আলোছায়াতে প্রণয়াসক্তি পর্ব-০৫

0
945

#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৫
রুমে ঢুকে ফ্রেশ হতে গেলো নিঝুম। একেবারে শাওয়ার নিয়েই বের হলো। অতঃপর তোয়ালে দিয়ে চুলের পানি মুছতে মুছতে ব্যালকনির থাই খুলল সে। সাথে সাথে ধমকা মৃদু শীতল হাওয়ায় শরীর শিরশির করে উঠলো। চোখ বন্ধ করে লম্বা করে শ্বাস নিলো কয়েকবার। এটা বাড়িটির দক্ষিণ পাশ। সামনে একটা ঢাল দেখা যাচ্ছে। ঢালের কাছে কিছু নাম না জানা গাছ। নিঝুম এখানের ম্যাপল গাছ ছাড়া অন্যান্য গাছ চেনে না। লাল, কমলা, হলুদ পাতার ম্যাপেল গাছের পরিমাণই এখানে বেশি। নিঝুম ফোনটা নিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। তখনি দরজায় নক পড়লো। নিঝুম দরজা খুলতেই দেখে আলফি দাঁড়িয়ে। আলফি ফোনে কিছু দেখতে দেখতেই বলল,
“তোমার ডকুমেন্টস গুলো রেডি রেখো। বিকেলে ইউনিভার্সিটি যাব।”

“আমিও যাব সাথে।”

“তার দরকার নেই৷ তুমি রেস্ট করো। আর লাঞ্চে কী খাবে বলো।”

“তুমি যা খাবে তাই।”

এবার আলফি তাকালো নিঝুমের দিকে। তাকাতেই সে যেন পলক ফেলতেই ভুলে গেলো। নিঝুমের সদ্যস্নাত স্নিগ্ধ মুখখানার দিকে কিয়ৎক্ষণ চেয়েই রইল। নিঝুম লজ্জা পেয়ে এদিকওদিক চেয়ে সামান্য কাঁশির শব্দ করলে আলফি দৃষ্টি সরায়। তারপর বলে,

“ওয়েল। আমি যাওয়ার আগে ফ্রোজেন করা ফুড যা রেখে গিয়েছি সেগুলোই হয়তো আছে ফ্রিজে। বিকেলে ইউনিভার্সিটি হয়ে গ্রোসারিতে যাব। উম..তুমিও চলো তবে। আমার লেট হবে ফিরতে।”

নিঝুম ঘার এলিয়ে সায় দেয়। আলফি কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ খুলে দেখলো চিকেন ব্রে*স্ট আছে আর ফ্রোজেন প্যাকেটজাত করা চিকেন রোল ও কাবাব আছে। নিঝুমও আলফির পেছন পেছন এসেছিল। সে বলল,
“কোনো ভেজিটেবল নেই?”

“আলু আছে৷ আর কোনো ভেজিটেবল নেই। গ্রোসারিতে যাব তখন আনব। লাঞ্চ এগুলো দিয়েই করতে হবে। ওনিয়ন, জিঞ্জার আছে, ওনিয়ন-গার্লিক পেস্ট আছে। সব ধরণের ড্রাই হার্ব আছে। আই থিংক হয়ে যাবে।”

নিঝুম রান্নাঘরে চোখ বুলিয়ে বলল,
“আটা বা চাল নেই?”

“আটা আছে। চালও হয়তো সামান্য পরিমাণে আছে।”

তারপর আলফি ক্যাবিনেট খুলে আটা ও চালের বক্স বের করলো। চাল খুবই সামান্য। নিঝুম মুখ লটকে বলল,
“তাহলে রুটিই বানানো যাক। আমি একচুয়েলি রুটি বানাতে পারি না৷ ভাত রান্না তো ইজি৷ শুধু ভাতের মাড় গালতেই সমস্যা। কিন্তু এখন তো আরও ইজি। রাইসকুকারে দিয়ে দিলেই হয়। কিন্তু রুটি বানানো টাফ।”

আলফি হাসলো। তারপর বলল,
“রুটি মেকার থাকলে রুটি বানানোও ইজি। ওয়েট দেখাচ্ছি।”
তারপর আলফি খুব সুন্দর করে পরিমাণমতো আটা ও পানি দিয়ে আটার ডো বানিয়ে তারপর ইলেকট্রিক রুটি মেকারে রুটিও বানিয়ে নিলো। নিঝুম খেয়াল করে দেখলো সবটা। তারপর মেকি হেসে বলল,

“শুধু আটা ও পানির পরিমাণটাই বুঝতে পারি না।”

আলফিও হাসলো। বাকি রান্নাও জলদি শেষ করে নিলো। তারপর দুজনে খেতে বসে। খেতে খেতে নিঝুম বলে,
“আমাকে একটা হোস্টেলের ব্যবস্থা করে দিও।”

খাওয়া থামিয়ে নিঝুমের দিকে তাকায় আলফি। তারপর বলে,
“কেন? এই বাড়ি তোমার পছন্দ হয়নি?”

নিভলো নিঝুম। বলল,
“অপছন্দ হবে কেন? খুব সুন্দর বাড়িটি। কিন্তু দেখো, আমি বাংলাদেশ থেকে একপ্রকার পালিয়ে এসেছি কিন্তু তাই বলে একটা ছেলের সাথে একা এক বাড়িতে থাকতে পারি না। বড়ো আম্মু ও নির্ঝর ভাইয়া জানলেও খুব রাগারাগি করবে।”

আলফি ভাবলো খানিক। তারপর বলল,
“আচ্ছা আমি খোঁজ করব। এখানে হোস্টেল পাওয়া টাফ। সময় লাগবে।”

নিঝুম মাথা দুলিয়ে খেতে আরম্ভ করলো।

——
বিকেলে ওরা ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হলো। ইউনিভার্সিটি অফ অটোয়া। এটি প্রাচীনতম গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে একটি। ইউনিভার্সিটিটির পরিবেশও খুব সুন্দর। ক্যাম্পাসের মাঠে ও গাছের নিচের স্টুডেন্টরা বসে আছে। কেউ পড়ছে তো কেউ গল্প করছে। নিঝুম হাঁটতে হাঁটতে দেখছে সেসব। তারপর ওরা প্রবেশ করলো ইউনিভার্সিটির অফিসে। সেখানে ডকুমেন্টস জমা দিয়ে তারপর বের হয়। কাল থেকেই নিঝুম ক্লাস করবে। এক মাস সে মিস করেছে। ফল সেমিস্টার শুরু হয় সেপ্টেম্বর থেকে। এখন অক্টোবরের ৪ তারিখ। এতোদিন মিস হওয়াতে গ্যাপও হয়েছে খুব। কিন্তু যেহেতু নিঝুম বাংলাদেশেও বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে এক সেমিস্টার করে এসেছে তাই সে আশা রাখছে পড়াতে সিমিলারিটি পাবে।
আলফি বলল,
“সব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াতে মনোযোগ দাও। আমি আমার ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে ওর পরিচিত একজনের থেকে এতোদিনের ক্লাসের লেকচার এনে দিব।”

নিঝুম সায় দিলো। ক্যাম্পাসে চোখ বুলিয়ে সে আশা করছে, আগামীকাল থেকে সে নতুনভাবে ফ্রেন্ড বানানো ও পড়াশোনা শুরু করবে।

এরপর ওরা গ্রোসারিতে যায়। সেখানে আলফি ঘুরে ঘুরে প্রয়োজনীয় সব কেনাকাটা করছে৷ নিঝুম কখোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, রান্নার জন্য বাজার করতে যায়নি। এসব তার বড়ো আম্মু ও মাঝেমধ্যে নির্ঝর করছে। কিছুক্ষণ পর ওরা বিল দিতে কাউন্টারে যায়। সেখানে দেখা হয়ে যায় আলফির এক ফ্রেন্ডের সাথে। নাম অ্যালেক্স। সে আলফিকে দেখে উচ্ছাসিত হয়ে হাত মেলায়। ওদের মধ্যে টুকটাক কথা হয়। নিঝুম এই সময়টা বাকিদের দেখছে। যারা বিল মিটিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। অ্যালেক্স নিঝুমকে খেয়াল করে। সে আলফিকে বলে,

“হু ইজ শি?”

আলফি নিঝুমকে দেখিয়ে বলে,
“নিঝুম।”
নিঝুম হ্যালো বললে অ্যালেক্স হাত বাড়িয়ে বলে,
“হ্যালো৷ নাইস টু মিট ইউ। অ্যাই অ্যাম অ্যালেক্স।”

নিঝুম হাত বাড়ানোর আগেই আলফি অ্যালেক্সের হাত ধরে। অ্যালেক্স কিছু একটা বুঝে শুধায়,
“আলফি, ইজ শি ইউর গার্লফ্রেন্ড? শি ইজ সো প্রিটি।”

‘গার্লফ্রেন্ড’ কথাটা শুনে নিঝুম লজ্জা পেয়ে যায়। আলফি তা দেখে মৃদু হাসে। তারপর বলে,
“একচুয়েলি নো। শি ইজ…”

“ফ্রেন্ড। উই আর ফ্রেন্ডস।”
আলফিকে থামিয়ে নিঝুমই বলে উঠে। অ্যালেক্স খুশি হয়ে বলে,
“দ্যান উই আর অলসো ফ্রেন্ডস।”

নিঝুম সৌজন্যে হাসে। আলফি নিঝুমকে কেনাকাটা করা জিনিসপত্রের কাছে যেতে বলে বিল মেটায়। তারপর অ্যালেক্সকে বলে,
“লিসেন অ্যালেক্স, ডোন্ট ট্রাই টু টেক অ্যা চান্স উইথ হার।”

অ্যালেক্স একটু দুষ্ট হেসে শুধায়,
“হোয়াই? শি ইজ বিউটিফুল এন্ড প্রিটি৷ এন্ড আই লাইক প্রিটি গার্লস।”

“হুএভার ইউ ওয়ান্ট টু ফ্লার্ট উইথ, ইউ কেন। বাট নট দ্যাট গার্ল। এন্ড এস পার আই নো, ইউ হ্যাভ গার্লফ্রেন্ড।”

অ্যালেক্স আলফির বাহুতে চা*প*ড়ে বলে,
“আর ইউ জেলাস, আলফি? এন্ড ডোন্ট থিংক এবাউট এনা। আই অ্যাম গোয়িং টু ব্রেকিং আপ উইথ হার। বাট ইউ আর জেলাস। রাইট?”

বাঁকা হাসে আলফি। তারপর বলে,
“নো। আই অ্যাম নট। জাস্ট ওয়ার্নিং ইউ। ইউ ডোন্ট নো হার হাসবেন্ড!”

অ্যালেক্স অবাক হলো।
“ইজ শি ম্যারেড?”

“ইয়াহ। বায়। সি ইউ সুন।”

তারপর আলফি নিঝুমের কাছে চলে যায়। নিঝুম লক্ষ্য করলো অ্যালেক্স তার দিকে কেমন করে চেয়ে আছে। নিঝুম সৌজন্যে হেসে আলফির সাথে শপ থেকে বেরিয়ে যায়। গাড়িতে গিয়ে বসে ওরা। আলফি বলে,
“ইউনিভার্সিটিতে ফ্রেন্ড বানাতে হয়। কিন্তু তুমি যেহেতু এখানকার মানুষজন তেমন চেনো না। ফ্রেন্ড বানাতে চিন্তা-ভাবনা করবে। ছেলেদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করলেও সেটা ভেবেচিন্তে করবে।”

নিঝুম বুঝলো না আলফি হঠাৎ এই কথাগুলো কেন বলল। সে ঘাড় নাড়িয়ে সায় দিলো। তখন নিঝুমের ফোনে নোটিফিকেশন আসে। নির্ঝর ছবি পাঠিয়েছে। আলফিও নোটিফিকেশনের শব্দে তাকায়। তারপর বাঁকা হেসে গাড়ি স্টার্ট করে। নিঝুম ছবিটা দেখলো। তার কাবিননামারই ছবি৷ ভালো করে দেখে সে হতাশ হলো। নির্ঝরও মেসেজে লিখেছে সেটা। জায়ান আহমেদ নিঝুমকে ডিভোর্সের অধিকার দেয়নি। অন্ধকার ছেয়ে পড়লো নিঝুমের মুখশ্রীতে। আলফি আড়চোখে লক্ষ্য করলোও সেটা। সে শুধালো,

“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”

“ওই গু*ন্ডা জায়ান আমাকে ডিভোর্স নেওয়ার অধিকার দেয়নি৷ আমিই বোকা। সাইন করার আগে চেক করিনি। আমার ভালো লাগছে না। আমি যেতে চাই না ওই লোকের কাছে। আমাকে খুঁজে পেলে কী করবে আমাকে? রে*পি*স্ট সে। ক্যারেক্টারলেস!”

ফট করে গাড়ি ব্রেক করে আলফি। নিঝুম সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ভরকে উঠে সে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।