#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৪
ঝড়-বৃষ্টি স্নাত রাতের প্রহর শেষ হলেও নিঝুমের মনে ঘোর মেঘ জমেছে। গতকাল রাতের আলফির ব্যবহার তার মনে ভীতির সঞ্চার করেছে। তাই সকালের নাস্তার জন্য তাকে ডাকা হলেও সে রুম থেকে বের হচ্ছে না।
নাস্তার টেবিলে বসে আলফি নিঝুমের অপেক্ষা করছে। কিন্তু বারবার ডাকা হলেও সাড়া না পেলে নিজে উঠে যায় ডাকতে। দরজায় টোকা দিয়ে ডাকে৷ ভেতর থেকে নিঝুম জবাব দেয়,
“আমার খিদে নেই। ইউনিভার্সিটিও যাব না। তাই পরে খাব।”
আলফি আরেকবার ডাকতে গিয়েও থেমে গেলো। ঘুরে এসে টেবিলে বসে খেতে শুরু করলো। মিস্টার জুনায়েদ এসব দেখে বলেন,
“আমার মনে হয় ও এখনও ভয় পাচ্ছে। আরেকটু সময় নিক।”
আলফি কোনো উত্তর দিলো না। খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে গেলো।
এদিকে নিঝুম নির্ঝরকে কল করেছে।
“আমার একাউন্টে টাকা পাঠা। বড়ো আব্বু জেনে গেলে যাক।”
নির্ঝরের মনে হলো নিঝুমের কিছু হয়েছে। সে বলল,
“সেটা পাঠালাম। কিন্তু তুই হুট করে বলছিস। কিছু হয়েছে? আর দুই দিন তোর ফোন বন্ধ ছিল কেন?”
নিঝুম এখানের ঘটনা বলে নির্ঝর ও বড়ো আম্মুকে চিন্তায় ফেলতে চাইলো না। তাই বলল,
“ফোনে একটু প্রবলেম হয়েছিল। আমার আনা টাকাও খুব সামান্য আছে। তাছাড়া আমি রিয়েলাইজ করলাম, আলফি আমাকে অনেক হেল্প করেছে। তোকে তো সেদিন বললাম যে আমি আসলে এতোদিন যাবত আলফির বাড়িতেই থাকছি৷ আলফির বাবা-মাও আমাকে খুব ভালোবাসেন। কিন্তু আমার কাছে এখানে এতোদিন থাকাটা ভালো দেখাচ্ছে না। আমি একটু আগে আমার এক ইন্ডিয়ান ফ্রেন্ড প্রিয়াকে মেসেজ করেছি, ও যেন আমার জন্য একটা থাকার জায়গা খুঁজে।”
নির্ঝর হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আমি আগেই বলেছিলাম। একটা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের বাসায় থাকাটা ভালো দেখায় না। কিন্তু তার বাবা-মাও আছে বলে থাকা যায়৷ যাই হোক, আমি টাকা পাঠাচ্ছি। তাছাড়া আমার মনে হচ্ছে জায়ান তোর বিষয় নিয়ে কনসার্ন না। নাহলে ওর এতো লিংক থাকতেও এতোদিনেও তোকে খুঁজে পেল না! স্ট্রেঞ্জ!”
নিঝুম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। তার এখন মনে হচ্ছে জায়ান তাকে খুঁজে পেলে সে জায়ানের সাথে চলে যাবে। কিন্তু জায়ান যদি তাকে শাস্তি দেয়? এই ভয়টাও হচ্ছে তার।
—–
আলফিকে ইউনিভার্সিটি যাবে না বলেও, আলফি অফিসে যেতেই নিঝুম ইউনিভার্সিটির নাম করে বেড়িয়েছে৷ মিস্টার জুনায়েদ ও-কে পৌঁছে দিবে বললেও নিঝুম রাজি হয়নি। সে প্রথমে প্রিয়া যেই ফ্লাটে থাকে সেখানে যাবে। প্রিয়াই যেতে বলেছে। তারপর ক্লাস করতে যাবে। প্রিয়ার ওখানে গিয়ে দেখে ফ্লাটে তিনটা রুম ও একটা ডাইনিং ও কিচেন। প্রতিটা রুমের সাথে এটাচড বাথরুম আছে। এই ফ্লাটে ওরা ৬ জন মেয়ে থাকে। এর মধ্যে ২ জন ইন্ডিয়ান, ১ জন নেপালের, ১জন পাকিস্তানের, ১ জন মেক্সিকান, ১জন কানাডারই অন্য শহরের। ফ্লাটের রুমগুলো তেমন বড়োও না। নিঝুম ঘুরে ঘুরে দেখে। প্রিয়া বলে,
“আমি ওদেরকে এখনও বলিনি। ওরা যদি রাজি হয় তবে তুই এখানেই উঠতে পারবি। কিন্তু রাজি না হলে… বুঝিসই তো। রেন্টের ডিস্ট্রিবিউশনেরও ফ্যাক্ট আছে। তবে আমি খোঁজ নিবো আরও৷ তোকে জানাব।”
নিঝুম বলে,
“সাথে একটা পার্টটাইম জবেরও খোঁজ করিস।”
“করব। কিন্তু তুই হুট করে কেন আলফির বাড়ি ছাড়তে চাইছিস? তোদের মধ্যে ঝ*গ*ড়া হয়েছে? ব্রেকাপ করে ফেলবি নাকি?”
প্রিয়ার কথা শুনে নিঝুম চমকায়। আলফির সাথে তার রিলেশন তো গড়েই উঠেনি৷ ভালোবাসার কথা বলার আগেই বিয়ে হয়ে গেলো৷ তারপর আর বলেইনি। নিঝুম বলে,
“আলফির সাথে আমার কোনো রিলেশন নেই। উই আর জাস্ট ফ্রেন্ড।”
প্রিয়া অবাক হয়৷ অবাক কণ্ঠে বলে,
“জাস্ট ফ্রেন্ড? আমি তো ভাবলাম ও তোর বয়ফ্রেন্ড। কতো কেয়ার করে তোর। তুই তো বলেছিলি, ওর মা-বাবও তোকে অনেক আদর করে।”
“হু। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বটা প্রেমের সম্পর্কে যাওয়ার আগেই…”
থামে নিঝুম। প্রিয়াকে সে বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলেনি। এমনকি মোনা ও নোয়াকেও না। নিঝুমকে চুপ করে যেতে দেখে প্রিয়া শুধায়,
“কী হলো? থেমে গেলি কেন? প্রেম হয়নি কেন?”
“আমি আসলে ম্যারিড৷ বিয়েটা আমাকে জোরপূর্বক দেওয়া হয়েছে। আমি রাজি ছিলাম না। বড়ো আব্বু তার ব্যাবসার লাভের জন্য আমাকে তার এক বিজনেস পার্টনারের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। আমি বিয়ের আগে রুম বন্দি ছিলাম। তাই বিয়ে করে পালিয়ে এসেছি। বিয়েটা না হলে হয়তো আলফির সাথে আমার…. যাইহোক, এখন আর সম্ভব না।”
প্রিয়া গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে শুনছে। তার মনে হচ্ছে নিঝুম মজা করছে। বিয়ে করে কেউ পালায় নাকি!
“খুব ভালো গল্প বললি তো! বিয়ে করেও পালায়? এই পালিয়ে লাভটা কী? বিয়ে তো হয়েই গেছে।”
নিঝুম হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে এসেছিলাম। কিন্তু উনি যে আমাকে ডিভোর্সের রাইট দেননি সেটা জানতাম না। যদি দিতো তাহলে আমাদের ডিভোর্স হয়ে যেত।”
“ওহ। তোর জন্য খারাপ লাগছে। যাকে ভালোবাসিস তার সাথে এক বাড়িতে থেকেও নিজের ভালোবাসা লুকাতে হচ্ছে। আবার যাকে বিয়ে করেছিস, তার থেকেও পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে৷ আচ্ছা তোর হাসবেন্ড কি দেখতে খারাপ? নাকি বয়স্ক?”
“বয়স্ক না। কিন্তু তাকে আমি কখোনো দেখিইনি।”
প্রিয়া আরও হতবাক!
“এ্যাঁ! দেখিসনি! তাহলে বিয়ে কীভাবে? ওহ সরি, তোদের বিয়ে রিচুয়াল তো আলাদা। তারউপর বললি জোর করে বিয়ে দিয়েছে। রুমে আ*টকে রেখেছিল। কিন্তু যাকে বিয়ে করলি তাকে একবারও দেখতে ইচ্ছা হয়নি? আমি হলে তো না দেখে থাকতেই পারতাম না!”
হুট করে নিঝুম অন্যমনস্ক হয়ে গেল। বিড়বিড় করে বলল,
“এখন দেখতে চাই। তার এতো ক্ষমতা তো আমাকে এতোদিনেও খুঁজে পেলো না?”
“কি বলিস বিড়বিড় করে?”
সম্বিৎ ফেরে নিঝুমের। কৃত্রিম হাসি হেসে বলে,
“না কিছু না। বাদ দে ওসব। চল ভার্সিটিতে যাই।”
প্রিয়া ঘড়ি দেখে বলে,
“হ্যাঁ, আর ২০ মিনিট আছে। ওয়েট, আমি শালটা নিয়ে নেই।”
নিঝুম অপেক্ষা করলো৷ তারপর দুজনে বেরিয়ে গেলো
——
আরও তিন দিন পেরিয়ে গেছে৷ নিঝুম আলফির সামনেও যায় না। সকালে আলফি নাস্তা করতে আসার আগেই নাস্তা নিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। তারপর আলফি বেরিয়ে যাওয়ার পর নিজেও বের হয়। নিঝুম যে আলফিকে ইগনোর করছে এটা সবাই বুঝে গেছে। আজও নিঝুম নাস্তা নিয়ে রুমে বসে খাচ্ছে। আলফি চোখ-মুখ শক্ত করে টেবিলে বসে নাস্তা করছে। মিস্টার জুনায়েদ বলেন,
“নিঝুমের হুট করে কী হলো বলোতো? তোমাকে একদম এড়িয়ে চলছে।”
“ও ওর মন-মর্জির মালিক। বাদ দাও, ড্যাড।”
মিস্টার জুনায়েদ ছেলের মুখের ভাব দেখে ব্যথিত হলেন। আলফি নাস্তা শেষ করে উঠার সময় তিনি বললেন,
“আমাদের তো তিন দিন পর চলে যাওয়ার কথা। আমি ও তোমার মা চাইছি আরও কিছুদিন থাকি।”
“নো, ড্যাড। তোমাদের যেদিন যাওয়ার কথা সেদিনই যাবে।”
“কিন্তু নিঝুম তো তোমাকে ইগনোর করে চলছে।”
“এজন্যই আমি চাইছি তোমরা আরও না থাকো। তাহলে ও আমাকে ইগনোর করতে পারবে না।”
বলেই আলফি বেরিয়ে যায়। রুমে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে নিঝুম সবটাই শুনলো। সেও ভেবে রেখেছে যেদিন আলফির বাবা-মা চলে যাবে সেদিনই সে প্রিয়াদের ফ্লাটে গিয়ে উঠবে। প্রিয়ার মেক্সিকান রুমমেট রাজি না হলেও নেপালি ও পাকিস্তানি মেয়েটা রাজি হয়েছে নিঝুমকে নিজেদের রুমে রাখতে। তারপর মাস শেষ হলে প্রিয়া ওর জন্য অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করবে।
নিঝুম ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। সেদিন আলফির ওই আচমকা ব্যবহার ও কাজ তাকে আলফির সাথে এক বাড়িতে থাকার সাহস দিচ্ছে না। তারউপর প্রিয়া, নোয়া ও মোনাকে নিয়ে হসপিটালে অ্যালেক্সকে দেখতে গিয়েছিল। সত্যি অ্যালেক্স কো*মাতে। হসপিটালের কর্তৃপক্ষ বলেছে সিসিটিভির ফুটেজ ডিলেট করা, তাই তারা ধরতে পারছে না। আলফি নাকি অ্যালেক্সের সমস্ত চিকিৎসার খরচ দিচ্ছে। নিঝুম বুঝতে পারছে না, আলফি নিজেই অ্যালেক্সের এই অবস্থা করে আবার নিজেই খরচ দিচ্ছে!
চলবে ইন শা আল্লাহ,