#copyrightalert❌🚫
#আলোছায়াতে_প্রণয়াসক্তি
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৯
গভীর রাত। শনশন বাতাস বইছে। নিস্তব্ধতা ভেদ করে শুধু বাতাসের ও বাতাসের সাথে দোদুল্যমান গাছগুলোর শব্দ আসছে। প্রচন্ড বাতাসে রাতভর বৃষ্টির পূর্বাভাস। খোলা ব্যালকনির পর থাই সরিয়ে একটি মানব ছায়ার আগমন ঘটলো। রাত্রি তৃতীয় প্রহর। দূরে স্ট্রিট লাইটের ও কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের টিমটিমে আলোয় মানুষটির প্রবেশের আগে ছায়া পড়ছে। নিঃশব্দে এসে বিছানার কোণে বসলো আলফি৷ আলতো হাতে প্রিয়তমার মুখের উপর আসা চুলগুলো সরিয়ে দিলো। বারান্দার থাই খোলাতে হুরহুর করে শীতল বাতাস ঘরময় ছেয়ে গেছে। কুঁকড়ে গেলো ঘুমন্ত নিঝুম। আলফি ওর কম্ফর্টারটা টেনে দিয়ে খানিক উষ্ণতা দিতে চেষ্টা করলো। প্রায় কিছুক্ষণ তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে উন্মুক্ত কপালে নিজের উষ্ণ ঠোঁ*টের স্পর্শ খুব গভীর ভাবে ছোঁয়ালো। অতঃপর ধিমি স্বরে বলল,
“লাভ ইউ লাইক দিস ওয়াইল্ড উইন্ড, ঝুম সুইটহার্ট।”
বন্ধ চোখের ঘুমন্ত মেয়েটি কেঁপে উঠলো। তৎপর হয়ে উঠে দাঁড়ালো৷ যেভাবে এসেছিল সেভাবেই চলে গেলো। আকাশ ফুঁড়ে কৃষ্ণকায় মেঘকন্যাদের কান্না বেরিয়ে আসলো। ঘুম ছুটে গেলো নিঝুম। নিজের কপালে হাত ছুঁইয়ে হাঁসফাঁস করে থাই গ্লাসের পর্দার ফাঁকে বাহিরে যতদূর নজর যায় দেখছে। সে কি আবারও স্বপ্ন দেখলো? বিছানা ছেড়ে উঠে পর্দাটা সম্পূর্ণ টেনে দিলো। তারপর আবারও ঘুমানোর উদ্দেশ্যে শুয়ে পড়লো।
——-
সকালে নাস্তার টেবিলে নাস্তা করছে দুজন। আলফি ব্রেড খেতে খেতে ফোনে কিছু একটা দেখছে। খুবই মনোযোগ সেদিকে। নিঝুম হালকা কেঁশে ডাকলো ও-কে। আলফি একবার নজর উঁচিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে আবারও ফোনে মনোযোগ দিলো। নিঝুম বলল,
“আমার মনে হয় জায়ান আমাকে খুঁজে পেয়ে গেছে।”
ওর কথা শুনে এক পলক তাকিয়ে ফোন রাখে। হালকা হেসে ব্রেড খেতে লাগলো। নিঝুম প্রত্যুত্তরের জন্য অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে ফের বলল,
“কাল রাতে আমি জায়ানকে ফিল করেছি।”
এই কথাতে বিষম খেলো আলফি। ঝটপট পানি খেয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,
“ফিল করেছ মানে? তুমি তো জায়ানকে কখোনো দেখোইনি!”
“কে বলল দেখিনি? দেখেছি আমি।”
নিঝুমের উত্তরে বিভ্রান্ত হলো আলফি। শুধালো,
“দেখেছ মানে?”
“কালই তো ছবি দেখলাম। কেন যেন চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। কানের কাছে ফোন না থাকলে হয়তো ভালো করে বুঝতে পারতাম।”
ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে আলফি। তারপর বলে,
“ওহ। তা জায়ানকে ফিল করেছ কীভাবে? তোমার ড্রিমে এসেছিল বুঝি?”
বলেই আড়ালে হাসলো আলফি৷ কিন্তু নিঝুম চিন্তিত হয়ে বলল,
“স্বপ্ন কি না আমি জানিনা। এর আগেও আমি জায়ানকে ফিল করেছি। আমি ফিল করেছি, গভীর রাতে কেউ আমার পাশে এসে বসে। আমার দিকে গভীর দৃষ্টি ফেলে দেখে। তারপর চলে যায়। কপালে আমি কারও স্পর্শও পেয়েছি জানো।”
আলফি সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে নিঝুমকে দেখছে। নিঝুম কি জেগে গেছিল? নড়েচড়ে তো উঠেছিল। আলফি ও-কে পরীক্ষা করতে বলল,
“আজকাল স্বপ্নেও তুমি তোমার হাজবেন্ডকে মিস করো দেখছি!”
নিঝুমের অস্থিরতা বাড়লো বোধকরি। সে বলল,
“আমার ভয় করছে আলফি। নির্ঝর ভাইয়া যেই ছবিটা দিয়েছিল সেটা কোথাকার, সেটাও নির্ঝর ভাইয়া জেনে আমাকে বলেছে। সে টরেন্টোতে চলে এসেছে৷ এখন অটোয়াতে পৌঁছাতে সময় তো লাগবে না।”
“রিল্যাক্স। তুমি জায়ানকে নিয়ে অতিরিক্ত নেগেটিভ চিন্তা করছো। আপাতত সেসব ছেড়ে পড়াতে মনোযোগ দাও। খাওয়া হলে উঠে এসো। উই আর গেটিং লেট।”
টিসুতে হাত মুছতে উঠে গেলো আলফি। নিঝুম চিন্তিত হয়ে খাচ্ছে।
——-
নিঝুমকে ইউনিভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়ে আলফি অফিসে গেলো৷ আজ সে ক্যামিলিয়ার সাথে একটা বিজনেস ডিলে আসবে৷ ক্যামিলিয়া সেই মেয়েটি, যার সাথে বছর তিনেক আগে তার রিউমার বেরিয়েছিল। একটা ডিল শেষে আরেকটা ডিল করার আগে ক্যামিলিয়ার কিছু বিষয়ে সে জানতে পেরে গেছিল। তারই রা*ইভাল কম্পানির সাথে সে মিলিত। ওদের কম্পানির সাথে ষ*ড়যন্ত্র করছে। তাই আলফি ক্যামিলিয়াকে ডেকে বলেছিল সে আর কোনো নতুন ডিলে যাবে না। কিন্তু ক্যামিলিয়া সেটা মানতে পারেনি৷ দুজনের মধ্যে অরেক বাকবিতন্ডা হয়। সেবারের মতো ক্যামিলিয়া হার মেনে চলে গেলেও সে হার মানেনি। আলফিকে ধ্বংস করার জন্য ছক কষেছে। নারী মনের কু*টিল ষড়*যন্ত্র সে ধরতে পারেনি। প্রথম ডিল সাকসেস হওয়ার পার্টিতেই সুযোগটা নেয় ক্যামিলিয়া৷ আলফি হালকাপাতলা ড্রিং*ক করে। তাও শুধু ওয়া*ইনটাই। নিউইয়র্কের এক নাইটক্লাবে সবাই মিলে নাচে-গানে ইন্জয় করছিল। আলফি এক জায়গায় বসে ছিল ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে৷ তখন ক্যামিলিয়া ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে জায়ানের ওয়া*ইনের গ্লাসে কিছু একটা মেশায়৷
হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়লো আলফি। সেদিন তার এসিস্ট্যান্ট যদি তাকে না বাঁচাতো তবে হয়তো ক্যামিলিয়া সফল হয়ে যেত। আজকে আবার ক্যামিলিয়ার কম্পানির সাথে নতুন ডিল করছে একটা উদ্দেশ্য নিয়ে।
নিঝুম ক্লাসে বসে মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে। পাশে বসা মোনা ও নোয়া নামের তার নতুন বান্ধবী। তখন নিঝুমের ফোনে নোটিফিকেশন এলো। ক্লাসের সময়টা সে ফোন সাইলেন্ট করে রাখে। তবে স্ক্রিণে মেসেজ ভেসে উঠতেই ভ্রুঁ কুঁচকালো। আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ। বলছে ক্লাসের পর ক্যান্টিনে যেতে। নিঝুম মেসেজটা ওপেন করলো। মেসেজের শেষে অ্যালেক্সের নাম। নিঝুম বুঝতে পারলো না, হঠাৎ অ্যালেক্স কেন তাকে ক্যান্টিনে যেতে বলছে। আর তার নাম্বারই বা কোথায় পেয়েছে! নিঝুম ধিমি স্বরে মোনাকে শুধালো,
“হাউ ডিড অ্যালেক্স গেট মাই নাম্বার? আই ডিডেন্ট গিভ এনিওয়ান মাই নাম্বার একসেপ্ট ইউ এন্ড নোয়া।”
মোনা ইশারায় বলল সে দেয়নি। পাশ থেকে নোয়া দাঁত বের করে হেসে জানালো সে দিয়েছে! অ্যালেক্স নাকি তাকে বলেছিল খুব দরকারী কথা আছে নিঝুমের সাথে। নিঝুম হতাশ হলো। এর আগেও অ্যালেক্স তার থেকে মেবাইল নাম্বার চেয়েছিল কিন্তু সে দেয়নি৷
ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে যেতেই অ্যালেক্সের দেখা পায়৷ অ্যালেক্স একপ্রকার ছুটে এসে এক্সাইটেড মনোভাব নিয়ে নিঝুমের হাত ধরে। নিঝুম চমকে উঠে। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কাটকাট কণ্ঠে বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
“রিল্যাক্স। কাম উইথ মি।”
তারপর ওরা বসে। বসার পর অ্যালেক্স বলে,
“ইউ আর নট ম্যারিড!”
“হোয়াট!”
“ইয়েস। আই ফাইন্ড আউট দ্যাট, আলফি লাইড টু মি দ্যাট ডে। এন্ড ইউর রিয়াকশন ওয়াজ অলসে সারপ্রাইজড আফটার হিয়ারিং দ্যাট। ইউ ডোন্ট ইভেন হ্যাভ ইউর ওয়েডিং রিং।”
বলেই অ্যালেক্স ওর হাতের দিকে ইশারা করলো। নিঝুম মাথায় হাত দিয়ে বসলো। আলফি ঠিকই বলেছিল, এই অ্যালেক্স মোটেও সুবিধার না। তার সাথে ফ্লার্টিং করার একটা সুযোগও সে মিস করে না। সে বিরক্তি ভরা কণ্ঠে বলল,
“প্লিজ অ্যালেক্স। হোয়াটেভার আই ম্যারিড অর নট, দ্যা ট্রুথ ইজ, আই অ্যাম নট ইন্টারেস্টেড ইন ইউ। এন্ড আই অ্যাম নট গোয়িং টু গিভ ইউ এনি এক্সপ্লেনিশেন এবাউট মাই ম্যারেজ।”
নিভে গেলো অ্যালেক্স। আবার কিছু বলতে চাইলে তার আগেই নিঝুম উঠে গেলো।
——
ক্যামেলিয়া এসেছে আলফির অফিসে। আলফির অফিস রুমে দুজন মুখোমুখি টেবিলের দুই পাশে বসা। ক্যামেলিয়ার চোখেমুখে বিজয়ী ভাব। এক আত্ম অহংকার। ক্যামেলিয়া তার স্বভাবসুলভ হাসি হেসে বলে,
“ইটস বিন লং। এন্ড উই মেট এগেইন। ইউ আর মোর হ্যান্ডসাম দেন এভার।”
হাসলো আলফি। তারপর বলল,
“থ্যাংকস ফর ইউর কমপ্লিমেন্ট। আই থিংক উই শুড ডিসকাস এবাউট আওয়ার নিউ ডিল।”
ক্যামেলিয়া দমে গেলো কিছুটা। সে ভেবেছিল, এতো বছর পর যেহেতু আবারও জায়ান ওর সাথে কাজ করতে চাচ্ছে, তার মানে জায়ান ওর প্রতি ইন্টারেস্টেড।
ডিল ফাইনাল করলো আলফি। দাঁড়িয়ে হাত বাড়ালো ক্যামেলিয়ার দিকে। সবটাই ফর্মাল। ক্যামেলিয়া বুঝতে পারছে না, জায়ান চাইছে কী? নাকি প্রথমে একটু ভাব নিচ্ছে? কিন্তু সে ঘুনাক্ষরেও অপরপাশের ব্যাক্তির উদ্দেশ্য বুঝতে পারলো না।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।