আলোছায়াতে প্রণয়াসক্তি পর্ব-২৩

0
344

#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৩
আলফি কিংস্টোনে এসেছে অ্যালেক্সের সাথে দেখা করতে। হাতে ফুলের বুফে। অ্যালেক্সের মা আলফিকে এখানে পছন্দ করছেন না। তিনি ছেলের কেবিন থেকে বেরিয়ে যান। আলফির বাবা মিস্টার অ্যান্ডারসন নিরব হয়ে আছেন। আলফি অ্যালেক্সের বেডের কাছে ফুলের বুফেটা রেখে বলল,
“হাউ ডু ইউ ফিল নাউ?”

অ্যালেক্স আলফিকে দেখে হতবাক হয়ে চেয়ে আছে। অতঃপর আলফির কণ্ঠ শুনে উত্তেজিত হয়ে বলে,
“গেট আউট ফর্ম হেয়ার। ইউ ব্লা* বা*স্টার্ড! গেট আউট ফর্ম দিস কেবিন।”

মিস্টার অ্যান্ডারসন ছেলেকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। আলফিকে বলেন,
“আলফি, ক্যান ইউ প্লিজ ওয়েট ফর মি আউটসাইড?”

আলফি হালকা হাসলো। অতঃপর অ্যালেক্সের চোখের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
“শিউর আঙ্কেল। বাট, আই উড লাইক টু গিভ সামথিং টু অ্যালেক্স।”

অ্যালেক্স বড়ো বড়ো শ্বাস নিতে নিতে আলফির দিকে চেয়ে আছে। আলফি পকেট থেকে অ্যালেক্সের ফোনটা বের করে ওর হাতে দেয়। তারপর বলে,
“ইউর আইফোন! হোয়েন ইউ আনলক ইট, ইউ উইল ফাইন্ড ইট নিউ!”

অ্যালেক্স নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সে পরশু থেকে নিজের ফোনটা খুঁজে চলেছে। প্যাটিসনকে সে বলেছে যে ওই রাতে নিঝুমের যে ভিডিও করেছিল যখন নিঝুম সেন্সলেস ছিল, সেটা সে দিবে। ভিডিওটা দিয়ে আলফিকে ব্ল্যা-কমে*ইল করা যাবে। আলফি তো জানে না কী ধরনের ভিডিও অ্যালেক্সের কাছে আছে। কিন্তু অ্যালেক্স তার ফোনটাই পাচ্ছিলো না। পু*লি*শকে বলার পর পু*লিশ বলেছে ওরা কোনো ফোন পায়নি।
আলফি ফোনটা দিয়ে চলে যাওয়ার আগে বলে,
“উইশ ইউ অ্যা ভেরি স্পিডি রিকোভারি, মাই ফ্রেন্ড!”

তারপর মিস্টার অ্যান্ডারসনকে বিদায় জানিয়ে হসপিটাল থেকে চলে আসে। গাড়িতে বসে আলফি মুচকি হাসছে। সে সেদিনই অ্যালেক্সের ফোনটা নিয়ে নিয়েছিল। তারপর ফোনের সব ডেটা ডিলিট করে একদম ফ্ল্যাশ মে*রে মেমোরিকার্ড সহ ডে-স্ট্রয় করে দিয়েছে। অ্যালেক্সের বাবা অলরেডি ইউনিভার্সিটি অফ অটোয়া থেকে অ্যালেক্সকে সরিয়ে নিয়েছে৷ ছেলে সুস্থ হলে ছেলেকে এবার নিজের কাছেই কিংসটোনে রাখবেন। তিনি অ্যালেক্সের নামে কিছু মেয়ে ঘটিত অভিযোগও পেয়েছেন। আলফি তাই অ্যালেক্সকে নিয়ে নিশ্চিন্ত।
শাহরিয়ার গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে শুধায়,
“স্যার, মিস্টার প্যাটিসনের কী করবেন?”

আলফি সামান্য হাই তুলে চোখ বন্ধ করে বাঁকা হেসে বলল,
“নাথিং! বিজনেস ওয়ার্ল্ড এক-দুইজন রাই*ভেল না থাকলে আসলে গেমটা জমে না। এন্ড অ্যাই অ্যাম এন্জয়িং দিস গেম!”

শাহরিয়ার মৃদু হেসে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলো।

——-
সকাল সকাল মিস্টার জুনায়েদ ও মিসেস আরলিন আলফির বাড়িতে এসে হাজির। আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। নিঝুম মিসেস আরলিনকে দেখে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।
“আই মিস ইউ, আন্টি। হাউ আর ইউ।”

“আই মিস ইউ টু, ডিয়ার।”

মিস্টার জুনায়েদ নিজের হাতের দিকে ইশারা করে বলেন,
“তোমার আন্টি দেখো, তোমার জন্য কতো কিছু নিয়ে এসেছে।”

তিনি ব্যাগগুলো রাখলেন। নিঝুম ব্যাগ খুলে দেখে তাতে স্ট্রবেরি কেক, রাশবেরি ও ব্লুবেরি কেক, পেস্ট্রি এসবে ভরা। নিঝুম একটা রাশবেরির কেকের পিস নিয়ে খেতে খেতে বলল,
“আন্টি, ইটস টু মাচ ইয়াম্মি।”

মিসেস আরলিন তৃপ্তি নিয়ে হাসলেন।

মিস্টার নয়ন, মিসেস আয়েশা ও নির্ঝর আজকে অটোয়ায় আসছে। মিস্টার জুনায়েদ ও নিঝুম গেছে এয়ারপোর্টে উনাদের আনতে। কিছুক্ষণ আগেই ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে। ব্যাগপত্র রিসিভ করে উনারা এসেছেন। নিঝুম প্রথমেই তার বড়ো আম্মুকে দেখা মাত্রই ছুটে যায়। মিসেস আয়েশাও নিঝুমকে দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েন। দুই মাসের বেশি সময় পর তিনি মেয়েকে দেখছেন। কত-শত কথার ঝুলি সেখানেই খুলে বসেন। নির্ঝরও কতোদিন পর বোনকে সরাসরি দেখে খুব খুশি। কিন্তু মিস্টার নয়নের মধ্যে কোনো হেলদোল নেই৷ তিনি নিঝুমের সাথে আসা ব্যাক্তিকে হ্যালো বলে হাত মেলালেন শুধু। তারপর সবাই গাড়িতে উঠে বসে।

নিঝুম তার বড়ো আম্মুদের নিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখে আলফি ও মিসেস আরলিন একজন মধ্যবয়সী মহিলার সাথে কথা বলছে। মহিলাটি নিঝুমকে দেখে হাস্যোজ্বল মুখে বললেন,
“শি মাস্ট বি ব্রাইড?”

“ইয়েস। শি ইজ।”

মিস্টার নয়ন তো আলফিকে দেখে হতবাক! তেমনি অবস্থা মিসেস আয়েশা ও নির্ঝরেরও। নির্ঝর নিঝুমের হাত ধরে বলে,
“তুই না বলেছিলি আলফির বাসায় থাকিস।”

“হ্যাঁ। ও ই তো আলফি।”

নির্ঝর অবাক হওয়া স্বরে বলে,
“ও আলফি? এতোদিন তুই ওর সাথেই ছিলি? তুই জানিস ওর আসল পরিচয়?”

নিঝুম হাসলো খানিক। তারপর জবাব দিলো,
“প্রথমে জানতাম না। পরে ও নিজেই সবটা ক্লিয়ার করেছে। আমি তো ও-কে আলফি রূপেই প্রথম থেকে ভালোবাসতাম।”

মিসেস আয়েশা পাশ থেকে নিঝুম ও নির্ঝরের কথা শুনলেন। কিন্তু মিস্টার নয়ন এখনও বুঝতে পারছে না, নিঝুম জায়ানের সাথেই আছে! নিঝুম কি তা জানে? আলফি এগিয়ে এসে মিস্টার নয়নের দিকে হাত মিলিয়ে বলল,

“হ্যালো মিস্টার চৌধুরী, উপস সরি! ফাদার ইন ল!”

আলফির মুখ থেকে ‘ফাদার ইন ল’ শুনে মিস্টার নয়ন নিঝুমের দিকে তাকালো। কিন্তু নিঝুমের মুখে অবাক হওয়ার রেশ মাত্র নেই। তিনি আলফির হাত ধরে একটু আড়ালে নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে শুধালেন,

“নিঝুম তোমার পরিচয় জানে? আমি তো আরও এসেছিলাম, নিঝুমকে তোমার হাতে তুলে দিতে। তুমি ইমেইল চেক করো। পরশু তোমাকে ইমেইল করেছিলাম।”

আলফি চমৎকার ভাবে হেসে বলে,
“পেয়েছি। আপনার ইচ্ছাও পূর্ণ হবে। কালকে ঝুমের বার্থডেতে আপনি ও-কে আমার হাতে তুলে দিবেন। আগামীকাল আমাদের রিসেপশন।”

মিস্টার নয়ন যেন ঘোরের মধ্যে। নিঝুম যার সাথে সংসার করতে চায় না বলে পালিয়ে এসেছে, তার সাথে এতোদিন এক বাড়িতেই থাকছে! আবার রিসেপশনও! তিনি বললেন,
“নিঝুম তোমাকে মেনে নিয়েছে?”

“ইয়েস।”

বলেই চোখ টেপলো আলফি।

কিছুক্ষণের মধ্যেই মিসেস আয়েশা ও মিসেস আরলিনের মধ্যে বেশ ভাব হয়ে গেলো। উনারা দুজনে মিলে নিঝুমের জন্য গাউন সিলেক্ট করছে। সামনে নিঝুম গালে হাত দিয়ে বসা। নিঝুমকে পছন্দ করতে বললে নিঝুম যেটাই দেখাচ্ছে সেটাতেই উনারা খুঁত বের করছেন। সত্যি বলতে নিঝুম গাউন গুলোর মধ্যে একটাও পছন্দ করতে পারছে না। সবগুলোই ব্রাউডাল গাউনের মতো তবে বেশ মোটা ফ্রেব্রিকসের। কিন্তু কাল তার জন্মদিন। জন্মদিনের জন্য ব্রাইডাল গাউন কেন পছন্দ করছে সেটাই সে বুঝতে পারছে না। তার কাছে যদিও সবগুলোই ভালো লাগছে। তাই মায়েরা যেটা শেষে সিলেক্ট করবে সেটাই সে পরবে।
নিঝুম যখন গালে হাত দিয়ে বসে বসে বোর হচ্ছে তখন আলফির নাম্বার থেকে তার ফোনে কল আসে। কল দেখে সে আশেপাশে তাকায়। আলফি তো বাড়িতেই৷ তাহলে কল দিচ্ছে কেন? নিঝুম ফোন রিসিভ করে উঠে গেলো।

“এখনি ব্যাক ইয়ার্ডে আসো।”

নিঝুম দেখলো বাহিরে স্নোফল হচ্ছে। সে বলে,
“বাহিরে তো বেশ ঠান্ডা। তুমি বাহিরে কেন গেলে?”

“বিকজ নাউ অ্যাই অ্যাম সো হট! কাম ফার্স্টার।”

আলফির উত্তর শুনে নিঝুমের কান গরম হয়ে গেলো। সে পিছু ঘুরে তার মায়েদের দেখে নিয়ে গায়ে মোটা লেদার কোটটা জড়িয়ে বাইরে বের হয়।
ডিসেম্বরে বরফে আচ্ছাদিত কানাডার গাছগুলোকে শুকনো ডাল ছাড়া কিছুই মনে হয় না। পাতাবিহীন গাছগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। গাছের শাখা-প্রশাখায় বরফ জমে থাকে। নিঝুম হাতে হাত ঘষতে ঘষতে ব্যাক ইয়ার্ডে যায়। সেখানের জিঙ্কো ও ম্যাপল গাছগুলোর সব পাতা ঝড়ে গেছে। সেখানে গিয়ে দেখে পুরো ব্যাক ইয়ার্ড ছোটো ছোটো ল্যানটিন ও মরিচবাতি দিয়ে আলোকসজ্জায় সজ্জিত। পাতাবিহীন গাছগুলোর শাখা-প্রশাখায় মরিচবাতি লাগানো। নিঝুমের চোখমুখ খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠে। সে মুখে হাত দিয়ে পুরো জায়গাটা দেখছে। এতো সুন্দর লাগছে পুরো জায়গাটা।
কিন্তু আলফি কোথাও নেই। সে হেঁটে আরেকটু সামনে এগুলো। খুঁজলো আলফিকে। তখনি কানের কাছে তুড়ি বাজার শব্দে পেছনে ঘুরতেই দেখে আলফি হাঁটু গেঁড়ে বসে আছে। হাতে একটা আংটির বক্স। আলফি বলছে,

“আজ এই তুষারের আচ্ছাদিত আলোক ঝলমলে সাঁঝের বেলায় আমি তোমাকে বলতে চাই, ভালোবাসি! ভালোবাসি ঝুম। উইল ইউ বি মাই সাইড ফর লাইফ টাইম?”

নিঝুম মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। আলফি তাকে এতো সুন্দর ভাবে প্রপোজ করছে। চোখে অশ্রুজল ভীড় জমালো। অশ্রুসিক্ত নয়নে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। আলফি ওর বাম হাতের অনামিকায় আংটি পরিয়ে হাতের উলটো পিঠে গভীর চু-ম্বনে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। অন্যরকম শিহরন বয়ে গেলো নিঝুমের মধ্যে। তখনি করতালির শব্দ ভেসে এলো। নিঝুম সামনে তাকিয়ে দেখে বাড়ির সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সবার মুখে তৃপ্তির হাসি। আলফি উঠে দাঁড়িয়ে নিঝুমের হাত ধরে ওদেরকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“বিয়েটা লুকোচুরির মধ্যে হলেও কালকে রিসেপশনটা আমি আমার ফ্যামিলি, কলিগদের সাথে নিয়ে সেলিব্রেট করব।”

নিঝুম সন্দিহান হয়ে বলে,
“রিশেপশন?”

আলফি মুচকি হেসে নিঝুমের এক গালে হাত দিয়ে বলে,
“ইয়েস সুইটহার্ট, কালকে আমাদের রিসিপশন।”

তারপর সে নিঝুমের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
“তুমি তো বলেছিলে, রিসেপশন পর্যন্ত টাইম চাও। এই রোমান্টিক ওয়েদারে বউ ছাড়া থাকা যায় না বুঝলে! তাই ভাবলাম দেরি কেন করব? কালকেই রিশেপশন হোক সাথে আমাদের ফার্স্ট নাইট!”

নিঝুম লজ্জায় আলফির ধরে রাখা হাতে ন*খ বসিয়ে দেয়। তাও আলফি হাসছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,