আশার হাত বাড়ায় পর্ব-১০+১১

0
201

#আশার_হাত_বাড়ায়|১০|
#ইশরাত_জাহান
🦋
সকালের সমস্ত কাজ শেষ করলো শ্রেয়া।বলা যায় না কোর্ট থেকে আসার পর মন মানসিকতা কেমন থাকে।মা আসবে আজ।সেও তো অনেক কথা শুনিয়ে দিবে।তাই শ্রেয়া এখনই সমস্ত কাজ শেষ করে নিচ্ছে।এতদিন অনেক পরিশ্রম করেছে।একটু শান্তির নিশ্বাস নিতে পারেনি।আজকে নিবে শান্তির নিশ্বাস।শ্রেয়ার কাজ শেষ হতেই অর্পা এসেছে।একটু পর তারা কোর্টে যাবে।

সৃষ্টি বেগম ও রিমলি ফজরের নামাজ পড়েই রওনা দেয়।রিমলি অন্যদিন ঘুম থেকে উঠেই রান্নাবান্না শেষ করে।আজকে ঘুম থেকে ইচ্ছা করেই উঠতে চায়নি।সৃষ্টি বেগম জোর করে নিয়ে আসে রিমলিকে।শেষে না পেরে শ্রেয়াকে লিখে দেয়,”আমরা আসছি রে আপু।এখন ট্রেনে উঠব।কোর্টে মনে হয় আমরা সময়মত পৌঁছাবো।কি জানি কি হয়!”
ম্যাসেজটি দিয়ে রিমলি বার কয়েক কল করে শ্রেয়াকে।যার কারণে ঘুম থেকে উঠে যায় শ্রেয়া আর দেখতে পেলো ম্যাসেজটি।বেশি দেরি না করে বুদ্ধি করে সব কাজ করে নিলো। পরে অলসতায় কাজ করতে মন চাইবে না।

অর্পা এসে শ্রেয়ার হাতে হাত রেখে বলে,”শোন আমি তোর ভালোর জন্যই এগুলো করেছি। যাই হয়ে যাক আমাকে ভুল বুঝবি না তো?”

একটু অবাক হলো শ্রেয়া।ভুল বোঝার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?শ্রেয়া অর্পাকে দেখে নিলো।তারপর বলে,”এখানে ভুল বোঝার কি আছে?”

শ্রেয়ার থেকে একটু দূরে সরে বিড়বিড় করে বলে ওঠে,”কোর্টে যেয়ে যখন দেখবি তোর বরের নামে কে মামলা করেছে তখন তো আমাকেই বকবি।”

সব কাজ শেষ করে নিজেকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুললো শ্রেয়া।খুব বেশি না সাজলেও নিজেকে যে একেবারে তুচ্ছ করা যায় না সেভাবে করে সাজিয়ে তুলেছে।অর্পার হাত ধরে অটোতে উঠে চললো কোর্টের দিকে।ট্রেন এসে থেমেছে মাত্র।ট্রেন আসার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।মেইন রাস্তা থেকে কিছুটা দূরেই স্টেশন।তাই তো ট্রেনের শব্দ সবার কর্ণপাত হতে থাকে।যেটা শুনেই শ্রেয়ার বুকের মধ্যে কেপে উঠলো।কখনও মায়ের মুখের উপর না করেনি এই মেয়ে।সেই মায়ের অগোচরে সে অনেক বড় স্টেপ নিয়েছে।মাকে ফেস করতেও ভয় লাগছে তার।অর্পা শক্ত করে হাত ধরে শ্রেয়ার।অর্পার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটটা প্রসারিত করে হেসে দেয় শ্রেয়া।একটু সাহস যুগিয়ে তুলতে পারে অর্পার কারণে।

কোর্টের সামনে এসে অটো থামতেই নেমে গেলো শ্রেয়া ও অর্পা।কোর্টের চারপাশ ভালোভাবে পরখ করে নিলো শ্রেয়া।অহরহ পুলিশের গার্ড।কিছু সাংবাদিক এসেছে সেখানে।ওরা ব্যাস্ত ওদের মতো।শ্রেয়ার এদিক ওদিক তাকানোর মাঝেই পুলিশের গাড়ি হাজির।সেখান থেকে রনিকে নামিয়ে আনছে শিহাব।রনির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো শ্রেয়া।মুখটা পুরো শুকিয়ে গেছে।যেটা দেখে শ্রেয়ার মনে তৃপ্তি মিললো।শ্রেয়াকে ক্রস করতে যাবে ওমনি রনির চোখ যায় শ্রেয়ার দিকে।রনির চোখে চোখ রেখে শ্রেয়া বলে,”জেলের মধ্যে আপ্পায়নটার বড্ড অভাব পড়েছিলো তাই না?যেটা বাড়ির বউ নামক কাজের মেয়েটা করতে পারে ওটা কি আর জেলের সুন্দরী রমণী করবে!করবে না।”

রনি দেখলো শ্রেয়ার মুখ।অনেকটাই বদলে গেছে শ্রেয়া।তবে শ্রেয়ার কথাগুলো গায়ে লাগেনি রনির।ঠোঁটে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে বলে,”এই জেলে বেশিদিনের জন্য থাকা হবে না।ওই যে দেখতে পাচ্ছো উকিল উনি আমার হয়ে লড়বে।”

রনির আঙুল বরাবর তাকালো শ্রেয়া।রনির হয়ে তো কোনো উকিল থাকার কথা না।শ্রেয়া অবাক হলো সাথে অর্পাও।শ্রেয়া ঘুরে তাকালো অর্পার দিকে।অর্পা উকিলের দিকে তাকিয়ে আছে।শিহাবের ইশারা পেয়ে রনিকে ভিতরে নিয়ে যায়।অর্পা আনমনে বলে ফেলে,”বড়ভাই যে বলেছিলো রনির হয়ে কোনো উকিল আসবে না।”

চোখ ছোট ছোট করে শ্রেয়া বলে,”এখানে স্যার কোথা থেকে আসবে?”

শ্রেয়ার কথার উত্তর দেওয়ার আগে পিছন থেকে একটি মেয়ে বলে ওঠে,”কি ভেবেছিলে তোমরা!আমার পিছনে পিছনে আমার ক্ষতি করতে চাইবে আমি চুপ করে দেখবো।এতটা কাঁচা খিলাড়ি আমি না।রনিকে পুলিশ অ্যারেস্ট করেছে শুনেই সন্দেহ হয়।তাই হো উকিল এনেছি।”

মেয়েলি কণ্ঠ শুনে পিছনে ঘুরে দাড়ালো শ্রেয়া ও অর্পা।দেখেতে পেলো সেই সুন্দরী রমণীকে।যার সাথে প্রেম চলে রনির।চোখে সানগ্লাস গায়ে মডার্ন ড্রেস।পুরো চেহারায় মেকআপের সৌন্দর্য।চুলের ফাঁকে ফাঁকে লাল রং করা।অর্পা মেয়েটিকে দেখে বলে,”লজ্জা হয় না তোমার?তোমাদের মতো মেয়ের জন্যই তো সংসার ভেঙ্গে যায় সরল সহজ মেয়েদের।”

অর্পার এমন স্বাভাবিক ব্যাবহার দেখে সন্দেহ হতে থাকে শ্রেয়ার মনে।মেয়েটি কাছে এসে বলে,”তোমার মতো মিডল ক্লাস ঘরের মেয়ে আমাকে লেকচার দেয়।এই অহনাকে?হাউ ফানি।”

রাগ জেদ মিশিয়ে অর্পা বলে ওঠে,”আসলেই তাই।তোমাদের মতো হাই লেভেলের মেয়ে যার কি না একটা সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে আছে যে ঘর থুয়ে পরের বর দেখে তাকে লেকচার দেওয়া মানায় না।”

কথাটা গায়ে লাগল অহনার।তবে পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে গেলো নিজের হায়ার করা উকিলের দিকে।শ্রেয়া এবার অর্পাকে বলে ওঠে,”ওই মেয়ের যে একটা মেয়ে আছে তুই জানলি কিভাবে?”

অর্পা নিরব থাকে।শ্রেয়া আরো প্রশ্ন করতে থাকে কিন্তু অর্পা কিছু বলতে পারছে না।এর মাঝেই বড় একটি গাড়ি আসে সেখানে।গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায় ফারাজকে। ফারাজের পর গাড়ি থেকে নামলো মিমি।মিমিকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সেও কিছুটা নার্ভাস।মিমির হাত ধরে চোখের ইশারায় শান্তনা দিতে থাকে ফারাজ।একটু এগিয়ে যেতেই শ্রেয়াকে দেখে অবাক হলো ফারাজ।অর্পাকে বলে,”মিসেস শ্রেয়া এখানে কেনো?আমাদের ফ্যামিলি প্রবলেমে মিসেস শ্রেয়াকে ইনভলব করা উচিত হয়নি বোন।”

অর্পা এমনি ঘাবড়ে যায় অহনার হয়ে উকিল দেখে।শ্রেয়া এক হাত দিয়ে ধাক্কা দিলো অর্পাকে।হুশ ফিরে আসতেই অর্পা বলে,”অহনা তো উকিল নিয়ে এসেছে।ওই রনির হয়ে কেউ লড়াই করবে।”

“লাভ হবে না।শক্ত পোক্ত প্রমাণ নিয়েই মাঠে নেমেছে এই ফারাজ চৌধুরী।আমার উকিলও কম না।কিন্তু মিসেস শ্রেয়াকে এখানে এনেছো কেনো?”

আমতা আমতা করে অর্পা বলে ওঠে,”আসলে বড়ভাই।তুমি যার নামে কেস করেছো তার ওয়াইফ শ্রেয়া।”

স্তব্দ হয়ে যায় ফারাজ ও শ্রেয়া।অর্পার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।মিমি এসে জড়িয়ে ধরে শ্রেয়াকে।বলে,”ওই পঁচা আংকেল তোমার হাসব্যান্ড আণ্টি?”

মিমির মুখে এমন কথা শুনে কিছু বলতে পারে না শ্রেয়া।কি বলবে সে।এইটুকু মেয়ে কতটুকু কি জানে এটা তো শ্রেয়া জানে না।তবে শ্রেয়া এটুকু বুঝতে পেরেছে এই অহনা হলো ফারাজ চৌধুরীর আর বউ মিমির মা।রনির জন্য ঘৃণা বাড়তে থাকে শ্রেয়ার মনে।সাথে ঘৃণা বাড়ছে অহনার জন্য।অর্পার দিকে তাকিয়ে শ্রেয়া বলে,”তুই আমাকে আগে বলিসনি কেনো?খুঁজে খুঁজে এমন কোম্পানিতে কাজ দিলি যেখানে গেলে কি না লোকের আঙুল উঠবে আমাদের দিকে।”

ফারাজ নিজেও বলে ওঠে,”আমাকে আগে বলনি কেনো?এখানে অহনার উকিল আছে।সে যদি বিষয়টা নিয়ে আমাদের দিকে উল্টো কেস ঘুরিয়ে দেয় অনেক বড় সমস্যা হবে।”

অর্পা এবার দুজনের দিকে তাকালো।তখনই মিরাজ এসে বলে,”ও বলেনি কারণ তোমরা দুজন এখন যেমন নরমাল আছো এটা প্রথম দিন থাকতে না। মানে শ্রেয়ার চাকরিটা হতে সমস্যা হতো।না শ্রেয়া তোমার কোম্পানিতে চাকরি পেতো আর না শ্রেয়া ওই কোম্পানিতে চাকরির জন্য যেতো।”

শ্রেয়া অর্পাকে প্রশ্ন করে,”তারমানে রনির ব্যাপারে তুই আগে সব থেকেই সব জেনেছিলি?”

মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে অর্পা বলে,”তোকে নিয়ে হাতির ঝিল যাওয়ার কয়েকদিন আগে বড়ভাই আমাকে আর রনিকে এক ঘরে করে সবকিছু বলে।এই যে রনি আর অহনার সম্পর্ক আছে এই ব্যাপারে।অনেক ছবি ও ভিডিও দেখে বড়ভাই জানায় রনি ও অহনার নামে এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ারের জন্য কেস করবে।শাস্তি পাবে এরা।বিশ্বাস কর দোস্ত ছবিতে রনিকে দেখে আমি স্তব্দ হয়ে যাই।তখন আমার সামনে তোর মুখটাই ভেসে আসে।আমার মনে হয় তোর কিছু হলে তুই কিভাবে চলবি।বড়ভাই অহনার পিছনে একটা স্পাই লাগিয়ে রাখে বিভিন্ন প্রমাণের জন্য।আমরা অহনাকে কিছু বুঝতে দেইনি।বড়ভাই ওদের ঠান্ডা মাথায় শাস্তি দিবে তাই অহনাকে ছার দিয়ে স্পাই লাগিয়ে রাখে।যার সাথে আমারও কথা হয়।আমি ওনার থেকে জেনে নেই ওরা রনি আর অহনা কোথায়। আর ইচ্ছা করে তোকে ওইদিন ওই রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাই।কারণ তুই আমাদের থেকে শুনে বিশ্বাস নাও করতে পারতি।চোখের দেখা সত্যি হয় যেটা কারো মুখে শুনে হতে চায় না।সেখানে তো রনি তোর বর।বড়ভাইয়ের থেকে শুনতে পারি বড়ভাই কেস করেছে আর শাস্তি খুব তাড়াতাড়ি হবে।তাই আমিও তাড়াহুড়ো করে বড়ভাইয়ের কোম্পানিতে তোর জন্য অ্যাপ্লাই করতে বলি।আমি ঢাকা শহরে এত তাড়াতাড়ি তোর জন্য চাকরি কোথায় পেতাম বল?আমার কাছে মনে হয় পরে যা হয় হোক তোর একটা চাকরি থাকলে নিজেকে শক্ত রাখতে পারবি।এই অন্যায়ের জন্য লড়তে পারবি।যেটা তুই করেছিস।তুই নিজেই দেখ তোর মধ্যে আগের মত জড়তা কাজ করছে না।কিন্তু আগে থেকে জানলে তোর মধ্যে এই জড়তা কাজ করতো।তুই এক পা এগোতে যেয়ে দশ পা পিছিয়ে যেতি।”

এবার শ্রেয়ার থেকে চোখ সরিয়ে ফারাজের দিকে তাকিয়ে অর্পা বলে,”আমার এই বান্ধবী আমার জন্য যা করেছে আমি কখনই ভুলব না।আমি কি করে ওর বিপদে ওকে ছেড়ে দেই।ও খুব সরল সহজ মনের মেয়ে। ঠকতে ঠকতে মেয়েটা একেবারে ভেঙ্গে পড়বে তাই আমি ওকে এই সাহায্য করেছি।হ্যাঁ আমি জানি আপনাদের জীবনে যেটা চলছে তাতে একসাথে কাজ করা সম্ভব না।কিন্তু আমি আর মিরাজ এটা ছাড়া উপায় পাইনি।আপনাকে আগে বলিনি যে শ্রেয়া রনির বউ কারণ আপনি তখন রনির পতন দেখতে চেয়েছেন।আপনার চোখে মুখে রনির জন্য হিংস্রতা দেখেছি আমরা।রনির বউ জানলে আপনি ওকে চাকরি দিতেন না।তাই ভয়তে আমি বলার সাহস পাইনি।শুধু এটুকুই জানিয়েছি যে আমার বান্ধবী ওর শশুর বাড়িতে অত্যাচারিত হয়।ওর এখন মুক্তির জন্য চাকরির প্রয়োজন।”

অর্পা আর কিছু বলতে যাবে ঠিক তখন শ্রেয়ার গালে ঠাস করে একটি চড় লাগে।কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির দিকে তাকাতেই সবাই দেখলো সৃষ্টি বেগমকে।চোখ দুটো বড় বড় করে লাল হয়ে আছে তার।চিন্তায় ঘুম হয়নি।দ্রুত হেঁটে এসেছে বলে এখন ক্লান্তিতে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। রিমলি হাত উচু করে আছে।উদ্দেশ্য ছিল সৃষ্টি বেগমের হাত ধরে আটকানো।কিন্তু পারলো না।কিছুক্ষণ শ্রেয়াকে দেখে সৃষ্টি বেগম বলেন,”অনেক সাহস বেড়েছে না তোমার?মায়ের ফোন ধরনা তুমি।ঢাকা শহরে একা একা থাকো। আর কত চিন্তায় ফেলবে আমাকে?”

শ্রেয়ার চোখ ভিজে আসে।সৃষ্টি বেগম নিজেও কান্না করে দেন।শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,”মা খারাপ হতে পারে কিন্তু সন্তানের এতটাও খারাপ দেখতে পারে না।তোর কিছু হয়ে গেলে কি আমি খুব সুখে থাকতাম?”

শ্রেয়া একটু শান্তি পেলো।যে ভয়টা পেয়েছিলো তার কিছুই হয়নি।সৃষ্টি বেগম বকেছে ঠিকই কিন্তু রনির জন্য না এভাবে কন্টাক্ট অফ রাখার জন্য।শ্রেয়া এবার নিজেও ওর মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম মা।তুমি ফুফুর বেলায় যেভাবে করেছিলে আমার বেলায় যদি এমন করো তাই।”

“ওরে তোর ফুফু প্রেগনেন্ট ছিলো।ওর শশুর বাড়ির লোকেরা আমাকে ধমকে রেখেছিলো যে তোর ফুফু আর তার বাচ্চাকে আমরা আমাদের ঘরে নিলে তোদের দুই বোনকে…।বুঝতেই পারছিস কি বলেছিলো?ওরা গ্রামের মাস্তান পরিবারের লোক।আমি কি করতাম বল?তোর বাবা নেই এখন।পরিবার দেখতে হয় আমাকে।আমাকে ভাবতে হয় তোদের দুই বোনকে নিয়ে।তোর তো তাও সংসার আছে কোনমতে থাকলেও সুরক্ষিত থাকবি।রিমলি ওর কি হবে?এমনি জোয়ান মেয়ে বাপ নাই বলে ওর দিকেও বখাটেদের নজর।আমাকে ওই বেকার মাস্তান রাফির বাপ প্রস্তাব দিয়ে রাখছে।আমি না করে দেই বলে যা নয় তাই রটাতে থাকে।আমি কি করে কি করতাম বলতে পারিস?”

শ্রেয়া ওর মায়ের মুখে হাত রেখে বলে,”সব ঠিক হয়ে যাবে মা।আমি চাকরি পেয়েছি।এই অর্পা আমাকে চাকরি খুঁজে দিয়েছে।এই তো এই মাসের বেতন পেয়ে তোমার কাছে ছুটে যেতাম।তোমাকে আর বোনকে নিয়েই আসতাম।”

শ্রেয়ার হাত শক্ত করে ধরে সৃষ্টি বেগম বলেন,”তোকে কোনো চাকরি করতে হবে না।দিন দুনিয়া খুব খারাপ।চাকরির নামে কত কি হয় জানিস?অফিসের বস খারাপ হয় ওদের নজর ভালো থাকে না।আমাদের অত টাকা পয়সা লাগবে না।সম্মানটা আগে ধরে রাখতে হয়।”

সৃষ্টি বেগম আশেপাশে না তাকিয়ে কথাগুলো বলতে থাকে।ফারাজের দিকে তাকিয়ে শ্রেয়ার একটু লজ্জা পেলো।সৃষ্টি বেগম এগোতে যাবে তখন মিমি হাত ধরে আটকে চোখ মুখ গোমড়া করে বলে,”আমার পাপা খারাপ না।তুমি না জেনে আমার পাপাকে বাজে বলবে না।”

মিমির দিকে তাকিয়ে আছেন সৃষ্টি বেগম।শ্রেয়া ওর মায়ের কাধে হাত রেখে বলে,”রনির কেস দেখবে না মা?ভিতরে ওর পাপের শাস্তি হবে কি না জানি না তবে ওর করা অন্যায়গুলো তো দেখো।”

মেয়ের কথায় মনে পড়লো আদালতে রনির বিচার করা হবে।উনি তো শ্রেয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করেছিলো।মায়ের মন কথা না বলাতে কু ডাকতে থাকে।তখন কি আর পরের ছেলের কথা মনে পড়ে?শ্রেয়ার কথা শুনে সৃষ্টি বেগম বলেন,”আচ্ছা চল ভিতরে।”

বেল বাজলো জোরে জোরে।শ্রেয়া ও অর্পা একে অপরকে দেখে নিলো।না জানি অহনার মত মেয়ের উকিল কি প্রমাণ করবে আজ।আদৌ কি অন্যায়ের বিচার হবে নাকি উকিল সব উল্টে দিবে?

চলবে…?

#আশার_হাত_বাড়ায় |১১|
#ইশরাত_জাহান
🦋
আদালতের ভিতরে সবাই তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় বসে পড়ে।শ্রেয়া মনে মনে দোয়া পড়ছে যেনো সত্যের জয় হয়।মিমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অহনার দিকে।মায়ের জন্য কান্না পাচ্ছে তার।কিন্তু মা যে নিকৃষ্ঠ এক ব্যাক্তি।ফারাজ মিমির পাশে বসা।মিমির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,”তোমার পাপা তোমার চোখের পানি সহ্য করতে পারে না মা।তোমার পাপাকে ভালোবাসলে অন্য কারো জন্য তুমি কান্না করবে না।”

বিচারক এসে বসেন তার আসরে।শুরু হয়ে যায় সকল কার্যক্রম।ফারাজের উকিল কিছুক্ষণ তার বক্তৃতা দিতে থাকেন।যেগুলো ছিলো যুক্তিযুক্ত।কিন্তু তারপর অহনার উকিল দাড়িয়ে কিছু বক্তৃতা দিয়ে বলে ওঠে,”খোঁজ নিয়ে জানা গেছে লাস্ট কিছুদিন হলো মিসেস শ্রেয়া মিস্টার ফারাজের কোম্পানিতে জব করছেন।এর আগে কিন্তু মিসেস শ্রেয়া মিস্টার রনির সাথে হ্যাপি লাইফ লিড করেছিলেন।এই জব পাওয়ার পর মিসেস শ্রেয়া ছেড়ে চলে আসেন তার পরিবারকে।ইনফ্যাক্ট তিনি তার মায়ের সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ রাখেননি।এর যুক্তিযুক্ত প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।আমি মিস্টার রনির বাড়িওয়ালাকে কাঠগোড়ায় এনে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাই।তার আগে তাদের জব অ্যাপয়েনমেন্ট পেপার আপনাকে দেওয়া হলো।”

বলেই শ্রেয়ার ইন্টারভিউ এর দিন যে সিভি জমা দেওয়া হয় তার ডকুমেন্ট দেওয়া হয় বিচারককে।তারপর বাড়িওয়ালাকে কাঠগোড়ায় এনে প্রশ্ন করা হয়,”মিসেস শ্রেয়া তার স্বামী সংসার ছেড়ে যান কত তারিখে?”

বাড়ীওয়ালার সোজা সাপটা উত্তর,”তেইশ তারিখ।”

অহনার উকিল আবারও বলে,”আর মিসেস শ্রেয়া জবের চান্স পায় বাইশ তারিখে।ইনফ্যাক্ট জব পেয়েই সে ছেড়ে আসে তার সংসার।এম আই রাইট?”

বাড়িওয়ালা এবার শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”এতকিছু জানি না।তবে শ্রেয়া তেইশ তারিখ সকালে বেড় হয় সেখান থেকে।”

তারপর উকিল একটু হেসে বলেন,”মিসেস শ্রেয়া ও মিসেস অর্পা দুজনে বেস্ট ফ্রেন্ড।তাদের প্রায় সময় দেখা সাক্ষাৎ হয়।আবার মিসেস অর্পার ভাসুর মিস্টার ফারাজ চৌধুরী।ঘটনা চক্রে মিসেস অর্পার ভাসুর মিস্টার ফারাজ চৌধুরী আর মিসেস শ্রেয়ার মানে মিসেস অর্পার বেস্ট ফ্রেন্ডের কন্টিনিউ দেখা সাক্ষাৎ হয়।এর মধ্যেই আবার এনারা সংসার ভাঙ্গার পাঁয়তারা করতে থাকেন।দুই তরফ থেকে কিন্তু মিস্টার ফারাজ চৌধুরী ও মিসেস শ্রেয়া ডিভোর্সের জন্য ব্যস্ততা দেখিয়েছেন।তাহলে তো বলা যায় আসলে রিলেশনশিপ মিস্টার রনি ও মিসেস অহনা নয় মিস্টার ফারাজ চৌধুরী ও মিসেস শ্রেয়া করেন।কিন্তু মিস্টার ফারাজ চৌধুরী তার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য কিছু করতে পারছিলেন না।এদিকে মিসেস শ্রেয়া তার মাকে ভয় পায়। আর মিস্টার রনির সাথে সেপারেশন হতে পারছিলেন না।তাই চুক্তি করে আগে তারা চাকরিতে জয়েন করেন।তারপর বুদ্ধি খাটিয়ে তারা তাদের স্বামী স্ত্রীর নামে এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ারের দাবি করে থাকেন।কারণ এর দ্বারা মিস্টার ফারাজ চৌধুরী ও মিসেস শ্রেয়ার কাজ উশুল হবে।ইওর ওনার,এখানে স্পষ্ট বোঝা যায় যে মিসেস অহনা পুরোপুরি নির্দোষ।কারণ তার কোনো প্রমাণ আমরা দেখতে পারছি না।কিন্তু মিস্টার ফারাজ ও মিসেস শ্রেয়া যে আগে থেকে সাক্ষাৎকার এটার যথাযথ প্রমাণ আমরা দেখছি।”

অহনার উকিলের মুখে এমন কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো শ্রেয়া ও অর্পা।অহনা এভাবে সবকিছু ঘুরিয়ে দিলো ভাবতেই পারছে না।রনি নিজেও কাঠগোড়ায় দাড়িয়ে হাসতে থাকে।অহনা জেলে এসে দেখা দিয়েছিলো রনির সাথে।সবকিছু খুলে বলে রনিকে।তাই তো রনি শান্তিতে আছে।বিচারক বলে ওঠে,”আপনার আর কিছু বলার আছে মিস্টার হাসান?”

কথাটি ফারাজের মামা রিফাত হাসানকে বলেন।যিনি ফারাজের উকিল।উনি এবার ফারাজের দিকে তাকালেন।তারপর একটি রহস্যের হাসি দিয়ে উঠে দাড়ালেন।তারপর বলেন,”ইওর ওনার,আমরা তো এতক্ষণ শুধু যুক্তিযুক্ত বয়ান শুনছিলাম।কিন্তু আমরা কি যুক্তিযুক্ত প্রমাণ দেখেছি?”

ভ্রু কুচকে তাকালো অহনা ও অহনার উকিল।রিফাত হাসান বলেন,”আমার বিপরীত বন্ধুর ভাষ্যমতে মিসেস শ্রেয়া ও মিস্টার ফারাজ রিলেশনশিপে ছিলেন।তাহলে তাদের শুধু জব এর প্রমাণ কেনো থাকবে?কিছু প্রণয়ের মোমেন্টও তো থাকবে।”

অহনার উকিল তাকালো অহনার দিকে।অহনা মাথা নাড়িয়ে না বুঝিয়ে দিলো।মানে তার কাছে কোন প্রমাণ নেই।রিফাত হাসান আবার বলেন,”মিসেস শ্রেয়া জবে জয়েন করেছেন আজ এক সপ্তাহ।তার এই কয়দিন ট্রেনিং ছিলো।তিনি সাকসেস হয়েছেন।কিন্তু জব পাওয়ার মানেই কি প্রেম হয়ে যায়। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত কাজ না করে এক্সাক্ট প্রমাণ পেশ করা উচিত।যেটা আমি আপনাকে দিতে পারব।”

এবার যেনো ভয় পেলো রনি ও অহনা।রিফাত হাসান একটি ভিডিও ক্লিপ অন করেন।যেটাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রনি ও অহনা রেস্টুরেন্টে একসাথে আলাপ করছে।এছাড়া কিছু ছবি দেখানো হলো।সবশেষে এমন একটি ভিডিও দেখানো হলো যেটা দেখে সবাই নিরব হয়ে গেলো।ভিডিওতে ছিলো,
মিমিকে বেধরম মরছে অহনা।মিমিকে মারতে মারতে বলে,”তোমার পাপাকে আমাদের ব্যাপারে কিছু বলবে না।যদি বলো তাহলে তোমার পাপা আর আমি আলাদা হয়ে যাবো।তখন তোমার সাথে কেউ মিশবে না। লোকে বলবে মিমি ভালো না।মিমি আসলে ওর মাকে ভালোই বাসে না।”
ছোট্ট মিমি কান্না করছে।অহনা অবাক হয়।এই ভিডিও কখন করা হলো।ফারাজ এবার অহনার দিকে তাকিয়ে রহস্যের হাসি দিতে থাকে।

রিফাত হাসান এবার বলেন,”এছাড়া আরও প্রমাণ আছে আমাদের কাছে।যেগুলো তে স্পষ্ট যে মিসেস অহনা একজন ডেঞ্জারাস মা।উনি অত্যন্ত লোভী মহিলা।যার কাছে টাকা পয়সা আসল আর বাইরের পুরুষের সাথে আসক্তি থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।যে মা তার মেয়ের কাছে এক্সপোজ হয় সেই মা ভালো পথে না এসে উল্টো তার মেয়েকে অত্যাচার করে।এটার থেকে নিকৃষ্ট মহিলা আমার দেখা মতে একটাও নেই।আমরা জানি মা নষ্ট হতে পারে কিন্তু সে তার সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ মা হয়ে থাকে।কিন্তু এখানে মিমি মেয়েটার পুরো সময়টা তার বাবার সাথে কাটায়।মিস্টার ফারাজের পুরো লাইফ হেল করে দেন এই মিসেস অহনা।ছোটখাটো একটি কোম্পানি নিয়ে হ্যাপি লাইফ ছিলেন ফারাজ চৌধুরী।মিসেস অহনার সাথে বিয়ে হওয়ার পর থেকে তার চাহিদা পূরণে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।বউয়ের সকল চাওয়া পাওয়া পূরণ করতে দিন রাত খাটতে থাকেন মিস্টার ফারাজ চৌধুরী।বিয়ের পর থেকে অল্প কিছুতে সন্তুষ্ট থাকতেন না মিসেস অহনা।প্রত্যেক পদক্ষেপে এটা চাই ওটা চাই।স্ত্রীর মন জোগাতে নিজেও দিন রাত পরিশ্রম করে যান।বাবা মা ভাই ও বউকে সুখে রাখতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকেন।ধীরে ধীরে সফলতা তাকে বিদেশে নিয়ে যায়।বিদেশে যাওয়ার আগে জন্ম নেয় আমাদের ছোট মিমি।দীর্ঘ চার বছর সেখানে পরিশ্রম করে এসে দেশের কোম্পানিকে অনেক উপরের লেভেলে গড়ে তোলেন তিনি।সারাদিন পরিশ্রম করার পরও মেয়েকে সময় দিয়ে আগলে রাখেন ফারাজ চৌধুরী।কিন্তু মা হিসেবে মিসেস অহনা মেয়েকে সময় দিতেই পারেনি।সন্দেহ তো তখন থেকেই শুরু হয়।ধীরে ধীরে ফারাজ চৌধুরী খোঁজ লাগান মিসেস অহনার ব্যাপারে।খোঁজ নিয়ে দেখা যায় মিসেস অহনার কলেজ লাইফের প্রেমিক এই মিস্টার রনি।তার কিছু ছবি আমরা মিস্টার রনির বন্ধুর থেকে কালেক্ট করেছি।”

বলেই ছবিগুলো দেখলো বিচারককে।ছবিগুলো স্পষ্ট বোঝা যায় পুরনো।রিফাত হাসান আবার বলেন,”মিসেস অহনার মূল উদ্দেশ্য ছিলো ফারাজ চৌধুরীর সম্পত্তি টাকা পয়সার দিকে।তার কাছ থেকে সবকিছু আদায় করে তিনি সময় কাটাতেন মিস্টার রনির সাথে।মিমির মতো বাচ্চাকে সময় না দিয়ে মহিলাটি অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক রেখে যান।অন্যদিকে মিস্টার ফারাজ অক্লান্ত পরিশ্রম করেন তার মেয়ে বউ ও পুরো পরিবারের জন্য।আমাদের দেশে অনেক নারীর স্বামী প্রবাসী।কিন্তু কেনো থাকে তারা?দিনরাত পরিশ্রম করে যে অর্থ উপার্জন করা হয় এই সব তো পুরুষ মানুষ তার বউ আর সন্তানের জন্য করে।কিন্তু বউ হিসেবে স্বামীর কষ্ট বোঝার অধিকার মিসেস অহনার রাখা উচিত ছিলো।এভাবে পরকীয়ায় লিপ্ত না হয়ে তার উচিত ছিলো ফারাজ চৌধুরীর সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া অথবা একটি মিউচুয়াল সেপারেশনে যাওয়া।যার একটাও মিসেস অহনা করেনি।এই সবকিছুর প্রমাণ আপনাদেরকে দেখানো হলো।”

বলেই সকল প্রমাণ বিচারকের সামনে আনা হয়।বিচারক সব দেখে অহনার উকিলকে জিজ্ঞাসা করে,”আপনার আর কিছু বলার আছে বা দেখানোর আছে?”

অহনার উকিল মাথা নত করে আছে।এতগুলো প্রমাণ দেখে কিছু বলতে পারছেন না।কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি বলেন,”সবকিছু মানলাম কিন্তু এটা আমরা বুঝলাম না মিসেস শ্রেয়া কেনো তার মাকে না জানিয়ে স্বামী ছেড়ে এলেন।মিস্টার রনির সাথে কি এমন হয়েছিলো যে মিসেস শ্রেয়া এভাবে বেড় হন?”

রিফাত হাসান এবার বলে ওঠেন,”এই কথাটি নাহয় মিসেস শ্রেয়া নিজেই বলুক।”

বিচারকের আদেশে শ্রেয়াকে কাঠগোড়ায় আনা হয়।অহনার উকিল প্রশ্ন করে,”আপনি কি চাকরি পাওয়ার পর এই সংসার ছেড়ে চলে আসেন?”

শ্রেয়া সোজাসুজি উত্তর,”হ্যাঁ।”

“কেনো?তার আগে কেনো ছাড়েন না সংসার?”

“আমি নিজের একটা পরিচয় করতে চেয়েছি।”

“মিস্টার ফারাজের অফিসেই কেনো?”

“কারণ ওখানে আমার রেফারেন্স ছিলো তাই।আজকাল চাকরি রেফারেন্স ছাড়া আসেনা।যদিও আসে তো ভাগ্য করে আসে।”

শ্রেয়ার এমন স্ট্রেট কথা শুনে রনি নিজেই হা হয়ে তাকালো শ্রেয়ার দিকে।শ্রেয়া এমন স্মার্টলি উত্তর করবে এটা ভাবনার বাইরে ছিলো রনির।অহনার উকিল বলে,”রেফারেন্স তো আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড।তার ভাসুরের কোম্পানিতে জব দিলেন।আপনি কেনো জবটি করতে রাজি হলেন।যেহেতু আপনার স্বামী আর তার স্ত্রী রিলেশনে আছেন।”

“কারেকশন!আমি জানতাম না আমার বসের ওয়াইফের সাথে এই লোকটির রিলেশন আছে।”

“তাহলে?”

“আমি নিজে থেকেই দেখে ফেলি এই লোকের নোংরা কর্ম।তার প্রমাণ আমার কাছে আছে।আমি নিজেও আমার মত আলাদা ডিভোর্সের জন্য এপ্লাই করেছি।যদি ডিভোর্সে এনারা সমস্যা করে তাই আমি প্রমাণগুলো কালেক্ট করি।কিন্তু বুঝিনি আমি ছাড়াও আরো কেউ তার নামে কেস করেছে।শুধু এটাই না এই লোক তার প্রেমিকার জন্য আমাকে দিনে রাতে নির্মম অত্যাচার করেছেন।শুধু যে উনি করেছেন এটা বললে ভুল হবে এনার পুরো পরিবার আমাকে অত্যাচার করত।”

“প্রমাণগুলো দেখাতে পারবেন?”

শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে ওর ফোনের মেমোরি কার্ড খুলে রিফাত হাসানের এসিস্ট্যান্টের হাতে দেন।মেমোরি কার্ড একটি পেনড্রাইভে ঢুকিয়ে ভিডিও ওপেন করতেই দেখা যায় সেদিনের করা সম্পূর্ণ ভিডিও।যেটা দেখে আতকে ওঠে সৃষ্টি বেগম।এরপর আরো কিছু প্রমাণ পেয়ে বিচারক রায় দেন,”সকল প্রমাণ সাপেক্ষ গ্রহণ করে দেখা যায় আসল অপরাধী মিসেস অহনা ও মিস্টার রনি।যেহেতু এই ধরনের কেসে মেয়েদের শাস্তি সরুপ কোনো আইন দাবিদার করা নেই তাই মিস্টার ফারাজ চৌধুরী আলাদা একটি কেস পেশ করেছেন।তার মতে মিসেস অহনা একজন জালিম মা এবং একজন প্রতারক।যে পদে পদে মানুষকে ঠকিয়ে নিজের স্বার্থ উশুল করে।এই ধরনের নারীর জন্য সকল নারীরা আজ দুর্বিসহ।যুক্তিযুক্ত প্রমাণ ও দাবিদারের ফলে মিসেস অহনা তার সমস্ত কিছু মিমির নামে লিখে দিবেন এছাড়া ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী মিস্টার রনিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে প্রদান করা হলো।”

বিচারকের এমন রায় শুনে থমকে যায় রনি ও অহনা।রুবিনা কান্না করে দেন।তার দুই মেয়ে একবার ভাই তো একবার মায়ের দিকে দেখতে থাকে।ঘাবড়ে গেছে সবাই।অহনা হাত মুঠ করে আছে।সে তার সর্বস্ব হারাবে এখন।ফারাজ একটি পেপার এগিয়ে দিলো অহনার সামনে।পেপারটি দেখিয়ে বলে,”এখানে সম্পত্তির বিষয় এবং ডিভোর্স দুটোই উল্লেখ আছে।সই করে দেও নাহলে আমাকে আবার স্টেপ নিতে হবে।”

অহনা আশেপাশে তাকিয়ে সই করে দিলো।বিচারক চলে গেছে তার রায় দেওয়ার সাথে সাথে।রনিকে নিয়ে যখন পুলিশ বেড় হতে নিবে ঠিক তখনই রনির মুখে একটি জুতা ছুড়ে আসে।সবাই কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির দিকে তাকালে দেখতে পেলো কাজটি সৃষ্টি বেগম করেছেন।রিমলি খুশি হয়ে সৃষ্টি বেগমকে জড়িয়ে ধরে।আজ আর রনি বা রুবিনা কেউ কিছু বলতে পারছে না।শ্রেয়া রনির সামনে এসে দাড়ালো।একবার মিমির দিকে তাকিয়ে আবার রনির মুখের দিকে তাকালো।শরীরের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে একটি চ”ড় মেরে বলে,”লজ্জা করে না একটি ছোট বাচ্চার মায়ের সাথে নোংরামি করতে?ছিঃ,তোমার মত মানুষ বেঁচে না থাকাই উত্তম।”

বলেই সরে আসে শ্রেয়া।মিমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অহনার দিকে।অহনার সই করার পর কাগজে ফারাজ নিজেও সই করে দেয়।মিমির চোখ থেকে পানি পড়ছে।মায়ের স্নেহ মমতা ছাড়াই বেড়ে উঠেছে মিমি।কিন্তু তারপরও মা বলে চিনেছে কাউকে।অর্পা এসে দাড়ালো মিমির কাছে।মিমিকে কোলে নিয়ে বলে,”কষ্ট পায় না মা।তুমি না ব্রেভ গার্ল।তুমি তো বলেছিলে পঁচা কাজের শাস্তি দিতে।তোমার পাপার সাথে মিলে পঁচা লোকদের শাস্তি দিবে।সে যতই তোমার মাম্মি হোক।তাহলে এখন কেনো কষ্ট পাচ্ছে আমার মিমি সোনা?”

মিমি জড়িয়ে ধরে অর্পাকে।কান্না করে দেয়।বলে ওঠে,”মাম্মি এত পঁচা কেনো।তোমরা আমাকে শিখিয়ে দেও কোনটা পঁচা কাজ কোনটা ভালো কাজ।তাহলে কেনো মাম্মিকে শিখিয়ে দেওনি?”

মিমির মাথায় হাত বুলিয়ে অর্পা বলে,”কারণ তুমি ছোট বাচ্চা।আমরা বড়রা তো ছোটদের সবকিছু শিখিয়ে দেই বড়দেরকে তো শেখানো থাকে।”

“পঁচা কাজ শিখিয়েছে সবাই মাম্মিকে।”
একটু জোরেই বলে ওঠে মিমি।ফারাজ এসে মিমিকে আগলে নেয়।শ্রেয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।নিজের জন্য না।অসহায় মিমির জন্য।কঠিন জীবন তো মিমি নিজেও পার করেছে।অহনার কাছে এসে শ্রেয়া দাড়াতেই অহনা মুখ ঘুরিয়ে নেয়।অহনাকে খুঁটিয়ে দেখলো শ্রেয়া।মুখ থেকে থু মেরে ছুড়ে মারলো অহনার মুখে।মিমির দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে,”মেয়েটাকে দেখেও কি এসব নোংরা জীবন থেকে বেড় হয়ে আসতে মন চাইতো না?”

অর্পা এসে শ্রেয়াকে ধরে বলে,”আরে এই মেয়ে তো সবসময় একটা কথাই বলে।ওর নাকি বেবী নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না।কো ইনসিডেন্টলি হয়েছে।লাইফ ইনজয় করবে।অল্প বয়সে বাবা মা বিয়ে না দিলে এতদিনে নাকি মহারানী বিদেশ টুর দিতো।আরও কত কি আছে।এই মেয়ের কর্মকান্ডের জন্য ওর বাবা মাও ঘরে বসে কান্না করছে।লোকলজ্জার ভয়তে আসতে পারেনি তারা।”

চলবে…?