আশার হাত বাড়ায় পর্ব-২৪+২৫

0
172

#আশার_হাত_বাড়ায়|২৪|
#ইশরাত_জাহান
🦋
সকাল সকাল জিনিসপত্র নিয়ে নতুন বাসায় আসে শ্রেয়ারা।বিকালের দিকে অফিসে পার্টি আছে।সেখানে শ্রেয়ার দায়িত্ব অনেক।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবকিছু গুছিয়ে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।তারপর অফিসের চিন্তা।শ্রেয়াদের ভ্যান এসে থামতেই শ্রেয়া তাকিয়ে আছে বাড়িটির দিকে।খোলামেলা বাড়ি।রিমলি বলেছিলো এই ব্যাপারে।বাড়িটি সম্পর্কে রিমলি অনেক প্রশংসা করেছিলো।সবকিছু দেখে তো এখন শ্রেয়া নিজেও অবাক। রিমলির দিকে তাকিয়ে বলে,”এই বোন।এই বাড়িতে এত কম দামে ভাড়া কিভাবে সম্ভব?এনাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই তো?”

রিমলি জিনিষগুলো দেখছিলো।কোনোকিছু ধাক্কা লেগে নষ্ট হয়েছে কি না তাই।শ্রেয়ার কথা শুনে শ্রেয়ার দিকে ঘুরে বলে,”আরে না আপু।এই বাড়ির বাড়িওয়ালার ছেলে পুলিশ। আর আন্টি নিজেই মহিলা কমিটির সদস্য।আংকেল একজন উকিল।”

“এনারা কি বুঝে আমাদের এত কমে ঘরভাড়া দিলো!”

বাইরে বেরিয়ে আসে শিহাবের মা জুঁই।শ্রেয়ার কথাগুলো তার কর্ণপাত হয়েছিলো।শ্রেয়ার সন্দেহ হওয়াটা স্বাভাবিক।অচেনা কেউ এতটা দয়া দেখালে তো সন্দেহ হবেই।মিসেস জুঁই বিড়বিড় করে বলেন,”একটা গাধা মানুষ করেছি আমি।জনদরদী হতে যেয়ে সন্দেহের লিস্টে চলে যায়।”

শ্রেয়ার কাছে এসে বলেন,”তোমরা নতুন ভাড়াটিয়া তাই না?”

“জী আন্টি।”

“কি করো তুমি?”

“আমি জব করি।”

“কি জব?”

“চৌধুরী ফ্যাশন হাউজের।অ্যাসিসট্যান্ট পদে।”

চোখদুটো বড় বড় হয়ে গেলো মিসেস জুঁইয়ের।শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি ফারাজের কোম্পানিতে চাকরি করো?”

অবাক হয়ে শ্রেয়া আর রিমলি তাকিয়ে আছে।মিসেস জুঁই আলতো হেসে বলেন,”ফারাজ আমার বোনের ছেলে।এই তো সামনেই ওদের বাসা।”

“জী।”

“তোমাদের মা কোথায়?”

“আম্মু আসতে একটু দেরী হবে।আমরা সমস্ত জিনিসপত্র এনে তারপর আম্মুকে আনবো।এই গরমে আম্মুকে কষ্ট দিতে চাই না।”

“আচ্ছা।তাহলে সবকিছু গুছিয়ে নেও। পরে কথা হবে।”

“আচ্ছা আন্টি।”

মিসেস জুঁইয়ের সাথে কথা বলা শেষ করে শ্রেয়া ও রিমলি মিলে একেকটা জিনিস তাদের প্ল্যান মতো গোছাতে থাকে।শিহাব রেডি হয়েছে এখন অফিসে যাবে।নিজের ইউনিফর্ম পরে ড্রয়িং রুমে এসে বসেছে।মিসেস জুঁই খাবার দিতে দিতে বলেন,”নতুন ভাড়াটিয়া তো চলে এসেছে।জানিস ওই মেয়ের বড়বোন ফারাজের কোম্পানিতে চাকরি করে।তাহলে তো এরা বিশ্বস্ত।ফারাজ যেমন বিচক্ষণ একটা ছেলে।ও তো আর যাকে তাকে চাকরি দিবে না।”

ভ্রু কুঁচকে শিহাব বলে,”তোমার ছেলেকে কি চোখে পড়েনা?সেও বা কম কিসে!তফাৎ তোমার ছেলে একটু মিশুক আর ফারাজ ভাই গম্ভীর।রসকষহীন ব্যাটা একটা।”

শিহাবের পিঠে চাপড় মেরে মিসেস জুঁই বলেন,”হয়েছে আর হিংসা করতে হবে না।ঘর ভাড়া যে দামে দিয়েছিস তাতেই বোঝা যায় তুই কেমন বিচক্ষণ।”

“তুমি এই ভাড়া দিয়ে আমাকে আর কত খোচা দিবে মা?”

“আমি তো খোচা দিচ্ছি।ওরা তো সন্দেহ করছে আমাদের।”

খাবার চিবোতে চিবোতে শিহাব মনে মনে বলে,”এত কমে কি আর স্বাদে নিয়েছি।তোমাকে তো এখন বলা যাবে না মা।”

শিহাব খাবার শেষ করে বের হয়।ঘর থেকে বাইরে বের হবার সময় জুতা পড়তে থাকে।তারপর ঘুরে তাকালো সামনের ঘরটির দিকে।উদ্দেশ্য অফিসে যাওয়ার আগে রিমলিকে একবার দেখা।জিনিসপত্র লোকজন দিয়ে একেক জায়গায় রাখছে শ্রেয়া আর রিমলি।ভিতর থেকে অনেক আওয়াজ আসছে।রিমলি চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে।শিহাব এবার এদিক ওদিক তাকিয়ে সাহসের সাথে গেলো ওদের ঘরের দিকে।দরজার সামনে এসে বলে,”আসতে পারি?”

ঘুরে তাকালো রিমলি আর শ্রেয়া।শ্রেয়াকে দেখে শিহাব বলে,”আপনি?”

শ্রেয়া চিনতে পেরেছে শিহাবকে।রনিকে যখন আদালতের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় তখন শিহাবকে দেখেছিলো শ্রেয়া।শিহাব আবারও বলে,”আপনি মিস্টার রনির। আই মিন ওই কেসটাতে ছিলেন।”

শিহাবকে দেখে শ্রেয়া বলে,”আমরা এখানে ভাড়া এসেছি।আপনি?”

“এটা আমার বাড়ি।”

রিমলি ভ্রু কুঁচকে বলে,”তুমি কি ওনাকে চেনো আপু?”

মাথা নাড়িয়ে শ্রেয়া বলে,”হুম।”

রনির এমন পরিচিত শুনে মিসেস জুঁই পিছন থেকে বলেন,”কি হয়েছে বাবু?”

শ্রেয়া একটু লজ্জা পাচ্ছে।ঘুরেফিরে তাকে ফারাজের আশেপাশেই আসতে হচ্ছে।কেউ কিছু মনে না করলে হয়।মিসেস জুঁইয়ের দিকে তাকিয়ে শিহাব বলে,”উনি মিস শ্রেয়া।ফারাজ ভাইয়ের যে কেস ছিলো তার সাথে উনিও যুক্ত ছিলেন।তোমাকে বলেছিলাম না মিস্টার রনি।ওনার এক্স ওয়াইফ।”

মিসেস জুঁই বুঝলো ব্যাপারটা।শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো শ্রেয়াকে।মায়া লাগছে এখন তার।কিছুক্ষণ পর মনে পড়ল শ্রেয়া তো ফারাজের কোম্পানিতে চাকরি করে।যার স্বামীর জন্য ফারাজের সংসার নষ্ট হলো তাকে চাকরি দিলো ফারাজ।আবার শ্রেয়া নিজেও ফারাজের কোম্পানিতে চাকরি করছে।ব্যাপারটা শুনতে একটু অন্যরকম লাগে।মিসেস জুঁই দেখছেন শ্রেয়াকে।শ্রেয়া মাথা নিচু করে আছে।ইতস্তত বোধ করছে।মিসেস জুঁই এবার কথা ঘোরাতে বলেন,”আজকে তো তোমাদের অফিসে অনেক কাজ।পার্টি আছে তো।তাড়াতাড়ি সবকিছু গুছিয়ে নেও।”

হাফ ছাড়লো শ্রেয়া।এরা নেগেটিভ কিছু ভাবেনি এটাই অনেক।মিসেস জুঁই চলে গেলেন।শিহাব তার কাজের জন্য বেরিয়ে গেলো।এতক্ষণ সবকিছু নিরবতা পালন করে শুনছিলো রিমলি।শ্রেয়ার কাছে এসে বলে,”ওনাকে তো আদালতে দেখিনি ওইদিন।”

“ছিলো অল্প সময়।পুলিশদের ডিউটি থাকে।ওরা কি এক জায়গায় বসে থাকে।কেনো ওনাকে দেখলে কি করতিস?

“এই বাসাটা ভাড়া নিতাম না।তুই যেখানে যাস সেখানে অতীত ঘুরেফিরে আসে।যার অস্তিত্ব এখন তোর মাঝে নেই তাকে নিয়ে কথা থাকবেই।”

“একটা জিনিষ জানিস কি বোন?”

রিমলি তাকিয়ে আছে।শ্রেয়া মলিন হেসে বলে,”আমরা যেখানেই যাই না কেনো অতীত আমাদেরকে ছাড়বে না।হয়তো অতীতের পাতাগুলো আমরা এড়িয়ে যাবো।কিন্তু ওরা আমাদের থেকে বিচ্ছেদ ঘটাবে না।জীবনে যতই এগিয়ে যাই অতীত আমাদের সাথে দেখা দিবেই।”

রিমলি দেখছে তার বোনকে।বোনটা এখন উৎফুল্ল হলেও আগের মত নেই।এখন অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে।হয়তো নতুন জীবন পেয়ে চিন্তা ধারা আরো উন্নত।

*******
বিকালের দিকে রেডি হচ্ছে শ্রেয়া ও রিমলি।সাথে সৃষ্টি বেগমও আছেন।একটু পর অফিসে যাবে।আজকে সবার ফ্যামিলি মেম্বারদের ইনভাইট দেওয়া আছে।শ্রেয়া একটি লং গাউন পড়েছে।একেকটা জিনিস এলোমেলো করে কিছু খুঁজতে থাকে রিমলি।শ্রেয়া বলে,”কি খুঁজছিস তুই?”

“তোমাকে না আম্মু মেকআপ কিনে দিয়েছিলো।ওগুলো কোথায়?”

“তোর কি মনে হয়?যেখানে মায়ের দেওয়া দামী দামী জিনিষ ওরা নিয়ে নিতো।সেখানে সামান্য মেকআপ বক্স আমাকে দিবে।ওই পরিবারে শখ আহ্লাদ পূরণ করার জন্য আরো দুইটা মেয়ে ছিলো।যাদেরকে আমার সব জিনিসপত্র দিয়ে দেওয়া হতো।”

“আর তুমি কিছুই বলতে না। বাহ!এই চুপ করে কেনো সহ্য করো বলোতো?”

“বিয়ের পর মেয়েদের জীবন পাল্টে যায়।এই যেমন আমি।আমার যদি কোনো সুযোগ না থাকতো আজও আমি ওসব নির্যাতন সহ্য করেই থাকতাম।সুযোগ থাকলে কেউ কি আর হাত পা গুটে বসে থাকে?”

“বুঝলাম।এবার যা আছে ওই দিয়েই তৈরি হতে হবে।একটা পাউডার আর লিপস্টিক কাজল এনেছিলাম আমি।আমি কি জানতাম তুমি সব বিলিয়ে দেও।”

“এতেই তো হয়ে যাবে।”

“তোমার মত ফর্সা মেয়েদের জন্য এতেই এনাফ কিন্তু আমার মত কালো মেয়েদের জন্য এগুলোতে হয় না আপু।”

রিমলি দেখতে শ্যামলা।তাই সে এভাবে কথা বলছে।শ্রেয়া কিছু বলতে যাবে তার আগে পিছন থেকে শিহাব বলে,”কে বলেছে এগুলোতে তোমার হবে না।কখনও আয়নায় নিজেকে পরখ করে দেখেছো?নিজেকে একবার আয়নার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে।কোনো কমতি নেই তোমার মাঝে।এই চোখেও কাজল দিলে মায়াবী লাগবে তোমাকে।”

মনের আবেগে আরো কিছু বলতে যাবে রিমলি থামিয়ে দেয় তাকে।বলে,”আপনি?”

“হুম।আমিও আজ পার্টিতে যাচ্ছি।ভাই ইনভাইট করেছে।তাই ভাবলাম তোমাদেরকে নিয়ে যাই।আন্টি বলল তুমি নাকি এখনও মেকআপ নিয়ে পড়ে আছো।তাই চলে আসলাম।”

শিহাব এখনও শ্রেয়াদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ভিতরে আসেনি।তাই রিমলি বেশি কিছু বলল না।শ্রেয়া শুনছে রিমলি আর শিহাবের কথা।শিহাবের কথাগুলো শ্রেয়ার কাছে সন্দেহজনক লাগছে। রিমলির প্রতি কোনরকম ভালোলাগা কাজ করছে কি না বুঝতে পারছে না শ্রেয়া।শিহাব তাড়াহুড়া দিতেই বেরিয়ে যায় সবাই।

চারপাশে ভিন্ন রঙের লাইট দিয়ে সাজানো।একেক জায়গায় একেক ধরনের ব্যবস্থা।এক জায়গায় ড্যান্স ফ্লোর এক জায়গায় মকটেল কাউন্টার তো আরেক জায়গায় ডিজে সিস্টেম।সৃষ্টি বেগম অবাক হয়ে বলেন,”আমাদের এখানে আসার দরকার ছিল না।শুধু তুই আসলেই হতো।”

অর্পা এসে জড়িয়ে ধরে শ্রেয়াকে।সৃষ্টি বেগমের কথা শুনে বলে,”তুমি আমার কাকিয়ার সাথে বসো।আমরা অন্যদিকটাতে যাই।এখানে সব ধরনের লোকজন আসবে।চিন্তা করো না আন্টি।”

শ্রেয়া চলে গেলো ফারাজের কাছে।আজ গাউনের সাথে উচু হিল পরেছে শ্রেয়া। ফাইলগুলো নিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে ফারাজ আর শ্রেয়া।হঠাৎ করেই মিমি এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শ্রেয়াকে।ব্যালেন্স হারিয়ে শ্রেয়া পড়ে যেতে নেয়।কিন্তু পাশে ফারাজ থাকার কারণে ফারাজের এক হাত সাথে সাথে আঁকড়ে নেয় শ্রেয়াকে।শ্রেয়া চোখ বন্ধ করে নেয়।সে তো ভেবেই নিয়েছে সে এখন পড়ে যাবে।ফারাজ শ্রেয়াকে ধরে ফেলে শ্রেয়া তার এক হাত ফারাজের গলার কাছে রাখে।অনেক জোরে খামচে ধরে শ্রেয়া।চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে আসে ফারাজের।এনি দূরে দাড়িয়েই এদের ছবি তুলে নেয়।মিমি ঘাবড়ে গেছে।মিমি এখনও শ্রেয়ার গাউন ধরে আছে।ভীত ভীত চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে ফারাজ আর শ্রেয়ার দিকে।জিনিয়া আর অতসী রাগী দৃষ্টি দিয়ে দেখছে ওদের।অর্পা এসে দাড়ালো শ্রেয়ার পাশে।আর মিরাজ এসে দাড়ালো ফারাজের কাছে।শ্রেয়াকে ধরে অর্পা বলে,”ঠিক আছিস দোস্ত?”

শ্রেয়া এবার চোখ খোলে।দেখলো তার মাথাটা ফারাজের অতি নিকটে। আর ডান হাত দিয়ে খামচে ধরে আছে ফারাজকে।সাথে সাথে ডান হাত সরিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় অর্পার দিকে।অর্পা শ্রেয়াকে ধরে সোজা করে দাড় করিয়ে দেয়।অর্পার কানে কানে শ্রেয়া বলে,”ওনার গলার দিকে হয়তো অনেকটা ছিলে গেছে।আমি বুঝে উঠতে পারিনি।মিরাজ ভাইকে দেখতে বল।”

বলেই শ্রেয়া যেয়ে একটি চেয়ারে বসে পানি খেতে থাকে।অর্পার থেকে শুনে মিরাজ ফারাজকে নিয়ে কেবিনের ভিতরে আসে। ফারাজের গলায় কিছু কিছু জায়গায় ছিলে গেছে।নখগুলো ভালোমত গেঁথে গেছে। ফারাজের কেবিনে মেডিসিন বক্স থাকে।মিরাজ সেখান থেকে মলম নিয়ে ফারাজকে লাগিয়ে দেয়।সবশেষে মিরাজ হেসে দেয়।ফারাজ সেদিকে তাকিয়ে বলে,”কি হলো?হাসছিস কেনো?”

“তোমার গলার চিহ্ন দেখে ভাই।শেষমেষ তোমার মেয়ের জন্য আঘাত পেতে হলো।তাও আবার গলায়।”

“মিমিটাও না।ইদানিং মিস শ্রেয়ার সাথে বেশি মিশতে থাকে।কি জানি কি শুরু করেছে মেয়েটা আমার।”

“বাচ্চারা তাদের ভালোবাসার মানুষের কাছে বেশি যায় ভাই।এই যেমন মিমি তার দাদীর থেকে নানির সাথে বেশি সময় কাটায়।আবার নানার থেকে দাদার কাছে বেশি থাকে।এটা তো ভালোবাসার কারণে। যারা বাচ্চাদের বেশি বেশি আদর যত্ন করে বাচ্চারা তাদের কাছেই বেশি থাকে।”

ফারাজ আর কোনো কথা বলল না।মিমি এসে দাড়ালো শ্রেয়ার সামনে।ঠিক সেই সময় ফারাজ বাইরে এসে দাড়ালো।মিমি তার দুই কান ধরে শ্রেয়াকে বলে,”আই এম সরি আন্টি।আমি বুঝতে পারিনি তুমি পড়ে যাবে।প্লিজ আমাকে মারবে না।”

শ্রেয়া অবাক হয়ে বলে,”আমি মারবো কেনো?”

“মাম্মি আমাকে মারতো।আমি যদি মাম্মিকে ভুল করে ফেলে দিতাম তাহলে আমাকে বকা দিতো খুব।আমি সত্যি সরি।”

শ্রেয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না।এভাবে কেউ বাচ্চাদের সাথে করে?তাও আপন সন্তান।মিমির কান হাত ছাড়িয়ে মিমিকে জড়িয়ে ধরে শ্রেয়া বলে,”আমি এমন না মিমি।আমি একদম রেগে নেই তোমার উপর।মানুষ তো ভুল করেই।”

মিমি নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শ্রেয়াকে।ফারাজ দেখছে ওদেরকে।মনে মনে ভাবছে,”মিরাজ ভুল কিছু বলেনি।মিস শ্রেয়া মিমিকে আগলে রাখছেন।বাচ্চা মেয়েটা তো এভাবেই ভালোবেসে যাবে মিস শ্রেয়াকে।”

চলবে…?

#আশার_হাত_বাড়ায়|২৫|
#ইশরাত_জাহান
🦋
চারপাশে আলো নিভে গেছে।এখন শুধু ছোট ছোট ঝাড়বাতি জ্বলছে।সোজা স্টেজ থেকে হেঁটে আসছে সুনেহরা।সুনেহরার পরনে ব্রাইডাল ড্রেস।একদম ব্রাইডাল লুক নিয়ে হাঁটছে সুনেহরা।সবাই দেখছে তাকে।কোমড়ে হাত দিয়ে একটা ঘোমটা ধরে এদিক ওদিক ফিরে নিজের লুকস দিতে থাকে।সামনে থেকে ছবি তুলছে ক্যামেরাম্যান। সুনেহরা চলে যাওয়ার পর সবাই হাততালি দিতে থাকে।এরপর আবার একটি লম্বা গাউন পরে এসেছে।সাইডে ওড়না তাও পুরো জর্জেট।গাউনের হাতা ছোট থাকায় সৃষ্টি বেগম কিছুটা চোখ মুখ ছোট করে দেখছিলেন।তিনি এসবে অভ্যস্ত নয়।সবার তালে তালে রিমলি নিজেও হাত তালি দিয়ে উপভোগ করছে।সৃষ্টি বেগম কাউকে কিছু না বললেও রিমলিকে বকতে থাকেন,”এরপর থেকে আমাকে এসব জায়গায় আনবি না।পোশাকের কি শ্রী!এগুলো পরেই তো দিন দুনিয়া উচ্ছন্নে যায়।”

রিমলি চোখ ছোট ছোট করে বলে,”উফ মা!তুমি আধুনিকতা বুঝো না।”

“হ্যাঁ তাই।আমি তো শরীর দেখানো পোশাকের আধুনিকতা বুঝি না।শোন,তুই যেনো এসব দেখে মাথায় এসবের পোকা ঢুকাবি না।আর তোর বোনও যদি এসব পরে ওরও খবর আছে।”

“আচ্ছা মা পরব না।এবার খুশি?”

“হুম।”

বলেই শাড়ির আচল আরো একটু কাছে এগিয়ে মুখ ঢাকতে থাকেন।পাশে বসে থাকা অহি এতক্ষণ সবকিছু শুনছিলেন।স্ট্যান্ডার না হলেও সৃষ্টি বেগম তার সন্তানদের শিক্ষা দিয়ে বড় করেছেন।এটাই যেনো একটা আলাদা শান্তি।অহি কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখলো সৃষ্টি বেগমকে। মনে মনে বলেন,”গরীবের মনেও শান্তি মেলে।যদি সে তার কাছের মানুষের কদর বোঝে।”

তারপর মিস্টার তিহানের দিকে তাকিয়ে ভাবছেন,”আমি তোমার কিছু করবো না।কিন্তু আমি অপেক্ষায় থাকবো।প্রকৃতি তোমার কি করে এটাই দেখতে চাই।নিজের কর্মের জন্য অনুতপ্ত তুমি হবে।”

ভালো লাগছে না অহির কাছে এসব। ফারাজকে জানিয়ে চলে যায় বাসায়।সুনেহরা এবার স্টেজ থেকে নেমে সোজা ফারাজের বিদেশী ক্লায়েন্টদের সামনে গেলো।ওরা সুনেহরার প্রশংসা করছে।অনেক সুন্দর লাগছে সুনেহরাকে আরও অনেক কিছু।সব শেষে এনি বলে,”এই লুকস ঠিক করেছে শেহনাজ।”

বিদেশী ক্লায়েন্টদের একজন যে শ্রেয়ার দিকে প্রথমদিন নজর দিয়েছিলো তার নাম জ্যাক।আজও শ্রেয়ার প্রশংসায় শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।শ্রেয়া তার মত কাজ করতে ব্যাস্ত।সুনেহরার সাথে কথা বলছে শ্রেয়া।আর জ্যাক তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার দিকে।ফারাজ তখন অন্য ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত।চৌধুরী ফ্যাশন হাউজের কাছে ব্রাইডাল ড্রেস সহ আরো কিছু ড্রেসের অর্ডার এসেছে।তাও কক্স বাজার থেকে।কক্স বাজারের একজন শিল্পপতি মিস্টার জায়ানের মেয়ের বিয়ে।সেখানে সমস্ত কিছু থাকবে নামিদামি।আর তাই তারা চৌধুরী ফ্যাশন হাউজের থেকে ড্রেস অর্ডার করে রেখেছেন।সেই ড্রেসের সেম্পোল হিসেবে আজ মডেলিং করলো সুনেহরা।আর লং গাউনগুলো বিদেশের বড় বড় শোরুমে সেল করা হবে।ফারাজ কথার মাঝে তাকালো জ্যাকের দিকে।মূলত কিছুক্ষণ ধরেই জ্যাককে প্রশ্ন করছে ফারাজ।কিন্তু জ্যাক কোনো উত্তর দিচ্ছে না।জ্যাকের দিকে তাকাতেই ফারাজ দেখতে পেলো জ্যাক এক দৃষ্টিতে দেখছে শ্রেয়াকে।বিষয়টাকে গুরুত্ব না দিয়ে কিছুটা জোরে ফারাজ বলে,”মিস্টার জ্যাক।”

জ্যাক ঘুরে তাকালো ফারাজের দিকে।বলে,”ইয়েস মিস্টার ফারাজ?”

“উইল ইউ রেডী ফর দিস প্রজেক্ট?”

“ইয়াহ,অফ কোর্স।”

ডিল কমপ্লিট করে এখন সবাই ড্যান্স ফ্লোরে যাচ্ছে।স্টেজে এখন কাপোল ড্যান্স চলছে।শিহাব কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ রিমলির ছবি তুলছিলো।এখন রিমলির কাছে এসে হাত বাড়িয়ে বলে,”আমার সাথে ড্যান্স করবে?”

শুকনো ঢোক গিলে সৃষ্টি বেগমকে দেখে নিলো রিমলি।সৃষ্টি বেগম এসব পছন্দ করেন না।হালকা হেসে রাগের সাথে রিমলি বলে,”না।আমি এসব ড্যান্স ফ্যান্স পারি না।”

শিহাব আর কোনো কথা না বলে পাশে একটি চেয়ারে বসে।শ্রেয়া এনির সাথে কথা বলছে।শ্রেয়ার হাত ধরে আছে মিমি।অর্পা আর মিরাজ কাপল ড্যান্স করতে ব্যাস্ত।ফারাজ ব্যাস্ত মিডিয়ার লোকদের সাথে।ফারাজ এখন সাংবাদিকদের সামনে দাড়িয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকে।জিনিয়া আর অতসী রাগী দৃষ্টিতে দেখছে সবাইকে।সবাই ব্যস্ত থাকায় শ্রেয়া মিমিকে নিয়ে ঘুরছে এদিক ওদিক।হঠাৎ শ্রেয়ার সামনে আসলো জ্যাক।শ্রেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,”উইল ইউ ড্যান্স উইথ মী?”

শ্রেয়া সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে ভদ্রভাবে বলে,”সরি। আই ক্যান্ট।”

“প্লীজ।বিউটিফুল লেডি।”

শ্রেয়া বারবার না করছে কিন্তু জ্যাক শুনতে ইচ্ছুক না।সে চায় শ্রেয়ার সাথে ড্যান্স করতে।দৃশ্যটি চোখ এড়ালো না সৃষ্টি বেগমের।উঠে দাঁড়ালেন মাত্র।ওমনি রিমলি ধরে নিলো সৃষ্টি বেগমের হাত।ফিসফিস করে বলে,”আরে মা কি করছো?এরা বিদেশী ক্লায়েন্ট।বাঙালি থেরাপি দিতে যেও না।তাহলে ডিল যাবে ক্যান্সেল হয়ে টাকা যাবে পানিতে।”

চোখ রাঙিয়ে সৃষ্টি বেগম বলেন,”টাকা গেলে যাবে।টিনের ফুটো বাড়িতে না খেয়ে থাকবো কিন্তু মেয়ের জীবনকে এভাবে উচ্ছন্নে যেতে দিবো না।কত বড় সাহস দেখ।আমার মেয়ের সাথে নাচার জন্য পিছে লেগে আছে।বারবার না বলছে তারপরও ওর কোনো বিবেক নেই।”

রিমলি কোনো রকমে সৃষ্টি বেগমের হাত ধরে রেখেছে।ওদিকে জ্যাক রিকোয়েস্ট করতে করতে এখন যেনো সাহস আরো বেশি পেলো।খোপ করে ধরতে যাবে শ্রেয়ার হাত।ঠিক তখনই ফারাজ এসে ধরে নেয় জ্যাকের হাত। জ্যাক ঘুরে তাকালো ফারাজের দিকে।ফারাজ কণ্ঠে রাগ মিশিয়ে জ্যাককে বলে,”শি ইজ নট লাইক ফরেইন গার্ল।শি ইজ ভেরি নরমাল পারসন এন্ড কেরি ওল্ড বেঙ্গলি ট্রেডিশন।সো লেট হার গো।ডোন্ট ট্রাই টু ডিস্টার্ব হার।ইটস আওয়ার রিকোয়েস্ট।”

ফারাজের কথায় জ্যাক তার আরেক পার্টনারের দিকে তাকালো।তিনি চোখ দিয়ে ইশারা করতেই সরে আসলো জ্যাক।শ্রেয়া চুপ করে মাথা নিচু করে আছে।ফারাজ এবার শ্রেয়াকে বলে,”নিজেকে শক্ত রাখতে না পারলে এসব জায়গায় চাকরি করবেন কিভাবে?এখানে থাকতে হলে মুখে তালা মেরে বসে থাকবেন না।যদি মুখে তালা মেরে রাখার ইচ্ছা হয় তাহলে অন্য ব্যাবস্থা করুন নিজের জন্য।”

বলেই চলে গেলো ফারাজ।মিউজিক এর জন্য ফারাজের কথা কারো কাজে পৌঁছায়নি।কিন্তু ফারাজের এমন কথায় আহত হয়েছে শ্রেয়া।চাকরির শুরু থেকে এই পর্যন্ত লোকটা কথা বলে না বললেই চলে।কিন্তু যখন কথা বলে কড়া কথা শুনিয়ে দেয়।এনি শুনেছে ফারাজের কথা।কারণ সে পাশেই ছিলো। ফারাজকে ভালো করেই চেনে এনি।ফারাজ খুবই গম্ভীর একটি ছেলে।যে এসব আমতা আমতা পছন্দ করে না।মেয়ে হোক বা ছেলে সবাইকে স্ট্রেট আর স্ট্রং থাকতে হবে।এটাই ফারাজের কথা।এনি একটি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হলো।শ্রেয়াকে শক্ত হতে এই কথাগুলো হজম করতে হবে।সব সময় সাপোর্ট করলে ফারাজের কথাগুলোর অর্থ শ্রেয়া বুঝবে না।এনি যেতেই মিমি শ্রেয়ার হাত ধরে ঝাঁকালো।শ্রেয়া তাকাতেই মিমি হাত দিয়ে ইশারা করে নিচু হতে।কারণ এই গান বাজনায় মিমির আস্তে আস্তে কথা শুনতে পাবে না শ্রেয়া।শ্রেয়া একটু ঝুঁকতেই মিমি শ্রেয়ার কানে কানে বলে,”আমার পাপা এমন।একটু রাগী।বোকা বোকা হয়ে থাকলে পাপা পছন্দ করে না।আমাকেও স্ট্রং বানিয়েছে পাপা।তোমাকেও স্ট্রং হতে হবে আন্টি।”

মিমির কথাগুলো বাচ্চা বাচ্চা হওয়ার কারণে শ্রেয়া হেসে দিলো।তবে শ্রেয়া বুঝতে পারল ফারাজ মিমিকে ভিন্নভাবে শিক্ষা দিয়ে বড় করছে।এই যেমন কিভাবে নিজেকে স্ট্রং রাখা যায়।কোনো কাজে ঘাবড়ে না যেয়ে সাহসী হতে হবে এমন।শ্রেয়ার মন খারাপটা ভালো হয়ে গেলো।ফারাজ এখন তার বস।অবশ্যই কোনো কর্মচারী এভাবে থাকলে তার দ্বারা কোম্পানির লস বেশি হবে।

রিমলি এবার সৃষ্টি বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,”দেখেছো আম্মু।আপুর কাছে কেউ যেতে পারেনি।”

“ফারাজ ছিলো বলেই বেচে গেলো ওই ছেলে।নাহলে আমি ওইটাকে আজ এখানে থাপ্পড় দিতাম।”

বলতে না বলতেই সৃষ্টি বেগম হাসফাস করতে লাগলেন। রিমলি বুঝলো এসি চলার কারণে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে।তাড়াতাড়ি ব্যাগ হাতে নিয়ে ইনহেলার খুঁজতে লাগলো।কিন্তু ইনহেলার পেলো না।আতঙ্কের সাথে রিমলি বলে,”তোমার ব্যাগে আমি ইনহেলার রেখেছিলাম মা। কোথায় তাহলে?”

সৃষ্টি বেগম হাঁফাতে হাঁফাতে বলেন,”তুই রাখার পর আমি আবার ইনহেলাম নিয়েছিলাম।হয়তো ভুলে রেখে এসেছি।”

রিমলির থেকে কিছুটা দূরে শিহাব বসে ছিলো।সৃষ্টি বেগমকে এভাবে হাঁফাতে দেখে শিহাব বলে,”কি হয়েছে আন্টির?”

কান্না করে দেয় রিমলি।তাড়াতাড়ি করে উঠাতে নেয় সৃষ্টি বেগমকে আর বলে,”আম্মুর শ্বাসকষ্ট বেড়েছে।আমরা তো এসিতে অভ্যস্ত না।হয়তো তাই আজ একেবারে এসিতে এতক্ষণ থাকায় আম্মুর শ্বাসকষ্ট বেড়েছে। এসির মাত্রা অনেক।আমি আম্মুকে নিয়ে বাসায় যাব।”

“চলো আমিও যাই তোমাদের সাথে।বাসা অনেক দূর।মাঝে ফার্মেসি আছে।ওখান থেকে ইনহেলার নিতে হবে।তাড়াতাড়ি আসো।আমি গাড়ি স্টার্ট দিতে থাকি।”

বলেই শিহাব চলে যায়। রিমলি একবার শ্রেয়ার দিকে তাকালো।শ্রেয়া কাগজপত্র নিয়ে ব্যাস্ত।এনি ওদের কাছেই ছিলো। আস্তে আস্তে সৃষ্টি বেগমকে নিয়ে রিমলি এনির কাছে এসে বলে,”আপু কি ব্যাস্ত?”

এনি সৃষ্টি বেগমকে দেখে বলে,”কি হয়েছে ওনার?”

“আম্মুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।এখানে থাকা সম্ভব না।বাসায় যেতে হবে।আপু কি যেতে পারবে?”

“শেহনাজ তো ব্যাস্ত থাকবে এখন।কজ হ্যান্ডসাম নিজেও এখন ব্যাস্ত।তবুও আমি ডেকে দিচ্ছি।”

এনিকে বাধা দিয়ে রিমলি বলে,”দরকার নেই।আমি আম্মুকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বের হই।আপনি আপুকে পরে জানিয়ে দিবেন।আম্মুকে নিয়ে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না।আমরা আসি।”

“ওকে রাস্তায় সমস্যা হলে অবশ্যই কল দিও।আমার নাম্বার এটাতে আছে।”

বলেই একটি কার্ড দিলো রিমলির হাতে।আর কোনো কথা না বলে কার্ড নিয়ে সৃষ্টি বেগমকে নিয়ে চলে যাচ্ছে রিমলি।সৃষ্টি বেগম তার মাথাটা রিমলির কাধে রেখেছে।প্রায় অজ্ঞান হয়ে আছে বলা যায়।এভাবে চলতে থাকলে ক্ষতি হবে তার।তাই তাড়াহুড়া করে চলে গেলো রিমলি।গাড়িতে উঠে ম্যাসেজ করে দিলো শ্রেয়াকে।ঘাড়ে ঝোলানো পার্স হওয়ায় ম্যাসেজ এর শব্দ পায়নি শ্রেয়া।সে তার মতো ফাইল দেখছে।পার্টিতে ইনজয় করবে কি? ফারাজ তাকে কাজ দিয়ে বসিয়ে রেখেছে।অবশ্য এতেই ভালো।নাহলে জ্যাকের যন্ত্রণায় কোনো দিকে যাওয়া যায় না।

কাগজগুলো দেখা শেষ করে মা আর বোনকে দেখতে চোখটা ঘোরালো টেবিলের দিকে।দেখতে পেলো না সৃষ্টি বেগম ও রিমলিকে।কাজের মাঝেই কিছুক্ষন পর পর তাকাচ্ছিলো মা বোনের দিকে।মাত্র পনেরো কি বিশ মিনিট হলো ফাইল দেখছে মনোযোগ দিয়ে।এই টেবিলের সামনে বসে ছিল এতক্ষণ মা বোন।তাহলে গেলো কোথায়?শ্রেয়া আসে পাশে চোখ বোলালো।পেলো না কাউকে।ফোন বের করে কল দিতে যাবে দেখলো রিমলির ম্যাসেজ।শ্রেয়া ঘাবড়ে যায়।সাথে সাথে কল দেয়। রিমলি রিসিভ করে না।শ্রেয়া ম্যাসেজ করে,”আম্মুকে নিয়ে কোথায় আছিস?আম্মুর অবস্থা কেমন একটু জানা বোন।”

সৃষ্টি বেগমকে নিয়ে ব্যাস্ত রিমলি।শ্বাসকষ্ট হলে তার বুকে ব্যাথা বারে।এখন আরো বেশি জোরে হাঁপাচ্ছে।রিমলি তো কান্না করা অবস্থা।বলে,”একটু তাড়াতাড়ি চালান গাড়ি। মায়ের কষ্ট বাড়ছে।মায়ের হার্টের সমস্যা আছে।শ্বাসকষ্ট অতিরিক্ত বাড়লে ক্ষতি হবে।প্লীজ তাড়াতাড়ি করুন।”

বলেই সৃষ্টি বেগমের হাত মালিশ করছে রিমলি।শিহাব গাড়ি যতটা সম্ভব দ্রুত চালাচ্ছে।বেশি জোরে হলে সৃষ্টি বেগমের জন্য ক্ষতি।রিমলি এখন এটা বোঝার মত অবস্থায় নেই।কোনমতে ফার্মেসীর সামনে এসে দৌড়ে ইনহেলার কিনে আনলো শিহাব। ইনহেলার হাতে নিয়ে সৃষ্টি বেগমের মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে চাপ দিলো।সৃষ্টি বেগম ইনহেলার নিয়ে এবার একটু শান্ত হলেন।তবে তার শরীর এখন দুর্বল আছে।চোখ মেলে তাকালেন তিনি।রিমলি এবার শান্তি পেলো।শিহাব একটি পানির বোতল এগিয়ে দিলো। রিমলি পানি খেয়ে নিজেও এবার স্থির হয়ে সৃষ্টি বেগমকে বলে,”কবে একটু নিজের জন্য ভাববে মা?এই মেয়ের এই গড়া লাগবে ওই মেয়ের ওই এই করা লাগবে।এসব করতে করতে নিজের দিকে খেয়াল রাখো না।আমি বারবার ইনহেলার চেক করে তোমার ব্যাগে রাখি।শেষে এসে একটু খেয়াল করে রাখতে পারোনি ইনহেলার কোথায়?মেয়ের কোথায় কি লাগে এগুলো বোঝো নিজের কোথায় কি লাগে বোঝো না?”

দুর্বল কণ্ঠে সৃষ্টি বেগম বলেন,”বয়স বেড়েছে আমার মা।বোধ বুদ্ধি হয়তো আস্তে আস্তে লোপ পেতে থাকবে।ভুলে যাচ্ছি সবকিছু।তোদের বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই তো আমি সমস্ত অঘটন ঘটিয়েছি।না পারলাম বড় মেয়েকে ভালো সংসারে দিতে।আর না পারলাম ছোট মেয়েটার দায়িত্ব নিতে।ব্যার্থ মা আমি।”

রিমলি কষ্ট পেলো এমন কথাতে।সৃষ্টি বেগম ভুল করেছে এটা রিমলি স্বীকার করে।কিন্তু কোন প্রেক্ষিতে সে এই ভুল পথে গেছে এটাও রিমলি বোঝে।মাথার উপর পুরুষ মানুষের ছায়া সরে গেলে কোনো মেয়েই নিজেকে স্থির রাখতে পারে না।স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি মানসিকভাবে দুর্বল।এখন দুই মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে করতে আরো অসুস্থ।শিহাবের দিকে তাকালো রিমলি।শিহাব হালকা হেসে আবার চলে গেলো ড্রাইভিং সিটে।রিমলি এবার ফোন বের করলো।তার ফোনে কল এসেছে এটা সে বুঝতে পেরেছিলো।তাই এখন শ্রেয়াকে লিখে দিলো,”আম্মু ঠিক আছে আপু।তুমি তোমার মত করে আসো।”

শ্রেয়া এখনও চিন্তায় আছে।বারবার ফোনটা হাতে নিয়ে চেক করছে।ওরা কোথায় এখন এটা না জেনেও কিছু করতে পারছে না শ্রেয়া।বাসায় যাবে সেই উপায় নেই।কারণ কাজ শেষে ফারাজ আর এনির সাথে পার্সোনাল মিটিং আছে।ভাবতে ভাবতে শ্রেয়ার ফোনে ম্যাসেজ এসেছে।ম্যাসেজটি পড়ে শান্তি পেলো শ্রেয়া।ঠিক তখনই এনি এসে বলে,”তোমার মা আর বোন বাসায় গেছে।ওনার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো তাই।”

মনে মনে শ্রেয়া বলে,”আগে বললে কি হতো?মাকে খুঁজতে খুঁজতে আমার জান যায় যায় অবস্থা।আপনি এখন বলছেন।”
কিন্তু মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,”হ্যা শুনেছি।বোন বলেছে মাত্র।আম্মু এখন সুস্থ আছে।চিন্তার কিছু নেই।”

চলবে…?