#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৫
আলফির বাড়ির গার্ডেনেই খোলা আকাশের নিচে সাঁজানো হয়েছে স্টেজ। শুভ্র গোলাপে সজ্জিত স্টেজ থেকে রেড কার্পেট বিছানো। গেস্টদের জন্য দুই ধারে টেবিল-চেয়ার। সকালেই পুরো জায়গাটা বরফে আচ্ছাদিত ছিল। অতঃপর বরফ সরিয়ে জায়গাটাকে ঠিক করা হয়েছে। পাতা ঝাড়া গাছে গাছে আর্টিফিশিয়াল ম্যাপল লিফ লাগানো। দুপুর শেষে বিকেলের সোনা মিষ্টি রোদে ঝলমল করছে। দেখে মনে হচ্ছে শরৎকালের কোনো মিষ্টি বিকেল।
মিস্টার নয়ন ও মিসেস আয়েশার হাত ধরে নিঝুম রেড কার্পেটের উপর দিয়ে হেঁটে আসছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে ভায়োলিনের সুর। আলফি স্টেজে শুভ্র স্যুট পরনে দাঁড়ানো সেই কাঙ্খিত মূহুর্তের অপেক্ষায়, যখন মিস্টার নয়ন নিঝুমকে তার হাতে তুলে দিবেন। অতঃপর সেই মূহুর্ত। আলফি অপলক নিঝুমের আগমনের দিকে চেয়ে আছে। মিস্টার নয়ন নিঝুমের হাত আলফির হাতে তুলে দিলেন। গেস্টদের মাঝে করতালির জোয়ার উঠলো। আলফি নিঝুমের হাত শক্ত করে ধরে মাইক হাতে সকলের উদ্দেশ্যে বলল,
“হ্যালো এভরিওয়ান, টুডে ইজ আওয়ার স্পেশাল ডে। আওয়ার ওয়েডিং রিসেপশন। থ্যাংক ইউ অল গাইজ, ফর কামিং এন্ড সেলিব্রেটিং উইথ আস। নাউ আই ওয়ান্ট টু ইন্ট্রডিউস ইউ টু মাই বিউটিফুল ওয়াইফ, নিঝুম চৌধুরী। মাই সুইটহার্ট এন্ড লকভ অফ মাই লাইফ। আই ওয়ান্ট টু স্পেন্ড দ্যা রেস্ট অফ মাই লাইফ উইথ হার।”
তারপর রেড ওয়া*ইনের গ্লাস নিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে চিয়ার্স করে পান করলো। গেস্টরাও তাই করলো। তারপর আলফি নিঝুমের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“ইউ লুকিং ড্যাম বিউটিফুল এন্ড স্টানিং?”
বলেই আলফি নিঝুমের হাতের উলটো পিঠে নিজের ওষ্ঠ স্পর্শ করলো। তৎপর লজ্জায় রক্তিম হলো নিঝুমের মুখাবয়ব। নতমস্তকে লাজুক হেসে আলফির বাহু শক্ত করে ধরলো। তারপর আলফির মতোই বলল,
“এন্ড ইউ লুকিং লাইক অ্যা প্রিন্স চার্মিং ফর্ম মাই ফেইরিটেল।”
অতঃপর দুজন দুজনার চোখের দিকে অন্তহীন অপলক মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইল।
পরিশিষ্ট:
১০ বছর পর। এতো বছরেও সবার মধ্যে ভালোবাসা একইরকম বহাল। মিস্টার নয়ন ও মিসেস আয়েশা একেবারের জন্য কানাডায় টরেন্টোতে চলে এসেছেন। মিস্টার জুনায়েদ ও মিসেস আরলিন আগের মতোই নিউইয়র্ক ও অটোয়া ব্যালেন্স করে থাকেন। নিঝুম, আলফিও তাই। তবে এতো বছরে কিছু সম্পর্কের সমীকরণ বদলেছে। নির্ঝরের সাথে টিনার বিয়ে হয়েছে। টিনা এখন নিঝুমের ননদ থেকে ভাবিও।
আগষ্টের এক সুন্দর সন্ধ্যা। নিঝুমের জীবনের বিশেষ একটা দিন। নিউইয়র্কে বাৎসরিক বিজ্ঞানের নতুন উদ্ভাবনের অনুষ্ঠান। বিশাল সেমিনার রুমে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষদের মাঝে বসে আছে নিঝুম। পাশে তার পুরো পরিবার। কিন্তু নিঝুম বারবার পেছনের দরজার দিকে তাকিয়ে কারও অধীর অপেক্ষা করছে। নিঝুমের এই অস্থিরতা দেখে মিসেস আরলিন মুচকি হাসলেন। বললেন,
“আলফি চলে আসবে।”
“এখনও কেন আসছে না, আন্টি? ও বলেছিল ফাংশন শুরুর আগেই চলে আসবে। কিন্তু ফাংশন শুরু হয়েছে অনেকক্ষণ।”
“রিল্যাক্স। তুমি এতো টেনশন করো না। চলে আসবে।”
একটা বাচ্চা ছেলে নিঝুমের হাত ধরে বলল,
“ইয়েস মাম্মা। রিল্যাক্স। ড্যাড উইল বি সুন হেয়ার। নাউ হোল্ড মাই হ্যান্ড।”
নিজের সাড়ে চার বছর বয়সি ছেলে আরানের কথা শুনে মুচকি হাসলো নিঝুম। ছেলেটা একদম তার বাবার মতো হয়েছে। তখনি স্টেজে পুরষ্কার দিতে একজনকে ডাকা হলো। যাকে দেখে নিঝুম সহ সবাই অবাক। অবাক হয়নি কেবল নির্ঝর, টিনা ও আরান। স্টেজে আলফি এসে মাইক নিয়ে পুরষ্কার প্রাপ্তের নাম ঘোষণা করলো। সবাই করতালিতে মুখরিত। মিসেস আয়েশা খুশিতে আবেগী হয়ে নিঝুমের কপালে চু’মু আঁকলেন। মিসেস আরলিনও তাই করলেন। মিস্টার নয়ন ও মিস্টার জুনায়েদ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে স্টেজে যেতে ইশারা করলেন। নিঝুম স্টেজের দিকে ফের তাকালো। তার ভালোবাসার মানুষটার মুখে অফুরন্ত গর্বের হাসি। নিঝুম নিজের ছেলের হাত ধরে স্টেজের দিকে অগ্রসর হলো। স্টেজে উঠার প্রথম ধাপে পা রাখতেই আলফি এগিয়ে গিয়ে হালকা ঝুঁকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো। তৎক্ষনাৎ সেমিনার রুমে আবারও করতালির জোয়ার। নিঝুম লজ্জাবতী লতার ন্যায় মাথা নুইয়ে আলফির হাতে হাত রেখে স্টেজে উঠলো। অতঃপর আলফির হাত থেকেই পুরস্কার গ্রহণ করলো। সবার উদ্দেশ্য নিঝুম বলল,
“অল অফ মাই এচিভমেন্টস এন্ড সাকসেস আর ডেডিকেটেড টু মাই অলমাইটি আল্লাহ। অ্যা ভেরি স্পেশাল থ্যাংকস টু মাই হাসবেন্ড এন্ড অল অফ মাই ফ্যামিলি মেম্বার। দে হ্যাভ বিন ভেরি সাপোর্টিভ টুয়ার্ডস মি ওভার দ্যা ইয়ার্স। আই অ্যাম এক্সট্রিমলি ফরচুনেট টু হ্যাভ দেম এস মাই ফ্যামিল। অলস থ্যাংকস টু দ্যা হোস্ট ফর ফুলফিলিং ওয়ান অফ মাই ফন্ডেস্ট ড্রিমস: রিসিভিং দিস রিওয়ার্ড ফর্ম মাই হাসবেন্ড হ্যান্ড। থ্যাংক ইউ।”
উপস্থিত সকলের উষ্ণ অভ্যর্থনার পর নিঝুম তার স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে স্টেজ থেকে নেমে আসে।
অনুষ্ঠান শেষে নিঝুম, আলফি ও আরান রাতের শহর ঘুরতে বের হয়। রাত বাড়তে বাড়তে আরান ঘুমিয়ে গেছে। আলফি গাড়ি ব্রুকলিন ব্রিজে থামালো। ব্রিজটি ম্যানহাটন এবং ব্রুকলিন বরোর মধ্যেবর্তী ইস্ট নদীর উপর অবস্থিত। আলোক ঝলমলে ব্রিজটি রাতেরবেলা বেশ আকর্ষণীয়। আরানকে ঘুমন্ত অবস্থায় গাড়িতে রেখে ওরা বের হয়। নদীর উপর বয়ে যাওয়া হালকা শীতল বাতাস। নিঝুম রেলিংয়ের কাছে দাঁড়ায়। বাতাসে ওর চুলগুলো উড়ছে। উন্মুক্ত তারকাখচিত আকাশের দিকে দৃষ্টি রাখে। আলফি পেছন থেকে ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রেলিংয়ে হাত রাখে। নিঝুম প্রশান্তি চিত্তে হাসে। পরক্ষণের ম্লান হেসে বলে,
“জানো, আজ আমার খুব আব্বু-আম্মুকে মনে পড়ছে। সবাই আমার পাশে। আমি খুব খুশিও। কিন্তু আমি তাও তাদেরকে মিস করছি।”
আলফি ও-কে আরও আগলে নিলো। রেলিং থেকে হাত সরিয়ে জড়িয়ে ধরলো নিজের বুকের সাথে। বলল,
“উনারাও আজ খুব খুশি। কারণ তুমি খুশি। তুমি মন খারাপ করলে উনারাও মন খারাপ করবে।”
“সামনের মাসে আমাদের ম্যারেজ ডে। এগারো বছর হচ্ছে! ভাবা যায়!”
নিঝুমের কথায় আলফি ভাবুক হলো। অতঃপর বলল,
“এগারো বছর? আমার তো মনে হচ্ছে চার-পাঁচ বছর হবে।”
নিঝুম মুখ বাঁকালো সামান্য। বলল,
“ছেলের বয়সই চার বছরের বেশি! আর সে আসছে বিয়ের চার-পাঁচ বছর হয়েছে বলতে! বুঝি তো, বিয়ের এগারো বছর বললে তো লোকে তোমাকে বুড়ো বলবে। তাই না?”
হাসলো আলফি। রম্য স্বরে জবাব দিলো,
“আমি বুড়ো হলে তুমিও বুড়ি!”
নিঝুম ঘুরে আলফির দিকে ছোটো ছোটো চোখ করে তাকিয়ে বিরোধ করলো।
“মোটেও না। আমার সবে ত্রিশ চলে। তুমি তো চল্লিশ বছরের বুড়ো!”
আলফি খানিক ভাব নিয়ে বলল,
“দেখে তাই মনে হয়?”
“দেখে মনে হয় না বলেই তো আমি জনে জনে বলে বেড়াব, এই লোকের বয়স চল্লিশ। সে প্রায় এগারো বছর যাবত ম্যারিড। তার একটা সুন্দরী বউ আছে। সাথে কিউট, দুষ্ট ছেলেও আছে।”
বলেই মুখ বাঁকিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো নিঝুম। আলফি শব্দ করে হাসলো। তারপর নিঝুমকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
“আর ইউ জেলাস?”
নিঝুম অভিমানী কন্ঠে উত্তর করলো,
“ইয়েস, অ্যাই অ্যাম! হোস্ট মেয়েটা তোমার দিকে কীভাবে তাকাচ্ছিল। আরও কতোগুলো মেয়ে তোমাকে যেন চো*খ দিয়েই গি-লে খা-চ্ছি-ল!”
আলফি মুচকি হেসে নিজের অভিমানী প্রিয়তমার থুতনিতে হাত রেখে মুগ্ধ কণ্ঠে বলল,
“হাজারও রমণী আমাকে চাইলেও আমি কিন্তু শুধু তোমাকে চাই৷ শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। এই প্রকৃতি, এই রাত, এই ঝলমলে আলোছায়াও জানে আমি কতোটা তোমাতে আসক্ত। তোমার প্রণয়ের আসক্তি ও*য়াইনের থেকেও তীব্র, সুইটহার্ট। অ্যাই লাভ ইউ মোর দ্যান থাউজ্যান্ড মিলিয়ন টাইমস।”
প্রশস্ত হাসলো নিঝুম। আলফির বুকে মাথা রেখে প্রত্যুত্তরে বলল,
“অ্যাই লাভ ইউ টু, মিস্টার হাসবেন্ড।”
নিউইয়র্কের ব্রুকলিন ব্রিজের এই ঝলমলে রাত্রির আলোছায়াতে প্রিয়তম ও প্রিয়তমা নিজেদের উষ্ণ ঠোঁ-টের মি-লনে ভালোবাসায় সি’ক্ত হচ্ছে। মৃদুমন্দ বাতাসে অন্তহীন প্রণয়ের সুবাস বইছে।
সমাপ্ত
আসসালামু আলাইকুম। গল্পটা অবশেষে শেষ হলো। গল্পটা কার কেমন লেগেছে জানিনা। আমি চেষ্টা করেছি যাতে গল্পটা সুন্দর হয়।
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।