#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২
জায়ান গাড়িতে বসতেই তার অ্যাসিস্ট্যান্ট তাকে ফ্লাইটের টিকেট দিয়ে বলে,
“স্যার, আপনার আগামীকাল সকালের টরেন্টোর ফ্লাইট। এয়ারপোর্ট থেকে খবর পেয়েছি ম্যামের ফ্লাইট কিছুক্ষণ আগেই টেকঅফ করেছে।”
জায়ান বাঁকা হাসলো। বিড়বিড় করে বলল,
“তুমি আমাতেই ফিরবে, সুইটহার্ট! জায়ান আহমেদই তোমার গন্তব্য।”
এদিকে নিঝুম বিমানের জানালার ধারে বসে কাঁচের বাহিরে দেখছে। প্রতি মিনিটে বিমান তার উড়ার উচ্চতা বাড়াচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এটি ৩০-৪০ হাজার ফুট উচ্চতা ছুঁয়ে উড়তে শুরু করবে। নিঝুম তার মাতৃভূমিকে দেখার চেষ্টা করলো। এতো ক্ষুদ্র দেখাচ্ছে যেন হাতের মুঠোয় সবটা। নিজের জন্মভূমিকে ছেড়ে যেতে বুক ভার হচ্ছে তার। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমান মেঘেদের রাজ্যে প্রবেশ করলো। অন্ধকারে ধোঁয়াশার মতো মেঘেদের বিচরণ। নিঝুমের মন খারাপের রেশ কেটে গেল। মেঘ তার খুব পছন্দের। তার জন্মও সেই মেঘেদের শহরে। বাবা-মায়ের পোস্টিং ছিল খাগড়াছড়িতে। বাবা ছিলেন আর্মিতে মেজর। মা ছিলেন ডাক্তার। বাবার কারণেই মা খাগড়াছড়িতে থাকতেন মূলত। তার বড়ো আব্বু-আম্মুও ছুটি পেলেই সেখানে ছুটতেন। ওরাও ছুটিতে ঢাকা আসতো। বিপত্তি ঘটে একদিন ঢাকা আসার পথে। প্রাইভেট কার কুমিল্লার একটা হোটেলে থামিয়েছে। এতো লম্বা জার্নিতে অন্তত দুইবার তো যাত্রাবিরতি লাগেই। তিন বছরের নিঝুম হুট করে বাবা-মায়ের চোখের আড়াল হয়ে গেলো। নিঝুমের বাবা নাহিদ চৌধুরী নেটওয়ার্ক ইস্যুতে রাস্তার অপজিটে গিয়েছিলেন। নিঝুম খুব করে বাবার সাথে যেতে চাইলেও ও-কে রেখে গিয়েছিলেন ওর মায়ের কাছে। কিন্তু হুট করে নিঝুমের মা জেরিন হোটেল থেকে কুমিল্লার বিখ্যাত রসমালাই কেনায় ব্যস্ত হতেই নিঝুম আলগা পেয়ে হাইওয়ের দিকে ছুট লাগায়। মিসেস জেরিনের খেয়াল হতেই তিনি দেখলেন মেয়ে তার হাইওয়ের দিকে ছুটছে। ছোটো ছোটো পায়ে বেশ খানেক দূরত্ব অতিক্রম করে ফেলেছে। মিসেস জেরিন মেয়ের নাম ধরে চিৎকার করতে করতে মেয়ের পিছু ছুটছেন। সময়টা এমন যে তীব্র রোদ্দুরে অন্যান্য বাসের যাত্রীরা হোটেলের ভেতরেই খাবার খাচ্ছেন বা হোটেলের কর্ণারে ধূ*মপানে ব্যস্ত। মিসেস জেরিনের তীব্র চিৎকারে তারপরও কিছু মানুষ ছুটে এসেছিল। স্ত্রীর চিৎকারের শব্দ মিস্টার নাহিদের কানে পৌঁছায়। তিনিও রাস্তার অপজিট থেকে ছুটে আসছেন। ছোটো নিঝুম মাঝরাস্তায় গিয়ে ভয়ে পেয়ে গেছে। সাঁই সাঁই গাড়ির চলাচল, দুই দিক থেকে বাবা-মাকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে আরও আ*তঙ্কে সে। অতঃপর ঘটে সেই ভ*য়াবহ ঘটনা। নিঝুমকে মিসেস জেরিন ছিটকে ফেললেও মা*থা ফে*টে র*ক্তা*ক্ত হয়। মিস্টার নাহিদও চট্টগ্রাম মুখী বাসের সাথে ভয়াবহ অ্যা-কসি*ডেন্ট করেন। ঘটনাস্থলেই মিসেস জেরিন শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মিস্টার নাহিদ হসপিটালে কিছুদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মা*রা যান। নিঝুমের এই স্মৃতি আবছা মনে পড়ে। রাতে ঘুমালে প্রায় প্রায় তার এসব স্বপ্ন হিসেবে আসে।
মেঘেদের বিচরণ দেখতে দেখতে নিঝুম তার এযাবতকাল চিন্তা করছে। নিঝুম মিসেস আয়েশার মুখে তার বাবা-মায়ের মৃত্যুর ঘটনা সে শুনেছে। মিস্টার নয়ন সেই ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জেনেছে। তখন থেকেই তিনি নিঝুমকে পছন্দ করেন না। নিঝুমের জন্মের দুইদিন পর নিঝুমের দাদীও স্ট্রোক করে মা*রা গিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে তিনি নিঝুমকে অশুভ মনে করেন। কিন্তু এতোটাই অপছন্দ করেন যে একটা গু*ন্ডার সাথে জোর করে বিয়ে দিবে তা সে ভাবতেও পারেনি। এমনকি নিঝুম বিয়েতে রাজি না হলে ও-কে কোনো খাবারও দিতে নিষেধ করেছিলেন। মিসেস আয়েশা ও নির্ঝর বারান্দার গ্রিল দিয়ে শুকনো খাবার ও পানি দিয়েছিল। নিঝুম কখোনো জায়ান আহমেদকে দেখেনি। শুধু নামটাই শুনেছে। দেশ-বিদেশের বিজনেস ওয়ার্ল্ডে জায়ানের নামটাই ত্রাসের মতো। কিন্তু তার চেহারা পরিচিত না। সে হুট করে মিস্টার নয়নের প্রায় ডুবতে থাকা বিজনেসে অনেক বড়ো এমাউন্ট ইনভেস্ট করে। সেই সাথে ব্যাংক থেকে নেওয়া লোনও পরিশোধ করবে জানায়। এর জন্য মিস্টার নয়নের কাছে দুটো বিকল্প রাখে। নিঝুমের সাথে জায়ানের বিয়ে দিতে হবে, অথবা মিস্টার নয়নের বিজনেসের ৫১% শেয়ার জায়ানের নামে লিখে দিতে হবে। মিস্টার নয়ন প্রথম বিকল্পটাই বেছে নিয়েছেন। নিঝুমের বিয়ের বয়স হয়েছে। বিয়ে তো ও-কে দিতেই হবে। সেই বিয়ে জায়ানের সাথে দিলে তার ব্যবসাও থাকবে, নিঝুমও খুব বড়ো ঘরে যাবে। তিনি মনে করেন, জায়ানের টাকাপয়সা যে নিঝুম সেখানে রানীর মতোই থাকবে এবং তিনি নিজের স্বার্থ দেখলেও নিঝুমের ভালোই করছেন। আমেরিকা, কানাডা, জার্মানিতে বিস্তৃত জায়ানের বিজনেস।
এসব ভেবেই নিঝুম দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ে। নিঝুম সিটে হেলান দেয়। অবশেষে সে মুক্তির পথ খুঁজে নিয়েছে। নতুন ভবিষ্যৎ নিয়ে রঙিন স্বপ্ন বুনতে ব্যস্ত সে।
——-
মিস্টার নয়ন ড্রয়িংরুমে পায়চারী করছে। অপেক্ষা করছে নির্ঝরের আসার। মিসেস আয়েশার সাথে এতক্ষণ রাগারাগি করেছেনও। কিছুক্ষণ পর নির্ঝর আসে। বাড়ির সদর দরজা হাট করে খোলা! নির্ঝর জানে এর কারণ কী। সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। নির্ঝরকে দেখেই মিস্টার নয়নের রাগের বর্ষণ হলো। স-পা*টে চ*ড় বসলো নির্ঝরের গা’লে। তারপরও নির্ঝর মুচকি হাসলো। রাগে কাঁপতে কাঁপতে মিস্টার নয়ন বললেন,
“কোথায় নিঝুম? কোথায় রেখে এসেছ তাকে?”
“কেন? ও তো তোমার বিজনেস ডিল কনফার্ম করেই গেছে। তাহলে ওর কী দরকার?”
নির্ঝর শান্ত গলায় বললেও মিস্টার নয়ন মোটেও শান্ত হতে পারছেন না। তিনি ফোঁসতে ফোঁসতে বললেন,
“জায়ান যেই পেপারে সাইন করেছিল, সেটা জায়ানের কাছেই। ও চাইলে সেটাকে পুড়িয়ে ফেলতে পারে। আমার পুরো বিজনেস ডিপেন্ডেবল ওই একটা কাগজের উপর।”
“তবে দিয়ে দাও জায়ানকে ৫১% শেয়ার। বাকি ৪৯% এ আমরা চলতে পারব। তাছাড়া আমার জব আছে। ব্যাংকের লোনও বিজনেসের লাভ থেকে আস্তে আস্তে চুকানো যাবে।”
“ভাট বোকো না! লোনের পরিমাণ সু*দেআসলে আরও বাড়বে। তখন এই বাড়িটাও যাবে। পথে বসব সবাই মিলে? নিঝুমের তো সাতকপাল যে এমন অল*ক্ষী নিয়ে জন্মেও এতো বড়ো বিজনেসম্যানের সাথে বিয়ে হয়েছে। সে সেটারও কদর করলো না। রানীর হালে থাকবে।”
এবার মিসেস আয়েশা ছ্যাঁ’ত করে উঠলেন।
“জায়ান আহমেদের নামে এতো কথা ছড়িয়েছে, একটা গু*ন্ডা, ল*ম্প*টের সাথে টাকাপয়সা দিয়ে সে কীসের রানী হবে? জায়ানের নামে তারই একসময়কার ফিমেইল বিজনেস পার্টনার রে*ই*প এ*লিগে*শন এনেছিল। সে সবকিছু টাকা দিয়ে ধামাচাপা দিয়েছে।”
“ওসব মি’থ্যা এ*লিগেশন। বিজনেসে শ*ত্রু হয়ে গেলে এসব অনেক রি*উ*মার ছড়ায়।”
“তুমি আর ওই গু*ন্ডা, ল*ম্পটের তরফদারি করবে না। যা রটে তার কিছুটা তো বটেই। আমার মেয়ে ওই ছেলের সাথে সংসার করবে না।”
মিস্টার নয়ন তাচ্ছিল্য হাসলেন। আর বললেন,
“জায়ানই ও-কে খুঁজে বের করবে। হয়তো ইতোমধ্যে খোঁজ পেয়েও গেছে। ওর পাওয়ার জানো না।”
——–
দীর্ঘ জার্নি শেষে টরেন্টো এয়ারপোর্টে নামলো নিঝুম। ভোরের স্নিগ্ধতায় সজীব পরিবেশ। ল্যাগেজ পেতে নিঝুমকে অপেক্ষা করতে হবে। এখন অক্টোবর মাস। অক্টোবর মাস কানাডায় শরৎকাল। এই সময় এখানে শীতল আবহাওয়া ও মাঝেমধ্যে অল্পস্বল্প বৃষ্টিও হয়। নিঝুমের শরীরে কাঁপন ধরলো৷ বেনারসি শাড়ির আঁচলটা আরেকটু জড়িয়ে নিলো। তাড়াতাড়ি ওয়েটিং এড়িয়াতে চলে গেলো।
চলবে ইন শা আল্লাহ,