আশার হাত বাড়ায় পর্ব-২৮+২৯

0
162

#আশার_হাত_বাড়ায়|২৮|
#ইশরাত_জাহান
🦋
মিরাজ একটি মলম নিয়ে ফারাজের গলায় লাগিয়ে দিতে থাকে। ফারাজের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,”এবার থেকে তোমার প্রেশারের ঔষধের সাথে এই মলম রেখে দিও।তোমার যে অ্যাসিসট্যান্ট!কাজে লাগবে ভাই।”

“ফালতু বকবি না।”

“হ্যাঁ হ্যাঁ আমিই তো খালি ফালতু বকছি।সরাসরি তো সে ঘটিয়ে দিলো।তাও কি না পরপর দুইদিন।”

ফারাজ এই বিষয় এড়াতে বলে,”হয়েছে তোর মলম লাগানো?”

“হুম হয়েছে।কিন্তু আমি ভাবছি এমন কোনো মলম আছে যেটা বারবার ক্ষত হলেও স্পট পড়বে না।”

“না নেই।”

“তাহলে আর কি?এই মলমটাই তোমার কাছে রেখে দিতে হবে।”

ফারাজ এবার হাত উচু করে দেখায়।মিরাজ দিলো দৌড়।সিটের কাছে এসে দাড়াতেই অর্পা চলে আসে মিরাজের কাছে।এতক্ষণ শ্রেয়ার সাথে কথা বলছিলো।ফারাজ ফ্রেশ হয়ে চলে আসে।তারপর ল্যাপটপ বেড় করে শ্রেয়াকে বলে,”আমাদেরকে দুইদিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে।পরশু মিটিং।আমি ল্যাপটপে সব চেক করছি আপনি ফাইলগুলো দেখুন।”

মাথা ঘুরতে থাকলো শ্রেয়ার।ভাবছিলো এখন একটু ঘুমাবে।রাতে ঘুম হয়নি।এখন ফারাজ তাকে কাজ দিলো।শ্রেয়া মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না।অসহায় মুখ করে ফারাজের থেকে ফাইল নিয়ে দেখতে থাকে।মিমি মাঝখানে অসহায় এক পিচ্চি।একপাশে একজন ল্যাপটপ অপরপাশে আরেকজন ফাইল নিয়ে ব্যাস্ত।মিনিট দশ দুজনকে দেখার পর বিরক্ত হয়ে উঠে গেলো অর্পার কাছে।অর্পার কোলে বসে বলে,”ধুর!ওরা এত কাজ করে কেনো?প্লেনে আনন্দ না করে কাজ কাজ আর কাজ।ভালো লাগে না।”

অর্পা এবার মিরাজের দিকে তাকিয়ে মিরাজকে খোচা মেরে বলে,”তোমার ভাই এমন কেনো হ্যাঁ?কোথায় এখন একটু গল্পগুজব করবে।সবাই আনন্দ করবে তা না।উল্টো সে এখন কাজ নিয়ে ব্যাস্ত।”

অর্পাকে শান্তনা দিয়ে মিরাজ বলে,”রসে ভরা বর থাকতে তুমি ভাসুরের দিকে নজর দেও কেনো বউ?”

রেগে গেলো অর্পা।মিরাজের দিকে চোখ বড় বড় করে বলে,”কি বললে তুমি?আমি ভাসুরের দিকে নজর দেই?”

জিহ্বায় কামড় দিয়ে মিরাজ বলে,”আমি এটা বোঝাতে চাইনি।আমি বোঝাতে চেয়েছি তোমার বর তো অনেক রোমান্টিক।কিন্তু কাছে আসলেই তুমি দূরে ঠেলে দেও।তাহলে রসকষহীন ভাসুরকে রোমান্টিক হতে বলো কেনো?আমার ভাই কি তার বউয়ের সাথে আছে যে রোমান্টিক হবে?”

“পাশে মিমি আছে এটা ভালো করে দেখো।”

অর্পার বলতে দেরি মিমির পাল্টা প্রশ্নের দেরি নেই।মিমি বলে,”রসকষহীন কি কাকিয়া?”

“দেখেছো?বলেছিলাম না?মিমির সামনে এসব আর বলবে না।”

“এই বিষয়ে আগে আমি না আগে তুমি বলেছো।যেটা মিমি শুনেছে।সুতরাং দোষ এবার আমার না দোষ তোমার।”

“একদম আমার নামে দোষ দিবে না।তুমি দোষী।”

“হ্যাঁ সেই।দোষ বর করুক আর বউ।দোষী তো বরের হবেই।”

মিমি এদের ঝগড়া দেখে চিল্লিয়ে বলে,”তোমরা ঝগড়া করছো কেনো?”

মিমির চিৎকার শুনে ফারাজ সহ অনেকেই ঘুরে তাকালো।ফারাজ আর শ্রেয়ার সিট কাছে থাকায় ওরা শুনতে পেলো খুব তাড়াতাড়ি।ফারাজ বলে ওঠে,”কি হয়েছে তোমার?”

মিমি অর্পার কোল থেকে উঠে ফারাজের কাছে এসে বলে,”আচ্ছা পাপা রসকষহীন মানে কি?তুমি নাকি ওটা।আমি জিজ্ঞাসা করলাম রসকষহীন মানে কি?কাকীয়া আর কাকাই এখন এই নিয়ে ঝগড়া করছে।”

অর্পা এবার শুকনো ঢোক গিলে।এখন যে কথার প্রেক্ষিতে এই শব্দটি উচ্চারণ হয়েছে ওই কথা আবার না উঠে আসে।ফারাজ চোখ গরম করে মিরাজের দিকে তাকিয়ে মিমিকে আবার ওদের মাঝখানে বসিয়ে দিলো।শ্রেয়া ঝিমিয়ে পড়েছে।ঘুম আসছে তার।এরমধ্যে প্লেনের খাবার আসলো।শ্রেয়া খাবার দেখে ভাবছে,”হাত দিয়ে খাওয়া যাবে তো নাকি এদের মত ভদ্রলোক দেখাতে চামচ আর টিস্যু দিয়ে পেঁচিয়ে খেতে হবে?”

শ্রেয়ার ভাবনার মাঝেই শ্রেয়ার সামনে কড়া করে বানানো কফির কাপ রাখলো ফারাজ।বলে,”আপনাকে টায়ার্ড দেখাচ্ছে মিস শ্রেয়া।এটা নিন।একটু পরেই আমরা পৌঁছে যাব।এখন ঘুমালে ব্রেনের সমস্যা হবে।”

ফারাজের দিকে তাকিয়ে শ্রেয়া মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে।আজ কাছের মানুষ বাদেও কেউ তার খোঁজ নিলো।এইটুকু যত্ন তো মেয়েরা তার কাছের মানুষের থেকে ডিজার্ভ করে।শ্রেয়া সবসময় চাইতো রনি তাকে একটু বুঝুক।তাকে নিয়ে বড় বড় ক্যাফেতে না যাক অন্তত ছোট একটি পার্কে নিয়ে যাক।রিক্সায় করে ঘুরতে না যাক একে অপরের হাত ধরে পায়ে হেঁটে ঘুরতে যাক।কিন্তু আফসোস এগুলোর কিছুই হয়নি।ফারাজ আর রনিকে নিয়েএই চিন্তা ধারার মাঝেই শ্রেয়ার মাথায় আসলো সে ডিভোর্সী।তার উপর সে গরীব। ফারাজকে নিয়ে চিন্তা করা তার উচিত না।একজন ডিভোর্সী আর গরীব মেয়ে হয়ে ফারাজের মত প্রভাবশালী লোকের দিকে তাকানো বেমানান।কিন্তু শ্রেয়ার এই দোটানা মন তো একেকবার একেক কথা বলে।কখনও ভালো লাগার দৃষ্টিতে ফারাজের দিকে মোহিত হয়ে যায় আবার কখনও বাস্তবে ফিরে আসলে নিজেকে ধিক্কার জানায়।শ্রেয়ার ভাবনার মাঝে মিমি বলে,”তোমাকে তো নানু খাবার দিয়েছিলো।ওগুলো কোথায়?”

আসলে মিমি জানে ওটাতে কেক আছে।যেটা মিমির খুব বেশি ভালো লাগে।বাসায় থাকতেই মিমি দুই পিচ খেয়েছিলো।শ্রেয়া আর ওর ভাগের কেক খেতে পারলো না।মিমির এই ভালোলাগা দেখে নিজের জন্য পিচ করা কেক মিমিকে দিয়েছিলো।এখন মিমির মুখের দিকে তাকাতে বুঝতে পারলো মিমি কেক খাওয়ার জন্য এমন করছে।আলতো হেসে শ্রেয়া বাটি খুললো।ওখানে ঘরোয়াভাবে বানানো পাস্তা আর দুই পিচ কেক আছে।কেক মিমির খুব পছন্দের খাবার।প্লেনে দিয়েছে সেন্ডুইস আর ড্রিংক।যেটা মিমির খেতে ইচ্ছা করছে না।শ্রেয়া মিমিকে কেক দিলো।কেক নিয়ে খেতে থাকে মিমি।ফারাজ দেখেও কিছু বলেনি।মেয়ে তার আনন্দে আছে এটাই অনেক।শ্রেয়ার বাটিতে আরো একটি কেক আছে।আর পাশে ফারাজ বসে আছে।শ্রেয়া খেতে যেয়েও খেতে পারলো না।বিবেগে লাগলো।তাই মিমির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,”এটা তোমার পাপাকে দেও।”

মিমি খুশি হয়ে সাথে সাথে ফারাজকে কেক দিয়ে বলে,”পাপা এই নেও কেক।আন্টি দিয়েছে।”

“তোমার আন্টি খায়নি কিছু।তাকেই খেতে বলো।আমি খাবো না।”

মিমি জানে ফারাজ একবার যখন বলেছে খাবেনা তখন খাবে না।মিমি এবার কেকটা অর্ধেক করে অল্প একটু ফারাজের মুখের কাছে নিল।ফারাজের ঠোঁট ছুই ছুঁই কেক হওয়ায় কেকটি ফারাজ খেয়ে নিলো।বাকি কেকটুকু শ্রেয়ার কাছে দিয়ে বলে,”এটুকু তুমি খাও।আচ্ছা পাপা কেক কেমন হয়েছে?”

কেক খেয়ে ফারাজ বলে,”হুম টেস্টি ছিলো।তোমার ভালো লাগলে বলো।নেক্সট টাইম এই রেষ্টুরেন্টের থেকেই কেক অর্ডার দিবো।কিন্তু হাইজেনিক খাবার হলে কিনে দিবো।নাহলে না।”

ফোকলা দাঁতে হাসি দিয়ে মিমি বলে,”এটা আন্টি বানিয়েছে।আজ সকালে।”

ফারাজ আড়চোখে দেখলো শ্রেয়াকে।তারপর আবারও ল্যাপটপে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।মিমি মুখটা আবারও ফ্যাকাশে করে বসে রইলো।শ্রেয়া মিমির মুখের ভাব দেখে ফাইল পাশে রেখে মিমির হাত ধরে।মিমিকে নিজের কাছে এনে গল্প করতে থাকে।তারপর অর্পা ও এনির সাথে সবাই প্লেনে আড্ডা দিতে থাকে।

দুপুরের লাঞ্চ সেরে থানায় এসেছে শিহাব।নিজের চেয়ারে বসেছে মাত্র।থানায় বসে কি কি কেস আছে এগুলো দেখছিলো।এক সময় ক্লান্ত অনুভব করে তাই এখন বিশ্রাম নিতে থাকে।ফোন বেড় করে কিছু রিলস দেখছিলো।যেহেতু শিহাব পুলিশ তাই সে সবসময় দেশের বিষয়ে খোজ নেয়।খবরের কিছু পেজে তার ফলো দেওয়া আছে।কিছু ভিডিও দেখতে দেখতে শিহাবের নজরে আসলো ফারাজ আর শ্রেয়ার একটি ভিডিও।পাঁচ মিনিটের ভিডিও।এই ভিডিওতে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছিলো ফারাজ আর শ্রেয়া।শিহাব মনোযোগ দিয়ে দেখে।অল্প সাউন্ড দেওয়া ছিলো।ভিডিও দেখে জেলের দিকে চোখ যায় শিহাবের।রনি বসে আছে জেলে।সামনে পাহারাদার।মুচকি হেসে শিহাব ফোনের সাউন্ড বাড়িয়ে দিলো।শুরু থেকে আবারও ভিডিও চালু করলো।রনির কানে পৌঁছালো সকল কথা।শ্রেয়ার সফলতার কথা শুনতে পাচ্ছে রনি।মনে মনে ভাবছে,”জীবন কাকে কিভাবে পাল্টে দেয় এটা বোঝা মুশকিল।এতদিন আমি আরাম আয়েশে ছিলাম আজ আমি জেলে।আর যে ছিলো জেল নামক সংসারে আজ সে আরাম আয়েশে।একেই বলে ভাগ্য।”

শিহাব এবার ফোন বন্ধ করে পাশে থাকা রফিককে বলে,”বুঝলে রফিক।কিছু পুরুষ মানুষ আছে হীরে চিনতে ভুল করে।তাদের মনেই থাকে না বৈধ স্ত্রীর মর্যাদা কি।বাইরের চাকচিক্য দেখে ঘরের সৌন্দর্যের মর্যাদা দিতে তাদের মন সায় দেয় না।কিন্তু সময় কি সবার এক যায়? উহু যায় না।তাই তো সময় ঘুরেফিরে তার কর্মের ফল দেখিয়ে দেয়।”

রনির চোখ বেয়ে আজ পানি পড়ছে।সত্যি সে তার জীবনের মূল্যবান সম্পদের কদর বুঝলো না।এখনও মনে পড়ে শ্রেয়া চলে আসার দিন কতটা স্নিগ্ধ লাগছিলো তাকে।কিন্তু রনি ওইদিনও শ্রেয়াকে চিনলো না।বউয়ের মর্যাদা দিলো না।একসময় শ্রেয়া বাচ্চা নেওয়ার জন্য কত আকুতি মিনতি করেছিলো।কিন্তু রনি বাচ্চা হতে দেয়নি।এখন রনি ভাবছে,”একটা বাচ্চা হলে হয়তো আজ আমার সংসার ভাঙতে পারতো না।আমিও আজ এখানে আসতে পারতাম না।”

ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রনি।এখন আর এসব ভেবে লাভ নেই।অন্যকে যেমন জীবন উপহার দেওয়া হয়েছে আজ সে তেমন জীবনটাই পাচ্ছে।

মাত্র নিজেদের জন্য বুক করা রিসোর্টে আসলো সবাই।এনি ইভা ও লিজা এক রুমে,শ্রেয়া মিমি ও অর্পা এক রুমে,ফারাজ ও মিরাজ এক রুমে থাকবে।রুমে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে শ্রেয়া।ঘুমন্ত শ্রেয়ার বামপাশে শুয়ে পড়ে মিমি।ঘুমের ঘোরে মিমিকে জড়িয়ে রাখে। মিমিও শুয়ে শুয়ে শ্রেয়ার চোখমুখ দেখতে থাকে।ভালো লাগে মিমির কাছে।শ্রেয়ার গলার কাছে নাক নিয়ে কিছু শুকতে থাকে।মনে মনে বলে,”মায়েদের গা থেকে কি এই গন্ধটা আসে নাকি অন্য গন্ধ!আমার কাছে তো আন্টির গা থেকে আসা গন্ধটা ভালো লাগছে।”

কিছুক্ষণ শ্রেয়াকে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যায় মিমি।অর্পা গোসল করে এসে দেখে শ্রেয়া ও মিমি একে অপরকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।অর্পা সাথে সাথে ছবি তুলে নেয়।শ্রেয়ার মুখে উপর ফুলের স্টিকার দিয়ে স্টোরি দিলো অর্পা।ফ্রেন্ডলিস্টে ফারাজ থাকার কারণে দেখলো অর্পার স্টোরি।মেয়ের বুকের উপর শ্রেয়ার হাত আর মিমির হাত দেখে বোঝা যাচ্ছে সেও জড়িয়ে আছে শ্রেয়াকে।ফারাজ একটি কেয়ার রিয়েক্ট দিলো।কিছু একটা ভেবে অর্পাকে লিখলো,”ছবিটা আমাকে দেও।”

অর্পা দিলো ছবিটি। আরো কিছু কিছু ছবি আছে সেখানে শ্রেয়া ও মিমির।ইচ্ছা করেই এই সব ছবি দিয়েছে।ফারাজ দেখছে মাতৃত্বের স্বাদ ছাড়া বেড়ে ওঠা মিমি এখন অজানা এক নারীর বক্ষে সুখ খুঁজছে।মেয়ের এই সুখ দেখতেই তো তাকেও এনেছে কক্স বাজারে।যতটুকু সময় যাক মেয়ে তার হাসিখুশিতে সময় কাটাক।

*****
সকালে ঘুম থেকে উঠে রিমলি কিছু কাগজপত্র গোছাতে থাকে।আজকে কলেজে ভর্তি হবে।এই তো বাসার কাছেই তার কলেজ।পায়ে হেঁটে গেলে পনেরো কি দশ মিনিট লাগবে।রিমলি টাকা ও কাগজ ব্যাগে গুছিয়ে নিতে নিতে সৃষ্টি বেগম ঘরে ঢুকলেন।বোরকা ছাড়া সৃষ্টি বেগমকে দেখে রিমলি রাগ দেখিয়ে বলে,”তুমি এখনও রেডি হওনি!ওদিকে দেরি করে গেলে ভিড় হবে তো।তখন রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে তোমারই কষ্ট হবে।কতবার বলছি তাড়াতাড়ি করো।দরকার হলে আজ বাইরে লাঞ্চ করবো।কিন্তু তারপরও দেরি হয় তোমার?”

“ওরে মা থাম তুই।আমি যাবো না তোর সাথে।”

অবাকের সাথে রিমলি বলে,”তাহলে কে যাবে?আম্মু তুমি ছাড়া আমি একা একা গেলে আবার তুমিই চিন্তা করবে।তখন আরেক ঝামেলা।”

“আমার মত একজন হ্যান্ডসাম পুলিশ থাকতেও আন্টির চিন্তা হবে এটা তো মানা যায় না।”

শিহাবের মুখে এমন কথা শুনে পিছনে তাকালো রিমলি।মিনমিন করে বলে,”ফেবিকল।”

মিসেস জুঁই নিজেও এসেছেন।সৃষ্টি বেগমের সাথে সময় কাটাবেন তাই।সৃষ্টি বেগম রিমলির দিকে তাকিয়ে বলেন,”আমি তো ঢাকা শহরের কিছুই চিনি না।শুধু শুধু তোর সাথে যেয়ে সময় নষ্ট।শিহাব বাবা তো ছেলে মানুষ।তোকে তাও বুঝেশুনে ভর্তি করিয়ে দিবে।আমি নাহয় অন্যদিন যাবো।”

ভ্রুকুটি করে তাকালো রিমলি তার মায়ের দিকে।মিসেস জুঁই লক্ষ্য করলেন বিষয়টি। রিমলি যে বিষয়টি পছন্দ করছে না এটা বুঝলো।সৃষ্টি বেগম নিজেও প্রথমে এমন নাকোচ করেছিলেন।মিসেস জুঁই এই ব্যাপারে খুশি হলেন যে রিমলি অনেক বুদ্ধিমতি।এই বয়সে এসেও স্ট্রেট থাকে।গ্রামের মেয়েরা শহরে আসলে প্রথম দিকে ঘাবড়ে যায়। রিমলি এমন না।অবশ্য যশোর পৌরসভার পাশেই রিমলিদের বাসা।তাহলে শহরের কালচার জানবে না এটা ভাবা ভুল।হুবহু ঢাকার মানুষের মতো নাহলেও কোনো অংশে কম না যায় না যশোরের মানুষ।শ্রেয়ার থেকেও রিমলি এনাফ স্মার্ট।মিসেস জুঁই খেয়াল করেছেন তার ছেলে রিমলিকে নিয়ে সেনসিটিভ।কিন্তু ছেলে বাড়াবাড়ি কিছুই করবে না।আস্থা আছে তার মা হিসেবে।তারপরও চোখে চোখে রাখেন ছেলেকে।ভুল কিছু হওয়ার আগে তিনি সামলে নিবেন। রিমলির কাছে এসে মিসেস জুঁই বলেন,”চিন্তা করোনা।আমার ছেলে তোমাকে ভর্তি করতে সাহায্য করবে।আমি আমার ছেলেকে চিনি মা।আর যদি বান্দরগিরি করে আমাকে বলবে আমি ওকে শায়েস্তা করবো।”

রিমলি হেঁসে দেয়।সৃষ্টি বেগমকে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানায়।শিহাব বাইক নিয়েছে। রিমলি বাইকের পিছনে বসেছে।শিহাবকে ধরেনি বরং মাঝখানে ব্যাগ দিয়ে রেখেছে।তাই রিমলিকে খোচা দিয়ে বলে,”দয়া করে রোমান্টিক উপন্যাস পড়বে।তাহলে বুঝবে হিরো হিরোইন কিভাবে চলতে হয়।”

“আমার হিরো আসলে আমি পড়বো।আপনাকে মাথা ঘামাতে হবে না।”

রিমলির হিরো অন্য কেউ হবে এটা শুনেই শিহাবের মাথা ঘুরে গেলো।জোরে স্প্রিড দিয়ে বাইক চালাতে শুরু করেছে।।রিমলি এবার টাল সামলাতে পারলো না।চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলে,”ও মা গো!ও আল্লাহ গো!আমকে এই পুলিশ না ফুলিশ ব্যাটা আজ শেষ করে দিলো।আমি আজ পয়দা হওয়ার দিন পটল তুলবো।”

বলতে বলতে শিহাবের কাধে হাত রাখে রিমলি।অল্প রাস্তা হওয়ায় পৌঁছে যায় কলেজের সামনে।এখনও চোখ বন্ধ করে শিহাবকে ধরে আছে সে।দুষ্টু হাসে শিহাব।বাইকের ছোট্ট আয়নায় রিমলির মুখ দেখে মিনমিন করে বলে,”তোমার জীবনের হিরো আমিই হবো।দরকার হয় এভাবে ভয় দেখিয়ে বা জোর করে।ভালো যখন বেসেছি তুমি আমারই হবে।”

চলবে…?

#আশার_হাত_বাড়ায়|২৯|
#ইশরাত_জাহান
🦋
ঘুম থেকে উঠে শ্রেয়া দেখতে পেলো ওর কোলে ঘুমিয়ে আছে মিমি।সেই যে রাতে ঘুমিয়েছে এখন উঠলো।এটাকে সাধারণত অলস ঘুম বলা হয়।সময়ের থেকেও বেশি ঘুম শরীরের জন্য ক্ষতিকর আবার রাত জেগে থাকাটাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর।এই দুইটাই শ্রেয়া করেছে।তাই এখন তার মাথা ধরেছে।কিন্তু মিমির মুখটা দেখতে এতটাই স্নিগ্ধ লাগছে যে এখান থেকে যেতেই ইচ্ছা করছে না।ঘুমন্ত মিমি এখন চুপ হয়ে আছে।জেগে থাকলেই লাফালাফি আনন্দ হইহুল্লোড় করতো।এগুলো এখন মিস করছে শ্রেয়া।চঞ্চল মিমিকে একটু বেশিই ভালোবেসেছে সে।মিমির মুখের দিকে তাকিয়ে আফসোস হয় শ্রেয়ার।একটা বাচ্চার জন্য মেয়েরা কতটা আগ্রহ দেখায় আর সেখানে কি না অহনা এই বাচ্চা মেয়েটার মুখ দেখে দুর্বল হলো না।বাকি সব কথা বাদ বাচ্চাটাকে যে সে জন্ম দিয়েছে এটা নিয়েও তো আলাদা অনুভুতি হওয়া উচিত ছিলো।শ্রেয়া যখন বিয়ে হয় তখন তাকে এক প্রতিবেশী বলেছিলো,”তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিয়ে নেও।বাচ্চার মুখ দেখলে তোমার সময় এমনি কেটে যাবে।”

শ্রেয়া লজ্জা পেতো।আরেকদিন রনির এক আত্মীয় এসেছিলো।তাদের মন মানসিকতা ছিলো রনিদের থেকেও ভালো।রনির কাকাতো বোন।চার মাসের বাবু ছিলো তার কোলে।রনির ওই বোন বেড়াতে আসলেও তার বেশিরভাগ সময় কাটতো বাচ্চার পিছনে।শ্রেয়াই ঘরের সব কাজ করে দিতো।কিন্তু বাচ্চা কান্নার আওয়াজে বিরক্ত হতো রনির দুই বোন।একদিন তো ওরা বলেই দেয়,”তোমার বিরক্ত লাগে না আপু বাচ্চা সামলাতে?সারাদিন কান্না করে আর এতবার ফিডিং করাতে হয়।”

রনির সেই চাচাতো বোন স্মিত হেসে বলে,”বিরক্ত লাগবে কেনো পাগলী?এটা তো মায়ের এক অনুভূতি।ভালো লাগার অনুভূতি।”

“তুমি তো এমন ছিলে না।কত স্মার্ট ছিলে।মডার্ন হয়ে চলতে।দুলাভাই তো না করেনি।এখন বাচ্চা হওয়ার পর সব পাল্টে গেছে।”

“এমনটা তোদের সাথেও হবে দেখিস।আমার যখন সিজার হয় তখন আমার মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়।কখন আমি আমার সন্তানকে দেখবো।বাচ্চাটাকে কাছে পাওয়ার পর মনে হয় এটা তো আমার অস্তিত্ব।আর যখন আমি ওকে প্রথম ফিডিং করাই ওর প্রতিটি টানে আমি আমার মা হওয়ার অনুভূতি পেতাম।বুঝলাম আমি মা হয়েছি।আমার একমাত্র দুনিয়া আমার বাচ্চাটা।মা হওয়ার পর মেয়েদের আগের সব অনুভূতি পাল্টে যায়।”

মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনতো শ্রেয়া।তারপর ও নিজেও কল্পনা করে নিতো ওর একটা বাচ্চা হবে ও তাকে নিয়ে আনন্দ করবে।গুলুমুলু হাত পা নিয়ে রনির সাথে সুখের রাজ্যে পারি দিবে।একটা সুখী পরিবার হবে।কিন্তু তা আর হলো না।শ্রেয়ার এমন ভালোলাগা অনুভূতির মাঝেই রুমা বলে দিতো,”শোনো ভাবী।তুমি কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বাবু নিবে না।আগে আমরা এই বাড়ি থেকে বিদায় হবো তারপর বাবু নিও।নাহলে তোমার বাবুর চিল্লাচিল্লিতে আমাদের শান্তি হারাম হয়ে যাবে।”

শ্রেয়ার মন নিমিষেই খারাপ হয়ে যেতো।কতশত পরিবার আছে বাবু হয় না বলে শশুরবাড়ি থেকে ঝামেলা করে আর এরা নিজেদের শান্তির জন্য বাচ্চা নিতে নিষেধ করে।যেখানে দিনরাত খেটে যেতো শ্রেয়া একা।কেউ কোনো সাহায্য করতো না।নির্জনে অনেক কান্না করেছে সে।এখন ভাবলেই মনে হয় সে তার জীবনটাতে নতুন করে পথচলার সুযোগ পেয়েছে।রনিকে ছেড়ে ভালোই করেছে।যে পবিত্র সম্পর্কের মর্যাদা না দিয়ে অপবিত্র সম্পর্কে জড়িত হয় তাকে নিয়ে থাকা যায় না।আর অহনার মত মেয়ে এই মিমিকে উপেক্ষা করে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত ছিলো।মানা যায় যে পরিবেশে অহনা বড় হয়েছে সেই পরিবেশে এমন অনৈতিক কাজ ঘটে যায়।কিন্তু তাই বলে বাচ্চা হওয়ার পরেও কিভাবে?ভালো হওয়ার একটা সুযোগ বা ইচ্ছা থাকলেও বিয়ের পর আচ্ছা বিয়ের পর না হোক বাচ্চা হবার পর তো নিজেকে পাল্টে নেওয়া যেতো।হয়তো সেই ইচ্ছাশক্তি শক্তি হারিয়েছে।আর এসবের মাশুল গুনতে হচ্ছে বাচ্চা মিমির।চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে শ্রেয়ার।চোখের পানি মুছে মিমির কপালে চুমু দেয়।তারপর মিমির মাথায় হাত বোলাতে থাকে।সকাল সাড়ে দশটা বেজে গেছে তাই ফারাজ এসেছিলো মিমিকে দেখতে।দরজায় নক করেই ঢুকবে সে।কিন্তু দরজা বন্ধ থাকলেও জানালা খোলা ছিলো।দরজার কাছে যাওয়ার আগে জানালা দিয়ে দেখছে মিমির প্রতি করা স্নেহ।নিজের আনমনে ফারাজ শ্রেয়ার জায়গায় অহনাকে কল্পনা করছে।তার দৃষ্টি পাল্টে যাচ্ছে।মনে হতে থাকে ওখানে মিমি আর অহনা।মা মেয়ের ভালোবাসার মুহূর্ত।কিন্তু ফারাজের এই মিথ্যা কল্পনাকে পাল্টে দিলো মিরাজ। ফারাজের থেকে একটু দূরে দাড়িয়েই বলে,”ভাই,মিস শ্রেয়া হয়তো এখনও ওঠেনি।অর্পা বললো ওরা এখনও গভীর ঘুমে।তোমাকে যেতে হবে না।”

মিরাজের কথায় বাস্তবে ফিরলো ফারাজ।অর্পাকে দেখেছিলো সকালে।তাই ভেবেছে শ্রেয়াও ঘুম থেকে উঠেছে।তাই মেয়েকে দেখতে চেয়েছিলো।যদিও ঘরের ভিতরে ঢোকার আগে দরজায় টোকা দিতো।মিরাজের কথা শুনে একবার মিরাজকে দেখে আবারও মিমির দিকে তাকালো।দেখলো এখন ওখানে শ্রেয়া।এক দীর্ঘশ্বাস নিলো ফারাজ।ভুলভাল অনুভূতি এখনও তার মনে বিরাজ করে।ভালোবাসার নারীকে ভুলে থাকা যায় না।অতীত পাল্টে জীবনে নতুন মোড় নেওয়া সম্ভব কিন্তু অতীত কখনও মন থেকে মুছে যায় না।ওখান থেকে নিজের রুমে ফিরে যায় ফারাজ।

আজ ভোরবেলা উঠে নিজে থেকেই নামাজ পড়েছে অহনা।তারপর কুরআন তিলাওয়াত করে।পাশেই হুইলচেয়ারে বসে মনোযোগ দিয়ে শুনছেন মিসেস নাজমা।অহনার মধুর কণ্ঠে এই তিলওয়াত শুনতে তার অনেক ভালো লাগছে।অহনা কিছু কিছু জায়গায় ভুল করে ফেলছে।স্বাভাবিক ব্যাপার এটা।প্রথম দিকে ভুল হবে।কিন্তু মনে প্রাণে চেষ্টা তো করতে হবে।অহনা এখন মনে প্রাণে চেষ্টা করে।আর ভুল হলে সেই জায়গায় মিসেস নাজমা সংশোধন করে দিচ্ছেন।এখন আর অহনা রাগ করে না এসব বিষয়ে।বরং এখন তার অভ্যাস হয়ে গেছে।এগুলো এখন ধীরে ধীরে ভালো লাগছে।মূল কথা হলো যখন পরিস্থিতি পাল্টে যায় তখন আশেপাশে সবকিছু ভালো না লাগলেও এক সময় এগুলোই ভালো লাগতে থাকবে।আর এখানে তো ইসলামিক নিয়মে সবকিছু চলতে থাকে।মিসেস নাজমা আগে মডার্ন ছিলেন।তবে এতটাও না যতটা অহনা।এই সুন্দর করে শাড়ি পরে সেজেগুজে বেড় হতেন এমন।নিবিড়ের বিয়ের পর যখন কবীর হয় তখন থেকেই ধীরে ধীরে বয়সের দিকে লক্ষ্য করলেন তিনি।স্বামীর সাথে হজ্ব করলেন।তারপর ইসলামিক পরিবেশ গড়ে তুললেন।অহনার কুরআন তিলাওয়াত শেষ করে ফিরে তাকালো মিসেস নাজমার দিকে।মিসেস নাজমা মনে মনে কিছু দোয়া পড়ে অহনার গায়ে ফু দিলেন।তারপর বলেন,”আল্লাহ তোমাকে সৎ পথে থাকার তৌফিক দিক।ঈমানের সাথে থেকেই যেনো তোমার মৃত্যু হয় মা।”

মৃদু হাসে অহনা।উঠে দাড়িয়ে জায়নামাজ ভাঁজ করে বলে,”আজকে কি খাবেন?”

“রুটি খাবো আমি।আর তুমি তোমার যেটা ভালো লাগে তাই বানাও।”

মিসেস নাজমা অহনাকে এখন আর বাধা দেন না কোনো কিছুতে।অহনা যা খেতে চায় তাই রান্না করতে বলে।অনেক কিছু রান্না শিখেছে অহনা এতদিনে।মিসেস নাজমা পাশে থেকে শিখিয়ে দিয়েছেন।এখন এইগুলো রান্না করছে অহনা। আর ভাবছে কতটা পরিবর্তন হয়েছে সে।আজ সকাল সকাল নিজে থেকে উঠে নামাজ আদায় করে কুরআন তিলাওয়াত করে তারপর রান্না করে খেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে।সময় তো তাও পার হচ্ছে নিজ গতিতে।কর্ম যেমনই হোক না কেনো সময় তার নিজ গতিতে পার হবে।এতক্ষণ জানালার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছে অহনা।

কলেজের কাজ শেষ করে মাত্র বাইরে এসে দাড়ালো রিমলি আর শিহাব।বাইকে উঠে শিহাব এখন স্লো মোশানে বাইক চালাচ্ছে। রিমলি চুপ আছে।হঠাৎ চিল্লাতে চিল্লাতে রিমলি বলে,”বাইক থামান বাইক থামান।”

হকচকিয়ে গেলেও বাইক থামালো শিহাব।বলে,”কি হয়েছে?”

“ওই দেখুন নার্সারি।”

“হ্যাঁ তো কি হয়েছে?”

“আরে ওখানে সামনে স্ট্রবেরি গাছ দেখা যাচ্ছে।”

“নার্সারিতে তো এসব থাকবেই।”

“আমি কিনবো গাছ।আপনি কি বুঝতে পারছেন না আমি কেনো এত এক্সাইটেড?

“ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। নামো তাহলে।”

রিমলি দৌড়ে চলে যায় নার্সারির দিকে।বাইকে রেখে যায় ফাইল।যেটাতে রিমলির পরিচয়পত্র আছে।শিহাব ওগুলো দেখে হাতে নিয়ে এগোতে যাবে ওমনি শিহাবের চোখ যায় বার্থডেটের দিকে।ওখানে আজকের তারিখ উল্লেখ আছে।মনে পড়ে যায় রিমলি কয়েক ঘণ্টা আগেই বলেছিলো পয়দা হওয়ার দিন সে পটল তুলবে।এর মানে আজ রিমলির জন্মদিন।সাল অনুযায়ী আজ রিমলি সতেরোতে পা দিয়েছে।মুচকি হেসে শিহাব বলে,”পিচ্ছি ভালোবাসা আমার।এর জন্য একজন আমাকে অপেক্ষা করতে।”

রিমলির ফাইল ও ছোট হ্যান্ড ব্যাগ নিয়ে নার্সারিতে গেলো শিহাব।চার পাঁচটা স্ট্রবেরি গাছ পছন্দ হয়েছে রিমলির।সব গুছিয়ে দেখলো সে ব্যাগ বাইকেই রেখে এসেছে।পাশে তাকাতে দেখে শিহাব এসেছে ব্যাগ নিয়ে।হাসি হাসি মুখে রিমলি ব্যাগ নিতে যাবে শিহাব টাকা পরিশোধ করে দেয়।চোখ ছোট ছোট করে রিমলি বলে,”আপনি কেনো টাকা দিলেন?এগুলো তো আমার গাছ।”

“তোমারই থাকবে।সমস্যা নেই।একই বাসায় যেহেতু আছি তোমার গাছের স্ট্রবেরি নাহয় আমাদের দিও।”

“আপনি তো স্ট্রবেরি খান না।আন্টি বলেছিলো।”

“প্রিয় ব্যাক্তিটি যখন স্ট্রবেরিতে ভরে থাকে তখন স্ট্রবেরি ভালো না লেগে পারে?”

“মানে?”

“কিছু না চলো তাহলে।”

স্ট্রবেরি গাছ ছোট থাকায় দুইটি পলিথিনে গাছগুলো নিয়ে বাইকের সামনে ঝুঁলিয়ে রাখলো।বাইক কিছুদূর যেয়ে আবার থেমে গেলো।রিমলি বলে ওঠে,”এখানে কেনো দাড়ালেন?”

“আম্মু বলেছিলো তোমাকে বাইরে নিয়ে কিছু খাওয়াতে।কাউকে নিয়ে বাইরে আসলে কিছু খাওয়াতে হয়।”

“আমি খাবো না।তাহলেই তো হলো।”

“খাবে কি না তোমার ব্যাপার।আমার দায়িত্ব আমি পালন করবো।”

“প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন বলে মনে হচ্ছে না আপনার?”

“একদমই না।উল্টোটা মনে হচ্ছে।বেশি কথা না বলে আসো।”

রিমলি বাইক থেকে নামলো।তারপর দেখলো পাশেই একটি ক্যাফে।ক্যাফেতে কফি আর আইস ক্রিম পাওয়া যায়।ক্যাফের ভিতরে ঢুকে শিহাব স্ট্রবেরি আইস ক্রিম অর্ডার দিলো।রিমলি বলেছিলো খাবো না কিন্তু যেই স্ট্রবেরি আইস ক্রিম দেখলো লোভ সামলাতে পারছে না।সেই খেয়েই নিলো।আইস ক্রিম খেতে খেতে রিমলির মুখের চারপাশে লেগে যায়।শিহাব দেখে বিড়বিড় করে বলে,”আমার স্ট্রবেরি।আমি স্ট্রবেরি খেতে পছন্দ না করলেও তুমি নামক স্ট্রবেরিকে আমি ভালোবেসেছি।”

গাড়ি নিয়ে শিহাবের বাসায় আসছিলেন জিনিয়া।বোনের সাথে দেখা করতে আসা।রাস্তায় গাড়ির জানালা দিয়ে শিহাব ও রিমলিকে দেখে নিলেন।রিমলিকে শিহাবের সাথে ভালো লাগছে না।রিমলি দেখতে মোটামুটি হলেও শিহাবের মত সুদর্শন না। শ্যাম বর্ণের রিমলিকে মানায় না শিহাবের সাথে।তার উপর রিমলির পোষাক তাদের মতে ক্ষেত।তাই শিহাবের পাশে রিমলিকে দেখে নারাজ হলেন।কিছু না বলে চলে গেলেন।

ফ্রেশ হয়ে এসে শ্রেয়া মিমিকে ডেকে ফ্রেশ করে দিলো।তারপর কাজা নামাজ আদায় করে নিলো।আজ ঘুমিয়ে থাকার কারণে ফজরের নামাজ পড়তে তার দেরি হলো।সবকিছু শেষ করে বাইরে বেড় হয়ে সকালের নাস্তা করে নিলো।মিমি আজ শ্রেয়ার হাতেই খাবার খেয়েছে।ফারাজ নাস্তা খাওয়া শেষ করে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে।বিকালেই সবাই সমুদ্র দেখতে যাবে।শ্রেয়া খাবার শেষ করে ফারাজের কাছে এসে বসে।এনি ও ইভা এসেছে সেখানে।চারজনে মিলে কাজ করছে আর বাকিরা তাদের মতো।অর্পা তো দূর থেকে ফারাজ আর শ্রেয়াকে দেখতে ব্যাস্ত।ফারাজ ল্যাপটপের কাজ দেখাতে থাকে সবাইকে আর শ্রেয়া ফাইল নিয়ে মিলাতে থাকে।অর্পাকে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিরাজ বলে,”বেশি তাকিয়ে থেকো না। আশার পরিমাণ দীর্ঘ হতে থাকবে।”

“আশার পরিমাণ দীর্ঘ হলে কি খারাপ কিছু হবে?”

“উহু।কিন্তু ভাই বা শ্রেয়া কি চায় এটাও তো। জানতে হবে।”

“আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি শ্রেয়া বড়ভাইকে ভালোবেসেছে।বড়ভাই হয়তো এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না।তবে এভাবে জীবনে একাকীত্ব থাকা তো সম্ভব না।দিন যত এগোতে থাকবে একাকীত্ব তত গ্রাস করবে।”

“আমি জানি বউ।কিন্তু শ্রেয়াকে যদি বাসার সবাই মেনে না নেয় তখন?বাবা যতই রাজি থাকুক।যার সাথে সংসার করবে সে যদি ভালো না বাসতে পারে তো এই সংসার কখনোই পরিপূর্ণ হয় না।তার উপর যদি স্বামী শাশুড়ি দুজনেই না ভালোবাসতে পারে।তাহলে তো এই সম্পর্কের কোনো মানেই নেই।”

আহত কণ্ঠে অর্পা বলে,”হ্যাঁ তাই।মা তো ওই সিনথিয়াকে বড়ভাইয়ের বউ করতে চায়।ওই সিনথিয়া আসলে তো কেউই সুখে থাকবে না।না পাবে মিমি একটা ভালো মা না পাবে বড়ভাই একটা ভালো বউ।ওই সিনথিয়া থাকবে মডার্ন।ওরা কি সাংসারিক হতে পারে?শ্রেয়া অন্তত আমাদের মিমিকে আগলে নিতে জানে।ভাইকে ভালোবাসতে পেরেছে।এখন দেখা যাক ভাগ্যে কি আছে।”

এতক্ষণ মিমি ট্যুরে আসা অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলা করছিলো।তাই অর্পাদের থেকে দূরে থাকে।কিন্তু অর্পার শেষ কথাটি মিমি শুনতে পায়।কারণ সে এখন অর্পার কাছে আসছিলো।অর্পার মুখে এমন কথা শুনে মিমি তাকালো শ্রেয়ার দিকে।নিজেও জানে না কি ভাবছে মিমি।কিন্তু সিনথিয়াকে পাপার সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারছে না।আনমনে বলে,”আন্টি আমার মা হতে পারবে?”

মিমির কথাটি শুনে অর্পা আর মিরাজ।পিছু ফিরে দেখলো মিমি বল হাতে দাড়িয়ে আছে।চোখ তার শ্রেয়া আর ফারাজের দিকে।অর্পা ঘাবড়ে যায়।দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে মিমিকে।মিমি আবারও বলে,”বলো না কাকীয়া।আন্টি কি ভালো মা হতে পারবে?”

“তুমি কি চাও তোমার আন্টি তোমার ভালো মা হোক?”

“ভালো মা হলে আমি আন্টিকে চাই।কিন্তু ভালো মা না হলে আমি চাই না।পাপাকে আমার থেকে আলাদা করবে না তো?”

“একদমই না।তোমার আন্টি এমন পঁচা না।অনেক ভালো সে।তোমাকে অনেক ভালোবাসে।”

“তাহলে আমিও আন্টিকে আমার মা বানাবো।”

হেসে দেয় অর্পা।মিরাজ এসে মিমিকে কোলে নিয়ে বলে,”ওসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে।তুমি না খেলা করছিলে।এখানে এলে যে?”

“ওরা এখন বাইরে যাবে তাই আমি এখানে এসেছি।”

“চলো আমরা একসাথে খেলা করি।”

চলে গেলো অর্পা আর মিরাজ মিমির সাথে খেলা করতে।অন্যদিকে শ্রেয়া আর ফারাজ সহ বাকিরা কাজে ব্যাস্ত।এনি নিজেও এতক্ষণ শ্রেয়া আর ফারাজকে দেখতে থাকে।শ্রেয়া যদিও ফারাজকে পছন্দ করেছে কিন্তু ফারাজ কি ভাবে এটা দেখার বাকি।

চলবে…?