেক্সকে যেই হসপিটালে ট্রিটমেন্টের জন্য নেওয়া হয়েছে, সেখানে ও অ্যালেক্সকে রাখা কেবিনে দাঁড়িয়ে আছে৷ হাতে তার একটা ইন*জেক*শনের সি*রিঞ্জ। অ্যালেক্সের এখন স্যালাইন চলছে। ঘুমে সে। আলফি বাঁকা হেসে ই*নজেক*শনটা স্যালাইনের বোতলে দিয়ে দিলো। তারপর অ্যালেক্সের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“আমার ঝুম সুইটহার্টকে তুই হার্ট করতে চেয়েছিস। যেই হাত দিয়ে ও-কে ছু’য়েছিস, সেই হাতের শি*রা উপ*শি*রা দিয়ে তোর শ*রীরে এই বি*ষ প্রবেশ করবে। যাকে আমি সামান্য ফুলের টো’কাও দেইনি তাকে তুই…. বেস্ট অফ লাক!”
বলেই সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ যেতেই অ্যালেক্সের শরীরে এর প্রতিক্রিয়া শুরু হতে থাকে। হার্টবিট ক্রমাগত বাড়ছে। নার্স ও ডাক্তারদের ছোটাছুটি শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু…..
—
রাত গভীর হতেই আজ বৃষ্টি হচ্ছে। ঝুম বৃষ্টি। নভেম্বরের শুরুর দিকে অটোয়াতে উষ্ণতা খানিক থাকলেও ধীরে ধীরে তাপমাত্রা মাইনাসের দিকে ধাবিত হয়। নভেম্বরের শেষ তুষারপাতের শুরু হয়। এখন নভেম্বরের শুরুর অর্ধ। চাঁদের শুক্লপক্ষ চললেও মেঘের আড়ালে লুকায়িত চন্দ্রমা। নিঝুমের ঘুম ছুটে যায়। অন্ধকারে দেয়ালের দিকে চেয়ে থাকে খানিকক্ষণ। স্ট্রিট লাইটের আবছা আলোয় ঘরের জিনিসপত্র আবছা বুঝা যাচ্ছে। ঘড়ির কাটায় জানান দিচ্ছে রাত তিনটার মতো বাজে। নিঝুম পাশ ঘুরে মিসেস আরলিনকে দেখলো। ঘুমাচ্ছেন তিনি। নিঝুমকে সারাদিন খুব আগলে আগলে রেখেছেন। একদম তার বড়ো আম্মুর মতো। হালকা হাসলো নিঝুম। নিঃশব্দে বিছানা ছেড়ে উঠলো। তারপর বারান্দার থাই খুলে বাইরে এলো৷ বৃষ্টির ছাঁটে বারান্দার মেঝে ভিজে একাকার। ঠান্ডা বৃষ্টি ভেজা মেঝেতে পা রাখতেই শ*রীর যেন শিরশির করে উঠলো। অতঃপর খালিপায়ে বারান্দা পেরিয়ে ঘাসের ভেজা জমিনে নেমে দু হাত ছড়িয়ে চোখ বন্ধ করে আঁধার অম্বরের দিকে মুখ করে আছে। অম্বর ফুঁড়ে মেঘেদের কান্না নিমিষেই ও-কে ভিজিয়ে একাকার করে দিলো। মেঘেদের কান্নার আড়ালে আড়াল হলো ওর নেত্র যুগল দিয়ে গড়িয়ে আসা অশ্রুধারা।
হঠাৎই আচমকা একটা শক্ত কঠোর হাত তাকে টেনে বারান্দায় নিয়ে এলো। তৎপর ঘাবড়ে পিটপিট করে চোখ খুলতেই দেখতে পেলো আবছা মানবটিতে। রূঢ়তার স্বর তার কণ্ঠে।
“আর ইউ ক্রে*জি? এই ঠান্ডার মধ্যে মাঝরাতে বৃষ্টিতে ভিজছো? সকালেই জ্বর থেকে উঠলে, এখন আবার বৃষ্টিতে ভেজো কোন সাহসে?”
কিয়ৎক্ষণ চেয়ে থাকতেই রুদ্ররূপী মানবটির চেহারা স্ট্রিট লাইটের আলোয় দৃশ্যমান হয়। আলফিও ভিজে একাকার। নিঝুম ভাঙা স্বরে বলে,
“বৃষ্টিতে ভিজতে সাহস লাগে?”
“হেয়ালি করছো, ঝুম!”
“যা মনে হয়। আমি তো সাহসীই। নাহলে কি পালিয়ে আসি? এভাবে একজন পুরুষের বাড়িতে থাকি? চোখের সামনে বাবা-মাকে র*ক্তাক্ত দেখেও বেঁচে থাকি?”
আলফি হতবাক হয়ে চেয়ে আছে। মেয়েটা টলছে রীতিমতো। হাত ঠান্ডা বরফের মতো। কন্ঠে নমনীয়তা নেমে এলো যেন।
“কী বলছো এসব? তুমি অসুস্থ। বৃষ্টিতে ভেজা একদমই উচিত হয়নি। চলো ভেতরে…”
আলফির হাত একপ্রকার ঝ’টকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে তপ্ত কণ্ঠে নিঝুম বলে,
“ইউ হ্যাভ নো রাইট টু টাচ মি!”
আলফির যেন অবাক হওয়ার বাকিই ছিল। সে সাথে সাথেই প্রত্যুত্তরে কিছু বলতে পারলো না। নিঝুম আবারও বলল,
“আই অ্যাম ম্যারিড, আলফি। আমার এখানে আসাই উচিত হয়নি। সত্যি বলতে মোহে পড়ে গিয়েছিলাম আমি। নিজের মতো ভালো থাকার মোহ, স্বপ্ন ছোঁয়ার মোহ, ভালোবাসা পাওয়ার মোহ। কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম, সবার ভাগ্যে সব থাকে না। বিয়ে হয়েছে, সেটা যার সাথেই হোক, মেনে নেওয়া উচিত ছিল। আমার কি মনে হয় জানো? অ্যালেক্স আমাকে প্র*স্টি*টিউ-ট ভেবেছে। তুমি ও-কে বলেছিলে আমি ম্যারিড৷ কিন্তু ও দেখেছে আমি তোমার সাথে যাওয়া-আসা করি, তোমার বাড়িতে থাকি৷ তাই হয়তো আমাকে ওরকম মেয়ে ভেবে আমাকে তু-‘লে নিয়ে গিয়েছিল। আমি যদি জায়ানের সাথে থাকতাম, তাহলে কেউ আমাকে এতো হীন ভাবতো না। ওর ভয়েই মানুষ আমার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারতো না। বড়ো আব্বু ঠিকই বলতো, আমি এতোটাই অ*প*য়া যে কোনোদিন নিজের জন্যই বি*ষ হয়ে দাঁড়াব।”
কথাগুলো তীরের মতো ক্ষ*তবি*ক্ষত করলো আলফিকে। রাগে আলফির কপালের র*গ গুলো লাফাচ্ছে। নিঝুমকে কিছু বলার মতো কথা সে গোছাতে পারছে না। ফের নিঝুমের হাত ধরতে চাইলে নিঝুম দু পা পিছিয়ে যায়। তৎক্ষনাৎ আলফির রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। হেঁচকা টানে নিঝুমকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। নিজের আঙুলের স্পর্শ ওর কপাল থেকে গাল বেয়ে থুতনিতে এনে ঠেকালো। অতঃপর হিসহিসিয়ে বলল,
“এতক্ষণ যা বললে তা যেন পরবর্তীতে আর না শুনি। এই কথাগুলো যদি আমি অন্যকারো মুখ থেকে শুনতাম তবে তাকে….. আর রইল অ্যালেক্স! ও ওর শা*স্তি পেয়ে গেছে।”
আলফির চোখ-মুখ দেখে নিঝুমের ভয় হতে শুরু করলো। এই শক্ত বাহুডোর থেকে ছাড়া পেতে হাঁসফাঁস করতে লাগলো। আলফি তাতে বাঁকা হেসে বলে,
“আমি যদি তোমাকে না ছাড়ি, তবে আমার থেকে তুমি কখনোই মুক্তি পাবে না। তুমি আমার জীবনে আসক্তির মতো। প্রণয়াসক্তি। সেই তোমার দিকে নজর দেওয়া……”
আলফির অসমাপ্ত বাক্যটা নিঝুমকে আরও অস্থির করে তুলল। কাঁপা কাঁপা স্বরে শুধালো,
“অ্যালেক্স কোথায়? কী করেছ তুমি ওর সাথে?”
“রিল্যাক্স সুইটহার্ট, তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। রুমে যাও। ভেজা ড্রেস বদলে মেডিসিন খেয়ে ঘুমাও। তুমি এখনও উইক।”
এই বলে আলফি নিঝুমকে ছেড়ে দিলো। রুমে যেতে ইশারাও করলো। নিঝুম পূর্বের ন্যায় অস্থির কণ্ঠে ফের প্রশ্ন ছুঁড়লো,
“কী করেছ তুমি আলফি? তোমাকে আমার খুব ভয় করছে। তুমি অ্যালেক্সকে আবার….? বলো আলফি?”
শেষের কথাটা আলফির দুই বাহু ধরে ঝঁকিয়েই বলল। আলফি উত্তরে বলল,
“মা*রিনি। কো*মাতে আছে।”
“কো*মা!”
নিঝুমের কণ্ঠে অবিশ্বাসের সুর। আলফি হাই তুলতে তুলতে বারান্দার সাথে রুমে থাই খুলল। নিঝুমকে রুমে ঠেলে ঢুকিয়ে দিয়ে আবার লাগিয়ে দিতে নিতেই নিঝুম ওর হাত ধরে। ব্যগ্র কণ্ঠে শুধায়,
“কো*মাতে কীভাবে গেলো? সত্যি করে বলো, আলফি।”
অ্যালেক্সকে নিয়ে নিঝুমের এতো চিন্তা আলফির বিরক্ত ঠেকছে। সে বলে,
“আমি পাঠিয়েছি! তাই গেছে? কেন মায়া হচ্ছে? ও বলেছিল, তোমরা নাকি রিলেশনশিপে আছো!”
নিঝুম হতবাক হয়ে চেয়ে রইল। নিঝুমের এই নিস্তব্ধতার সুযোগে আলফি আজ প্রথমবার নিঝুমের সজ্ঞানেই নিঝুমের গা*লে নিজের ওষ্ঠ স্পর্শ করালো। অতর্কিত কান্ডে নিঝুম আলফিকে ধা*ক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। কিন্তু আলফি হাসছে। আর বলছে,
“ইউ আর মাইন, সুইটহার্ট। জাস্ট মাইন।”
তারপর আর দাঁড়ালো না। চলে গেলো সেখান থেকে। কিন্তু রেখে গেলো হতচকিত নিঝুমকে।
চলবে ইন শা আল্লাহ,