আশার হাত বাড়ায় পর্ব-২৬+২৭

0
222

#আশার_হাত_বাড়ায়|২৬|
#ইশরাত_জাহান
🦋
শ্রেয়া আর এনির কথার মাঝে কিছু সাংবাদিক শ্রেয়ার সামনে আসে।ফ্যাশন হাউজের কাজ আর সাংবাদিক যুক্ত থাকবে না এটা তো অসম্ভব।এখানে এখন সেলিব্রেটি লোক আছে।আর যেখানে সেলিব্রেটি সেখানে সাংবাদিক।শ্রেয়ার কাছে এসে প্রশ্ন করে,”ম্যাম আপনার এই জার্নি সম্পর্কে আমরা জানতে চাই।কেমন লাগছে আজ কোম্পানির এত বড় সিদ্ধান্তে নিজেকে শামিল রেখে?”

শ্রেয়া একটু ঘাবড়ে হেলো।দুইজন মেয়ে এসে প্রশ্ন করছে।একজন মাইক নিয়ে কথা বলছে আরেকজন ক্যামেরা নিয়ে ভিডিও করছে।শ্রেয়ার চোখ গেলো ফারাজের দিকে।ফারাজ নিজেও তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার দিকে।এবার যেনো শ্রেয়ার মাথায় আর কোনোকিছু কাজ করলো না।চাকরি বাঁচাতে হলে মুখ খুলতে হবে।নাহলে ফারাজ যে মানুষ।এ চাকরি চাকরি থেকে শ্রেয়াকে বের করে দিবে।সাহসের সাথে শ্রেয়া বলে,”লাইফের প্রথম জার্নিতেই আমার কোনো সিদ্ধান্তে ফ্যাশন হাউজের উন্নতি হলো।এটা আমার কাছে নতুন এক অজানা অনুভূতি।ভালো লাগছে বললেও কম হবে।এতটাই আনন্দ কাজ করছে যে বোঝানো সম্ভব না।”

“তো ম্যাম।আপনার এই সফলতা দ্বারা আপনি কি শিখতে পারলেন?”

“জীবন যুদ্ধে হার মানতে নেই।সৎ মনে জীবনে এগিয়ে যাও সফলতা একদিন আসবে।”

কথাটি শ্রেয়া ফারাজের দিকে তাকিয়ে বলে।সত্যি বলতে ফারাজের জন্যই শ্রেয়া এগুলো বলার সাহস পেলো।যেভাবেই হোক না কেনো কথাগুলো মুখ ফুটে আজ শ্রেয়া বলেছে।শ্রেয়ার কথা শুনে সবাই হাততালি দিতে থাকে।এনি শ্রেয়ার কাছে এসে বলে,”প্রাউড অফ ইউ শেহনাজ।এভাবেই বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এগিয়ে চলো।দেখবে তোমাকে নিচু করা লোকজন এক সময়ে তোমার মূল্য বুঝবে।”

স্মিত হাসলো শ্রেয়া।অর্পা এসে জড়িয়ে ধরে শ্রেয়াকে।সাংবাদিক এখন ফারাজের কাছে আসে।তারা প্রশ্ন করে,”আপনার ফ্যাশন হাউজ এখন টপ ফাইভ লেভেলে এসেছে স্যার।এই বিজনেস জার্নিটা আপনি দশ বছরের বেশি সময় নিয়ে শুরু করেছেন।আজ টপ ফাইভে এসে আপনার কেমন অনুভূতি স্যার?”

“জীবনে সাকসেস করতে গেলে সময় ও ধৈর্যের অনেক প্রয়োজন।তিলে তিলে গড়ে তোলা সম্পদ যখন নিজের আয়ত্তে আসে তখন সেটা এক্সপ্লেইন করা অনেক কঠিন।অনেক ত্যাগ স্বীকার করে এই সফলতাকে গ্রহণ করে আজ আমি অনেক বেশি আনন্দিত।”

“আপনার পরবর্তী প্ল্যান কি স্যার?সেকেন্ড ম্যারিড নিয়ে কিছু ভেবেছেন?”

ফারাজ তাকালো মিমির দিকে।হালকা হেসে বলে,”না।”

“সেকেন্ড ম্যারিড করার ইচ্ছা আছে স্যার?”

“বর্তমানে নেই।”

“আপনার জীবনের ঘটে যাওয়া মুহূর্ত থেকে আপনি কি শিখতে পারলেন এটা একটু আমাদেকে শেয়ার করুন।আমরাও জানতে চাই আপনার অনুভূতি।”

“পুরুষ মানুষ নিঃস্ব হলেও মনের অনুভূতি প্রকাশ করে না।তারা এক দমকা হাওয়ায় নিজেদের মনের সকল অনুভূতির উজাড় করে দেয়।মনের মধ্যেই চাপা দিয়ে রাখে তিক্ত অনুভূতি।”

ফারাজের কথা শুনে শ্রেয়া অবাক নয়নে তাকালো।লোকটার মনেও যে হাজারও কষ্ট বিরাজ করে এটা তাকে দেখলে বোঝা যায় না।শ্রেয়ার চোখ ফারাজকে দেখতে ব্যাস্ত। আর মনে মনে ফারাজের গুণাবলীকে ভাবাতে ব্যাস্ত।ফারাজ আর রনি এরা দুজনেই পুরুষ মানুষ।কিন্তু এদের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ।রনি যে টাকা পয়সা থাকলেও নিজের অহংকার নিয়ে পড়ে থাকত।দিনরাত নির্মম অত্যাচার করে যেতো।বউকে সম্মান দিতো না।আর ফারাজ যে কি না অর্থ সম্পদ গড়তে ব্যাস্ত একমাত্র তার পরিবারের জন্য।একজন পুরুষ মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম থাকে পরিবারের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য।তারই এক বৈশিষ্ট্য ফারাজ।যে তার বউকে সম্মান দিতো ভালোবাসতো। আর এখন অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেও মনের মধ্যে সেই ভালোবাসাটা আছেই।মনে মনে শ্রেয়া আওড়ালো,”ভালোবাসার মানুষকে ঘৃণা করা যায়,কিন্তু ভালোবাসার পরিমাণ কমানো যায় না।”

শ্রেয়ার ভাবনার মাঝেই এক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফারাজ আবারও বলে,”অর্থ ব্যস্ততা বাড়ায়, আর ব্যস্ততা প্রিয়জন হারায়।”

ফারাজের কথাটিতে অহনার প্রতি ক্ষোভ মিশে আছে।অহনার প্রতি এখনও দুর্বল ফারাজ।কিন্তু এটা সে প্রকাশ করতে পারে না।জীবনের অর্ধেক সময় তো সে অহনাকে ভালোবেসে পার করলো।ভুলে থাকা কি এতই সহজ?অর্পা আর মিরাজ দেখছে ফারাজকে।সাংবাদিক আরো কিছু বলতে যাবে তার আগে পিছন থেকে কেউ বলে,”ব্যস্ততা যদি প্রিয়জনকে হারিয়ে দেয় তো সেই প্রিয়জন তোমার ব্যাক্তি জীবনের অপ্রাপ্তি কিছু।”

কণ্ঠ শুনে ফারাজ বুঝতে পারল এটা কে বলেছে।ফারাজের বাবা ফারহান চৌধুরী।মিমি সাথে সাথে দৌড়ে গেলো তার কাছে।দাদুকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আই মিস ইউ দাদু।”

অনেকদিন পর নাতিকে পেয়ে জড়িয়ে ধরলেন ফারহান চৌধুরী। ফারাজের কাছে এসে দাড়ালেন।মিরাজ নিজেও এগিয়ে আসলো বাবার কাছে।দুই ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন ফারহান চৌধুরী।অর্পা শ্রেয়ার কানে কানে বলে,”এটা আমার শশুর।চল পরিচয় হবি।”

বলেই অর্পা যেয়ে সালাম দেয় ফারহান চৌধুরীকে।ফারহান চৌধুরী উত্তর দিতেই অর্পা শ্রেয়াকে দেখিয়ে বলে,”ও আমার ফ্রেন্ড শ্রেয়া।এখন এই ফ্যাশন হাউজে জব করে।বড়ভাইয়ের অ্যাসিসট্যান্ট পদে কাজ করে।”

ফারহান চৌধুরী দেখতে থাকেন শ্রেয়াকে।তারপর বলেন,”নাইস টু মিট ইউ।তাহলে সবাই সবার মত ইনজয় করো।আমি একটু ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলে নেই। ”

বলেই চলে গেলেন তিনি।শ্রেয়া এখন ইভার সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত।নেক্সট ডিজাইন সম্পর্কে কথা বলছে।যেগুলো একটু পর ফারাজের কাছে জমা দিয়ে চলে যাবে।ফারহান চৌধুরী ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলে অর্পা ও মিরাজের কাছে আসলেন।তারপর বলেন,”তোমার শাশুড়ি কোথায় অর্পা?”

“মা চলে গেছেন কিছুক্ষণ আগে।মুড অফ আজ মায়ের।”

“সিনথিয়া কাজ পায়নি তাই?”

“হুম।”

“ওই মেয়েটার কথাই তোমরা আমাকে বলছিলে তাই না মিরাজ?যে এখন ফারাজের অ্যাসিসট্যান্ট।”

ঘাবড়ে গেলো অর্পা।মিরাজ ওর বাবার কাছে শ্রেয়া আর ফারাজের সম্মন্ধে কথা বলেছে।একটু কি অর্পার থেকে শুনেছে অর্পার ইচ্ছার কথা।ওমনি বাবাকে বলতে হবে।এখন বাবা কি মেনে নিবেন শ্রেয়াকে।নাকি তাকেও কথা শোনাবে।ভয় পাচ্ছে অর্পা।ফারহান চৌধুরী হো হো করে হেসে দেন।হাসি থামিয়ে বলেন,”আরে ভয় পাচ্ছো কেনো?মেয়েটাকে আমার পছন্দ হয়েছে।ইনফ্যাক্ট এমন নম্র ভদ্র মেয়েই তো ফারাজ আর মিমির জন্য চাই।”

“কিন্ত বাবা!মা তো এমন সাধারণ মেয়ে চান না।তিনি মডার্ন মেয়ে খুজছেন।”

“তোমার মাকে নিয়ে ওতো ভেবোনা।আমি আছি তো ঠিক হয়ে যাবে।”

*******
বাড়িতে এসে মাকে ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো রিমলি।এখন সে একটু গোসল করে নিলো।ব্যালকনিতে বসে আছে রিমলি।গল্প রিচেক দিয়ে পোস্ট করলো।তারপর অন্ধকার আকাশের দিকে তাকালো।চাঁদ আর চারপাশে তারা।বামহাত উচু করে অর্ধ লাভ আকারে চাঁদের সামনে রাখলো।তারপর ফোন দিয়ে ছবি তুলে নিলো।ছবিটা দেখতে সুন্দর লাগছে।ভাবলো প্রোফাইলে দিবে। দিয়েই দিলো।এর মধ্যেই গিটারের টুং টুং আওয়াজ কানে আসলো রিমলির।শিহাব গিটার নিয়ে গান গাচ্ছে।রিমলি ঠিক তখনই বুঝতে পারল যখন এই গান পাশ থেকে ভেসে আসছে। আর দেওয়ালের ওপারে শিহাব আছে এটা রিমলি জানে।শিহাবের গান শুনতে শুনতে রিমলি ওখানেই ঘুমিয়ে গেলো।ক্লান্ত মন গোসল করার পর শীতল অনুভূতি সাথে গানের কথাগুলো মনটাকে স্বস্তি বানিয়ে দেয়।শিহাব অনেক সুন্দর গান গায়।যেটা শুনে রিমলি আর উঠতে পারেনি ওখান থেকে।ওঠার ইচ্ছেটা জাগলো না মনে।তাই ওখানে চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে থাকতেই ঘুমিয়ে যায়।শিহাব গান শেষ করে ফেইসবুকে আসলো।ফারজানা ইয়াসমিন গল্প দিয়েছে।ইতিমধ্যে কমেন্টের ঝড় পড়েছে।শিহাব নিজেও গল্পটি পড়লো।কিন্তু কোনো কমেন্ট করলো না।আজ অব্দি কোনো কমেন্ট করেনি শিহাব।কিন্তু ইনবক্সে প্রশংসা করে তার।গল্প পড়ার পর শিহাব প্রোফাইল দেখতে থাকলো। চাঁদের দিকে হাত দিয়ে ভালোবাসার চিহ্ন।চাঁদের পাশে একটি নারকেল গাছের কিছু পাতা দেখা যাচ্ছে।নারকেলের পাতা দেখে শিহাব এবার সামনের দিকে তাকালো।তার বাড়ির সামনেই তো এমন চাঁদ দেখা যায়।শিহাব এবার নিজেও হাতটা উচু করে অর্ধ ভালোবাসার চিহ্ন দেখিয়ে ছবি তুলে দেখতে থাকে।মনে মনে বলে,”লেখিকা তাহলে আশেপাশেই থাকে।”

******
আজকের মত সকল কাজ শেষ করে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছে শ্রেয়া।এখন বাসায় যাবে।রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা।বাকিরা চলে গেছে।এনি ফারাজ মিমি আর শ্রেয়া থেকে যায়।ফারাজ তার কোম্পানির দায়িত্ব এখন এনি আর শ্রেয়াকে দিতে চায়।তাই কিছু কথা বুঝিয়ে দিলো। আর এই পুরো সময়টা শ্রেয়া ফারাজকে দেখতে থাকে। ফারাজের কথা বলা হাত নাড়িয়ে কাগজের উপরে আঁকতে থাকা এগুলো ভালোলাগা দিয়ে দেখছে শ্রেয়া।তারপর ফারাজ খাতাটি বন্ধ করতেই শ্রেয়া চকিত নয়নে তাকিয়ে থাকে।এতক্ষণ সে আনমনেই নির্লজ্জের মত ফারাজকে দেখতে থাকে।এটা ভেবেই শ্রেয়ার নিজেরই রাগ লাগে।সে তো এমন না।তাহলে হঠাৎ এমন করছে কেনো?ফারাজ বলে ওঠে,”তাহলে আজ এইটুকুই থাক।বাকি কাজ আমরা চট্টগ্রামে গিয়ে করবো।আর হ্যাঁ আমাদেরকে মিস্টার জায়ান ইনভাইট করেছেন।তার মেয়ের বিয়েতে আমরা ওখানে যাবো।তাই সেভাবে করেই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”

এনি এতক্ষণ শ্রেয়ার কীর্তি কলাপ দেখেছিলো।এনি বুঝতে পারলো শেহনাজ এখন হ্যান্ডসামের প্রতি আলাদা কিছু অনুভব করছে।মনোযোগ দিয়ে কিছু শুনেছে কি না শিওর না এনি।তাই নিজে থেকে বলে,”সবকিছু পারফেক্টলি হবে।ডোন্ট ওরি হ্যান্ডসাম।আমি আর শেহনাজ তো আছি।”

মিমি এতক্ষণ শ্রেয়ার পাশেই বসে ছিলো।ফারাজ সবকিছু প্যাক করছে আর এনি উঠে দাড়ালো দেখে শ্রেয়া বলে,”তাহলে আমরা আসি।সবকিছু গোছাতে হবে।”

এনি বলে,”ইয়াহ।বিকালেই ফ্লাইট।আমি দুপুরের লাঞ্চ করে তোমাদের বাসায় যাব শেহনাজ।রেডি থেকো।”

“ওকে এনি।”

কথা বলতে বলতে চলে যায় শ্রেয়া আর এনি।ফারাজ তার ফাইলগুলো নিজস্ব ডেস্কে রেখে দিলো।নিজের প্রয়োজনীয় কাজ ফারাজ নিজে করে।ওগুলোর দায়িত্ব কাউকে দেয় না।মিমি হামি দিতে দিতে দেখছে ফারাজকে।লিফটে উঠেও শ্রেয়া একবার ফারাজ আর মিমিকে দেখে নিলো।নিজের এক মন চাইছে না এমন করতে আরেক মন চাইছে একটু ফারাজকে দেখতে।এখন গাড়ির জন্য দাড়িয়ে থেকে এসব ভাবছে শ্রেয়া।মেজাজটা এখন খারাপ লাগছে।সারাদিন এত কাজ করে এখন বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়ি পাচ্ছে না।অন্তত একটা রিক্সা বা অটো আসলেও হত। যা আসছে সব যাত্রীসহ।একটু জোরেই শ্রেয়া বলে,”আজকে কুফা লাগছে।”

“কুফা কি আন্টি?”

পিছন থেকে বলে মিমি।শ্রেয়া পিছনে তাকিয়ে দেখে ফারাজ আর মিমি দাড়িয়ে।মিমির এমন প্রশ্নে শ্রেয়া ফারাজকে দেখে মাথা নামিয়ে নেয়।শুনে ফেললো ফারাজ।তাও আলাদা ব্যাপার কিন্তু বাচ্চা মানুষ শুনেছে দেখে আরো ইতস্তত লাগে।মিমি আবারও বলে,”কি হলো আন্টি বলো?”

“কুফা মানে বিপদ।কিন্তু তুমি কুফা শব্দটি যেনো আর উচ্চারণ করবে না।”
(ফারাজ বলে।)

“ওকে পাপা।”

মিমিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে ফারাজ।এদিকে শ্রেয়া একবার ফারাজকে দেখছে আবার বাসায় যাওয়ার জন্য রিক্সা বা গাড়ি খুঁজছে।মিমি ফারাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি কি ভুলে গেছো পাপা?”

ভ্রুকুটি করে ফারাজ বলে,”আমি আবার কি ভুললাম?”

“কেউ বিপদে পড়লে হেল্প করতে হয়।তুমি ব্যাড বয় হয়ে গেছো পাপা।কিচ্ছু মনে রাখো না।”

“কে বিপদে পড়লো?”

“ওই যে আন্টি বিপদে আছে।কুফা মানে বিপদ।আন্টি এখন বিপদে আছে।বাসায় যেতে পারছে না।হেল্প করো তুমি।তোমাকে তো আন্টি অনেক হেল্প করে।”

বিড়বিড় করে ফারাজ বলে,”টাকার বিনিময়ে হেল্প করে রে মা।ওটা কাজ কোনো মানবিকতা না যে এভাবে পাপাকে কথা শুনিয়ে দিচ্ছো।”

বলেই ফারাজ গাড়ির হর্ন দিতে থাকে।শ্রেয়ার কানে শব্দ আসলেও পাত্তা না দিয়ে নিজের মত করে রাস্তায় তাকিয়ে আছে।ফারাজ আবারও হর্ন দিচ্ছে।শ্রেয়া কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।এবার ফারাজ শ্রেয়ার কাছে এসে বলে,”মিস শ্রেয়া।”

ফারাজকে দেখে অবাক হয়ে বলে,”জি স্যার?”

“আমার গাড়িতে উঠুন।আমি আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি।”

“দরকার নেই স্যার।আমি পারবো বাসায় যেতে।”
সাহস নিয়ে বললেও শ্রেয়া জানে সে কিচ্ছু পারবে না।ভয়তে মনের ভিতর এমনিতেই কাপছে।একা একটি মেয়ে কখনও এত রাতে বাইরে থাকেনি।আজ প্রথম থাকছে বাইরে। ভয় তো লাগবেই।মিমি এবার বের হয়ে বলে,”মিথ্যা বলতে নেই আন্টি।দাঁতে পোকা হয়।তুমি ভয়তে ঘামছো।আমি দেখতে পাচ্ছি।”

মিমি মেয়েটি অতি পাকা।যদিও বলেছে সত্যি কথা।শ্রেয়া চোখ বড় বড় করে তাকালো ফারাজের দিকে।ফারাজ কাউকে আর কিছু বলতে না দিয়ে শ্রেয়াকে বলে,”গাড়িতে উঠুন।আমি পৌঁছে দিচ্ছি।একই এলাকায় বাসা।সমস্যা হবে না আমার।”

মাথা নাড়িয়ে শ্রেয়া রাজি হলো।ফারাজ ড্রাইভিং সিটে বসতেই শ্রেয়া গাড়ির পিছনের দরজা খুলতে নেয়।মিমি বলে,”সামনে বসো আন্টি।আমি তোমার কোলে বসবো।”

শ্রেয়া আলতো হেসে ফ্রন্ট সিটে বসে মিমিকে কোলে নিলো।ফারাজ ড্রাইভ করছে। আর শ্রেয়া মিমি খেলা করছে।মিমি শ্রেয়ার হাত নিয়ে খেলা করতে করতে বলে,”জানো আন্টি আমিও যাচ্ছি তোমাদের সাথে।”

“হ্যাঁ জানি তো।”

“পাপা তোমার আমার আর কাকীয়ার জন্য একটা রুম নিয়েছে আর পাপা কাকাই একটা রুমে থাকবে।অনেক মজা হবে তাই না বলো?”

“হ্যাঁ মা অনেক মজা হবে।”

মনের ভুলে মিমিকে মা বলেছে শ্রেয়া।বাচ্চাদের এমন বলতে বলতে অভ্যস্ত সে।ফারাজ বিষয়টি লক্ষ্য করলো।কিন্তু কিছু বললো না।কিছু বলার নেই তার।মিমি নিজেও খুশি হয়েছে।

চলবে…?

#আশার_হাত_বাড়ায়|২৭|
#ইশরাত_জাহান
🦋
শ্রেয়ার বাসার সামনে এসে দাড়ালো ফারাজ।তবে শ্রেয়ার বর্তমান বাসায় না আগের টিনের বাসাটা।শ্রেয়া এটা দেখে নিজের মাথায় নিজেই একটা চাপড় দিলো।তারপর বলে,”সরি স্যার।বলতে ভুলে গেছিলাম।আমাদের আজ বাসা পাল্টিয়েছে।এখানে থাকি না।”

“অ্যাড্রেস বলুন নিয়ে যাচ্ছি।”

“আপনার খালাদের বাসায় এসেছি।”

ফারাজ তাকালো শ্রেয়ার দিকে।শ্রেয়া অপ্রস্তুত হয়ে বলে,”আমি জানতাম না ওই বাসাটা ভাড়া নেওয়া হবে বা ওনারা আপনাদের আত্মীয়।কথার ছলে জেনে যাই।অর্পাও এখনও কিছু জানে না।”

“ওকে।”
বলেই গাড়ি ঘোরালো ফারাজ।মিসেস জুঁইয়ের বাসার কথা বলা হয়েছে এটা বুঝলো মিমি।খুশি হয়ে বলে,”আমাদের এত্ত কাছে থাকো তুমি?তুমি জানো ওই বাসার দুই বাসা পিছনে আমাদের বাসা।”

বলতে না বলতেই ফারাজ গাড়ি নিয়ে আসলো শ্রেয়ার বর্তমান বাসায়।গাড়ি থেকে নেমে মিমিকে আদর করলো শ্রেয়া।তারপর ফারাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”আসি।”

শ্রেয়া হাটা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।ফারাজ গাড়ি চালানো শুরু করবে ওমনি মিমি বলে,পাপা দাড়াও।”

ফারাজ থেমে যায়।মিমি গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দেয় শ্রেয়ার কাছে।দৌড়াতে দৌড়াতে বলে,”আন্টি।”

শ্রেয়া মিমির ডাক শুনে ঘুরে তাকালো।মিমি এসে শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে।তারপর শ্রেয়াকে নিচু হতে হাত দিয়ে ইশারা করে।শ্রেয়া নিচু হতেই শ্রেয়ার দুইগালে চুমু দিয়ে মিমি বলে,”তুমি অনেক ভালো।আর এটা বিদায় কিস ছিলো।”

শ্রেয়া নিজেও মিমির দুইগালে চুমু দেয়।তারপর হেসে দিয়ে বলে,”আমিও তাহলে তোমাকে বিদায় কিস জানালাম।”

“আসি তাহলে।বাই বাই।”

“বাই।”

মিমি আবারও দৌড়ে গাড়ির দিকে যেতে থাকে।মিমি যাকে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলে তাকে এভাবেই বিদায় জানায়।ফারাজ গাড়ির ভিতর থেকে দেখছিলো।গাড়িতে উঠে হাত নাড়ালো মিমি।শ্রেয়া নিজেও হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায়।ফারাজ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।শ্রেয়া নিজেই বাসার মধ্যে ঢুকে গেলো।নিজের ব্যালকনি থেকে সবকিছু দেখছে জুঁই।খারাপ লাগেনি বিষয়টি।কিন্তু শ্রেয়া আর ফারাজ নিয়ে বেশিদূর ভাবতেও পারছে না।জিনিয়া এই সম্পর্ক মেনে নিবে না।

ঘরের মধ্যে এসে মাকে দেখে নিলো শ্রেয়া।তারপর গোসল করতে গেলো।গোসল করে এসে দেখে রিমলি কোনো ঘরেই নেই।এদিক ওদিক খোঁজ নিয়ে চলে গেলো ব্যালকনিতে। রিমলি ঘুমিয়ে আছে।তাও যেনতেন অবস্থায়। রিমলিকে আস্তে আস্তে ডাক দিলো।চোখ মেলতেই রিমলি দেখলো সে ব্যালকনিতে ঘুমিয়ে গেছে।শ্রেয়া বলে,”এখানে ঘুমিয়েছিস কেনো?”

“আরে আপু বলো না।ভালো লাগছিলো না।তাই ব্যালকনিতে এসে বসেছিলাম।কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারিনি।”

“আয় ভিতরে।”
বলেই দুইবোন ঘুমোতে চলে যায়।লাইট বন্ধ করে ড্রিমলাইট জ্বালিয়ে রাখা আছে।বিছানায় এক প্রান্তে শ্রেয়া আর আরেক প্রান্তে রিমলি।রিমলি ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু শ্রেয়া ঘুমায়নি।তার চোখের সামনে ফারাজের মুখটা ভেসে আসছে।আর কানে ফারাজের কণ্ঠ।মিমির করা দুষ্টুমি।এই সবকিছু ভাবতে ভাবতে রাত কাটালো শ্রেয়া।ঘুম আর তার হয়নি।

সকাল বেলা আজকে শ্রেয়ার অফিস নেই।বিকালে ফ্লাইট থাকার কারণে এখন অফিসে যাওয়া লাগবে না।ঘরের কিছু কাজ করছে শ্রেয়া।এর মধ্যেই রিমলি ঘরে আসলো।হাতে একটি বাটি।শ্রেয়া প্রশ্ন করে,”কি এনেছিস?”

“একটু চাল আর ডাল বাটা।আসো তোমার মুখে দিয়ে দেই।”

“ওগুলো মেখে কি হবে?এখন ওসবের সময় নেই।”

শ্রেয়ার হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে রিমলি বলে,”আরে আপু বসতো।একটু রূপচর্চার প্রয়োজন আছে।”

শ্রেয়াকে কিছু বলতে না দিয়ে রিমলি রূপচর্চা শুরু করে দিলো।সৃষ্টি বেগম কিছু রান্না করে টিফিন বাটিতে করে দিলেন।শ্রেয়ার ঘরে এসে বলেন,”পথে ঘাটে খুদা লাগলে খাবি।”

রিমলি হো হো করে হেসে দিয়ে বলে,”প্লেনে ওরা নাস্তা দেয় আম্মু।তুমি শুধু শুধু নাস্তা বানালে।”

“তোকে কে বলেছে নাস্তা দেয়?তুই উঠেছিস কখনও প্লেনে?”

“উফ আম্মু তুমিও না।এই ফোনের যুগে এসে কোথাও যাওয়া লাগে?এমনি এমনি জানতে পেরেছি।”

“দিক খাবার প্লেনে।শোন শ্রেয়া,তুই এই খাবার খাবি।বাইরের খাবার কেমন না কেমন হয়।”

শ্রেয়া কিছু বলতে পারছে না।মুখের প্যাকটি শুকিয়ে গেছে।এখন গাল টানটান হয়ে আছে।রিমলি হেসে দিয়ে বলে,”শুধু প্লেনের জন্য কেনো?পুরো কক্স বাজারে থাকার জন্য সাত দিনের খাবার দেও।যদিও ওরা শিওর না।তিন দিনেও চলে আসতে পারে।তবে খাবার বেচে যাবে।”

“বেশি কথা বলিস তুই।”

রিমলিকে আরো কিছু বলতে যাবে শ্রেয়া হাত দিয়ে ইশারা করে থামতে।সৃষ্টি বেগমের হাত থেকে খাবার নিয়ে ইশারা করে চুপ করতে বলে রিমলিকে।সৃষ্টি বেগমকে বুঝিয়ে দিলো ও খাবার নিয়ে যাবে।তারপর আবার ফ্যানের নিচে বসে শ্রেয়া।সৃষ্টি বেগম আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বলেন,”শোন না মা।আমাদের প্রতিবেশী খালিদ ছিলো না?ওর মা বলছিলো চট্টগ্রামে নাকি ভালো ভালো শুটকি পাওয়া যায়।আসার সময় নিয়ে আসবি তো।শুটকি মাছের ঝাল ঝাল ভর্তা কতদিন খাই না।একটু লইট্যা আর ছুরি শুটকি নিয়ে আসবি।শ্রেয়া ভাবছে শুঁটকির যে গন্ধ আসার সময় আনবে কিভাবে।মাথা ভনভন শুরু করেছে।কিন্তু জিহ্বায় পানিও চলে এসেছে।ইতিমধ্যে মাথায় এলো অর্পার কথা।অর্পা থাকতে আর চিন্তা নেই।ব্যাবস্থা হয়ে যাবে।শ্রেয়া এখন চুপ আছে।মুখে ফেসপ্যাক থাকার কারণে হ্যাঁ টুকু বলা সম্ভব না।গালে টান পরবে যে। রিমলি আবারও হেসে দেয়।হাসতে হাসতে বলে,”কাল রাতে অসুস্থ ছিলে তাই এখন মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গেছে।তাই না আম্মু?”

চোখ রাঙিয়ে সৃষ্টি বেগম বলেন,”মেরে পিঠের চামড়া তুলে দিবো।বেশী কথা শিখেছিস।”

“তুমি নিজেই ভেবে দেখো তুমি কি বলেছো?আপু প্লেনে করে বড়বড় লোকদের সাথে যাওয়া আসা করবে আর তুমি কি না শুটকি নিয়ে আসতে বলছো!”

সৃষ্টি বেগম মনটা খারাপ করে রাখলেন।মাথায় ছিলো না যাদের সাথে যাচ্ছে তাদের একটা আলাদা পরিবেশ আছে।এরা তো আর সৃষ্টি বেগমের মতো পরিবেশের না।যে সাংসারিক কিছু পেলে কিনে নিয়ে আসবে।মায়ের মুখ নিভে আসা দেখে শ্রেয়া এবার তাড়াতাড়ি করে মুখ ধুয়ে আসলো।রিমলিকে বকা দিয়ে মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ওহহো আম্মু।চিন্তা করোনা তো।ব্যাবস্থা একটা হয়ে যাবে। আর শুটকি মাছ আনলে তুমি যা রান্না করবে তার অর্ধেক তো তোমার ছোট মেয়ের পেটেই চলে যায়।সে আবার পরিবেশ দেখে।”

চলতে থাকে শ্রেয়া আর রিমলির খুনশুটি।সৃষ্টি বেগম এখন নিজের চোখটা জুড়িয়ে দেখছেন।এই দৃশ্য স্বামী বেঁচে থাকতে অনেক দেখেছিলেন।আজ আবারও দেখছেন।না দেখে না বুঝে হুট করে ভালো ব্যবহার আর টাকা পয়সা আছে এমন দেখে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন।ভালো ভালো কথা বলে যা চেয়েছিলেন সৃষ্টি বেগম ওদের তাই তাই দিয়ে দিলেন।সহজ সরল সৃষ্টি বেগম ছোট থেকে যেভাবে সবাইকে চলতে দেখেছেন।ভেবেছিলেন এটাই মেয়েদের সুখ।

দুপুরের দিকে এনি আর অর্পা এসেছে।সাথে এসেছে মিমিও।ফারাজ আর মিরাজ একসাথে এয়ারপোর্টে যাবে।এনি কিছু প্যাকেট শ্রেয়ার হাতে দিয়ে বলে,”বিয়েতে আমরা সবাই সেম ড্রেস পরব।তোমার জন্যেও এনেছি।গুছিয়ে নেও।”

শ্রেয়া ব্যাগ গুছিয়ে নিলো।সৃষ্টি বেগম সবাইকে কেক দিলো।যেটা সকাল সকাল শ্রেয়া আর রিমলি মিলে বানিয়েছিলো।এনি কেক খেয়ে বলে,”কে বানিয়েছে এই কেক?একদম রেস্টুরেন্টের মতো।”

শ্রেয়া বিছানায় বসেছিলো।শ্রেয়ার কাধে হাত দিয়ে রিমলি বলে,”আমার আপু বানিয়েছে।”

অবাকের সাথে এনি বলে,”এভাবে পারফেক্ট কেক কিভাবে সম্ভব?আমরা হুবহু সব জিনিসপত্র এনেও তো পারি না।”

“আমাদের যশোরে কুকিং কোর্স হতো।সপ্তাহে দুইদিন করে।আপুর খুব ভালো লাগে রেস্টুরেন্টের খাবার বাসায় রান্না করতে।খুব ইচ্ছা ছিলো যশোর ফুড হাউজ খোলার।তাই আব্বু আমাকে আর আপুকে কোর্স করাতো।চাইনিজ আইটেম শিখতাম আমরা।সবকিছু শিখেছিলাম।আব্বু ছোট দেখে একটা ওভেন কিনে দেয়।আমরা কত আনন্দের সাথে বিকালের নাস্তা বানাতাম।প্র্যাকটিস করতাম পারফেক্ট কেক বানানোর।পেরেও যাই আমরা।কিন্তু আব্বু মারা যাওয়ার পর সব পাল্টে গেলো।আমাদের বিলাসিতা কমতে থাকলো।সুসময়ে সব থাকে।দুঃসময়ে সব হারিয়ে যায়।ওভেনটাও এক সময় নষ্ট হয়ে গেলো।আমরা সব শিখে রেখেও কোনো কাজে আসলো না।আজ হঠাৎ একটু খেতে ইচ্ছে করলো।অভিজ্ঞতা থাকায় জুঁই আন্টি বললেন ওনার ওভেনে বানাতে।”

কথাগুলো বলতে বলতেই রিমলির মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে এলো।রুমে সবাই ছিলো।মিসেস জুঁই নিজেও সেখানে ছিলেন।বোনের নাতি তো নিজেরও নাতি।মিমিকে দেখতে এসেছেন।রিমলির থেকে এসব শুনে তিনি বলেন,”তোমাদের বাবা তোমাদের অনেক কিছুই শিখিয়েছেন তাই না?”

মাথা নাড়িয়ে রিমলি বলে,”বাবা আমাদের অনেক কিছু করতেই সাহস দিতো।আমরা দুই বোন যা চাইতাম বাবা সাথে সাথে এনে দিতো।মা বারণ করলেও শুনত না।বাবা ছিলো আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড।”

দীর্ঘশ্বাস নিলো রিমলি।শ্রেয়ার থেকে রিমলি একটু বেশী তার বাবাকে মনে করে।কারণ রিমলি যেমন উড়নচণ্ডী ওদের বাবা ওদের সেভাবে গড়ে তুলতে চাইতো।শ্রেয়া হয়েছে মায়ের মত।ভীতু লাজুক এমন ধরনের।কেউ কিছু বললে মাথা নত করে শুনত শ্রেয়া।আর রিমলি মুখের উপর জবাব দিয়ে দিতো।ফারাজ কল করেছে।ওরা বেড় হচ্ছে এয়রাপোর্টের দিকে।এনি এবার তাড়া দিয়ে বলে,”চলো চলো ফারাজ কল দিয়েছে।এবার যেতে হবে।”

মা আর বোনকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে উঠলো শ্রেয়া।সৃষ্টি বেগম কান্না করে দিলেন।এটা সবসময় হয়।শ্রেয়া বিয়ের পর যে কয়বার যশোরে এসে আবার ঢাকায় আসতো তখনও এমন কান্না করতেন সৃষ্টি বেগম।মেয়ে দূরে গেলেই বুকের ভিতর শূন্যতা অনুভব করে। রিমলি জড়িয়ে ধরে সৃষ্টি বেগমকে।সৃষ্টি বেগম ছোট মেয়েকে দেখে আলতো হেসে ঘরে চলে যান।

এয়ারপোর্টে এসে দাড়ালো শ্রেয়া।এতদিন সে এয়ারপোর্ট গেট অব্দি ঘুরতে পারতো।যশোরের এয়ারপোর্টের আশেপাশে ঘোড়ার জায়গা আছে।ওখানে দাঁড়িয়ে প্লেন দেখা যেতো।কিন্তু আজকে সে প্লেনে উঠতে পারবে।এটা ভেবে মনটা খুশিতে ভরে গেলো।মিমি অনেকবারই প্লেনে উঠেছে।কিন্তু তারপরও মিমি প্লেন দেখলে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে।আজও তাই করছে।ফারাজ ও মিরাজ এসে দাড়ালো ওদের সামনে।আজকে ফারাজ শার্ট কোর্ট পরে নেই।শুধু একটি শার্ট আর জিন্স পরে আছে।এই গরমে কোর্ট পরতে ইচ্ছে করলো না তার।শ্রেয়া আজ ভিন্ন লুকে দেখছে ফারাজকে।একদম সাধারণ মানুষের মত লাগছে।কিছুক্ষণ ফারাজকে দেখে চোখ সরিয়ে নিলো।মিমির হাতটা ধরে চলে গেলো এয়ারপোর্টের ভিতরে।সকল নিয়ম কানুন পালন করে প্লেনে নিজস্ব সিটে বসেছে সবাই।শ্রেয়া বসার পর ওর পাশে মিমি বসেছে।তার পাশেই ফারাজ।না চাইতেও শ্রেয়ার মুখে শীতল হাসির রেখা দেখা দিলো।কিন্তু কেনো শ্রেয়া এখনও বুঝে উঠতে পারছে না।শুরুতে হয়তো শ্রেয়া অনুভব করলেও বুঝতে পারবে না।মিমির সাথে কথা বলতে থাকে।ঠিক তখনই একটি মেয়ে(বিমানবালা) হাত ইশারা করে সবকিছু বুঝিয়ে দেয়।অন্যদিকে মাইকে আরো একটি মেয়ের কণ্ঠ ভেসে আসছে।সবাই সিটবেল্ট বাঁধতে থাকে।এটা দেখে শ্রেয়াও বাঁধতে চায়।কিন্তু যে মেয়েটি ইশারা করে দেখিয়ে দেয় সে এত দ্রুত বুঝিয়ে দেয় যে শ্রেয়া তাল মিলিয়ে কিছুই করতে পারেনি।এখনও হাতে বেল্ট নিয়ে বসে আছে।মিমির বেল্ট ফারাজ লাগিয়ে দিয়েছে।শ্রেয়া এখনও বেল্ট হাতে নিয়ে বসে আছে।পারছে না বেল্ট লাগাতে।ওদিকে বেল্ট লাগানোর পর পরই প্লেন নড়ে ওঠে।এখনই আকাশে উড়াল দিবে।প্লেনের এভাবে উপরে ওঠার সাথে সাথেই ভয়তে কেপে ওঠে শ্রেয়া।একেতো এই প্রথম তার প্লেন জার্নি।আবার বেল্ট এখনও খোলা।কাপতে কাপতে না চাইতেও শ্রেয়া পাশে থাকা মিমিকে জড়িয়ে ধরতে চায়।কিন্তু মিমি ছোট হওয়ায় মিমির নাগাল পায় না।চোখ বন্ধ করা শ্রেয়ার মাথায় নেই মিমি পাশে বসে থাকলেও সে তার থেকে অনেকটাই নিচে।বেখেয়ালে শ্রেয়ার হাত আবারও যায় ফারাজের গলার দিকে।খামচে ধরে আবারও।চোখ বন্ধ করে বিপদের দোয়া পড়ছে।বসে থাকা মিমি মাথা উচু করে দেখছে শ্রেয়াকে।শ্রেয়ার ভীতু মুখ দেখে সে কিছুই বলতে পারছে না।এদিকে ফারাজ তার গলার ব্যাথায় তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার দিকে।অর্পা হা করে মিরাজের দিকে তাকালো।মিরাজ তো এবার বলেই ফেলে,”এই তোমার বান্ধবী কি আমার ভাইয়ের গলাটাই বোঝে।ভয় পেলেই কেনো ভাইয়ের গলা খামচে ধরতে হবে?”

অর্পা ক্ষিপ্ত নয়নে মিরাজকে বলে,”আমি যখন প্লেনে উঠেছিলাম তখনকার কথা ভুলে গেছো?”

“একদম মনে আছে।তুমি তো প্লেনে ওঠার সময় আমার কোলে পরে গেছিলে।আর আমি হিরোদের মত তোমাকে কোলে নিয়ে নেই।”

“তোমার বড়ভাইয়ের সামনে কি শুরু করেছিলে।ছিঃ!”

“এই একদম ছিঃ করবে না।আমি আমার বউকে টুকুস করে চুমু দিয়েছিলাম।তাতে কার বাপের কি?”

“নির্লজ্জ কোথাকার।”

“বউয়ের সাথে নির্লজ্জ না হলে স্বামীর পরিচয় থাকে না।লজ্জাবতী হবে তো বউয়েরা।স্বামী সেই লজ্জা নিবারণ করে নিবে।”

অর্পা কথাগুলো শুনেও না শোনার মতো করে আছে।প্লেন এখন আকাশে উড়ছে।সবকিছু স্বাভাবিক।মিমি এখনও শ্রেয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।শ্রেয়া চোখ বন্ধ করে দোয়া পড়ছে।পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখে ফারাজ হালকা কেশে বলে,”এভরিথিং ইজ ফাইন মিস শ্রেয়া।চোখ খুলতে পারেন।”

ফারাজ বলতে পারছে না তার গলার কথা।শ্রেয়া ধীরে ধীরে চোখ খুলে ফারাজের দিকে তাকালো।ফারাজও তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার দিকে।কিন্তু দুজনের তাকিয়ে থাকার ধরন এক না।একেকজন একেক অনুভূতিতে আছে।শ্রেয়া আছে ফারাজের উপর মোহিত দৃষ্টিতে আর ফারাজ আছে পরিস্থিতির থেকে মুক্তি পাওয়ার দৃষ্টিতে।ফারাজকে কিছুক্ষণ দেখার পর যখন দেখলো আবারও ফারাজের গলার দিকটা খামচে আছে শ্রেয়া হাত সরিয়ে নেয়।লজ্জা পেয়ে পাশে তাকালো।সবাই এখন সিটবেল্ট খুলেছে।এখন আর কোনো রিস্ক নেই।ফারাজ উঠে ওয়াশরুমে গেলো।গলার দিকটা দেখে বলে,”মেয়ে না ডায়নি?বড় বড় নখ দিয়ে পরপর দুইদিন খামচে দেয়।”

“মানবতার খাতিরে কিছু বলতে পারছো না তাই না ভাই?”
পিছন থেকে মিরাজ বলে।ফারাজ পাত্তা দিলো না কথাটা।এই মিরাজ সবসময় মজা নিতে থাকে।কাউকে ছাড়ে না।

চলবে…?