#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪
ভোরের পর মৃদু সোনালী আভা ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে। পর্দা সরানো জানালার গ্রিল ও থাই ভেদ করে রোদ্দুর তার মিষ্টি আলো ঘুমন্ত নিঝুমকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। নিঝুম সামান্য নড়ে আবারও ঘুমে তলিয়ে। তখন ঘরে প্রবেশ ঘটলো একজনের। নিঃশব্দে এসে বসলো নিঝুমের পাশে। কিয়ৎক্ষণ অপলক চেয়ে রইল রৌদ্রস্নাত ঘুমন্ত নিঝুমের দিকে। নিঝুমের খোলা চুল এলোমেলো হয়ে মুখ-চোখ আড়াল করে রেখেছে। ব্যাক্তিটি অতঃপর খুব সাবধানে নিঝুমের মুখের উপর আসা চুলগুলো সরিয়ে দিলো। এতে ভারি বিরক্ত হলো নিঝুম। রোদ যে আবার তার চোখে-মুখে পড়ছে! কপাল কুঁচকালো সামান্য। আবারও নড়ে উঠলে চুলগুলো ফের মুখের সামনে এসে পড়লো। পুনরায় একই কাজ করলো ব্যাক্তিটি। সেইসাথে মৃদু কণ্ঠে ডাকলো,
“ঝুম, গুড মর্নিং ঝুম।”
নিঝুম এবার নড়েচড়ে উলটো দিকে ফিরে। ব্যাক্তিটি আবারও ডাকে,
“ঝুম, ইটস অলমোস্ট সেভেন থার্টি এএম। ওয়েক আপ। উই হ্যাভ টু ক্যাচ দ্যা ফ্লাইট।”
এবার নিঝুম পিটপিট করে চোখ খোলে। পাশ থেকে সোজা হয়। নিজের পাশে আলফিকে দেখে অবাক হয়।
“আলফি!”
তারপর দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ৭.২৪ বাজে। নিঝুমকে ঘড়ি দেখতে দেখে আলফি বলে,
“আমাদের ৮.৪৫ এ ফ্লাইট!”
ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে নিঝুম। ওড়নাটা পাশেই রাখা ছিল। সেটা ঠিকভাবে গায়ে জড়িয়ে বলে,
“তুমি এতো সকালে। কখন এসেছ?”
“এইতো কিছুক্ষণ।”
“তাহলে আবার এখানে আসলে কেন? আমাকে কল করলেই আমি এয়ারপোর্টে চলে যেতাম।”
“ইটস ওকে। ফুফির সাথে আমার একটু কথা ছিল। তুমি দ্রুত রেডি হয়ে নাও। ফুফি নাস্তা টেবিলে নিয়ে ওয়েট করছেন।”
এই বলে আলফি উঠে দাঁড়ায়। নিঝুম মাথা নাড়িয়ে সায় দিলে আলফি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আলফি যেতেই নিঝুম তার ফোন চেক করে। না! এখনও নির্ঝর তাকে তার কাবিননামার ছবি পাঠায়নি। নির্ঝর বলেছিল, সে কাবিননামা পেলে ছবি পাঠাবে। পাঠায়নি যেহেতু, মনে হয় পায়নি। হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়লো নিঝুম। তারপর উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
এদিকে আলফি কাউকে ফোন করে বলে,
“এভরিথিং রেডি?”
অপরপাশ থেকে পজেটিভ সংকেত আসলে তার মুখশ্রীতে হাসি ফোটে। অতঃপর ব্রেকফাস্ট টেবিলের কাছে যায়। মিসেস মুমতাহিনা বলেন,
“তুমি ঠিক করছো না।”
আলফি ভ্রুঁ উঁচিয়ে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর বলল,
“কী ঠিক করছি না?”
“তুমি সব জানো ওর সম্পর্কে। ও একসময় তোমাকে ঘৃণা করবে।”
আলফি হাসলো। তারপর গ্লাসে বিটরুটের জুস ঢালতে ঢালতে বলল,
“রিল্যাক্স ফুফি। এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ও*য়ার!”
মিসেস মুমতাহিনা হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়লেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিঝুমও খাবার টেবিলে হাজির। নিঝুম এসে বলল,
“আঙ্কেল ও টিনা নেই যে?”
“ওরা কিছুক্ষণ আগেই নাস্তা করে অফিসে চলে গিয়েছে। তোমাকে কয়েকবার দরজা নক করে ডেকেছিলাম। উঠোনি। আলফি এসে তারপর তোমাকে উঠালো।”
মিসেস মুমতাহিনার কথা শুনে নিঝুম বলল,
“আলফি যেমন রুমের ঢুকে ডেকেছে, টিনাও ডেকে দিতো। তাহলে যাওয়ার সময় দেখা হতো।”
আলফি থামে কিঞ্চিৎ। মিসেস মুমতাহিনাও নিরব। আলফিই বলে,
“ওই রুমের চাবি দুটো। একটা তোমাকে গতকাল দিয়েছে। আরেকটা আমার কাছে। ওই রুমটা একচুয়েলি আমার জন্য বরাদ্দ থাকে।”
“ওহ। আচ্ছা সমস্যা নেই। টিনা ও আঙ্কেলের সাথে আরেকদিন দেখা করব।”
তারপর নিঝুম খাওয়া শুরু করলো। আলফিও খেতে শুরু করলো।
——
অটোয়া পৌঁছে ওরা আলফির বাড়িতে যাচ্ছে। অটোয়া কানাডার রাজধানী। জনসংখ্যার দিক দিয়ে এটি কানাডার চতুর্থ বৃহত্তর শহর। নিঝুম গাড়ির কাঁচ নামিয়ে বাহিরে দেখছে। আলফি বলে,
“তোমার সব ডকুমেন্টস গুলো দাও। আমি ইউনিভার্সিটিতে দিয়ে যাব।”
নিঝুম না ঘুরেই বলে,
“আচ্ছা।”
আলফি আবার শুধায়,
“আর ইউ আপসেট?”
নিঝুম এবার ঘুরে। তারপর বলে,
“নো। অাই অ্যাম ফাইন।”
“বাট ইউ আর নট লুকিং ফাইন।”
নিঝুম হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়লো। অতঃপর বলল,
“নির্ঝর ভাইয়া কাল রাতের পর আর মেসেজের রেসপন্স করছে না। মেসেজ সিনও করছে না। আমার খুব ভয় হচ্ছে। ওই গু*ন্ডা আবার আমার ফ্যামিলির কোনো ক্ষতি করে দেয়নি তো?”
আলফি হাসলো। ফের বলল,
“রিল্যাক্স। এতো ভয় পাওয়ার কী আছে। জায়ান আহমেদ এতোটাও খারাপ না যতোটা তুমি বলছো।”
নিঝুম বিরক্ত হয়। বলে,
“প্লিজ আলফি, ওই লোকের হয়ে তরফদারি আমার সামনে করবে না। আমি ওই লোকের থেকে কিভাবে বেঁচে থাকব সেই চিন্তা করছি। আর তুমি এসব বলছ! এদিকে কাবিননামাতে কী ছিল না ছিল তাও আমি দেখিনি। টেনশনে ভালো লাগছে না।”
আলফি ফের হাসলো। গাড়ির সামনে থেকে পানির বোতল নিয়ে নিঝুমকে দিয়ে বলল,
“ইউ ডিডেন্ট সি হিম রাইট?”
“নো। এন্ড আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু সি হিম।”
“ওকে। রিল্যাক্স। হ্যাভ সাম ওয়াটার এন্ড টেক এ ডিপ ব্রিথ।”
নিঝুম পানির বোতলটা নিয়ে পানি পান করলো। তারপর হুট করে শুধালো,
“বাই দ্যা ওয়ে, তুমি কোথায় গিয়েছিলে?”
আলফি কিঞ্চিৎ ভরকালো। তাও স্বাভাবিক স্বরে বলল,
“আউট অফ কান্ট্রি। ফর সাম ইম্পর্ট্যান্ট ডিল।”
নিঝুম আর কিছু বলল না। কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা একটা বাড়ির সামনে এসে থামলো। বাড়িটা গ্রে রঙের দোচালা। ব্ল্যাক গ্লাস দিয়ে আবৃত। বাড়ির সামনে সবুজ ফাঁকা স্থান। গেইটে দুজন কালো পোশাকধারী দাঁড়ানো। গাড়ি থামতেই ওরা এসে দাঁড়ালো। আলফি গাড়ির চাবি দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে নিঝুমের পাশের দরজা নিজে খুলে দিলো। নিঝুম হা হয়ে দেখছে। আলফিকে মৃদু স্বরে জিজ্ঞাসা করে,
“এরা কারা?”
“গার্ড।”
“তোমার গার্ডও লাগে?”
আলফি হাসলো।
“তেমন না। দুজনই। বাড়ি পাহাড়া দিতে।”
“ওহ। তোমার বাবা-মা কোথায়? উনারা জানেন না যে আমি আসব?”
“ওরা নিউইয়র্কে।”
নিঝুম অবাক হয়ে যায়। সে শুধায়,
“নিউইয়র্কে? তবে এখানে কে থাকে?”
আলফি নিজেকে ইশারা করে দেখালো। নিঝুম চোখ কাপালে তুলে বলল,
“একা!”
“একাই তো থাকব। বউ আসার পর বউ সহ থাকব।”
নিঝুম মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“তোমার ফ্যামিলি থেকে এতো দূরে থাকো, সেটা বুঝিয়েছি।”
“বেশি দূরে না।”
আলফির জবাবে নিঝুম হতবাক। সে বলল,
“বেশি দূরে না? তোমরা ভিন্ন দুটি দেশে থাকো!”
“রিল্যাক্স ঝুম৷ নিউইয়র্ক অনেক বড়ো। তুমি সেসব বাদ দিয়ে ভেতরে চলো।”
আলফি গেইট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলেও নিঝুম ঠায় দাঁড়িয়ে রয়। আলফি ঘুরে তাকিয়ে শুধায়,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড? দাঁড়িয়ে রইলে কেন?”
নিঝুম কিঞ্চিৎ আমতা আমতা করে বলল,
“আমি আসলে…আই থিংক, ইটস নট রাইট। আমরা দুজন এক বাড়িতে এভাবে… ”
কথা শেষ করলো আলফি আবারও হাসলো। এগিয়ে এলো নিঝুমের হাত ধরে বলল,
“রাইট না হলে তুমি এখানে আসতে না। আর এতো বড়ো বাড়িতে নিশ্চয়ই একটা রুম না! সে প্লিজ কাম ইনসাইড।”
তারপর আলফি নিঝুমের জবাবের তোয়াক্কা না করে ও-কে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। গার্ডরা লাগেজ নিয়ে আগেই ভেতরে চলে গিয়েছে। নিঝুমের মনে এখন কেমন ইতস্তততা কাজ করছে। আলফি একদিন তাকে তার মায়ের সাথে ফোনে কথা বলিয়েছিল। তাই নিঝুম ভেবেছিল উনারা এখানেই থাকেন।
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে আলফি নিঝুমকে বলল,
“এখানে অনেকগুলো রুম আছে। আপার ফ্লোরেও আছে। তুমি কোন রুমে থাকতে চাও?”
“তোমার রুম কোনটা?”
“আপার ফ্লোরে।”
“তাহলে আমি নিচের ফ্লোরেই একটা রুমে থাকি।”
আলফি ভ্রুঁ কুঁচকে শুধায়,
“কেন? তুমি কি আমার সাথে এক ফ্লোরে থাকতেও ভয় পাচ্ছো?”
নিঝুমের চেহারা পাংশুটে বর্ণ ধারণ করলো। খানিক হাসার চেষ্টা করে দৈবচয়নে একটা রুম দেখিয়ে বলল,
“আই থিংক এই রুমটা খুব সুন্দর। গার্ডেনের খুব সুন্দর ভিউ আসছে।”
আলফি রুমটার দিকে তাকালো। ওই রুমটার দরজাই শুধু খোলা। নিঝুম দেখেই বলেছে তবে। সে বলল,
“হুম। রুমটা সুন্দর। আমার রুমের ঠিক নিচেই। তোমার পছন্দ হলে এখানেই থাকো। লাগেজ ওই রুমে দিয়ে আসছি।”
“আমি লাগেজ নিতে পারব।”
“ওকে। তাহলে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমিও ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
নিঝুম তার নীল রঙা লাগেজ টেনে রুমটাতে নিয়ে গেলো। আলফি সিঁড়ি পর্যন্ত গিয়ে তা দেখে হেসে উপরে উঠে গেলো।
চলবে ইন শা আল্লাহ,