#আলো_আঁধারের_লুকোচুরি
#Part_15
#Writer_NOVA
‘ইয়াসফি!’
বারান্দায় দাড়িয়ে পুরনো দিনের কথা ভাবছিলো ইয়াসফি। মামার ডাকে ধ্যান থেকে ফিরলো। হাতের মগে থাকা কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে বহু আগে। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মামার দিকে ঘুরলো।
‘কিছু বলবে?’
‘হ্যাঁ, তুই যতদ্রুত সম্ভব এখান থেকে সরে যা। তোর ভাই যেকোনো সময় তোর ওপর আক্রমণ করে বসতে পারে। ওকে দিয়ে বিশ্বাস নেই।’
ইয়াসফি মামার কথাকে পাত্তা দিলো না। মগটাকে বারান্দায় থাকা ছোট টেবিলের ওপর রেখে তীক্ষ্ণ নজর দিলো।
‘রুহানিকে মিথ্যে কেন বললে? আমি ইায়সফি, বোরহান নই। বোরহান নামে আমার কোন বন্ধু নেই।’
‘সেটা তুই আমি জানি অন্যরা নয়। তোকে সেইফ রাখতে আমি জেনেশুনে মিথ্যে বলেছি।’
‘আর রুহানি! সে কি আমায় চিনতে পারলো না? এতোদিন ওর কাছে ছিলাম, একই বিছানায় ঘুমিয়েছি, হাজারবার স্পর্শ করেছি৷ তবু ও কি আমায় চিনতে পারলো না?’
আজিম সারোয়ার ভাগ্নের কাঁধে হাত দিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বললো,
‘মেয়েটার ওপর ধকল তো কম যায়নি। তোর জায়গায় মাহমুদ আসার পর মেয়েটা কি অন্যদের মতো বসে রয়েছে বল? শক্তি, সাহস, বুদ্ধি নিয়ে তোকে খোজার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। এতো প্যাচ, কনফিউশান, চিন্তায় বেচারি তালগোল পাকিয়ে গেছে। মাথা ঠিক হলে দেখবি ছুটতে ছুটতে হাজির।’
‘তাই যেনো হয় মামা। আমার আর কিছুই ভালো লাগছে না। আমি ইয়াসফি হয়েও আমার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এতোটা বাজে সময় আমি আগে কখনো পার করিনি।’
‘তোর ভাইয়ের ভালো ট্রিটমেন্ট দরকার। আমি ওর মুখ থেকে সত্যটা বের করে বড় মানসিক হসপিটালে দিয়ে দিবো।’
‘বুঝলে মামা, হুমায়ুন আহমেদ তার কুটু মিয়া উপন্যাসে একটা কথা বলেছিলো, “বন্যপশু থেকে বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ বেশি ভয়ংকর”। তখন কথাটা আমলে না নিলেও এখন হারে হারে টের পাচ্ছি। কোন সুস্থ মানুষ কি ভালোবাসার মানুষকে ফ্রিজিং ড্রয়ারে সংরক্ষণ করে রাখে?’
‘তুই যখন পুরো বিষয়টা আমাকে খুলে বললি আমি নিজেও হতভম্ব। আমাদের আরো আগের থেকে সচেতন হওয়া উচিত ছিলো। যাইহোক এখন বোরহান সেজে থাক। আমি দেখি কি করা যায়।’
ইয়াসফি চুপ হয়ে গেলো। আজিম সারোয়ার ভাগ্নের পিঠে চাপর মেরে চলে গেলেন। এখানে বেশি সময় থাকা উচিত নয়।
এবার পুরো বিষয়টা আপনাদের বুঝিয়ে বলি। ইয়াসফি মারা যায়নি। ইয়াসফির বন্ধু বোরহান নামে যাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সেই হলো আসল ইয়াসফি। রুহানির কাছে আসল ইয়াসফি ছিলো। আজিম সারোয়ার ইয়াসফিকে বাঁচাতে সবার কাছে মিথ্যে বলছে।
———-★
৩৪ বছর আগের কথা….
স্থানীয় মেয়র মাহফুজ ও তার স্ত্রী ইয়াসমিনের ঘর আলো করে এলো যমজ পুত্র সন্তান। তিন মিনিটের বড় সন্তানের নাম রাখা হলো ইয়াসফি মাহবুব। ছোট ছোট সন্তানের নামকরণ করা হলো তানিম মাহমুদ। দুই সন্তান নিয়ে মেয়র সাহেবের সংসার ভালোই চলছিলো। গুটি গুটি পায়ে মাহবুব, মাহমুদের বয়স যখন চারে পরলো তখুনি রাজনৈতিক শত্রুতার জের ধরে মাহফুজ মেয়র গুম হয়ে গেলেন৷ সারা এলাকা, আশেপাশের জায়গা খুঁজেও তার হদিস পাওয়া গেলো না৷ লোকে বলতে লাগলো তাকে মে’রে লাশ কোথাও পুঁতে ফেলেছে। তাই বলে মৃতদেহটাও পাওয়া যাবে না? এখনকার মতো আইন ততটা উন্নত ছিলো না। এর জন্য লশটাও পাওয়া গেলো না।
ইয়াসমিন দুই ছেলে নিয়ে অকূল পাথারে পরে গেলো।
মাহফুজ সারাদিন রাজনীতি নিয়ে পরে থাকায় তার অন্য কোন ইনকাম সোর্স ছিলো না। রূপবতী নারী তার মধ্যে ছোট দুটো বাচ্চা। চারিপাশের নোংরা মানুষ লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাতো। তখন এগিয়ে এলো তার বড় ভাই আজিম সারোয়ার। বোন, ভাগ্নেদের নিজের বাসায় নিয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু ইয়াসমিন খুব আত্মসম্মানবোধ নারী। সে স্বামীর ভিটা থেকে নড়তে চায়নি। ভাইকে বললো একটা চাকরি জোগাড় করে দিতে। একমাত্র বোনকে বুঝিয়ে যখন লাভ হলো না তখন ভাই বাধ্য হয়ে বোনকে চাকরি খুঁজে দিলো। দুই সন্তান, চাকরি নিয়ে চলতে লাগলো ইয়াসমিনের জীবন। ছেলে দুটোর বয়স পাঁচ বছর হওয়ার পর স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেয়া হলো। ধীরে ধীরে সাত বছরে উপনীত হলো মাহবুব, মাহমুদ। সাত বছর হওয়ার পর ইয়াসমিন খেয়াল করলো তার দুই ছেলের চেহারা এক হলেও আচার-ব্যবহার, চরিত্র, বৈশিষ্ট্য অনেক ভিন্ন। মাহবুব ছোট থেকেই একটু চুপচাপ স্বভাবের। কথা কম বলে। অপ্রয়োজনে বাক্য ব্যয় করতে পছন্দ করে না। অন্য দিকে মাহমুদ ভীষণ ধূর্ত প্রকৃতির। এতটুকু বয়সেই নিজে কোন অপরাধ করলে নির্দ্বিধায় ভাইয়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতো। যদিও তার এই বিষয়টা ইয়াসমিন জানতো৷ তাই মাহবুবকে কখনো শাস্তি দিতো না। দিন গড়াতেই ইয়াসমিন আরোকটা বিষয় খেয়াল করলো। মাহমুদ তার ভাইয়ের নকল করতে পারতো। তাও এতোটা নিখুঁতভাবে যে তার মা ধরতে পারতো না। যেই বৈশিষ্ট্যটা মায়ের পিলে চমকে দিয়েছিলো তা হলো মাহমুদ পশু-পখী, প্রাণীকে নীরবে কষ্ট দিতে পছন্দ করতো তাও অকারণে। মাহবুব এই বিষয়টা পছন্দ করতো না। তাই মাঝে মধ্যে দুই ভাইয়ের মধ্যে মারামারি লেগে যেতো৷ যদিও শুরুটা মাহমুদই করতো। ইয়াসমিন দুই ছেলেকে সুন্দর করে বুঝাতেন। মাহবুব যতটা বাধ্য ছিলো মাহমুদ ছিলো ততটা অবাধ্য। দুই ভাই দুটো চরিত্রের অধিকারী ছিলো। আট বছর পেরুতেই ইয়াসমিন ব্রেণ ক্যান্সারে মারা গেলো। মায়ের হঠাৎ মৃত্যুতে দুই ভাই শোকে বিমূঢ়। চাচা, ফুপুরা কেউ এতিম ছেলে দুটোকে নিতে চাইলো না। এমন সময় তাদের ঠাঁই মিললো মামার বাড়ি।
আজিম সারোয়ারের স্ত্রী নাসিমা বেগম কোমল হৃদয়ের মানুষ। বাবা-মা হারা দুই সন্তানকে আপন করে নেন। নিজের সর্বস্ব দিয়ে দুই ছেলেকে আগলে রাখেন। এরপর একে একে তার কোল জুড়ে তিশা, তুষ্টি এলো। কিন্তু তার কাছে দুই ভাগ্নের আদর কমলো না। দেখতে দেখতে মাহবুব, মাহমুদ কলেজের গন্ডি পার করলো৷ মাহবুব নিজেকে মামার পরিবারের সাথে মিশিয়ে নিয়েছিলো। আর মাহমুদ চার দেয়ালের ভেতর নিজেকে আবদ্ধ করে নিয়েছে। তার ছোটবেলার অস্বাভাবিক আচারণ কিন্তু কমেনি। বরং বেড়ে চলেছিলো। কিন্তু সে ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষ হওয়ায় সেগুলো পরিবার অব্দি পৌঁছাতে পারেনি। তবে মাহবুব বিশেষ নজরে রাখতে ছোট ভাইকে। তাই সপ্তাহে দুই-তিনদিন দুই ভাইয়ের মধ্যে তুমুল ঝগড়াঝাটি, মারামারি হতো। বাধ্য ছেলে হওয়ায় আজিম সারোয়ার মাহবুবকে পছন্দ করতেন। ততদিনে মাহবুব ছাত্র সংগঠনে যোগ দিয়েছে। যার রক্তে রাজনীতি আছে সে কি এসব থেকে দূরে থাকতে পারে? ভার্সিটির শুরুতে মাহমুদের নামে বিভিন্ন বিচার-আচার আসা শুরু করলো। আজিম সারোয়ার বিরক্ত হয়ে গেলেন। কিছু দিন পর সে এমপি পদে দাঁড়াবেন এখন ভাগ্নের নামে বিচার আসলে তার রেপুটেশন নষ্ট হবে৷ তাই মাহবুবের সাথে বুদ্ধি করে মাহমুদকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। সেখানে গিয়ে মাহমুদপর পরিচয় হলো একি জেলার মেয়ে ফ্লোরার সাথে। অবাধ স্বাধীনতা পেয়ে মাহমুদ ধীরে ধীরে হয়ে গেলো আরো ভয়ংকর।
ভার্সিটি লাইফ শেষের দিকে মাহবুবের পরিচয় হলো রুহানির সাথে। বছর চার সম্পর্কের পর মামার সহয়তায় রুহানির পরিবারকে রাজী করিয়ে একদম লুকিয়ে চুরিয়ে গতবছর তাদের বিয়েটা হয়। রুহানির পরিবার রাজনীতির সাথে যুক্ত ছেলের সাথে বিয়ে দিতে রাজী ছিলো না। কিন্তু মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মেনে নেওয়া ছাড়া কোন কিছু করারও ছিলো না। মেয়ের খুশি তাদের খুশি।
———-★
সারাদিন হেলায় ফেলায় কাটলো রুহানির। অশান্ত মনটা কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। তার মন বলছে ইয়াসফি বেঁচে আছে। অবাধ্য মনটা ছটফট করে তাই জানান দিচ্ছে। চোখ দুটো এক বিন্দু সময়ের জন্যও বন্ধ করতে পারছে না। জানালার পাশে নারিকেল গাছে একটা হুতুম প্যেঁচা হু হু করে ডাকছে। আজ আকাশে চাঁদ নেই। তবে ক্ষীণ আলোয় পরিষ্কার সব দেখা যাচ্ছে। গলির মোড়ে থাকা কুকুরগুলো কিছু একটা দেখে আর্তনাদ করে উঠলো। রুহানির বুকটা অজানা আশংঙ্কায় হাতুড়ি পেটাচ্ছ। ছোটবেলায় দাদীর কাছ থেকে শুনেছিলো গভীর রাতে কুকুরের আর্তনাদ আর পেচার ডাক নাকি অমঙ্গলের ছায়া। যদিও সে জানে এটা কুসংস্কার। কিন্তু তার মন আজ সেটা মানতে নারাজ। এপাশ ওপাশ করে উঠে বসলো। ততক্ষণাৎ তার মোবাইলটা ভাইব্রেট করে উঠলো। আজও আননোন নাম্বার। তবে গতকালের নয়। কাঁপা কাঁপা হাতে রিসিভ করে কানে দিতেই অপরপাশ থেকে হাসি হাসি কন্ঠে সে বলে উঠলো,
‘আসসালামু আলাইকুম ভাবীজান। কি খবর? বিধবা হয়ে কি শোকে পাথর গয়ে গেলেন?’
রুহানি চমকে উঠলো।
‘মাহমুদ।’
মাহমুদ কিট কিটিয়ে হেসে বললো,
‘এই তো ঠিক চিনেছেন। অবশ্য চিনবেন না কেনো? দশটা না পাঁচটা না একটামাত্র দেবর আপনার।’
রুহানির চাপা রাগ হলো। ঠোঁট কামড়ে রাগ সংবরণ করে চোয়াল শক্ত করে জিজ্ঞেস করলো,
‘কেনো কল করেছেন?’
আবারো মাহমুদের অট্টহাসি কানে ভেসে আসলো। শুনতে বিরক্ত লাগলেও রুহানি কান থেকে মোবাইল সরালো না।
‘কি যে বলেন না ভাবী! ভাই মারা গেছে বলে কি ভাবীর খোঁজ খবর নিবো না?’
‘কোন দরকার নেই।’
মুহুর্তে মাহমুদের গলার স্বর পাল্টে গেলো। রাগে থরথর করে কেঁপে উঠলো।
‘দরকার আছে। আপনার স্বামী মরে গিয়ে বেঁচে গেছে। নয়তো আমি নিজ হাতে ওকে মেরে ফেলতাম। ওর এতো যশ, খ্যাতি, আপনজন আমার সহ্য হচ্ছিলো না। তাই তো চারমাস আগে ওকে সরিয়ে নিজে ওর জায়গা দখল করেছি। সবকিছু আমার প্ল্যান মতোই চলছিলো। কিন্তু ভেজাল লাগালেন আপনি। আমি ভেবেছিলাম সাধারণ মেয়ে কি আর করতে পারবে। কিন্তু ভাবিনি এতো ধানী লঙ্কা হবে।’
রুহানির ঠোঁট প্রসস্থ হলো। বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। গানের সুরে বললো,
“শোনরে সুজন আমি বলিও তোরে,
চাঁদ ভেবে আগুন নিয়ে খেলিস না রে।”
‘আমাকে চাঁদ ভাবলে ভুল করবেন দেবরজী। আমি আগুন। আমাকে ছোঁয়া এতো সহজ নয়।’
‘হ্যাঁ, তাতো বুঝতেই পারছি। তবে আপনি একটা মারাত্মক অপরাধ করছেন। তা হলো আমার থেকে আমার ফ্লোরাকে কেড়ে নিছেন। আমিও আপনার থেকে আপনার কোন প্রিয় মানুষ কেড়ে নিবো। তখন বুঝবেন প্রিয়জন হারানোর ক্ষত কতটা গভীর। ইচ্ছে তো ছিলো ইয়াসফিকে মারবো। কিন্তু মরা মানুষকে তো মারা যায় না। তাই জীবিত মানুষকে মারি।
রুহানির ভাবান্তর হলো না। তবে সে ভেতর ভেতর একটু ভয় পেলো। মাহমুদ ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষ। এই মানুষগুলোর থেকে সাবধানে থাকতে হয়। রুহানি কিছুটা মিইয়ে যাওয়া গলায় বললো,
‘আপনি এমনটা করতে পারেন না।’
‘পারি। একটা সিক্রেট শুনবেন।’
‘কি সিক্রেট?’
‘ফ্লোরা আসলে মারা যায়নি। আমি ওকে মেরে ফেলেছি। আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। তাই মেরে সারাজীবন নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি সব গন্ডগোল পাকিয়ে দিলেন। এর মাশুল আপনাকে খুব খারাপভাবে দিতে হবে।’
#চলবে
#আলো_আঁধারের_লুকোচুরি
#Part_16
#Writer_NOVA
তাড়াহুড়ো করে ব্যাগ গোছাচ্ছিলো রুহানি। তার এখানে বসে থাকলে চলবে না। তার মন বলছে গন্ডগোল চলছে। তার মনের কথা বেশিরভাগ সময় সত্যি হয়। আজ সকাল ভোরেও আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছিলো৷ রিসিভ করার পর কেউ কথা বললো না। রুহানি ইচ্ছে করে যখন ডাকলো ‘ইয়াসফি’ একটা দীর্ঘ শ্বাসের শব্দ কানে ভেসে এলো। এরপর কল কেটে গেলো। ফিরতি কল দেওয়ার পর সিম বন্ধ। তাই সে ইয়াসফির বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একে একে রুহানি সব গুটি সাজাতে লাগলো। পুরো বিষয়টা মাথায় খেলে গেলে নিজের কপালে নিজেই চাপর মারলো৷ এতদিন তার কাছে ইয়াসফি ছিলো আর সে মামার এক কথায় সব ভুলে বাসায় চলে এলো কি করে? পুরনো স্পর্শ, কথা, আচার-আচরণ দেখেও সে তার নিজের ইয়াসফিকে চিনতে পারলো না। এর জন্য সেদিন ইয়াসফি কল করে বলেছিলো,
‘আমাকে চিনতে পারলে না রুহ। এই ভালোবাসো আমায়?’
রুহানির এখন নিজের চুল নিজেরি ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। মাঝে মাঝে সে নিজেই বেকুবের মতো কাজ করে। মাসুমকে কল দিয়ে বাসায় আসতে বলে দিলো। এই বন্ধুটা ছাড়া তার কোন গতি নেই।
‘কিরে, তুই কোথায় যাচ্ছিস?’
মিশি বেগম ভেতরে ঢুকে অবাক হয়ে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলো। মায়ের কথায় ভাবান্তর ঘটলো না রুহানির। ওয়ারড্রব থেকে টপস, জিন্স নিতে নিতে ল্যাগেজে ভরে নিলো।
‘একটু কাজ আছে মা?’
‘দুদিন আগে বাসায় ফিরলি এখন আবার কি কাজ থাকতে পারে?’
‘তোমার জামাইয়ের কাছে একটু যেতে হবে।’
‘সে না গয় এক সপ্তাহ পর যাস। এতদিন পর বাসায় ফিরলি সপ্তাহ খানিক থাকবি না?’
‘তোমাদের জামাই আর আমি একসাথে থেকে যাবো।’
মিশি বেগমের মুখটা চুপসে গেলো। মেয়ের জামাইয়ের বিষয়ে আদ্যপন্ত সবই জানেন তারা। শুধু মৃত্যু নিয়ে যেই তুলকালাম কান্ড হয়েছে সেটা ছাড়া। মায়ের মলিন মুখ দেখে রুহানি দুই কাঁধ ধরে মা কে খাটে বসালো। হাঁটু মুড়ে কোলের কাছে বসে বললো,
‘মা তুমি এমন মন খারাপ করে থাকলে আমার কিন্তু ভালে লাগবে না। কথা দিচ্ছি খুব শীঘ্রই আসবো।’
‘যেতে দিতে পারি, তবে এক শর্তে। নিয়মিত আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।’
‘ঠিক আছে।’
‘তোর সাথে দুজন দেখা করতে এসেছে।’
রুহানি ভ্রু কুঁচকে গেলো। মায়ের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকালো। বিচলিত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
‘কে?’
‘গিয়ে দেখ আমি চিনি না। নাস্তা পানি দিয়ে আসেছি। আমি তোকে ডাকতে আসলাম।’
রুহানি গুটি গুটি পায়ে বসার ঘরে যেতেই রায়হান খান ও তার স্ত্রী শুভা খানের দেখা মিললো। রুহানি বড় করে সালাম দিলো। রায়হান খান সালামের উত্তর নিয়ে বললো,
‘আমরা কানাডা চলে যাবো। ফ্লোরার মায়ের মানসিক অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ভাবলাম যাওয়ার আগে তোমার সাথে দেখা করে যাই।’
‘সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আঙ্কেল। আরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসেন।’
শুভা খান পিটপিট করে রুহানির দিকে তাকালো। এগিয়ে এসে চোখ, মুখে বাচ্চাদের মতো হাত বুলাতে বুলাতে স্বামীকে বললো,
‘হ্যাঁ, গো ফ্লোরার বাবা। মেয়েটা তো দেখতে অনেকটা আমাদের ফ্লোরার মতো।’
ওমর মাহমুদের সামনে দাঁড়িয়ে হাসফাস করছে৷ সে আসলে বুঝতে পারছে না কোথায় ফেঁসে গেছে। মাহমুদকে সে ইয়াসফি ডাকবে না তানিম ডাকবে সেই দ্বিধায় তার মাথার তার ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম। ওমরের মনে হচ্ছে আসল ইয়াসফি সেই বোরহান নামের ছেলেটা। কারণ সারাক্ষণ মামা-ভাগনে মিলে কি ফুসুরফাসুর করে। তাকে দেখলে থেমে যায়।আরেকটা চিন্তা তার মাথায় ভিড়েছে। মাহমুদ তো ইয়াসফি নয়। তাহলে খুব বেশি দিন তাকে ইয়াসফি সেজে মন্ত্রীর আসনে থাকা হবে না। তারও প্রয়োজন শেষ। তাই আগেভাগে চলে যাওয়া ভালো।
মাহমুদ চোখের ওপর হাত রেখে আধশোয়া হয়েছিলো। ওমর ডাকবে কি ডাকবে না সেই দ্বিধাদ্বন্দে অনেকখন দাঁড়িয়ে আছে। তার ইদানীং মাহমুদকে ভীষণ ভয় করে। একই সাথে চার মাস থেকেও সে বুঝতে পারলো না এটা আসল ইয়াসফি নয়। কতটা ঠান্ডা মাথায় একটা মানুষ অন্যের ক্যারেক্টারে ঢুকতে পারলে এমনটা হয়? এসকল মানুষ থেকে দূরে থাকাই মঙ্গলজনক।
‘কিছু বলবে ওমর?’
মাহমুদের কথায় চমকে উঠলো ওমর। সে নানা চিন্তায় বিভোর ছিলো। আচানক প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেছে। আমতাআমতা করে বললো,
‘ভাই, আপনার সাথে আমার কথা ছিলো।’
‘তোমার সাথেও আমার কথা ছিলো।’
ওমর নিজের কথা না শুনিয়ে উৎসাহী হয়ে পরলো মাহমুদের কথা শোনার জন্য। আগ্রহী গলায় জিজ্ঞেস করলো,
‘কি কথা ভাই?’
মাহমুদ চোখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো,
‘পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে তাতো দেখতেই পারছো। তোমার এখানে থেকে কাজ নেই। তুমি বরং চলে যাও।’
ওমরের খুশিতে বাক-বাকুম অবস্থা। এ যেনো মেঘ না চাইতেই জল। সে তো এর জন্য এসেছিলো। কথাটা মাহমুদের দিক থেকে আসায় সে দ্বিগুণ খুশি। ‘ঠিক আছে ভাই’ বলে সে অনেকটা উৎফুল্লতার সহিত ব্যাগ গোছাতে চলে গেলো।
★
লন্ডনে যাওয়ার পর থেকে মাহমুদের মানসিক অবস্থা আরো খারাপের দিকে গেলো। সে নিজেও বুঝতে পারলো সে কোন স্বাভাবিক মানুষ নয়৷ তার রোগটা হলো সাইকোসিস। কিন্তু সে কোন সাইক্রোটিসের শরানপন্ন হলো না। নিজের অদ্ভুত জীবনটাকে উপলব্ধি করতে লাগলো। ফ্লোরা সম্পর্কের কয়েক বছরেও ধরতে পারলো না যাকে সে মনপ্রাণ উজাড় করে দিয়েছে সেই মানুষটা সুস্থ নয়। একটা ঘটনা তার ধারণা বদলে গেলো। ফ্লোরার এক ছেলে ক্লাসমেট একদিন কথা বলতে বলতে কাধে হাত রেখেছিলো। বিদেশি কালচারে এটা কোন সমস্যাই নয়। কিন্তু সমস্যা হয়েছিলো মাহমুদের। সে এটা দেখে সহ্য করতে পারেনি। ফ্লোরার সামনে সেই ছেলেটার হাতে অনরবত ছুড়ি দিয়ে কুপিয়ে হাতটাই অ-কেজো করে দিয়েছে। মাহমুদ সামান্যতম অনুতপ্তবোধও ছিলো না। বরং চোখ মুখে খেলা করছিলো পৈশাচিক আনন্দ। নিজের চোখে ভালোবাসা মানুষটার ভিন্ন পরিবর্তনে ফ্লোরা বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলো। এই বিষয়টা ফ্লোরা মেনে নিতে পারেনি৷ তাই ব্রেকআপ করার সিদ্ধান্ত নেয়। মাহমুদ হাতে-পায়ে ধরে, সত্য-মিথ্যা কসম কেটে ফ্লোরাকে ফেরায়। ফ্লোরা আবারো ভুল করে। মাহমুদের অভিনয়ে গলে তাকে আরেকটা সুযোগ দেয়।
উলিয়নাম ছিলো ইউরোপ কান্ট্রির ছেলে। ভীষণ শান্তশিষ্ট, সদালাপী, মিশুক একটা ছেলে। মুহুর্তে মানুষের মন ভালো করার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে ছেলেটার। ফ্লোরার সাথে ভালো ভাব ছিলো। আসলে সে মনে মনে ফ্লোরাকে ভীষণ পছন্দ করতো। একদিন মনের কথা চেপে না রেখে বলে দিয়েছিলো,
‘ফ্লোরা, আই লাভ ইউ। আই নিড ইই এভরি মোমেন্ট। ডু ইউ লাভ মি?’
এতটুকু তার জীবনের কাল বইয়ে এনেছিলো। ফ্লোরা সেদিন আশেপাশে তাকাতে তাকাতে হন্তদন্ত হয়ে সরে গিয়েছিলো। চোখ ছিলো তার চাপা ভয়। উলিয়নামকে শুধু এতটুকু বলেছিলো,
হেই ডাসেন্ট ইভেন টক। আদার ওয়াইস ইউ উইল বি ইন ডেঞ্জার। ডিপ ডেঞ্জার!
এর চারদিন পর পাঁচ কিলোওয়াট দূরে সাগরপাড়ে উলিয়নামের বিভৎস লাশ পাওয়া গিয়েছিলো। যেহেতু উলিয়নামকে শেষবার ফ্লোরার সাথে দেখা হয়েছিলো তাই এর জন্য ফ্লোরাকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। মাস পেরিয়ে যায় উলিয়নামের মৃত্যুর সুরাহা পাওয়া যায় না। এরপর একদিন মাহমুদ নিজ থেকেই ফ্লোরাকে উলিয়নামকে কি করে মেরেছে তার বর্ণনা বলে। এতো কষ্ট দিয়ে কেউ কাউকে মারতে পারে তা ফ্লোরার জানা ছিলো না। এরপরই ফ্লোরা জীবনের বড় সিদ্ধান্তটা নেয়। কাউকে না জানিয়ে দেশে ফিরে আসা। যা তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুলে পরিনত হয়।
ততদিনে ইয়াসফি অনেক উঁচুতে উঠে গেছে। নির্বাচনে বিপুল ভোটে পাস করে মন্ত্রী পদে নিয়োগ হয়েছে। ইয়াসফির এই সুখবর পৌঁছে গেছে মাহমুদের কানে। ভাইয়ের এতো যশ, খ্যাতি তার মনে হিংসার উদ্রেক করে। জ্বলেপুড়ে খাক করে দেয়। সে সবকিছু থেকে বঞ্চিত অথচ তার ভাই সেসব উপভোগ করছে যা তারও পাওয়ার কথা ছিলো। এটা সে মেনে নিতে পারে না। তাই মনে মনে এক ঘৃণ্য পরিকল্পনা আটে। সাগরে গিয়ে ইচ্ছে করে লাপাত্তা হওয়ার নাটক সাজায়। হসপিটালের মর্গ থেকে এক বন্ধুর সাহায্য একটা লাশ এনে মুখের আদল নষ্ট করে দেয়। দুই দিন পর সেই লাশ সাগরপাড়ে ফেলে রাখে। এতোটা নিখুঁতভাবে করে যে কোন চিহ্ন রাখে না। সেই খবর দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পরে। পুলিশ টেনশনে পরে যায়। মাস ব্যবধানে দুটো লাশ উদ্ধার। কিন্তু কোন ক্লু তারা পাচ্ছিলো না। মাহমুদ লন্ডনে সময় ব্যয় করে না। দেশে এসে ইয়াসফির বিষয় তথ্য জোগাড় করতে আরম্ভ করে৷
ইয়াসফি ও আজিম সারোয়ার যখন মাহমুদের মৃত্যুর কথা জানে তখন তারা বিশ্বাস করে না। কারণ মাহমুদের মতে ধূর্ত প্রকৃতির মানুষকে কেউ এতো সহজে মারতে পারবে না। আজিম সারোয়ার অসুস্থ থাকায় ইয়াসফি নিজেই লন্ডনে চলে যায়। বাসায় শুধু এতটুকু জানায় মাহমুদ নিখোঁজ। এই খবরে তাদের মামী শোকে অসুস্থ হয়ে পরে। শত হোক লালন-পালন করে সেই বড় করেছে। ইয়াসফি লাশ দেখার পর পুরোপুরি সিউর হয়ে যায় এটা মাহমুদ নয়। কিন্তু পুলিশকে তা জানায় না।
ছোটবেলা থেকে মাহমুদ তার ভাই ইয়াসফির নকল করতে পারতো৷ তাই ইয়াসফির চরিত্রে ঢুকতে তার তেমন অসুবিধা হবে না। এখন প্রয়োজন সঠিক সময়। এর মধ্যে ফ্লোরার সাথে সব মিটমাট করে নিতে চাইলো। কিন্তু ফ্লোরা কিছুতেই কোন সাইকোর সাথে থাকবে না। তাই পরিকল্পনা করে ফ্লোরাকেও মেরে ফেললো৷ আর এত সুন্দর করে একটা নাটক সাজালো যে ফ্লোরা রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে। এরপর লাশটাকে নিজের কাছে রেখে দিলো।
চারমাস আগেই অপুর সহয়তায় ইয়াসফিকে অপহরণ করলো মাহমুদ। এরপর নিজে ইয়াসফি সেজে সবাইকে একের পর এক বোকা বানাচ্ছিলো। কিন্তু তার পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে দিলো রুহানি।
★
‘ইয়াসফি, তোর কি মনে হয় রুহানি আসবে?
‘অবশ্যই আসবে। যেভাবে দাবার গুটি চেলেছো রুহের আসতেই হবে।’
ইয়াসফির কথায় আজিম সারোয়ার আশ্বস্ত হলো। সোফায় বসে থাকা লোক দুটোর দিকে আঙুল তাক করে জিজ্ঞেস করলো,
‘এ দুজন কে?’
‘মানসিক হাসপাতালের লোক। আজকে আমার ভাইয়ের খেলা শেষ করবো আমি। এতো নাটক ভালো লাগছে না।’
‘তোমরা দুজন ফেভিকল আঠার মতো এমন চিপকে থাকো কেন?’
সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে প্রশ্ন করলো মাহমুদ। ইয়াসফি ঠান্ডা দৃষ্টিতে মাহমুদের দিকে তাকালো। মাহমুদ তা গ্রাহ্য করলো না। সোফায় থাকা লোক দুটোকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো।
‘এরা কারা?’
আজিম সারোয়ার অভয়ে উত্তর দিলেন,
‘আমার লোক।’
মাহমুদ ঘেটে দেখলো না। আজকাল সে সব বিষয়ে নাক গোলানো ছেড়ে দিয়েছে। তার মতে ইয়াসফি নেই এখন তার রাজত্ব। মিনিট খানিকের মধ্যে রুহানির আগমন। সাথে তার সেপাই মাসুম। এসেই আজিম সারোয়ারের দিকে প্রশ্নের তীর ছুঁড়ে দিলো।
‘মামা, আপনি কেন মিথ্যে বলেছেন? আমার ইয়াসফি বেঁচে আছে।’
মাহমুদ চমকে গেলো। কিন্তু আজিম সারোয়ার, ইয়াসফি স্বাভাবিক। আজিম সারোয়ার একটা ইংরেজি পত্রিকার আট নম্বর পৃষ্ঠা বের করে রুহানির সামনে ছুড়ে মারলো।
‘এই দেখো এখানে স্পষ্ট ইয়াসফির মৃত্যুর খবর লেখা আছে। সাগর পাড়ে বেড়াতে গিয়ে এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু। দুই দিন পর মিললো বিভৎস মৃতদেহ।’
রুহানি খবরের কাগজ উঠানোর আগেই মাহমুদ ছোঁ মেরে সেটা নিয়ে গেলো। এটা তো তার সাজানো নাটকের একটা অংশ। যেটায় সে অন্য একটা ছেলেকে মৃত সাজিয়ে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করেছিলো। অস্থির গলায় বললো,
‘মিথ্যে কথা এটা ইয়াসফি নয়।’
আজিম সারোয়ার জোর দিয়ে বললেন,
‘তুমি কি করে জানলে?’
‘কারণ এটা একটা লাশ ছিলো। যাকে আমি হাসপাতালেের মর্গ থেকে এনে নিজের বদলে রেখেছিলাম। যাতে সবাই জানতে পারে মাহমুদ মারা গেছে। আমাকে ইয়াসফির জায়গায় দেখে কেউ সন্দেহ না করতে পারে।’
মুখ ফসকে সত্যি কথা বলে মাহমুদ জিভে কামড় দিয়ে ফেললো। এ কি করলো সে? এতদিনের লুকানো সত্য নিজের মুখে স্বীকার করে নিলো?
আজিম সারোয়ার ইয়াসফির কাঁধে হাত রেখে বললো,
‘আমার কাজ শেষ ইয়াসফি। এই সত্যি কথাটা মাহমুদের মুখ থেকে বের করার জন্য আমি তোর মৃত্যু নিয়ে মিথ্যে কথা বলেছিলাম। এবার তুই কি করবি কর।’
ইয়াসফি নামটা শুনে আবরো চমকালো মাহমুদ। সে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে। এবার তার নিস্তার নেই। ইয়াসফি তার চোখের সামনে ছিলো তবুও সে চিনতে পারেনি। চট করে ইয়াসফির ওপর আক্রমণ করতে এলে ঘাড়ের মধ্যে পিঁপড়ের কামড়ের মতো সূক্ষ্ণ ব্যাথা অনুভব করলো। এক সময় ঢলে পরে যেতে নিলে লোক দুটো ধরে ফেললো। একজনের হাতে ইনজেকশন। সেই মাহমুদকে অচেতন হওয়ার ঔষধ পুশ করেছে। এতশত কাহিনির মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝলো না রুহানি, মাসুম। দুজন ফ্যালফ্যাল করে ইয়াসফির দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াসফির মুখে তখন বিজয়ী হাসি। হাসতে হাসতে বললো,
‘নে ভাই তোর খেলা শেষ।’
আসলেই কি শেষ? উহু! মনে রাখতে হবে শেষ থেকেই শুরু হয়।
#চলবে