আশার হাত বাড়ায় পর্ব-১৬+১৭

0
225

#আশার_হাত_বাড়ায় |১৬|
#ইশরাত_জাহান
🦋
ঢাকার বড় একটি রেস্টুরেন্টের সামনে দাড়ালো ফারাজের গাড়ি।শ্রেয়া গাড়ি থেকে নেমেই দেখতে থাকে আর শুকনো ঢোক গিলতে থাকে।হাতে থাকা ফাইলটি নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।ফারাজ ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি থেকে বের হয়।শ্রেয়াকে দেখে বলে,”ডোন্ট ওরি।আমি আছি তো।”

শ্রেয়া একটু শান্তি পেলো।ফারাজ সবকিছু সামলে নিবে। আর কোনো চিন্তা থাকে না।শ্রেয়াদের পিছনে আরেকটি গাড়ি এসে থামে।সেখান থেকে বের হয় এনি।এনি এসে শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে।শ্রেয়াকে দেখে বলে,”ইউ আর লুকিং গর্জিয়াস।”

“থ্যাংক ইউ,এনি।”

সবাই মিলে লিফটে উঠে যায়।ফারাজ তার ডান হাত বাড়িয়ে দেয় শ্রেয়ার দিকে।অপলক হয়ে তাকিয়ে আছে শ্রেয়া।হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মানে কি বুঝতে পারছে না শ্রেয়া।লিফটে তো উঠেছে।এনি ওদের পিছনে দাড়িয়ে দেখছে।কিছুক্ষণ পর ফারাজ তাকালো শ্রেয়ার দিকে।তারপর নিজের হাত দেখে বলে,”I didn’t want to hold your hand.Give me my file.”

বলেই ফারাজ ইশারা করে শ্রেয়ার হাতে শক্ত করে ধরে রাখা ফাইলের দিকে।লজ্জা পেলো শ্রেয়া।এনি মুচকি হেসে বলে,”আরে শেহনাজ, ফাইলগুলো একটু চেক করতে চায় হ্যান্ডসাম।তাই হাত বাড়িয়েছিলো।এটা বসদের একটি ট্র্যাডিশনাল ওয়ার্ক।এভাবে হাত বাড়িয়ে দিবে আর তার এসিস্ট্যান্ট তাকে ফাইল দিবে। এম আই রাইট হ্যান্ডসাম?”

“ইয়াহ একচুয়ালি আমিও অভ্যস্ত হয়েছি এমন বিহেভ করে।”

শ্রেয়া ওর হাতে থাকা ফাইল ফারাজকে দিয়ে দিলো।ওটা দেখতে থাকে ফারাজ।এর মধ্যেই লিফট এসে কাঙ্ক্ষিত ফ্লোরে থেমে যায়।ফারাজ ফাইলগুলো আবার শ্রেয়াকে দিয়ে আগে আগে যেতে থাকে।এনি ও শ্রেয়া তার পিছনে।রেস্টুরেন্টের বড় একটি টেবিলে বসে আছে বিদেশী ক্লায়েন্ট।ফারাজ এসে তাদের সাথে হ্যান্ডশেক করে।এনি ওদের কাছে আসতেই ওরা এনির ডান হাত নিয়ে হ্যান্ডশেক করে এনির হাতের পিঠে ছোট করে একটি কি”স করে দেয়।যেটা দেখে শ্রেয়ার চোখ বড় বড় হয় যায়।বিপাকে পড়ে যায় শ্রেয়া।এভাবে সে কিছুতেই করতে পারবে না। চাকরি করতে গেলে এগুলো করতে হবে নাকি?তাহলে তো চাকরিটাই বাদ।লোকগুলো এবার শ্রেয়াকে দেখে তাদের হাত বাড়িয়ে দেয়।শ্রেয়ার হাত কাপছে।ও হাত বাড়াবে না।ফারাজ এটা লক্ষ্য করে বলে,”she follows Bengali customs.”

“Oh!I see.She is looking so beautiful.”(একজন ক্লায়েন্ট বলে)

বিপরীতে আরেক ক্লায়েন্ট বিড়বিড় করে বলে,”Also hot.”

সকাল সকাল দরজা ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ভেংগে যায় অহনার।বিরক্ত লাগছে তার।মাত্র দশটা বাজে।দরজা খুলতেই দেখতে পেলো হুইল চেয়ারে করে বসে আছে মিসেস নাজমা।হামি দিতে দিতে অহনা বলে,”কি হয়েছে?এত সকাল সকাল ডাকছেন কেনো?”

“এত সকাল সকাল!এই মেয়ে তোমাকে না বলেছিলাম আমার সকালের খাবার তুমি রান্না করবে।করেছো?”

“না।”

“তোমাকে কি ফ্রীতে টাকা দিবো আমি?যাও ভালোভাবে রান্না করো।”

“একদিনে কি রান্না শেখা যায়?আমি তো রান্না পারি না।”

“সার্ভেন্ট আছে কিচেনে।গেলে দেখতে পাবে।ওরা শিখিয়ে দিবে।”

অহনা আর কোনো কথা না বলে চলে যেতে নেয়। আবারও পিছন থেকে মিসেস নাজমা বলেন,”নামাজ পড়েছো সকালে?অবশ্য ঘুম থেকেই তো মাত্র উঠলে।আমার খাবার রেডি নেই আর তুমি পড়বে নামাজ!”

“না পড়িনি।তো কি হয়েছে?”

“আমি বেনামাজীর হাতে কিছু খাই না।”

খুশি হয় অহনা।ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে,”তাহলে তো ভালো।আপনার সার্ভেন্টদের বলুন রান্না করতে।আমি আরেকটু ঘুমিয়ে নেই।”

চোখ ছোট ছোট করে মিসেস নাজমা বলেন,”তোমাকে কি আমি এখানে ফাও কাজে টাকা দিবো?”

“আরে দিবেন তো মাত্র ওই কয় টাকা।তার জন্য এত ফরমায়েশ কেনো?”

“শোনো মেয়ে তোমার কাছে ওটা ওই কয়টাকা হতে পারে কিন্তু আমার কাছে ওগুলো আমার ছেলের খাটনির টাকা।যাও নামাজ পড়ে আমার জন্য রান্না করো।”

“রান্নার সাথে নামাজের কি সম্পর্ক?”

“অন্যদের ব্যাপার জানি না আমি এমনটা করি তাই তুমি আমার মন মতো চলবে।নাহলে তোমার চাকরি বাদ।”

এবার বাধ্য হলো অহনা।বিরক্তির সাথে বলে,”আমি নামাজ পারি না।”

মিসেস নাজমা যেনো আকাশ থেকে পড়লেন।এই মেয়ে নামাজ পড়তে পারে না।বলেন,”দুনিয়ায় শিক্ষিত হয়ে লাভ নাই।আখিরাতের জন্য করা কাজগুলোই তোমার আসল শিক্ষা।তাই এভাবে ডেঙডেঙ করবে না।এবার থেকে আমি শিখিয়ে দিব।চলো আজকে শুধু ফরজ আদায় করবে।আজ থেকে তুমি আমার সাথে ঘুমাবে।ভোরে উঠে নামাজ পড়বে আমার সাথে।”

বিরক্ত হলেও অহনা চলে যায় মিসেস নাজমার সাথে।টাকার জন্য নিজের বাজে অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হবে।

বাজারের মধ্যে তর্ক বিতর্ক চলছে দুই ব্যক্তির।একজন সবজিওয়ালা আর আরেকজন সৃষ্টি বেগম।সবজিওয়ালা সবজির দাম যা বলছেন তা শুনে সৃষ্টি বেগম তেতে ওঠেন।তার ভাষ্যমতে দাম নাকি তিনগুণ বেশি। রিমলি পাশে দাঁড়িয়ে সৃষ্টি বেগমকে থামানোর ব্যার্থ চেষ্টা করছে।কোনো কিছুতে কাজ হচ্ছে না।সৃষ্টি বেগম জোরে জোরে চিল্লিয়ে বলেন,”আমি এসবের দাম জানি না ভাবছেন। আরে এগুলো তো আমাদের বাড়ির সামনে এমনি এমনি হয়।এসব সবজি আমাদের বাড়িতে হইলে লোকে আরো আমাদের বাসায় এসে সবজি নিয়ে যেতো।”

অমুক সবজি এত দামে কিনেছি তমুক সবজি এত দামে কিনেছি।এখন দুদিনে দাম বেড়ে গেলো?এরকম বলতে থাকে সৃষ্টি বেগম।চেঁচামেচির আওয়াজে সেখানে লোকজন জড়ো হয়।কথা কাটাকাটির মাঝে সবার কানে ভেসে আসে,”এখানে কি হচ্ছে?”

সবাই তাকালো সেদিকে।পুলিশের পোশাক পরে দাড়িয়ে আছে শিহাব।সৃষ্টি বেগম এবার শিহাবের কাছে এসে বলেন,”দেখো বাবা এই সবজি আমরা কিনতাম বিশ টাকা দিয়ে।এখানে উনি বলছে এর দাম ষাট টাকা।আমার কথা হইলো যশোরের থেকে দাম বেশি হোক তাই বলে এত? বিশের জায়গায় নাহয় ত্রিশে ধরা হোক।কিন্তু ষাট তো অনেক বেশি।”

শিহাব এবার সৃষ্টি বেগমকে কিছু বোঝাতে যাবে ওমনি রিমলি এসে সৃষ্টি বেগমকে বলে,”কি করছো মা?এমনি সময় তো মুখ ফোটে না তোমার।এখন কেনো এত তর্ক?”

ক্ষেপে গেলেন সৃষ্টি বেগম।রাগ দেখিয়ে বলেন,”আরে আগে না হয় চুপ থাকার কারণ ছিলো।আমার মেয়ে যখন রাস্তা পেয়েছে আমি কেনো নিজে ঠকব আর বাকিদের ঠকতে দিবো?আগে আমার সামর্থ্য ছিলো না আমিও প্রতিবাদ করতাম না।এবার থেকে করব।দেখি কে কি বলে।”

“আরে মা তুমি কি শুরু করছো?মানুষ কি বলবে?”

আর কোনো কথা হবার আগে শিহাব বলে ওঠে,”এটাই তো জাতীয় মায়ের পরিচয়।”

রিমলি এবার অবাক হয়ে বলে,”মানে?”

“মানে এই যে আণ্টি যেটা করছে আর কি।এই যেমন আমি এত সকালে ডিউটি আছে তাই রেডি হলাম কিন্তু আমার মা আমাকে বাজারের ব্যাগ দিয়ে বলে বাজার করতে।না করলে হরতাল শুরু করবে।তাই বললাম আর কি হরতাল করা মায়েদের জাতীয় কাজ।”

চারপাশের মানুষ হেসে দেয়।শিহাব এসে সবজিওয়ালাকে বলে,”উনি যে দামে বলছে সেই দামে বিক্রি করো।নাহলে কিন্তু তোমার দোকানের সবজি নিয়ে তদন্ত করা হবে। টাটকা সবজি তো তোমরা কোনোদিন দিবে না।অন্তত দাম তো কমিয়ে রাখবে।”

শিহাবকে দেখে ভয় পায় সবজিওয়ালা।ঢোক গিলে বলে,”আচ্ছা আচ্ছা।উনি যে দাম বলছে ওই দামে দিবো।নেন সবজি নেন।”

সৃষ্টি বেগম খুশি হয়ে সবজি নিতে নিতে শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে,”ধন্যবাদ বাবা।”

তারপর সবজিওয়ালাকে দেখে বলে,”এমনি সকাল দশটার পরে আসছি।তার উপর আবার দেখা যায় সবজিগুলো শুটকো শুধু পানি ছিটানো।এসব ভেজাল বিক্রি করো আবার চড়া মূল্য দিয়ে।এভাবে করলে আমরা না খেয়ে মরে যাবো।তাই অন্তত সবকিছু না হোক কিছু সবজির দাম কম রাখা ভালো।অন্তত শাক পাতাগুলো।এত দাম দিলে গরীবরা শাক ভাজিটাও তৃপ্তি করে খেতে পারবে না।”

শিহাব তাকিয়ে আছে রিমলির দিকে। রিমলির সেদিকে পাত্তা নেই।সে তো তার মতো সৃষ্টি বেগমকে শাক সবজি বেছে দিচ্ছে। রিমলির চোখে মুখে রোদ আসতে থাকে।যার কারণে চোখ পিটপিট করে কাজ করছে রিমলি।বাজারে লোকজন যাতায়াতের ফলে এমনটা হচ্ছে।সূর্য বরাবর থাকায় লোকজন যাওয়া আসার ফলে কখনও রোদ এসে বিরক্ত করে তো কখনও লোকেদের ছায়া।শিহাবের কাছে ভালো লাগছে রিমলিকে এভাবে বিরক্তির সাথে কাজ করতে দেখে।সৃষ্টি বেগম এবার শিহাবের দিকে ফিরে বলেন,”তুমি কি কিনবে বাবা?মনে তো হয় না আমাদের মত শাক সবজি কিনবে।”

রিমলি ব্যাগে সবজি ঢুকিয়ে শিহাবের দিকে ফিরে বলে,”উনি যাই কিনুক না কেনো আমাদের কি?চলো তো এখন।”

“মায়ের সাথে এভাবে কথা বলতে নেই।এটা ব্যাড মেনার্স।”

চোখ ছোট ছোট করে রিমলি।সৃষ্টি বেগম খুশি হয়ে বলেন,”শিখে নে কিছু।তুই তো উড়নচণ্ডী।দেখেছিস পড়াশোনা করে শিক্ষিত হলে চাকরি পাওয়া যায়।”

শিহাব এতক্ষণ সৃষ্টি বেগমকে খুশি করার জন্যই কথাগুলো বলতে থাকে। রিমলির দিকে তাকিয়ে বলে,”সমস্যা নেই শিখে যাবে(বিড়বিড় করে)”।একটু জোড়ে বলে,”আপনাদের বাসা কথায় আন্টি?আসেন আমি পৌঁছে দেই।”

রিমলি বলে ওঠে,”তার দরকার নেই।আপনি আপনার মত বাজার করুন।সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ।”

বলেই হাঁটতে থাকে রিমলি।শিহাব তার বন্ধুকে কল দিয়ে বলে,”ব্যাটা বাজার করে আমার মায়ের কাছে সব ভালোভাবে দিবি।আমি চলে যাচ্ছি।”

ওপাশ থেকে শিহাবের বন্ধু রামিম বলে ওঠে,”সে কি!আমি এতগুলো বাজার নিয়ে যাবো কিভাবে?”

“যেভাবে আমার টাকা মাইরিং করে খাওয়াস তোর বউকে সেভাবে।পুলিশের টাকা মিথ্যা বলে অনেক খেয়েছিস এবার বোঝ ঠেলা।আমি যাই তোর হবু ভাবীকে দেখে আসি।”

বলেই কল কাটে শিহাব।অবাক হলো রামিম।নিজেকে নিজে বলে,”টাকা মাইরিং করি বলে আমাকে দিয়ে কাজ করাবে!ব্যাটা আবার কোন মেয়ে জুটালো কে জানে?”

ল্যাপটপ দেখিয়ে ফারাজ সবাইকে সবকিছু বুঝিয়ে বলছে।শ্রেয়ার থেকে একেক ফাইল চাইলে শ্রেয়া সেগুলো দিতে থাকে ফারাজকে। ফাইলগুলো খুলে খুলে এক একটা স্টেপ বুঝিয়ে দিতে থাকে ফারাজ।সবকিছু দেখে একজন ক্লায়েন্ট বলে,”ওকে তাহলে আপনারা মডেল রেডি রাখবেন।আমরা পৌঁছে যাবো আপনার অফিসে।”

ফারাজ বুঝলো তাদের এই ডিল ফিফটি পার্সেন্ট কনফার্ম।বাকিটা মডেল তাকে যেভাবে ড্রেসের সাথে প্রেজেন্ট করে আর কি।সব শেষে সবাই উঠে পড়ে টেবিল থেকে।ফারাজ হ্যান্ডশেক করে বলে,”Nice to meet you.”

ক্লায়েন্টরাও বলে,”We also Mr Faraj Chowdhury.”

বলেই বিদায় নেয় ফারাজ শ্রেয়া ও এনি।একজন ক্লায়েন্ট তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার যাওয়ার দিকে।লিফটের মধ্যে এসে এনি বলে,”আমরা আমাদের ডিলটি পেয়ে যাবো।এটা আমার মন বলছে।যেভাবে দিন রাত এক করে কাজ করছি আমরা।কোম্পানি হাইপে উঠতেই হবে।”

ফারাজ এবার শ্রেয়াকে বলে,”সবকিছু মন দিয়ে শুনেছেন মিস শ্রেয়া।আমাদের কিন্তু নেক্সট প্রজেক্ট হিসেবে মডেলকে আনা হবে।ঢাকার বেস্ট পার্লার আর মডেলদের নাম্বার আমার কাছে আছে।আপনি ওদের সাথে কাউন্সেলিং করে ওদের ইমপ্রেস করবেন।পাঁচজন মডেলের মধ্যে আপনার আর এনির যাকে পছন্দ হবে তাকে দিয়ে আমরা কোম্পানির প্রমোট করব।”

“ওকে স্যার।”(একটু ভীত ভাব নিয়ে।তবে শ্রেয়ার বিশ্বাস সে পারবে।সাথে তো এনি আছে)

ফারাজ আর শ্রেয়া মিলে এনিকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে ওঠে।ঠিক তখনই ফারাজের ফোন বেজে ওঠে।ফোন হাতে নিয়ে ফারাজ দেখতে পায় মিমির স্কুল থেকে কল এসেছে।ফারাজ ভ্রু কুঁচকে বলে,”মিমির স্কুল থেকে কল কেনো?”

ভাবতে ভাবতেই রিসিভ করে ফারাজ।ওপাশ থেকে মিমির প্রিন্সিপাল বলেন,”মিস্টার চৌধুরী বলছেন?আমি মিমির স্কুল প্রিন্সিপাল।”

“জি ম্যাম।আমি মিমির বাবা ফারাজ চৌধুরী।”

“একচুয়ালি আপনাদের পার্সোনাল ইস্যু নিয়ে এখানে বাচ্চাদের মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি হয়েছে।মিমি মেয়েটি খুবই ডিস্টার্ব এখন।কান্না করছে।অবশ্য এতক্ষণ সে অনেক তর্ক বিতর্কে ছিলো।আমি প্রত্যেক গার্জিয়ানকে ডেকেছি।আপনাকেও আসতে হবে।”

পাশ থেকে মিমির কান্না ভেজা কণ্ঠে চিল্লানো শোনা যায়।মিমি বলে,”নো আমার পাপা বেস্ট আমিও বেস্ট।তোমরা পঁচা।তোমরা আমাকে আগে বাজে কথা বলেছো।”

ফারাজ বুঝলো তার আর অহনার ব্যাপার মিডিয়া হওয়ার কারণে এখন মিমিকে কথা শোনাচ্ছে।ফারাজ বলে,”আমি আসছি।”

কল কেটে ফারাজ ড্রাইভারকে বলে,”মিমির স্কুলের দিকে চলেন আংকেল।”

শ্রেয়া আতঙ্কের সাথে বলে,”এনি প্রবলেম স্যার?”

“আমার করা কাজ আমার মেয়ের উপর ইফেক্ট পড়ছে।ওকে ওর ফ্রেন্ডদের সামনে অনেক কিছু নিয়ে ফেস করতে হচ্ছে।”

গাড়ি এসে থামলো মিমির স্কুলের সামনে।ফারাজ সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বলে,”আপনি আসেবন না মিস শ্রেয়া।লোকে আপনাকে আর আমাকে একসাথে দেখলে সন্দেহ করে বাজে মন্তব্য রটাবে।আমি ফেস করলেও আমার মেয়ে ছোট মানুষ।ও ফেস করতে পারবে না।”

অগত্যা শ্রেয়া বের হলো না।ফারাজ ঠিক কথাই বলেছে।এখন মিমির এই অবস্থায় সে বের হলে বাকি গার্জিয়ান অনেক কথা সৃষ্টি করবে।

চলবে…?

#আশার_হাত_বাড়ায় |১৭|
#ইশরাত_জাহান
🦋
প্রিন্সিপালের রুমে এসে দাড়ালো ফারাজ।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলো মিমি একটি বেঞ্চে বসে মাথা নিচু করে কান্না করছে। কান্না করার ফলে মিমির চোখমুখ লাল হয়ে আছে।মেয়েকে এই অবস্থায় দেখে বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো ফারাজের।ভিতরে ঢোকার জন্য প্রিন্সিপালের অনুমতি নিতেই সবাই তাকালো দরজার দিকে।বাবার কণ্ঠ পেয়ে মিমি নিজেও চোখ উপরে করে।দৌড়ে গিয়ে ফারাজকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমি এই স্কুলে পড়বো না।এখানে ম্যাম খারাপ।অন্যের কথা শুনে আমাকে খুব বকা দেয়।আমার মাম্মি খারাপ তাই নাকি আমিও খারাপ।কি কি পঁচা কথা।”

মিমির কথাগুলো শুনে হাত মুঠ করলো ফারাজ।মেয়ের এই কষ্ট তার সহ্য হয় না।চোখমুখ লাল হয়ে এসেছে।মিমিকে এক হাতে নিজের সাথে রেখে রুমে ঢুকে গেলো ফারাজ।প্রিন্সিপালের সামনে বিনা অনুমতিতে চেয়ার টেনে পায়ের উপর পা রেখে বসে।মিমিকে বলে,”তুমি ওই বেঞ্চে বস মা।”

মিমি লক্ষী মেয়ের মতো বসে পড়ে সেখানে।ফারাজ এবার মিমিকে প্রশ্ন করে,”তোমাকে কোন ম্যাম এমন কথা বলেছে?”

মিমি আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দেয়।ফারাজ তাকালো ম্যামের দিকে। ফারাজের তাকানো দেখে ভয় পেলো ম্যাম।এতক্ষণ প্রিন্সিপাল তাকে বকেছে।মূলত বকেছে ফারাজের পাওয়ার আছে তাই।ফারাজ ম্যামের দিকে তাকিয়ে কণ্ঠ মোটা করে বলে,”তো কতটুকু জানেন আমার মেয়ের সম্পর্কে?”

ম্যাম থতমত খেয়ে যায়।মাথা নিচু করে বলে,”মূলত আমি প্রথমে কিছু জানতাম না।বেল বাজাতে আমি ক্লাসে যাই।দেখি মিমি আর শান মারামারি করছে।সবার থেকে শুনলাম মিমি আগে শানকে মারতে থাকে।অন্যায়টা মিমির বেশি।এভাবে কারো গায়ে হাত তোলা তো অন্যায়।”

“একজন টিচার হয়ে স্টুডেন্টকে উল্টা পাল্টা কথা বলাটা কোন ধরনের ন্যায়?”

ফারাজের এমন কথায় আতকে উঠে ম্যাম।কারণ ফারাজ গম্ভীর হয়ে কথাগুলো বলছে।ম্যাম আবার বলে,”আমি অভাবে কিছু বলিনি।যা বলার শানের মা বলেছিলো।মিমি ওনার সাথে বেয়াদপি করে তাই আমি বকা দেই।”

ফারাজ এবার মিমির দিকে তাকালো।তারপর ম্যামকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনাদের মতে আমার মেয়ে তার মায়ের মত তাইতো?”

ম্যাম কোনো উত্তর দিলো না।কিন্তু শানের মা বলে ওঠে,”একদমই তো তাই। দেখাই তো যাচ্ছে আমার ছেলেটার হাতের কি অবস্থা।”

ফারাজ দেখলো শানকে।সাথে হাতে হালকা কোনো রকমে ছিলে গেছে।তবে একদিনেই শুকিয়ে যাবে।অতঃপর তাকালো মিমির দিকে।মিমির হাতে আরো বেশি ক্ষত।জায়গায় জায়গায় ছিলে কাচা মাংসের রক্ত দেখা যাচ্ছে।যেটা শানের আঘাতের থেকেও বেশি।ফারাজ এবার মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বলে,”কোন ক্ষতটা দেখতে বলছেন আপনি?আপনার ছেলের হাতের সামান্য ক্ষত নাকি আমার মেয়ের হাতের বড় বড় ক্ষতের সাথে মনের ক্ষতটাও?”

মহিলাটি চোখ মুখ ছোট করে।ফারাজ টেবিলে জোরে আঘাত করে বলে,”আমার মেয়েকে নিয়ে কথা বলার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে?”

মহিলাটি একটু কেঁপে উঠলেও খোচা মেরে বলে,”এসবের অধিকার দেওয়া লাগে নাকি।খবরে খবরে এসেছে আপনার বউ পরকীয়ায় লিপ্ত।আপনি তার কেস করেছেন।এই মেয়েও তো তার মাকে নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না।এসব মেয়েদের সাথে মিশলে ভালো স্টুডেন্ট খারাপ হয়ে যাবে।সবাই শিখবে মায়েরা ভালো হয় না।যার মা ভালো না সে কেমন হবে বোঝা যায়।গাছ যেমন ফল তো তেমন হবেই।”

ফারাজ হাতের আঙুলগুলো ফুটিয়ে নিলো।তারপর মহিলাটির উদ্দেশ্যে বলে,”একচুয়ালি আপনি ভুল বলেননি।গাছ যেমন ফল তো তেমন হবেই।এই যেমন আপনি একজন অসভ্য অভদ্র মহিলা আপনার সন্তান তেমন হয়েছে।”

প্রিন্সিপাল ঢোক গিলছে।এই ফারাজ সহজে রাগে না আর রাগলে ছেড়ে দেয় না। স্কুলের সেভেন্টি পার্সেন্ট শেয়ারের আসে ফারাজের তরফ থেকে।তার মেয়েকে আজ হেনস্থা করেছে।স্কুল ভেঙ্গে না গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়।মহিলাটি কম না।মহিলাটি এবার ফুঁসে উঠলো।তেজ দেখিয়ে বলে,”আপনারা পুরো পরিবার খারাপ।বাজে পরিবারের বাজে সন্তান।এদের দ্বারা স্কুলে ভালো কিছু হবে না।দিন দিন এদের এসব বাজে কাজ দ্বারা ছাত্রছাত্রী প্রভাবিত হবে।আমার ছেলে তো খবর দেখেই বলেছিলো এই মেয়ে তার সাথে পড়ে তার মা এমন বাজে!আবার আপনার এক্স ওয়াইফের মুখে জনগণ চুন কালি মেখেছে।এগুলো তো সব পরিবার দেখেছে।যেটা দেখে ওদের কাছে মনে হয়েছে যে মিমির মা খারাপ মহিলা।তাই বাচ্চারা সেটা নিয়ে গসিপ করেছে।আপনারা যেটা দেখাবেন বাচ্চারা সেটাই শিখবে।”

ফারাজ স্মিত হাসলো।তারপর বলে,”আমার মেয়ের সাথে ঘটে যাওয়া সময়টাতে কাউকে কাছে পাইনি।সার্ভেন্ট হিসেবে আপনাকে রাখলে ভালো হতো।ইউ নো আপনি একজন বেস্ট কাউন্সিলর।গড়গড় করে মনগড়া মন্তব্য দিতে জানেন।কিন্তু মিনিমাম কমনসেন্স রাখেন না।আমার মেয়ে একটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিলো।এই পিচ্ছি মেয়েটা তার মাকে ছেড়ে দেয়নি।অন্যায়কে অন্যায়ের নজরে দেখেছে।সে কিন্তু নোংরা লোকের শাস্তি দিতে বাধা দেয়নি।আমার মেয়ে আমার মত হয়েছে।তার মায়ের মত না।একটা কথা ঠিক গাছের ফল গাছের মতোই হবে।কিন্তু আপনারা কোন দৃষ্টিতে গাছকে দেখছেন এটাও একটু ভেবে দেখুন।আমার মেয়ের জন্য আমি প্রকৃত গাছ হয়ে আছি।যে তাকে আকড়ে ধরে রাখবে ছায়া হয়ে পাশে থাকবে ন্যায় অন্যায় শিখিয়ে দিবে বেয়াদপি করলে শাসন করবে।অন্যায়কে আপোষ করে চলেনা এই ফারাজ চৌধুরী।সে তার স্ত্রী সন্তান বা আপনাদের মত বাইরের লোক হোক। আর একটা কথা।কি যেনো বললেন? হ্যাঁ আপনার ছেলে খবর দেখেই এমন মন্তব্য করেছে।বাচ্চারা যেটা দেখবে সেটাই শিখবে। ইউ আর রাইট।কিন্তু আপনি তো বাচ্চা নন।আপনি কি বুঝেন না একটি বাচ্চার মনের উপর দিয়ে এই সময় কি কি যায়?আপনি কি পারতেন না মা হারা মেয়েটার হয়ে আপনার সন্তানকে বুঝিয়ে বলতে যে ওর মা যেমন হোক ও এই বয়সে অন্যায়কে সাপোর্ট করেনি।এইটুকু বাচ্চা তার বাবার কষ্ট বুঝেছে।সে নিজের জন্য লড়েছে।মিমি একজন ব্রেভ বাচ্চা।এটা কি আপনার সন্তানকে বোঝানো যেতো না?আপনারা এটা করেননি।বাবা মায়ের সঠিক শিক্ষা না পেলে সন্তান কখনও সুশিক্ষা পায় না।ওরা যেটা দেখবে সেটা তো ওদের মাথায় সেট হবেই কিন্তু বাবা মা হয়ে সন্তানকে প্রোটেক্ট তো আপনাকে করতে হবে।আমার মেয়ের জীবনে তার মা যেমন হোক মেয়ে কিন্তু আমার কোনো কু শিক্ষা পেয়ে বড় হয়নি।আমি বাবা হয়ে আমার মেয়েকে যেভাবে বড় করেছি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আপনার ছেলে সেভাবে বড় হয় না।”

মহিলাটি গলা উঁচিয়ে বলে,”কি বলতে চান আপনি?আমি আমার ছেলেকে শিক্ষা দিতে পারিনি।”

ফারাজ এবার শানকে ইশারা করে কাছে ডাকে।শান তার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।প্রিন্সিপাল বলেন,”তোমাকে ডাকছে শান।কাছে যাও।”

শান আস্তে আস্তে পায়ে ফারাজের কাছে আসে।ফারাজ বলে,”তোমার নাম?”

“শান।”
“রোল কত?”
“সাত।”

“তোমার সাথে মিমির আগে কি নিয়ে কথা হয়েছিলো?”

শান একটু ঘাবড়ে যায়।ফারাজ বুঝতে পেরে বলে,”ভয় নেই।আমি তোমার মায়ের মত চেঁচামেচি করবো না বা মারবো না।”

মিমি এবার কান্নার মাঝেই মিচকি হাসি দেয়।শান নিজেও হাসে।তারপর বলে,”আমরা পিকনিকে যেতে চাই তাই সবাই একেক জিনিস নিয়ে কথা বলি।এর মধ্যে মিমি বলে ওর বিভিন্ন জিনিস নিয়ে যাবে।ওর কাছে ছোট ক্যামেরা থাকে।তারপর আরো অনেক কিছু।যেগুলো নিয়ে কথা বলতে বলতে আমরা ওকে বলি পিকনিকে ওকে নিতে চাই না।এমনিতেও ক্লাসে ওর সাথে মিশি না।”

“কেনো?”

“কারণ বাজে মানুষের সাথে মিশতে নেই।”

“মিমিকে কেনো বাজে মনে হলো ?”

“ওই যে ওকে আমরা খবরে দেখেছি।ওর মাকে তো সবাই মারছিলো।”

শানের হাত ধরে ফারাজ বলে,”যে খারাপ মিমি তাকে শাস্তি দিয়েছে।এটা কি মিমির অন্যায়?”

“না।”

“মিমি যদি অন্যায়কারীকে শাস্তি না দিয়ে মুখ বুজে সহ্য করতে করতে আরো কষ্ট পেতো তখন তোমাদের ভালো লাগতো?”

শান চুপ থাকে।ফারাজ বলে,”তুমি যখন জানলে মিমির মা খারাপ তখন তুমি ওকে দূরে রাখো একবারও ভেবেছো ও কতটা কষ্ট পেয়েছে?ও যে ওর মাকে হারিয়েছে।এটা কি কষ্ট না?”

শান মাথা নাড়ালো।ফারাজ আবারও বলে,”মিমির সাথে যেটা হয়েছে এটাতে মিমির দোষ নেই।এটা ওর ডেস্টিনি। আর ও ব্রেভ গার্ল হয়ে লড়াই করেছে।এর জন্য আমাদের কি উচিত জানো?আমাদের উচিত মিমিকে আরো বেশি ভালোবাসা।ওর তো এখন কষ্টের সময়।ওকে এর ভিতর আরো কষ্ট দেওয়া কি ভালো হবে?”

শান এবার মাথা নাড়িয়ে বলে,”না।”

“তাহলে আজ থেকে মিমির সাথে বন্ধুত্ব করে রাখবে তো?”

“হ্যাঁ।”

মিমি খুশি হলো।প্রিন্সিপালের দেহে আত্তা ফিরে এলো।ফারাজ এবার শানের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”শানের সাথে আমি মাত্র পাঁচ মিনিট কথা বলেছি।এই পাঁচ মিনিটে শান ছেলেটা কিন্তু আমাকে ভয় পেয়ে চলেনি।বরং বন্ধুত্বের মতো মিশেছে।ইনফ্যাক্ট মিমির প্রতি ভুল ধারণা দূর হয়েছে।কিন্তু আপনি মা হয়ে এই কাজটা করতে পারলেন না। সরি টু সে আপনাদেরকে বলা উচিত ব্যার্থ মা।যে সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দেয় না।তারা ভাবে সময় হলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু না বাচ্চাদের ছোট থেকেই সবকিছুর প্রতি জ্ঞান অর্জন করাতে হয়।ওরা ছোট থেকে যেটা শিখবে বড় হয়ে ওটা মেনে চলবে।আজকাল বাবা মা বাচ্চাদের সামনে খাবার রেখে একটি ফোন ধরিয়ে দেয়।বাচ্চারা ফোন দেখে খেতে থাকে।”

কথার মাঝে শান বলে ওঠে,”আমিও ফোন দেখে খাই।আম্মু টায়ার্ড হয়ে যায়।তাই একটু রেস্ট নেয়।”

ফারাজ স্মিত হেসে বলে,”মিমি কিন্তু আমার সাথে খায়।এই যে এখন অফিসে যাবে আমরা ক্যান্টিনে একসাথে খাবো।ও কিন্তু ফোন অভ্যস্ত না।ও ছোট থেকেই পুতুল নিয়ে খেলে।এখন বয়সটা তুমি যেভাবে তোমার সাথে পার করবে বড় হয়ে সেভাবেই মেমোরি করে রাখতে পারবে।”

প্রিন্সিপাল এবার শানের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”আই মাস্ট সে।শান যেভাবে বড় হচ্ছে এতে করে বাচ্চাদের উপর বাজে প্রভাব পড়ে কিন্তু মিমি মেয়েটার জীবন চলা কঠিন হলেও সে কিন্তু বাজে প্রভাবের উপর দিয়ে যাচ্ছে না।তার বাবা একাই তাকে সঠিক শিক্ষা দিচ্ছে।যেটা আপনারা স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে এক সন্তানকে দিতে পারছেন না।”

শানের মা এবার মাথা নত করে।ফারাজ এবার উঠে দাড়ায়।তারপর বলে,”আমি আমার মেয়েকে বুঝিয়ে বলব। কাল থেকে ও স্কুলে নরমাল থাকবে।কিন্তু বাকিরা কেমন চোখে আমার মেয়েকে মেনে নিবে এটা আমার দেখার বিষয় না।এই বিষয়ে আপনাদের উপর দায়িত্ব দেওয়া আছে শুরু থেকেই।যেহেতু উনি নতুন টিচার তাই আজকের মতো বিষয়টা আগালাম না।”

বলেই মিমির হাত ধরে চলে যেতে নেয় ফারাজ।কিছুদূর হেঁটে ফারাজ বলে ওঠে,”কথায় কথায় লাভ লস না ভেবে অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়ার চেষ্টা করুন।শিক্ষক হয়ে যদি সঠিক শিক্ষা না দিয়ে গার্জিয়ান ডাকতে হয় তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান না থাকাই শ্রেয়।আমার সাথে এই স্কুল জড়িয়ে আছে বলেই যে আমাকে আপনি সাপোর্ট করবেন এটা অন্যায়।আপনাকে দেখতে হবে কে অন্যায় করে কে অন্যায় করে না।এটা দেখা আপনার কর্ম নয় যে কে পাওয়ার নিয়ে চলে আর কে পাওয়ার নিয়ে চলে না।”

কথাগুলো প্রিন্সিপালের উদ্দেশে বলে ফারাজ।বলেই চলে যায়।গাড়িতে উঠে মিমি অবাক।শ্রেয়াকে দেখে বলে,”তুমি এসেছো?”

শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে বলে,”হ্যা।”

চোখ ছোট ছোট করে মিমি বলে,”ভিতরে যাওনি কেনো?”

ফারাজ সিটবেল্ট বাঁধতে বাঁধতে নিজে থেকে বলে,”আমি বলেছি তাই।”

ঠোটটা একটু উচু করে মিমি বলে,”ওহ।”

শ্রেয়া মিমির এই ভঙ্গি দেখে হেসে দেয়।গাড়ি চলতে থাকে।শ্রেয়াকে কিছুক্ষণ দেখতে থাকে মিমি।তারপর শ্রেয়াকে উদ্দেশ্য করে মিমি বলে,”Can I hug you?”

শ্রেয়া দুই হাত মেলে বুঝিয়ে দেয় হ্যাঁ।মিমি এসে জড়িয়ে ধরে শ্রেয়াকে।শ্রেয়া মিমির মাথা থেকে ক্লিপ খুলে দেয়।তারপর মিমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।এই দৃশ্য সামনের ছোট আয়না দিয়ে দেখতে থাকে ফারাজ।ভাবতে থাকে অহনা থাকলে হয়তো এভাবে আজ মিমিকে ফেস করতে হতো না।আবার মিমি পারফেক্ট ফ্যামিলি পেতো।ভেবেই দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকে।

*******
চোখমুখ খিটমিটে ভাব করে কাজ করছে অহনা।সেই সকাল থেকে গরু খাটা খাটতে থাকে। ফোলা ফোলা দুটো রুটি আর সবজি ভাজি খেয়েছে সকালে।এখন আবার ভাত মাছ রান্না করতে হবে।তারপর মিসেস নাজমাকে নিয়ে শাওয়ারে যেতে হবে।এটা শুনেই মন মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।এসব কাজে অভ্যস্ত না সে।মিসেস নাজমা এসেছে অহনার কাছে।অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”কতদূর?আজান দিয়েছে তো।আমাকে গোসলে নিয়ে যাবে না?নামাজ পড়তে হবে তো আমার।”

তেজ দেখিয়ে অহনা বলে,”নিজে নিজে গোসল করেন না!আমাকে কেনো বলছেন?”

“ভারী বেয়াদপ মেয়ে তো তুমি।তোমাকে টাকা দিয়ে রাখছি কেনো?আমার আয়া হয়ে থাকবে বলেই তো।নাকি তুমি ভাবছো আমার ছেলের বউ বানাবো বলে পুতুল সাজিয়ে রাখবো?এমন ভুল করো না মেয়ে।আমার বড় এক নাতি আছে।এসএসসি দিয়েছে এখন ইন্টার পড়ে।”

পেঁয়াজ হাতে নিয়ে কাটার চেষ্টায় ছিলো অহনা।মিসেস নাজমার কথায় বিরক্ত হয়ে বলে,”আমার না শখ নেই আপনার ওই বুইড়া ছেলেকে বিয়ে করার।মাথার চুল থেকে দাড়ি সব তো সাদা।বুইড়া ব্যাটা বিয়ে করতে নাকি আমি লাফাচ্ছি!”

“বেয়াদপ মেয়ে।তোমাকে বাবা মা কিছু শেখায় নি?”

“নাহ আমাকে কেউ কিচ্ছু শেখায়নি।আপনার সমস্যা?”

“শর্তে কিন্তু ছিলো বাজে ব্যবহার করতে পারবে না।এখন কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করছো তুমি।মাসের টাকা কেটে নিবো।”

এমনি পাঁচ হাজার টাকা তার উপর যদি কেটে নেয় তাহলে থাকে না কিছুই।এগুলো ভেবে অহনা চুপ হয়ে যায়।মিসেস নাজমা কঠিন সুরে বলেন,”আমি একজন মেয়েকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।ও শিখিয়ে দিবে তোমাকে কিভাবে কাজ করতে হয়।ভালোভাবে রান্না শেষ করে আমাকে ডাক দিবে।”

চলবে…?