আলোছায়াতে প্রণয়াসক্তি পর্ব-১৫

0
671

#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৫
ক্যামিলিয়ার কম্পানির সাথে হওয়া বিজনেস ডিল আজ শেষ হয়েছে। দুই কম্পানি সৌজন্যতায় একসাথে নিজেদের ডিল সম্পূর্ণ হওয়ায় মিটিং রুমে জড়ো হয়েছে। সবধরনের ফর্মাল কাজ শেষে আলফি ও ক্যামেলিয়া হাত মেলায়। একে অপরকে অভিবাধন জানায়। ক্যামেলিয়া আলফিকে বলে,

“আই হোপ, ইন ফিউচার, উই উইল ডু মোর ডিলস টুগেদার।”

আলফি দুর্বোধ্য হাসলো৷ ক্যামেলিয়া আরও বলল,
“লেটস সেলিব্রেট দিস এচিভমেন্ট।”

“অফকোর্স, বাট নট টুডে।”

“ওকে। দেন দিস হলিডে?”

“ওকে।”

ক্যামেলিয়া আলফির দিকে একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে,
“অ্যাই হ্যাভ অ্যা ভেরি স্পেশাল সারপ্রাইজ ফর ইউ।”

আলফি বাঁকা হেসে বলে,
“এন্ড অ্যাই হ্যাভ টু।”

ক্যামেলিয়ার মনে রঙবেরঙের ফুল ফুটছে। জায়ান তাকে সারপ্রাইজ দিবে! তাহলে কি জায়ানের মনে সে জায়গা করে নিতে পেরেছে? আর তর সইছে না তার। হুট করে সে জায়ানকে জড়িয়ে ধরে।
(জায়ানই আলফি। ক্যামেলিয়া ওর আলফি নামটা জানে না বলে)
আকস্মিক কান্ডে আলফি চমকায় না কিন্তু খুব সাবধানে ক্যামেলিয়াকে নিজের থেকে সরিয়ে মিটিং রুমে উপস্থিত মানুষদের দিকে ইশারা করে। তাতে ক্যামেলিয়া লজ্জা পেয়ে লাজুক ভঙ্গিতে সবার দিকে তাকায়।

—–
হলিডে আজ। মিস্টার জুনায়েদ ও মিসেস আরলিন আজ নিউইয়র্কে ফিরে যাবেন। তিন সপ্তাহ এখানে থেকেছেন উনারা। নিঝুম উনাদের বিদায় বেলায় খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছে। মিসেস আরলিনও নিঝুমকে ছাড়তে চাইছেন না। মিসেস আরলিন বলে,
“আই উইল মিস ইউ, ডিয়ার।”

“মি টু, আন্টি।”

মিস্টার জুনায়েদ নিঝুমের মাথায় হাত দিয়ে বলেন,
“তোমার সেমিস্টার শেষ হলে নিউইয়র্কে গিয়ে বেড়িয়ে এসো। তখন তো তুষারে ঢাকা থাকবে সব। চারজন একসাথে বার্বিকিউ এন্ড চায়ের আড্ডা দিব। ওখানে আমাদের নেইবার বাঙালিরা মিলে পার্টিও করি।”

নিঝুম কৃত্রিম হেসে সায় দিলো। তারপর উনারা বিদায় নিয়ে বের হলো। আলফি উনাদের এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এগিয়ে দিবে তারপর ছোটো একটা কাজ সেড়ে আসবে। সবাই চলে যেতেই নিঝুম নিজের ব্যাগপত্র গোঁছাতে শুরু করলো। প্রিয়াকে সে বলে রেখেছে, আজকে ওদের ফ্লাটে আসবে। সব গোঁছগাছ করতে একটু সময় লেগে গেছে। তারপর নিজেও রেডি হয়ে বারান্দা দিয়ে বাড়ির পেছনের ও পাশের গাছগুলো দেখতে যায়। নভেম্বরের শেষ অর্ধ ও শীতের কাছাকাছি হওয়ায় বেশ কনকনে ঠান্ডা পড়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে এই সপ্তাহেই তুষার পড়ার সম্ভাবনা আছে। তখন গাছগুলোতে এই শরৎকালে বর্ণিল সৌন্দর্য দেখা যাবে না। বিশাল জিঙ্কো গাছটার নিচে গিয়ে দাঁড়ালো। পাশেই দুই-তিনটা ম্যাপল গাছ ও আপেল গাছ। এখানে আসার আগে হাতে করে নিজস্ব ডায়েরিটা নিয়ে এসেছে। শুকনো দুটো জিঙ্কো পাতা ও ম্যাপল পাতা তুলে নিয়ে ডায়েরিতে রেখে তারিখ সহ লাগালো। লাগানোর জন্য কস্টেপও নিয়ে এসেছে। যেদিন প্রথম এখানে এসেছিল, প্রায় দেড় মাস আগে, সেদিন ফ্রেশ দুটো জিঙ্কো ও ম্যাপল পাতা ডায়েরিতে লাগিয়ে তারিখ সহ লিখেছিল,

“জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা, নতুন ভাবে স্বপ্ন পূরণের পথযাত্রা।”

আর আজ লিখলো,
“আজকেই আলফির বাড়িতে আমার শেষ দিন। মন ও মস্তিকের সাথে ক্রমাগত যু*দ্ধ করে মনকেও মস্তিষ্কের পথে নিয়ে এসেছি। মন তো আবেগী। সারাজীবন মনকে প্রাধান্য দিয়ে এই প্রথম মনের বিরুদ্ধেই মনকে বুঝিয়ে ফেলেছি। ভালোবাসলেই পেতে হবে কেন? আমারটা নাহয় আমি আমার মনেই দা*ফন করলাম! ভালো থাকুক সে। আমাকেও নিজের গন্তব্যে এগুতে হবে। গন্তব্য তো সেই অপ্রিয় মানুষটা। যাকে আমি দেখিনি। অদূর ভবিষ্যৎ আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে তাও অজানা। এই অজানাই আমার হৃদয় হিয়ায় শঙ্কার দামামা বাজাচ্ছে। কিন্তু নিঝুম স্ট্রং। ছোটো থেকেই স্ট্রং। সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে আলো ঠিক খুঁজে নিবে। জীবনে তো সে আলোর অন্বেষণেই বেঁ’চে আছে।”

শীতল শিশির জমা ঘাসের উপর বসে লেখাগুলো ডায়েরির পাতায় লিখে বুক ভরে শ্বাস নিলো। চারিপাশে আরও একবার চোখ বুলাল। অতঃপর উঠে দাঁড়ালো। প্রকৃতিতে সন্ধ্যা নেমে গেছে। মাগরিবের নামাজটা পড়েই আলফি এলেই বেরিয়ে যাবে। অনলাইনে ক্যাবও বুক করে ফেলেছে ইতোমধ্যে।
নামাজ পড়ে উঠতেই বাহির থেকে গাড়ির হর্ণের আওয়াজ আসে। আলফি এসেছে। মানসিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো। তারপর নিজের নীল রঙা বড়ো লাগেজটা টেনে বাড়ির সদর দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। আলফি গাড়ি পার্ক করে দরজা খুলে বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই নিঝুমকে দেখে। হাতে বড়ো লাগেজটা ধরে তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটা। আলফি ভ্রুঁ কুঁচকালো। অতঃপর শুধালো,

“কী ব্যাপার? লাগেজ নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

নিঝুম নিজেকে শক্ত করে জি*ভ দিয়ে ঠোঁ*ট ভিজিয়ে বলে,
“আমি চলে যাচ্ছি, আলফি!”

নিঝুমের মুখ থেকে এই কথাটা শুনে আলফির কপাল যেন আরো কুঁচকে গেল। সে দরজা লাগিয়ে কিছুটা এগিয়ে সন্দিহান কণ্ঠে ফের শুধায়,
“চলে যাচ্ছো মানে?”

“চলে যাচ্ছি মানে, আমি তোমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমি আমার ফ্রেন্ডের ফ্লাটে উঠব৷”

“রিজন?”

আলফির চোখেমুখে হুট করে ক্রু*রতা ফুটে উঠলো। নিঝুম মৃদুস্বরে জবাব দিলো,
“আমার মনকে আমি বুঝিয়ে ফেলেছি। তোমার সাথে একা এক বাড়িতে আমি থাকতে পারব না। ডিসিশনটা আমার আরও আগেই নিতে হতো, কিন্তু মনের কাছে বাঁধা ছিলাম। সেই বাঁধন আমি মুক্ত করে চলে যাচ্ছি।”

কথাটা শুনে আলফি এক পা দু পা করে নিঝুমের দিকে আগাচ্ছে। চোখমুখে চাপা রাগের আভাস। নিঝুম এতক্ষণ নিজেকে শক্ত করে রাখলেও এখন তার ভয় হচ্ছে। সেদিন রাতের আলফির সাথে এখন তার দিকে এগিয়ে আসা আলফির বড্ড মিল। এই আলফির সাথে একা এক বাড়িতে সে থাকতে পারবে না। নিঝুম ভীত পদে পেছোতে পেছোতে ডাইনিং এর চেয়ারের সাথে বা*ড়ি খাওয়ার আগেই আলফি ওর কোমড় চেপে ধরে ফেলে। তারপর নিঝুমের কপালে জড়ো হওয়া চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে নিজের তর্জনী আঙুল ওর কপাল থেকে গাল বেয়ে থুতনিতে ঠেকিয়ে বলে,

“বাঁধন তুমি একা মুক্ত করতে চাইলেই কী হবে? এর এক পাশ তো আমার দখলে!”

আলফির কথা ও কাজে আরও ভড়কে উঠে নিঝুম। তোঁতলানো স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“মা..মানে?”

“মানে বুঝতে পারছো না?”

অসহায় চোখে তাকায় নিঝুম। আলফি দুর্বোধ্য হেসে বলে,
“বুঝতে হলে তোমাকে আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে। যাবে?”

নিঝুম মা*থা দুই দিকে হেলিয়ে না করে অস্বস্তির সাথে আলফিকে ধা*ক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,
“ক্যাব চলে আসবে। প্লিজ আলফি, আমাকে যেতে দাও। ছাড়ো আমাকে।”

চট করে আলফি ও-কে ছেড়ে দিলো। তারপর দু পা পিছিয়ে বলল,
“আলফি তোমাকে যেতে দিতে পারে এক শর্তে, তোমাকে এখন আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে।”

“আলফি, ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।”

“নো! ইউ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড, ঝুম সুইটহার্ট! এতোদিন আমার কথা মেনে নিতে পেরেছো, আজ আলফি তোমাকে শেষ বার রিকুয়েষ্ট করছি। মানতে তোমাকে হবেই।”

“এটাকে রিকুয়েষ্ট বলে না!”

“তাহলে অর্ডারই ভেবে নাও!”
বলেই সে আবারও এগুলো নিঝুমের দিকে। নিঝুম পেছোতে গিয়ে চেয়ারের সাথে পিঠে বা*ড়ি খায়। আলফির হাবভাবে বোঝা যাচ্ছে, আলফি নিজের কথা না মানিয়ে তাকে যেতে দিবে না। অগ্যতা রাজি হলো। ক্যাব ড্রাইভারও ইতোমধ্যে চলে এসেছে। নিঝুমের ফোনে কল এলে আলফি খপ করে ফোনটা নিয়ে নিজে কথা বলে। ক্যাব ড্রাইভারকে ডাবল টাকা দিয়ে ফিরে যেতে বলে। এরপর নিঝুমের লাগেজ সহ নিজুমকে নিয়ে গাড়িতে উঠে। নিঝুম ভীত ও সন্দিহান হয়ে দেখছে।
আলফি এখন নিঝুমকে নিয়ে নাইট ক্লাবে যেখানে ক্যামিলিয়া বিজনেস ডিল এচিভমেন্টের পার্টি থ্রো করেছে, সেখানে যাচ্ছে। আজ নিঝুম জানবে তার পরিচয়। তার অধিকারবোধ।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
আলফির সম্পূর্ণ পরিচয় জেনে নিঝুমের কী হাল হবে?

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন৷ কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।