আশার হাত বাড়ায় পর্ব-৩২+৩৩

0
148

#আশার_হাত_বাড়ায়|৩২|
#ইশরাত_জাহান
🦋
ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে মিরাজ।সামনে ল্যাপটপ।এক সপ্তাহ ছুটি নিয়েছিলো তাই আজ কিছু কাজ করছে।রান্নাঘরে কফি বানাচ্ছে অর্পা।কফি আর সাথে কিছু নাস্তা নিয়ে টেবিলে বসতেই সেখানে উপস্থিত হয় ফারহান চৌধুরী।মিরাজ তার জন্যই এখানে অপেক্ষা করছিলো।ঘরে বসে কাজ করতে থাকলে ফারহান চৌধুরী আসলে সাথে সাথে দেখা করতে পারতো না।ফারহান চৌধুরী এসে মিরাজের পাশে বসতেই মিরাজ বলে,”তোমার বউকে কি দেখে বিয়ে করেছিলে বলবে বাবা?”

“কেনো আমার বউ তোমার কি করলো?উল্টো তো তোমাদের দুই ভাইকে পৃথিবীর মুখ দেখালো।”

“তোমার বউ একজন কূটনী মহিলা বাবা।”

“কি হলো আবার?”

“কাকিয়া বলেনি?”

“ফোন করেছিলো মিটিংয়ে ছিলাম।ধরতে পারিনি।”

“তোমার বউ তোমার নামে তোমার বড় ছেলের কাছে নালিশ করেছে।বলেছে তুমি ভাইকে তার অ্যাসিসট্যান্ট এর সাথে বিয়ে দিতে চাও তাই।”

“কিঃ!কিন্তু ও জানলো কিভাবে?”

“তোমার বউ যে একজন গোয়েন্দা ভুলে গেছো?তোমার ড্রাইভারকে পর্যন্ত হাত করে রেখেছে।তোমাকে সন্দেহ করে মা।”

“আমাকে সন্দেহ করবে কেনো?”

“কি জানি!কি অঘটন ঘটিয়েছো তুমি আমি এসব বলতে পারব না।কিন্তু ভাইয়াকে সবকিছু বলে দিয়েছে।”

আফসোস করে ফারহান চৌধুরী বলেন,”ভাবলাম আমি কাল সকালে ছেলেটাকে বুঝিয়ে বলব।সবকিছুতে এডভ্যান্স কথা আগানো ভালো না।আমি চেয়েছিলাম শ্রেয়ার সাথে ওর মা আর ফারাজের সাথে আমি কথা বলে অন্তত ওদের মনোভাব বুঝতে পারব।তারপর বিয়ের কথা ভাবা যাবে।”

“ঘরে জিলাপির প্যাচ থাকতে তুমি সোজা রাস্তায় যাওয়ার কথা ভাবো কিভাবে বাবা!”

ভ্রুকুটি করে ফারহান চৌধুরী বলেন,”তুমি দেখছি আমার বউকে অপমান করেই যাচ্ছো।আমার বউ তোমার বউকে পছন্দ করে না বলে আমার বউকে অপমান করবে?”

“তোমার বউ আমার মা হয়।অপমান করলাম কোথায়?মাকে কি অপমান করা যায়?মাকে নিয়ে সত্যি কথা বলতে হয়।আমি সত্যি কথাটি বলেছি শুধু।”

“মাকে নিয়ে এতটাও সত্য কথা বলা উচিত না।”

ল্যাপটপ বন্ধ করে উপরে যেতে থাকে মিরাজ।উপরে যেতে যেতে বলে,”বউয়ের রূপে দ্বিতীয় কোনো নারী বাড়িতে এনে ঘূর্ণিঝড় বাদানোর থেকে বৌমার রূপের দ্বিতীয় নারী আনো।অন্তত বাড়িতে শান্তিতে বসবাস করা যাবে।”

ফারহান চৌধুরী ফোঁস করে নিশ্বাস নিলেন।ছেলে ভুল কিছুই বলেনি।ফারাজ বুদ্ধিমত্তা নিয়ে চুপ থাকে।মিরাজ সবকিছু প্রকাশ করে।জন্ম থেকেই এরা দুই ভাই ভিন্ন।ফারাজ জন্মের পর থেকে ফারহান চৌধুরীর সমস্ত কথা মেনে চলতো আর মিরাজ মেনে তো চলতো না আরো বকা দিলে উল্টো যুক্তি দিতো।লোকে বলে,এক সন্তান হয় ঘাড় ত্যাড়া।আর দুই সন্তান হলে প্রথম সন্তান হয় ভদ্র তো দ্বিতীয় সন্তান হয় বদের হাড্ডি।ফারহান চৌধুরী এখন এগুলো বিশ্বাস করেন।তার ফারাজ আর মিরাজকে দেখে।

ফারাজের ঘরে এসে ফারহান চৌধুরী বলেন,”আসবো?”

“বাবা তার ছেলের ঘরে আসবে।অনুমতি কেনো চাইছো?”

স্মিত হেসে ফারহান চৌধুরী বলেন,”এটা একটা ভদ্রতা।আজ তুমি সিঙ্গেল তাই অনুমতি না নিলেও চলবে কিন্তু দুদিন পর তো অনুমতি নিতে হবে।কেনো শুধু শুধু বদ অভ্যাস পুষে রাখবো?”

“তুমিও শুরু করেছো আমার বিয়ে নিয়ে?”

“ভুল কোনো পথ অবলম্বন করছি বলে আমার মনে হয় না।”

“বাবা আমি মিস শ্রেয়াকে বিয়ে করতে পারব না।”

“কেনো জানতে পারি?”

“কতগুলো কারণ জানতে চাও তুমি বাবা?”

“তুমি যতগুলো দেখাবে আমি ততগুলোই দেখতে চাই।”

“তাহলে শোনো।প্রথমত,আমার জীবনে অন্য কোনো নারীর স্থান আমি কিভাবে দিবো?আমার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তার সাথে সংসার করলেও আমার মন মানসিকতা তার সাথে সংসার করবে না।দ্বিতীয়ত,মিস শ্রেয়া এই বাড়িতে রেসপেক্ট পাবে না।অর্পা আর কাকিয়া আছে ঠিকই কিন্তু মা যে কি না মডার্ন কাউকে খুঁজছে সেখানে মিস শ্রেয়াকে এখানে এনে ছোট করা হবে।তৃতীয়ত,আমার একটা সন্তান আছে।যে আমার কলিজার টুকরা।অবশ্যই যাকে আমি আমার বউ হিসেবে আনবো তাকে আমার সন্তানকে মেনে নিতে হবে।কিন্তু আদৌ কি সম্ভব এটা?কেউ কি চাইবে নিজের সন্তান রেখে সতীনের সন্তান মানুষ করতে।চতুর্থত,আমি নিজেও চাই না আমার স্ত্রী হিসেবে কেউ তাকে আমার সন্তানের সৎ মা বা আয়া হিসেবে চিনুক।যেমনটা ঘরে ঘরে হয়।টুকটাক কিছু চললে কথা উঠবে সে সৎ মা তাই এমন করেছে।আমি চাই না এমন কোনো পরিবেশ তৈরি হোক যেটা কাকিয়া সহ্য করেছে।”

কথাগুলো বলে ফারাজ একটু থামে।অতঃপর আবার বলে,”আশা করি তুমি বুঝতে পেরেছো?”

“আমি তোমার প্রত্যেকটি বিষয় বুঝতে পেরেছি।কিন্তু ফারাজ!তুমি কি জানো?জীবন একবার থমকে গেলেও ওখানে সবকিছু শেষ হয় না।দ্বিতীয়বার আবারও নতুন করে সবকিছু শুরু করা যায়।তোমার জীবনে অন্য নারীর স্থান তখনই আসবে যখন তুমি দ্বিতীয় নারীটিকে বুঝতে পারবে।তোমার জন্য সে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ এমনটি তার জন্যেও তুমি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ এটাও দেখে নিতে হবে।বিষয়টি যখন মিমি আর শ্রেয়ার মা মেয়ের তখন আমিও তোমাকে কিছু বলতে চাই।যদি শ্রেয়ার সাথে তোমার বিয়ে হয় তাহলে শ্রেয়া তোমার স্ত্রী আর মিমি তো তোমার সন্তান।সেই অনুযায়ী তোমাকে তোমার স্ত্রী ও সন্তানের প্রতি সমান অধিকার পালন করতে হবে।তুমি তোমার অধিকার বা দায়িত্ব পালনে এড়িয়ে যেতে পারো না।মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা ব্যক্তিকে উপ্রে ফেলতে দ্বিতীয় কারোর প্রয়োজন হয়।একা একা বিষ হজম করার থেকে কারো সহায়তায় বিষ ত্যাগ করা শ্রেয়।এতে করে জীবনটা বিষাক্ত নয় বরং মধুময় হয়ে গড়ে উঠবে।মিমি তার প্রপার গার্জিয়ান হিসেবে আমাদের পাবে।হ্যাঁ জিনিয়া মডার্ন লাইফ লিড করে কিন্তু মিমিকে জিনিয়া নিজেও জান প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে।মিমির ভালোবাসার মানুষের অভাব নেই।কিন্তু ফারাজ তোমার জীবনটা থমকে থাকলে কেউ এগিয়ে আসবে না।দিন যত যাবে তুমি ততই একা একা গুমড়ে যাবে।তোমার জীবনেও সঙ্গীত প্রয়োজন।সঙ্গীহীন জীবন বড়ই কঠিন।এই জীবন পার করতে চাওয়া সহজ নয়।বাবা হিসেবে আমি আমার সন্তানকে সুখে দেখতে চাই ঠিক যেমন আমার সন্তান তার সন্তানকে সুখে দেখতে চায়।”

ফারাজ দেখলো ফারহান চৌধুরীকে।তার জন্য তার পরিবার চিন্তা করছে।বাবা তার জন্য ভালো কিছু প্রত্যাশা করে।এটা বাবা হিসেবে ভুল না।বাবার একটা কোথাও ভুল না।ফারহান চৌধুরী চলে যেতে নিলেন।কিছুদূর যেতেই ফারাজ বলে,”আমার সময় লাগবে বাবা।আর তার থেকেও বড় কথা আমার এখন বাইরে যেতে হবে।তাও প্রায় বছর খানিকের মতো সময়।”

“কবে যাবে তুমি?”

“এই তো কাল।”

“আমাদের তো জানাও নি!”

“আমি তো অনেক আগে থেকেই বাইরে যাওয়ার প্রিপারেশন নিতে থাকি।তাই তো আমার জন্য অ্যাসিসট্যান্ট রাখি।এই যে আমি থাকবো না।আমার অবর্তমানে এনি আর সে অফিস দেখবে।”

“ওহ তাও ভালো।আমি ভাবলাম আমার সিদ্ধান্তে আমার ছেলে এই বয়সে আমার থেকে পালাতে চায়।”

“জীবনে ঘটে যাওয়া সবথেকে বাজে পরিস্থিতির থেকে পালাতে পারিনি আমি। ভাবলে কি করে এই পরিস্থিতি থেকে পালাবো?এই যাওয়াটাই যেনো আমার শেষ যাওয়া হয় সেই প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছি।রোজ রোজ এত ব্যস্ততা আর দৌড়াদৌড়ি করতে করতে আমিও হাপিয়ে গেছি বাবা।আমার যদি সংসার করতেই হয় তাহলে ব্যস্ততা কমাতে হবে।আশা করি আমার দ্বিতীয় স্ত্রী টাকার থেকে স্বামী সংসারের দিকে বেশি অগ্রসর হবে।”

“এমনটাই হবে।তোমার বাবা তোমার জন্য বেস্ট কিছুই করবে।ভুল একবার করা যায় দ্বিতীয়বার না।তুমি তো আমার বিচক্ষণ পুত্র।তোমার নজর কি বলে?আমি কি এতটাই গা ভাসিয়ে চলার লোক?”

“না বাবা।তুমি সবসময় পরিবারের জন্য বেস্ট কিছুই করেছো।আমি তোমার সকল সিদ্ধান্তকে সম্মান করি।তবে এখন এক বছরের জন্য বাইরে যেতে হবে।যদি তোমার পছন্দের পাত্রি অন্য কাউকে বিয়ে না করে তাহলে তাকে তখন দেখা যাবে।”

ঠোঁট প্রসারিত করলো ফারাজ।সাথে ফারহান চৌধুরী নিজেও হালকা হাসলেন।

সকালে,
শ্রেয়া আয়নার সামনে দাড়িয়ে তৈরি হচ্ছে। রিমলি তাকে দেখছে।কালকের কথা ভেবে বলে,”আচ্ছা আপু।তোমার বসকে কেমন লাগে?”

একটু অবাক হয়ে শ্রেয়া বলে,”কেমন লাগবে? আর কেনো বলতো?”

“না এমনি বলছি আর কি।মানুষটিকে তোমার কেমন লাগে?”

“ভালোই।”

“যদি ওরা বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাহলে?”

শ্রেয়া রিমলির দিকে ঘুরে তাকালো।সৃষ্টি বেগম আসলেন ঘরে।রিমলিকে উদ্দেশ্য করে বলেন,”বেশি পেকে গেছো তুমি।এতটা এডভ্যান্স হতে কে বলেছে?”

“হাহ!মিথ্যা তো কিছু বলিনি।”

সৃষ্টি বেগম শ্রেয়ার পাশে এসে দাড়িয়ে বলেন,”কাল ফারাজের বাবা এসেছিলেন।তোকে তার পছন্দ হয়েছে।বড় ছেলের বউ বানাতে চায়।তোর বা ফারাজের আপত্তি থাকলে বিয়ে হবে না।তোদের মতামতেই সবকিছু নির্ভর করে।”

লজ্জা পেলো শ্রেয়া।অন্যদিকে ফিরে তাকায়।সৃষ্টি বেগম বলেন,”কি রে তুই কি চাস?আমরা কি কথা আগাবো নাকি এখানেই না করে দিবো?”

রিমলি গলা উচু করে বলে,”আরে আম্মু তোমার বড়মেয়ে লজ্জা পাচ্ছে।মানে সে রাজি।”

রিমলির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালেও সৃষ্টি বেগম খুশি হলেন।কারণ শ্রেয়া রাজি।

আজ অফিসে আসেনি ফারাজ।শ্রেয়া এসে সবকিছু গুছিয়ে বসলো মাত্র।ফারাজের কেবিনের দিকে তাকিয়ে আছে আবার তাকাতে থাকে দরজার দিকে।ফারাজ ঢুকবে ওখান থেকে।সময় পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ফারাজ আসছে না।কিছুক্ষণ পর ইভা আসে অফিসে।ইভাকে দেরি করে আসতে দেখে শ্রেয়া বলে,”এত দেরি করে আসলে যে?”

“কারণ আজকে বকার কেউ নেই। সরি সরি স্যারকে বলে দিও না আবার।”

“আজকে বকার কেউ নেই মানে?”

ওদের কথার মাঝে এনি আসে।এনি এসে শ্রেয়াকে বলে,”হ্যান্ডসাম বাইরে গেছে।প্রায় এক বছরের জন্য।”

“কই আমাকে তো বললো না!”

“আমাকে বলেছে।কাল রাতে বলেছে।আটকানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু শোনেনি।যাক একটু রিফ্রেশমেন্ট দরকার।”

মনটা খারাপ হয়ে গেলো শ্রেয়ার।কতটা আশা নিয়ে এসেছিলো আজ।চোখ জুড়িয়ে ফারাজকে দেখতে পাবে।ভালোবাসার সূচনাতে হয়তো এমনটাই হয়।

সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে অহনা।উপরের রুমগুলো পরিষ্কার করেছে মাত্র।আজ বাড়ির ছেলে ও নাতি আসবে।একমাস থেকেই চলে যাবে।সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় ধাক্কা লাগে একটি যুবকের সাথে।কবির অহনাকে সামলে দেয়।তারপর বলে,”আপনি ঠিক আছেন?”

অহনার মাথা ঘুরছে।এখন মূলত তার মাথা ঘোরার কারণেই এমন হতে থাকে।কবিরের দিকে তাকিয়ে বলে,”হ্যাঁ।আমি ঠিক আছি।তুমি কবির তাই না?”

“হ্যাঁ।দাদী কোথায়?”

“রান্নাঘরে আছেন তিনি।তোমার আর তোমার বাবার পছন্দের খাবার রান্না করছেন আজ।”

“তাহলে আমি দেখা দিয়ে আসি।”

“হ্যাঁ,যাও।”

অহনা এবার নিজের ঘরে এসে বসে। খুক খুক করে কিছুক্ষণ কাশতে থাকে।কিছু একটা অনুভব করে নাকে হাত দিয়ে দেখতে থাকে।আঙুলে ছোপ ছোপ রক্ত দেখে স্মিত হেসে বলে,”কর্মফল।আমি এই বিষয়ে কাউকে জানাবো না।যেমন আছি তেমন থাকবো।”

রিমলি আজ কলেজে যায়নি।নতুন গল্প নিয়ে এতটাই উত্তেজিত যে সে আজ কলেজে না যেয়ে বাসায় বলে লিখছে।সৃষ্টি বেগম কিছুক্ষণ পর পর এসে দেখছেন রিমলি ফোন নিয়ে সেই ধরে বসে আছে।বিরক্তিতে এখন বকছে রিমলিকে।রিমলি এবার বিরক্ত হয়ে ফোন পাশে রেখে দিলো।সৃষ্টি বেগম তারপরও থামেনি।বলতে থাকেন,”পড়াশোনা না করে ওই এক ফোন নিয়ে ঘাটতেই থাকে।পরীক্ষায় তো করিস টেনেটুনে পাশ।এত ফোন কিসের হ্যাঁ?এবার ভালো রেজাল্ট না করলে সোজা বিয়ে দিয়ে দিবো।”

“আচ্ছা মা!যদি এই কথাই হয় তাহলে এখনই বিয়ে দিয়ে দেও।আমি বিয়ে করতে রাজি।”

“কিঃ!”

“হ্যাঁ।এই পড়াশোনা আর ভালো লাগে না।এর জন্য কোনোদিকে সময় দেওয়া হয় না।পড়াশোনার থেকে তো ভালো সংসার করা।কাজকর্ম করেও রেস্টে থাকা যায়।”

“সংসার করেছিস কখনও?সংসারের জ্বালা তুই কি বুঝবি?যেদিন করবি সংসার সেদিন বুঝবি।”

“তাই তো বলছি।বিদায় দেও আমাকে।করতে দেও সংসার।নাহলে যেমন আছি তেমন থাকতে দেও।”

সৃষ্টি বেগম রাগ দেখিয়ে চলে যেতে যেতে বলেন,”এইটুকু মেয়ে সংসার করতে চায়।এদিকে সংসার কি তাই বোঝেনা।বেশরম মাইয়া।”

সৃষ্টি বেগম চলে যেতেই রিমলি বিড়বিড় করে বলে,”সংসার কি না বুঝেই কতজনের সংসার নিয়ে লিখেছি।হুহ!আমার এতেই হবে।”

বলেই রিমলি আবেগের সাগরে ভাসতে থাকে।যেনো সংসার তার কাছে পান্তাভাত।

চলবে…?

#আশার_হাত_বাড়ায়|৩৩|
#ইশরাত_জাহান
🦋
আজ মনমরা হয়ে সব কাজ করছে শ্রেয়া।কোথায় ভেবেছিলো ফারাজের মনক্তি সম্পর্কে অবগত হবে।কই?সে তো আসেনি।যদি ফারাজ রাজি হয় তাহলে শ্রেয়ার কেমন লাগবে এটা ভাবছে শ্রেয়া।আবার ভাবছে ফারাজ যদি না করে দেয় তাহলে সে কি করবে?চাকরি কি করবে নাকি ছেড়ে দিবে?চাকরি ছেড়ে দিলে তো সে দিশেহারা হয়ে যাবে।কোনো রকমে তিনটা ফাইল চেক করে এনির সাথে ওগুলো নিয়ে ডিসকাস করে নিলো।এখন লাঞ্চ টাইম।শ্রেয়া নিজ মনে লাঞ্চ করতে যাচ্ছে ক্যান্টিনে।ঠিক তখনই পিছন থেকে শ্রেয়াকে ডেকে ওঠে মিমি।মিমির কণ্ঠে পিছনে তাকিয়ে শ্রেয়া খুশি হয়।স্কুল ব্যাগ কাঁধে করে এসেছে সে।শ্রেয়া মিমির কাছে এসে দাঁড়ায়।মিমি বলে,”পাপা নেই আমার ভালো লাগছে না।কাকিয়া হাসপাতালে গেছে।আমার জন্য নাকি নতুন ভাই বোন আনার ইচ্ছা হয়েছে।তাই হাসপাতালে।তুমি আমার সাথে লাঞ্চ করবে?”

খুশি হয়ে শ্রেয়া নিয়ে গেলো মিমিকে।ফারাজের ক্যান্টিনে কোনো অস্বাস্থ্যকর খাবার রাখে না।ক্যান্টিনের জন্য যে শেফ রাখা সেও একজন শিক্ষিত ও পরিচ্ছন্ন।ফারাজ আর ফারহান চৌধুরী এসব বুঝেশুনে রাখেন।স্টাফরা এখানে প্রতিনিয়ত লাঞ্চ করে।বাসায় যাওয়ার সময় থাকে না।অস্বাস্থ্যকর খাবারে ঝুঁকি বেশি।এটা ফারাজ চায় না।তাই এই ক্যান্টিন পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করে রেখেছিলো।এজন্য মিমিও এখানে এসে ফারাজের সাথে লাঞ্চ করতে পারে।এছাড়াও এই অফিসে বাচ্চাদের জন্য ও নামাজের একটি আলাদা রুম করা আছে।

মিমিকে খাইয়ে দিচ্ছে শ্রেয়া।আজ সকালে যে প্রস্তাব শুনলো এখন মিমিকে নিজের কাছের কেউ বলে মনে হচ্ছে শ্রেয়ার।মিমি যেনো এখন তারই মেয়ে।মিমিকে খাইয়ে দিতে দিতে শ্রেয়া বলে,”তুমি প্রতিদিন আসবে।আমরা একসাথে খাবো।ঠিক আছে?”

ফোকলা দাঁতে হাসি দিয়ে মিমি বলে,”ঠিক আছে আন্টি।”

ওদের কথার মাঝে এনি আসে।এতক্ষণ সে ক্লায়েন্টদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছিলো।ফারাজ এখন প্লেনে আছে।একটু টেক্সট দিয়ে কথা বলেছে।শ্রেয়া আর মিমির সামনে এসে এনি বসে বলে,”কখন এসেছো তুমি?”

মিমি উত্তর দেয়,”অনেকক্ষণ হয়েছে।একদম লাঞ্চ টাইমে।তুমি এত দেরি করলে কেনো?”

“তোমার পাপা থাকলে দেরি হতো না।এখন পাপা নেই আমাকেই সব কাজ করতে হয়।তোমার আন্টিও তো সারাদিন কাজ করতে করতে টায়ার্ড।”

“পাপা এত কাজ দেয় কেনো?একটু রেস্ট করলে কি হয়?”

“এই কোম্পানির লস হবে।তোমার পাপার ক্ষতি হবে।”

“ওহ তাহলে তোমরা কাজ করবে।বেশি বেশি কাজ করবে।”

শ্রেয়া আর এনি চাওয়া চাওয়ি করে হাসতে থাকে।এনি বলে ওঠে,”আমাদের একটি পুরোনো মডেল আসবে।নাম সূচি আর সাথে তার হবু বর।মিস সূচি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন কিন্তু ওনার শশুর বাড়ী থেকে অনুপতি পাওয়ার কারণে আবারও আমাদের সাথে যুক্ত হবেন।”

“তাহলে মিস সুনেহরা বাদ যাবে?”

“আরে না।আমাদের একেক প্রজেক্টের জন্য একেক মডেলের দরকার হয়।সুনেহরা তো আছেই তবে সে অন্য প্রজেক্টের জন্য।সূচি আসবে ডিজিটাল আউটফিটের জন্য।যেগুলো রেম্প ওয়াকের কাজে লাগবে।তুমি হয়তো এটাতে প্রথম প্রথম আনকমফোর্টেবল থাকবে।ডোন্ট ওরি।আমি আছি আর তুমি শুধু দেখবে কালার কম্বিনেশন সাথে ড্রেসের কোয়ালিটি।আর হ্যাঁ আমাকে একটু একাউন্ট গুলো চেক করে দিবে।”

“ওকে এনি।”

ওরা লাঞ্চ শেষ করে নেয়।মিমি শ্রেয়াকে বিদায় দিয়ে চলে যায়।কাজে আবার লেগে পড়ে শ্রেয়া।

অহনাকে নিজের বাসায় দেখে রেগে যায় নিবিড়।হুংকার দিয়ে বলে,”এই মহিলা এখানে কেনো মা?”

মিসেস নাজমা ছেলেকে থামাতে ব্যাস্ত।মূলত ফারাজ আর নিবিড় দুজন বন্ধু।নিবিড় পড়াশোনা শেষ করার আগেই বিয়ে করে তার প্রেমিকার সাথে।বংশীয় ব্যাবসার দায়িত্ব নেয় নিবিড় সাথে পড়াশোনা চালাতে থাকে।ফারাজ চলে যায় বিদেশে।নিবিড়ের বাবা মারা যাওয়ায় নিবিড় সবকিছু দেখতো। ফারাজের ক্ষেত্রে এদিকটা একটু ভিন্ন।ফারাজ তার ব্যাবসা বুদ্ধি দিয়ে চালালেও ফারহান চৌধুরীর সহযোগিতা ছিলো।ফারাজ সবকিছু হ্যান্ডেল করলেও ফারহান চৌধুরী ফারাজের কথামত চলতো।ছেলের প্রতিটি ডিসিশন ছিলো যুক্তিযুক্ত।তাই তিনিও খুশি হতেন।নিবিড়ের সাথে ফারাজের দূরত্ব মাঝখানে এজন্যই তৈরি হয়।কারণ তারা পারিবারিক চাপে দুদিকে চলে যায়।কিন্তু সোসিয়াল মিডিয়াতে যোগাযোগ আছে।খুব বেশি কথা না হলেও কিছু পোস্ট তো সামনে আসেই।এই যেমন ফারাজ চৌধুরীর প্রাক্তন স্ত্রী অহনার সম্পর্কে মিডিয়াতে ছড়ানো আছে।নিবিড়ের এমন কথাতে অহনা মাথা নিচু করে আছে।এখন আর সে রাগ বা প্রতিবাদ করে না।অতীতের কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে সবার বলা কটুকথা সহ্য করছে।হয়তো এগুলো হজম করলেও কিছুটা পাপ কমে যাবে।নিবিড় আবারও বলে ওঠে,”ও আমার ফ্রেন্ডের লাইফ হেল করে দিয়েছে।সেই স্কুল লাইফ থেকে শুনে এসেছি কতটা ভালোবাসে সে এই মেয়েটিকে।জানো মা আমরা যখন টিফিনে ভালো মন্দ খেতাম তখন ফারাজ অহনার জন্য অর্ধেক টাকা রেখে দিতো।ছেলেটা মিষ্টি পাগল ছিলো বলে শুধু একটা মিষ্টি খেয়ে থাকতো।বলতো মিষ্টি খেলে পেট ভরে যায়।বাকি টাকা জমিয়ে এই মেয়েকে ওই বয়সেই বই খাতা কিনে দিতো।স্কুলে নিজের দায়িত্বে অহি আন্টিকে দিয়ে ফিশ দেওয়াতো।ছেলেটার মুখে আমি কখনও কোনো নারীর নাম শুনিনি।সবসময় এই অহনা অহনা আর অহনা করতো। আর এই মেয়েটা কি করলো?ছিঃ!ভাবতেই ঘৃণা লাগে।তুমি তাকেই এই বাড়িতে আশ্রয় দিলে?”

মিসেস নাজমা সবকিছু শুনেও কাঠিন্য গলায় বলেন,”আমি কি করেছি এটা আমি দেখে নিবো।তোমাকে ভাবতে হবে না।আর এই তো দুদিন আমার কাছে থাকে এমন না।কয়েকমাস ধরে আছে আমার সাথে।ভালো মন্দ আমি দেখছি।তুমি এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে এসো না।মায়ের কাছে এসেছো মায়ের ভালোবাসা নেও।পরনারী কি করছে এটা আমি দেখবো।”

রাগ মাথায় চেপে ধরলেও মায়ের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো নিবিড়।উপর থেকে সবকিছু দেখছে কবির।ইন্টারে পড়ুয়া ছেলেটা ভাবছে,”কি এমন করেছে সে?”

ঘরে এসে ফারাজ চৌধুরী দিয়ে সার্চ দিলো।বিভিন্ন নিউজসহ পারিবারিক ছবিও দেখা গেলো।ফারাজের সাথে থাকা একটি বাচ্চা মেয়েকে দেখে চোখ আটকে গেলো কবিরের।মেয়েটার সামনে বব কাট ভ্রুদুটো মোটামোটা চোখের পাপড়ি বড় ও সুন্দর।ফর্সা মুখে এগুলো সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।মিমির অনেকগুলো ছবি দেখে কবির আনমনে বলে,”এটা তো একটা পিচ্ছি মেয়ে।ধুর!আমিও আছি আরেকজন।কেনো যে এদের দেখতে গেলাম।”

বলেই ফোনটি রেখে দেয় খাটে।মাত্র অফিসের কাজ শেষ করলো শ্রেয়া।এখন উদ্দেশ্য বাসায় যাওয়া।রিক্সা খুঁজতে থাকে।এই একটা বিরক্তিকর বিষয়।একটু সন্ধ্যা নামলেই কোনো যানবাহন এর দেখা মেলে না।যদিও বা দেখা মেলে তো লোকজন ভর্তি যানবাহন।শ্রেয়া হাঁটতে থাকে।একটু হাঁটলেই মেইন রোড।ওখান থেকেই রিক্সা বা বাইক পাবে।মেইন রোডে এসেই শ্রেয়া দেখলো একটা পেস্ট্রি হাউজ।চোখের সামনে ভেসে উঠল পুরোনো স্মৃতি।বাবা মা বোনকে নিয়ে কত খেতো এই কেক।একটা কেকের স্টল তারও দেওয়ার ইচ্ছা ছিলো।সবকিছু ভাবনাতেই রয়ে গেলো।বাবা বেঁচে থাকতে কতশত ফিউচার প্ল্যান করতো।এই চাকরি করবো এটা না পেলে এই ব্যাবসা করবো যদি এটাও সম্ভব না হয় তাহলে একটা দোকান দিবো।রিমলি তখন থেকেই বাবা আর বোনের এসব ইচ্ছাতে খুশি হতো।সৃষ্টি বেগম পরিবারের সবার মুখে এসব শুনে খুশি হতেন।তিনি স্বামীর সামনে এমনিতেই সব সময় লজ্জা পেয়ে থাকতেন।বাসার জন্য এক পাউন্ডের কেক নিলো শ্রেয়া।কেকের মধ্যে ভিন্ন ফ্লেবার যুক্ত ছিলো।যেই খাবার শ্রেয়া বা তার পরিবার কখনও খায়নি ওই খাবার সবসময় ওরা কিনে বাসায় এনে একবার টেস্ট করে নিতো।বাবার পছন্দের ম্যাংগো ফ্লেবারও ছিলো এখানে।এটা দেখে চোখ চিকচিক করছে শ্রেয়ার।আনমনে বলে,”তোমার এই ম্যাংগো ফ্লেভারটা আজ কে খাবে বাবা?আয়ু কি আরো থাকতে পারতো না?থাকলে আজ আমি তোমাকে এভাবে মিস করতাম না।আমাদের সাথে সব স্মৃতিতেই তুমি জড়িয়ে আছো কিন্তু আমদের ভবিষ্যতে তুমি নেই।এটাই যে বাস্তবতা কিন্তু আমরা জেনেও মানতে পারি না।”

বাসায় এসে শ্রেয়া তার মায়ের হাতে কেক দিলো।এতখানি কেক দেখে সৃষ্টি বেগম বলেন,”আমরা তিনজন আমাদের তিন পিচেই হতো।এত টাকা খরচ করার দরকার কি?”

“নতুন কিছু চোখে পড়ল মা।বাবা থাকলে তো বাবাই কিনে আনতো।আজ নাহয় বড় মেয়ে আনলো।”

বলতে না বলতেই থমকে গেলো শ্রেয়া।দেখলো সৃষ্টি বেগমকে।কান্না করে দিলেন তিনি।রিমলি নিজেও চুপ হয়ে আছে। বাবাভক্ত মেয়ে রিমলি।শ্রেয়ার থেকেও রিমলি বেশি মিশতো বাবার সাথে।বাবার মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি।যেদিন বাবার লাশ দুয়ারের সামনে আসে সেদিন এক চিৎকার দিয়ে প্রায় দেড় সপ্তাহ নীরব ছিলো।আজও ভাবলে ভয়তে শিউরে ওঠে শ্রেয়া।বাবার মৃত্যুতে শোকাহত হবে নাকি বোনের সেবা করবে?শ্রেয়া যেনো দিশেহারা।রিমলিকে তখন অনেক ডাক্তারসহ কবিরাজ দেখানো হয়।কোনোটাতেই কাজ হয়না।একদিন ডাক্তার বলে,”ওনার যে কারণে এমন অবস্থা সেই কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন আবারও হতে হবে।তাহলেই হয়তো নরমাল হতে পারবেন।”

সেদিন রাতে রিমলিকে সৃষ্টি বেগমসহ লুকিয়ে লুকিয়ে কবরস্থানে নিয়ে যায়।লুকিয়ে যাওয়ার কারণ হলো শ্রেয়া আর রিমলির পিছনে অনেকের বদ নজর।এলাকার মাস্তান তখন ওদের উত্যক্ত করতো।অনেক্ষন ধরে বাবার সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলে শ্রেয়া।এক পর্যায়ে সৃষ্টি বেগম নিজেই কান্না করেন।মায়ের এই কান্না আর ভেঙ্গে পড়ার সাথে সামনে থাকা বাবার কবরকে দেখে আবারও কান্না করে রিমলি।আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসে।আজ আর রিমলি আগেরমত ভেঙ্গে পড়ছে না।কিন্তু কষ্ট তার মনে রয়েই গেছে।চোখের পানি মুছে বলে,”বাবা নেই তো কি হয়েছে?বাবা আমাদের স্মৃতির পাতায় আছে আপু।তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমরা খাবার রেডি করি।”

বোন যে তাকে শান্তনা দিলো এটা শ্রেয়া খুব ভালো ভাবেই বুঝলো।গোসল করে আসতেই রিমলি বলে,”আমি আর আম্মু ব্যালকনিতে আছি আপু।”

শ্রেয়া ব্যালকনিতে যায়।হালকা লাল রঙের ড্রিম লাইট জ্বলছে।কেক নিয়ে বসেছে তিনজনে।কেক খেতে খেতে শ্রেয়ার চোখ যায় দূরের সেই মাঠের দিকে।মাঠটা ফাঁকা শুধু আছে একটি টিনের ঘর।পাশের চায়ের দোকান এখন বন্ধ করা হচ্ছে। হলুদ রঙের লাইট জ্বালানো সেখানে।আশেপাশের গাছপালা থেকে বাতাস আসছে।গোসল করেছে বলে ভালো লাগছে শ্রেয়ার কাছে।দূরে মাঠের মধ্যে থাকা ঘরের দিকে তাকিয়ে শ্রেয়া বলে,”এই মাঠ কিসের জন্য ফাঁকা?”

সৃষ্টি বেগম বলেন,”কি জানি?”

রিমলি কেক খেতে খেতে বলে,”কেকটা অনেক টেস্টি হয়েছে আপু।আমাদের তো ইচ্ছা ছিল একটা ছোট পেস্ট্রি হাউজ খোলার।তা মনে হয় আশাই থেকে যাবে।পূরণ আর হবে না।”

“আচ্ছা বোন।মাকে নিয়ে একটু খোঁজ নিবি তো।সামনের মাঠ কি কারণে বন্ধ।যে ঘর ওটাও তো কোনো কাজের না।আর ওখানে আমরা চাইলে কিছু করতে পারবো কি না?”

“কি করার কথা ভাবছিস তুই?”

“একটা ছোট্ট কেকের দোকান।বাবার স্বপ্ন আমাদের ভালোবাসা।পূরণ করতে চাই মা।”

“এতগুলো টাকা কোথায় পাবি?”

“বেতন তো আমার কম না।এই দুমাসে বেশ ভালোই হয়েছে।দরকার হয় কিছু লোন নিবো।সংসার তো চলে যাবে সাথে লোন পরিশোধ হয়েও যাবে।”

মুখে উৎসাহের হাসি ফুটিয়ে রিমলি বলে,”সত্যি আপু!বাবার স্বপ্ন পূরণ হবে।আমাদের নিজস্ব একটা দোকান হবে।যেটা আমরা পারিবারিকভাবে খুলবো।আমরা দুইবোন একসাথে সেই দোকানের জন্য কাজ করবো।দোকানের নামে সবাই আমাদের পরিবারকে চিনবে।”

“আল্লাহ চাইলে সম্ভব।বাকিটা বন্দা হিসেবে চেষ্টা করতে হবে।”

“আল্লাহ আমাদের এই ইচ্ছাটা পূরণ করার তৌফিক দিক আমিন।”

সকালে শ্রেয়া অফিসে এসে লিফটে ঢুকতেই দেখা হয় অতসী আর জিনিয়ার সাথে।দুজনে শ্রেয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়।শ্রেয়া সালাম দিয়ে কথা বলতেই তারা বলে…

চলবে…?