আলোছায়াতে প্রণয়াসক্তি পর্ব-২২

0
331

#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২২
ডোওস পার্কে ঘোরাঘুরি শেষে ওরা সবাই একসাথে ডিনার করে ফিরলো। আলফি নিঝুমকে প্রিয়াদের ফ্লাট থেকে লাগেজ সহ একেবারে নিয়ে এসেছে। গাড়ি থেকে নেমেই নিঝুমের মনের মধ্যে অন্যরকম লাজুকতা ভর করলো। দাঁড়িয়ে রইল বাইরেই। আলফি বাড়ির দরজার কাছে গিয়ে পেছনে ফিরে নিঝুমকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,

“হোয়াট হ্যাপেন্ড? হোয়াই আর ইউ স্ট্যান্ডিং?”

নিঝুম থতমত খেয়ে কিছু বলতে চাইলো কিন্তু বলার মতো কিছু না পেয়ে কৃত্রিম হাসলো। আলফি লাগেজটা দরজার কাছেই রেখে এসে নিঝুমের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে।

বাড়ির ভেতরে গিয়ে নিঝুম নিজের লাগেজ নিয়ে নিচ তলার ওই রুমটায় যাচ্ছে। আলফি পানি খেতে খেতে তা তেখে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“তুমি ওই রুমে যাচ্ছো কেন?”

নিঝুম ঘুরে তাকালো। বলল,
“আমি তো ওই রুমেই থাকি। তাই যাচ্ছি।”

আলফি পানির গ্লাসটা টেবিলের রেখে নিঝুমের দিকে এগিয়ে আসে। তারপর দুষ্ট হেসে নিঝুমের কপাল থেকে গাল পর্যন্ত আঙুলের স্পর্শ এঁকে বলে,
“সুইটহার্ট, দ্যাট টাইম ইউ ডিডেন্ট নো দ্যাট আই অ্যাম ইউর হাসবেন্ড। বাট নাউ ইউ নো। সো….”

শিউরে উঠলো নিঝুম৷ শুকনো ঢোক গিললও। মুখের কথা তোঁতলে যাচ্ছে। বলে,
“আই থিংক উই শুড টেক সাম টাইম।”

আলফি হতাশ হয়ে বলল,
“বিয়ের পর থেকে তো…. তুমি যেহেতু টাইম চাচ্ছো, ওকে।”

তারপর আলফি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে শুরু করলে নিঝুম বলে,
“আমাদের রিসিপশন পর্যন্ত টাইম চাই। আমি চাই পুরো দুনিয়া জানুক আমি তোমার ওয়াইফ। কোনো লুকোচুরি না।”

আলফি হাসলো। অতঃপর বলল,
“আই অলসো ওয়ান্ট টু এনাউন্স আওয়ার ম্যারেজ ইন ফ্রন্ট অফ এভরিওয়ান। এন্ড ইট উইল বি সুন।”

বলেই আলফি মৃদু হেসে উপরে চলে গেল। রুমে গিয়ে শাহরিয়ারকে কল করলো।
“আপডেট বলো।”

“স্যার, অ্যালেক্স অনেকটাই রিকোভার করেছে। এসব মিস্টার প্যাটিসনের জন্যই সম্ভব হয়েছে। আই থিংক উনি অ্যালেক্সের মাধ্যমে আপনার উপর…”

“তুমি নজর রাখো।”

তারপর ফোন কে’টে আলফি খানিক চিন্তায় পড়লো। আজকে সকালেই জানতে পেরেছে অ্যালেক্স কোমা থেকে ফিরেছে। কিন্তু প্যাটিসন অ্যালেক্সকে আসলে কী কারণে সাহায্য করছে সেটাই ঠিক ভাবে বুঝতে পারছে না। প্যাটিসন চাইলে তার সাথে সামনাসামনি ফা’ইট করতে পারে কিন্তু সে ক্যামেলিয়াকে ব্যবহার করে এখন অ্যালেক্সকে। এই প্যাটিসনের অধ্যায় তার লাইফ থেকে যত দ্রুত সম্ভব সরাতে হবে। ক্যামেলিয়ার সাথে প্যাটিসনও এক্সপোজ হয়েছে। ওদের দুজনের নামেই পু*লিশ কমপ্লেন করে রেখেছে আলফি।
ভাবনাচিন্তা বাদ দিয়ে আলফি ফ্রেশ হতে গেলো।

——
নিঝুম হাত-মুখ ধুঁয়ে বের হতেই দেখলো ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। ফোন উঠিয়ে দেখে প্রিয়া দুইবার কল করেছে। নিঝুম কল ব্যাক করে হ্যালো বলতেই অপর পাশ থেকে প্রিয়া বলে উঠে,
“এত সময় লাগে ফোন উঠাতে? দুই দুই বার কল করলাম! কি করছিলি এতক্ষণ? আলফির সাথে রোমান্স করছিলি বুঝি?”

বলেই হিহি করে হাসলো প্রিয়া। নিঝুম লাজুক ভাবে কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
“বেশি বুঝিস তুই। আমি ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গিয়েছিলাম।”

“ও ও! আমি আরো ভাবলাম হাজবেন্ডের সাথে রোমান্স করছিস হয়তো! আজ তো তোদের ফার্স্ট নাইট হওয়ার কথা এজ এ হাজবেন্ড ওয়াইফ।”

প্রিয়া ও রেহাম হাসছে৷ নিঝুম বলে,
“না। আমি ওর থেকে সময় চেয়েছি।”

“আরও সময়? কী ভাই তুই! তোদের বিয়ের দুই মাস হলো। এখনও সময়ই নিচ্ছিস। বেচারা আলফি। মায়া হচ্ছে ওর জন্য। এই শীতের রাতেও বেচারার বউ থেকেও নেই! এতো হ-ট ওয়াইফ থাকতেও সিঙ্গেল কাটাতে হচ্ছে!”

প্রিয়ার এই অসভ্য কথাতে নিঝুম বিরক্ত হচ্ছে।
“এসব ভাট না ব-কে কেন কল করেছিস সেটা বল।”

প্রিয়া ডোন্ট কেয়ার মুডে বলল,
“তোদের সিচুয়েশন জানতে। ইউ নো, আমি ও রেহাম তোদের সিচুয়েশন জানতে এক্সাইটেড ছিলাম। কিন্তু আমরা হতাশ! তুই কী না এই রোমান্টিক স্নো ফলের ওয়েদারে আলফিকে দূরে সরিয়ে রাখছিস।”

“জেনেছিস না? এবার রাখ।”

বলেই নিঝুম কল কে-টে দিলো। তারপর লম্বা করে শ্বাস নিয়ে মোটা ব্ল্যাংকেট জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।

—–
সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আলফি বলল,
“তোমার বড়ো আম্মুদের বলেছ?”

“কী?”

“এই যে তুমি আমার কাছে মানে জায়ানের কাছে আছো। উনাদের আমার পরিচয় বলেছ?”

“এখনও বলিনি। বলব।”

“এক কাজ করো, উনাদের এখানেই ডেকে নাও। আমিও মম-ড্যাডকে আসতে বলেছি। নেক্সট উইকে তো তোমার বার্থডে। একটা ফ্যামিলি গেট টুগেদার হয়ে যাক। উনারাও সারপ্রাইজ পাবে।”

নিঝুম খুব খুশি হলো।
“আচ্ছা। আমি এখনি কল করে বলছি।”

আলফি হালকা হেসে খেতে থাকে।

নাস্তা শেষে নিঝুম নির্ঝরকে কল করলো। তারপর তার বার্থডের জন্য আসতে বলল। নির্ঝর প্রথমে জায়ান জেনে যাবে বলে না করলেও নিঝুমের জোরাজোরিতে হার মেনে রাজি হলো। বলল,
“দেখ, আব্বু তোকে পেলেই ওই জায়ানের কাছে তুলে দিতে চাইবে।

“ওহ হো ভাইয়া, রিল্যাক্স। আমি জায়ানকে ভয় পাই না। বড়ো আব্বু যা খুশি করুক। আমি তোদেরকে আমার বার্থডেতে চাই মানে চাই।”

“তোর যেহেতু চিন্তা নেই তাহলে আর কী বলব। ইদানীং এমনিতেও খেয়াল করেছি তুই জায়ানকে ভয় পাস না। এটা ভালো। আমি আব্বুকে রাজি করানোর চেষ্টা করব। কিন্তু তুই তো জানিস, আব্বু তোর জন্মদিনে তোর জন্য সেই চার বছর থেকে একটা চকলেটও আনে না। সেখানে এতো দূর যাবে!”

হুট করেই নিঝুমের মন খারাপ হয়ে গেলো। ছোটো বেলা থেকে বড়ো আব্বুর তার প্রতি এই তিক্ত মনের পরিচয় সে জানে। আগে খুব কাঁদতো। এখন আর কাঁদে না। অভ্যাস হয়ে গেছে যে। নিঝুম বলল,
“বলে দেখ। যদি কোনো উদ্দেশ্যে হলেও রাজি হয়।”

নির্ঝর সায় দিলো। মিসেস আয়েশা তো নিঝুমের বার্থডেতে কানাডাতে ওর সাথে দেখা করতে যাবে শুনে মহা খুশি। এখনি ওর জন্য কী কী নিবে, রান্না করে নিবে সেসবের লিস্ট করতে লেগে পড়েছে। কতোদিন পর নিঝুমকে দেখবেন তিনি। মিস্টার নয়ন রাজি হবে কী না তা নিয়ে নির্ঝর সন্দিহান। কিন্তু নির্ঝরকে অবাক করে দিয়ে তিনিও রাজি হয়ে গেলেন। তিনি বললেন,

“চলো তবে। আমারও কানাডাতে একটা কাজ আছে।”

নির্ঝর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মাথা দুলিয়ে বাবার স্টাডি রুম থেকে বেরিয়ে এলো। কিন্তু এদিকে মিস্টার নয়নের রাজি হওয়ার আরেকটা কারণ, কানাডাতে জায়ানের কম্পানির সাথে ডিলটা নিয়েই একটা মিটিং আছে। জায়ানও কানাডাতে। আর নিঝুমও। তাই জায়ানের কাছে নিঝুমকে তুলে দিতেই চান তিনি।

আলফিও নিঝুমের জন্য একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করছে। যেটা ও ওর বিশ তম জন্মদিনের দিনই দিবে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। রিচেক হয়নি। কপি নিষিদ্ধ।